Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

ডিএ আন্দোলন একজন মার্কসবাদী কর্মীর দৃষ্টিতে

পার্থসারথি মৌলিক

 



নাট্যকর্মী, রাজনৈতিক কর্মী

 

 

 

 

এই লেখাটি শুরুর আগে রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লবের একটি ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চাই। রাশিয়ায় ১৯০৫ সালের ৩ জানুয়ারি সেন্ট পিটার্সবুর্গের একটি বড় কারখানায় শ্রমিক ধর্মঘট শুরু হয়। শ্রমিকরা দ্রুত ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন শুরু করে। এইভাবে সাধারণ ধর্মঘট শুরু হয়। কিন্তু এর ভিতরেই জারের গোপন সমর্থক ফাদার গ্যাপন ‘রুশ কারখানা শ্রমিক সভা’ নামে একটি সংগঠন খাড়া করে এবং ঘোষণা করে জারের ছবি এবং গির্জার পতাকা নিয়ে ৯ জানুয়ারি জারের শীতকালীন প্রাসাদে গিয়ে শ্রমিকদের দুরবস্থা জানিয়ে সই সংগ্রহ করে দরখাস্ত দেবে। এবং জার সামনে এসে তাদের কথা শুনবে। বলশেভিকরা বিভিন্ন সভায় পার্টির নাম না করেই এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করে রাজনৈতিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য সংবিধান সভা আহ্বান, সকলের সমান অধিকার, রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে আলাদা করা, আট ঘণ্টা কাজের সময় ইত্যাদি দাবীকে সামনে এনে বলে জারের কাছে এই আবেদন কোনও লাভ দেবে না। কিন্তু জারের উপর ভরসা থাকায় বলশেভিকরা তাদের কথা বোঝাতে ব্যর্থ হয়। ওই দিন ১৯০৫-এর ৯ জানুয়ারি রাস্তায় প্রায় এক লক্ষ চল্লিশ হাজারের জমায়েত জারের ছবি এবং গির্জার পতাকা নিয়ে স্ত্রী-সন্তান সহ মিছিল করে। সেদিন জার নিকোলাসের নির্দেশে পুলিশ গুলি চালায়। এক হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। হাজার হাজার আহত হয়। বলশেভিকরা বিরুদ্ধ প্রচার সহ মিছিলে যায়, আহত হয়, মারা যায় কিন্তু ওই শ্রমিক-রক্তস্নাত রাস্তায় দাঁড়িয়ে কমিউনিস্টরা শ্রমিকদের ভুল রাস্তার দিকে আঙুল তুলে দেখাতে ভোলেনি। তথাকথিত ঐক্যের স্বার্থে চুপ করে থাকেনি। যা রাশিয়ার ইতিহাসে ‘রক্তাক্ত রবিবার’ বলে কুখ্যাত।

এটা শিক্ষা দেয় আন্দোলনের পার্থক্য থাকতে পারে কিন্তু ভুলটাকে তথাকথিত ঐক্যের স্বার্থে হতে দিলে চলবে না। ভুলটাকে ভুল বলতে হবে আবার আন্দোলনের সঙ্গে থেকে গতিপ্রকৃতির দিকে নজর রাখতে হবে।

রাজ্য সরকারি ও সরকারপোষিত স্থায়ী কর্মচারীদের মহার্ঘ্য ভাতার আন্দোলন চলছে। যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের নামে প্রায় ৫০টি সংগঠন এই মঞ্চে সামিল। তবে এই আন্দোলনের চাপে তৃণমূল সরকার বাধ্য হয়েছে ছয় শতাংশ ডিএ ঘোষণা করতে। এবং এটা অস্বীকার করা যাবে না। অস্বীকার করা যাবে না গত বারো বছরে সরকারি স্থায়ী কর্মচারীদের পক্ষ থেকে এত বড় প্রতিরোধের মুখে মমতা ব্যানার্জির সরকার পড়েনি। ডিএ সরকারি কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকার সন্দেহ নেই। কারণ পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে মূল্যবৃদ্ধি অবশ্যম্ভাবী। আর সেই মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বেতন পরিবর্তন বা ডিএ জরুরি সন্দেহ নেই। তা সরকার না দিলে আন্দোলন করতে হবে। সুতরাং সরকারি কর্মচারীদের ডিএ-র অধিকার ন্যায্য এটা নিয়ে কারও দ্বিমত থাকতে পারে না। আবার বুর্জোয়া অর্থনীতিতে বাজারের চাহিদা বাড়াতে ডিএ জরুরি।

