Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

তারান্তিনো, সিজন দুই — সাতাশ

প্রিয়ক মিত্র

 

পূর্ব প্রকাশিতের পর

সরিৎ চুপ করে বসে রইল কিছুক্ষণ।

—হিরে!

একবার শুধু অস্ফুটে বলল ও।

—হ্যাঁ সরিৎ, ওই হিরেটার মধ্যেই সমস্তটা লুকিয়েছিল! শাহিদ সেটা জানত। ইশশ!

সরিৎ স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। একটা আশ্চর্য দোলাচলে ওর মাথাটা ঘুরছে। ও জানে, রডরিগেজের কাছে এই খবর পৌঁছে যাওয়ার পরিণাম কী। ও শুধু কল্পনা করতে পারছে না, এই খবরটুকু না জানালে তার কী হবে।

—সরিৎ, শাহিদকে খুঁজে বের করতেই হবে। ওর কোনও না কোনও বিপদ অবশ্যই হয়েছে। ওকে বাঁচাতে গেলে…
—জিনিসটা এখন আপনার কাছে?

কথার মাঝেই ঠান্ডা গলায় প্রশ্নটা ভাসিয়ে দিল সরিৎ।

মৌলিনাথ থমকাল এক মুহূর্ত। ওর মনে একেবারেই সন্দেহ ছিল না বললে ভুল বলা হবে। কিন্তু ও তাও বোঝার চেষ্টা করল সরিতের উদ্দেশ্য।

—জিনিসটা দিয়ে কী হবে সরিৎ? শাহিদকে খুঁজে পাওয়াই আসল এখন।

অ্যাঞ্জেলা খুঁটিয়ে দেখছিল সরিৎকে। এতটা ঘামে নাকি মানুষ স্বাভাবিক অবস্থায়? এত নখই বা কামড়াচ্ছে কেন?

সরিৎ মৌলিনাথের কথার উত্তর ভাঁজছে। কীভাবে ওকে রাজি করানো যায়, কীভাবে…

অ্যাঞ্জেলা হঠাৎ দুম করে একটা প্রশ্ন করে বসল সরিৎকে।

—তোমার সঙ্গে শেষ কী কথা হয়েছিল শাহিদের?

কাটা কাটা ইংরেজিতে প্রশ্নটা ছ‍্যাঁৎ করে লাগল সরিতের কানে। প্রশ্নের প্রতিটি পরতে সন্দেহের উসকানি রয়েছে স্পষ্ট।

সরিৎ মাথা ঠান্ডা করল। রডরিগেজের থেকে পালানোর উপায় আপাতত নেই ওর কাছে। কিন্তু রডরিগেজের আগেই ওকে জানতে হবে, শাহিদের হিরেতে ঠিক কী আছে। রডরিগেজের হাতে এই জিনিস পড়লে লাভ হবে না বিশেষ।

সরিৎ যথাসম্ভব স্বাভাবিক থেকেই বলল মৌলিনাথকে— স‍্যার আমাকে বলেছিলেন, উনি বুঝতে পেরেছেন সঙ্কেতটা কোথা থেকে আসছে। কিন্তু নিরাপদ বোধ করছিলেন না বিশেষ। তাই চেষ্টা করেছিলাম আমরা, যাতে ব‍্যাপারটা চেপে রাখা যায়।

অ্যাঞ্জেলা চোখ কুঁচকে তাকাল মৌলিনাথের দিকে। তারপর সরিতের দিকে ফিরে বলল, নিরাপদ বোধ করছিল না কেন শাহিদ? কী এমন ঘটছিল নিরাপদ না বোধ করার মতো?

সরিৎ চোখ বুজল। এখনও হাতের বাইরে যায়নি বিষয়টা। কিন্তু যেতে পারে। যে কোনও মুহূর্তে। কী ক‍রবে সরিৎ?

সরিৎ গলা খাঁকরে কথা বলতে থাকল‌। এটাই ওর একমাত্র রাস্তা। সত্যিকে ছুঁয়ে যাওয়া মিথ্যে বলা। যাতে মিথ্যেটাকে এড়ানো যায়।

—আসলে দিনকয়েক ধরে কয়েকজন ল‍্যাবের ওপর নজর রাখছিল।
—তার মানে আমাদের সন্দেহই ঠিক। শাহিদ হ‍্যাজ বিন কিডন‍্যাপড!
—কিন্তু সরিৎকে তো শাহিদ বলেছে ও যুদ্ধে গেছে?

মৌলিনাথকে বললেও অ্যাঞ্জেলার কথাটার খোঁচা ছিল সরিতের দিকেই। ওর নামের ভুল উচ্চারণগুলো পেরিয়ে প্রশ্নের শীতলতাটাই হাড়হিম করে দিচ্ছে সরিতের।

সরিৎ আবার থমকাল। পরের চালটা ওকে ভাবতেই হবে।

—হ্যাঁ। আমাকে তাই বলে গেছেন। কিন্তু এইসব কথা শুনে আমারও মনে হচ্ছে, ব‍্যাপারটা অন‍্যরকম।
—কিন্তু শাহিদ যে আনসেফ ফিল করছে, সেটা আমাকে বা স্টিভকে তুমি জানাতে পারলে না একবার?

