সৃজন দত্ত
লেখক ইতিহাসের স্নাতক, ছাত্র-রাজনীতির কর্মী
গত ১০ জুলাই থেকে সারা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম দখল করে রেখেছে শুধু একটাই খবর— জনরোষের সম্মুখীন হওয়ার ভয়ে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে নিজের প্রাণ বাঁচাতে তাঁর কলম্বোর প্রাসাদ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন এবং “গো গোতা গো” স্লোগানকে কেন্দ্র করে বিগত ৪ মাস ধরে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের দাবিতে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছে, সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের দখল নিয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে সাম্প্রতিক শ্রীলঙ্কায় ঘটে চলা অভূতপূর্ণ সামাজিক-রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ বিষয়ক একটি পোস্ট দেখলাম খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। পোস্টটির বয়ান এইরূপ—
Right now, Sri Lanka is living what Faiz Ahmed Faiz had said:
Sab taaj uchaley jayenge, Sab takht giraaey jayenge…
পোস্টটিকে জনপ্রিয় করে তোলার পেছনে যাদের অবদান রয়েছে, অর্থাৎ, পোস্টটি যারা শেয়ার করছে, তাদের সেইভাবে কোনও নির্দিষ্ট বিশেষ রাজনৈতিক পরিচিতি নেই। তাদের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ হয়তো কোনও রাজনৈতিক দলের গণসংগঠনের সদস্য বা সেই সংগঠনের দলীয় রাজনৈতিক মতাদর্শের সমর্থক। তবে এইক্ষেত্রে, এই সমস্ত মানুষগুলিকে এক ছাতার তলায় আনা খুব কঠিন কোনও কাজ নয়— এরা সকলেই পশ্চিমবঙ্গের প্রগতিশীল এবং বাম-মনস্ক পরিমণ্ডলের অংশ।
স্বাভাবিকভাবেই, আমরা, অর্থাৎ যারা পুঁজির অবিরাম দাসত্বের স্বীকার, যাদের অস্তিত্বের মর্মস্থলে রোজকার বঞ্চনা বা জরাজীর্ণভাবে বেঁচে থাকা ছাড়া আর কিছুই নেই, তাদেরকে এই ধরনের বিদ্রোহের ঘটনা পুনরুজ্জীবিত করবে— দৈনন্দিন জীবনের সংগ্রামের ভারে তাদের অন্তরে চেপে থাকা বিকল্প সমাজে বাস করার আকাঙ্খাকে প্রাণিত করবে।
কিন্তু, উপরে উল্লিখিত পোস্টটি সহ পশ্চিমবঙ্গের প্রগতিশীল এবং বাম-মনস্ক পরিমণ্ডলে অবস্থান করেন, এমন সমমনস্ক মানুষ যারা তাদের সামাজিক জীবনযাত্রার উন্নতির আকাঙ্খা থেকে কোনও একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বিকল্প খুঁজে চলেছেন, তাদের লেখা এই ধরনের অজস্র পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে দেখে মাথায় বেশ কয়েকটি প্রশ্ন জেগেছে।
১০ জুলাই থেকে শ্রীলঙ্কায় যা ঘটে চলেছে তা থেকে কি সত্যি আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছোতে পারি যে এই দ্বীপরাষ্ট্রের জনগণ ফয়েজের কথাকে বাস্তবে পরিণত করেছেন? ১৯৭৭ পরবর্তী নয়া-উদারনৈতিক সংস্কারের ফলস্বরূপ শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির চার দশকব্যাপী যে অবনতি, বিশেষত আন্তর্জাতিক বাজারে যে বিপুল পরিমাণ ঋণ (৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) এবং তার কারণে বর্তমানে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্র যে গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে জর্জরিত হয়ে পড়েছে, তা থেকে কি সত্যি এবার শ্রীলঙ্কা বেরিয়ে আসতে পারবে? উচ্চ-মুদ্রাস্ফীতির ফলে খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি এবং অভাব তৈরি হওয়াতে শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকা যেভাবে দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে, সেই সমস্যার কি তাহলে এবার অবসান ঘটবে?
