দেবকুমার সোম
আমি একটা খেজুরগাছ। পুরুষ। রসহীন। বাজখেকো। টেকোমাথা। চড়া রোদ্দুরে চাঁদি ফাটে। জোৎস্না ফালা–ফালা হয়ে মাটিকে ভিজিয়ে দেয়। ছায়াদাতা নই। নেই আত্মজ। স্বজন। অতীতে যে বালকটি বুনো খেজুর খেয়ে নিতান্ত নিরাপরাধ অবজ্ঞায় বিচিটা ছুঁড়ে ফেলেছিল, যথেষ্ট সময় নিয়ে সাধ–আহ্লাদে জীবন কাটিয়ে, ঘরসোহাগি দুঃখ নিয়ে সম্প্রতি সে লোকান্তরে অবসৃত। জীবিতকালে তার জানা ছিল না এমন অনন্য জনক পরিচয়। কিংবা হয়তো এও হতে পারে নিতান্তই কোনও গরুর গোবরের মধ্যে অপাচ্য বিচি হয়ে ছিলাম। তারপর গোবর শুকিয়ে গেলে মেঠো রাস্তায় গুবরে পোকার সংসারে, বিজ্–বিজ্ শুঁয়োওঠা পতঙ্গের সঙ্গে আমারও এই গাছজন্ম। পূর্বপরিকল্পনাহীন। আকস্মিক। অথচ প্রাকৃতিক।
আমি একটা খেজুরগাছ। দেশি মাটিতে বুনো গাছ। খোদ আরব মরুভূমির মাটি এনেও আমাকে ফলবান, সুমিষ্ট করা যেত না। এ–আমার জেনেটিক্যাল মেধাহীনতা। নিজের অবিমৃষ্যকারিতায় মাটির ওপর নব্বুই ডিগ্রি কোণে না দাঁড়িয়ে আমি অসফল তেরচাভাবে খাড়া উঠেছি। ফলে শূন্যে আমার অবয়ব বেশ বেখাপ্পা। আকৃতিগত অবস্থান কোনও নির্দিষ্ট জ্যামিতিক প্যাটার্ন নয়। ভজঘট। একটেরে আমার দাঁড়িয়ে থাকা। যদিও আপনি যখন আমাকে এই প্রকাণ্ড খণ্ডহরের প্রেক্ষাপটে দেখছেন, তখন আশপাশে তেঁতুলগাছ, পেয়ারাগাছ, বাতাবি লেবুগাছ আর চোরপলতে গাছের সমবায়ে একজন বেখাপ্পা সদস্য হিসাবেই তো দেখছেন? এর সঙ্গে আশশ্যাওড়া, ফণিমনসা, বাবলাকাঁটার ঝোপ। ঢালুজমিতে দুব্বো ঘাস। বেলেমাটিতে লতানে তেলাকুচোর ফলন। এখানে দিনের বেলায় রোদ উঠলে আগে ফড়িং আসত। দু–চারটে প্রজাপতি। বর্ষার জমা জলে ব্যাঙাচি। সন্ধে হলে জোনাকি।
আমার বড় ইচ্ছে ছিল জানেন, বাবুইপাখি তার সংসার পাতুক আমার ডালে। তার কষ্টের ঘরছাওয়ায় থাকুক উপচে ওঠা সুখ। কিংবা এমন পাখি যার শিসে রবিশঙ্কর। আলি আকবর। রসের কারবারিরা আমাকে এড়িয়ে চলে। তবুও ইচ্ছা কি করে না মানুষ সখ্যতা? প্রীতি? বিনিপয়সার উপদেশ? অথবা পরনিন্দা–পরচর্চা? কার না আকাঙ্খা মানুষের তাপ–সন্তাপ? গাছের ডালে পাখির সুন্দর বাসা হলে দূর থেকে আমার বেখাপ্পা শরীরটা বিশিষ্টতা পেত। আমি বাজখেকো। অপয়া। তবুও হয়তো যদি কখনও আপনাদের কেউ এদিকে জমির খোঁজে, সস্তায় পোড়ো জমি কেনার কারণে ঢুঁ মারেন, তবে কি আমার এই বাজখেকো শরীরটা তার যাবতীয় বেঢপপনা নিয়েই আপনার চোখে পড়বে না? আমি নিশ্চল, নিদারুণ দাঁড়িয়ে থেকেও যথেষ্ট বিজ্ঞাপনযোগ্য কি নই? আপনাদের স্মার্টফোন ক্যামেরায় কেবল শান্ত পুকুরে ভেসে চলা সাদা মেঘের ছবি কেন উঠবে? আপনাদেরই কথা: আজকাল খোলা বাজারে সব কুছ বিক্তা হ্যায়।
