অনর্ঘ মুখোপাধ্যায়
লেখক ভারতীয় ও পাশ্চাত্য সঙ্গীতে মগ্ন, কথা ও সুরে সঙ্গীতস্রষ্টা, একটি বাংলা ব্যান্ডের ভোকালিস্ট, গীতিকার, সুরকার ও পিয়ানিস্ট। সঙ্গীতের শাস্ত্রীয় ও টেকনিকাল বিষয়ে যেহেতু সকলে সমানভাবে অবগত নন, অবগত থাকার কথাও নয়, তাই সকল পাঠকের সুবিধার্থে গত পর্বগুলির মতো এই পর্বে আবারও লেখক নিজে পিয়ানো বাজিয়ে এবং গেয়ে কয়েকটি অডিও ক্লিপের মাধ্যমে বিভিন্ন সঙ্গীতকারদের গানগুলিকে বিশ্লেষণ করেছেন। আগ্রহী পাঠক সেই অডিও ক্লিপগুলি শুনে নিতে পারেন।
পূর্ব প্রকাশিতের পর
বাংলা গানের এক অন্যতম বিস্ময়কর তথা বৈপ্লবিক গীতিকার ও সুরকার হলেন সলিল চৌধুরী। সলিল চৌধুরীর গানের কম্পোজিশন সম্পর্কে যা-ই আলোচনা করা হোক না কেন, তা সম্পূর্ণ হবে না। কারণ, সলিল চৌধুরী সঙ্গীতের প্রকাশভঙ্গির কাঠামোর মধ্যেই এক বৈচিত্র্যময় এবং বহুমুখী পরিবর্তন সাধিত করেছিলেন।
শুরুতেই “রানার” গানটাকে বিশ্লেষণ করে দেখা যাক। গানটা শুরু হল নির্ভেজাল মেজর স্কেলে। তারপরে “দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে” বাক্যটায় উপস্থিত হয়েই সলিল চৌধুরী পিলু রাগের চলনের অংশ এবং মেজর ফ্রিজিয়ান (Major Phrygian) স্কেল ব্যবহার করলেন। তাই প্রথমবার উচ্চারিত “দিগন্ত” শব্দ রয়েছে মেজর স্কেলে, আর দ্বিতীয় “দিগন্ত” শব্দ রয়েছে মাইনর স্কেলে। তার অল্প পরিমাণে খাম্বাজ ঠাট ব্যবহার করে আবার তিনি ফিরে আসছেন মেজর স্কেলে। তারপর “রানার চলেছে বুঝি ভোর হয়-হয়” লাইনে প্রবেশ করছে ভৈরব রাগ আর তার পরের লাইন “আরও জোরে, আরও জোরে, হে রানার! দুর্বার, দুর্জয়” রাগ আহির ভৈরবকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। পরের দুটো লাইন যথাক্রমে ভৈরবী রাগ এবং রাগ বিভাসের ওপর সৃষ্ট। পরের স্তবকে রয়েছে খাম্বাজ ঠাট, রাগ আহির ভৈরব, ভৈরবী ঠাট এবং খুব ক্ষীণভাবে রয়েছে রাগ শিবরঞ্জনীর ছোঁয়া। এর পরের তালবিহীন অথচ মুক্তছন্দ-বিশিষ্ট স্তবকের (“এমনি করেই জীবনের বহু বছরকে পিছু ফেলে….”) প্রথমার্ধে ভৈরব ঠাটের প্রয়োগ রয়েছে আর দ্বিতীয়ার্ধে রয়েছে ভৈরবী ঠাট। এই স্তবক শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথমবার ঘটে যাচ্ছে খরজ পরিবর্তন বা ট্রান্সপোজ়িশন (Transposition)। পরবর্তী স্তবকে আবার ফিরে আসছে তাল এবং ছন্দ, ফিরে আসছে গানের মূল লয়েই। এর পরের স্তবকের প্রথম লাইন “দরদে তারার চোখ কাঁপে মিটিমিটি”-থেকেই দ্বিতীয়বার খরজ পরিবর্তন ঘটেছে। এই স্তবকের শেষ লাইন “সময় হয়েছে নতুন খবর আনার”-এ সলিল চৌধুরী ক্রোম্যাটিক চলন (Chromatic Note Progression) প্রয়োগ করছেন কর্ণাটী মার্গসঙ্গীতের অন্যতম মেলকর্তা রাগ রত্নাঙ্গীর আদলে। তার পরের “রানার” শব্দটাকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন মেজর স্কেলে।
