গুচ্ছ কবিতা
একঘরে
সবাই কেমন একঘরে
কয়েকটা পরিচিত মুহূর্তের
স্মৃতি দুহাতে আঁকড়ে
ঠোঁট রাখে ক্লান্ত পরিসরে
তারপর মাথা নীচু করে চলে যায়
এক ঘর থেকে অন্য ঘরে।
শিরিখোলা
সারারাত ঝরনায়
একটা সাপুড়ে বাঁশি
সঙ্গমকালীন ব্যস্ততায় পাথরে পাথর
আর অন্ধকারে শ্যাম রং ঢেলে
ডাকে
অসামান্য অন্ধকারে পড়ে থাকে সাঁকো
আর আমি তোমাকে দেখব বলে
দুচোখে আঁধার ঢেলে, দুহাত বাড়িয়ে বলি পান করো।
বাবা
সকালবেলায় বাবা
পেয়ালায় চা ঢেলে খায়,
জিভ দিয়ে টানার
সুরুত সুরুত শব্দ
মায়ের হাতের পাখার
হাওয়ায় মিশে যায়।
আমি জানালা দিয়ে
তার চলে যাওয়া দেখি।
সন্ধ্যাবেলা সারা গায়ে
জুটের ফেঁসোর গন্ধ মেখে
বাবা ফেরে।
রান্নাঘরের চৌকাঠে বসে চা খায়
কাপের তলানিটুকুর লোভে
আমরা তার চারপাশে ঘুরি।
সার্কাস
মীরাবাগানে জ্যোতিবাবুর বক্তৃতার
কথা বাবার কাছে অনেক শুনেছি
বাবা নেই, ফাঁকা মাঠটা পড়ে আছে।
এখন সেখানে মাঝে মাঝে
সার্কাসের তাঁবু পড়ে
গৌরীপুর মিলের কাঁটাবাবু
আমাদের পাড়ার বিভাসকাকা
ঘোড়াদের দানাপানি দেয়।
টেডি বিয়ার
দূরের বারান্দায় একটা টেডি বিয়ার
বৃষ্টিতে ভিজেছে কাল সারা রাত।
তার গায়ের সাদা লোম থেকে কালো
জল গড়িয়ে পড়ছে এখনও।
অনেকদিন ওই বারান্দায় পড়ে থেকে
অবহেলার ময়লা জমেছিল শরীরে
এতদিন কেউ খেয়াল করেনি।
ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে এখনও
ভাবছি এই ফাঁকে একবার ঘুরে আসি।
মেঘলা দিন
ময়লা চাদরটা এখনও ঝুলছে
বারান্দায়, রোদের অপেক্ষায় আছি
মেঘলা দিনে মনটা অপ্রস্তুত, ভাবছি
ময়লা, নাকি মেঘের ছায়া পড়েছে।
কানাই বৈরাগী লেন
বিকেলের কমে আসা আলো
কানাই বৈরাগী লেন
পার হয়ে দিনের খোলস ছাড়ে
নখদন্তহীন গলির ভিতর
জানালার গরাদ আঁকড়ে ধরে
পাগলি, বিকেলের রোদ।
সন্ধান
যোগাযোগ করুন ছাড়া
আর বাকি শব্দগুলো ঝরে গেছে
হোর্ডিংটার কপাল থেকে।
গাড়ির আওয়াজে শুধু
পড়ে আছে
চাপা পড়া শিশুর কান্না।
কান্না থামাতে
ওর হাতে একটা চকলেট দেব
নাকি ছবি তুলে
বন্ধুদের পোস্ট করে তলায় লিখব
সন্ধান চাই।
জমি
ফাঁকা জমিটা দেখে মনে হয়
ওপড়ানো দাঁতের গোড়া
ব্যর্থ সঙ্গম শেষে ঘিরে ধরা
অপরাধবোধ
ঈষৎ হতাশা মেশা
ওপড়ানো বটের শেকড়
ফাঁকা জমিটা দেখে মনে পড়ে
সদ্য ভাঙা বাড়িটার কথা।
মা
কালো চশমা পরা লোকটা সন্ধ্যাবেলা
আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে যায়
দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে তাকে দেখি।
মা জানলাগুলো বন্ধ করতে করতে প্রতিদিন
আমাদের নাম ধরে ডাকে ভুতো, পচা, শিবে…
আমরা মায়ের আঁচলের তলা থেকে
বুঝতে শিখি অন্ধকারের মানে।