পাশাপাশি মার্কসবাদী হিসেবে এটাও মাথায় রাখতে হবে একটি যৌক্তিক অর্থনৈতিক দাবীর আন্দোলন প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার হতে পারে। এবং আন্দোলনকারী নেতৃত্ব যখন সেই অর্থনৈতিক দাবীকে পাখির চোখ করে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির ক্রীড়নকে পরিণত হয় তখন মার্কসবাদী-লেনিনবাদী হিসেবে দাবীর যৌক্তিকতাকে স্বীকার করে নেতৃত্বের ভূমিকা সম্পর্কে আন্দোলনকারীদের সচেতন করে দেওয়া কর্তব্য। এবং শুধু অর্থনীতিবাদ আসলে বুর্জোয়া সমাজের দাসত্বের মনোভাবকে দীর্ঘস্থায়ী করে মাত্র। আরও বড় বিপদ হিসেবে উপস্থিত হয় যখন মার্কসবাদী সংগঠনগুলির কর্মীরা এই অর্থনীতিবাদী আন্দোলনের ক্ষণিক সাফল্যের স্রোতে ভাসতে থাকে। তখন আন্দোলন সমাজের মূল সমস্যাগুলির সঙ্গে বুর্জোয়া অর্থনীতির বিপদের, শ্রেণি-প্রশ্নগুলির সঙ্গে তাকে জুড়তে ব্যর্থ হয়। সাফল্যের নেশায় মূল প্রশ্নগুলি ধামাচাপা পড়ে যায়। তারা ভুলে যায় এই ধরনের আন্দোলন আসলে ভবিষ্যতের বিচ্ছিন্নতা ও প্রতিক্রিয়ার শক্তিগুলিকে আরও জোরদার করে।

এই ডিএ আন্দোলনের অভিজ্ঞতা আমাদের নতুন নয়। তার প্রতিক্রিয়াশীল পরিণতিও আমরা জানি। ২০০৮-০৯ সালে বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে বকেয়া ডিএ নিয়ে কর্মচারীরা জোরদার আন্দোলন করেছিলেন। তখন বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছিল। এবং অর্থনৈতিক দাবীর আন্দোলনে সামাজিক সমর্থন বাড়াতে সরকারি কর্মচারী সংগঠনের নেতৃত্ব প্রতিক্রিয়াশীল তৃণমূলের হাত ধরতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করেনি। ভেবেছিল নির্বাচনে বামফ্রন্টের পরাজয় তাদের আর্থিক দাবীর জয় এনে দেবে। পেছন থেকে মদত জুগিয়েছিল মার্কসবাদী-লেনিনবাদী নামধারী হরেক কিসিমের নকশাল, ভ্রাম্যমান বিপ্লবী এবং সংগঠিত পার্টিবিরোধী কিছু কর্মচারী ইউনিয়ন। বুর্জোয়া বুদ্ধিজীবীরা তো ছিলই এবং তৃণমূল নেত্রীরও সামাজিক সমর্থনের দরকার ছিল। একটি সিমবায়টিক সম্পর্ক। তার প্রতিক্রিয়াশীল পরিণতি আজ রাজ্যবাসী প্রত্যক্ষ করছে। একটি যৌক্তিক দাবীর আন্দোলন প্রতিক্রিয়াশীল চরিত্র লাভ করেছিল। শুধু তাই নয় সেই প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক চক্রান্তে কর্মচারী সংগঠনগুলি বামফ্রন্ট সরকারের অনিয়মিতদের নিয়মিতকরণের নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছিল। ফলে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।

