দেবব্রত শ্যামরায়
রাজনৈতিক ভাষ্যকার
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা-বিষয়ক রিপোর্ট ২০২১ (2021 report on International Religious Freedom) প্রকাশ করেছে, এই রিপোর্ট ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের যারপরনাই গোঁসার কারণ হয়েছে। অবশ্য অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে গলানোর ব্যাপারে আমেরিকার নাসিকাটি যে চিরকালই বেয়ারা রকমের বড়, সেবিষয়ে আমাদের কারও মনে কোনও সন্দেহ থাকার কথা নয়। কিন্তু কী এমন অসত্য ও মানহানিকর কথাবার্তা লেখা আছে সেই রিপোর্টে, যে জন্য মোদি সরকারের সহসা এত রাগ? তেমন কিছু নয়, এই বার্ষিক রিপোর্ট নানা দেশের সংবাদমাধ্যম ও সরকারি সূত্র থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নিপীড়নের তথ্য সংগ্রহ করে তা উদ্ধৃত করে, আলাদাভাবে নিজস্ব কোনও মতপ্রকাশ করে না। এই জায়গাটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ— রিপোর্ট প্রাপ্ত তথ্য সংশ্লেষ করে কোনও বিশদ মতামত প্রকাশে বিরত থাকে। যেমন, রিপোর্টটি জানাচ্ছে, মোদি সরকার ২০২১-এ দেশজুড়ে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ে কোনও সামগ্রিক নথি প্রকাশ করেনি (২০২০-তে মূলত সিএএ-এনআরসি আইনের কারণে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ ২০১৯-এর তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল, হয়তো সেটাই ২০২১-এর নথি প্রকাশ না করার একটা কারণ!)। মূলত নানা সংবাদমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রিপোর্টটি বলছে— ‘২০২১ জুড়ে গোটা ভারতবর্ষে অহিন্দুদের ভয় দেখানো, শারীরিক আক্রমণ, হেনস্থা ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে প্রচুর পরিমাণে, গোমাংস-সংক্রান্ত হিংসার ঘটনাও যার একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে।’ ব্যস, নয়াদিল্লি রেগে কাঁই। পররাষ্ট্রমন্ত্রকের মুখপাত্র এই রিপোর্টের নিন্দা করে পত্রপাঠ বিবৃতি দিলেন, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও যেভাবে ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির চর্চা হচ্ছে, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতি। আহা! পরশপাথর দিয়ে ইট-কাঠ-লোহা একবার ছুঁয়ে দিলে সব যেমন মুহূর্তে সোনায় রুপান্তরিত হয়, ‘ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতি’ এমন এক ম্যাজিক শব্দবন্ধ যার মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষ-প্রগতিবাদী শিবিরের যাবতীয় অভিযোগ দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলি গত দু-দশক ধরে ধূলিসাৎ করে এসেছে, এখনও তা-ই করে চলেছে। একথা সত্যি যে তথাকথিত সেকুলার নামধারী দলগুলির একাংশের স্বার্থান্বেষী সুবিধাবাদী রাজনীতি বিজেপি তথা হিন্দুত্ব-শিবিরের হাতে এই এক অমোঘ অস্ত্র তুলে দিয়েছে এবং তাতে মরচে ধরার আশু কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং বিপক্ষের রাজনীতিকে ‘ভোটব্যাঙ্ক পলিটিক্স’ বলে দাগিয়ে দিয়ে বিদ্বেষের আগুন জ্বেলে হিন্দুত্ববাদী শিবির রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের এক বিধ্বংসী খেলায় মেতেছে, ১৯৯২-এর ডিসেম্বরে বাবরি মসজিদ ধ্বংস থেকে যার শুরু, শেষ হওয়া তো দূরঅস্ত, বর্তমান কাল অর্থাৎ ২০১৪-পরবর্তী বিজেপি জমানা তার সবচেয়ে উর্বর ও ফলবান সময়।
