Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

আমার সাহিত্যভাবনা, গদ্যভাবনা এবং খোদ আমি

আমার সাহিত্যভাবনা, গদ্যভাবনা এবং খোদ আমি -- অজিত রায়

অজিত রায়

 

শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি, মানে যে জাত এখনও দিনশেষে সামান্য সাহিত্যচর্চা করেন বলে আমরা বিশ্বাস করি, তাদের সুললিত বাজার-সংজ্ঞায়িত সাহিত্যভাবনায় বোম ফেলতে এসেছিলেন অজিত রায়। তিনি এলেন, দেখলেন, লিখলেন, আমাদের চোঁয়াঢেকুরের মতো লাগাতার অস্বস্তি দিলেন, কারণ নিজের সময়ের থেকে অনেকখানি এগিয়ে ছিলেন তিনি। শেষমেশ জয় করলেন বটে, গত কয়েক বছরে অজিতদার এক বিপুল পাঠকশ্রেণি তৈরি হয়েছিল, তবে জয় করতে অনেকখানি সময় লেগে গেল, আর যখন করলেন, ততক্ষণে খোঁচ হয়ে থাকা হাইফেনের একপাশে তার নিষ্করুণ জীবনটি কর্কটরোগে থমকে গেছে আচমকা। বস্তুত, অজিত রায়ের অকালপ্রয়াণের পরেই তাঁর অমরত্ব শুরু হল। সোশাল মিডিয়ার এদিক ওদিকে ছিটকে থাকা লেখাপত্র থেকে বেছে নিয়ে চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের এবারের স্টিম ইঞ্জিন বিভাগে তুলে দেওয়া হল অজিত রায়ের সাহিত্যভাবনার একঝলক, যা বহন করে চলেছে তাঁর অননুকরণীয় নার্সিসিস্ট গদ্য, যা অজিতদার যাপনেরই সমার্থক। গদ্যাংশদুটির শিরোনাম আমাদের দেওয়া, কিন্তু মূল বানান অপরিবর্তিত।

 

.

নামে শ্রী থাকলে লেখায় শ্রী থাকে না। সেবার ফাইনাল প্রুফ দেখতে গেলে প্রেসমালিক টিউব নিভিয়ে লম্ফ জ্বেলে দিয়ে বললেন, এবারটি দ্যাখেন। জানা গেল, গোটা কাজটাই লোডশেডিংয়ে সারা। অর্থাৎ যেমন কাজ, তেমনি সাজ। তো, বর্তমান লেখাটি ভরদুপুরে লেখা। মধ্যাহ্নভোজের পর, রয়ে-সয়ে। তা, এই মাহ শাওনে আকাশে একফালি তুলোমেঘ গ্যাঁট হয়ে বসে থাকলে কী-আর করা!

বাংলা মোদের আ-মরি ভাষা। যে ভাষায় কানা মেয়ের নাম সুলোচনা। গল্পের গোরু মইয়ে চড়ে। আর বাবুর কুকুরও ঘাস খায়। দেখা গেল, ক্ৰমে ক্ৰমে পয়ার-লাচাড়ি কমে এলো। বাবু বঙ্কিম আমাদের কালো সিলোফেন দেখালেন, ব্রাউন পেপার প্যাকেজ। তা, সেভাবে ধরলে, ১৫৫৪ সনে কুচবিহারের রাজা নরনারায়ণ দেবের অহোম নৃপটিকে লেখা চিঠিটাকেই বাংলা কেজো গদ্যের আদিতম নিদর্শন হিশেবে রেফার করা যায় না কি? সেই ধূসর আদলহীন যতিচিহ্নবর্জিত গদ্যই তো কালক্রমে বিভিন্ন রাজারাজড়ার চিঠিপত্র, জমিদারি সেরস্তার দলিল-দস্তাবেজ আর আইনি বইয়ের তর্জমার মারফৎ গতর পেয়েছিল। আর সেটা রাজপুরুষ আর পাদ্রীদের বাংলা শেখানোর জন্যে কেরী সাহেবের মুন্সিদের উদ্যোগ নেওয়ার অনেক আগেই। কিন্তু সুতানুটি, কলিকাতা আর গোবিন্দপুর এই তিন গাঁয়ের সাড়ে তেরোজন মোড়ল বললেন, না, বাংলা গদ্যের সূচনা দূরকালে নয়, অন্যকালে। অর্থাৎ ইতিহাসটা বাদ, ভূগোল পড়তে হবে। দেখা যাচ্ছে, বাংলা ভাষার নির্দিষ্ট একটা এলাকা আছে। কিন্তু নেপাল-সিকিম-ভুটান বর্ডার থেকে দক্ষিণে বঙ্গসাগর, সে তো বিশাল এলাকা! কোথাকার গদ্যকে বাংলা গদ্য বলব? এর সিধা-শর্টকাট জবাব— পুঁজিকে যে-জায়গায় এককাট্টা করা হয়, শেঠ-আঢ্য-বসাকদের আড়তি কারবারের জায়গা। মুৎসুদ্দি বেনিয়াদের আদি কর্মভূমি। মানে, এই তিন গাঁ। কলকাতা যার মডার্ন নাম। সেই থেকে কলকাতা আর হুগলিচত্ত্বর বাংলা সাহিত্যেরও পাইকারি দালালির মণ্ডি হয়ে গেল। এর বাইরের কোনোখানের ভাষায় লিখলে তা বাংলা সাহিত্য বলে গণ্য হবে না। কলকাতায় বামুন আর চাঁড়ালকে ফারাক রাখা যায়।