আজকে ঠিক একই পরিস্থিতি। তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে। ডিএ আন্দোলনের প্রভাব সেই ক্ষোভের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। এবং ডিএ আন্দোলনের সামাজিক সমর্থনের জন্য কর্মচারী সংগঠনগুলি রাস্তায় নেমে মিটিং মিছিল করছেন। যখনই সামাজিক সমর্থনের প্রয়াস থাকে তখন তা আর শুধু অর্থনৈতিক আন্দোলন থাকে না। তার সঙ্গে রাজনৈতিক প্রনোদনা যুক্ত হয়ে পড়ে। বর্তমানের ডিএ আন্দোলনেও তাই হয়েছে। এবং এর ফায়দা নেওয়ার জন্য প্রতিক্রিয়ার শাক্তিরাও হাজির হয়েছে। ডিএ আন্দোলনের মঞ্চে রাহুল সিনহা, শুভেন্দু অধিকারীর দলবল সহ হাজিরা এবং আন্দোলনকারী নেতাদের সাগ্রহে তাদের স্বীকার করা এক ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই বিজেপি দল আজকে পশ্চিমবঙ্গ সহ সারা দেশে সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্ট রাজত্ব কায়েমের প্রয়াস চালাচ্ছে। সরকারি ক্ষেত্রকে বেসরকারিকরণ করছে। শ্রম কোড বাতিল করে মজুরদের প্রায় সমস্ত অর্জিত অধিকার বাতিল করেছে। শুধু তাই নয় বিএসএনএল-এ মজুরি বৃদ্ধির পরিমার্জন করতে অস্বীকার করছে। সারা দেশ জুড়ে সরকারি ক্ষেত্রে চুক্তিপ্রথা চালু করেছে। সেনাবাহিনিতে অগ্নিবীর স্কিম চালু করেছে। সেই ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের প্রতিনিধি শুভেন্দু অধিকারী, রাহুল সিনহারা এসে কর্মচারী অধিকারের কথা বলছে এবং মজার কথা হল তারা আন্দোলনের আরেকটি দাবী ‘অনিয়মিতদের নিয়মিতকরণের’ পক্ষে কোনও কথা বলছে না। এবং আন্দোলনকারী নেতৃত্বও চুপ। বরং আন্দোলনকারী নেতাদের কাছে কেউ এ বিষয়ে প্রশ্ন তুললেই তাকে বাস্তববিরোধী তাত্ত্বিক নেতা আখ্যা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

মনে রাখতে হবে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার এক শতাংশেরও কম এই স্থায়ী সরকারি কর্মচারী বা শিক্ষকেরা। তাদের আন্দোলনকে গণআন্দোলন বলে দেওয়া বা কৃষকআন্দোলনের ব্যাপ্তির সঙ্গে তুলনা করা কখনওই ঠিক নয়। সিপিআই(এমএল) লিবারেশন-এর দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, এসইউসিআই-এর নেতারা, সিপিএমের আইনজীবী নেতা বিকাশ ভট্টাচার্যরা কংগ্রেসি কৌস্তভ, বিজেপির রাহুল সিনহা, শুভেন্দু অধিকারীরা যে মঞ্চে হাজির হয়েছেন সেখানে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলনের তত্ত্ব হাজির করছেন। জনগণকে রাজনৈতিকভাবে বিভ্রান্ত করছেন এবং সেকথা প্রচারমাধ্যম ফলাও করে প্রচার করছে। শুধু তাই নয় এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আরএসএস-বিজেপি মহাজোটের তত্ত্ব হাজির করবার সাহস পাচ্ছে। শ্রমিকশ্রেণীর মতাদর্শে সজ্জিত কোনও সংগঠন স্বাধীন গণআন্দোলনের নামে প্রতিক্রিয়ার পদলেহন সহ্য করতে পারে না। মার্কস ১৮৬৯ সালে আমারিকার লেবার ইউনিয়নকে বলছেন, “On you, then, depends the glorious task to prove that now at last the working classes are bestriding the scene of History no longer as servile retainers, but as independent actors, conscious of their own responsibility…” (কার্ল মার্ক্স , নির্বাচিত রচনা সংগ্রহ , ২য় ভল্যুম, ১৯৬৯, পৃ-১৫৭)। তাই নকশাল থেকে সিপিএমের মতন বাম নেতারা আজ ঘটনার পেছনে দৌড়চ্ছেন। স্বতঃস্ফূর্ততার লেজুড়বৃত্তি করছেন।