মুক্ত বাজারের নামে নয়া-উদারনৈতিক শোষণ আজ যেভাবে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে এবং সাম্প্রতিক শ্রীলঙ্কার যে উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০১৫ সালের গ্রিসের প্রবল অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং সেই সময়কার রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের কথা। ২০০৮ সালের বিশ্বজোড়া অর্থনৈতিক মন্দা পরবর্তী দুনিয়ায় ‘প্রথম বিশ্ব’-এর যে দেশগুলি অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল গ্রিস। তৎকালীন গ্রিক রাষ্ট্রের যে অর্থনৈতিক সঙ্কট, তার সঙ্গে বর্তমানের শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে অনেকটা সাদৃশ্য রয়েছে। দুটির উৎস একটাই— তা হল নয়া-উদারনীতিবাদ নামক যে ধ্বংসাত্মক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আজ সারা বিশ্ব জুড়ে বিরাজমান। সেই সময়েও, গ্রিসে ব্যাপক গণআন্দোলন গড়ে উঠেছিল এবং আন্দোলনকারীদের সমর্থনে গ্রিসের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী, ইয়ানিস ভারোউফাকিস মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে আন্তর্জাতিক নয়া-উদারনীতিবাদী প্রতিষ্ঠান এবং গ্রিসের মন্ত্রিসভার মধ্যেকার আঁতাতের বিরুদ্ধে নিজের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। গ্রিসের আন্দোলনকারীদের মনে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে এমন আশা জাগলেও, তা বাস্তবে হয়ে ওঠেনি— ২০১৫ সালে গ্রিসে ক্ষমতায় আসা SYRIZA নামক ‘বাম-জোট’ তৎকালীন নয়া উদারনৈতিক অর্থনীতি দ্বারা তৈরি হওয়া সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে আন্তর্জাতিক নয়া-উদারনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলিরই দ্বারস্থ হয়েছিলেন। আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক ও ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক মিলে অর্থনৈতিক সহায়তা বা ক্রেডিটের মাধ্যমে গ্রিসের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আরও শক্ত হাতে গ্রিক জনগণের ওপর নয়া-উদারনৈতিক শোষণ নামিয়ে এনেছিল।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে পালিয়ে যাওয়ার পর জানিয়েছিলেন যে আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নিয়ে তিনি ১৩ জুলাই, অর্থাৎ, আজ পদত্যাগ করবেন। কিন্তু, কথা রাখার পরিবর্তে তিনি আজ সকালে গোপনে দেশ ছেড়ে মালদ্বীপে আশ্রয় নিয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন। তার শপথ গ্রহণের আগে পর্যন্ত গোতাবায়া রাজাপক্ষের অনুপস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার সংসদের স্পিকার সমস্ত প্রশাসনিক কাজকর্মের দায়িত্ব গ্রহণ করছিলেন। তিনি, বর্তমান প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করবেন, এই খবরটি ছাড়াও আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন যা শ্রীলঙ্কার জনগণের ভবিষ্যৎ কী হবে, তার ক্ষেত্রে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। প্রথমত, তিনি জানিয়েছেন যে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্র এই অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে Extended Fund Facility (EFF)-এর জন্য যত দ্রুত সম্ভব আইএমএফের সঙ্গে আলোচনায় বসবে। তাঁর এই বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে আশঙ্কা করা যায় যে শ্রীলঙ্কারও হয়তো গ্রিসের মতো পরিণতি হতে পারে— আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক মিলে নতুন কোনও এক নয়া-উদারনৈতিক চুক্তির মধ্যে শ্রীলঙ্কাকে ফাঁসিয়ে দিতে পারে। এই নয়া-উদারনৈতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলির পাশাপাশি, চিন, জাপান ও ভারতের মতো ঋণদাতা দেশগুলিও তাদের নিজেদের ভূ-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের জায়গা থেকে শ্রীলঙ্কার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে, এমন সম্ভবনাও পুরোপুরি খারিজ করে দেওয়া যায় না।
দ্বিতীয়ত, শ্রীলঙ্কার সংসদের স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেওয়ারদেনা জানিয়েছেন যে যেহেতু আগামী এক মাসের মধ্যে তাদের নতুন একজন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে হবে, তাই তাঁর প্রস্তাব হল শ্রীলঙ্কার সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি মিলে জোটবদ্ধ হয়ে নতুন এক সংসদ গঠন করুক। তার এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্র ভালো করেই জানে যে বর্তমানে শ্রীলঙ্কায় কোনও নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দল নেই যার কোনও একজন নেতাকে শ্রীলঙ্কার জনগণ সর্বসম্মতিক্রমে তাদের নতুন সর্বোচ্চ রাষ্ট্রনেতা হিসেবে মেনে নেবে। তাই জন্যই, শ্রীলঙ্কার স্পিকার এরকম একটি জোটভিত্তিক সরকার গঠনের প্রস্তাব রেখেছেন। ব্রিটিশ শাসনের সমাপ্তির পর থেকে শ্রীলঙ্কার ইতিহাস দেখলেই আমরা বুঝতে পারব যে শ্রীলঙ্কার সংসদীয় রাজনীতিতে যে সমস্ত দলগুলি বর্তমানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, তারা সকলেই কমবেশি নয়া-উদারনীতিবাদের প্রচারক— সেক্ষেত্রে যদি তাদের সবাইকে একত্রিত করে কোনও জোটবদ্ধ সরকার গঠনও হয় তাহলে বাস্তবে তা যে শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষের বদলে আন্তর্জাতিক নয়া-উদারনৈতিক সংস্থাগুলিরই স্বার্থ রক্ষা করবে, সেই নিয়ে বিশেষ সন্দেহ নেই।
তাহলে, চার মাস ধরে রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে এরকম অদম্য সাহস ও আপসহীন নাছোড়বান্দা মনোভবের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে শাসক রাজাপক্ষেদের পালাতে বাধ্য করার পরও কি শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষের সামনে কি স্পষ্ট কোনও মুক্তির পথ নেই?
