ব্রতীন্দ্র ভট্টাচার্য
উপরোক্ত পরিচয়-অনুচ্ছেদটি কবির প্রিয়, এবং এভাবেই তিনি প্রথম বই ‘নিজস্ব বাতাস’-এ নিজের পরিচয় দিয়েছেন। পরিহাসপ্রিয় কবির নকল পরিচয় সরিয়ে রেখে জানাই – তিনি আই আই টি খড়গপুরে ধাতুবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক। এ-ছাড়াও – এ-কথা বলাই বাহুল্য – তিনি বাংলা সাহিত্যকে আপন জ্ঞানে নিয়মিত শ্রমদান করে থাকেন।
কিছুদিনের মধ্যেই সৃষ্টিসুখ প্রকাশন থেকে বেরোচ্ছে কবির দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ – ‘বেস্কিড পাহাড়ের ভার্জিন মেরি!’। এই উপলক্ষে চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের তরফে কবির সঙ্গে আলাপ করলেন ব্রতীন্দ্র ভট্টাচার্য। সঙ্গের কবির প্রতিকৃতি শিল্পী অতনু দেবের আঁকা।
নিরুপমদা, অনেকদিনের দু–তরফের অপেক্ষা আর আমার তরফের জাড্য কাটিয়ে ওঠা গেল। সৃষ্টিসুখ প্রকাশন থেকে খুব শীঘ্র প্রকাশিত হতে চলেছে আপনার দ্বিতীয় কবিতার বই – আপনার ভাষায় ‘কেতাব’ – ‘বেস্কিড পাহাড়ের ভার্জিন মেরি!’।
আমরা শুরু থেকেই শুরু করি নিরুপমদা। ‘শুরু থেকে’ মানে – কীভাবে কবিতা লেখা শুরু হল – তা নয়। এর মানে আমি জানতে চাইছি – কবে থেকে মনে হল এই কবিতা লেখা ব্যাপারটার একটা সিরিয়াস ফাজলামিবিবর্জিত অনুশীলন দরকার? আর কেনই বা?
সমস্ত ঘটনারই যেহেতু একটি প্রারম্ভ থাকে জাগতিক নিয়মে, হয়তো বা আমার কবিতা লেখারও একটা সূচনা আছে কোনওখানে, হয়তো বা লুকিয়ে আছে আখ্যান কিছুকিছু, নাইবা হল তা দস্যু রত্নাকরের রোমাঞ্চকর আখ্যান কিংবা ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’র মতো আজন্ম প্রেরণাদায়ক একটা উপলব্ধি। একটা গল্প বরং তবুও বলে ফেলি!
বাংলা ভাষা পড়তে পারি না, ভ্রূণস্তরের এমন কোনও স্মৃতি আমার নেই। এখনও আবছাভাবে মনে পড়ে, জীবনের প্রথম স্মৃতি, বছর তিন চার বয়স হবে বোধহয় তখন, পুরনো দিনের লাল রঙের মেঝেতে মা তাঁর অবর্ণনীয় সুন্দর হস্তাক্ষরে আমার জন্য বাংলা লিখছেন, আর মুখে মুখে উচ্চারণ করছেন: কিছুদিন বাদে দেখলাম লেখাগুলি আমি নিজেই দিব্যি পড়ে ফেলতে পারছি! সেই শুরু, ফর্মাল শিক্ষার বাইরে দাঁড়িয়ে ভাষাকে জানতে চাওয়া, জানা ছিল না একদিন তাতে কবিতার অনুপ্রবেশ ঘটবে!
ঈশ্বর তখনও ইন্টারনেট সৃষ্টি করেননি! অতএব আচ্ছন্নের মতো বই পড়ে যাওয়া। বাছবিচারের প্রশ্ন ওঠেনি, মোটামুটি অষ্টম শ্রেণীর মধ্যে স্বপনকুমার থেকে সুধীন দত্ত প্রায় প্রত্যেকেই পঠিত! ভালো ও খারাপ সাহিত্যের একটা ধারণা গড়ে উঠেছে স্বাভাবিক অনায়াসে, হাঁটতে শেখার মতো, জুতোর ফিতে বাঁধতে শেখার মতো ভাষাকে আত্মস্থ করেছি, কবিতা পড়েছি প্রচুর, কবিতা লিখিনি। হেয়ার স্কুলে তখন সাহিত্যের দেবদূতের মতো বিরাজ করছেন আমাদের শিক্ষক অসীম মুখোপাধ্যায়: প্রেসিডেন্সি কলেজে তিনি ইংরিজি পড়েছিলেন প্রবাদপ্রতিম অধ্যাপক তারকনাথ সেনের কাছে। তাঁর সম্পাদিত দেওয়াল পত্রিকা মনের ফসল–এ নিয়মিত গদ্য লিখছি: আমার সাহিত্যবোধ তাঁর হাতে ক্রমাগত নির্মমভাবে ভাঙছে আর আমার মননে গড়ে উঠছে তার পরিশীলিত, পরিমার্জিত রূপটি, যা আমি আজও ধারণ করে চলেছি। তার পরেই তো আসল গল্প! সে যুগে ছাত্রদের জন্য অজস্র সাহিত্য প্রতিযোগিতা হত, আর তাতে নিয়মিত পুরস্কার জিতে আসত আমার এক সহপাঠী। আমি তার দিগ্বিজয়ী রথযাত্রা সভয়ে ও সসম্ভ্রমে দেখতাম, এখনও দেখি নিরাপদ দূরত্বে, কেননা সে বিজয়রথ ইদানীং বাজারি পত্রিকার নিরানন্দ পুরস্কার স্তরে পৌঁছে গেছে! যাই হোক, সম্ভবত অষ্টম শ্রেণীতে, আমার এই সতীর্থ আমাকে জানায় যে একটা সুবিশাল কবিতা প্রতিযোগিতা হতে চলেছে ছাত্র এবং যুবকদের জন্য, তাতে সে অংশ নেবে, আর সেটা আমার জন্য নয়, কেননা আমার কবিতার ছন্দ বিষয়ে কোনও কিছু জানা নেই! এটা শুনে তাকে যা বলেছিলাম, আধুনিক বাংলাভাষায় তার অনুবাদ সম্ভবত চ্যালেঞ্জ নিবি না শালা, পাঙ্গা নিবি না শালা! সেই তখন, এবং আজও, পুরস্কার ইত্যাদিতে আমার বিপুল অনীহা ও অবিশ্বাস! কিন্তু স্রেফ আত্মমর্যাদা রক্ষার্থে একটি সুদীর্ঘ কবিতা লিখে ফেলি, আর সহসা আবিষ্কার করি যে প্রচলিত বাংলা ছন্দগুলিতে লিখতে আমাকে কর গুণতে হয় না! কবিতাটি পড়ে আমার সতীর্থ জানায় যে আমার কাব্যবোধ সম্পর্কে তার পর্যবেক্ষণে সম্ভবত গোড়ায় গলদ ছিল! ফলত আমরা সেই মহাকাব্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি, এবং আশ্চর্যজনকভাবে দুজনেই পুরস্কৃত হই! বলতে পারো সেখানেই শুরু, এটিই আমার কবিতা লেখার এবং আমার সম্মানফোবিয়ার বিপদজনক বিগ ব্যাং!
