পাঁচটি কবিতা
আলো
এই এত বাতিস্তম্ভ, তবু ঘর-দুয়ার-পাড়া-বেপাড়া থেকে
কোথায় গেল সব আলো?
রেশনের কেরোসিন, সাপ্তাহিক কত শিখা দেয়?
ফরিস্তা জন্ম নিলে, কতদিন লাগে তার
আলো এসে পৌঁছতে? কতদূর সেই আলো যায়?
এই শহরের ফুটপাথ দিয়ে হাঁটছে যে ব্যর্থ কিশোর,
কিছু আলো তারও পায়ে দাও, বেথলেহেম—
এ যুগে আর কতদূর কলকাতা থেকে,
ও মাতা মেরি, তোমার ছেলের জেরুজালেম?
ঠিকানা
রং চাপালেই বিমূর্ততা পাবে;
তার আগে তাকিয়ে আছি তোমার খোলা হাতের ক্যানভাসে—
অলীক যা কিছু, সে সব আজ বাদ।
এই শহরে হারিয়ে গেলে,
গুগল্ নয়, পথ দেখিয়ে তোমার কাছে নিয়ে যাবে,
শুক্ল একাদশী চাঁদ।
লক্ষ্মীবাস্তুর আস্তানা
“ওহ্ বোকা, তুমি বোকা,
মুসলমানের স্পর্শদোষ মানো না!”
অথচ হাত সাইকেলেই, পা মাটিতে;
শুধু রাবেয়ার থেকে সরানো যাচ্ছে না চোখ—
মনে পড়ছে পীর সাহিবের কথা,
চোখের মায়া নষ্ট হলে,
মানুষ পাষাণ হয়ে যায় কেমন—
সে সব পাথর ভেঙে ভেঙে,
আমি গড়ে তুলছি আমাদের এই লক্ষ্মীবাস্তুর আস্তানা।
এ সব, রাবেয়া, তোমার-আমার হোক—
দ্যাখো, চেয়ে আছে মেঘের থেকে, কী কাতর বৃষ্টি বৃষ্টি,
পয়গম্বরের চোখ—
জানলার সহিত কথোপকথন
মায়ের কোনও গন্ধ ছিল না কখনও। শুধু ছাদের তারে
মেলে দেওয়া শাড়িতে সস্তা ডিটারজেন্টের গন্ধে মিশে যেত
রান্নাঘর, ঠাকুরঘর বা চানঘরের নারকোল তেলের গন্ধ।
মা একটা নদী। একটা গানের খাতার আলো।
আমাদের তো ভেসে চলা জীবন। তাই বাবার ঘরের রেডিওয়
বজ্র-বিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস শুনলে,
ফিসফিসিয়ে বলে গেছিল জানলা—
যে দিকে বাতাস, সেদিকেই সারা জীবন পাল তোলা ভাল…
ভৌতিক
ভয়ের গল্পে ভয় ছিল খুব। ভয় ছিল আচমকা মারেও।
যতবার মেরেছ,
তার চেয়ে বেশিবার মরে গেছ তুমি।
অথচ আমাদের ভূত
এখনও একে অন্যের থেকে জবাবদিহি চাইতে ছাড়ে না।