এবার তিরটা এসেছে মৌলিনাথের দিক থেকে। সরিৎ উত্তর দেওয়ার আগেই মৌলিনাথ কথা বলল আবার‌।

—স্টিভকে এখনই জানাতে হবে! আর দেরি করা যায় না!

সর্বনাশ! প্রমাদ গুনল সরিৎ। ঘরের এককোণে দেওয়ালে টাঙানো ফোনটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে মৌলিনাথ। অ্যাঞ্জেলা ঠায় ওর দিকে তাকিয়ে। নিজের ওপর থেকে যাবতীয় নিয়ন্ত্রণ ওর চলে গেল। অসার হয়ে গেল হাত-পা। ঠান্ডা গলায় ও জিজ্ঞেস করল মৌলিনাথকে, জিনিসটা কোথায়?

হিমশীতল চাহনি সরিতের। কণ্ঠস্বরে খুনী নির্লিপ্তি। কী চায় ও? অবাক হয়ে ওর দিকে তাকাল মৌলিনাথ।

ঠিক সেসময় সরিতের কন্ডোর বাইরে একটি গাড়ি এসে দাঁড়াল সশব্দে।

সরিৎ বিপদ বুঝে একহাতে অ্যাঞ্জেলা আর একহাতে মৌলিনাথকে পাকড়াও করল‌। তারপর সোজা নেমে এল বেসমেন্টে।

চিৎকার করতে থাকল মৌলিনাথ আর অ্যাঞ্জেলা!

—কী চাও কী তুমি সরিৎ? কী করছ এটা? কারা এসেছে বাইরে?

সরিৎ একধাক্কায় ওদের বেসমেন্টে ঠেলে দিয়ে দরজা বন্ধ করার আগে চাপা স্বরে বলল— টুঁ শব্দ করবেন না আপনারা! আমি নিজে এসে দরজা নক করব, আপনারা ভেতর থেকে লক করে দিন।

বেসমেন্ট থেকে ওপরে আসতে আসতে সরিৎ চট করে ছকে নিল একটা নীলনকশা।

অ্যাঞ্জেলা ততক্ষণে চিৎকার করতে শুরু করেছে বেসমেন্ট থেকে।

—বাস্টার্ড! বের করো আমাদের এখান থেকে!
—অ্যাঞ্জেলা! কাম ডাউন! আমাদের একটাও কথা বলতে বারণ করেছে সরিৎ।
—ওই মিথ‍্যেবাদী ক্রিমিনালটার কথা তুমি এখনও বিশ্বাস করছ, ও নিশ্চয়ই শাহিদের কিডন‍্যাপটার সঙ্গে জড়িয়ে! ওর আচরণ দেখেই আমার সন্দেহ হচ্ছিল!
—শাহিদ কিডন‍্যাপড কি না, আমরা এখনও কিন্তু তা জানি না।
—এখনও সন্দেহ করছ মল্লি? সরিতের সঙ্গে কারা দেখা করতে আসতে পারে, যার জন্য আমাদের এখানে এসে লুকোতে হবে?

এবার মৌলিনাথ থমকাল। তাকাল একবার ওপরের দিকে। যেদিকে বেসমেন্টের দরজা। সরিৎ কি দরজা বন্ধ করেছে আদৌ?

মৌলিনাথ বেসমেন্টের সিঁড়ি বেয়ে উঠে দরজায় একটা হালকা চাপ দিল, দরজাটা আওয়াজ না করেই হালকা আলোর রেখা তৈরি করল। ওর ভেতর দিয়ে তাকিয়ে থাকা যেতে পারে? বাইরে থেকে বোঝা যাবে না তো?

ততক্ষণে দুটো মুশকো লোক ঘরে ঢুকে দুদিকে দাঁড়িয়েছে, আর ঠিক মাঝখান দিয়ে যে লোকটা ঢুকেছে, তাকে চেনে মৌলিনাথ!

স্টিভের অফিসে দেখেছে ওকে। সেই বেয়াড়া অসভ‍্য লোকটা, যে এলিয়েন খুঁজতে পাঠাতে চেয়েছিল। পয়সাওয়ালা বদমাইশটা‌। রডরিগেজ। রিচার্ড রডরিগেজ। ও কী করছে এখানে? সরিতের সঙ্গে ওর কী লেনদেন? তবে কি ওরা যা ভাবছে, তাই? অ্যাঞ্জেলার কথা কি তবে সত্যি?