আমি গদ্যের কথাই ভাবছি। কেননা, বাঙালির যা-কিছু এই গদ্যকেই আশ্রয় করে। গদ্য-প্রকরণ শুধুমাত্র বাংলা সাহিত্যের নয়, গোটা বাঙালি জাতির সাবালকত্ব প্ৰমাণ করে। গদ্যই এ জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সংবাদদাতা। গদ্যের ক্রমপ্রসারেই বাঙালির চেতনাশ্রয়ী মানবজ্ঞান যুগপৎ গভীর ও ব্যাপক হয়েছে। চর্যাপদ থেকে আমাদের সাহিত্য যে পয়ার-লাচাড়ির গজচালে চলে আসছিল, উনিশ শতকের প্রাক-লগ্নে গদ্যের ছোঁয়া পেয়ে সহসা তাতে উচ্চেঃশ্রবার উদ্দাম গতি ফুটে উঠল, গদ্যের ফিটনে চড়ে বাঙালি বেরুল চিন্তাবিশ্ব জয়ের অভিযানে।

কিন্তু গোড়াতেই গলদ। বাংলা গদ্যের প্রযুক্তি আমদানি হল ইউরোপ থেকে। ইউরোপে ষোলো শতকে যে ধরনের গদ্যের কাজ শুরু হয়েছিল, আমরা সেটি আরম্ভ করলাম উনিশ শতকের মধ্যভাগে। ইউরোপীয় ভাষা বলতে স্রেফ ইংরিজি। একটি রক্ষণশীল ভাষাসম্প্রদায়ের সাহিত্যকে আমরা মডেল বানালাম। অথচ সেই একই সময়ে ইউরোপের অন্যান্য ভাষায় যে-সব কাজ হয়ে চলেছিল, সেগুলো আমরা জানতে পারলাম না। আমরা শুধু ইংরিজির অন্ধ-অনুকরণে মেতে উঠলাম। ফলত, অত্যল্প কালাবধির মধ্যে বাক্য-রচনারীতির সৌকর্য, তার শব্দশরব্যতা ও শব্দভাণ্ডার, সূক্ষ্ম ও জটিল ওজঃ, এবং প্রায় সমান্তরাল অনুভূতি প্রকাশের অনায়াস স্বাচ্ছন্দ্য বাংলা গদ্যকে তাৎক্ষণিক বা কিছুদিনের জন্যে সমৃদ্ধি দিল বটে, কিন্তু পরবর্তী কালের বাংলা গদ্য, যা আমাদের মহৎ জাতিচিহ্নের অবিচ্ছিন্ন অঙ্গ, বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে তুল্যমূল্য অনুশীলন ও উত্তরণ ব্যাপারে আমরা এক শূন্যতা ও বিষাদময় পরিস্থিতি আবিষ্কার করি। আমাদের গদ্যভাষার কাজ নিয়ে দেশি-বিদেশি পণ্ডিতদের মূল্যবান গবেষণা-কর্ম উনিশ শতকের প্রারম্ভকাল থেকে শুরু হয়ে রবীন্দ্রযুগ পর্যন্ত এসে থম মেরে যায়। পরোক্ষ বক্তব্য হল, বঙ্কিম-রবীন্দ্রনাথের পর বাংলা গদ্যের বেসিক স্ট্রাকচারে কোনো মৌল-পরিবর্তন হয়নি। বাংলা গদ্যের সূচনা লগ্নে আমাদের জন্যে যে গদ্যভাষা ধার্য হয়েছিল, সত্তর-আশি বছর ধরে ওই মডেলই আমরা রেয়াজ করে আসছি। একটা জাতির পক্ষে এর চেয়ে দুঃখজনক আর অবমাননাকর আর কী!!