মানুষসমাজের ধরন–ধারণ ঠিক বুঝে ওঠা যায় না। অন্তত আমার মতো নিম্নমেধার পক্ষে। আমার চোখে জিনিসটা বেশ অশ্লীল। উন্নয়ন হবে সে তো বেশ কথা। উন্নয়নের জোয়ারে মানুষ–দুনিয়ার চারপাশ বেশ ঝলমল করবে। সব যুদ্ধ থেমে যাবে। পৃথিবী হয়ে উঠবে হিন্দি সিনেমার মতো সুন্দর। আপনাদের জন্য তাই উন্নয়ন খুব জরুরি জিনিস। উন্নয়নের কারণে রাস্তা হবে। ভাঙাচোরা, গাড্ডাবহুল, ব্রণ, বিষফোঁড়া রাস্তা নয়। টিভি সিরিয়ালে যেমন দেখায় রূপকথা টাইপ। সবর্ত্র সুন্দর ঘরদোর। পলিগ্যামির শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। অনিন্দ্যসুন্দর খানকিপনা। উন্নয়ন তো খানিক তেমনই? উন্নয়নের কারণে রাস্তা হবে। চার-লেন বিশিষ্ট। তখন দিনরাত আমার বুক কাঁপত। শুনছিলাম চারদিকে ঢাউস সাইজের শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স্, অ্যাপার্টমেন্ট তৈরির উদ্যোগে জলা বোজানোর বেজায় ধুম পড়েছে। তার সঙ্গে গাছকাটা। যদিও আমার আগুপেছু কেউ নেই। তবুও খুন হতে সকলেরই ভয় করে। আমি নিতান্ত নিরস্ত্র গাছ। নেই তেমন ধর্মীয় পরিচয়। কোনও মুরুব্বির চ্যালাও নই। ভোটার লিস্টে আমার নাম নেই।
আমি মাওবাদীও নই। আমার পতন নিয়ে কে ভাববে? কেনই বা ভাবতে যাবে? মনে আশঙ্কা ছিল রাস্তা চওড়া করতে আমাকে কেটে টুকরো করে ভ্যান রিক্শায় উঠিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু বুঝলেন, মানুষের ধরন-ধারণ বোঝা বেশ মুশকিল। বিশেষত যাদের হাতে রয়েছে সিস্টেমের রিমোর্ট কন্ট্রোল। প্রাথমিক পরিকল্পনায় ড্রাফ্টসম্যানরা আমাকে হিসেবের মধ্যেই ধরেছিলেন। মায় ডোবা আর খণ্ডহর। কিন্তু আইনি জটিলতায়, শরিকি ঝামেলায় এ যাত্রায় আমি বেঁচে গেছি। মাথা কাটা পড়ল মাঝিপাড়ার। শোনা কথা দিকুদের কাছে সব আদিবাসীই ‘মাঝি’ আর ‘মাঝিন’। কিন্তু যাকে আমি মাঝিপাড়া বলছি, তাদের মধ্যে বুঝলেন একজনও মাঝি নেই। সব হাঁসদা, মান্ডি, মুর্মু আর কিস্কুদের বাস। যদিও বহুবছর ওরা মারাংবুরুকে ছেড়ে দুগ্গা আর নীলষষ্ঠীর পুজো করে। জিনস্ পরে। তাদের টি শার্টে চে গেভারার মুখ। বালি-সিমেন্টের ব্যবসা করে। এটিএম কিয়স্কের সিকিউরিটি গার্ড। ভোটের দিন দাদাগিরি। বিয়ার-হুইস্কি খায়। মেয়েরা সালোয়ার-কামিজ পরে। লোকের বাড়িতে ঝি-গিরি করে। চার লেনের রাস্তাটা ওদের পাড়ার দিকে বেঁকে গেল। সে-সব নিয়ে কিছুদিন বেশ হুজ্জুতি গেল। তারপর পার্টির দাদাদের চাপে ঘরবাড়ি ছেড়ে মাটির কলসি আর পোষা ময়না নিয়ে তারা ভিনদেশি হল। উৎখাত হল। কাণ্ড দেখুন! মানুষের জন্য উন্নয়ন, অথচ সেখানে মানুষই বাস্তুচ্যুত। হয়তো যাদের ভিটেমাটি গেল, তারা তেমন বলার মতো মানুষ ছিল না। তাদের অবস্থা খানিক আমার মতো। আজ তাদের হক প্রতিষ্ঠা করবার মতো কোনও রাজনৈতিক দলও নেই। ভদ্দরলোক নেতারা মর্গে চালান হয়ে এখন ভোট বিপর্যয়ের হিসাব-নিকেশে সর্বদা ব্যস্ত থাকেন। ফলে যে কথাটা বলছিলাম, মানুষ সমাজের ধরন-ধারণ ঠিক বোঝা যায় না।
