কণিষ্ক চৌধুরী
শিক্ষক, গবেষক, প্রাবন্ধিক
পূর্ব প্রকাশিতের পর
তৃতীয় পর্ব: দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের বস্তুবাদ চর্চার গোড়ার কথা
দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ভারতীয় সমাজবিপ্লবের জৈবিক (organic) বুদ্ধিজীবী। এখানে শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে শ্রমিক-কৃষক মৈত্রীর ভিত্তিতে চলমান বিপ্লবের কথা বলা হয়েছে। বুদ্ধিজীবী শ্রেণি কোনও সমাজনিরপেক্ষ স্বতন্ত্র শ্রেণি নয়— তা বলবার অপেক্ষা রাখে না। গ্রামশির ধারণা অনুযায়ী শ্রমজীবী শ্রেণি শ্রেণিবিভক্ত সমাজকে চ্যালেঞ্জ করতে এবং আধিপত্যকারী শ্রেণিতে রূপান্তরিত হওয়ার প্রয়োজনে অন্য শ্রেণির বুদ্ধিজীবীদের আত্তীকরণের মধ্যে দিয়ে নয়, বরং নিজেদের জন্য পৃথক বুদ্ধিজীবী শ্রেণি নির্মাণ করে।[1] শ্রমজীবী শ্রেণির এই বুদ্ধিজীবীরাই বিপ্লবের জৈবিক বুদ্ধিজীবী। দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের দর্শনচর্চা ছিল শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থের সঙ্গে অচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ। এই শ্রমজীবী জনগণের মুক্তির সংগ্রামকে প্রসারিত ও স্থায়ী করতে তাঁকে চর্চা করতে হয়েছিল বস্তুবাদের ভারতীয় উৎসকে। লড়াই করতে হয়েছিল ভাববাদের বিরুদ্ধে। তিনি দেখান ভারতীয় দর্শন মানে একমাত্রিক ভাববাদী চিন্তাধারা নয়। এখানে বস্তুবাদও ছিল এবং তা ছিল যথেষ্ট শক্তিসম্পন্ন। আর গভীর বিশ্বাসের সঙ্গে উচ্চারণ করেন:
যে নবীন নিঃশ্রেণিক সমাজ আজ আসন্ন সেখানে মাথা খাটানোর চেয়ে গতর খাটানোর সম্মান কম নয়।[2]
২.
মূল আলোচনায় ঢোকার আগে কয়েকটি বহুল প্রচলিত সমস্যার কথা বলে নেওয়া প্রয়োজন। সাধারণভাবে দর্শন জগৎকে দুটো ভাগে ভাগ করা হয়— ভাববাদী দর্শন ও বস্তুবাদী দর্শন। এদের মূল পার্থক্যটি নিহিত হয়েছে ‘বস্তু আগে, না চেতনা আগে’— এই প্রশ্নের উত্তরের মধ্যে। যাঁরা বস্তুজগৎকে আদি বলেছেন তাঁরা বস্তুবাদী, আবার যাঁরা চেতনাকে প্রধান আসনে বসিয়েছেন তাঁরা ভাববাদী। কিন্তু এই দুই গোষ্ঠীই আবার নানা ভাগে বিভক্ত। তাদের মতামতগুলিও ভিন্ন ভিন্ন। তাই এদের কোনও মতবাদ হিসেবে না দেখে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বিচার করা উচিত। এ-যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য বলেছেন: “সাধারণভাবে প্রচলিত আইডিঅলিজম (ভাববাদ) ও মেটিরিআলিজম (বস্তুবাদ) শব্দদুটির কোনো দার্শনিক তাৎপর্য নেই।”[3] দ্বন্দ্বতত্ত্বই হল মূল দর্শন। এখানে একবগগাভাবে বস্তু বা চেতনাকে আদি হিসেবে ধরা হয় না। বরং বস্তু ও চেতনার দ্বান্দ্বিক সম্পর্কটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক পরিস্থিতিতে কোথাও বস্তু, আবার কোথাও বা চেতনা নির্ধারকের ভূমিকা পালন করে। গতির মধ্যেই রয়েছে এই পরিবর্তনশীল ভূমিকার বীজ।
দ্বিতীয় আর একটি সমস্যার উল্লেখ এখানে প্রয়োজন। এটা মনে করা হয় যে প্রাক-শ্রেণিবিভক্ত সমাজে ভাববাদের আবির্ভাব সম্ভব ছিল না। এটা তখনই সম্ভব হল যখন সমাজ শ্রেণিবিভক্ত হয়ে পড়ল অর্থাৎ শোষক-শোষিত, শাসক-শাসিততে বিভাজিত হল। এখন ঘটনা হল, শ্রেণিবৈষম্যের ফলে যে বিভাজিত সমাজের আবির্ভাব ঘটল সেখানে শুধু ভাববাদ নয়, বস্তুবাদেরও আবির্ভাব ঘটল— যা পূর্ববর্তী সমাজে দার্শনিক চিন্তা হিসেবে অনুপস্থিত ছিল। অর্থাৎ ভাববাদ ও বস্তুবাদ উভয় দার্শনিক মতেরই আবির্ভাব শ্রেণিবিভক্ত সমাজের গর্ভেই ঘটেছিল। দর্শনতত্ত্ববিদ হেমন্তকুমার গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন: “কঠোর কায়ক্লেশে কোনও রকমে জান্তব জীবন বাঁচিয়ে রাখার দায় থেকে মুক্ত এক পরভুক অবসরভোগী শ্রেণীর উদ্ভব না হলে প্রথম যুগের বস্তুবাদী মনন ও ভাবনাও সম্ভব হত না।”[4]
তৃতীয় সমস্যাটি হল— এটা ধরে নেওয়া হয় যে, বস্তুবাদী মানেই তিনি শোষিত/শাসিত শ্রেণির সহায়ক। বাস্তবে কিন্তু তা নয়, গ্রিক চিন্তাবিদ বস্তুবাদী হেরাক্লিটাস “অভিজাত শ্রেণীর পক্ষে এবং গণতন্ত্র ও জনসাধারণের বিপক্ষে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছিলেন। গণতন্ত্র, বণিকতন্ত্র ও জনসাধারণের প্রতি তাঁর অবজ্ঞা ও শ্রেণীবিদ্বেষ ছিল অপরিসীম।”[5] সুতরাং বস্তুবাদ বা বস্তুবাদী মানে নিপীড়িত জনসাধারণের স্বার্থরক্ষাকারী মত— এমন সরল সিদ্ধান্ত না করাই ঠিক।
চতুর্থত, আধুনিককালে এটা মোটেই মনে করা হয় না যে, বস্তুবাদের সকল ধরনের রূপই প্রগতিশীল। উদাহরণ হিসেবে যান্ত্রিক বস্তুবাদের কথা বলা দরকার। যান্ত্রিক বস্তুবাদ সমাজ ও প্রক্রিয়াগুলিকে যথাযথভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে না। দ্বন্দ্বতত্ত্বের সারবস্তু যে বস্তুর অভ্যন্তরস্থ দুই বিপরীতের ঐক্য— তা যান্ত্রিক বস্তুবাদীরা বুঝতে পারেন না বা বুঝতে চান না। তাঁরা এক অনড় ও বাহ্যিক সম্পর্কের সন্ধানে নিজেদের ব্যস্ত রাখেন। যার ফলে তাঁরা শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির পথ দেখানো দূরে থাক, বরং তার বিপরীত দিকেই যাত্রা করেন।
৩.