ক্রোম্যাটিক চলনের আরও প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল “চলে যে যায় দিন” গানটা। রাগান্বেষীরা হয়ত বহু কষ্টে ভৈরব, আহির ভৈরব আর পিলু রাগের ক্ষীণ উপস্থিতি অনুভব করবেন এই গানে, তবুও সেই অনুভূতি বাস্তবিকই ক্ষীণ। বরং, এই গানটায় বেশি করে ফুটে উঠেছে পাশ্চাত্য শৈলী— বিশেষত ক্রোম্যাটিক স্কেলের আবির্ভাব-তিরোভাবের খেলা আর অ্যাক্সিডেন্টাল নোট (Accidental Note) বা বিবাদী স্বরের প্রাচুর্য। গানটার আরেকটা উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল, গানটার টোনালিটি (Tonality)-র খুব দ্রুত পরিবর্তন ঘটে। অর্থাৎ, মাইনর স্কেলে নির্মিত গান হলেও, মাইনর স্কেল থেকে মেজর স্কেলে বারবার বদলে যায় গানটার চলন, আর, ক্রোম্যাটিক নোট প্রোগ্রেশন এবং অ্যাক্সিডেন্টাল নোটের ব্যবহার এই টোনালিটির পরিবর্তনকে সাবলীল করে তুলেছে।
“অবাক পৃথিবী” গানটা ভৈরবী রাগের ওপর নির্ভরশীল হলেও, গানের মেলোডিতে মিশে যায়, বিলাবল, ইমন এবং ভাটিয়ার রাগের নির্যাস। আর এই গানের অবিচ্ছেদ্য অংশ “বিদ্রোহ আজ” গানটার প্রিলিউডে উনি ব্যবহার করেছেন কাফি ঠাট এবং মেলোডিক মাইনর স্কেল। তার চলন পাশ্চাত্য সঙ্গীতের আল্লেগ্রো (Allegro)-র অনুরূপ। মূল গানটা মেলোডিক মাইনর স্কেলে নির্মিত হলেও, ব্যবহৃত হয়েছে মেজর স্কেল এবং এর সঙ্গে ঘটেছে রাগ কালিংড়া, বিলাবল এবং বেহাগের ক্ষণিক আবির্ভাব-তিরোভাব।
সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের “পালকির গান” কবিতায় সুরারোপ করার সময়ে সলিল চৌধুরী তাল পরিবর্তন করার মাধ্যমে পালকিবাহকদের চলার গতির হাস-বৃদ্ধি ফুটিয়ে তুলেছেন। গানটার মেলোডি মেজর স্কেলে নির্মিত হয়েছে, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাগ চারুকেশী, আশাবরি ঠাট, মেলোডিক মাইনর স্কেল এবং রাগ আহির ভৈরব। সব শেষে গানের স্কেল স্থানান্তরিত হয়ে যাচ্ছে টোড়ি ঠাটে। সলিল চৌধুরী পালকিবাহক বেহারাদের উপস্থিতি বুঝিয়েছেন কোরাসের মাধ্যমে। তাঁরা যে স্বর বিন্যাস অনুসরণ করে গান গাইছেন, তা আসলে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া প্রধান মেলোডির কাউন্টারপয়েন্ট হিসাবে কাজ করে।
সলিল চৌধুরীর কালজয়ী সৃষ্টি “গাঁয়ের বধূ” ভৈরবী রাগকে আশ্রয় করে নির্মিত হয়েছে। গানটা শুরু হচ্ছে মধ্যলয়ে ৬ মাত্রায়। তারপর দ্রুতলয়ে ৮ মাত্রার ছন্দে প্রবেশ করছে। এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে স্বরবিন্যাসে সলিলবাবু নিয়ে এসেছেন ক্রোম্যাটিক প্রোগ্রেশন— মালকোষ রাগের মাইনর পেন্টাটোনিক স্কেলের সঙ্গে শুদ্ধ ধৈবত স্বর সংযুক্ত করেছেন। শেষে গিয়ে গানের অন্তিম দুটো লাইন সম্পূর্ণভাবে তালবর্জিত হয়ে যাচ্ছে। এই গানটার চলনের কাঠামো অপেরার সঙ্গীতের আঙ্গিককে অনুসরণ করে।
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা অনুসারে “ঠিকানা” গানটা তৈরি করার সময়ে সলিল চৌধুরী পুরোপুরি পাশ্চাত্যের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের দ্বারস্থ হয়েছেন। এই গানে ব্যবহার করেছেন ব্যারোক পিরিয়ড (Baroque Period)-এর সঙ্গীতের শৈলী, আবার রোমান্টিক পিরিয়ড (Romantic Period)-এর সঙ্গীতের বৈশিষ্ট্যও রয়েছে অনেক অংশ জুড়ে (বিশেষত, বাদ্যযন্ত্রের কারুকার্যে)। সঙ্গে রয়েছে রিলেটিভ মেজর এবং রিলেটিভ মাইনর স্কেলের ব্যবহার; আছে তাল ও ছন্দের পরিবর্তন।
