কণিষ্ক চৌধুরী
প্রাবন্ধিক, শিক্ষক
ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের (১১৭৬ বঙ্গাব্দ/১৭৭০ খ্রিস্টাব্দ) কয়েকটি বছর বাদেই রামমোহন রায়ের জন্ম। তাঁর জন্মের সাল-তারিখ নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বেশ একটু মতভেদ আছে। কারও মতে ১৭৭২, কেউবা মনে করেন ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দ। তাঁর অন্যতম জীবনীকার নগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দ। কিন্তু কলেট (Collet)-এর মতে ২২ মে ১৭৭২ তাঁর জন্মতারিখ। মার্কিন মিশনারি ডাল রামমোহন রায়ের ছেলে রমাপ্রসাদ রায়ের কাছ থেকে তাঁর জন্মসাল হিসেবে ১৭৭২-এর কথাই জানতে পেরেছিলেন। বর্তমানে পণ্ডিত ও গবেষকগণ ১৭৭২-কেই তাঁর জন্মসাল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এ-বিষয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব মুলতুবি রেখে আপাতত জেনে নেওয়া যাক তাঁর পরিবার সম্পর্কে দু-চার কথা।
রামমোহনের ঊর্ধ্বতন পঞ্চম পুরুষ পরশুরাম বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার নবাবের অধীনে চাকরি করতেন। এই সূত্রেই তাঁর ‘রায়’ উপাধি লাভ। পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে জ্ঞাত তথ্যাদি থেকে যা নিঃসৃত হয় তা মোটামুটি এইরকম: এঁরা কোনও একটা সময়ে কনৌজ থেকে বাংলায় এসেছিলেন (আদিসূরের গল্পের কথা মনে পড়িয়ে দেয়)। সর্বপ্রাচীন পূর্বপুরুষ ভট্টনারায়ণ ছিলেন শাণ্ডিল্য গোত্রের যিনি দ্বাদশ শতাব্দীর পূর্বেই পূর্ববঙ্গে এসে বসবাস শুরু করেন। ভট্টনারায়ণের অষ্টম উত্তপ্রপুরুষ গোবিন্দ মুর্শিদাবাদের বেনিপুর গ্রামে এসে স্থায়ী বাসস্থান গড়ে তোলেন। তাঁরই উত্তরপুরুষ পরশুরাম রায়। তিনি বংশানুক্রমিক পৌরোহিত্যের কাজ ছেড়ে দেন। নবাবের প্রশাসনে কাজ করার সুবাদে তৎকালীন শাসকদের রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন খুব স্বাভাবিকভাবেই। তাঁর উত্তরসূরিদের মধ্যে এই ধারাবাহিকতাই লক্ষ করা যাবে।
রামমোহনের প্রপিতামহ কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের সময় থেকেই হুগলির রাধানগরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু হয়। কৃষ্ণচন্দ্রের ছেলে ব্রজবিনোদ সিরাজউদ্দৌলার অধীনে উচ্চ সরকারি পদে কাজ করতেন। তাঁর সন্তান রামকান্তও মুর্শিদাবাদের নবাবের অধীনে উচ্চপদে আসীন ছিলেন। ‘সরকার’ পদ থেকে অবসর গ্রহণ করে তিনি বর্ধমানের রাজা তেজচাঁদের মা রানি বিষাণকুমারীর সম্পত্তির দেখাশোনা করতেন। এই রামকান্ত রায়েরই দ্বিতীয় সন্তান হলেন রামমোহন। রামমোহনের মায়ের নাম তারিণী দেবী (হুগলি শ্রীরামপুরের চাতরা-র বাসিন্দা শ্যাম ভট্টাচার্যের কন্যা)। ধর্মবিশ্বাসের দিক থেকে তাঁর পিতৃকুল ছিল বৈষ্ণব এবং মাতৃকুল শাক্ত। শৈশবেই এই দুই মতের মধ্যে সংঘাত রামমোহনের চিন্তাপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেছিল। যথাসময়ে সে কথায় আসা যাবে।
২.