বলে রাখা যাক, মার্কিন রিপোর্টে কোনও ভুল নেই, অর্ধসত্য নেই, অতিকথন নেই। সাম্প্রতিক অতীতের কয়েকটি ঘটনার দিকে নজর দেওয়া যাক৷
গুজরাটের পোরবন্দর। সমুদ্রতীর সংলগ্ন গোসাবরা জলাভূমির মুসলিম মৎস্যজীবী সমাজের পক্ষ থেকে বর্ষীয়ান জেলে আল্লারাখা ইসমাইলভাই থিম্মার আহমেদাবাদ হাইকোর্টে এক পিটিশন দাখিল করেছেন। স্বেচ্ছামৃত্যুর পিটিশন। ইসমাইলভাই সহ আরও ছশোজন মুসলিম মৎস্যজীবী আত্মহত্যার অধিকার চান। তাঁরা মরতে চান কারণ অস্বচ্ছল থেকে ক্রমশ অসহনীয় হয়ে ওঠা আর্থিক অবস্থায় এ ছাড়া অন্য কোনও পথ তাঁদের সামনে খোলা নেই৷ মাছ ধরার দরকারি অনুমতিপত্র থাকা সত্ত্বেও ২০১৬ থেকে পোরবন্দরের মুসলিম জেলে সম্প্রদায়কে নৌকো নিয়ে মাছ ধরতে যেতে দেওয়া হচ্ছে না৷ অথচ আশেপাশের গ্রামের হিন্দু জেলেদের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা নেই। ইসমাইলভাইয়েরা সন্ত্রাসবাদী নন, অপরাধী নন, স্মাগলার নন। শুধুমাত্র ধর্মপরিচয়ে মুসলিম হওয়ার কারণে ইসমাইলভাই থিম্মারেরা খোদ মহাত্মা গান্ধির রাজ্যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার সম্মুখীন হচ্ছে যা অকল্পনীয়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে রাজ্যপালের কাছে অবধি আবেদন জানিয়েছেন তারা। কোনও ফল হয়নি। অর্থাৎ প্রমাণ হল, ভারতবর্ষে সংখ্যালঘু নিপীড়ন নেই, সবটাই দেশবিদেশের সেকু-লিবুদের ‘সাজানো ঘটনা’ বা ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতি।
শুধু গুজরাট কেন, আমাদের দেশে গুজরাটসহ দশটি রাজ্য, প্রতিটিই বিজেপিশাসিত, লাভ জিহাদ বিরোধী বিল পাশ করেছে, যা যেকোনও হিন্দু নারীর মুসলিম পুরুষের সঙ্গে বিবাহসম্পর্ক গড়ায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলপূর্বক ধর্মান্তরকরণ ঠেকানোর নামে দুই ধর্মের যুবক-যুবতীদের নানাভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে, তাদের মৌলিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে। এবং এসবই হচ্ছে তথাকথিত ‘আইনি’ পথে। কে না জানে, এই একবিংশ শতাব্দীতেও, ব্যক্তিস্বাধীনতার তোয়াক্কা না করেই গোধন ও স্ত্রী-ধন রক্ষার দায়িত্ব শাস্ত্র অনুসারে ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজের। দেখে মনে হচ্ছে, প্রাণপণে হিন্দু রাষ্ট্রের দিকে দৌড়তে থাকা আমাদের দেশের শাসনকাঠামোর সেই দায়িত্বপালনে বদ্ধপরিকর।
গো-ধনের কথায় মাথায় এল, গণপিটুনিতে মহম্মদ আকলাখের মৃত্যুর পরে যমুনা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। ২০১০ থেকে ২০১৭-র মধ্যে গোমাংস সংক্রান্ত হিংসার ৬৩টি ঘটনা নথিবদ্ধ হয়েছে, যার ৯৭ শতাংশ অর্থাৎ সিংহভাগই ২০১৪-এ মোদি সরকার দিল্লিতে ক্ষমতা দখলের পরের ঘটনা। ২০১৭-র পর প্রায় প্রতিটি বিজেপিশাসিত রাজ্য গোমাংসের বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে যার অর্থ একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষের খাদ্যাভ্যাসে আঘাত করা এবং সেই পণ্যের ওপর নির্ভরশীল এক বিশাল সংখ্যক মানুষজনের জীবিকা অনিশ্চিত করে তোলা। ঠিক যেমনভাবে গতবছর কুম্ভমেলা চলাকালীন এলাহাবাদের