দেবীপ্রসাদের বস্তুবাদী ভাবনার পরিচয় মেলে তাঁর কিশোর সাহিত্যের মধ্যেই। এই সাহিত্য রচনা ছিল তাঁর কাছে বস্তুবাদী, আরও সুস্পষ্টভাবে দ্বন্দ্ববাদী দর্শন চর্চার একটি রূপ। কিশোর সাহিত্য রচনার পেছনে তার উদ্দেশ্য ছিল যুক্তিবাদ, বৈজ্ঞানিক মনোভাব ও দ্বান্দ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা। দর্শন সংক্রান্ত তাঁর প্রথম গ্রন্থটি হল ‘আধুনিক য়ুরোপীয় দর্শন’ (১৯৪৭ খ্রিঃ/১৩৫৩ বাংলা)। প্রকাশক বিশ্বভারতী। এটি বিশ্ববিদ্যাসংগ্রহ সিরিজের একটি গ্রন্থ। গ্রন্থটি আটটি শিরোনামে বিন্যস্ত—পটভূমি, ব্রহ্মবাদ ও আধুনিক ইংলন্ড, ব্রহ্মবাদের কয়েকটি মূলসূত্র, ক্রোচে, বস্তুস্বাতন্ত্রবাদ ও বিজ্ঞানবাদ খণ্ডন, প্রাগম্যাটিসম ও উইলিয়ম জেমস, বের্গসঁ এবং মার্কসবাদ: আজ ও আগামীকাল।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি দ্বন্দ্বতত্ত্বকে প্রয়োগ করেছেন। ইউরোপীয় দর্শনের গতিপ্রকৃতিকে বোঝবার জন্য। দ্বান্দ্বিক দর্শন চর্চার ভারতীয় একটি পদ্ধতির নাম হল ‘অরুন্ধতী ন্যায়’। এই পদ্ধতি অনুসারে জ্ঞান অন্বেষণের প্রক্রিয়াটি সরল থেকে জটিলে, স্থূল থেকে সূক্ষ্মে। দেবীপ্রসাদ তাঁর এই বইয়ে আধুনিক ইউরোপীয় দর্শনের একটি রূপরেখা উপস্থিত করেছেন। ওঁর কাছে ‘এ নেহাতই স্থূল, বাহ্য পরিচয়।’[6] বইটিতে উঠে এসেছে বিশ্বের রহস্যসন্ধানে কীভাবে দার্শনিকরা একে অপরের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দিয়েছেন। কীভাবে তাঁরা অপরের মত ও যুক্তিকে নস্যাৎ করে নিজেদের ভাবনাটিকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন। আর এই তর্ক-বিতর্কের মধ্যে দিয়েই আবির্ভাব ঘটেছে অভিজ্ঞতাবাদ, বুদ্ধিবাদ, স্বজ্ঞাবাদ, ব্রহ্মবাদ, বিজ্ঞানবাদ, বাস্তববাদ, ভাববাদ, বস্তুবাদ ও তার নানা রূপের। এভাবেই আধুনিক ইউরোপীয় দর্শন নানা সংঘাত ও সমন্বয়ের মধ্যে দিয়ে পথ করে নিয়েছে।
এখানে লক্ষ করার বিষয় হল যে, দেবীপ্রসাদ শুরু করেছেন হেগেলীয় ভাববাদ দিয়ে, আর গ্রন্থ শেষে পাওয়া যায় মার্কসীয় দর্শনের কথা। পূর্বপক্ষের বক্তব্য তুলে ধরে আলোচনার শুরু করলেও শেষপর্যন্ত (তাঁর মতে) সঠিক দর্শন মার্কসবাদে উপনীত হয়েছেন। ‘আধুনিক য়ুরোপীয় দর্শন’ তাঁর জীবনের একেবারে গোড়ার দিককার রচনা হওয়া সত্ত্বেও সেটির প্রকাশভঙ্গি ও গভীরতা কিছু কম ছিল না। বস্তুবাদ সংক্রান্ত চর্চায় এই গ্রন্থটিকে কোনওভাবেই অবহেলা করা যাবে না। বরং তাঁর ‘দর্শন চর্চা’র আলোচনা করতে গেলে বারংবার বইটির পাতা উলটে দেখতে হবে।
আরও একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা দরকার। বইটি প্রকাশিত হয়েছে ‘বিশ্বভারতী’ প্রকাশনার ‘বিশ্ববিদ্যাসংগ্রহ’ সিরিজের একটি বই হিসেবে। প্রকাশনা সংস্থাটি বস্তুবাদী তো নয়ই, মার্কসপন্থারও অনুসারী নয়। এক্ষেত্রে লেখক একজন ‘কট্টর’ মার্কসবাদী। সমস্যা হওয়ার কথা। জানি না সমস্যা হয়েছিল কিনা, কিন্তু গ্রন্থপাঠ শেষে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, লেখক গ্রন্থ রচনার ক্ষেত্রে কোনও আপসের পথ নেননি। কেটেকুটে বা অস্বস্তিকর অংশগুলি বাদ দিয়ে ভাববাদী বা বুর্জোয়া পণ্ডিতমহলে বইটিকে ভব্যসভ্য করে তোলার চেষ্টা করেননি। বরং দর্শনের এবং মানুষের মুক্তি খুঁজেছেন জ্ঞান ও কর্মের মিলনে। তাঁর ভাষায়: “মার্কসপন্থী… বলেন শুধু জ্ঞান নয়, শুধু কর্মও নয়, জ্ঞানকর্মের সার্থক সমুচ্চয়েই দর্শনের মুক্তি।”[7] আর এর সঙ্গে মানব-ইতিহাসের পটভূমিতে দর্শন-বিকাশের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তার সারসঙ্কলন করেন:
দর্শনে এই সরল সত্যের উপলব্ধি যে এতদিন হয়নি তার কারণ অবশ্য সামাজিক। সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সমাজে দেখা দিয়েছে শ্রেণীবিভাগ। একদিকে অধম মজুরের দল, যারা শুধু গতর খাটায় আর গতর খাটায় বলেই মাথা খাটাবার অবসর পায় না। অপরদিকে ধনিক প্রভুদের শ্রেণী, গতর খাটাবার দরকার তাদের নেই, মাথা খাটাবার ঢালাও অবসর। এবং যা কিছু সুন্দর, যা কিছু ভালো তাই যেমন এই ধনিক শ্রেণীরই সম্পত্তি বলে স্বীকৃত তেমনি এই ধনিক শ্রেণীর যা কিছু বৈশিষ্ট্য তাই পরম পুরুষার্থ বলে প্রচারিত— প্রচারিত হয়েছে গতর খাটানো নেহাতই ইতরের ধর্ম, চিন্তার মর্যাদা চরম মর্যাদা, শ্রেণী সমাজের চরম উৎকর্ষ ধনতন্ত্রে, ধনতন্ত্রের ছায়াশ্রয়েই তাই বিজ্ঞানবাদের অমন অখণ্ড প্রতিপত্তি। কিন্তু ধনতন্ত্রের দিন ঘনিয়ে এসেছে, তার ঐতিহাসিক ব্রতটুকু আজ উদযাপিত। পেশাদার প্রচারকের হাজার চিৎকারও তার নাভিশ্বাসের শব্দ ঢাকতে পারে না। দর্শনেও বিজ্ঞানবাদের পরমায়ু গতপ্রায়, আভিজাত্যের মহাব্যোম থেকে দার্শনিক নেমে আসবে ধুলোর পৃথিবীতে, শেষ হবে জ্ঞান ও বুদ্ধির স্বাধিকারপ্রমত্ত অহমিকা। যে নবীন নিঃশ্রেণিক সমাজ আজ আসন্ন সেখানে মাথা খাটানোর চেয়ে গতর খাটানোর সম্মান কম নয়।[8]
অনুচ্ছেদটির শেষ বাক্যটি যতটা না দার্শনিক, তার চেয়েও বেশি রাজনৈতিক বলে অনেকেরই মনে হতে পারে। কারণ এখানে রয়েছে শ্রমিক-বিপ্লবের কথা, সমাজতন্ত্রের কথা, দৈহিক শ্রমের মর্যাদার কথা। বিশুদ্ধতাবাদীদের মনে এই অস্বস্তি জন্মালেও এ-কথা অস্বীকার করা যাবে না যে, প্রসাদগুণে বাক্যটি একাধারে দার্শনিক ও কাব্যিক রূপ পেয়েছে। প্রাচীনকালের ভারতীয় বিজ্ঞানী ও দার্শনিকরা যে ভাবনার প্রকাশ ঘটিয়েছেন তার কাব্যসুষমায় এখনও মানুষ আমোদিত হয়। দেবীপ্রসাদ প্রাচীনদের সে পথ থেকে সরে আসেননি।
৪.