রামমোহন প্রাথমিক শিক্ষা পেয়েছিলেন গ্রামের গুরুমশাইয়ের কাছে। বাংলা ভাষা পড়তে ও লিখতে শেখার পাশাপাশি তিনি গণিত বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করলেন এখান থেকেই। পার্সি ভাষার সঙ্গে তাঁর পরিচয় পারিবারিক পরিবেশে। নয় বছর বয়সে ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে পাঠানো হয় পাটনাতে। সে-সময় পাটনা ছিল আরবি-পার্সি সহ ইসলামীয় ভাষা-সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম কেন্দ্র। তখনও পর্যন্ত প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা কোম্পানি শাসনের নিয়ন্ত্রণমুক্ত ছিল। তখনও পর্যন্ত ব্রিটিশ শক্তি ভবিষ্যতে ভারত শাসন করবে, এমনটা ভাবা যায়নি। সে সময়টা ছিল লুণ্ঠনের সময়। সম্ভবত ব্রিটিশরাও ভাবতে পারেনি এ দেশের শাসন-কর্তৃত্ব পূর্ণরূপে তাদের হাতে চলে আসবে। তাই ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে দেওয়ানি লাভের পর তারা চেষ্টা চালিয়েছিল যতটা সম্ভব অর্থ রোজগার করে নেওয়ার। তবে ইতিমধ্যে শাসনকার্যের সুবিধার জন্য তারা কিছু প্রয়োজনীয় সংস্কারসাধন করে নেয়। এই সংস্কারের প্রয়োজন পড়ে যখন ১৭৭২-এ দ্বৈত শাসনের অবসান ঘটিয়ে সুবা বাংলার পূর্ণ শাসনক্ষমতা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে আসে। এই কালপর্বে ওয়ারেন হেস্টিংসের ভূমিকাই ছিল প্রধান। প্রথমে (১৭৭২-৭৪) তিনি বাংলার গভর্নর ছিলেন, পরে ভারতে ব্রিটিশ-অধিকৃত ভূখণ্ডের গভর্নর জেনারেল হন। তিনি দেশীয় বিচার আইন ও শিক্ষাকে পরিবর্তন করতে চাননি এবং করেননি। ফলে তখনও শিক্ষা, বিচার ও আইনের ক্ষেত্রে আরবি/পার্সির যথেষ্ট গুরুত্ব ছিল। সম্পত্তিবান অভিজাত ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তানেরাও আরবি/পার্সি শিখতেন। কারণ উচ্চপদের জন্য তখনও এই ভাষা শিক্ষার প্রয়োজন হত। রামমোহন তাই ১৭৮৮-তে পাটনাতে আরবি/পার্সি শিখতেই গেলেন।
পাটনায় তিনি তিন বছর আরবি/পার্সি ভাষা শেখেন। এখানেই তিনি আরবি ভাষায় লেখা ইউক্লিড ও অ্যারিস্টটলের রচনা পড়ে ফেলেন, যা তাঁর চিন্তাকে করে তোলে যুক্তিনির্ভর। পড়েন কোরান। ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়— এই ধারণা পেলেন কোরান থেকে। কোরানই তাঁর একেশ্বরবাদী চিন্তার উৎস। ফলে পৌত্তলিকতাবাদ বা পুতুলপূজা ও সেই সংক্রান্ত আচার-আচরণকে তিনি বর্জন করেন। আরবি/পার্সি ভাষাশিক্ষার সুবাদেই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় হাফিজ ও জালালুদ্দিন রুমি সহ অন্যান্য পার্সি ভাষায় লিখিত কাব্যসাহিত্যের। তিনি প্রায়শই এইসব কবিদের কবিতার পংক্তি আবৃত্তি করতেন। ‘তুহফাৎ উল মওয়াহিদীন’-এও তার সাক্ষ্য মেলে।