ট্যানারিগুলো প্রথামাফিক বন্ধ ছিল। কিন্তু মেলা শেষ হলেও তাদের আর পুনরায় ট্যানারি খোলার অনুমতি দেওয়া হয়নি৷ এর মূলেও গোমাংস ও গরুর চামড়া নিয়ে বর্তমান শাসক-শিবিরের ধর্মীয় শুচিবায়ুগ্রস্ততা ও মুসলিমবিদ্বেষ। বলাই বাহুল্য, এই ট্যানারিগুলোর সবকটির মালিক ও শ্রমিক-কর্মচারীরা ধর্মপরিচয়ে মুসলিম। অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাই বলুক, ভারতবর্ষে সংখ্যালঘু নিপীড়নের কোনও বাস্তবতা নেই।
রাজ্যসভার আসনের উপঢৌকন-ধন্য রঞ্জন গগৈ-এর বদান্যতায় বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলার নিষ্পত্তি হল রামমন্দির নির্মাণের রায়দানের মধ্য দিয়ে। অর্থাৎ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের নিন্দা করেও দেশের সর্বোচ্চ আদালত যুক্তি, তথ্য ও ন্যায়নীতির ওপরে দেশের মানুষের (সংখ্যাগুরু হিন্দুদের) ভাবাবেগকে স্থান দিলেন, রামমন্দির নির্মাণের পক্ষে রায় দিলেন। স্বাধীন ভারতে সংবিধান ও আইনি কাঠামোর দোহাই দিয়ে এর চেয়ে বড় প্রহসন আর সংগঠিত হয়েছে কিনা বলা মুশকিল। তা সত্ত্বেও এই মামলার রায়ে একটি জরুরি অবস্থান (১৯৯১-এর প্লেসেস অফ ওয়রশিপ অ্যাক্ট-স্পেশাল প্রভিশন) স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যেহেতু বাবরি মসজিদ-রামমন্দির সংক্রান্ত মামলাটি স্বাধীনতার আগে থেকে চলা বিবাদ, এটি অন্য সমস্যার চেয়ে পৃথক ও ভবিষ্যতে অন্য কোনও মামলায় এই রায়কে precedence হিসেবে ধরা হবে না, অর্থাৎ অন্য যেকোনও ক্ষেত্রে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট তারিখ অবধি যে ধর্মস্থানের চরিত্র যা ছিল, তা-ই বহাল থাকবে৷ অথচ রামমন্দির রায়ের মাত্র দু বছরের মধ্যে সেই আইনি নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে, দিকে দিকে, কাশী থেকে মথুরা, নানা জায়গায় মন্দির-মসজিদ বিবাদ খুঁচিয়ে তোলা হচ্ছে। ‘ইয়ে তো সিরফ ঝাঁকি হ্যায়, আভি কাশী মথুরা বাকি হ্যায়’। নিচে মন্দির আছে এই অভিযোগে একের পর এক মসজিদে মুসলিমদের প্রবেশ ও নামাজ পড়া বন্ধ করার দাবি উঠছে। একবিংশ শতাব্দীর গণতান্ত্রিক পৃথিবীর মানুষ সামনের দিকে না তাকিয়ে মধ্যযুগের সামন্ততান্ত্রিক পৃথিবীর ‘অপরাধ’-এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মুখিয়ে উঠেছে৷ দেশের নানা ধর্মসংসদ থেকে খোলাখুলি মুসলিম গণগত্যার ডাক দিচ্ছেন সাধু-সন্ন্যাসী মহাত্মারা। দেশে যেন কোনও মানুষ অবশিষ্ট নেই, তাদের আর্থসামাজিক কোনও সমস্যাও নেই, দেশজুড়ে শুধু কোটি কোটি হিন্দু আর মুসলমান রয়েছে, যাদের অস্তিত্বের সঙ্কট শুধুমাত্র মন্দির ও মসজিদকে ঘিরেই।
সংখ্যালঘু নিপীড়নের তালিকা আর বড় করে লাভ নেই৷ আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক রিপোর্টে এত কথা এত বিস্তারে বলা নেই। তাতেও দেশের শাসক খেপে লাল হয়ে গিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। ঠিক যেমন কয়েকদিন আগে ১৫ মার্চ তারিখটিকে রাষ্ট্রসঙ্ঘ ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার দিবস হিসেবে স্বীকৃতিদানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মুখর হয়েছিল নয়াদিল্লি। আমাদের সরকার স্বীকার করেনি যে বিশ্বে একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে ঘিরে সাধারণীকৃত ও অমূলক ভীতির ভিত্তিতে কোনও বিশেষ দিন ঘোষণা করার যুক্তি রয়েছে। অথচ মজার কথা, আন্তর্জাতিক মঞ্চে পরপর এই দুটি ঘটনা থেকে ভারত সরকারেরই ইসলামোফোবিয়া প্রকট করে তুলল।