আপনার বন্ধুটি বাংলা কবিতার উপকারই করেছেন, এই কথা নির্দ্বিধায় বলব। তবে এক্ষেত্রে একটা কথা জানতে চাই। সুধীন্দ্রনাথ দত্তই কি আপনার প্রথম ‘আইডল’? অনেক সময়েই প্রথম দিকের কবিতাগুলো প্রিয়তম কবির কবিতার মতনই শোনায়। আপনার ক্ষেত্রে কী ঘটল? সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ছাড়া খাল কেটে দিলেন আর কোন কোন কবি?
উপকার করাটা বন্ধুত্বের লক্ষণ বটে, তবে মনে হয় কোনও না কোনওদিন, এই ঘটনাটা না ঘটলেও, কয়েক ছত্র কখনও না কখনও ঠিকই লিখে ফেলতাম! আমার প্রথম আইডল সুধীন্দ্রনাথ দত্ত হতে যাবেন কোন দুঃখে? প্রথম আইডল যদি কেউ থাকেন তবে তাঁর নাম কাশীরাম দাস! ছোটবেলায় কৃষ্ণনগরে ছুটিতে যেতাম ঠাকুমার সঙ্গে দ্যাখা করতে: একটা বিশাল বই থেকে তিনি কী সুন্দর সুর করে পড়তেন! সেই বিশাল বইটাকে বাগিয়ে ধরার সাহস এসে গেছে ততদিনে, জেনে গেছি:
“অনেক কঠোর তপে ব্যাস-মহামুনি।
রচিলা বিচিত্র গ্রন্থ ভারত-কাহিনী।।
শ্লোকচ্ছন্দে সংস্কৃত বিরচিলা ব্যাসে।
গীতিচ্ছন্দে কহি তাহা শুন অনায়াসে।।”
আর সুধীন্দ্রনাথ এসেছেন সবার পরে, তাঁর কবিতায় কির্মির–এর সঙ্গে মির্মির–এর মিল দেখে সেকালীন কথ্যভাষায় একেবারে ধাঁ হয়ে যাওয়ার আগে আমি তাঁর বয়স্যবৃন্দের প্রত্যেকের সঙ্গেই যথেষ্টর বেশি পরিচিত! জীবনানন্দকে খানিকটা দ্বিধাভরে আমি, গাণিতিক অর্থে, ওই একই সেট–এ রাখছি! (সু্ধীন্দ্রনাথ সম্পর্কে কিছু প্রচলিত গল্প অনুসারে তাঁকে জীবনানন্দের চিরসখা বলে ভাবতে একটু দ্বিধা হয় বই কী, কিন্তু কবিতার কথা পড়লে দেখবে যে ওখানে দত্ত মহাশয়ের হৈমন্তী কবিতাটার প্রথম তিনটে স্তবক জীবনানন্দ কবির নামটাম ছাড়াই উদ্ধৃত করে বসে আছেন! এটাকে আমি আপাতত গভীর সৌহার্দ্যের নিদর্শন হিসেবেই ধরে নিলাম!) তা যাই হোক, সুধীন্দ্রনাথ পড়েছিলাম কিন্তু বেশ যত্ন করে, ছন্দ শিখেছি, অজস্র শব্দ শিখেছি, তাঁর কবিতা থেকে, যথেষ্ট শ্রমভরে বারবার অভিধান ব্যবহার করে! কিন্তু তিনি আমার আইডল কোনওকালেই হয়ে ওঠেননি। আমার তো আবার ‘অপরাধ জগতের শব্দকোষ’-ও পড়া, তাই সুধীন্দ্রনাথের কবিতায় আমি ‘ল্যাচকি দিয়ে পোঁ, ল্যাট্রিন চোঁ’, মানে তোমাদের মতো বাবুদের ভাষায়, সামনের দরজা দিয়ে ঢুকে পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেছি! আর প্রথম কবিতাটা ঠিক কার মতো লিখেছিলাম কে জানে, বোধহয় বিচিত্রভাবে আমারই মতো করে, যদিও তার কিছু শব্দ ব্যবহার ছিল সুধীন্দ্রনাথ পাঠের তাৎক্ষণিক প্রতিফল! তুমি তো আবার ‘পোগোতিশীল’ লোক, তাই জানাচ্ছি, ততদিনে গোর্কির তিন খণ্ডের আত্মজীবনী মরমে গেড়ে বসে গেছে, মায়াকভস্কি, সুকান্ত ভট্টাচার্য বেমালুম হজম, ভালোই জানি ‘অন্যায়ের মুখোমুখি লেনিন জানায় প্রতিবাদ’, কিংবা ‘আই গো টু লেনিন, টু ক্লিন অফ মাইন, টু সেল অন উইথ দ্য রেভলিউশান’, কিন্তু ভ্লাদিমির ইলিচকে নিয়ে আমার সেই প্রথম কবিতায় আমি একটা অনিকেত বিচ্ছিন্ন মানুষ, রাতের কলকাতায় হেঁটে বেড়িয়েছিলাম, যেখানে:
সাঁইত্রিশ নম্বর বাস অন্ধকারে জ্যোতিষ্কের মতো,
লেনিনীয় প্রজ্ঞা আজ মুছে দেবে রাতের রুক্ষতা!
ওই হারিয়ে যাওয়া সুবিশাল প্রথম রচনাটার ছিন্নভিন্ন কিছু অংশ এখনও মাঝে মাঝে মনে পড়ে!