মা তারিণী দেবীর ইচ্ছে ছেলে সংস্কৃত শিখুক। তাই ১২ বছর বয়সে (১৭৮৩-৮৪) তাঁকে পাঠানো হল বেনারসে। বেনারস ভারতের একটি প্রাচীন সংস্কৃত শিক্ষাকেন্দ্র। অনেকটা ইতালির ফ্লোরেন্স ও ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডের মতো। এখানে সংস্কৃত ভাষাসাহিত্য শিখে একদিকে যেমন বেদ পাঠ করেন তেমনি পড়ে নেন নানাবিধ সংস্কৃত রচনাগুলি। তাঁর মনন জগতের উপর স্থায়ী প্রভাব ফেলে বেনারসের সংস্কৃত সাহিত্য ও পাটনার আরবি/পার্সি শিক্ষা। একদিকে যেমন পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে একেশ্বরবাদী ভাবনা গড়ে তোলেন, তেমনই অন্যদিকে নানা ধর্ম ও সংস্কৃতির মধ্যে সমন্বয়ের ভাবনায় ভাবিত হন। তৃতীয় আরও একটি দিকের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। তা হল তিনি হয়ে উঠতে শুরু করলেন সেই মানুষ যিনি ব্যবহারিক জীবনে নতুন পরিবর্তনের সম্ভাবনার মুখোমুখি, অথচ শিক্ষার দিক থেকে তাঁকে চিরাচরিত পাঠকেই গ্রহণ করতে হয়েছে।
প্রধানত ধর্মমত সংক্রান্ত বিবাদের কারণেই তিনি ১৬ বছর বয়সে ঘর ছাড়েন। শুরু হয় ভ্রাম্যমাণ জীবন। এই পর্বেই তিনি তিব্বত ভ্রমণ করেছিলেন বলে শোনা যায়। যদিও এ-বিষয়ে কোনও নির্ভরযোগ্য নথির সন্ধান মেলে না।[1] উত্তরভারতের নানা স্থানে ভ্রমণ করে প্রচুর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। এই সময়েই তিনি পরিচিত হন মধ্যযুগীয় চিন্তাবিদ মনক, কবীর, দাদু প্রমুখের ভাবাদর্শের সঙ্গে। একদিকে বৌদ্ধ সাহিত্যসম্ভারের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়, আর অন্যদিকে তিনি লক্ষ করেন বৌদ্ধদের ধর্মচর্চার মধ্যেকার অসঙ্গতিগুলি। ডঃ কার্পেন্টারের কাজ থেকে জানা যায় রামমোহন তিব্বতে দুই-তিন বছর কাটিয়েছিলেন।[2] এই গোটা পর্বটি জুড়ে তিনি পারিবারিক আর্থিক সাহায্য থেকে কখনওই বঞ্চিত হননি। ২০ বছর বয়সে অর্থাৎ ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে বাবার ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি বাড়ি ফিরে এলেন।
৩.
রামমোহনের তিনটি বিয়ে। পিতা রামকান্ত রামমোহনের প্রথম বিয়ে দেন ৯ বছর বয়সে। কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর প্রথম স্ত্রীর মৃত্যু। এ-ঘটনার এক বছরের মধ্যেই রামমোহনের আরও দুটি বিয়ে হয়। দ্বিতীয় স্ত্রী মারা যান ১৮২৪-এ।[3] এখানে এই তথ্যটি উল্লেখ করার একটি বিশেষ কারণ আছে। সমালোচকরা দেখান যে, রামমোহন নারীর অধিকার, মর্যাদা ও সম্মান প্রতিষ্ঠার জন্যে যে চেষ্টা চালিয়েছিলেন তা আসলে শূন্যগর্ভ। কারণ তিনি নিজেই তিনটে বিয়ে করেছিলেন। এখন এই ‘তিনটে বিয়ে’র তথ্যটি যদি পরিপ্রেক্ষিতহীন বিচার করা হয়, তাহলে তা ভ্রান্ত সিদ্ধান্তের জন্ম দিতে বাধ্য। তথ্যটিকে তাই যথাযথভাবে বিচার করার জন্যে কয়েকটি প্রশ্নকে সামনে রাখতে হবে। প্রথমত, কোন বয়সে তাঁর বিয়ে হয়েছিল? দ্বিতীয়ত, তিনি বিয়ে করেছিলেন, না তাঁর বিয়ে দেওয়া হয়েছিল? তৃতীয়ত, তখন সমাজের প্রাধান্যকারী মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির সঙ্গে এই বহুবিবাহ কতটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল? প্রথম ও দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর পূর্বোক্ত তথ্যের মধ্যেই রয়েছে। যদি এমনটা হত যে, তিনি প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় একাধিক বিয়ে করেছেন, তাহলে সমালোচকদের সূত্র ধরে স্ববিরোধিতা ও আত্মপ্রবঞ্চনার প্রশ্নটি একটি যুক্তিসম্মত ভিত্তি পেত। এমন ঘটনা কিন্তু ঘটতে দেখা যায়নি। তাছাড়া পারিবারিক ও সামাজিক চাপে যদি একাধিক বিয়ে করতেনও তৎসত্ত্বেও তাঁর উত্থাপিত প্রশ্নগুলি তো আর মিথ্যা হয়ে যেত না।
