জয়ন্ত ভট্টাচার্য
চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য-কর্মী, প্রাবন্ধিক
মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদের আমরণ অনশন অবশেষে প্রত্যাহৃত হয়েছে। চিকিৎসক এবং সমাজকর্মী বিনায়ক সেন ফলের রস খাইয়ে অনশন ভঙ্গ করালেন। কিন্তু আন্দোলন এখানে শেষ হয়ে গেল না। গণতান্ত্রিক পরিসর নিয়ে একাধিক প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিল।
আমার কলেজ এই মেডিক্যাল কলেজ। অ্যাডমিশন নিয়েছিলাম প্রায় ৫০ বছর আগে। আমার কলেজের সন্তানসম ছাত্ররা একটি সামান্য দাবী তুলেছে— গণতান্ত্রিক দেশে যেখানে ছাত্র ইউনিয়নের অধিকার সাংবিধানিকভাবে এখনও স্বীকৃত সেখানে ছাত্র সংসদের নির্বাচন করতে হবে। এক এবং একমাত্র দাবী। কর্তৃপক্ষ অনড়, কারণ “উপর মহল” থেকে কোনও সবুজ সঙ্কেত নেই। ১৯৭৭ সালে মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচনের আগেও এরকম পরিস্থিতি ছিল। বহু বছর ছাত্র সংসদের কোনও নির্বাচন হয়নি। যদিও ইতিহাস কখনও হুবহু একরকম হয় না, একইভাবে পুনরাবৃত্ত হয় না। কিন্তু সেসময়ে সামাজিকভাবে একটি সক্রিয়, জীবন্ত এবং সংবেদী নাগরিক সমাজ ছিল। ছিল পার্টি সংগঠনের বাইরে একটি তৃতীয় পরিসর। এজন্য ১৯৮০-র দশকে ওরকম কলকাতা কাঁপানো জুনিয়র ডাক্তার আন্দোলন হতে পেরেছিল।
১৯৯০-এর দশকের গোড়াতেও হয়েছিল আরেকবার জুনিয়র ডাক্তার আন্দোলন। সে-সময় সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ এবং কলেজ স্ট্রিট সংলগ্ন কিছু এলাকায় আমরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে আমাদের কথা, আমাদের মূল দাবী জানিয়েছিলাম। আমরা অনুরোধ করেছিলাম, অন্তত ১ ঘন্টার জন্য সন্ধে রাতে এলাকাকে নিষ্প্রদীপ রাখার জন্য। সেসমস্ত এলাকার অধিকাংশ মানুষ সাড়া দিয়েছিলেন। আমরা শিহরিত বোধ করেছিলাম। তারপরে সময়ের নিয়মে আমরা এখানে-ওখানে ছড়িয়ে গেছি। মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। রয়েছে ছাত্ররা, জুনিয়র ডাক্তার আর শিক্ষক অধ্যাপকেরা। রোগীদের চিকিৎসা পাওয়ার ব্যাপারে কি খুব পরিবর্তন হয়েছে? আমাদের সেসময়ের আন্দোলন স্বাস্থ্যপরিষেবা উন্নত করার ক্ষেত্রে কতটা ভূমিকা বাস্তবে নিতে পারল, এ প্রশ্ন রয়ে গেল। মেডিক্যাল কলেজের আজকের আন্দোলনের সময় আমাদের নিজেদের দিকে আরেকবার ফিরে তাকাতে হবে।
কিন্তু এসমস্ত পুঞ্জীভূত ঘটনা সত্ত্বেও আজকের ছাত্রদের দাবী লঘু হয়ে যায় না। একটি প্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য বর্তমান অনশন-আন্দোলন আলাদা গুরুত্ব দাবী করে। যখন অজস্র দুর্নীতি নিয়ে ক্রমাগত কোর্টের হস্তক্ষেপ হচ্ছে, টিভির পর্দায় রসিয়ে আলোচনা হচ্ছে তখন শহরের এই নাগরিকদের কাছেই অনুরোধ করব— এই বাচ্চা ছেলেগুলোর চোয়াল কষে লড়াই, অপ্রাপ্তি, কখনও হয়তো স্বপ্নভঙ্গের হতাশাও, একটিবারের জন্য কান পেতে শুনুন, চোখ খুলে দেখুন। কোথায় চলে যাচ্ছে আমাদের নাগরিক পরিসর? কোথায় বহুচর্চিত তৃতীয় পরিসর? শিক্ষকতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ যোগ্য প্রার্থীরাও এক অসম্ভব সময় ধরে খোলা আকাশের নিচে আন্দোলন করে চলেছে। আমরা দাঁড়িয়েছি পাশে? এ পরিসর সমাজ থেকে হারিয়ে গেলে রাষ্ট্র তার সর্বব্যাপী আধিপত্য কায়েম করতে সক্ষম হয়। তখন আমরা কোথায় যাব? সত্যিই কি যাওয়ার কোনও জায়গা খুঁজে পেয়েছি আমরা? এক অতল গহ্বরের দিকে যাত্রা করছি না তো আমরা? সজ্ঞানে স্বেচ্ছায় আমাদের স্বাভাবিক সত্তার ইচ্ছামৃত্যু ডেকে আনছি না তো আমরা? তারপরে? ইতিহাসের কাহিনি কীভাবে লেখা হবে? ভেবে দেখেছি?