কিছু আগে যে খণ্ডহরের কথা উঠেছিল, সেই খণ্ডহর আমার জন্ম ইস্তক এমন মানুষহীন ছিল না। তবে আমার মাথা আকাশ ফুঁড়ে যখন জানান দিয়ে উঠেছে, তখন থেকে যেন ভেতর ভেতর তার ধসের শুরু। প্রথমদিকে কাঠের দরজা–জানলা মাঝিপাড়ার ছোকরারা ঝেঁপে দিত। তারপর ফোকলা ঘরগুলোতে দিনের বেলায় আরামসে জুয়াখেলা চালু হল। শান্ত দুপুরে গুটি কয়েক বিভিন্ন বয়সের মেয়ে-পুরুষ লুকিয়ে এসে সেখানে শরীরের মজা লুটত। আমি দেখেছি মেয়েগুলোর চোখমুখে প্রথম-প্রথম ভয় আর লোকনিন্দার আতঙ্ক পেঁয়াজের খোসার মতো লেগে থাকত। তারপর ঘনিষ্ঠতা ঘন হলে তাদের ছলবলানি আরম্ভ হত! শরীরসুখে তখন তারা বেপরোয়া হয়ে উঠত। প্রায় আবছা অন্ধকারে পুরুষ যখন নারী শরীরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ত, তখন মেয়েদের মুখে ধীরে-ধীরে ফুটে উঠত ঘামবিন্দু। রোদ্দুর এসে পৌঁছে যেত তাদের তির-তির বন্ধ চোখের পাতায়। তাদের মধ্যে কেউ-কেউ পরে সংসার পেতেছে। বাকি অনেকের কাছে উপক্রমণিকার মতো ছিল তাৎক্ষণিক এমন মজা। সেই মজা করতে গিয়ে গোটাকতক মেয়ে পিছলে গিয়ে ধর্ষিতা হয়। অনেকেই পেট খসায়। আমার মনে পড়ে যায় বহু বছর আগে একটি বোকা মেয়ে তেমন ম্যানেজ করতে না পেরে এই ডোবার জলে কলসি–দড়ি নিয়ে দুদিন পরে ভেসে উঠেছিল।
তখনও খণ্ডহর ঠিক আজকের মতো ধসে যায়নি। তার কাঠামোটা খাড়া ছিল। ফোকলা-বুড়ো শরীরের ভেতর ভাম, শেয়াল, কাঠবেড়ালির সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছিল। তার মধ্যেই সন্ধেবেলা মদের আসর। পরদিন স্পষ্ট আলোয় খালি বোতলগুলো ধুলো আর রোদ্দুরে গড়াগড়ি খেত। মাঝিপাড়ার গরুগুলো বাবলাকাঁটার লোভে খণ্ডহরে ঢুকে যেত। সারাদিন প্রায় সেখানেই তারা যৌনতাহীন জাবর কাটত। মাঝিপাড়ায় হয়তো তেমন বলবীর্য ষাঁড় ছিল না। গরমি-লাগা গরুগুলোকে পাল-খাওয়াতে অন্যত্র নিয়ে যেত হত। এর মধ্যে একদিন হঠাৎ একটা বাছুর সাপের ছোবলে মারা যায়। ফলে থেমে গেল মানুষের চলাচল। মরা বাছুরের চামড়ার লোভেও কেউ ঢুকল না খণ্ডহরে। ক্রমে সাপ-বেজি-ছুঁচো-ভাম আর শেয়ালের বাস্তু হয়ে গেল মুখার্জি ভিলা।
এ-বাড়ি এখন মাটির ওপর জঙ্গল আর ঢিবি। বাড়ির সীমানা পাঁচিল যা পুরনো চুল–সুরকির, ধসে যাওয়া গায়ে শ্যাওলার দাম। ধুধুলের জঙ্গল। ধুতরো ফুল। আকন্দ। এই বাড়ির খিড়কি দোরের সংলগ্ন ছিল পুকুর। একসময় ঘাট ছিল। সিমেন্ট বাঁধানো। বাড়ির মেয়েরা গরমকালে সন্ধেবেলা উদোম হয়ে স্নান করত। তিনতলার চিলেকোঠায় বসে বাঁশি বাজাত এক তরুণ। ছাদের দড়িতে শুকাত লালপেড়ে শাড়ি। ব্লাউজ। পুরুষ পাজামা। সায়া–ব্রেসিয়ার তাদের ছাদে দেখা যেত না।