তাঁর যখন বিয়ে হয়েছিল সেই ৯-১০ বছরে পারিবারিক দায়িত্ব ও দাম্পত্য বিষয়ে সচেতন না-থাকাটাই স্বাভাবিক। ২০ বছর বয়সে বাবার ডাকে বাড়ি ফিরলেন। সময়টা ১৭৯২-এর আশেপাশে। এবার তিনি পরিবারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিলেন। কিন্তু পারিবারিক সমস্যা তাঁকে বাধ্য করেছিল আলাদা থাকতে। ১৭৯৬ থেকে ১৭৯৯ পর্যন্ত বাবার জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব তাঁকেই নিতে হয়েছিল। একই সঙ্গে তাঁর নিজস্ব কিছু তালুকও ছিল। যেগুলির রাজস্ব আয় ছিল বেশ কয়েক হাজার টাকা। এই সময়কালে তিনি মাঝেমধ্যেই বেনারসে যেতেন সংস্কৃত শিক্ষার জন্য। কলকাতাতেও তাঁকে যেতে হত ঘন ঘন।[4]
রামকান্ত রায় মারা যান ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে। মৃত্যুর সাত বছর আগেই তিনি তাঁর তিন ছেলে জগমোহন, রামমোহন ও রামলোচনের মধ্যে কলকাতা, বর্ধমান ও হুগলি জেলার বিপুল স্থাবর সম্পত্তি ভাগ করে দেন। সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের দেখাশোনার ভার তাঁর ওপরে পড়লেও যতদিন না পর্যন্ত মা পুরীতে বসবাসের জন্য স্থায়ীভাবে চলে গেছেন, ততদিন তিনি সেই সম্পত্তির মালিকানা ভোগ করতে পারেননি।[5] তাই ১৭৯০ দশকের প্রায় শুরু থেকেই তিনি স্বাধীনভাবে নানা ব্যবসা শুরু করেছিলেন। “তাঁর ব্যবসায়ের মধ্যে ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কাগজের ব্যবসায়, বেনিয়াগিরি, এবং মুখ্যত তেজারতি; কোম্পানীর উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের তিনি সুদে টাকা ধার দিতেন। ব্যবসায়িক সূত্রে তাঁর প্রচুর অর্থাগম হতে থাকে। প্রমাণস্বরূপ, ১৭৯৭ সনে দেখা যায় তিনি এন্তুরু রামজে নামক জনৈক সিভিলিয়ানকে সুদে সাড়ে সাত হাজার টাকা ঋণদান করছেন। দু বছর বাদে তিনি বর্ধমান জেলায় একইদিনে গোবিন্দপুর ও রামেশ্বরপুর নামে দুটি বৃহৎ তালুক ক্রয় করেন। প্রামাণিক তথ্যাদি থেকে জানা যায়, তাঁর স্থাবর সম্পদের মধ্যে এ দুটি অত্যন্ত মূল্যবান; কারণ, এর জন্য প্রদেয় সদর খাজনা ২১,৮৬৮ দ ১৯ মিটিয়ে দিয়েও তাঁর পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা বাৎসরিক আয় হত। ১৮০২ সনে তাঁকে আরেকজন সিভিলিয়ান টমাস উডফোর্ডকে সুদে বড় রকমের ঋণ, পাঁচ হাজার টাকা দিতে দেখা যায়। পরবর্তী সাত-আট বছরে তিনি আরও চারটি ছোট ছোট তালুক ক্রয় করেন, ১৮০৩-০৪ সনে লাঙ্গুলপাড়া (এটি তাঁর লাঙ্গুলপাড়াস্থিত পৈতৃক তালুক ভিন্ন অন্য একটি তালুক), ১৮০৮-০৯ সনে বীরলুক এবং ১৮০৯-১০ সনে কৃষ্ণনগর ও শ্রীরামপুর। সবকটি তালুকই বর্ধমান জেলায় অবস্থিত ছিল। এগুলো থেকেও সদর খাজনা পরিশোধ করার পর তাঁর বাৎসরিক অতিরিক্ত পাঁচ-ছয় হাজার টাকা আয় হত। এভাবে জমিতে অর্থ লগ্নি করে একজন ছোট মাপের জমিদারে রূপান্তরিত হওয়ায় ঔপনিবেশিক শাসন ও আর্থনীতিক কাঠামোয় তাঁর অবস্থান বিশেষ সম্পর্ক ও দায়দায়িত্ব দ্বারা চিহ্নিত হয়ে যায়। এই সম্পর্ক শাসকদের পক্ষ থেকে নানান আইনগত প্রতিশ্রুতি ও জমিদারদের তরফে আনুগত্যের শর্ত দ্বারা স্বীকৃত।”[6]