২০০ ঘণ্টার অনশনে দুজন ছাত্র রীতিমত অসুস্থ হয়ে কেউ আইসিইউ-তে, কেউ ইমার্জেন্সিতে ভর্তি হয়েছিল। বোলান গঙ্গোপাধ্যায় কিংবা জয় গোস্বামীকে আমার কুর্নিশ। এঁরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ছাত্রদের দাবীর পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু এঁরা ব্যতিক্রম রয়ে গেলেন। অন্যসব নামী মানুষ যাঁরা নন্দীগ্রাম থেকে বিভিন্ন সময়ে কলকাতার রাজপথ আন্দোলিত করেছেন তাঁরা কেন হারিয়ে যাবেন? এর উত্তর কি খুব স্পষ্ট? গণতান্ত্রিক পরিসর চাওয়া, গণতন্ত্রের দাবী তোলা কি অন্যায্য? অসঙ্গত? অসাংবিধানিক?
রেবেকা চপ (Rebeca S Chopp) তাঁর The Praxis of Suffering গ্রন্থে লিখছেন:
ইতিহাস কেঁপে কেঁপে ওঠে, অতিবৃহৎ সব ঘটনা দিয়ে বিদ্ধ হয় জনতার suffering (ক্লিষ্টতা), স্মৃতিকে তাড়া করে ফেরে ইতিহাসের বলির পশুদের চুপিসার পদক্ষেপ… বুভুক্ষু মানুষের আর্তনাদ, রাজনৈতিক বন্দিদের সুতীক্ষ্ণ চিৎকার এবং নিপীড়িতের নিঃশব্দ স্বর আমাদের প্রাত্যহিক যাপনে ধীর গতিতে, যন্ত্রণাক্লিষ্ট হয়ে প্রতিধ্বনিত হয়।
এ প্রসঙ্গেই আমাদের আরও কিছু কথা ভেবে দেখা দরকার। যখন কেন্দ্র বা রাজ্যের শাসকের মুখে শুনি বিরোধীশূন্য রাজনীতি হবে তখন সামান্য চিন্তাও যারা করেন, যাদের মনন এখনও ফসিল হয়ে যায়নি তাঁরা শিউড়ে ওঠেন। গণতন্ত্র মানে ঐতিহাসিকভাবে বহু স্বর, বিভিন্নমুখী মত, মতদ্বৈধতা, তীব্র রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক-দর্শনগত বিতর্কের প্রাণবন্ত পরিবেশ। এ বিতর্ক জনসমাজে তথা নাগরিক সমাজে হয়ে থাকে। আধুনিকতার একটি জন্মচিহ্ন এই বিতর্কের পরিবেশ। এই বিতর্ক সজীব চেহারা নেবে সংসদে বা গণভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অধিবেশনে। যদি এই প্রবাহটি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে ভাবতে হবে গণতন্ত্র কি সান্তাক্লজের মতো পোষাকের আড়ালে নিজের রূপ বদলে নিচ্ছে? নাকি নতুন করে গণতন্ত্রের অভ্যুদয় প্রয়োজন— নয়া গণতন্ত্র? বামপন্থী আমেরিকান সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান তাঁর এ প্রিফেস টু পলিটিক্স গ্রন্থে (১৯১৩) বলেছিলেন:
Ours is a problem in which deception has become organized and strong; where truth is poisoned at its source; one in which the skill of the shrewdest brains is devoted to misleading a bewildered people. (পৃঃ ১০৫)
বর্তমান সময়ে এ কথাগুলো দৈববাণীর মতো শোনায়।
এবং বিলক্ষণ বোঝা যায় গণতান্ত্রিক তথা নাগরিক তথা তৃতীয় পরিসর হিসেবে যত অপসৃত হবে তত বেশি করে রাষ্ট্র এবং শাসকদল তার সমস্ত শাখাপ্রশাখা নিয়ে প্রতিটি নাগরিকের জীবনের নিভৃততম পরিসরে তত বেশি করে প্রবেশ করবে। তার ফলাফল? যাপিত জীবনে একজন নাগরিক হিসেবে আমাকে প্রতিটি পদে নির্ভর করতে হবে “ক্ষমতা”র অনুগ্রহের ওপরে, অনুদানের ওপরে। এখানে মেধা বা যোগ্যতা কোনও বিবেচ্য বিষয়ই নয়। অর্থাৎ রাষ্ট্র-সমাজ-নাগরিক সম্পর্কে আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত গণতান্ত্রিক ধারণার বিপরীতে ভারতের নিজস্ব একটি ভাষ্য তৈরি হচ্ছে? এই ভাষ্যের বাইরে যাওয়ার আর কোনও রাস্তা নেই— এরকম একটি সামগ্রিক সামাজিক বিবশতা (collective social numbness) আমাদের গ্রাস করছে? সমাজের পক্ষে এর চেয়ে ভয়াবহ অবস্থা আর কি হতে পারে? নীরবে-সরবে, নিঃসাড়ে আমরাও রাষ্ট্র এবং ক্ষমতাকে মান্যতা দিচ্ছি?
একটি সংস্কৃতির জন্ম হবে যার ভিত্তি হবে কেবল তাৎক্ষণিকতা-নির্ভর, শুধুমাত্র বর্তমানকে চিনি বুঝি যাপন করি, অন্য কিছু নয়। অতীতের এবং ইতিহাসের পুনর্নিমাণ হবে। সমাজের অন্ধকার জগৎ (যাদেরকে চালু ভাষায় লুম্পেন বলা হয়) আলোয় আসার, রাজপথের দখল নেওয়ার, রাষ্ট্রিক ক্ষমতার বৃত্তের সঙ্গে সংস্থাপিত থাকার গৌরব অর্জন করবে।
ভিন্ন প্রেক্ষিতে সমধর্মী এক পরিস্থিতি দেখেছিলেন ফ্রানজ ফ্যানঁ (Frantz Fanon) তাঁর The Wretched of the Earth পুস্তকে। তিনি দেখেছিলেন:
The very same people who had it constantly drummed into them that the only language they understood was that of force, now decide to express themselves with force.