কবিতা গল্প উপন্যাস প্রবন্ধ নাটক— বাংলা সাহিত্যের সব কটা জঁর-ই আমার ইউরোপীয় ভাবধারা থেকে নিয়েছি। এভাবে আমরা প্রায় তিনশো বছর পিছিয়ে থেকেছি। মিগেল সেরভানটেস যখন ‘ডন কিয়োতে’ লিখছিলেন বা ফ্রাঁসোয়া রাবেল যখন ‘গার্গআঁতুয়া পাঁতাগুয়েল’, বাংলা গদ্যের তখন জন্মই হয়নি। বারো-তেরো শতকেও আমাদের দেশে, বিশেষত বাংলায় যে-সব গীত, দোঁহা ইত্যাদির চল ছিল তাকেই লালন করলে আমাদের গদ্যের জন্ম ঘটতে এতটা দেরি হতো না। কিন্তু ইউরোপ থেকে ভিক্কে আহরণের ফলে আমরা পিছিয়ে থাকলাম। বঙ্কিমবাবুর সংস্কৃত-আশ্রিত ভাষায় উপন্যাস লেখার সময়ই, ভাবা যায়, এডগার অ্যালেন পো-র সরল ভাষায় লেখা আপাত-জটিল ‘দ্য ফল অব দ্য হাউস অব আশার’ বেরিয়ে গেছে!! কমবেশি ওই সময়েই পশ্চিমের এবং রাশিয়ান গদ্যসাহিত্যে ন্যাথানিয়াল হর্থন, হারমান মেলভিল অনরে ডি বালজাক, ইভান তুর্গেনিভ, দস্তয়েভস্কি। ফের যখন আমরা রবীন্দ্র-শরতের অনুশীলনহীন গদ্যে এলাম, ততদিনে তলস্তয়, চেকভ, হেনরি জেমস, জেমস জয়েস, আঁন্দ্রে জিদ, ফ্রাঁনৎস কাফকা, মার্শাল প্রুস্ত, লরেন্স এসে গিয়ে দুনিয়া তোলপাড়।

বাংলা গদ্যের সীমাবদ্ধতার প্রথম কারণটি বলি। বাঙলায় তথাকথিত নবজাগরণ এসেছিল ইউরোপের কাছ থেকে ধার করে। এর ফলে আমাদের মধ্যে মৌলিক জীবনচিন্তক বা ইন্টালেচুয়ালের অভাব শুরু হয়ে যায় এবং নতুন ভাবনার উন্মেষ মার খায়।  তদুপরি ঔপনিবেশিক যুগে রাজনৈতিক পরাধীনতা এবং কংরেস ও তার ধামাধরা পার্টি-শাসনভুক্ত সামাজিক-আর্থিক অধিকারহীনতা আমাদেরকে প্রতিষ্ঠানের দালালি ও পা চাটতে বাধ্য করেছে।

দ্বিতীয়ত, বাংলা ভাষাকে এক বিরাট মেটামরফিসের মধ্যে দিয়ে পেরোতে হয়েছে। সাধু থেকে চলিত ভাষায় আসতেই অনেকটা সময় নষ্ট হয়েছে। আমরা এখনো তৎসম শব্দের মোট বয়ে বেড়াচ্ছি আর তথাকথিত ইতর শ্রেণীর ছোটলোক-জাত লক্ষ লক্ষ শব্দকে অভিধানে ঢুকতে দিচ্ছি না। আমরা উনিশ শতকে ধার্য করা ওই সাড়ে তেরোজন মুৎসুদ্দি বেনিয়ার মামুলি এক লক্ষ শব্দ নিয়েই ঘোঁট পাকিয়ে চলেছি।

তিন নম্বর কারণ, ওই যে বললাম, আমাদের প্রতিষ্ঠানমুখীতা। গেল-শতকের দ্বিতীয় দশকে লেখকরা দেখলেন সাহিত্য একটা চমৎকার জীবিকা হতে পারে। তিরিশ দশক থেকে নানা ধরনের পুরস্কার, বৃত্তি, খেতাব ও সরকারি আনুকূল্যের পাশাপাশি সাহিত্যক্ষেত্রে এক ধরনের মনোপলির সূচনা ঘটল। চল্লিশ থেকে লেখকরা নিয়ন্ত্রিত হতে লাগলেন ‘আনন্দবাজার’ ‘দেশ’ প্রভৃতি এক-একটি গোষ্ঠীর দ্বারা। পয়দা পেল ‘সাহিত্য-ব্যবসা’। লেখকদের অভ্যেস একটা নির্দিষ্ট বৃত্তে পাক খেতে লাগল। বাংলা সাহিত্য একটা লিমিটেড কোম্পানির কমোডিটি হয়ে দাঁড়াল। বোঝানো হল, এই কোম্পানির মালই শ্রেষ্ঠ। বাইরে সব ভুসিমাল। কোম্পানির প্রোডাক্টকে বাজারে সেরা বলে বিজ্ঞাপিত করা হতে লাগল। অর্থাগমের সুযোগ থাকায় লেখকরাও দু হাতে লিখতে লাগলেন। তাঁরা কেবলি নিরবচ্ছিন্ন উপস্থিতি নিয়ে ভাবিত হয়ে পড়লেন। কোনো কোনো লেখক এক বছরে সেই সংখ্যক উপন্যাস-গল্প লিখেছেন যা বিশ্বনন্দিত কোনো লেখক গোটা জীবনেও লিখতে পারেননি।