অরবিন্দ পোদ্দার তাঁর ‘রামমোহন/উত্তরপক্ষ’ গ্রন্থে রামমোহন রায় সম্পর্কে আরও কিছু সম্ভাবনার কথা বলেছেন।
এক বছর নয় মাস ভিন্ন ভিন্ন দফায় ও পদে রামমোহন সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত ছিলেন। এছাড়াও তিনি ছিল জন ডিগবির দেওয়ান। “এসব পদে অধিষ্ঠিত থাকার কালে, সে সময়কার বল্গাহীন স্বর্ণমৃগয়ার দিনে, বেশ কিছু উপরি পাওনার ব্যবস্থাও সমগ্র আর্থনীতিক কাঠামোতে জড়িয়ে ছিল। অন্যান্যদের মতো তিনিও যদি এ সুযোগ গ্রহণ করে থাকেন তো বিস্ময়ের কারণ নেই।”[7] সাদা বাংলায় যাকে বলে ঘুষ খেতেন। এবং এই অর্থ লাভজনক ব্যবসা ও জমিদারি ক্রয় করার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতেন। এক কথায় ১৮১৫-র পূর্ব পর্যন্ত তিনি সৎ-অসৎ নানা পথেই অর্থ উপার্জনে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলেন। অরবিন্দবাবু এসব কথা বললেও যেটা বলেননি— চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত-সঞ্জাত এই নব্য ধনিকশ্রেণির সমাজসংক্রান্ত উদাসীনতা, রামমোহনের মধ্যে পুরোপুরি অনুপস্থিত ছিল। বিত্তের সাধনাই তাঁর একমাত্র সাধনা ছিল না। ১৮১৫-র পূর্ব পর্যন্ত তিনি কেবল বিত্তের সন্ধানই করেছেন— এটাও পুরোপুরি সত্য নয়, আংশিক সত্য। তিনি চিত্তের বিকাশ, বিদ্যাচর্চার পাশাপাশি বিত্তও আহরণ করেছেন। তা তাঁর বাস্তবতাবাদেরই (pragmatism) পরিচয়। উত্থাপিত প্রশ্নটি নিয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন। কারণ সহজ-সরল সিদ্ধান্ত ভ্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
৪.
বিদ্যাচর্চায় তাঁর বরাবরই আগ্রহ ছিল। শৈশব থেকে শুরু করে জীবনের প্রান্তদেশেও বিদ্যার্জনের ক্ষেত্রে তাঁর আগ্রহ— তাঁর জীবনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। ১৮০৩-এ বাবার মৃত্যুর পর রামমোহন মুর্শিদাবাদে বসবাস শুরু করেন। মুর্শিদাবাদ ছিল নবাবি আমলে বাংলার রাজধানী। ওয়ারেন হেস্টিংস মুর্শিদাবাদকে বঞ্চিত করে কলকাতায় রাজনীতির কেন্দ্র তৈরি করেন। কলকাতাই হয়ে ওঠে বাংলার শাসনকেন্দ্র, অন্য ভাষায় রাজধানী।
রামমোহন মুর্শিদাবাদে আপিল আদালতের রেজিস্ট্রার উডফোর্ডের অধীনে চাকরি পেলেন। এই সময় এবং এখানেই তিনি রচনা করেন তুহফাৎ উল মওয়াহিদীন বা একেশ্বরবাদীদের প্রতি উপহার। গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে। বইটির ভূমিকা আরবি ভাষায় হলেও মূল রচনাটি পার্সি ভাষায়।
ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রদত্ত তথ্য থেকে জানা যায় ১৮০০ থেকে ১৮০২ পর্যন্ত রামমোহন সদর দেওয়ানি আদালত এবং ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের কাজে যুক্ত ছিলেন। ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা ফরিদপুরের কালেক্টর টমাস উডফোর্ডের অধীনে মার্চ মাস অবধি কাজ করেন। ১৮০১ খ্রিস্টাব্দেই জন ডিগবির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ঘটে। ডিগবি এই আলাপেই তাঁর প্রতিভার পরিচয় পেয়ে যান। তিনি রামমোহনকে সরকারি কাজে নিযুক্ত করার জন্য সাহায্য করলেও সফল হতে পারেননি। এর মূল কারণ নিহিত ছিল কর্নওয়ালিসের সংস্কারের মধ্যে। এই সংস্কারের ফলে ভারতীয়দের পক্ষে উচ্চ দায়িত্বপূর্ণ পদ পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। রামমোহনের প্রাচ্যভাষা-জ্ঞান এই উচ্চপদ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বস্তুতপক্ষে ততদিনে আরবি/পার্সি ভাষার কদর যেমন কমেছে, তেমনই ইংরেজি ভাষার কদর উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছিল।
ডিগবি ১৮০৫ থেকে ১৮০৮ রামগড়ে এবং ১৮০৮ থেকে ১৮০৯-এ ভাগলপুরে ছিলেন। রংপুরে কালেক্টর হিসেবে তাঁর কর্মকাল ছিল ১৮০৯ থেকে ১৮১৪ পর্যন্ত। রামমোহন ডিগবির দেওয়ান হিসেবে কাজ করবার পূর্বে ফৌজদারি আদালতের সেরেস্তাদার হিসেবে তিন মাস (আগস্ট থেকে অক্টোবর ১৮০৯) কাজ করেছিলেন। ১৮০৯-এর ডিসেম্বর মাসে গোলাম শ পদত্যাগ করলে ডিগবি ওই দেওয়ান পদে রামমোহনকে নিয়োগ করেন।
দেওয়ান হিসেবে রামমোহনের নিয়োগকে কেন্দ্র করে নানাভাবে জল ঘোলা হয়। বোঝা যায় কোম্পানির বোর্ড অফ রেভিনিউ-এর সদস্যরা রামমোহনের ওপর মোটেই খুশি ছিলেন না। রামমোহন সম্পর্কে ডিগবি অত্যন্ত উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন। তার প্রতিফলন দেখা যায় বোর্ড অফ রেভিনিউকে লেখা একটি চিঠির মধ্যে:
In reply to your letter of the 9th instat enclosing a petition presented to the board by Nawal Kishore Sein, I beg leave to inform you that upon the resignation of the office of Dewan delivered in by Golam Shah and accepted by the Board, I nominated Rammohan Roy in the month of December, 1809 to that situation. The Board upon the plea of his not having had experience sufficient in the Revenue Department to qualify him for such a situation desired me to select a more experienced man for that office; not being immediably able to procure a man whom I deemed fit for the situation, I allowed him/Rammohan Roy to officiate to officiate for sometime and in the month of March, 1811 proposed to the board to appoint Hemaut-ullah Chowdhury, whom they were pleased to confirm in that office. After the appointment of Hemautullah to the office of Dewan, Rammohan Roy, although he continued at the station assisting the Persian and Arabic studies of Mr. Fendall, the Registrar, was not employed in any department of my office, but I do not hesitate to confess that I have consulted him on several occasions relative to every important points of Revenue business.[8]
চিঠিটির বাংলা করলে যা দাঁড়াবে তা হল এইরকম:
বোর্ডের উদ্দেশে নওলকিশোর সেনের আবেদন সংবলিত আপনার যে চিঠি এ মাসের ৯ তারিখে পেয়েছি, তার উত্তরে আপনাকে নিবেদন করছি যে দেওয়ান পদ থেকে গোলাম শাহ-র পদত্যাগপত্র বোর্ড কর্তৃক গৃহীত হওয়ার পর আমি ওই পদে রামমোহন রায়ের নাম সুপারিশ করেছিলাম ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে। কিন্তু রাজস্ব বিভাগে তাঁর যথেষ্ট পরিমাণে অভিজ্ঞতা নেই বলে এই পদে তাঁর যোগ্যতার প্রশ্ন বোর্ড উত্থাপন করে এবং আমাকে ওই পদে অপর একজন আরও অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে নিয়োগের নির্দেশ দেয়; কিন্তু তখনই ওই পদে আমার বিবেচনা অনুসারে একজন যোগ্য ব্যক্তি সংগ্রহ করতে না পেরে আমি তাঁকে (রামমোহন রায়কে) কিছুদিনের জন্য পদস্থ থাকতে অনুমতি দিয়েছিলাম। ১৮১১ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে হেমায়েতুল্লাহ চৌধুরীর নাম আমি বোর্ডের নিকট সুপারিশ করি। তারাও তাঁকে ওই পদে স্থায়ীভাবে পদস্থ হওয়ার নির্দেশ দেয়। দেওয়ান পদে হেমায়েৎ-উল্লার নিয়োগের পর রামমোহন রায় যদিও এখানে থেকে রেজিস্ট্রার মিস্টার ফেন্ডাল-এর পার্সি ও আরবি ভাষায় পড়াশোনার কাজে সহায়তা করার পদে বহাল থাকেন এবং যদিও তিনি আমার দপ্তরে কোনও বিভাগে পদস্থ হননি, তথাপি আমি নির্দ্বিধায় স্বীকার করি যে রাজস্ব-বিষয়ক কাজের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমি বহুবার তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করেছি।[9]
বোর্ড অফ রেভিনিউ-র সচিব গ্রান্ট সাহেব ডিগবির চিঠির উত্তরে যা লেখেন সেটিও নানা দিকে থেকে গুরুত্বপূর্ণ:
বোর্ড আপনার [ডিগবির] আচরণ অসঙ্গত মনে করে এবং বর্তমান নির্দিষ্ট নিয়মাবলির স্পষ্ট লঙ্ঘন ঘটেছে বলে মনে করে। বোর্ড দেওয়ান পদে রামমোহনের নিয়োগের অনুমোদনও বাতিল করেছে। বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনাকে জানানো হচ্ছে যে, সরকারি কাজে প্রভাব খাটিয়ে বিশেষ অনুগ্রহ প্রদর্শনের মধ্যে দিয়ে আপনি যে নিয়োগটি [রামমোহনের নিয়োগ] করেছেন এবং যার কোনও সদুত্তর দান আপনার পক্ষে সম্ভব নয়, [তাই] ওই আলোচ্য ব্যক্তির [রামমোহন রায়] কার্যে কোনও অনাচার ঘটলে তার জন্য আপনি দায়ী থাকবেন। আপনার পক্ষ থেকে এই ধরনের অসঙ্গত কাজের পুনরাবৃত্তি ঘটলে তা পরবর্তী চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে অযোগ্যতার নিদর্শন বলে বোর্ড সরকারকে জ্ঞাত করবে।[10]
চিঠিদুটির মধ্যে থেকে যা বেরিয়ে এল তা স্পষ্ট। বোর্ড অফ রেভিনিউ রামমোহনকে মোটেই সুবিধার লোক বলে মনে করত না। তাই বোর্ড দেওয়ান হিসেবে রামমোহনের নিয়োগকে বাতিল করে দেয়। শুধু তাই নয়, ডিগবি রামমোহনকে অস্থায়ী দেওয়ান হিসেবে নিয়োগ করায় বোর্ড এতটাই রেগে যায় যে, ডিগবিকে গ্রান্ট চাকরি না-দেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দেন। ডিগবি যতই রামমোহনের প্রশংসা করুন না কেন, বোর্ডের কাছে তিনি ছিলেন ঘোর অপছন্দের মানুষ। এখন প্রশ্ন হল, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তারা রামমোহনের ওপর এতটা চটা ছিলেন কেন? উত্তর খুঁজতে গেলে একটি ঘটনার উল্লেখ প্রয়োজন। ঘটনাটি ঘটে ১৮০৮-০৯ খ্রিস্টাব্দে।