‘নিজস্ব বাতাস বয়ে যায়!’ – আপনার প্রথম কবিতার বই আমাদের হাতে যেন একেবারে হুট করে এসে পড়ল। আমাদের কিছুটা অপ্রস্তুত করে দিয়েই। অপ্রস্তুত – কারণ এই কাব্যভাষার জন্য আমি অন্তত পাঠক হিসেবে খুব একটা তৈরী ছিলাম না। এই ভাষার প্রশ্নে পরে আসছি। যাইহোক, এসেই সেই বই অ্যামাজনের বাংলা বই বিভাগে কিছুদিন বেস্টসেলার হয়েও রইল। তারপর ফিনিশ ভাষায় অনুবাদও হল সেই বইয়ের। এটাকে আমি সাফল্যই বলব। তা, আমার প্রশ্ন হল – দীর্ঘদিন কবিতাশ্রমের পর, মানে এত দীর্ঘ অজ্ঞাতবাসের পর হঠাত সেটা ভেঙে ফেলার প্রয়োজন মনে করলেন কেন? করলেন যে, সেটা খুশির কথা। কিন্তু প্রথম বই প্রকাশে এত বিলম্বের কোনও কারণ আছে কি? বিশেষত যেকালে আমরা দেখছি অনেক কবি – কবি হিসেবে তাঁদের যথেষ্ট নামডাকও হয়েছে, কবিতা যেমনই তাঁরা লিখুন না কেন – প্রায় প্রতি বইমেলাতেই একটি করে বই নিয়ে পাঠকের কাছে আসতে চাইছেন।
নিজস্ব বাতাস প্রকাশে কিন্তু বিলম্ব হয়নি! বইয়ের একমাত্র সুদীর্ঘ লোরকা অনুবাদটি ছাড়া প্রতিটি কবিতাই বইটির প্রকাশকালের বছর তিনেকের মধ্যে লেখা। হ্যাঁ, ১৯৭৭ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়বার পরে অগুনতি বছরের একটা অজ্ঞাতবাস আছে বইকি, যখন আমি সজ্ঞানে কবিতার একটি পঙক্তিও রচনা করিনি, প্রায় বাংলা অক্ষর পরিচয় লুপ্ত হওয়ার স্তরে পৌঁছে বলতে পারো ছদ্মবেশে বিচরণ করেছি এমন সান্নিধ্যে, যাঁদের সারা জীবনে একটিও কবিতার নির্জনস্বাক্ষর স্পর্শ করে নেই। এটা আমার সচেতন সিদ্ধান্ত, কবিতার প্রতি বিশ্বস্ত থাকার সিদ্ধান্ত। ১৯৭৭ সালে কবিতা নিয়ে মেতে থাকলে কবিতার বড়দাবৃন্দের সর্বাঙ্গে তৈল মর্দন ছাড়া গত্যন্তর ছিল না! লোকাল ট্রেন থেকে, বাস থেকে নেমে ঘর্মাক্ত উঠতি কবিরা কাচ্চি ঘানির তেলের শিশি হাতে তখন দৌড়েছেন দাদা নিবাসের দিকে। ফলও পেয়েছেন হাতে হাতে, কবিতার এক একটি দিকপালের শিষ্যরা আজ কবিতার দিগন্ত আলো করছেন, আকাশে আজ অজস্র আটটা ন’টার সূর্য (আমার আরেক সহপাঠীর লেখা মহাভারতসম বিপুল কলেবর উপন্যাসটির নাম ব্যবহার নিতান্তই কাকতালীয়, তার সেই পৃথুল কেতাবে বীরগতিপ্রাপ্ত একটি চরিত্রকে আমার পিতৃদত্ত নামে নামাঙ্কিত করার ঘটনাটি যেমন!)। হয়তো বিকল্প ছিল বলেই এই প্রক্রিয়াটি অবলম্বন করা আমার রুচিতে বেধেছে। তবু কোথাও তো দাঁড়িয়ে থাকবে একটা বিচ্ছিন্ন মানুষ, তাই থেকেছি, কবিতা থেকে সহস্র যোজন দূরত্বে; জানোই তো নিজস্ব বাতাসে লিখেছি:
আমি
দাঁড়িয়ে থেকেছি তবু দূরে।
অন্যকোনো প্রতিশ্রুতি পেতে
অন্যকোনো সম্মোহনে মেতে
নিজেকে ঈশ্বর ভেবে নিতে
পারিনি তো!
সৃষ্টিসুখ, ২০১৪, প্রচ্ছদ : রোহণ কুদ্দুস
ফিরে এলাম কেন? এই অজস্র বছরের অজ্ঞাতবাসে কবিতারা ভেতরে ভেতরে গড়ে উঠছিল বলে, গুমরে মরছিল বলে, একদিন প্রায় প্রবল বিস্ফোরণের মতো নিজস্ব বাতাসের প্রথম কবিতাটি সৃষ্টি করতে বাধ্য হলাম বলে! এ সেই হ্যারি পটারের গল্পের মতো, নিরুদ্দিষ্ট উইজার্ড গ্যানডাল্ফ দি হোয়াইটের অভিজ্ঞতার আগুনে পুড়ে আরও স্থিতধী গ্যানডাল্ফ দি গ্রে হোয়ে ফিরে আসার মতন যেন! ইতিমধ্যে যুগ পালটেছে, আন্তর্জাল বাংলা ভাষাকেও প্লাবিত করছে, তবে ‘ভিতরে বাইরে আলো বেড়ে গেছে’ কিনা সে ব্যাপারে এখনও নিঃসংশয় নই!
যুগ পাল্টেছে কিন্তু সাংঘাতিক, অভ্র চালনার পারদর্শিতা আজকাল কবিত্বশক্তির অভ্রান্ত দ্যোতক! আমি প্রবল সম্ভ্রমে দেখি যন্ত্রায়ত কবিতা উৎপাদকেরা কীভাবে দিবারাত্র কবিতা ও কবিতাগ্রন্থ উগরে দিচ্ছেন, আর কবিদের খানসামাদের সেইসব অনবদ্য ধারাপাতে বিবৃত নামতাগুলির তারস্বর পাঠে আমার জন্মভূমির কাব্যাকাশ মুখরিত হয়ে উঠছে: ‘সিন্ধুশব্দ বায়ুশব্দ রৌদ্রশব্দ রক্তশব্দ মৃত্যুশব্দ এসে ভয়াবহ ডাইনীর মতো নাচে–ভয় পাই—গুহায় লুকাই’! জীবনানন্দ বলেছিলেন, আমিও বলি!
আমার একেকটি কবিতা জারিত হতে দীর্ঘ সময় নেয়। সব ক্ষেত্রে নয় যদিও, তবু ভেবে দ্যাখো বেস্কিডে ১৯৭৭ সালের নিউ মেক্সিকোর কবিতাটি আমি ২০১৬ সালে লিখেছি! কবিতার অতিপ্রসব আমার সাধ্যাতীত ও বেজায় অপছন্দের। প্রতিটি কবিতার জন্ম আমাকে বিধ্বস্ত করে যায়, কখনও কখনও কবিতাটির ভগ্ন পঙক্তিগুলি দিনের পর দিন মাথায় ঘুরতে থেকে পরিশেষে কবিতা হয়ে ওঠে! কোনওরকম অটোম্যাটিক রাইটিং নয়, এইসব অনুভূতিগুলির সূত্র ধরে প্রতিটি কবিতা আমি সজ্ঞানে এবং সযত্নে নির্মাণ করি। বড় মানসিক পরিশ্রমসাপেক্ষ সেই কাজ! ইদানীং ওই বিরামবিহীন কবিতাযন্ত্রগুলিকে দ্যাখা সত্ত্বেও মনে হয় কিছু কিছু অড ম্যান আউট হয়তো তবুও থেকে যাবে। বেস্কিডের একটি কবিতার ভাষায়:
সবাই উড়েছে বসন্ত রাতে
কী যে উল্লাস শ্বাপদের দাঁতে
বিক্ষত একা ডানাহীন কেউ
নীরবে কেঁদেছে।।
পড়ন্ত কালবেলায় এই ভাবনাটুকুই শান্তিকল্যাণ!