দেবীপ্রসাদ দ্বান্দ্বিক পদ্ধতিতেই তাঁর দর্শনচর্চা করেছেন। প্রাচীন গ্রিসে সংলাপের মধ্যে দিয়ে একটি মতকে পরাজিত করে দার্শনিক তাঁর নিজের মতটা প্রতিষ্ঠা করতেন। এটাই ছিল সে সময়কার দর্শন আলোচনার রীতি। ইংরাজি শব্দ dialectics এসেছে এই ডায়ালোগোস থেকে। ভারতে দর্শন জগতে তর্করীতিটিতে পূর্বপক্ষের মত নস্যাৎ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হত। দেবীপ্রসাদ এই রীতিকেই অনুসরণ করেছেন। ১৮৫২-তে বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজে সর্বদর্শনসংগ্রহকে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করে চার্বাক/লোকায়ত/বস্তুবাদী দর্শন চর্চার প্রাতিষ্ঠানিক সূত্রপাত ঘটান। এর প্রায় একশো বছর পর দেবীপ্রসাদের হাতে বস্তুবাদ চর্চা শুরু হয় মার্কসীয় দৃষ্টিকোণ থেকে। এ-বিষয়ে দেবীপ্রসাদের প্রথম গ্রন্থ ‘ভাববাদ খণ্ডন’। প্রথম সংস্করণটি কবে তা না জানা গেলেও দ্বিতীয় সংস্করণটি ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। এখানে লক্ষ করার বিষয় বইটির নাম ‘ভাববাদ খণ্ডন’। অর্থাৎ পূর্বপক্ষের মতটি সামনে এনে, তাকে বিশ্লেষণ করে অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলি উন্মোচন করা এবং এইভাবে ভাববাদের অ্যান্টিথিসিস বস্তুবাদকে প্রতিষ্ঠা করার প্রেক্ষাপট তৈরি করা।
‘ভাববাদ খণ্ডন’ গ্রন্থটি আটটি শিরোনামহীন অধ্যায়ে বিন্যস্ত। ভূমিকাতে দেবীপ্রসাদ ৯ নম্বর অধ্যায়ের কথা বললেও ১৯৯৩-এর অনুষ্টুপ সংস্করণে এই অধ্যায়টি অনুপস্থিত। ১৯৫৪-র শিরোনামহীন ভূমিকায় দেবীপ্রসাদ লিখেছেন গ্রন্থে সঙ্কলিত প্রবন্ধগুলি অনেকদিন আগে ‘পরিচয়’ (১, ৩, ৪ এবং ৬ নম্বর লেখা) ও ‘সাহিত্য পত্র’তে (২ নম্বর লেখা) বিভিন্ন প্রবন্ধের নামে প্রকাশিত হয়েছিল। অর্থাৎ ১৯৪০-এর দশক থেকেই এই লেখাগুলির সূত্রপাত। বইয়ের কথায় আসা যাক।
‘ভাববাদ খণ্ডন’ বইটিতে প্রবেশের আগে জেনে নেওয়া ভালো ভাববাদ কী। ইংরাজি শব্দ idealism-এর বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে ভাববাদ-কে গ্রহণ করা হয়। Idealism-এর অর্থে আরও শব্দ ব্যবহার করা হয়। যেমন দেবীপ্রসাদ নিজেই ‘বিজ্ঞানবাদ’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।[9] সংজ্ঞা দিয়েছেন এইভাবে: “বিজ্ঞানবাদের মূল কথা— বিশ্বপ্রকৃতির নিজস্ব সত্তা বলতে কোনও কিছু নেই, তার অস্তিত্ব আসলে নির্ভর করে জ্ঞান বা অভিজ্ঞতার ওপর।”[10] আধুনিক পাঠকের কাছে ‘বিজ্ঞানবাদ’ বলতে হয়তো অন্য কিছু বোঝায়। “কারণ যে বিশ্বপ্রকৃতি নিয়ে বিজ্ঞান (science)-এর কারবার, সেই বিশ্বপ্রকৃতিকেই এ ‘বিজ্ঞানবাদ’ বাতিল করে দিচ্ছে— এ আবার কী!”[11] বিজ্ঞান শব্দের অর্থ ধারণা। তাই “যে মতে ধারণাই একমাত্র সত্য তা-ই বিজ্ঞানবাদ।”[12] এবার অর্থটি স্পষ্ট হল। এ-দুয়ের মধ্যে শব্দগত পার্থক্য ছাড়া আর কোনও পার্থক্যই নেই। তাই idealism-এর প্রতিশব্দ হিসেবে ভাববাদ, বিজ্ঞানবাদ উভয়ই দর্শনসাহিত্যে বহুল প্রচলিত।
একটি প্রশ্নকে কেন্দ্র করে গোটা দর্শন-জগৎ দ্বিধাবিভক্ত— বস্তু আগে না চেতনা? যাঁরা চেতনা বা ভাবনা বা ধারণাকে আদি বলে মনে করেন তাঁরা ভাববাদী আর যাঁরা বস্তু থেকে চেতনার সৃষ্টি বলে মনে করেন তাঁরা বস্তুবাদী। উভয় গোষ্ঠীই আবার নানা ভাগে বিভক্ত। যেমন ভারতীয় ভাববাদ কখনও শূন্যবাদ, কখনও বিজ্ঞানবাদ, আবার কখনও ব্রহ্মবাদ নামেও পরিচিত। “শূন্যবাদ বলতে ঠিক কী বোঝায় তাই নিয়ে বিদ্বান-মহলে বিতর্ক আছে। একপক্ষের মতে শূন্যবাদ বলতে সত্যি কোথাও কিছুই নেই; সবটাই বেবাক তামাশার মতো শূন্য। অপরপক্ষ অবশ্য দেখিয়েছেন জগৎ-সংসারকে শূন্যবাদীরা ইন্দ্রজালের মতো অলীক মনে করলেও এই সংসারের পিছনে এক অনির্বচনীয় সত্য আছে। মায়াবাদ বা ব্রহ্মবাদ খুব কাছাকাছি কথা; বস্তুত অনেকে মন্তব্য করেছেন, ধর্মবিশ্বাসের অবান্তর বিতর্ক বাদ দিলে শূন্যবাদ ও মায়াবাদের মধ্যে কোনও তফাত নেই।”[13] ভাববাদ কাকে বলে— তার সারসঙ্কলন করতে গিয়ে দেবীপ্রসাদ লেনিনের সাহায্য নেন, লেনিন বলেন, ভাববাদ যেন এক মাথাহীন দর্শন। কারণ “ভাববাদ অনুসারে মানুষের মাথা নেই; তবু বুদ্ধি আছে।… এই মতবাদ অনুসারে বুদ্ধির অতিরিক্ত বাস্তব বস্তু কোথাও কিছু থাকতে পারে না, তাই মানুষের মাথাও নয়। শুধু বুদ্ধি বা অভিজ্ঞতা বা চিন্তা— যে নাম দিয়েই তার বর্ণনা করা যাক না কেন— সবচেয়ে চরম সত্য।”[14] চরম ভাববাদের প্রকাশ দেখা যায় অদ্বৈতবাদী শঙ্করের ভাবনায়। তাঁর ভাবনা অনুযায়ী ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা এবং ব্রহ্ম মানে বিশুদ্ধ চৈতন্য। আর অবিদ্যাজনিত কারণে মিথ্যা জগৎকে সত্য বলে মানুষ ভাবে। এটা হল দড়িকে ভ্রান্তিবশত সাপ বলে ভাবার মতো ব্যাপার।