প্রসঙ্গত, ভারতবর্ষে সংখ্যালঘু নিপীড়নের পাশাপাশি মার্কিন রিপোর্ট ইসলামি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে একের পর এক হিন্দু ও শিখ (যারা কাশ্মিরে সংখ্যালঘু) হত্যার কথাও উল্লেখ করেছে। শুধুমাত্র ডিসেম্বর ২০২১-এ কাশ্মিরে ৩৯ জন মারা গেছেন, যে তালিকায় কাশ্মিরি পণ্ডিত, পঞ্জাব থেকে আগত শিখ এবং বিহার থেকে আসা অভিবাসী শ্রমিকও রয়েছেন। অর্থাৎ সেদিক থেকে মার্কিন রিপোর্টটি দেশজুড়ে সংখ্যালঘু-বিরোধী হিংসার একটি সর্বাঙ্গীন রূপরেখা দেওয়ার চেষ্টা করেছে৷ তাতেও মোদি সরকারের মন ভেজেনি। কারণ আজ বিজেপি জমানায় ও ৩৭০ ধারা রদ করার পরেও কাশ্মিরে বিচ্ছিন্নতাবাদের বাডবাড়ন্তে প্রকারান্তরে সরকারের অকর্মণ্যতাই প্রকট হয়ে ওঠে। আর তাতে আরও একবার প্রমাণ হয়ে যায়, পুরো ঘটনাক্রমে হতভাগ্য কাশ্মির পণ্ডিতরা রাজনীতির বোড়ে ছাড়া অন্য কিছুই নন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছবি ‘কাশ্মির ফাইলস’ করমুক্ত করে দিয়ে সুকৌশলে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষে পাখার হাওয়া দেওয়া যতটা সহজ, কাশ্মিরি পণ্ডিতদের জান ও মালের দায়িত্ব নিয়ে বাস্তবে তাদের পাশে দাঁড়ানো ততটাই কঠিন।
এইখানে পৌঁছে, সামান্য থেমে, আমরা যদি ওপরের সংখ্যালঘু নিপীড়নের ঘটনাগুলিকে ধর্মের ভিত্তিতে না দেখে শ্রেণির ভিত্তিতে দেখি, দেখতে পাব প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই যারা নিপীড়নের স্বীকার হচ্ছেন তাঁরা মূলত অস্বচ্ছল, নিম্নবিত্ত, খেটেখাওয়া মানুষজন৷ সেই প্রান্তিক মানুষটির নাম মুসলিমসমাজে যদি হাসিম শেখ হয় তাহলে হিন্দুসমাজে রামা কৈবর্ত। রামা নিজেকে হিন্দু ভেবে সান্ত্বনা পেলেও ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজে রামার সামাজিক সম্মান অনেক নিচে, প্রায় নেই বললেই চলে। রামা আর হাসিম মাঠেঘাটে, কলকারখানায়, নির্মাণশিল্পে, আপিস-কাছারিতে, এমনকি কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে তথাকথিত নীল কলারের কাজে উদয়াস্ত খাটে, শ্রম দেয়। রুটি জোগাড় করতেই তাদের দিন যায়, ধর্ম নিয়ে ভাববার সময় কোথায়! রামা কৈবর্ত নিজেকে হিন্দু ভেবে আশ্বস্ত হলেও আরেক হিন্দু মুকেশ আম্বানির সঙ্গে তার দূরত্ব প্রায় কয়েক লক্ষ আলোকবর্ষের, বরং হাসিম শেখই তার আত্মার আত্মীয়, শ্রেণি-সহোদর। ধর্মীয় আধিপত্যবাদী রাজনীতির ন্যারেটিভ আসলে হাসিম-রামার এই পারস্পরিক সহজ সম্পর্কের কথাটা জনমনে গুলিয়ে দিতে চায়, তাদের হিন্দু ও মুসলমান পরিচয়ে ভাগ করে দিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিতে চায়। এটা করতে পারলে তারা তাদের আসল সমস্যাগুলি ভুলে থাকবে, তাদের শাসন করে দীর্ঘদিন ক্ষমতা দখল করে রাখা শাসকের পক্ষে সহজতর হবে। তাই সংখ্যালঘুকে জুজু বানিয়ে সংখ্যাগুরুকে তাদের দিকে লেলিয়ে দেওয়ার শাসকের তৈরি এই ভ্রাতৃঘাতী ফাঁদ থেকে আমরা যত দ্রুত বেরিয়ে আসতে পারব, আমাদের সুন্দর দেশটা তত তাড়াতাড়ি আরও বেশি বাসযোগ্য হয়ে উঠবে, এমনকি গোটা পৃথিবীটাও।