আসি ‘নিজস্ব বাতাস’-এর কাব্যভাষায়। আমি আমার সীমিত সামর্থ্য নিয়ে এই বইয়ের একটা আলোচনা করেছিলাম। বহিরঙ্গে কবি যেমন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন – কখনও নিউ মেক্সিকো, কখনও ফিনল্যান্ড, আবার কখনও দক্ষিণ কোরিয়া – অন্তরঙ্গে আবার এক ভাষার থেকে যেন আরেক ভাষার দিকে তাঁর গতি। ক্যালকুলাসের প্রথম পাঠের লিমিট–এর অঙ্কের মতন। শূন্য বা অসীমের দিকে অজ্ঞাত সংখ্যাটির গতি, কিন্তু কখনওই তা শূন্য বা অসীমে পৌঁছয় না। আমি এরকমও লিখে ফেলেছিলাম – কবি মাঝে মাঝে সচেতন হয়ে সমসাময়িক হয়ে উঠতে চেয়েছেন বটে, তবু এই ভাষার সুর অতীতের কথাই মনে করায় বেশি। প্রথম কথা, আপনি কি এ–বিষয়ে আমার সঙ্গে একমত? দ্বিতীয় কথা, এই ভাষানির্মাণ কি আপনার সচেতন চেষ্টার ফল? না কি যে সময়ে আপনার সিরিয়াস কবিতাচর্চার শুরু, সেই সময়ের ভাষাকেই আপনার কবিতায় আপনি ধরে রাখতে চাইলেন, এবং কখনও নিজের অজান্তেই হয়তো ভাষার টাইম ট্র্যাভেলও ঘটে গেল?
বাজারি কবি সাহিত্যিক ও তাদের নির্বিকল্প স্তাবকদের নিরন্তর ধর্ষণে বাংলা ভাষার রক্তাল্প রূপটি আমাকে বিষণ্ণ করে। এ ভাষাকে দুখিনী বর্ণমালা ইত্যাদি ভাবতে আমার আত্মমর্যাদায় বাধে। আর পাতি বুর্জোয়াদের মাটির ভাষায় কথা বলার হিপোক্রাসি আমার কাছে বিবমিষাজনক। আমার কবিতায় আমি প্রয়াস পাই ভাষার এক রাজকীয় পুনর্নির্মাণের, চলিত ভাষায় অবশ্যই লিখি, কমলকুমার মজুমদারের মতো বিধ্বংসী পুনর্নির্মাণের দিকে যাই না, কিন্তু প্রয়োজনবোধে অকাতরে ভাষার প্রমিত রূপটি ব্যবহার করি, তাতে নিয়ন্ত্রিত গুরুচণ্ডালী এবং অতীব সচেতনভাবে বিদেশী শব্দের আবাহন করি। আমি কী করতে চলেছি তা আমার কাছে অত্যন্ত স্পষ্ট, কী করতে পারি তা আমি অত্যন্ত পরিপাটিভাবে জানি। আমার তরফ থেকে এটি কোনও বিশেষ কালে আবদ্ধ থাকার প্রচেষ্টা নয়। বরং বলা যেতে পারে এই লিখনভঙ্গি বর্তমানের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে আমার জীবন্মৃত মাতৃভাষায় প্রবল দায়বদ্ধতার সঙ্গে স্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন ফিরিয়ে আনার একটি সামান্য প্রচেষ্টা মাত্র।
আর আমার কবিতার বিশ্বজনীন পটভূমিকার প্রসঙ্গে নিজস্ব বাতাসের প্রারম্ভে তো জানিয়েই রেখেছি: চলার পথে কবিতা ছড়িয়ে ছিল যত্রতত্র, হে পাঠক আমি কুড়িয়ে নিয়েছি তোমার চরণে দিয়েছি! বেস্কিডের শেষ বিভাগটির সম্পর্কেও তা সমভাবে প্রযোজ্য।
‘নিজস্ব বাতাস’-এর কাব্যভাষা নিয়ে আলোচনা করলাম, কারণ আমার মনে হয়েছে এই ভাষারূপ আপনার নতুন বই ‘বেস্কিড’-এ আরও একটা নির্দিষ্ট চেহারার দিকে গেছে। ‘বেস্কিড’-এর কবিতাগুলো বিষয়ে তো বটেই, প্রকাশভঙ্গিতেও ‘নিজস্ব বাতাস’-এর থেকে অনেক আলাদা। এটা আমার প্রতীতি। এ–বিষয়ে কিছু বলবেন?
ভাষা ও কবিতার পারস্পরিক সম্পর্কটিকে সিম্বায়োটিক বলে মেনে নিলেও একথাটা অত্যন্ত স্পষ্ট হওয়া দরকার যে কবিতার প্রয়োজনে ভাষা আসে, ভাষার প্রয়োজনে কবিতার সৃষ্টি না করাই বিধেয়। নিজস্ব বাতাস আর বেস্কিডের পর্বভাগগুলিকে যদি মিলিয়ে দ্যাখো, বুঝবে আঙ্গিকগত দিক থেকে অনেকক্ষেত্রেই তারা সমমেলে বাজে, সেক্ষেত্রে বোধহয় বৈপ্লবিক ভাষা পরিবর্তনের সুযোগ খুব একটা নেই বলাটাই ভালো। তবে লিখতে বসে আমার প্রাথমিক দুশ্চিন্তা থাকে পুনরাবৃত্তি না করার, কোনওরকম ‘নিজস্ব মুদ্রাদোষে’ আবদ্ধ না থাকার, এবং সেইজন্যই আমার কবিতা থেকে কবিতায় ভাষার, জীববিদ্যার পরিসরের মতোই, যৎসামান্য পরিবর্তন বা ক্রিপ মিউটেশান ঘটে এবং আমাকে কবিতা লিখতে হয় এযাবৎ আনচার্টেড টেরিটরিতে: বেস্কিডের ডিটেকটিভ কবিতা, বেকুব, লীলাবতী ইত্যাদি যার উদাহরণ, সেক্ষেত্রে, এইসব নব্য আঙ্গিকে, প্রকাশভঙ্গি, বিবর্তিত হয় অনেক বেশি। আমি মনে করি একজন কবিকে তাঁর লিখিত ভাষার সমগ্র রূপটির হলাহল পানে নীলকণ্ঠ হতে হয়: ভাষাকে তিনি আক্রমণ করেন না, বাঁচান!
নিজস্ব বাতাসে যেমন জীবনানন্দের নিঃশব্দ পদচারণা ছিল, তার কিছু রেশ বেস্কিড–এও পেয়ে গেলাম। যদিও আপনি রবীন্দ্রনাথকে বইয়ের একটা অংশই ধরে দিয়েছেন, জীবনানন্দ আপনার কবিতায় আনাচে কানাচে প্রবলভাবে বিরাজমান। এর কারণ কি জীবনানন্দীয় উপমার প্রতি শ্রদ্ধাজনিত সমর্পণ?