তাহলে কি পুকুরটা, যাকে এখন আমি ডোবা বলছি, সেটাই অপয়া ছিল? তখনকার মাঝিপাড়ার সঙ্গে সঙ্গত কারণেই পৃথক ছিল মুখার্জি ভিলা। বাড়ির ঝি, বাগানের মালি, কর্তাদের যৌনসঙ্গী সাপ্লাই দিত তারা। তেমনটাই তো বন্দোবস্ত ছিল? থাকে? এখনও আছে? তবু পুকুরটার দোষ কিংবা স্খলন কিছু কম নয়। বাড়ির বড় কর্তা ছিলেন উকিল। সদর কোর্টের দেওয়ানি উকিল। পসার ছিল বেশ। দেশ-গাঁয়ে টিঁকে থাকতে গেলে ভায়ে-ভায়ে লাঠালাঠি দস্তুর। ফলে মাঝিপাড়া মুখার্জি কর্তাকে বেশ সমঝে চলত। মুখার্জি কর্তার ছোট ছেলেটার কলেজজীবন। করে–কম্মে খাওয়ার মতো স্মার্ট হয়তো সে ছিল না। আমার দেখা সারাদিন প্রায় সে চিলেকোঠায় নিজেকে বন্দি রাখত। তার ঘরের খোলা জানলাটা ছিল প্রায় আমার মাথায়-মাথায়। একটু বেশি হাওয়া দিলে আমি মাথা দুলিয়ে উঁকি দিতাম তার ঘরের ভেতরটা। ছোট্ট ঘরের ছোট্ট বিছানায় ছড়ানো রাজ্যের বই। সে খুব বই পড়ত। বাঁশি বাজাত। অনেক রাত অবধি ঘরে তার আলো জ্বলত। বাঁশি বাজাত।
মেয়েটার নাম আমার জানা নেই। আমার সামনে দিয়ে সাপভঙ্গির যে মেঠো রাস্তাটা চলে গেছে, সেখান দিয়ে বারকয়েক তার যাতায়াত দেখেছি মাত্র। মাথা নিচু করে বুকে বই আগলে লালফিতে বাঁধা তেল চক্চকে বেণী দুলিয়ে সে যেত। আমার আনমনা ভাব হয়তো কখনও বিশেষ খেয়াল করিনি তার আসা-যাওয়ার যোগাযোগে চিলেকোঠার জানলায় কারও ছায়াশরীর সরে যেত কি না?
একবার সকাল থেকেই আকাশে বাদল মেঘ তার সেনা সাজাচ্ছিল। দাবার চৌষট্টি খোপ। দু–জোড়া ঘোড়া নিয়ে টু–নাইটস্ ওপেনে আকাশ ফাটিয়ে বাদল মেঘ ঘিরে নিয়েছিল সারা আকাশ। তারপর কখন যেন গৃহস্থকে সামান্য সুযোগ না দিয়ে, এতটুকু ইঙ্গিত না দিয়ে, বোর্ডের দু কোণ থেকে দুটো নৌকাকে উলম্ব বরাবর নামিয়ে দিল। তারপর ঘন আকাশ ঘিরে তীব্র আলোর উল্লাস। দিনের বেলায় নেমে এল ঘুরঘুট্টি অন্ধকার। আর সেই আঁধারে আলোর ঘন-ঘন ঝলকানিতে দুদ্দাড় ছুটল অক্ষৌহিণী বৃষ্টিধারা। তেমন প্রবল বৃষ্টি আমি আমার গাছজীবনে আর কখনও দেখিনি। আমি জন্মগতভাবে ছায়াশীতলহীন। আবার বৃষ্টিধারা থেকে কাউকে বাঁচাতেও শিখিনি। সেই বৃষ্টির মধ্যে, তীব্র বৃষ্টির মধ্যে সেই মেয়েটা পথ হারিয়ে তীব্র ছুটে মাঝিপাড়ায় ঢুকতে চাইছিল। কিংবা মাথার ওপর একটা ছায়া, একটা ছাদ, হোক না চিলেকোঠার ছাদ সে চাইছিল। সত্যিই সেদিন তার পরিত্রাণের দরকার হয়তো ছিল। সেদিন সেই বাজমুখো প্রবল জলধারার মধ্যে আমার আগু-পিছু তেঁতুলগাছ, পেয়ারাগাছ আর বাতাবি লেবুগাছ সমস্বরে মাথা ঝাঁকিয়ে তাকে ফিরিয়ে দিল। সেদিন কালো আকাশ ঘিরে দানবীয় উল্লাসের মধ্যে তাকে আশ্রয় দেয়নি কুলীন গাছসমাজ। সদ্য পোয়াতি মেয়েটা, মা হয়ে উঠতে চাওয়া মেয়েটা আশ্রয়ের শেষ সুযোগ খুঁজেছিল আমার ছায়ায়। আমি একটা খেজুরগাছ। পুরুষ। রসহীন। বাজখেকো।