আরও একটি বিষয়। যদিও আন্দোলনকারীর এই ডিএ-র দাবীর সঙ্গে ‘স্বচ্ছ নিয়োগ’ এবং ‘যোগ্য অনিয়মিতদের নিয়মিতকরণ’ রেখেছে কিন্তু সেটির অবস্থা ‘অশ্বত্থামা হত ইতি গজ’-র মতন। তারা নিজেরাও জানে না এই ‘যোগ্য’ কথাটি কোথায় কীভাবে ব্যবহৃত হবে। বা অযোগ্য বলে কাদেরকে কম পয়সায় দিনের পর দিন চুক্তিতে খাটানো যাবে। এই রাজনৈতিক চালাকি এই অর্থনৈতিক দাবীর ভিত্তিতে গড়ে ওঠা কর্মচারী আন্দোলনের কী ক্ষতি করে গেল সেটি নিয়ে আলাদা করে বিশদে আলোচনা জরুরি। কারণ এই যোগ্য-অযোগ্য যাই হোক না কেন, ‘অনিয়মিতদের নিয়মিতকরণ’ প্রাথমিকভাবে একটি অর্থনৈতিক দাবী হলেও এটি বর্তমান উদার বুর্জোয়া অর্থনৈতিক নীতির পরিপন্থী। সুতরাং এটির একটি রাজনৈতিক দাবী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা প্রবল। ঠিক সেই কারণে আন্দোলনকারী নেতৃত্ব এই দাবিটির মাধ্যমে দেখাতে চাইছেন খালি মাইনে বাড়ানোর দাবী এটি নয়, কিন্তু এটিকে আন্দোলনের অন্যতম মূল দাবীর স্বীকৃতি দিতে রাজি নন। ফলে মমতা ব্যানার্জি থেকে রাহুল সিনহা সবাই জানে ওই দাবী বিবেক ধোয়ার জল। তারা ওই ‘অনিয়মিতদের নিয়মিতকরণ’ নিয়ে কোনও কথা বলছেন না। এবং আন্দোলনকারীরাও সরকারি অনিয়মিত কর্মীদের কোনও সংগঠনকে হাজির করানোর উদ্যোগ দেখাচ্ছেন না। প্রকৃতপক্ষে তাদের অনশন বা ধর্নামঞ্চে অনিয়মিত কর্মীদের কোনও প্রতিনিধি নেই। তাদের লিফলেটে, বক্তৃতায় ডিএ নিয়ে, তার আইনি লড়াই নিয়ে বহু কথা থাকলেও ‘যোগ্য অনিয়মিতদের নিয়মিতকরণ’ নিয়ে কোনও বিশদ আলোচনা নেই। খালি দাবীর উল্লেখ করে গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজো করা হয়েছে। এর মধ্যে থেকে পরিষ্কার আন্দোলনের নেতৃত্বের মধ্যে প্রথম থেকেই প্রতিক্রিয়ার শক্তি হাজির ছিল। যারা ডিএ-র মতন ন্যায্য অথচ আর্থিক প্রলোভনের দাবীকে সামনে রেখে মধ্যবিত্ত সমাজের সমর্থন লাভ করতে পারবে। এবং মনে রাখতে হবে সরকারি কর্মীদের মধ্যে সতেরো হাজার টাকা থেকে ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা বেতনক্রম সবাই আছে। তাদের ডিএ বৃদ্ধি মানে মাসিক সাত হাজার থেকে আশি হাজার টাকার মাইনে বৃদ্ধি। কর্মক্ষেত্রের আর্থিক বৈষম্য আরও বাড়বে। কিন্তু এই আন্দোলনে মূল্যবৃদ্ধির রোধ করবার প্রসঙ্গটি আসছে না। আন্দোলনকারী নেতৃত্ব চুপ। যে ডিএ নিচুতলার কর্মী-শ্রমিকদের কাছে প্রয়োজনীয় জীবনধারণের প্রশ্ন সেটি উঁচুতলার কর্মীদের কাছে বিলাসবৃদ্ধির প্রশ্ন। বেতনবৈষম্য কমাতে তাই গ্রুপ-বি, সি ও ডি বিভাগের কর্মীদের অবিলম্বে পূর্ণ ডিএ ও ‘অনিয়মিতদের নিয়মিতকরণ’ এই দুটি দাবী মূলদাবী হয়ে ওঠা উচিত। কিন্তু সেটা সামনে আসছে না। একদিকে কর্মচারী ইউনিয়নে ভীষণরকমের অর্থনীতিবাদ গেড়ে বসেছে। আবার পাশাপাশি সিপিএম থেকে এম-এল গ্রুপগুলির যেসব কর্মীরা এই আন্দোলনের মধ্যে কাজ করছেন তাঁরা এই ধরনের প্রশ্ন সামনে আসতে দিতে রাজি নন। তাঁরা পেটিবুর্জোয়া জনজোয়ার দেখতে ব্যস্ত। ভাবছেন প্রশ্ন তুললে যদি বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে হয়। তাঁরা বুঝতে পারছেন না। শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়া তো অনেক বড় ব্যপার। কিন্তু এই সরকারী কর্মচারীদের মধ্যে সরকার যাঁদের কর্মচারী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে রাজি নয়, আদালত থেকে সরকার যাঁদের কোনও ধরনের অধিকার স্বীকার করতে রাজি নয়, তাঁদেরকে পর্যন্ত এই আন্দোলনে সামিল করতে তাঁরা যদি রাজি না হন তাহলে বুঝতে এটা আর সীমাবদ্ধতার প্রশ্ন নয় এটি বুর্জোয়া রাজনীতির প্রাধান্যের প্রশ্ন। ধরুন ১০ই মার্চের ধর্মঘট। একটি স্কুলের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের মধ্যে একটি অংশ ডিএ-র অধিকারপ্রাপ্ত স্থায়ী শিক্ষক আর প্যারা টিচার, ভোকেশনাল টিচার আর কিছু কম্পিউটার টিচার এঁরা চুক্তিতে নিযুক্ত যাঁদের মাসান্তে থোক মাইনে ছাড়া আর কোনও ধরনের ভাতা সুবিধা প্রাপ্য নয়। তাহলে ডিএ-র দাবীতে ধর্মঘটের সমর্থনে বাকিরা কেন আসবে? আসতে পারে দুটিভাবে। এগিয়ে থাকা রাজনৈতিক চিন্তার মাধ্যমে ন্যায্য অধিকারের সমর্থনে আর দ্বিতীয় হচ্ছে হেডমাস্টার থেকে সমস্ত স্থায়ী শিক্ষক-কর্মচারীরা ধর্মঘট করছে তাদের অমান্য করা যাবে না সেই ভয়ে। দ্বিতীয়টির সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি কারণ তাদের অতীত অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে স্থায়ী কর্মীরা তাদের আন্দোলনের সমর্থনে আসেনি। এবং এই ঘটনাগুলি প্রতিটি রাজ্যসরকারি অফিসে আছে। এই প্রশ্নটিকে আজ কর্মচারী আন্দোলনে রাজনৈতিক কর্মীদের মাধ্যমে জোরের সঙ্গে উপস্থাপিত করা উচিত।