বাংলা গদ্যের সীমাবদ্ধতার আর একটি প্রধান কারণ হল আমাদের পাঠকতা। আমাদের মধ্যবিত্ত মানসিকতা। আদপে আমরা গাঁয়ের লোক। নগরের গোড়াপত্তন এই সেদিনের। আমরা এখন তিন-চার জেনারেশনের বেশি শহরে বাস করছি না। যে-কারণে আমরা নগরের ভাষা, নগরের দুঃখ, নগরের গান বুঝতে পারি না। বিদ্যাসাগর এত করলেন বিধবাদের জন্য, তবু বিধবারা শরৎচন্দ্র পড়েন। আমাদের লেখকরা শহরে এসেছেন খুব কমদিন হলো। তাঁদের স্বপ্নের রাজগৃহ ঐ লিমিটেড কোম্পানি। যা আমাদের জাতিচিহ্ন, যাকে দেখে বহির্বিশ্বের মানুষ বাঙালিকে চিনবে, জানবে, তাকে নিয়ে নতুন চিন্তাভাবনা করা, খাটা, ‘কাজ’ করার এলেম কজনের আছে? অশিক্ষা, অজ্ঞানতা, অনভিজ্ঞতার দগদগে ঘা চোখে পড়ে। মদ না খেয়ে, বেশ্যাবাড়ি না গিয়ে, জুয়া না খেলে, নেশাভাঙ না করে, গুণ্ডাদের সঙ্গে না মিশে, সমাজের নিচতলায় না ঘোরাঘুরি করে, চাষবাস না জেনে এসব বিষয় নিয়ে তারিয়ে তারিয়ে গপ্পো-উপুন্যাস লেখা হয়। আর এসব তোল্লাই পেয়েছে সেইসব পাঠকদের কাছে যাদের কাছে সাহিত্য পড়া মানে পমেটম, নিরক্ষরতার বেড়া টপকে, কৃত্তিবাসী রামায়ণ বা ঠাকুমার ঝুলি ছেড়ে দুম করে এইসব ফ্যাদানো গপ্পে যাঁরা মজে যান। এইসব অশিক্ষিত, আধা-শিক্ষিত লেখকদের ধরে প্রতিষ্ঠান তাঁদের পেছনচাঁছা হরিদাস বানিয়ে তাঁদেরকে নিয়েই পাঠকদের মনে একটা ভিসুয়াল সার্কেল তৈরি করে, —- ‘কোনো সমকালীন বিখ্যাত লেখকদের নাম মনে করতে পারেন যিনি দেশ শারদীয় সংখ্যায় লেখেননি?’ অর্থাৎ পাঠকদের জানতে দেওয়া হল না কমলকুমার মজুমদার নামে আমাদেরই ভাষায় এক প্রকাণ্ড গদ্যকার ছিলেন। অধিকন্তু, অদ্বৈত মল্লবর্মণ, জগদীশ গুপ্ত, গোপাল হালদার, অসীম রায়, অমিয়ভূষণ মজুমদার, দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, শান্তিরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, তপোবিজয় ঘোষ, বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, উদয়ন ঘোষ, সুবিমল মিশ্র, মলয় রায়চৌধুরী ইত্যাদি নামগুলো চেপে দেওয়ার কী হাস্যকর প্রচেষ্টা! আর এটা ঘটেছে, কেননা পাঠকদের পাঠদাঁড়া সমৃদ্ধ নয়।

তথাকথিত বাণিজ্যিক পত্রিকার ছোঁয়া বাঁচিয়ে যেসব লেখক প্রকৃতই সৃজনশীল ও ব্যতিক্রমী, যাঁরা নিভৃতে নিজেদের অনলস শ্রম দিয়ে নতুন গদ্য-প্রযুক্তি নির্মাণে ব্যস্ত, তাঁদের লেখালেখি এখনও বেশিরভাগ পাঠকের কাছে একটা অচেনা সংরক্ষিত ও উপদ্রুত অঞ্চলের মতো থেকে গেছে। স্বাভাবিকও বটে। কেননা সেসব পাঠক ঐসব আগরবাতি সাহিত্যের লেখকদের মোনো-কালচারাল মায়া কাটিয়ে বেরিয়ে আসতে পারছেন না। যে-ভাষায় পাঁজির বর্ষফল বা ধর্ষণের খবর লেখা হয় সেই একই ভাষায় নকশাল আন্দোলন বা কমলা টুডুর বৃত্তান্ত লেখা হলে যা হয়।