তখনও এদিকটায় খানিক গাঁয়ের গন্ধ ছিল। খানিক ফাঁকা। খোলামেলা। ঝিঁ–ঝিঁ ডাকে। জোনাকিও থাকে। চিলেকোঠার বাঁশির সুর তারই মধ্যে ঘুরে–ঘুরে হাওয়ায় কানাকানি করে। বাঁশি তার আলাপে কত কী যে বলত। তখন বুঝিনি। কেন সময়কালে আমরা এমন বোবায় ধরা অবুঝ হয়ে যাই? হাওয়া তখন ঘুরত। চলত। মাঠের ওপর দিয়ে। ঝোপঝাড় টপকে। টলটলে পুকুর (তখন সেটা তো পুকুরই ছিল) থেকে ঝাঁকে-ঝাঁকে জলবিন্দু নিয়ে হাওয়ার সক্ষম উড়াল মাঝিপাড়ার দিকে। তার কি কোনও দায় ছিল? আমারও কি কোনও দায় ছিল না সেদিন হংসধ্বনির কাছে? বাঁশিতে ‘রে’ এত মহার্ঘ! দুর্লভ! যেন ঋষভ ত্যাগ করেছে সে। স ^র গ প ন র্স— সরগম আরোহণে তীব্র মোচড় তোলে পঞ্চমে। অথচ কেমন শুদ্ধ। কেমন শান্ত তার ভাব। আমার কাঁটাতোলা পাতাবাহারে শিস্ দিয়ে যেত হাওয়া আর সেই মোবাইলফোনহীন যুগে তীব্র পঞ্চম ঠোঁটে নিয়ে উড়ে যেত হাওয়া। হাওয়াকে পথ দেখাত জোনাকি পরিবার। নীরব সঙ্গী হত ঝিঁ-ঝিঁ পোকা।
এসব তখন খুব সামান্য কিছু বিনোদন ছিল বলা যায়। যেমন বর্ষাদিনে এক পশলা বৃষ্টির পরে চারপাশ যখন খুব ফরসা হয়ে যেত, কলাপাতা থেকে গড়িয়ে পড়ত গাঢ় সবুজ রঙ। গাছের গায়ে মুখে সাদা ডিম নিয়ে পিঁপড়েরা ভূমিহীন উদ্বাস্তু হত। কাঠবেড়ালি আধখাওয়া কোনও ফল নিয়ে ছুটে যেত গাছের ফাঁকে। যেখানে কিছু আগে একটা জলঢোড়া সর্ সর্ করে গুটিয়ে গেছে ঘন সবজে ঝোপের নীচে। আর তখন সাইকেলটা আমার শরীরে ঠেস দিয়ে তারা দুটিতে পুকুরের বাঁধানো ঘাটে পাশাপাশি বসে। সেই তাদের বোরোলিনের সংসার। কী কথা তারা বলে? ছোট একটা ভাঁড়ের টুকরো নিয়ে কী ছবি আঁকে মেয়ে কাঁচা মাটির ওপর? কী ছবি? আর ছেলেটা হাতে তার ঢিল। লোফালুফি খেলে খানিক। ক্ষণিক প্রতীক্ষায় থাকে লক্ষ্যভেদে। তারপর ছুঁড়ে দেয় শান্ত, শান্ত দুপুরে জলজ মানচিত্রে। ঢেউ ওঠে চাকা-চাকা। ছোট-বড় ঢেউ মিলে নির্মিত জলঢেউ এখনও সেই মজা ডোবা থেকে বাজখেকো আমার বুকে যেখানে একদিন আশা ছিল বাবুইয়ের সংসার, সেখানে, ঠিক সেখানে ঘা মারে।
বাকি দুনিয়া থেকে তখন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে জুটি। ছেলেটার সাইকেলের সিটে বহাল তবিয়তে বসে কাঠবেড়ালি। হাতে তার আধখাওয়া জ্ঞানবৃক্ষের ফল। সে কি জানে এখন মুখার্জি ভিলা পুরুষহীন? মেয়েমহল প্রায় ঘুমে। বাড়ির ছোটটি এখন কলেজে (?)। বেলা পড়ে এলে ফিরবে। কিন্তু সেও তো খানিক দেরি আছে তাই না? এরপর দিন ফুরানোর বেলা এলে মেয়েটি বইখাতা কোল থেকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে লাল ফিতের বিনুনি দুলিয়ে ফিরে যাবে এই সাইকেল পাশ কাটিয়ে মাঝিপাড়ায়। ছেলেটি একটা সিগারেট ধরিয়ে নেবে। কিছুক্ষণ এলোমেলো টান দেবে। থামবে। নিশ্চল তাকিয়ে থাকবে পুকুরের ওপারে জংলা বনের দিকে অবিকল। যেখানে বৃষ্টিধোয়া পাতায় সূর্য ঢলে যাওয়া লাল মেদুর রোদ অপার্থিব হয়েছে। সে সিগারেটে টান দেয়। দ্রুত শেষ করে। চপ্পল দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেয় তার সামগ্রিক দুশ্চিন্তা সমেত জ্বলন্ত সিগারেট বাড্। তারপর? বাকিটা ঠিক চিত্রনাট্য মেনে। সে ফিরে আসে তার সাইকেলের কাছে। সাইকেল তখন মিটিমিটি হাসে। বেল বাজলে সাইকেল ক্লান্তির অভিনয়ে মুখর হয়। কলেজফেরত এতটা রাস্তা তাপ্পিমারা টায়ারে তাদের ফিরে আসা মুখার্জি ভিলায় সাইকেলের নিপুণ অভিনয়।