কেন জানি না শুধু তুমি নও অজস্র পাঠক আমাকে এই ধরনের কথা বলেছেন। যেমন ধরো, কেতকী কুশারী ডাইসন, যিনি আমার প্রায় প্রতিটি কবিতা স্নেহবশত পড়েন, আমার কবিতায় সাধু ক্রিয়াপদের ব্যবহারগুলিকে জীবনানন্দীয় মুদ্রাদোষ বলে ভাবেন, এটা যে তা নয়, তা তাঁকে বোঝাতে আমার ঘাম ছুটে গেছে! জীবনানন্দকে আমি জাগতিক কবিতার ইতিহাসে এক সিঙ্গুলারিটি হিসেবে জানি, কথাটা গাণিতিক অর্থেও নিতে পারো ইচ্ছে হলে। একটি নক্ষত্র আসে, ওই মাত্র একবারই, এই পৃথিবী মাত্র একবারই তাঁকে পায়! কবিতার মহার্ঘতম আসনে তিনি অধিষ্ঠিত, তিনি আমার আপনতম কবি এটা মেনে নিয়েও বলব, তাঁর সঙ্গে আমার যদি কোনও মিল দেখে থাকো তা বহিরঙ্গে। সারাজীবনের জীবনানন্দ পাঠ আমাকে শিখিয়েছে, একমাত্র জীবনানন্দ দাশ ছাড়া আর কেউ জীবনানন্দ দাশ হয়ে উঠতে পারে না! সে প্রচেষ্টা থেকে আমি সচেতনভাবে বিরত থাকি। তবে যা ভেবেছ, ঠিক তাই, তিনি আমাকে ভালোবাসেন খুব! এই তো সেদিন স্বপ্নে বললেন: পরের বছর তুই জন্মাবি জানলে কী আমি আর ওইদিন ডাব হাতে করে ট্রাম লাইনের ওপর হাঁটতে যেতাম! তা যাই বলো, ওনার সঙ্গে দ্যাখা হওয়াটা আমার বড্ড অল্পের জন্য মিস হয়ে গেছে! অনেকবছর আগে একটা কবিতা লিখব ভেবেছিলাম তাঁকে নিয়ে (এটা একদম সত্যি বলছি!) যাতে ঠিক ছিল তিনি ব্রাসিলের সুগারলোফ পাহাড়ে আইসক্রিম বিক্রি করবেন! সেটা আর লেখা হয়নি, কিন্তু মনে মনে ওই ম্যাজিক মাউন্টেনটিকে আমি তাঁরই নামে উৎসর্গ করে এসেছি!
এখানে আমার অবস্থানটা আরেকটু স্পষ্ট করতে হচ্ছে। সাধু ক্রিয়াপদের ব্যবহারের কথা আমি বলছি না। আমি বরং বলতে চাইছি, উপমার ব্যবহারে আপনি জীবনানন্দীয় রীতির অনুসারী। রীতি বলাটাও মনে হয় ঠিক হচ্ছে না। এভাবে বলা যেতে পারে – আপনার দেখার চোখ জীবনানন্দ যতটা গড়ে দিয়েছেন ততটা আর কেউ গড়েননি। ‘কবিতার আকাশেতে আজকাল কয়েকটা ফড়িং’, ‘রূপসী ট্রামের সারি ভেসে যায় সারসের মতো’, ‘পড়ন্ত দিনের শেষে একখানি নিরুৎসুক ট্রেন’, ‘শবদেহ খুঁটে খেতে উড়ে এলে বিদগ্ধ শকুন’ – এমন লাইনে লাইনে ভাস্বর হয়ে আছেন জীবনানন্দ। সুতরাং, আমার মনে–হওয়াটা কবিতার গঠনের থেকে আসেনি, কবিতার আত্মা বা কবির সৌন্দর্যের বোধের দিক থেকে মনে হয়েছে।
বাংলা কবিতায় ইদানীং কিছু স্বয়ম্ভূ কবির আবির্ভাব হয়েছে টের পাই, যাঁদের প্রত্যেকের থেকেই বাংলা কবিতার শুরু! আমি সেই প্রবল শক্তিধরদের কেউ নই, আমাকে আমার পূর্বসূরিদের উত্তরাধিকার বহন করতে হয়, আর সেখানে জীবনানন্দ দাশ অতি অবশ্যই বিরাজ করেন। তবে তুমি যে সাযুজ্যের কথা বলেছ, সেটা বোধহয় চিন্তাপ্রণালীর সাযুজ্য, আমি গড়ে উঠেছি ওইভাবে, এটা আদৌ আরোপিত ব্যাপার নয়, তোমার ওই সঙ্গীত জগতের লতাকণ্ঠী আশাকণ্ঠীদের মতো নয় এই আপাতসাদৃশ্য। তোমার প্রশ্নের শেষে তুমি বোধহয় সেই কথাটাই বলতে চেয়েছ। তবে এই শতাব্দীর ভারতবর্ষে বাস করে এক অর্থে আমি বিপুল সুবিধাভোগী, যা জীবনানন্দের জীবদ্দশায় সম্ভব ছিল না। তিনি যখন লেখেন ‘মালয় সমুদ্র পারে সে এক বন্দর আছে শ্বেতাঙ্গিনীদের’, স্বচ্ছন্দে ভেবে নিতে পারো সে বন্দর তাঁর কপোলকল্পিত, আমার ক্ষেত্রে আমি কিন্তু সত্যিই হেলসিঙ্কি শহরের মাইনাস পঁচিশ ডিগ্রি শীতে শহরের ডাকসাইটে রূপসী ট্রামগুলিকে দিগন্তের দিকে চলে যেতে দেখেছি! তবে বিদগ্ধ শকুনদের আমার থেকে ঢের ভালো চিনতেন জীবনানন্দ। ওই সেই তারা গো: যাদের ‘দাঁত নেই’, অথচ ‘চোখে অক্ষম পিঁচুটি’ নিয়ে ‘পাণ্ডুলিপি, ভাষ্য, টীকা, কালি আর কলমের’ গাদায় ‘সিংহাসনে’ বসে থাকা লোকগুলো! তবে সপ্তম পে কমিশনের কল্যাণে আমাদের ‘বেতন’ আজকাল কিন্তু মাসে হাজার টাকার থেকে ঢের বেশি!
হঠাত, অ্যাদ্দিন পর রবীন্দ্রনাথ কেন?
উত্তরটা একটা গল্প দিয়ে শুরু করি। আমার কবিতার ফিনিশ ভাষার অনুবাদিকা, শ্রীযুক্তা হান্নেলে পোহান্মিস ওই ভাষায় রবীন্দ্রনাথ ও বুদ্ধদেব বসুর অনুবাদিকা। হেলসিঙ্কির কাছে এসপো শহরে তাঁর বাসভবনের বৈঠকখানায় রবীন্দ্রনাথের একটি দেওয়াল জোড়া সুবিশাল প্রতিকৃতি টাঙানো আছে। তাঁকে প্রশ্ন করেছিলাম এই ছবিটি আপনি কেন রেখেছেন? এনার কবিতা অনুবাদ করেন বলে? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, না, প্রতিটি মানুষের জীবনেই তো কখনও না কখনও কোনও দুঃসময় আসে, আমারও এসেছিল; আর সেইসব অন্ধকার মুহূর্তে এই মানুষটি ছাড়া অন্য কেউ আমার পাশে ছিল না! এই গল্পটি শুনে বাঙালি একজন আমাকে বলেছিলেন, উনি বোধহয় প্রথম এবং একমাত্র মানুষ নন যার এরকম মনে হয়েছে!
প্রচ্ছদ : আলেকজান্দার পোপোভ, ২০১৬
এই যে আজও শতাব্দীর অন্তরাল পেরিয়ে অজস্র আকাশে লিপ্ত হয়ে থাকেন রবীন্দ্র ঠাকুর, সেই প্রবল সমস্যাটিকে ঘিরেই আদতে অ্যাদ্দিন পরেও হঠাত রবীন্দ্রনাথ!