সেটা ছিল ব্রিটিশ শাসনের গোড়াপত্তনের যুগ। বাংলায় নবাবের কর্তৃত্ব না থাকলেও নবাবি সংস্কৃতি ছিল ষোলো আনা। ইংরেজ সিভিলিয়ানরাই ছিল এক-একজন পাক্কা নবাব। তাদের বোল-চাল, জীবনযাত্রা এক-একজন খুদে নবাবের মতো। অসংখ্য খানসামা, ভৃত্য, সহিস সহ বাগানঘেরা বাড়িতে বিলাসব্যসন আর ঔদ্ধত্যের জীবনযাপন। প্রমথনাথ বিশীর ‘কেরী সাহেবের মুন্সী’ উপন্যাসে ইংরেজ নবাবদের চমৎকার একটা বিবরণ পাওয়া যায়। গ্রামীণ জমিদাররা সাধারণ মানুষকে ঘোড়া বা পালকি চড়ার অনুমতি দিত না। তাদের ছাতা ব্যবহারের অনুমতিও ছিল না। ইংরেজ ‘নবাব’ সিভিলিয়ানরাও একই প্রথা অনুসরণ করত। তাদের উপস্থিতিতে দেশের সাধারণ মানুষ ঘোড়ায় বা পালকিতে চড়তে পারত না, এমনকি ছাতা মাথায় দিয়ে হাঁটাও ছিল বারণ। ১৮০৮-এ রামমোহন যেদিন ভাগলপুরে পালকি চড়ে যাচ্ছিলেন সে-সময় ভাগলপুর জেলার কালেক্টর স্যার ফ্রেডরিখ হ্যামিলটন সেই রাস্তার ধারে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই উদ্ধত ইংরেজ হ্যামিলটন পালকি দেখে চিৎকার করে যাত্রীকে থামতে বলেন এবং অত্যন্ত কর্কশভাবে যাত্রীকে পালকি থেকে নেমে হেঁটে যেতে নির্দেশ দেন। রামমোহন অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে হ্যামিলটনের এই আচরণের প্রতিবাদ করেন। কিন্তু ক্রুদ্ধ সাহেবকে শান্ত করতে ব্যর্থ হয়ে তিনি তাঁর পালকি নিয়ে সেই স্থান ছেড়ে চলে যান। এর পরে ১২ এপ্রিল ১৮০৯ রামমোহন গভর্নর জেনারেল লর্ড মিন্টোকে ঘটনাটি জানিয়ে একটি প্রতিবাদী চিঠি লেখেন। পরিণতিতে সেই কালেক্টর হ্যামিলটন সমালোচিত হন।[11]
ব্যাপারটা কিন্তু এখানেই শেষ হল না। এই দৃঢ়তা ও প্রতিবাদের ফল রামমোহন পেলেন কয়েকদিনের মধ্যেই। বোর্ড অফ রেভিনিউ ডিগবির দেওয়ান হিসেবে রামমোহনের নিয়োগকে বাতিল করে দিল। এর সঙ্গে, কোম্পানিকে প্রায় খোলাখুলি সমালোচনা করায় রামমোহনকে অপছন্দ করার মাত্রা আরও বেড়ে যায়। রামমোহনের কাছে ধর্ম-জাতভেদ ব্যবস্থা শাসক গোষ্ঠীর একটি সেফটি ভালভ হিসেবে ছিল। এ-কথা তিনি খোলাখুলি চিঠিতে জানান গ্রান্টকে:
The institute of caste constitutes a sense of security to the permanence of our East India Government hitherto unparalleled in the history of the world.[12]
অর্থাৎ ইস্ট ইন্ডিয়া সরকারের স্থায়িত্বের নিরাপত্তার উৎস হল বর্ণ-জাত ব্যবস্থা। অন্য ভাষায়, রামমোহন যেখানে ধর্ম-জাতকে প্রগতি-বিরোধী বলে মনে করেন, সেখানে কোম্পানি সরকার ধর্ম-জাত ব্যবস্থার ক্ষেত্রে হানিকর এমন কিছু করতে রাজি নয়, কারণ এই সরকারের অন্যতম সেফটি ভালভ হল এই বর্ণ-জাত প্রথা। এরকম সিদ্ধান্ত যিনি করেন তাঁকে কোম্পানি সরকার পছন্দ করবে না— সেটাই স্বাভাবিক।
[ক্রমশ]
[1] Ball. 1995 : 14.
[2] পূর্বোক্ত।
[3] Ray, Laxmi Narayan. 2012 : 16.
[4] Ball. 1995 : 16.
[5] পূর্বোক্ত: 17.
[6] পোদ্দার। ২০০৩ : ২২-২৩।
[7] পূর্বোক্ত, ২৩।
[8] সেন ও অন্যান্যরা। ১৯৮৯ : পরিশিষ্ট ৭০।
[9] অনুবাদ: কালিসাধন মুখোপাধ্যায়। পূর্বোক্ত: ৬৮-৬৯। অনুবাদটির সামান্য কিছু পরিবর্তন করা হলেও মূলটি অনুবাদকের।
[10] পূর্বোক্ত: ৬৯। অনুবাদটি কালিসাধন মুখোপাধ্যায়ের হলেও কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। যদিও এখানে উদ্ধৃতি চিহ্নও ব্যবহার করা হয়েছে।
[11] Ray, Laxmi Narayan. 2012 : 20.
[12] উদ্ধৃত বাগচী, নির্মাল্য। ১৯৯৫ : ৭২।