চার লেনের রাস্তাটা মাঝিপাড়াকে দু-ফালা করে আরও দূরে হারিয়ে গেছে। সেখানে একপাশে পেট্রোল পাম্প। উলটো দিকে মাহাদেব ধাবা। যেখানে দুধ-চিনির কড়া চা থেকে পর্দা ফেলা ঘরে বিয়ার আর কালোপানা মেয়েদের ট্রাকড্রাইভারদের মনোরঞ্জন। আর একটু এগোলে দূরে চোখ মেলে দিলে আমি দেখতে পাই ফ্লাইওভার। যেন স্মৃতিতে কারও লালফিতের বেণী দুলে ওঠে। কিংবা একাকী ডানা মেলা চিলের দুপুর-মন্থরতা। দুপাশ ধরে ছুটে চলে গাড়ি। দামি অটোমোবাইলের প্রতিযোগিতা। ট্রাক। লরি। বাস পরিবহণ। কেউ কেউ এসি গাড়ির কাচ একটু নামিয়ে বাইরে ছুঁড়ে দিচ্ছে চিপসের খালি প্যাকেট। বিয়ার ক্যান। সেসব দুরন্ত হাওয়ায় বহু দূর উড়ে যায়। পাখি প্রজাতির স্মৃতি আনে। প্রজাপতির। ফড়িংয়ের। স্মৃতি। বুড়োটে স্মৃতি। কেউ আবার গাড়ি থামায়। দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে হিসু করে। দেখে জংলা ঝোপের ভেতরে বাসন্তিরঙা ছোট-ছোট নামগোত্রহীন ফুল। ফুল দেখে হয়তো ভালো লাগে। তাই তারা তার ওপর পেচ্ছাপ করে ছড়্-ছড়্। আকাশের মেঘেরা মাঝিপাড়ার সেই মেয়েগুলোর মতো দলবেঁধে দমছুট দৌড় লাগায়। শ্যামলা। স্নিগ্ধ। বেতসী শরীর। আদ্দিকালের মতো বুকের ওপর আড়াআড়ি জড়িয়ে নিয়ে কালচে সাদা শাড়ি কোমর ঘিরেছে। নাগরিক পোড়া পেট্রোলের গন্ধমাখা বাতাস আড়চোখে দেখে তাদের পরনে সায়া–ব্লাউজ নেই। জলভরা মেঘ ভেসে ভেসে যায়। আমি দেখি আকাশ ক্রমে পাখিহীন হয়ে বড় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে এখন।
সময় এখন খুব দ্রুত পালটে যায়। সম্পর্ক-সমীকরণ, রাগ-অভিমান-খুনসুটির সাবেক চেহারা আজকাল এমন অচেনা। মাঝেমাঝে নিজেকে ভিনগ্রহের জীব মনে হয়। অভিনয়ে এখন সকলেই বিকাশ রায় অথবা উৎপল দত্ত। তবু চামড়ার নিচে যখন লালচে মাংসের ওপর আচমকা দেখা যায় সভ্যতার নষ্টামি, ভড়ং আর জাতপাতের হিংসা তখন আশ্বস্ত হই। বেশ আশ্বস্ত হই। বুঝতে পারি আমার এই একটেরে তির্যক গাছজীবন নিয়ে আমি সেই একই দুনিয়ায় আছি। যেখানে সেই বালকটি নিতান্ত নিরাপরাধ অবহেলায় বিচিটা ছুঁড়ে ফেলেছিল হয়তো। হয়তো। আজকাল আকাশের দুর্ব্যবহারে পাখিরাও ক্লান্ত। শিকগাঁথা কাবাবের মতো মোবাইল টাওয়ারগুলো উঠে গেছে শূন্যতাকে ফুঁড়ে। ধানক্ষেতের ওপর দিয়ে চলে গেছে হাই টেনশন ইলেকট্রিক লাইন। গেরস্তঘরের মাঝবয়সি মহিলার বেখাপ্পা শরীরের মতো চার লেনের হাইওয়ের দুপাশে এখন প্রলোভনের, নষ্ট হাওয়ার প্রচুর আয়োজন। মুখার্জি কর্তার মেজভাই সেই অর্ধশতক আগে নকশাল হয়ে যায়। যার ডেডবডি কখনও খুঁজে পায়নি পরিবারের লোক। তার পরিণতি বাড়ির বাকিদের মানিয়ে নেওয়ার দুরন্ত সহবত শিখিয়ে গেছে। তবুও জানেন, ধমনীর ভেতর। রক্তের