আমার দীর্ঘ চল্লিশ বছরের গদ্যচর্চার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বাংলা গদ্যে লেখকদের কাজ করার এন্তার অবকাশ। খেয়াল করবেন, রবীন্দ্রনাথের পর এ ভাষায় গদ্যের কাজ খুব-একটা এগোয়নি।  তিন-বন্দ্যোপাধ্যায়ের পারমুটেশন-কম্বিনেশন বাংলা গদ্যকে এক তিলও এগিয়ে দেয়নি। বরং সতীনাথ ভাদুড়ী মহানগরের কোলাহল, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থেকে দূরে থেকে মাত্র বিশ বছরের সাহিত্যজীবনে যেসব কাজ করেছেন, তা বিস্ময়কর। আকাদেমিক স্বীকৃতি পেতে হলে কলকাতার লিমিটেড কোম্পানির পয়দা-করা ধাঁচে গদ্যচর্চা করতে হবে এরকম হুইস্পারিং ক্যাম্পেনের চ্যালেঞ্জের সর্বোৎকৃষ্ট প্রতিবাদ কমলকুমার মজুমদার। গদ্যে নতুন রীতির খোঁজে কমলকুমার মজুমদার, অসীম রায়, অমিয়ভূষণ মজুমদার, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, লোকনাথ ভট্টাচার্য, উদয়ন ঘোষ, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, দেবেশ রায়, অরুণেশ ঘোষ, সুবিমল মিশ্র, নবারুণ ভট্টাচার্য, কমল চক্রবর্তী, দেবজ্যোতি রায়, রণবীর পুরকায়স্থ, অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়, অনিন্দ্য সান্যাল, সৌগত বালী, কৌস্তভ গঙ্গোপাধ্যায়, মৌমিতা মিত্র প্রমুখ স্ব-স্ব প্রাতিস্বিক পথ আশ্রয় করেছেন। বাজারের কোল আলো-করা লেখকরা গদ্য নিয়ে ভাবেন না। কেননা তাঁরা এসেছেন অন্যের তল্পিবাহক হয়ে, সাহিত্য করতে নয়, পয়সা বানাতে।  কিন্তু সৃজনশীল লেখককে ভাষার ইনবিল্ট কেমিস্ট্রি নিয়ে ভাবতে হয়, কেননা তিনি অন্য কোনো ফাঁদ-ফন্দি বা রপোট কারবারে নেই। বলতে কী, তিনিই কিন্তু ঘোচাবেন এই সীমাবদ্ধতা, ঘটাবেন বাংলা গদ্যের মুক্তি।

 

২.

নিজের জন্য এক্সক্লুসিভলি নিজেকে নিয়ে একটা লেখা শুরু করেছি, আর, কী আশ্চর্য, নিজের ফেলে-আসা জীবন নিয়ে লিখতে বসে, এতদূর এসে দেখছি, অনেক কিছুই না-লেখা রয়ে যাবে জীবনাবধি। খানিক স্মৃতিও ধ্বসে গিয়ে থাকবে। আমি নিরঙ্কুশ, নিরন্ন, পাংশুর মতো বেঁচে আছি। শেষ যেদিন পরীক্ষায় বসি, এম.এ, একটাও ড্যাশ, কমা বা দাঁড়ি ভুল হয়নি। একুশ-বাইশের খলবলে বয়সেও কত শান্ত, সমিধ, প্রফেটের ঘিলু! অ্যাদ্দুর এতবছর টানা লিখে এসে নিজের জীবনটাকে কার্যত যা দেখলাম, নিতান্ত ছোটবেলা থেকে আমি যা যা করেছি বা ভেবেছি এবং চাঁদমারি স্বরূপ পরবর্তীকালে যা লাগাতার সামনে থেকেছে আমার— সমস্তই আমার লেখালেখি ঘিরে, লেখালেখি আর লেখালেখিই ঘিরে। তার বাইরে এমন কিছুই করিনি, ভাবিনি, যা আমার আত্মজীবনীকে আলাদা মাত্রা যোগাতে পারে। অথচ, লেখালেখি-কেন্দ্রিক এই জীবন পেয়েও, চাঁদমারি সামনে রেখেও, আমি এদান্তি নিজের জীবনকে বড় এলোমেলো ছন্নছাড়া খামখেয়ালের বশে যাপন করেছি। এবং যাপনের যাবতীয় খুঁটিনাটি আমি আমার কিছু-কিছু উপন্যাসে তুলে ধরতে চেয়েও আপামর ব্যর্থ হয়েছি। পারিনি। পারলে হয়ত দেখা যেত, আমার জীবনের যেসব গল্প, তা সত্যি হলেও, গল্পের চেয়ে মারাত্মক ও নিষ্করুণ।