এরকম এক বিশেষ সময়ে নবারুণের সৃষ্টি “ফ্যাতাড়ু”রাও আর অন্তর্ঘাত ঘটাতে পারে না। এরা নিজেরাই ধীরে ধীরে রাষ্ট্রের জন্ম দেওয়া আত্মীকরণ প্রক্রিয়ার (assimilation) অংশীদার হয়ে যায়। এরা হিংসা আর শক্তি প্রদর্শনের extra-judiciary, extra-state হাতিয়ার হয়ে ওঠে। এরা “নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে”-র সৌম্যকান্তি পাগল চরিত্রটির মতো দুর্বোধ্য “গ্যাৎচরেৎশালা” উচ্চারণ করে না। এরা স্পষ্ট ভাষায় হিংসা-ঘৃণা-হিংস্রতা-পেশির ভাষা উচ্চারণ করে। ভাষার চিহ্ন এঁকে দেয় “অপরের” শরীরে। পার্টি এবং রাষ্ট্রের ভেদরেখা মুছে যেতে থাকে। আমাদের বোঝা রাজনীতির চেনা ছকে আধুনিকতার এই গল্পগুলো ঠিক তৈরি হচ্ছে না। অতিরাষ্ট্রের নিজের নির্মাণ করা আখ্যান তৈরি হয়ে চারিয়ে যায় জনসমাজে, জনজীবনের দৈনন্দিন প্রবাহের মাঝে। একটা সময়ে এসে মনে হয় যেন এটাই বাস্তব, এটাই সঠিক। আমাদের মস্তিষ্ক কাজ করে নিউরোনের উপরিতলে। দীর্ঘস্থায়ী গভীরে থাকা স্মৃতি অতলে চলে যায়।
রামচন্দ্র গুহ তাঁর সুবৃহৎ India after Gandhi পুস্তকে মির্জা গালিবের একটি কবিতা উদ্ধৃত করেছেন। আমাদের জন্য বর্তমান মুহূর্তে বড়ো প্রাসঙ্গিক সে কবিতা:
Sir, you well perceive,
Fidelity and love
Have all departed from this sorry land.
….
Why does not the Last Trumpet sound?
Who holds the reins of the Final Catastrophe?
আমরা বিলক্ষণ জানি, রাজনৈতিক লুম্পেনিকরণ বহুদিন ধরেই চলছে। আমাদের বিবেক, মনন, চেতনা বিদ্ধ হলেও, রক্তাক্ত হলেও আমরা মেনে নিয়েছি বা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছি। এখানে রাষ্ট্র শুধু অতিরাষ্ট্রের আচরণ করছে তাই নয়। সমস্ত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে পাশ কাটিয়ে লুম্পেনদের হাতে সেই ক্ষমতা তুলে দেওয়া হচ্ছে যেখানে রুনু গুহনিয়োগীর প্রয়োজন পড়ে না। কারণ তাকেও তো একটা নামকাওয়াস্তে বিচারের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। সেই বিচার যদি পার্টি বা দলের বিচার হয়? কিংবা যদি বিচারের আঙিনায় প্রধান পুরুষ হয়ে দেখা দেয় রাষ্ট্রের প্রসারিত রাজশক্তির পৌরুষ— invisible এবং indiscernible বহুদূরের প্রান্তজন মানুষটির পরিবর্তে? তখন তো ঔপনিবেশিক কালের মতোই বিচারের বাণী নীরবে চোখের জল ফেলতেই পারে। অথচ আমরা কথা বলছি আধুনিকতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপহার গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে থেকে। গণতন্ত্রের এমনই দ্বৈত সত্তা!
বর্তমানের যাপিত সময়ে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন, স্বায়ত্তশাসিত স্তম্ভগুলোকে যদি স্মারকচিহ্নের স্তরে নামিয়ে আনা যায় তাহলে পার্টি এবং বকলমে রাষ্ট্র লালিত extra-judiciary এবং extra-democratic institutions-এর ধারণা জনমানসে নিঃসারে চারিয়ে যায়। লুম্পেনরাজ ঘোষিতভাবে সমাজের চলন, নীতি, নৈতিকতা, ব্যক্তি জীবনের প্রতিটি পরিসর— সবকিছু নির্ধারণ করবে। আমরা তো জানিই “শীতলকুচি করে দেব” বা “রগড়ে দেব” বা “অ্যান্টি-রোমিও স্কোয়াড” গড়ে তোলার মতো প্রবল প্রত্যয় এবং অমৃত তথা স্বস্তিবচন। আমরা ধীরে ধীরে সইয়ে নিচ্ছি নিজেদের? এরকম এক সুবোধ, সুশীল “ফ্যাতাড়ু” বাহিনি পেলে আর কারা অন্তর্ঘাত ঘটাবে? এদেরকেই তো নবনির্মিত রাষ্ট্রের প্রয়োজন কিংবা এভাবেই গড়ে নেবে। কিছু নির্মিত চিহ্ন বা শ্লোগানের প্রতি বশ্যতা ও আনুগত্য বোঝাবে পছন্দমতো-গড়ে-নেওয়া দেশ নামক ভূখণ্ডের নাগরিক বা না-নাগরিক। জার্মানিতে স্বস্তিকা চিহ্ন একসময়ে এই জাতীয় প্রতীকের কাজটি করেছিল। আবার বিপরীত উদাহরণ হিসেবে, লেনিনের রাশিয়ার কাস্তে-হাতুড়ি-তারার চিহ্ন বিশ্বজুড়ে মুক্তির বাতাস আনার প্রতীক হিসেবে গৃহীত হয়েছিল একসময়ে। বর্তমান ভারতে কোনটি প্রতীক হবে— চরকার ব্যঞ্জনা কিংবা সেন্ট্রাল ভিস্টা?