আমার কবিতা ভাবনার শুরু ‘উত্তর রৈবিক’ বাংলা কবিতা থেকে, আমার কবিতা জন্মের প্রারম্ভ থেকে তাঁকে আমি অস্বীকার করতে চেয়েছি, কিন্তু শুধু বিঘে দুই অতিক্রম করতে চাইলে যে সমগ্র অন্তরাত্মা প্লাবিত করে ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার বেজে ওঠে! জড়ায়ে আছে বাধা, ছাড়ায়ে যেতে চাই, ছাড়াতে গেলে ব্যথা বাজে; মুক্তি চাহিবারে তোমার কাছে যাই, চাহিতে গেলে মরি লাজে! এই তীব্র দোটানায় কিছু উদ্বেল মুহূর্তে বেস্কিডের রাবীন্দ্রিক পর্বের কবিতাগুচ্ছের জন্ম। লিখতে চাইছিলাম, প্রাথমিকভাবে তাঁকে নিয়ে নয়, কিন্তু ওই মুহূর্তে দেখলাম তিনি নিজেই তাঁর সঙ্গীতের মতো বেজে উঠছেন! এই কবিতাগুলি আঙ্গিক এবং বক্তব্যে বেস্কিডের অন্য সমস্ত কবিতার থেকে আলাদা। তাদেরকে আমি স্বতন্ত্র রেখেছি।
নিজস্ব বাতাসেও দেখেছি, বেস্কিডেও দেখলাম — প্রকৃতি বা নিসর্গ আপনাকে অভিভূত করে। অনেককেই করে হয়তো, কিন্তু তাঁদের মধ্যে আপনি সেইসব ছবির ভিতর দাঁড়িয়ে কবিতাগুলো লিখেছেন তাই প্রশ্নটা আপনাকেই করছি। আপনার কি মনে হয় না নিসর্গের বর্ণনা কবিতাকে খুব ব্যক্তিগত করে তোলে? তাও দীঘা, পুরী, দার্জিলিং হলে কথা ছিল। লাপ্পেনরানতা, বেস্কিড, পারাচী – যাওয়া তো দূর আপনার অধিকাংশ পাঠক তো এই জায়গাগুলোর নাম পর্যন্ত শোনেনি। এ–বিষয়ে আপনার আগের বইয়ের ক্ষেত্রে পাঠকের কেমন প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন?
এসব জায়গাগুলোতে অনেকে যেমন যাননি, এসব কবিতাও তো তাঁরা আগে পড়েননি! আমি অসীম সৌভাগ্যবান যে পৃথিবীর বহুপ্রান্তে প্রকৃতির কর্বুরিত সৌন্দর্যের কাছে নতজানু হতে পেরেছি, তার মধ্যে কবিতাটুকুকে শনাক্ত করতে পেরেছি আর তার নির্যাস পৌঁছে দিতে পেরেছি আমার পাঠকের কাছে। কবিতার মেটা–জগত বাস্তবের অভিক্ষেপে নির্মিত হয়, আমার কবিতার পারাচী কিংবা লাপ্পেনরানতা, কবিতার জাদুকরী মেটা–জগতে ওই শহরগুলির অভিক্ষেপমাত্র, এই ভ্রমণকবিতাবলী ঠিক ভ্রমণকাহিনী নয়! আমার কবিতার পাঠক হয়তো হাতে গোণা যায়, কিন্তু যারা পড়েন তাঁদের রোচিষ্ণু কবিতাবোধ আমাকে আপ্লুত করে। সবকিছু বেদে নেই, কবিতায় কূপমাণ্ডুক্য নেই, বীক্ষণের মায়োপিয়া না সারিয়ে কবিতা না পড়াই ভালো। আমার পাঠকেরা, সংখ্যায় যত নগণ্যই হোন না তাঁরা, সানন্দে গ্রহণ করেছেন এইসব কবিতা: ‘নয়ন মেলে দেখি আমায় বাঁধন বেঁধেছে’! আমার আর অন্য কোনও কিছু চাইবার নেই!
বেস্কিড–এর আয়না, পুরাতনী আর লীলাবতী আমার সবথেকে পছন্দের কয়েকটা কবিতা। লীলাবতী একটা আশ্চর্য কবিতা! আমার আগের প্রশ্নে আমি কবিতার ব্যক্তিগত হয়ে যাবার ভয় নিয়ে কথা বলছিলাম। লীলাবতীর ক্ষেত্রে – আমার মনে পড়ছে – ওঁর নাম জানতাম না। কিন্তু সেটা না জেনেও কবিতাটা পড়ে আমি স্তব্ধ হয়েছি। নাম জেনে, তাঁর কাহিনী জেনে যখন পড়েছি, তাতে খুব নতুন কিছু বিস্ময় যোগ হয়নি। ঐতিহাসিক চরিত্রটিকে ক্রমশ সরিয়ে দিয়ে তার চারধারের বল্মীকের স্তূপ অমোঘ হয়ে উঠেছে। এখানেই কবিতাটা চূড়ান্তভাবে সার্থক হয়ে উঠেছে আমার কাছে।
লীলাবতী আমার প্রথম ও আজ পর্যন্ত শেষ, নারীবাদী কবিতা! গণিতজ্ঞ লীলাবতীর যে প্রচলিত আখ্যানটিকে আমি অবলম্বন করেছি তার চুলচেরা সত্যতার বিচার এখানে অপ্রাসঙ্গিক। লীলাবতী প্রাচীন ভারতীয় গণিতবিদ দ্বিতীয় ভাস্করের কন্যা, পিতার জ্যোতিষগণনায় নক্ষত্রদোষে অভিশপ্তা। পিতার প্রতিটি জটিল গাণিতিকসুত্র লীলাবতীকে সরাসরি সম্বোধন করে, তাঁর গাণিতিক মেধা প্রায় স্বতঃসিদ্ধের মতো হলেও, পিতৃতান্ত্রিক সমাজের নিয়মতন্ত্রের বল্মীকে তা আচ্ছন্ন হয়ে যায়, আমরা লীলাবতীকে জানতে পারি না তাঁর কণ্ঠস্বর শুনতে পাই না। এই কবিতা লীলাবতীকে মুক্ত করতে চেয়েছে, তাঁর জন্য একটি নিজস্ব নক্ষত্র নির্মাণ করতে চেয়েছে!
সৃষ্টিসুখ, প্রকাশ আসন্ন, প্রচ্ছদ : অতনু দেব
একটা কবিতাকে পাঠক অজস্রভাবে পড়তে বা বুঝতে পারেন, আর ওই প্রতিটি পড়া বা বোঝা অন্যগুলির সঙ্গে সমমানের হতেই পারে। আমরা যারা গণিতের এবং প্রযুক্তিবিদ্যার কিছু বিশেষ তত্ত্বের সঙ্গে পরিচিত, তারা এই পর্যবেক্ষণে অবাক হই না। আর সম্প্রতি কবিতার ক্ষেত্রে সৈয়দ শামসুল হক–এর একটি কবিতা প্রসঙ্গে তার বিভিন্ন বিকল্প পাঠ নির্মাণ করে, এটাই আমি প্রতিপন্ন করতে চেয়েছি, যা পরবাস পত্রিকার ৬৫তম সংখ্যা খুলে অনায়াসে দেখে নিতে পারো। কিন্তু গাণিতিক সূত্র আমাদের এও বলে, যে কিছু কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে এই বিকল্পগুলির স্বাতন্ত্র্য ঘুচে গিয়ে একটি নির্বিকল্প সমাধানের জন্ম দ্যায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই কবিতাটিকে সেই গোত্রে ফেলব। এ কবিতা এক বিশেষ লীলাবতীকে নিয়ে রচিত, সেই লীলাবতীকে একদম না মাথায় রেখে এই কবিতাটি পড়তে যাওয়াটা, কবিতার গণতন্ত্রে, তোমার মতো বিচক্ষণ পাঠকের পক্ষে ওই যাকে বলে একটা ‘ঐতিহাসিক ভুল’ হয়ে দাঁড়াত!
তেমনি আয়না–তে হঠাত –
(আহা আজ তার বেদনাবাহিত বায়ু
আহা প্রেমহীন অনন্ত পরমায়ু
ভেসে আছে শুধু হিংস্র অন্ধকারে!)
পড়ে আমি চমকিত হয়েছি। দ্বিতীয় পাঠের সময় মনে হয়েছে বিদূষীদের মিকেলাঞ্জেলোকে নিয়ে আলোচনার কথা – প্রুফ্রকে। পুরাতনী–র শেষ লাইনে এসে দংশিত হয়েছি।
বিভিন্ন প্রসঙ্গে এর আগে একাধিকবার বলেছি যে আমার কবিতা পরিপূর্ণ উৎসাহে আলো ও অন্ধকার উভয়েরই চিত্রায়ন করে। কবিতার কাজ রসসৃষ্টি, তার কাছে আমার সমস্ত প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে যায় এই প্রত্যাশাটি। আমার অনেক অনেক আগে অত্যুচ্চ মহান স্রষ্টারা, ছবিতে গোইয়া যেমন, কবিতায় ব্যোদলেয়ার বা জীবনানন্দ দাশ, অমঙ্গলকে অবলম্বন করে নান্দনিকতার চূড়ান্ত স্বর্গ নির্মাণ করে গেছেন। আয়না এক অন্তহীন একাকীত্বের মরবিড পটভূমিতে আমার নিজস্ব অনুভূতিজাত নিটোল সৌন্দর্য নির্মাণের প্রয়াস। উদ্ধৃত পঙক্তি তিনটি যদি তোমার ভালো লেগে থাকে, তবে ধরে নেব কোনও কোনও নির্মম তীর কখনও কখনও সত্যি সত্যি লক্ষ্যভেদ করে! আর এলিয়ট সাহবের সঙ্গে তোমার করা তুলনায়, আমি এই মুহূর্তে প্রবল আত্মগর্বে আপ্লুত। ছাতি ফুলে ৬৫ ইঞ্চি! আমার ফিনিশ অনুবাদিকা একদা বলেছিলেন যে আমার কবিতা তাঁকে রিলকেকে স্মরণ করায়! তিনি রিলকে পড়েন মূল জার্মানে অতএব আমি সোৎসাহে একচক্ষু হরিণের মতো ওই ডাঙার বাঘটির দিকে নজর রেখেছিলাম, ইতিমধ্যে তোমার কল্যাণে জলের কুমীর রূপে এলিয়ট সাহেব আবির্ভূত: মধ্যখানে কিংকর্তব্যবিমুঢ় আমি!
আর পুরাতনীর ফরম্যাটকে আমি অতি সচেতনভাবে একটি নিও ক্লাসিকাল রূপ দিতে চেয়েছি। এই কবিতার নির্মাণ মঙ্গল ও অমঙ্গলের নিবিড় আশ্লেষে!
এ তো গেল আমার পছন্দের কথা। এর মধ্যে যে লেখাগুলো আপনার মনের খুব কাছের তাদের নিয়ে আমাদের কিছু বলুন।
যে কবিতাগুলি আমার নিজের ভালো লাগে না, সেসব কবিতা আমি লিখি না! ফরমায়েশি কবিতা আমি লিখতে পারি না, নিজস্ব বাতাস পরবর্তী পর্যায়ে আজ পর্যন্ত এমন একটি কবিতাও নেই যা আমি লিখেছি অথচ বেস্কিডে সংকলিত হয়নি! তাই ভালোলাগা কবিতা খুঁজে নেওয়া আমার পক্ষে অতীব দুরূহ, তবুও দু’ একটি কবিতা নিয়ে কথা বলা যাক।
পোল্যান্ডের বেস্কিড পাহাড়ে আমি যাই জানুয়ারী মাসে। প্রবল শীত ও প্রবল বরফ পাহাড়ে তখন! ওই পাহাড়ের একটি শৃঙ্গ থেকে বরফে ভরা পাকদণ্ডী বেয়ে প্রায় প্রাণ হাতে করে নামতে নামতে আমি খুঁজে পাই ভার্জিন মেরিকে। ‘মনে হল যেন পেরিয়ে এলেম অন্তবিহীন পথ আসিতে তোমার দ্বারে’! (বৃদ্ধকে এই বইতে আমি একটি গোটা অংশ দিয়ে রেখেছি, তবু এখানেও তাঁর অত্যাচার!)। আমার ধর্মহীন, ঈশ্বর–বিহীন পৃথিবীতে তাঁর আবির্ভাব যেন এক মানবিক সৌন্দর্যের সুপারনোভা বিস্ফোরণ! সেই অবিশ্বাস্য সৌন্দর্যানুভূতি থেকে এই নাম কবিতাটির জন্ম। কেউ কেউ হয়তো একে ব্লাসফেমি বলবেন, আমার অনুভূতির তাতে ইতরবিশেষ হবে না!
কবিতাকে আমি নির্মাণ করি, আর সেই নির্মাণে জীবনের অভিজ্ঞতাকে আমি যথেচ্ছ ব্যবহার করি আপন মনের মাধুরী মিশায়ে! তবে বেস্কিডে নিউ মেক্সিকো নিয়ে লেখা কবিতটি বড় প্রখরভাবে আত্মজৈবনিক! ১৯৭৭ সালে পকেটে মাত্র চারটি ডলার নিয়ে আমি আলবুকার্কি শহরে অবতরণ করেছিলাম, সামনে ছিল আরও ৭৫ মাইলের গভীর রাতের অনিশ্চিত যাত্রা! ‘তখন ছিল না ভয় ছিল না লাজ মনে, জীবন বহে যেত অশান্ত’! এই কবিতার চরিত্র ও ঘটনাগুলি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, পরিচয় ও ওই অঞ্চলের ঐতিহাসিক ঘটনায় সম্পৃক্ত!