ভেতর। যাকে আপনারা বলেন জিনের ডি-কোডিং, তার মধ্যে অনন্ত রহস্য থেকে যায়। যায় না কি? নইলে জমি-জঙ্গলের অধিকার নিয়ে এখনও কেউ কেউ কেন রাষ্ট্রের সঙ্গে পাঙ্গা নেয়? তাদের পিঠে সন্ত্রাসবাদীর স্ট্যাম্প সেই পঞ্চাশ বছর আগের মতো এখনও কেন দাগিয়ে দিতে হয়? কলেজে পড়লে কি কেউ কেউ জ্ঞানের অন্বেষণে আগুনের গুহামুখের কাছাকাছি পৌঁছে যায়? আগুনে হাত পোড়ায়? তারা এখনও কি রাত জেগে লেখে নিষিদ্ধ ইস্তেহার? শব্দ আর রঙে ছড়িয়ে দিতে চায় শাসকের প্রতি ঘৃণা? আমি নিম্নমেধার বুনো খেজুরগাছ। এতকিছু আমার অজানা। আপনারা পারলে সেই সাইকেলটাকে জিজ্ঞেস করতে পারতেন। কিন্তু এখন কোথায় সেই দু চাকার সামান্য পরিবহণসঙ্গী?
সেদিনের আকাশভাঙা মেঘ নাকি পনেরো কিলোমিটার লম্বা ছিল। পূর্ণ পোয়াতি মেঘ সাগর থেকে যেমন নোনাজল শুষে এনেছিল, তেমন কারও কারও নোনতা কান্নাও কি তাতে ভেজাল হয়নি? বর্ষার দুপুরে সেদিন বহুক্ষণ সেজেগুজে সময় নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল খর মেঘ। বিদ্যুৎ ইশারায় চমকে উঠছিল চরাচর। ওদিকে কোথাও বুঝি জমিজিরেতের অধিকার নিয়ে জেগে উঠেছিল কাস্তে-কুড়ুল-দা। ঘন আকাশের নীচে রাষ্ট্রের মোকাবিলায় একজোট কিছু রুখো মানুষ। তারপর সেই পনেরো কিলোমিটার লম্বা মেঘ তার ক্ষমতার শীর্ষে উঠে নেমে এসেছিল মাটির ওপর মেশিনগানের গুলির মতো। সেদিনের বৃষ্টিফোঁটায় জেদি সবুজ কচি গাছের পাতাগুলো ফালাফালা হয়ে যাচ্ছিল। বাজ পড়ছিল হুড়মুড়িয়ে কাছে-দূরে-কাছে। অমন করাল অন্ধকারে সবকিছু কেমন পালটে যাচ্ছিল। সামান্য সবুজ কচি পাতাগুলোকে মনে হচ্ছিল শক্ত চোয়াল। রুখু কৃষকের স্লোগানের মতো তীক্ষ্ণ। জেদি। বজ্রপাত যেন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মতো কাঁপিয়ে দিচ্ছিল মাটির গুপ্তদেশ। এরই মধ্যে সদ্য পোয়াতি মাঝিপাড়ার সেই কালোপনা মেয়েটাকে বের করে দিয়েছিল মুখার্জি ভিলা। তার মুখের সামনে সপাটে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ভিলার সদর দরজা। মেয়েটা কাঙালের মতো, ভিখারির মতো, উদ্বাস্তুর মতো, পাগলের মতো, সর্বহারার মতো ঘন-ঘন মাথা কুটছিল সেই ব্যক্তিত্ববান সদর দরজায়। পুরনো দিনের ভারি কাঠের দরজায়। তখন মেঘ-মেঘে আকাশ জুড়ে কী প্রবল গর্জন। হুঙ্কার। সামান্য মেয়েটি, দুদিন আগেও যে বেণী দুলিয়ে ভিলার সামনের রাস্তা দিয়ে বুকে বই আঁকড়ে স্কুলে গেছে: নিজেকে বিলিয়ে দিতে চেয়েছিল মুখার্জি ভিলার সদর দরজার সামনে। কিছু আগে যে দরজা দিয়ে তাকে ন্যাকড়ার মতো বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়।