দর্শন জগতে ভাববাদের বিরাট প্রভাব থাকলেও সকল দার্শনিকেরা তাকে নির্বিচারে মেনে নিয়েছেন এমনটা কিন্তু সত্য নয়। বরং তারা যুগে যুগে ভাববাদকে খণ্ডন করতে এগিয়ে এসেছেন। গ্রিসের সক্রেটিস, ভারতে শঙ্কর, জার্মানির ইমানুয়েল কান্ট, বস্তুস্বাতন্ত্রবাদী (Realist), অভিজ্ঞতা-বিচারবাদী (Empirio-critics), প্রয়োগবাদীরা (Pragmatists) ভাববাদকে খণ্ডন করার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত ভাববাদের কাছেই আত্মসমর্পণ করেছেন। ফলে ভাববাদের অবসান হয় না। এর মৃত্যু নেই। ভাববাদ যেন সেই মিশরের ফিনিক্স পাখি যে নিজের চিতাভস্ম থেকে নতুন করে জন্ম নেয় বারবার। এভাবেই দেবীপ্রসাদ তাঁর ভাববাদ খণ্ডনের আলোচনা শুরু করেছেন।
ভাববাদ খণ্ডন প্রচেষ্টার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তিনি তুলে ধরেছেন। কেবল পাশ্চাত্যের দার্শনিকরা নন, প্রাচ্যের চিন্তাবিদরাও ভাববাদের চূড়ান্ত সমালোচনা করেছেন। ভাববাদ খণ্ডনে আধুনিককালের মতো প্রাচীনকালেও যথেষ্ট উৎসাহ ছিল। ভারতে লোকায়ত/চার্বাকদের পাশাপাশি শঙ্করাচার্যকেও ভাববাদ (বিজ্ঞানবাদ) খণ্ডনে প্রবল উৎসাহী দেখা গেছে। কিন্তু পার্থক্যটা এখানেই যে, লোকায়ত/চার্বাকগণ ভাববাদকে খণ্ডন করে বস্তুবাদকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন, কিন্তু বিজ্ঞানবাদ (ভাববাদ)-কে খণ্ডন করেও শঙ্কর ভাববাদের গোলকধাঁধা থেকে মুক্তি পাননি। প্রাচীন গ্রিসের ক্ষেত্রেও ছবিটা প্রায় একইরকম।
প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস সোফিস্টদের ভাববাদী দর্শনকে খণ্ডন করতে এগিয়ে এসেছিলেন। সোফিস্টদের ভাবনায় ‘প্রতিটি মানুষই সব জিনিসের মাপকাঠি এবং যখন মানুষের ভিতরে মতপার্থক্য হয় তখন এমন কোনও বস্তুনিষ্ঠ সত্য থাকে না যার সাহায্যে বলা যাবে একজন সঠিক, অপরজন বেঠিক।’ এই মতবাদ মূলত সংশয়বাদী এবং অনুমান করা হয় এর ভিত্তি জ্ঞানেন্দ্রিয়ের ‘প্রতারণাশীলতা’।[15] দেবীপ্রসাদ দেখিয়েছেন যে সোফিস্টরা এই ভাববাদী দাবিকে নৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করতে চান।[16] সক্রেটিস এই মতকে ব্যঙ্গবিদ্রূপ সহযোগে তীব্র সমালোচনা করলেন। এসব কথা জানা যায় তাঁর ভক্ত প্লেটো ও জেনোফেনের লেখা থেকে। ভাববাদী দার্শনিক প্লেটোর রচনায় কিন্তু সক্রেটিস-দর্শন পরিণতি পায় ভাববাদ রূপেই। ভাববাদের সমালোচনা ভাববাদের কবলেই গিয়ে পড়ল।
প্রাচীন ভারতে ভাববাদ নানা রূপে প্রকাশিত হলেও এদের মধ্যে একটি শক্তিশালী রূপ হল বিজ্ঞানবাদ। ‘বিজ্ঞান’ মানে এখানে অবশ্যই science বোঝায় না। এর মানে ধারণা। বিজ্ঞানবাদীরা ছিলেন একটি বৌদ্ধ দার্শনিক সম্প্রদায়। অসঙ্গ (৩৫০ খ্রিস্টাব্দ) ও ধর্মকীর্তি (৬০০ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন বিজ্ঞানবাদী দর্শন সম্প্রদায়ের দুই প্রধান চিন্তাবিদ। তাঁদের আগেই ‘লঙ্কাবতার সূত্র’, ‘সন্ধি-নির্মোচন সূত্র’ ইত্যাদি মহাযানী সূত্রগুলির মধ্যে বিজ্ঞানবাদের ধারণাগুলি নিহিত ছিল। তাঁরা এগুলির সুনির্দিষ্ট রূপ দেন। “বিজ্ঞানবাদ একমাত্র বিজ্ঞানকেই (চেতনা/ধারণা) পরমার্থ তত্ত্ব স্বীকার করে, …। তারা পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের পঞ্চবিজ্ঞান এবং ষষ্ঠ মন-বিজ্ঞানের অতিরিক্ত আরও একটি বিজ্ঞানকে স্বীকার করে যার নাম আলয় বিজ্ঞান। এই আলয় বিজ্ঞান সেই তরঙ্গায়িত সমুদ্র, যেখানে তরঙ্গের মতো বিশ্বের সমস্ত জড় চেতন বস্তুরাশি প্রকট এবং বিলীন হতে থাকে।”[17] একই ভাবনায় ভাবিত ধর্মকীর্তির কাছে বিজ্ঞানই একমাত্র তত্ত্ব। বস্তুতত্ত্বের কোনও নিদর্শন নেই। নির্ণায়কস্থলে আমাদের কেবলমাত্র বিজ্ঞানই (চেতনা) মেলে, অতএব সেজন্যই “বস্তুরাশির দ্বারাই বিজ্ঞান সিদ্ধ, যাকে বিচারক বলা হয়— যেমন যেমন পদার্থের বিষয়ে চিন্তন করা যায়, তেমন তেমনই সেই পদার্থ ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে লুপ্ত হয়ে যায়, তার বস্তুর রূপ সিদ্ধ হয় না।”[18]
শঙ্করাচার্য এই বৌদ্ধ বিজ্ঞানবাদকে তীব্রভাবে আক্রমণ করে বলেন যে, “বিজ্ঞানবাদীর দল যে এমনতর আজগুবি কথা বলতে সাহস পায়, তার আসল কারণ তাদের মুখের মতো অঙ্কুশ নেই। অর্থাৎ অঙ্কুশের ভয় থাকলে এমন নির্লজ্জ মিথ্যে বলতে তারা সাহস পেত না। শঙ্কর বলছেন, বহির্জগৎকে উড়িয়ে দেবে কেমন করে? তার অনুভূতি যে অবিসংবাদিত! দিব্বি একপেট খেয়ে এবং রীতিমতো পরিতৃপ্ত হয়ে যদি কেউ বলে ‘কিছুই তো খাইনি, কই পরিতৃপ্তও তো হইনি’— তাহলে তার কথা যেরকম মিথ্যে হবে, সেইরকমই মিথ্যে বিজ্ঞানবাদীর কথা।”[19] বিজ্ঞানবাদীদের প্রতি তাঁর সমালোচনা যতই তীব্র হোক, শেষপর্যন্ত শঙ্কর কোথায় গিয়ে পৌঁছালেন! তাঁর মতবাদ হল ব্রহ্ম একমাত্র সত্য, বাকি সব মিথ্যা। ব্রহ্ম মানে বিশুদ্ধ চৈতন্য। শঙ্করের ব্রহ্মবাদ তাই চরমভাববাদ ছাড়া আর কিছুই নয়।