তাছাড়া এমনও অনেক কথা, পুশিদা অস্ত্র, আমার কান্না রাগ ব্রীড়া, বিশেষত বিকেল ঢলে চাদ্ধার সাঁঝ-মতন হলে, কালো লোমোলা বিশালদেহী আকাশের নিচে একা-একলা দাঁড়িয়ে থেকে বুকের ভেতরটা যখন একজাই ফাঁকা, ধড়াস, উজাড় আর যৎপরনাস্তি ইনসিকিওর্ড লাগে নিজেকে, এমন-যে ভয় কুণ্ঠা উদ্বেগ ত্রাস এসব গাদ পেতে থাকে যখন পিত্তির দহনপ্রদেশে, এবং যে-কোন ল্যাম্পপোস্টের তলায় বাইক খাড়িয়ে চিরকুটে টুকে নিই জীবনের মহোত্তম নোট, এবং এমনিতরো গোপন অরাজক আরও-কিছু যা আমার মা দাদা দিদি আত্মীয় বন্ধুরা কিম্বা পাশের বাড়ির ভঞ্জবাবু জানতে পারলে বাওয়াল হয়ে যাবে— আমি না-লেখা নিরস্ত অবস্থায় ছাড়তে পারছি না বলেই, এই নার্সিসাস টেক্সটে সমস্ত লিখে রেখে যাবো। জানি, সেসব সানুপুঙ্খ তুলে আনতে হলে যে-পরিমাণ আলাদা ভাষা, সিনট্যাক্স, শব্দের যোগান দরকার, এই মুহূর্তে আমার নেই। তবু লিখব। কেননা, আমার পরিপার্শ্বের মেকি শ্রদ্ধা ভালবাসা স্নেহ আমার চাই না। ছদ্ম ভালোবাসা আমার অভিপ্রেত না। ভাবতে পারো, এ আমার মিহি স্ববিরোধ; কিন্তু আমার খোয়ানোর আর কিছুই নেই।

অবশ্য, স্ববিরোধ কোথায় নেই? প্রেরণার সঙ্গে রফা হয়েছিল, ‘দাম্পত্য’ হবে না, ‘স্বামী-স্ত্রী’ হবে না, বাচ্চা হবে না। কেননা দাম্পত্য, এর চেয়ে খোশ মস্করা আর হয় না। আমরা জানতাম, স্বামী-স্ত্রী আর ইকুয়াল পার্টনারশিপের তামাম ভোকাবুলারিকে পুরুষতন্ত্রের দুরমুশ থুরে শেষ করে দিয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের মতো দুর্মদ কি আর কিছু? সুতরাং, কালক্রমে, কনজুগাল লাইফ নামের কায়েমি প্রতিষ্ঠানের কার্যত গুডডা-গুডডি ব’নেই রয়ে গেলাম আমরা দুজন। এবং, মাঝেমধ্যে মনে হয়েছে আমি ধোঁকা করছি, এ আমার জীবন নয়, এ আমার ছদ্মাচার। আমি আত্মমুগ্ধ, নিজেকে ভালবাসছি। কেননা সাহিত্য করে যখন অর্থ নেই, স্বীকৃতি সামান্য, যশ যৎকিঞ্চিৎ, সাহিত্যের যেন মানেই নেই কোনো, জীবন বা সত্যের অন্বেষা নেই বেশির ভাগ লেখকের কাছে, অথচ মিডিওকার ধান্দাবাজে ভরে গেছে চত্ত্বর— সেখানে বউবাচ্চা ও অর্বাক গিরমি রেখে জীবন রক্ত ঘাম শেষ-প্রোটোপ্লাজম-টুকু নিঙড়ে ভাষার বনেদে কিঞ্চিৎ উখো মেরে যেতে চেয়ে আজ এতগুলো বছর, বুকে বালিশ গুঁজে, দিস্তার পর দিস্তা, পেজের পর পেজ— এ নিছক স্বার্থপরতা নয়, নিজেকে ভালোবাসা? পাল্টাক্ষণে মনে হয়েছে, না, বাসছি না। কোন মানুষই কি নিজেকে ভালোবাসতে পারে? তা কি নিজের প্রতি অন্যের অনুভুতি মাত্র নয়? অন্যরা আমাকে যে-যে কারণে ভালোবাসে, আমি মাত্র সেই-সেই কারণে নিজেকে ভালোবাসছি!! সে তো আত্মপ্রেম নয়, মোহ নয়। বরং অন্যকে ভালোবাসা সহজ অনেক। সেটা বোঝাও যায় চট করে। নিজেকে ভালোবাসার, আত্মাচ্ছন্ন হবার মতো পর্যাপ্ত বিবরণ বা জটিলতা আমার লেখালেখিতেও নেই যে!  হয়ত এও আমার স্ববিরোধ, নিজেকে ভালোবাসতে না পারা। বা, অন্যকে দিয়ে নিজেকে দেখা।  হয়ত।