“ঐ যে সবুজ বনবীথিকা” গানটা কোথাও প্রত্যক্ষভাবে এবং কোথাও পরোক্ষভাবে বিঠোভেনের ষষ্ঠ সিম্ফোনি “প্যাস্টোরাল” (Pastorale) দ্বারা প্রভাবিত। গানটার ইন্টারলিউডে সলিল চৌধুরী সরাসরি প্যাস্টোরাল সিম্ফোনির প্রথম মুভমেন্টের সুরের কাছে দ্বারস্থ হয়েছেন।
“ঢেউ উঠছে কারা টুটছে” গানটা তৈরি হয়েছে মাইনর স্কেলে। অন্তরায় পৌঁছে সমগ্র গানটা মেজর স্কেলে বদলে যায়। তার রিফ্রেইন (Refrain)-এর মাধ্যমে আবার ফিরে আসে মাইনর স্কেলে। তারপর, “আর পারবে না ভোলাতে মধুমাখা ছুরিতে” লাইনে পৌঁছানোর পরে হঠাৎ হাজির হয় কল্যাণ ঠাট। পরক্ষণেই তা হয়ে যায় মেজর স্কেল। সেই মেজর স্কেল বজায় থাকে রিফ্রেইনের পুনরাগমন অবধি। তারপর গানটা আবার মাইর স্কেলে ফিরে যায়। কাউন্টারপয়েন্ট ও হার্মোনির প্রয়োগ এই গানটাকে অন্য মাত্রায় উত্তীর্ণ করে তুলেছে।
“আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা” গানটার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল হল গানের প্রিলিউডের সঙ্গে মূল মেলোডির সম্বন্ধ হল রিলেটিভ মেজর এবং রিলেটিভ মাইনর স্কেলের। গানটা মেজর স্কেলে নির্মিত হলেও অসহায়তা এবং বিষাদের ভাব ফুটিয়ে তোলার জন্য সলিল চৌধুরী প্রিলিউডে ব্যবহার করলেন মাইনর স্কেল। “যদি কিছু আমারে শুধাও“-এর ক্ষেত্রেও প্রায় একই পন্থা অবলম্বন করেছেন সলিল চৌধুরী।
“সুরের এই ঝরো-ঝরো ঝর্ণা” গানটা সরাসরি পাশ্চাত্য সঙ্গীতের আঙ্গিককে খণ্ডন করে দিয়েছে। গানটার অন্তরায় সবার আগে কোরাস এবং ব্যাকিং ভোকালের শিল্পীরা স্তবকের প্রথম লাইনটা গাইছেন, মূল গায়িকা সবিতা চৌধুরী প্রবেশ করছেন তাঁদের পরে। গান কম্পোজ় করার এই পদ্ধতি তৎকালীন সময়ের প্রেক্ষাপটে সত্যিই বৈপ্লবিক ছিল।
সলিল চৌধুরীর স্বকণ্ঠে রেকর্ড করা একমাত্র গান হল “এই রোকো পৃথিবীর গাড়িটা থামাও”। গানটার ভিত্তি হল জ্যাজ়্ (Jazz) এবং স্কেল ট্রান্সপোজ়িশন। এই গানে সলিল চৌধুরী ব্যবহার করেছেন ইলেক্ট্রিক গিটার এবং সেই গিটারের অ্যানালগ প্রসেসরে তৈরি করেছেন ক্রাঞ্চ টোন (Crunch tone); ব্যবহার করেছেন ইলেক্ট্রিক অর্গান, ধাতব বাঁশি দিয়ে কর্ড বাজিয়ে সলিলবাবু ফুটিয়ে তুলেছেন ট্রেনের হুইসেলের ধ্বনি।
পল্লীগীতির সুরের ওপর সলিল চৌধুরীর দখল ছিল অনবদ্য। এই বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে তেভাগা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তাঁর লেখা আর সুর করা “হেঁই সামহালো ধান” বা “বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা” গানদুটোর উদাহরণ প্রথমেই মনে আসে। এই পর্যায়ের অন্যতম প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল “আয় বৃষ্টি ঝেঁপে”, ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ সিনেমার “আমি অনেক ঘুরিয়া শ্যাষে আইলাম রে কৈলকাত্তা” কিংবা ‘গঙ্গা’ সিনেমায় তাঁর সুর দেওয়া “ইচ্ছা করে, পরাণটারে গামছা দিয়া বান্ধি”-র মতো গান। “মানব না এ বন্ধনে” গানটার সূত্রপাত ঘটেছে তেলুগু লোকসঙ্গীতের প্রভাব থেকে। “আমার কিছু মনের আশা” গানটার সুরে রয়েছে কীর্তন এবং রিলেটিভ মাইনর স্কেলের ব্যবহার।
শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পরিসরে সলিল চৌধুরীর বিচরণ ছিল অবাধ বিচরণ। আলাহিয়া বিলাবল এবং খাম্বাজ রাগের ওপরে তিনি কম্পোজ় করেছেন “না, যেও না” এবং সর্বতোভাবে খাম্বাজ ঠাট এবং খাম্বাজ রাগকে আশ্রয় করে তিনি সৃষ্টি করেছেন “গা, গা রে পাখি গা”। “বাজে গো বীণা” গানটাও সৃষ্টি হয়েছে খাম্বাজ ঠাটের ওপর। “যারে যা, যা ফিরে যা” গানে ব্যবহার করছেন রাগ জয় জয়ন্তী। কল্যাণ ঠাটের অন্তর্গত ইমন কল্যাণ এবং শ্যাম কল্যাণ রাগ ব্যবহার করে তিনি সৃষ্টি করেছেন “প্রান্তরের গান আমার” এবং “না, মন লাগে না”। তিনি মাইকেল মধুসূদন দত্তের “আত্মবিলাপ” এবং “বঙ্গভূমির প্রতি” কবিতায় সুরারোপ করেছিলেন ভৈরবী রাগের ওপরে। তবে রাগাশ্রয়ী গানের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে সলিল চৌধুরী কিন্তু জোরালোভাবে রাগের স্বরবিন্যাস অনুসরণ করছেন না; বরং ভাব বজায় রাখার প্রয়োজনে প্রতিটি স্বরকে স্বাধীনভাবে প্রয়োগ করাই ওনার প্রধান লক্ষ্য।
গানের স্কেলের টোনালিটি নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সলিল চৌধুরীর সবচেয়ে ব্যাতিক্রমী দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায় “এই জীবন এমনি করে আর তো সয় না”, “যা গেছে তা যাক”, “যাক, ধুয়ে যাক, মুছে যাক” বা “আমি ঝড়ের কাছে রেখে গেলাম”-এর মতো গানে। গানগুলোর বাণী পাঠ করলে সাধারণত করুণ রসের উদ্রেক হবে, কিন্তু সলিল চৌধুরী সেই করুণ রসকে উপেক্ষা করতে চান। দুঃখের নাগপাশে আটকে পড়ে থাকা তাঁর সঙ্গীতবোধের ধাতে সয় না। তাই দুঃখের পাশাপাশি তিনি মোহভঙ্গের আনন্দকে প্রকাশ করতে চান এবং সর্বোপরি তিনি আগামীর দিকে লক্ষ রেখে এগিয়ে যেতে চান। তাই এই গানগুলো আপাতদৃষ্টিতে বিষাদ-উদ্রেককারি বাণী বহন করলেও শেষে গিয়ে আশার কথা শোনায়। তাই মাইনর স্কেলের সমস্ত সম্ভাবনাকে তিনি প্রতিহত করে প্রয়োগ করেছেন মেজর স্কেল।
সলিল চৌধুরীর সঙ্গীত সবসময়েই নৃত্যশীলতাকে ধারণ করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁর গানের প্রিলিউড এবং ইন্টারলিউড ছন্দকে অবলম্বন করে বিভিন্ন সূক্ষ্ম কারুকার্যকে প্রকাশ করে। “দুরন্ত ঘূর্ণির এই লেগেছে পাক”, “আহা ঐ আঁকাবাঁকা যে পথ”, “পল্লবিনী গো সঞ্চারিনী”, “কী যে করি, দূরে যেতে হয়” বা “ধিতাং ধিতাং বোলে”-র মতো গানগুলোর প্রিলিউড আর ইন্টারলিউড এর জ্বলন্ত প্রমাণ।
তাঁর সঙ্গীত-ভাবনার আরেক গুরুত্বপূর্ণ তাত্ত্বিক দিক হল, দেশীয় রাগসঙ্গীতে কর্ড, হার্মোনি এবং অর্কেস্ট্রেশন প্রয়োগ করা নন্দনতত্ত্ব-সমর্থিত কিনা, তা বিচার করা। সলিল চৌধুরী রাগ সঙ্গীতের মেলোডিকে কাউন্টারপয়েন্ট এবং কর্ডের সাহায্য নিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন যে ভারতীয় রাগসঙ্গীতের ওপর সিম্ফোনির আদলে অর্কেস্ট্রেশন করার সম্ভব এবং তা অবশ্যই নন্দনতাত্ত্বিকভাবে নির্ভুল। প্রমাণস্বরূপ, তিনি একবার একটি আলোচনা সভায় ভারতের জাতীয়সঙ্গীতের অর্কেস্ট্রেশন প্রয়োগ করে শুনিয়েছিলেন জনসমক্ষে। ঐ অনবদ্য এবং অভিনব উপস্থাপনা উদ্যোক্তা আর শ্রোতাদের কাছে সাদরে এবং সানন্দে গৃহীত হয়েছিল।
[ক্রমশ]