আর আমার সাম্প্রতিক কলোরাডোবাসের ফলশ্রুতি, টেবিল পাহাড়ের কবিতাটি সম্পর্কে পরবাস পত্রিকার ৬৭তম সংখ্যায় আমার নিজেরই লেখা একটি পত্র থেকে উদ্ধৃত করি:
এ কবিতা এক চূড়ান্ত শূন্যতার: তিনি নেই জেনেই অবিশ্বাসী আমি আকুলভাবে খুঁজি ঈশ্বরকে, তাঁকে পাই না, আর একজন কবি যিনি হয়তো বলতেন ‘মানুষ কাউকে চায় তার সেই নিহত উজ্জ্বল ঈশ্বরের পরিবর্তে অন্য কোনও সাধনার ফল‘, এখানে পরিশেষে তিনিও মৃত! বিষাদ এখানে প্রায় প্রাকৃতিক নিয়মে নেমে আসে; না আসাটা অশ্লীলতা হত!
২০১৪–তে নিজস্ব বাতাস আর ২০১৭–তে বেস্কিড। কবি হিসেবে নিজের মধ্যে কী পরিবর্তন লক্ষ করছেন, যদি না তা একান্তই অলক্ষ্য হয়?
নিজস্ব বাতাস লিখতে শুরু করেছিলাম সুদীর্ঘ শীতঘুমের পরে জেগে উঠে, যেন রিপ ভ্যান উইঙ্কলের মতো এক বদলে যাওয়া পৃথিবী দেখেছিলাম চারদিকে: কবির সংখ্যা কবিতার থেকে বেশি, বাজারি পত্রিকাশ্রিত বালখিল্য কবিয়ালের সংখ্যা মহাকাব্যে বর্ণিত প্রবল তেজি বালখিল্য মুনিদের ধরে ফেলতে চলেছে! এই নবতর আলোকরশ্মিগুলিতে মানিয়ে নিতে সময় লেগেছে, তাছাড়া ধারণা ছিল না আমার কবিতা কে পড়বে বা আদৌ কেউ পড়বে কিনা। তাই শুরুতে অস্বস্তি ছিল প্রচুর। বেস্কিড পর্বে আমি অনেক কম টলোমলো! যদিও এই মুহূর্তে কেন জানি না মনে হচ্ছে আমার আর একটিও কবিতা লেখার প্রয়োজন নেই! জানি না আগামীকাল অন্যরকম ভাবব কিনা। কৃতজ্ঞতা রইল প্রকাশক রোহণের কাছে, চিত্রকর অতনুর কাছে, আমার প্রতিটি পাঠকের কাছে, আর তোমার কাছেও যে সেটা বরং প্রকাশ্যে বলাই ভালো!
তবে আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে, বেস্কিড–এ আপনি আরও মুখর ও নিশ্চিত। সেটা নিজস্ব বাতাসের সাফল্য, না কী সাম্প্রতিকতার প্রভাব? সাম্প্রতিকতা – এই অর্থে বলতে চাই, নিজস্ব বাতাসের হয়তো অধিকাংশ কবিতাই একটা অন্য পৃথিবীতে বসে লেখা। বেস্কিড সে–অর্থে অনেক বেশি আজকের পৃথিবীর ব্যাপার।
নিজস্ব বাতাসের সাফল্য, যদি বা সেরকম কিছু থেকে থাকে, তা বেস্কিডকে প্রভাবিত করেছে বলে আমার মনে হয় না। আমার কবিতা যা তোমরা আজ পর্যন্ত পড়ছ তার প্রতিটিই কবিতার নিজস্ব মেটা–পৃথিবীতে আমার দৈনন্দিনের স্মৃতি ও অভিজ্ঞতার শিল্পিত প্রতিফলন ছাড়া কিছু নয়। কবিতা নির্মাণের একটা জটিল প্রক্রিয়ায় এই প্রতিফলিত বাস্তবতা রূপান্তরিত হতে থাকে, তাদের পারস্পরিক মিশ্রণে কবিতার নিজস্ব বাস্তবতা নির্মিত হতে থাকে। আমার কবিতা জীবনের সমস্ত উপাদানকে নিয়ত শোষণ করে চলে, তার নির্যাসটুকু নিয়ে তৈরি হয় আমার কবিতার ক্যালাইডোস্কোপের কাচ, যাকে আমি বাজিকরের কুশলতায় ঘুরিয়ে ফেলতে চাই বারবার, যাতে পাঠকের চোখে দৃশ্যগুলির পুনরাবৃত্তি না ঘটে। প্রত্যক্ষ রেফারেন্স আমি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রচ্ছন্ন রাখি, তাই তোমরা জানতে পারো না যে নিজস্ব বাতাস আর বেস্কিড প্রকৃত প্রস্তাবে একই পৃথিবীর আখ্যান! তোমরা জানো না যে নিজস্ব বাতাসের নিভৃত রাত্রি আমি লিখেছিলাম কোরিয়ায় বসে এক গভীর অন্ধকার রাতে, সবে সিরিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়েছে, আমার অন্ধকার ঘরে জানলা দিয়ে প্রবল প্লাবনে চাঁদের আলোয় যেন ভেসে আসছিল তার খানিক আগে টেলিভিশনে দ্যাখা ভয়াবহ হিংসা দৃশ্যগুলি। সেই একইভাবে এই বাস্তব পৃথিবীর সাম্প্রতিক আনন্দময়তার খবরও কবিতার ওই নিজস্ব পৃথিবীতে ভেসে আসে সারক্ষণ: যেমন ধরো বেস্কিডের নীলগ্রহ লিখেছিলাম একটি পরিচিত, প্রিয় পরিবারের পাহাড় ভ্রমণের একটি ছবি দেখে! পাঠকের কাজ কবিতার রসাস্বাদনের, তাঁদের এই সব গোড়ার কথাগুলি না জানলেও চলবে। আমার কবিতা, যেমন বলেছিলাম নিজস্ব বাতাসের মুখবন্ধে, যুগপৎ আমার যন্ত্রণা ও আনন্দের অভিজ্ঞান। আমার পরিচিত আলো অন্ধকারগুলি সেখানে পরস্পরের দিকে মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে!
যাক মনে হয় তোমার প্রশ্নমালা শেষ। এই শেষ প্রশ্নের উত্তরটি পর্যন্ত যদি ভুল করে পড়ে ফেলেন কোনও দুর্দান্ত পাঠক, তবে তাঁকে আমার ধন্যবাদ জানালাম!
পড়বেন, তাই লড়ছি! যাই হোক, অনেক ধন্যবাদ নিরুপমদা। আপনার আসন্ন কেতাব পুস্তকবিপণির তাকে স্বল্পায়ু হোক, সেই কামনা করি। চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের বহু উপরোধেও আপনি লেখা দেননি। আশা রাখছি সেই লেখা পেয়ে যাব, কোনওদিন। ভালো থাকবেন।
আবার ধন্যবাদ তোমাকে, সেইসঙ্গে এবার চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের চলমান অশরীরী সম্পাদকমণ্ডলীকেও, যাঁদের আদৌ চিনি না, কিন্তু তাঁদের বিপুল দুঃসাহসের স্পর্শ পাই! নেইকাজে তাঁদের এই বিপুল খইভাজার সৎসাহসকে সম্মান জানাচ্ছি!