আসলে কী জানো পাঠিকা— তামাম জাহাজ ডুবিয়ে কলমে থিতু হয়েছি আমি, পলাইতে পথ নাই যম আছে পিছে। লেখা নিছক উপলক্ষ নয় আমার কাছে— লক্ষ্য। যদি প্লেটোর ‘ডিভাইন ইনস্যানিটি’ কবুল না-ও করি, কিংবা রবি ঠাকুরের ‘দৈববাণী’— তাহলেও দেখছি দৈব-উন্মাদনাই কিন্তু মূলে। অন্তত, পেছন থেকে অবিরহ ধাক্কাচ্ছে কেউ, এই টের অহরহ। আমি মনে করি সাহিত্য এমন এক জিনিশ যা একজন লেখককে একা এবং সম্পূর্ণ এককভাবে করে যেতে হয়। সেখানে কোন ক্যামেরাম্যান, কোরিওগ্রাফার বা বাজনাদার তার মদতগার নয়। বাইরের তৃণমাত্র মদত ছাড়াই এক-একজন লেখক। যারা সাহিত্যকে নিছক শখের বাগোয়ানি, জীবনের সেকেন্ডারি-কিছু, বা আর্ট অব প্লে, ‘কল্পনা-ক্রিয়ার স্বতন্ত্র বৃত্তি’, দুধ থেকে সরের মত করে আলাদা ভাবে দ্যাখে এবং মারিয়ে যায়, তাদের পাশে এক শ্মশানে শুতেও আমার বিবমিষা। অন্যের হাগুমাখা টিন বয়ে বেড়ানোর চেয়েও বীভৎস নিজের সঙ্গে এই গুলতাপ্পি।

‘বলাটাই যখন বিষয় হয়ে ওঠে, বলার ভঙ্গিটাই’— হ্যাঁ, গোদারের এই কথাটা হরদম মাথায় ঘুরপাক খায়। তথাকথিত ওপরবাজ ঢঙি-সাহিত্যের কোন ছকবাহার আমার আসে না। ফ্লো আসে ভেতর থেকে, একেবারে ছাঁকা, বেতরতিব। সেসব নিয়েই মুহূর্ত-ধারাপাতে নিজেকে হাজির করার চেষ্টা। কেননা আমার মনে হয়েছে আমি তৃতীয় বিশ্বের ঔপনিবেশিক মরফিয়ায় আক্রান্ত নিহায়ত ফিউডাল আর অতি নিকৃষ্ট কালো জঙ্গুলে মাটির বাসিন্দা— বঙ্গসাহিত্যে আমার এন্ট্রি মকাইদানা স্বরূপ, আমাকে চেবানো দায়। দ্বি-সংস্কৃতি, দোগলাকৃষ্টি, মায় ‘কালচারাল বাস্টার্ড’, শব্দ তিনটি ঢুয়ে এনে নিজের পিঠে বসাই। কেননা এসব শব্দ, এরা আমার মৌল স্বরূপও বটে। আমার দেখা, বলা, কাঁদা, মস্করা, খিস্তি কিংবা প্রেম কোন মেট্রোপলিস সিটি থেকে বিলটি কেটে আসবে না। আমি মনে করি আমার নিজস্ব কিছু কাদা, তাকে খড়-ভুসি দিয়ে গেঁথে দিতে পারলেই এক-একটা নির্মাণ। আমার পকেটে হরদম ছেঁড়া চিরকুট আর কলম, যখন যেখানে যেরম মুড আসে, বাইক খাড়িয়ে উৎরে নিই ঝটপট, আর বাড়ি ফিরে-ফিরেই, প্যারা। ভাবি, এই খাটুনি আর কালঘাম আমার জীবন আর লেখার মাঝ থেকে খোঁচঅলা হাইফেনটুকু উখড়ে ফেলতে পারে যদি!