তখন প্রবল বৃষ্টি। মেশিনগানের বুলেটের সংখ্যাহীন আক্রমণে কেঁপে উঠছি আমরা গাছসমাজ। তেঁতুলগাছ, পেয়ারাগাছ, বাতাবি লেবুগাছ। কিংবা চোরপলতেগাছ। আমরা সকলেই প্রলয়ের সেই খ্যাপামিতে এ তাকে ছুঁতে চাইছিলাম। এক হয়ে প্রতিরোধ করতে চাইছিলাম। আর সেই কিশোরি মেয়েটা, ভিলার সদর দরজা থেকে নিষ্ঠুর প্রত্যাখ্যাত হয়ে বারবার ছুটে যাচ্ছিল একবার তেঁতুলগাছ, একবার পেয়ারাগাছ আর একবার বাতাবি লেবুগাছের কাছে। তাকে কেউ একটু আশ্রয় দিক। তার নিজের জন্য নয় নিশ্চিত? যে সাইকেল আরোহী সেই সাতসকালে তার সাইকেল নিয়ে চলে গেছে মেশিনগানের মুখে বুক চিতিয়ে দাঁড়াবে বলে, তার অনাগত সন্তানের জন্য। যে সন্তানের জন্মে অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে জমির। অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে জঙ্গলের। ধ্বংস হবে আইনি পরিভাষার। জেনেটিক্যাল ডি-কোডিং হবে রুখো মানুষের। মানুষের প্রতিষ্ঠার মধ্যে জন্ম নেবে তাদেরর একমাত্র শিশু।
দেয়নি। মান্য বৃক্ষসমাজ সেদিন সেই অভাগীকে আশ্রয় দেয়নি। বুঝলেন, সকলেই তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। যে ফলন্ত পেয়ারা পেড়ে খেত মেয়েটা। দুপুরবেলায় গাছের মগডালে উঠে মজা করত তার বালিকা বয়সে। সেই পেয়ারাগাছ ঘন-ঘন মাথা নেড়ে তার অসন্তোষ জানিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিল তাকে। যে তেঁতুলগাছটার নীচ দিয়ে সে ভূতের ভয়ে পালিয়ে যেত, বাতাবিতে নুন আর মরিচ মিশিয়ে দুপুরবেলা চুপিচুপি পৌঁছে যেত মুখার্জি ভিলার চিলেকোঠায়, তারা সেদিন সকলেই অপরিচিতের অভিনয় করেছিল। তারা সকলেই সেদিন বিকাশ রায় কিংবা উৎপল দত্তের চেয়েও মর্মান্তিক বড় অভিনেতা। আর আমি?
আমি নীরস। একবগ্গা। একটেরে একটা খেজুরগাছ। খুব ঘনিষ্ঠ সন্নিধ্যে দেখেছি তাদের প্রেমময় ভাবসাব। অন্তর থেকে চেয়েছি মেশিনগানের বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে জয় ছিনিয়ে নিক রুখো মানুষের দাবি। তাদের সন্তান আসুক রোদঝলমল পৃথিবীতে। আমার মাথার ওপর তখন ঝাঁপিয়ে পড়ছে বৃষ্টিধারা। আমার পাতাগুলোকে খুবলে নিচ্ছে হিংস্র জহ্লাদ ফ্যাসিবাদ। তার মধ্যে আমি আমার সব শক্তি দিয়ে আশ্রয় দিতে চেয়েছিলাম মেয়েটাকে। মেয়েটাও বুঝেছিল আমার আহ্বান। সে ছায়া-অপরাগ, ভরসা-অপরাগ আমার নিচে এসে দাঁড়িয়েছিল। আশ্রয় নিয়েছিল। আর ঠিক সেই মুহূর্তে ঝাঁকে ঝাঁকে বজ্রপাত শুরু হয় আমার মাথা লক্ষ করে। বিশ্বাস করুন, আমি প্রতিটা বজ্র, দেবরাজ ইন্দ্রের প্রতিটা অব্যর্থ বজ্র আমার মাথায় ধারণ করেছিলাম। সেদিন মেয়েটাকে আমি তার মুখ পোড়াতে দিইনি।
বৃষ্টি থেমেছিল তারপর। পনেরো কিলোমিটার লম্বা মেঘ তার সব শক্তি নিংড়ে দিয়ে বেপাড়ায় চলে গেলে শোকের ছায়ার মতো গাঢ় কিছু অন্ধকার ঢেকে রেখেছিল আমার চারপাশ। আমি তখন দৃষ্টিহীন। বাজখেকো। বিচ্ছিরি। বেফালতু।
মেয়েটার জলভরা শরীর কলসি-দড়ি নিয়ে দুদিন পরে ভেসে উঠেছিল পুকুরের টইটম্বুর জলে।
সাইকেলের চাকার দাগ আর ফিরে আসতে দেখিনি তার চিলেকোঠার ঘরে।