প্রাচীন পৃথিবীর ভাববাদ খণ্ডনের পর দেবীপ্রসাদ দেখান যে, আধুনিককালের দর্শনেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এ-প্রসঙ্গে তিনি ইউরোপীয় দর্শন ও দার্শনিকদের কথা উল্লেখ করেছেন। জার্মান দার্শনিক ইম্যানুয়েল কান্ট ভাববাদ খণ্ডনে এগিয়ে আসেন। তাঁর একটি গ্রন্থের একটি অধ্যায়ের নামই ‘ভাববাদ খণ্ডন’। ‘খণ্ডন’ করলেন তো ঠিকই, কিন্তু তারপর? দেবীপ্রসাদের বর্ণনায় পাওয়া যায়: “…কান্ট নিজেই এক অদ্ভুত দোটানায় পড়েছিলেন। একদিকে ভাববাদ খণ্ডন করা সত্ত্বেও ভাববাদের কাছেই করুণ আত্মনিবেদন, অপরদিকে বৈজ্ঞানিক বিবেকের দংশনে অন্তত খিড়কিদোর দিয়ে বস্তুবাদের মূল কথাকে সসঙ্কোচে আমন্ত্রণ, … তাঁর দর্শনের সচেতন দিকটুকু স্পষ্টই ভাববাদী: তাঁর মতে এই মূর্ত ও দৃশ্য জগৎ বুদ্ধি-নির্মাণ।”[20]
এর পরেই দেবীপ্রসাদ প্রত্যক্ষ বিচারবাদী আর্নস্ট মাখ (Ernst Mach, 1838-1916)-এর ভাববাদ খণ্ডন ও তার পরিণতির কথা উল্লেখ করেছেন। এখানে এটা বলা দরকার যে, ‘ভাববাদ খণ্ডন’ গ্রন্থে তিনি মাখ-এর বদলে ম্যাক এবং ‘প্রত্যক্ষ-বিচারবাদ’-এর বদলে ‘অভিজ্ঞতা-বিচারবাদ’ (empirio-criticism) পরিভাষা ব্যবহার করেছিলেন। দেবীপ্রসাদ বলেহেন যে, বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে, পরিভাষার ভেল্কি দেখিয়ে মাখ তাঁর দর্শন শুরু করেন। চিৎ ও অচিৎ-এর মধ্যেকার দূরত্বের অবসান ঘটিয়ে দর্শনের মুক্তি ঘটানোই মাখের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই প্রথম কাজ হল “মনোবিজ্ঞান আর পদার্থবিজ্ঞানের মিলন ঘটিয়ে এক বর্ণসঙ্করের জন্ম দেওয়া, সেই বর্ণসঙ্করের নাম হবে দর্শন— এবং এই দর্শন অনুসারে জড়পদার্থও পরমসত্তা নয়, মানস-পদার্থও পরমসত্তা নয়, এক তৃতীয় অপক্ষপাতী সত্তা পরমসত্তা। ম্যাক [মাখ] তার নাম দিয়েছেন element, অর্থাৎ মৌলিক সত্তা। ‘এটি’ আসলে ভাববাদীর পুরাতন মানস-অভিজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই নয়।”[21] অর্থাৎ এখানেও সেই একই গল্প। ভাববাদের প্রত্যাবর্তন, কিন্তু বৈজ্ঞানিক পরিভাষার আড়ালে।
হেগেলীয় ভাববাদের হাত থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োগবাদীরা (Pragmatists) প্রয়োগবৃত্তির ওপর নির্ভরতার কথা বললেন। “উক্ত ধারণা বা মতবাদ যদি জীবনের সুখানুভূতির সন্ধান দেয়, তবেই তাকে যথার্থ বলে মানা যাবে, যদি না দেয়, তাহলে বলতে হবে তা ভ্রান্ত। হাজার বাকবিতণ্ডায় যে তর্কের মীমাংসা নেই, প্রয়োগের জাদুস্পর্শে নিমেষে তার মীমাংসা হয়ে যায়।”[22] দেবীপ্রসাদ দেখান যে, এখানে প্রয়োগের কথাটি নতুন হলেও, এই প্রয়োগের মূল তাৎপর্য শেষপর্যন্ত “সুখানুভূতি— শেষপর্যন্ত অনুভূতিই, মানস-অভিজ্ঞতাই।”[23] প্রাচীনকালের গ্রিক সোফিস্টরা এই কথাই বলত। সুতরাং প্রয়োগবাদীরা যা বললেন, তা আসলে নতুন পোশাকে পুরনো ভাববাদেরই কথা।
এর পরেই দেবীপ্রসাদ ইংরেজ দার্শনিক জর্জ এডওয়ার্ড মুর (১৮৭৩-১৯৫৮)-এর নব্য-ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের ভাববাদ খণ্ডন ও তার পরিণতির কথা উল্লেখ করেছেন। নব্য-ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদীরা ভাববাদীদের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগ করেছেন। দেবীপ্রসাদের মতে যুক্তিগুলি দুর্বল এবং অসার। এই ঘরানার আর এক দার্শনিক স্যামুয়েল আলেকজান্ডার (১৮৫৯-১৯৩৮) ভাববাদ খণ্ডনের ক্ষেত্রে জ্ঞানের উপাদান হিসেবে মন বা জ্ঞাতা যখন স্বীকার করে নেন, তখন ভাববাদীদের হাতেই অস্ত্র তুলে দেন। অপর এক নব্যস্বাতন্ত্রবাদী দার্শনিক বার্ট্রান্ড আর্থার উইলিয়ম রাসেল (১৮৭২-১৯৭০)-কেও দেবীপ্রসাদ ‘বর্ণচোরা ভাববাদী’ বলে চিহ্নিত করেছেন।[24]