এ কথা সত্যি যে শ্রীলঙ্কায় যে বৃহৎ গণআন্দোলন গড়ে উঠেছে, তা এক প্রবল সম্ভবনাময় পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। ঐতিহাসিক জর্জ রুদে ফরাসি বিপ্লব সম্পর্কে লিখতে গিয়ে প্যারিসের বিপ্লবী জনগণ বা ‘crowd’-এর ভূমিকাকে তুলে ধরেছিলেন। আজ শ্রীলঙ্কার চলমান গণআন্দোলনে যে সমস্ত সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন, তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে রুদের তত্ত্বে যে ‘crowd’-এর ব্যাখ্যা রয়েছে, তার সঙ্গে তুলনা না করা গেলেও, তাদের মধ্যে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে প্যারিসের জনগণের মতো বিপ্লবী পথে চালিত করার জন্য প্রয়োজনীয় অনেক উপদান রয়েছে। হয়তো, এই কথা বলা ভুল হবে না যে শ্রীলঙ্কার লড়াকু জনগণ হল আজকের দিনের এক প্রকার ‘potential revolutionary crowd’।
আজ ভারত মহাসাগরে অবস্থিত এই দ্বীপরাষ্ট্র যে গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে, তা অতিক্রম করে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে বৈদেশিক বাধা বাদ দিয়ে দেশের মধ্যেকার সব থেকে বড় সমস্যা হল যে শ্রীলঙ্কায় কোনও শক্তিশালী বিল্পবী বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি নেই যে চলমান এই গণআন্দোলনকে নেতৃত্ব দেবে। শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের দাবিতে যে লক্ষ লক্ষ আন্দোলনকারীরা শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর রাজপথ দখল নিয়ে রেখেছেন, তাদের সঠিক পথে চালিত করার জন্য না আছে কোনও সাংগঠনিক পরিকাঠামো, না আছে কোনও সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শ। তাই, শ্রীলঙ্কার জনগণ যদি তাদের দেশের এই অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে না উঠতে পারেন, তাহলে তারা কতদূর পর্যন্ত নয়া-উদারনীতিবাদ দ্বারা তৈরি হওয়া এই চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটের মোকাবিলা করতে পারবেন, তা নিয়েও মনে প্রশ্ন জাগে। এছাড়াও, ইতিহাসে আমরা বহুবার দেখেছি যে যখনই কোনও দেশে এই ধরনের গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটের আবির্ভাব ঘটে, তখনই সেই দেশের মধ্যে দক্ষিণপন্থী উগ্র জাতীয়তাবাদী বা ফ্যাসিবাদী শক্তির উত্থান ঘটে— বিপ্লবী বিকল্পের অভাব থেকে গণআন্দোলনের ওপর দাঁড়িয়ে জনগণের সমর্থন নিয়ে কোনও একজন স্বৈরশাসক ক্ষমতায় আসে। বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকালে শ্রীলঙ্কার ভবিষ্যতের ক্ষেত্রেও এই আশঙ্কা থেকে যায়। শ্রীলঙ্কায় সমস্ত সংসদীয় দলগুলিকে নিয়ে যে জোটভিত্তিক সরকার গঠনের প্রস্তাব উঠে এসেছে, সে ক্ষেত্রে মনে রাখা ভালো যে ডান থেকে বাম, ওই সমস্ত দলগুলি অতীতে কীভাবে মিলিতভাবে শ্রীলঙ্কায় তামিল সহ অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীগুলির ওপর সন্ত্রাস চালিয়েছে।
শ্রীলঙ্কার লড়াকু জনগণের প্রতি সংহতি ব্যক্ত করার পাশাপাশি তাদের আন্দোলনের থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা অবশ্যই নতুন সমাজ, যেখানে অসাম্য বা শোষণ কোনওটাই নেই, তা গড়ে তোলার নিজেদের স্বপ্নগুলিকে বাস্তবায়িত করতে আরও দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হব। কিন্তু, এখনই শ্রীলঙ্কার মানুষের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কোনও আবেগপূর্ণ সিদ্ধন্তে পৌঁছানো আমাদের সঠিক মূল্যায়নে না নিয়ে গিয়ে বাস্তব থেকে দূরে ঠেলে দেবে।