এখানেই রাষ্ট্র, পার্টি ও প্রচলিত আখ্যানের বাইরে গিয়ে জরুরি হয়ে পড়ে একটি তৃতীয় পরিসর গড়ে তোলা। জরুরি অবস্থার সময়ে ভারত জুড়ে পার্টি অস্তিত্বকে অতিক্রম করে সর্বব্যাপী তৃতীয় পরিসর জন্ম নিয়েছিল। এই তৃতীয় বা নাগরিক পরিসর নতুন চিন্তন, সৃষ্টিতরঙ্গ, নতুন কমরেডশিপকে বাস্তবের মাটিতে জীবন্ত চেহারা দিয়েছিল।
এই তৃতীয় তথা নাগরিক পরিসরের সজীব উপস্থিতি জেলে অবরুদ্ধ কংসারী হালদারকে নির্বাচনী লড়াই জিতিয়েছে। ১৯৭৭ সালে কেন্দ্রে এবং রাজ্যে রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। ১৯৭৭-৭৮ বা ১৯৮৮-৮৯-এর পশ্চিমবঙ্গে বন্দিমুক্তি আন্দোলনকে সফল করেছে। নন্দীগ্রামের ঘটনার পরে লাখো লোকের দৃপ্ত পদচারণা পশ্চিমবঙ্গ দেখেছে। নাগরিক পরিসর না থাকা বা ক্রম-সঙ্কুচিত হওয়ার জন্য আজ দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ বা রাজস্থানের চিত্র ভিন্ন। পশ্চিমবঙ্গের চিত্র এখনও খানিকটা ভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছে। এখানে “শ্রমজীবী ক্যান্টিন” বা “নো ভোট টু বিজেপি” বা অসংখ্য “কোভিড কমিউনিটি” ইত্যাদির বিভিন্ন স্তরে, অঞ্চলে তৈরি হওয়া এই তৃতীয় পরিসর বা নাগরিক সমাজের সজাগ সম্ভাবনা উন্মোচিত করছে।
এই পরিসরটিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। ইতিহাস আমাদের কাছে একে প্রাণবন্ত করে সক্রিয় রাখার ডাক পাঠাচ্ছে। আমরা কি শুনছি? চলুন নিজেদের মধ্যে নিবিড় সামাজিক সংলাপ শুরু হোক। শুরু হোক সোশ্যাল মিডিয়ার বাইরে এসে পরস্পরের কথা শোনা। আর্নেস্ট হেমিংওয়ে তাঁর “Monologue to the Maestro: A High Seas Letter” প্রবন্ধে (১৯৩৫) বলেছিলেন:
যখন মানুষ কথা বলে তখন কান পেতে সম্পূর্ণটা শোনো। এমনটা চিন্তা কোরো না যে তুমি কথা বলতে উদগ্রীব। বেশিরভাগ মানুষ কখনও শোনে না। কখনও চোখ মেলে দ্যাখেও না।
কথাগুলো এখনও বড় সত্যি! আমরা সবাই আরেকবার শিক্ষার্থী হয়ে যাই।
আসুন আপনারা— নাগরিক সমাজকে বলছি। গণতন্ত্র হারিয়ে গেলে জীবনের অনেক কিছুই ভবিষ্যতে একটা একটা করে হারিয়ে ফেলবেন। ভেবে দেখবেন নিশ্চয়ই।