বুদ্ধি দিয়ে বা তর্ক করে ভাববাদকে খণ্ডন করা যায় না। তাহলে কীভাবে তা সম্ভব? দর্শন কেন ভাববাদের একচ্ছত্র আধিপত্য থেকে মুক্তি পায়নি? দেবীপ্রসাদের উত্তর হল, বিশুদ্ধ দর্শনচর্চার মধ্যে এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিনি উত্তরের সন্ধান করতে গিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যান নৃতত্ত্ব ও সমাজতত্ত্বের রাজত্বে। কারণ অনুসন্ধান করেন প্রাক-শ্রেণি সমাজ থেকে শ্রেণীবিভক্ত সমাজের উত্তরণের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ঘটনাবলির মধ্যে। বইটির তৃতীয় অধ্যায়ের এটিই মূল বিষয়। এখানে তিনি দেখালেন কীভাবে সমাজে ম্যাজিক বা ইন্দ্রজালের আবির্ভাব ঘটল এবং সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জন্ম নিল ধর্ম। হাত ও মাথার অর্থাৎ মেহনত ও চেতনার মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটল। এবং মেহনতের ওপর চেপে বসল চেতনা— যা শ্রেণিবিভক্ত সমাজের অনুষঙ্গী। “ধর্মেরই বিশুদ্ধতম সংস্করণ ভাববাদ।”[25] এভাবেই ভাববাদের সামাজিক ভিত্তি খোঁজার চেষ্টা করলেন তিনি। অর্থাৎ সমাজবিচ্ছিন্ন দর্শনচর্চা নয়, বরং সামাজিক অবস্থা ও বস্তুগত পরিবর্তনের সঙ্গে সংযুক্ত করে ভাববাদের অবস্থান নির্ণয় করতে চাইলেন, বেরিয়ে আসতে চাইলেন বিশুদ্ধ দর্শনচর্চার গোলকধাঁধা থেকে।
আদিম সাম্যবাদী সমাজের শ্রেণিবিভাগ ছিল না। সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হত। যৌথতাই ছিল সে জীবনের মূল কথা। হাত ও মাথার মধ্যে কোনও দূরত্ব তৈরি হয়নি। “মানুষের সংস্কৃতির সবটুকুকে তখন জুড়ে ছিল তার নাচ আর তার ইন্দ্রজাল কিংবা নামে-ইন্দ্রজাল মেশা এক প্রাগবিভক্তি সাংস্কৃতিক সত্তা।”[26] বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মানুষ বারংবার নাস্তানাবুদ হত ঠিকই, কিন্তু মোটেই হাল ছেড়ে দিত না। প্রকৃতিকে তারা জয় করতে চাইত, আর সেই কারণেই প্রকৃতিকে জানতে চিনতে ও শিখতে শুরু করল। “জ্ঞান এসেছে সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে, আবার জ্ঞান হয়েছে সংগ্রামের অস্ত্র, তাই সংগ্রামকে বাদ দিয়ে, নিছক তত্ত্বজিজ্ঞাসার কথা আদিম মানুষের বেলায় ওঠেই না। কেবল মনে রাখতে হবে এ সংগ্রাম মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির, মানুষের সঙ্গে মানুষের নয়।”[27]
ইন্দ্রজাল কিন্তু ধর্ম নয়। ইন্দ্রজাল থেকেও ধর্ম আসেনি। মূলগতভাবে এ দুটি ভিন্ন। ইন্দ্রজাল হল প্রকৃতিকে যে কাজে মানুষ বাধ্য করতে চায়, সে নিজেই সেই কাজটার নকল করে। দেবীপ্রসাদ জেন হ্যারিসনকে[28] উদ্ধৃত করেছেন:
অসভ্য মানুষ হল কাজের মানুষ। তার নিজের মনে যে কাজ করবার ইচ্ছে, সে কাজ করবার জন্য কোনও দেবতাকে অনুরোধ করবার বদলে সে নিজেই কাজটা সারবার চেষ্টা করে। প্রার্থনার বদলে সে উচ্চারণ করে মন্ত্র। এক কথায়, সে ইন্দ্রজাল ব্যবহার করে, আর প্রায়ই সে মেতে ওঠে ঐন্দ্রজালিক নাচে। রোদ বা হাওয়া বা বৃষ্টি চাইলে সে গির্জায় গিয়ে কোনও অলীক দেবতার সামনে নুয়ে পড়ে না, নিজের গোষ্ঠীকে আহ্বান জানায়— আর তারপর সকলে মিলে একসঙ্গে রোদের নাচ বা হাওয়ার নাচ বা বৃষ্টির নাচ নাচতে শুরু করে। ভালুক শিকার বা ভালুক ধরবার আগে সে ভালুককে বশ করবার মতো শক্তি পাওয়ার আশায় তার দেবতার পায়ে মাথা কোটে না, শিকারের মহড়া দেয় ভালুক-নাচ নেচে।[29]
ইন্দ্রজাল ও তাকে কেন্দ্র করে যে সংস্কৃতি আদিম মানুষের ছিল তার বৈশিষ্ট্যগুলি মোটামুটি এইরকম:
প্রথমত, এ সংস্কৃতি ব্যক্তি নয়, সমষ্টির সঙ্গে জড়িত।
দ্বিতীয়ত, এই সংস্কৃতি গভীরভাবে কর্মের সঙ্গে যুক্ত। প্রকৃতিকে জয় করার তাগিদ যেমন রয়েছে, তেমনই সেই উদ্দেশ্যকে সফল করতে রয়েছে প্রয়োগ। অর্থাৎ জ্ঞান ও কর্ম বা মেহনত সেসময়ে পৃথক হয়ে যায়নি।
তৃতীয়ত, ধর্মে থাকে দেবদেবীর কাছে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ বা তাদের কাছে ভিক্ষা চাওয়া। ইন্দ্রজালে থাকে প্রকৃতিকে বাধ্য করা বা জয় করার চেষ্টা।
চতুর্থত, এখানে প্রকৃতিকে আবিষ্কার করার প্রচেষ্টার মধ্যে থাকে অস্ফূট বস্তুবাদ। যা আবার বিজ্ঞানের বীজগুলিকে সযত্নে বিকশিত করেছিল নিজের গর্ভে।
ভাববাদের সঙ্গে কিন্তু ধর্ম সংযুক্ত। ইন্দ্রজালের পর ধর্মের আবির্ভাব ঘটলেও ধর্ম কিন্তু ইন্দ্রজালের উন্নত ও সংস্কৃত সংস্করণমাত্র নয়। যদিও অনেকেই তা মনে করেন। দেবীপ্রসাদ কিন্তু এই ভুলটি ধরিয়ে দিয়েছেন। তিনি নৃতাত্ত্বিক জেমস ফ্রেজারের গবেষণাকে যথাযথ মূল্য দিলেও তাঁর বুর্জোয়া সঙ্কীর্ণতাকে চিহ্নিত করতে ভুল করেননি। ফ্রেজারের কাছে ধর্ম উন্নততর মানবসমাজের সংস্কৃতি। এটাই ফ্রেজারের বুর্জোয়া সঙ্কীর্ণতা, যা তাঁর বৈজ্ঞানিক চেতনাকে আচ্ছন্ন করেছে। চতুর্থ রচনাটিতে দেবীপ্রসাদ ইন্দ্রজালের পর ধর্মের আবির্ভাব ও শ্রেণিহীন সমাজ থেকে শ্রেণিবিভক্ত সমাজে উত্তরণের সম্পর্কটি আলোচনা করে দেখান যে, এর পিছনে কীভাবে প্রকৃতির বিরুদ্ধে মানুষের যৌথ সংগ্রাম বদলে গিয়ে তা মানুষের সঙ্গে মানুষের সংগ্রামের রূপ পেল। সামাজিক অনিশ্চয়তার হাত থেকে মুক্তি পেতে মানুষ কীভাবে ধর্মকে মেনে নিতে বাধ্য হল। অর্থাৎ সমাজের গভীরেই রয়েছে ধর্মের বীজ, আর তা হল শ্রেণিবিভক্ত সমাজ। আর তাই সামাজিক প্রেক্ষাপটটি না বুঝে নাস্তিক্যবাদী যে প্রচেষ্টার আবির্ভাব, অবশ্যম্ভাবীভাবে তা বিফলে গেছে।