সুতরাং, আমি লিখি আমার জন্যে। দায়বদ্ধতা, সে এখন বাংলা শব্দকোষে হাতির দাঁত ব্যতিরেকে আর কিছু না। কেননা এসব মনে করার, বিশ্বাস করার মূল বনেদটারই আজ ভুষ্টিনাশ হয়ে গেছে। বিশ শতকের গোড়া অব্দি তবু লেখক-বুদ্ধিজীবীদের অল্প-স্বল্প শোনা হতো। কিন্তু আমাদের নিজস্ব রাষ্ট্রযন্ত্র বিদেশি প্রভুদের এঁটোকাঁটা খেয়ে গাগতর ফুলিয়ে দুম করে যেদিন চড়ে বসল মসনদে, সেদিন বা তার ঠিক পরের দিন থেকে তথাকথিত লেখক-বুদ্ধিজীবীদের শোনবার কেউ থাকল না। তখন থেকে তাঁরা মসনদের চোখে ফালতু আর পালতু সম্প্রদায়-বিশেষ। ফালতু, কেননা মসনদ বা রাষ্ট্রযন্ত্র নিজের বোধ-কাঠামো গড়ে নেওয়ার পর তার ব্যাখ্যাকারীর প্রভাব থেকেও পুরোপুরি মুক্ত হতে চায়। ব্যাখ্যা বা ভাবনা পরিহার্য হলে ভাবুক-বুদ্ধিজীবীরাও ফিজুল হয়ে যায়। আবার পালতু, যেহেতু এসব লেখক-টেখকরা যাতে মাঝেমধ্যে গিয়ে মসনদের গাঁড়ের তলায় বসে ল্যাজ নেড়ে আসতে পারে তাজ্জন্যে নানারকম খেতাব, বৃত্তি আর পুরস্কার সমেত খুলে দেওয়া হয়েছে ‘সংস্কৃতি’ নামে একটা নিকো পার্ক। কবি-লেখকরা সেখানে কাঁধে ঝুলি ঝুলিয়ে পদ্য পড়েন, ভিড় জুটিয়ে বুকনি ঝাড়েন আর মধ্যেমধ্যে ‘সংস্কৃতি বাঁচাও’ ‘ভাষা বাঁচাও’ বলে হাঁকও পাড়েন— কিন্তু মসনদ বা তক্তা পালটে ফেলার বিষদাঁত তাঁদের নেই, মসনদ তা জানে।

অতএব, এহেন প্রেক্ষায় মধ্য বা নিম্নবিত্ত থেকে আগত একজন বাঙালি লেখক নিজের দায়বদ্ধতার টেঁটুয়া টিপে এই পর্যাপ্ত ক্রাইসিসে,পলিউশান আর পেরিক্লিস সমাজের হিপোক্রিট আবিলতায় বল্গাহীন কেঁদেই উঠতে পারে স্রেফ। সে প্রতিভাবান, রহস্যময়, শয়তান, পুণ্যাত্মা, ধড়িবাজ, দুশ্চরিত্র, পাগল, কমিউনিস্ট, তিনোমুলি, বিজু, ভিখিরি যা হোক, জড় ও অজড় দুই বিশ্বেই আজ সে পূর্ণত ত্যক্ত, বর্জিত, প্রোজঝিত। সমাজ তাকে পাত্তা দেয় না। তবু সে বিইয়ে চলেছে সহস্র-একের মুনড্রিয়ান খিচুড়ি। হাপিত্যেশ এই অংশটা কেউ পড়বে, ভালো লাগবে কারো। সে জানে প্রতিটি লেখার শেষে তার মৃত্যু, তবু।

আসলে, সে হল ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী। প্রকৃতি যত কবিতা গান ছবি মহাবিশ্বে রচনা করেছেন, তাতে তার মন ভরে না। সে আরও কিছু নতুন মাত্রা লাগিয়ে তাকে নিজের মত দেখতে, পেতে চায়। নির্মাণ করে। কবি দেখেন চুল সুন্দর, তবে বিদিশার নিশা। চোখ সুন্দর, তবে পাখির নীড়। রোদ সুন্দর, তবে কমলা রং। মানে, আমার চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ। আমারও কিছু রং, তুলি, ইকড়ি-মিকড়ি। ভাবি, ওটা ওভাবে নয়, এভাবে। শব্দকে নতুন করে সাজাই। সে সাজুক, বাজুক। সে পরাজিত দুখি না হয়ে, আনন্দের হোক। এমন কবিতা লিখি, এমন, যেন নিজের ভেতরের সবটা, অক্ষরে। অক্ষর বেজায় দুষ্ট ছেলে, পালিয়ে বেড়ায়। আড়ালে, গোপনে। ডাকি, আয় বাবা খগেন, আয় ব্যাটা নগেন। এমন করে সাজাব তোকে, আগে কেউ দেখেনি। মানুষের ভেতরের গাছপালা পল্লবিত হয়। আমার মধ্যে যেসব দুনিয়াদারি, জগৎজীবন, রাজাগজা তারা অক্ষরে সাজলে কেমন, সেইটে দেখি। ঢালাই মিস্ত্রির সতর্কতায়, শব্দ, ফার্নেস থেকে বের করে, ঢালি। আর কী পেতে চাই আমি, লিখে? আর কোন আনন্দ?

এবং, ঐ যে ডিভাইন ইনস্যানিটি, দৈব-উন্মাদনা— আমৃত্যু আমি তার নিগড় থেকে মুক্ত হতে পারব না। হ্যাঁ, সেখানে এসথেটিক প্লেজারই একমাত্র ডিভিডেন্ড।