শ্যাম থাপা
কলকাতার ভেটারেন্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বদ্রু ব্যানার্জি সঙ্গে আলাপ গভীর হয় আমার। উনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন। একটা সময় ক্লাবের সংগঠকদের বলে দিয়েছিলেন— ‘আমার পরে যেন শ্যামকে প্রেসিডেন্ট করা হয়।’ সত্যি সত্যিই উনি পদ ছাড়ার পর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন ওঁরা। কিন্তু সময়ের অভাবে আমার আর সাড়া দেওয়া হয়নি। ভাবতেই ভালো লাগে, ওঁর মত বড় ফুটবলারের একই পদে আমাকে ভাবা হচ্ছে। বদ্রুদা নিজেও সেই কথাই বলে গেছিলেন। বড় ভাল মানুষ ছিলেন। দেখলেই হাসিমুখে কথা বলতেন। ফুটবল-অন্ত প্রাণ ছিলেন এবং সবচেয়ে বড় কথা মাটির মানুষ ছিলেন। খেলোয়াড়দের মধ্যে এই গুণটা খুব রেয়ার, যেটা বদ্রুদার ছিল। উনি অনেকটাই সিনিয়র ছিলেন আমাদের চেয়ে। খেলা দেখিনি। তবে, সান্নিধ্য পেয়েছি যেটুকু, সেটুকুই মনে থেকে যাবে।
মইদুল ইসলাম
ক্যালকাটা পুলিশের পাড়া ফুটবলের সংগঠক হিসেবে বদ্রুদার সঙ্গে আলাপ গভীর হয় আমার। আসলে বদ্রুদাকে ফুটবলার হিসেবে কোনওদিন সামনাসামনি দেখিনি। উনি যে সময় টপ ফর্মে, আমার সে সময় জন্ম। ফলে উনি অনেকটাই সিনিয়র আমার চেয়ে। ওইসময়ের ফুটবলারদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ মূলত সংগঠক হিসেবে। বহু সিনিয়র ফুটবলারকে আনতাম ক্যালকাটা পুলিশের খেলার সংগঠক হিসেবে। কখনও বদ্রুদাও সেই সংগঠনে সাহায্য করেছেন। অনেকসময় বাড়ি যেতেও বলতেন। কিন্তু কখনও আর সেই সুযোগ হল না। মনে পড়ছে, ওঁর ছেলে আত্মহত্যা করেছিলেন। সেই ঘটনায় প্রচণ্ড ভেঙে পড়েন বদ্রুদা। দেখতাম চুপচাপ হাঁটছেন মাঠের ভেতর। আসলে ওই সময়ের বাকিদেরকেও কাছ থেকে দেখেছি। প্রদীপদা, চুনীদা— কিন্তু তুলনায় বদ্রুদাকে অনেকটাই চুপচাপ মনে হত। এতটা প্রাণখোলা ছিলেন না। নিজের মধ্যেই থাকতেন অধিকাংশ সময়। তবু, পুত্রশোকের পর যেন আরও খানিকটা গুমরে গেছিলেন। নাতনিকে নিয়ে মাঠে খেলা দেখতে আসতেন। ফুটবল-প্রাণ মানুষ। ফুটবল দিয়েই ব্যক্তিগত কষ্ট ভুলতে চাইতেন। আরেকটা ব্যাপার মনে আছে, আমাকে বারবার বলতেন— ‘আমি কোনও পদ্মশ্রী পাব না? সবাই তো পেয়ে গেল!’ কী বলব আমি! সান্ত্বনা দিয়ে বলতাম, ‘অনেকেই তো পায়নি বদ্রুদা। অনেক ভাল শিল্পী সম্মান পান না। আবার অনেক তুলনায় কম দক্ষ শিল্পী সম্মান পান। ও তো আর আমার-আপনার হাতে নেই। দুঃখ করবেন না।’ তখন কী যেন ভেবে চুপ করে যেতেন। আবার কয়েকদিন পরে বলতেন— ‘আমি কিছু পাব না?’ এমনি টুকটাক স্মৃতি, খেদ মনে পড়ছে আজ। খারাপ লাগছে এক এক করে সেইসময়ের সবাই চলে যাচ্ছে। বদ্রুদাও একা হয়ে পড়ছিল। চুনীদা, প্রদীপদা, মান্নাদা, সব সিনিয়র প্লেয়ারেরা চলে গেলেন। সুভাষ ভৌমিক, সুরজিৎ তুলনায় অনেক কম বয়সে চলে গেল। আমরাই সামনে এগিয়ে আসছি এখন। এক এক করে এঁরা চলে যাচ্ছেন, আর আমাদের একা লাগছে। এঁদের মত মানুষ আর পাব না।