দেবীপ্রসাদের মতে, ধর্মের মার্জিত রূপ ভাববাদ। ইন্দ্রজালের পথ ছিল প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে জয় করার পথ, প্রয়োগের পথ, নিয়ন্ত্রণ করার পথ। এটার সঙ্গে বস্তুবাদ নিবিড়ভাবে যুক্ত। আর অন্যদিকে আছে ‘বিপর্যয়-বোধ’কে জয় করার পথ। এটা হল ভাববাদের পথ। “তার মানে, মানুষের যে-চেতনায় এই বিপর্যয়ের প্রতিচ্ছবি, সেই চেতনার ওপরেই এমন প্রলেপ দেওয়া, এমনভাবে সেই চেতনাকে বদল করে নেওয়া, যাতে বিপর্যয় থাকলেও বিপর্যয় সংক্রান্ত হুঁশটুকু না থাকে। সেই পথই হল ধর্মের পথ।”[30] ভাববাদ খণ্ডনের ৩, ৪ ও ৫ নম্বর লেখার বিষয়বস্তু মোটামুটি এটাই।
৬ নম্বর লেখাটিতে দেবীপ্রসাদ পাঠককে তাঁর অনবদ্য রচনাশৈলীর মাধ্যমে নিয়ে যান দার্শনিকদের জগতে, তাঁদের কথা ও কর্মের জগতে। এখানে মূলত আলোচনা করা হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীর গ্রিক শহর মিলেটাস-এর বাসিন্দা থ্যালিস (খ্রিস্টপূর্ব ৬৪০-৫৫)-এর কথা। থ্যালিস দার্শনিক ও বিজ্ঞানী। তিনি দেবতাদের কল্পকাহিনিকে অবজ্ঞা করে জাগতিক বিষয়সমূহের মধ্যেই বিশ্ব-রহস্যকে বোঝার চেষ্টা করেছেন। তাঁর প্রচেষ্টার ঐতিহাসিক সামাজিক প্রেক্ষাপটটি তুলে ধরে দেবীপ্রসাদ এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে, বিজ্ঞান ও দর্শনকে বুঝতে হবে তার প্রেক্ষাপটের সাহায্যে, অর্থনৈতিক চাহিদা এবং শ্রেণিগত অবস্থান চিহ্নিত করার মধ্যে দিয়ে। পরবর্তীকালে দেবীপ্রসাদ ভারতের আরুণি-উদ্দালককে পৃথিবীর প্রথম বিজ্ঞানী হিসেবে চিহ্নিত করেন।[31] তাঁর চিন্তার সঙ্গে গভীরভাবে ভাববাদ বিরোধিতা ও বস্তুবাদের প্রতি সমর্থন জড়িয়ে আছে। ছান্দোগ্য উপনিষদে এর বেশ কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়। অর্থাৎ প্রাচীন গ্রিসের মতোই প্রাচীন ভারতে ভাববাদ একেবারেই ফাঁকা মাঠে গোল করতে পারেনি। সেখানেও সে সময়েও ভাববাদ খণ্ডনের প্রচেষ্টা চলেছে বেশ ভালোভাবেই।
থ্যালিসের পরে (৭ নম্বর লেখাটিতে) দেবীপ্রসাদ উল্লেখ করেছেন পিথাগোরাসপন্থীদের দর্শনের ধর্মমোহের কথা। পিথাগোরাসের সময়ে (খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক) গ্রিস অনেক পালটে গেছে। থ্যালিসের সময় তখনও হাত ও মাথার পূর্ণ বিচ্ছেদ হয়নি। কিন্তু পিথাগোরাসের সময়ে গ্রিসে তখন পূর্ণরূপে দাসব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ফলে দৈহিক পরিশ্রমের কাজটা পুরোপুরি ক্রীতদাসদের করতে হত। আর মেহনতবিচ্ছিন্ন নির্লিপ্ত জ্ঞানচর্চা হয়ে পড়ল জীবনের পরম পুরুষার্থ, দাসপ্রভু আর তাদের সহায়তাকারীদেরই একমাত্র এ সুযোগ ছিল। পিথাগোরাসপন্থীদের পরজীবী সামাজিক অবস্থান তাঁদের ধর্মের পথে, ভাববাদের পথে নিয়ে গিয়েছিল। থ্যালিস যেখানে বস্তুজগৎকে সত্য বলে ধরে নিয়ে এগিয়েছিলেন, সেখানে পিথাগোরাসপন্থীরা জন্মান্তর, পাপ-পূণ্য ও প্রবল ক্ষমতাশালী ভগবানের আধিপত্যের ধারণা প্রচার করলেন।
শেষ ও ৮ নম্বর লেখাটি পুরোপুরি প্রাচীন ভারতের বস্তুবাদী চিন্তাধারা চার্বাক/লোকায়ত সংক্রান্ত আলোচনা। এই অধ্যায়টি একটি মিথকে চূর্ণ করেছে। ১৯৪০-এর দশকে তো বটেই, এখনও এটা বহুজনের বিশ্বাস যে ভারতীয় দর্শন-প্রস্থানগুলি আধ্যাত্মিক/ভাববাদী। চার্বাক/লোকায়তদের প্রত্যক্ষ ও মূল রচনা/গ্রন্থগুলি না পাওয়া গেলেও, ব্রাহ্মণ্যবাদী ভাববাদী সমালোচকদের সমালোচনায় বারংবার লোকায়ত/চার্বাকদের নাম উঠে এসেছে। সুযোগ বুঝে তাঁদের বেশ ভালোরকমই গালমন্দ করা হয়েছে। কথা হল প্রাচীন ভারতে সকল দর্শনই যদি অধ্যাত্মবাদী/ভাববাদী হত, তাহলে বস্তুবাদীদের প্রতি সমালোচনায় ব্রাহ্মণ্যবাদীদের এত আগ্রহ, এত আয়োজন কেন? কারণ প্রাচীন ভারতে বস্তুবাদী চার্বাক/লোকায়তদের বেশ দাপট ছিল। ফলে সেই দাপটকে দমন করার জন্য একদিকে যেমন ভাববাদী দার্শনিকদের দার্শনিক যুক্তির সাহায্য নেওয়া হয়েছিল, তেমনই রাজশক্তিরও শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজন পড়েছিল।
অধ্যায়টি শেষ হয়েছে কয়েকটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়ের উল্লেখ করে। প্রথমত, চার্বাক দর্শন প্রাচীন ভারতীয় শ্রেণিসংগ্রামের একমাত্র শূদ্র সংস্করণ। দ্বিতীয়ত, ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় শাসকেরা শূদ্রদের দমন করে, শূদ্র দর্শনের পুথি নিশ্চিহ্ন করেও শান্তি পায়নি। তাদের দর্শনকে বিকৃত করে, এমনকি, অসুর দমনের লক্ষ্যে এই দর্শন তাদের নিজেদের সৃষ্ট বলতেও দ্বিধা করেনি। তৃতীয়ত, এর পাশাপাশি চলে আত্তীকরণের প্রক্রিয়া। বর্ণ-জাত বিরোধী, দেবদেবী বিরোধী বুদ্ধকেও দশ অবতারের একজন বানিয়ে ফেলা হয়েছে, আবার যে ‘গণেশ’ ছিল প্রাগার্য ও অনার্য সঙ্ঘের নেতা ‘রক্ত কলুষ বিঘ্নরাজ’ তাকেই ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের আঙিনায় ঢুকিয়ে নেওয়া হল কৌশলে ‘সিদ্ধিদাতা গণেশ’ হিসেবে। এই বিষয়টি নিয়ে দেবীপ্রসাদ তাঁর ‘লোকায়ত দর্শন’ (১৯৫৬) এবং ‘Lokayata—A Study in Ancient Indian Materialism’ (1959) গ্রন্থে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন। যথাসময়ে সে-কথায় আসা যাবে।
গ্রন্থপঞ্জি:
- গঙ্গোপাধ্যায়, হেমন্তকুমার। ২০১০। সমাজ সাহিত্য ও দর্শন। কলাকাতা: অবভাস।
- ঘোষ, বিনয়। ২০১১। বিদ্যাসাগর ও বাঙালী-সমাজ। কলকাতা: ওরিয়েন্ট ব্ল্যাকসোয়ান।
- দ.প্র.চ. (চট্টোপাধ্যায়, দেবীপ্রসাদ)। ১৯৯৩। ভাববাদ খণ্ডন। কলকাতা: অনুষ্টুপ, ২য় সংস্করণ (১৯৫৪)-এর পুনর্মুদ্রণ।
- বি.বি.স. (বিশ্ববিদ্যা সংগ্রহ)। ১৪২২ বাংলা। দর্শন। কলকাতা: বিশ্বভারতী, বর্তমান নিবন্ধে উল্লিখিত দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের ‘আধুনিক য়ুরোপীয় দর্শন’ প্রবন্ধটি ১৩৫৩ (বাংলা) সালে পৃথক পুস্তিকা আকারে বিশ্বভারতী থেকে প্রকাশিত হয়েছিল।
- বি.র.স. (বিদ্যাসাগর রচনা সংগ্রহ)। ১৯৭২। তিন খণ্ডে সম্পূর্ণ। কলকাতা: সাক্ষরতা প্রকাশন।
- বিদ্যারত্ন, শম্ভুচন্দ্র। ২০০২। বিদ্যাসাগর জীবন চরিত ও ভ্রম নিরাস। কলকাতা: চিরায়ত প্রকাশন।
- ভট্টাচার্য, কৃষ্ণকমল। ১৯৯৭। রচনা সংগ্রহ। কলকাতা: সুবর্ণরেখা।
- ভট্টাচার্য, রামকৃষ্ণ। ২০১০। চার্বাক চর্চা। কলকাতা: স্বদেশ।
- ভট্টাচার্য। রামকৃষ্ণ। ২০১১। বিদ্যাসাগর: নানা প্রসঙ্গ। কলকাতা: চিরায়ত প্রকাশন।
- ভট্টাচার্য। রামকৃষ্ণ। ২০১৩। বস্তুবাদ জিজ্ঞাসা। কলকাতা: অবভাস।
- রাসেল, বার্ট্রান্ড। ১৯৯৮। প্রথম খণ্ড। পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস। কলকাতা: বাউলমন প্রকাশন। ভাষান্তর: শত্রুজিৎ দাশগুপ্ত, শর্মিষ্ঠা রায়।
- শাস্ত্রী, শিবনাথ। ২০০৮। প্রবন্ধাবলি। সম্পাদনা: বিমান বসু। ২০০৮। প্রসঙ্গ: বিদ্যাসাগর। কলকাতা: বঙ্গীয় সাক্ষরতা প্রসার সমিতি।
- সাংকৃত্যায়ন, রাহুল। ১৯৯৯। বৌদ্ধ দর্শন। কলকাতা: চিরায়ত প্রকাশ প্রাইভেত লিমিটেড।
- Chattopadhyaya, Debiprasad. 2007. Indian Philosophy— A Popular Introduction. New Delhi: People’s Publishing House.
- D.P.C. (Debiprasad Chattopadhyaya). 1996. Vol. I. History of Science and Technology in Ancient India: The Beginnings. Calcutta: Firma KLM Private Limited.
- Gramsci, Antonio. 2009. Selections from the Prison Notebooks. New Delhi: Orient Blackswan Private. Limited., ed. and translated by Hoare.
- Guha, Arabinda. 1971. Unpublished Letters of Vidyasagar. Calcutta: Reba Guha.
- Forgaes, David (ed.). 2014. The Antonio Gramsci, Reader. Delhi: Aakar Books.
- Vidyasagar, Pandita Iswarachandra (ed.). 2019. Sarvadarsana Samgraha (by Madhavacharya). Kolkata: The Asiatic Society, with an English translation by E. B. Cowell & A. E. Gough.
- D.P.C. 1991. History of Science and Technology in Ancient India. Calcutta: Firma KLM Private Limited.
[1] Gramsci. 2009 : 6 এবং Forgacs. 2014 : 300.
[2] বি.বি.স.। ১৪২২ বাংলা : ১৭৫।
[3] ভট্টাচার্য, রামকৃষ্ণ। ২০১৩ : ১২।
[4] ২০১০ : ৮২।
[5] পূর্বোক্ত, ৮৩।
[6] বি.বি.স.। ১৪২২ বাংলা : ১২৭।
[7] পূর্বোক্ত, ১৭৫।
[8] পূর্বোক্ত, ১৭৫।
[9] বি.বি.স.। ১৪২২ বাংলা : ১২৯।
[10] পূর্বোক্ত।
[11] দ.প্র.চ.। ২০১৬ : ৬৮।
[12] পূর্বোক্ত, ৬৮-৯।
[13] দ.প্র.চ.। ২০১৬ : ৭০-৭১।
[14] দ.প্র.চ.। ১৯৯৩ : ১।
[15] রাসেল। ১৯৯৮ : ১ : ৯৪।
[16] দ.প্র.চ.। ১৯৯৩ : ৫।
[17] সাংকৃত্যায়ন। ১৯৯৯ : ৮৪।
[18] পূর্বোক্ত, ১১৪।
[19] দ.প্র.চ.। ১৯৯৩ : ৩।
[20] পূর্বোক্ত, ৭।
[21] দ.প্র.চ.। ১৯৯৩ : ৯।
[22] পূর্বোক্ত, ৯-১০।
[23] পূর্বোক্ত, ১০।
[24] পূর্বোক্ত, ১৫।
[25] পূর্বোক্ত, ৪৩-৪৪।
[26] পূর্বোক্ত, ৩০-৩১।
[27] পূর্বোক্ত, ৩২।
[28] Ancient Art and Ritual. 1935.
[29] পূর্বোক্ত, ৩৩।
[30] পূর্বোক্ত, ৬৬।
[31] DPC. 1991 : 2 : 90.