মৌলিনাথের ভাবনায় ছেদ পড়ল সরিতের কথায়। সরিৎ চাপা গলায় যা বলছে, তা পুরোপুরি শোনা যাচ্ছে না। কিন্তু যেটুকু বোঝা যাচ্ছে, তা যথেষ্ট বিপজ্জনক।

সরিৎ চাপা গলায় বলছে, আসল মাছ জালে পড়েছে। একটু সময় দাও আমাকে। তোমরা যা চাও পেয়ে যাবে।

এবার রডরিগেজের ঘড়ঘড়ে গলায় উত্তর এল।

—ব্লাডি সোয়াইন! তোমার মতো একটা মর্কটকে বিশ্বাস করাই আমার উচিত হয়নি! তুমি বললে শাহিদ সব জানে। ও মুখ খুলছে না। নেহাৎ ও নিজেই চিঠি লিখে এসেছে, তাই বেঁচে গেছি। নইলে এটা একটা ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স কেস হত। ফেডারেল এজেন্টরা এমনিতেই আমার পিছনে লেগে। তুমি তার মধ্যে ঝুলিয়েই যাচ্ছ আমাকে।
—রডরিগেজ! আমার কথাটা শোনো, হুটোপাটি কোরো না। আমি তোমাকে ঠকাচ্ছি না। জাস্ট আমাকে একটু সময় দাও।
—কত সময়? গর্জে উঠল রডরিগেজ।
—আরে আর দুটো দিন অন্তত দাও! আমাকেও তো ব‍্যাপারটা বুঝতে হচ্ছে। ওরা ঠিক কী খুঁজে পেয়েছে না জানলে তোমার লাভটা কী হবে?
—শোনো দু-পয়সার শুয়ার! আজ রাতটুকু সময় দিচ্ছি তোমাকে। যা জানার তার মধ্যেই জানো। নইলে তোমার বদলে অন্য লোক দেখব।

চলে যাচ্ছিল রডরিগেজ। পিছু ফিরল আচমকাই। ওর রক্ত জল করা চাহনিটা রাখল সরিতের ওপর।

—শাহিদ বারবার বলছে এটা এলিয়েন সংক্রান্ত কিছু নয়। অন‍্য নিগারটাও তাই বলেছে। ওদের কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে তোমার কী হবে শুনে রাখো। তোমার জাতটা কী বলো তো? ধেড়ে ইঁদুর। নেংটির থেকে মাপে বড়, স্বভাবেও একটু হিংস্র। কিন্তু মারা আর ধরা, দুইই সোজা। আমিও ধরে রেখেছি অনেকগুলো। সত‍্যিকারের ধেড়ে ইঁদুর। কয়েকটা উন্মাদ বিজ্ঞানী এক্সপেরিমেন্টের নামে ওদের এমন ওষুধ খাইয়েছে, সবকটা খুনে হয়ে গেছে। একটা আস্ত অ্যানাকোন্ডাকে আগের দিন ছিঁড়ে খেয়েছে, অতি কষ্টে আমাজন থেকে ওটা লুকিয়ে এনেছিলাম। ওদের মুখে তোমাকে ছাড়ব। জন্মের খিদে মেটাবে। তারপর আগুনে পুড়িয়ে মারব সবকটাকে। ওই ঘরেই। ধেড়ে ইঁদুরের কপালে জানবে, মৃত্যুই লেখা আছে।

রডরিগেজ ওর মুশকো প্রহরীদের নিয়ে বেরিয়ে গেল। স্থানুবৎ দাঁড়িয়ে রইল সরিৎ। ওর চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে।

মৌলিনাথের বুক ধুকপুক করছে এদিকে। হৃদযন্ত্রের চলাচল প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে।

সরিৎ! জানে মৌলিনাথ, সেই বাঘাযতীনের গল্পটা। যে গল্পটা শাহিদ বলত বারবার। ওর নানার থেকে শুনেছিল কবে। স‍্যান ডিয়েগো থেকে অস্ত্রভর্তি জাহাজ আসছিল কলকাতায়। সেই সব অস্ত্র এসে পৌঁছলে ব্রিটিশবিরোধী লড়াইয়ের মোড় ঘুরত। কিন্তু খবরটা ফাঁস করে দিয়েছিল একজন। তার কোড নেম ছিল ‘সি’। নামের আড়ালে আসলে ছিল এক বাঙালি। বাঙালিরা বাঙালির পেছনে আল্টিমেট কাঠিটা তো দেবেই।

কিন্তু এখন? ওদের ঠিক কতটা বিপদ, ভাবছে না মৌলিনাথ। ভাবছে, ঠিক কতটা বিপদ শাহিদের? কী অবস্থায় আছে ও।

ভাবতে ভাবতে আনমনা হয়ে বেসমেন্টের দরজার পাশেই পাথরের মতো স্থির হয়ে দাঁড়িয়েছিল মৌলিনাথ। ও খেয়াল করেনি, অ্যাঞ্জেলা কখন এসে পাশে দাঁড়িয়েছে‌। দরজাটা হাট করে খুলতেই ও চমকে উঠল।

সরিৎ।

হাড়হিম চোখে চেয়ে ওদের দিকে।

—বলেছিলাম বেসমেন্টে থাকতে। সেই আগ বাড়িয়ে আড়ি পাততে গেছেন!

এর আগে অ্যাঞ্জেলার সুবিধের জন্য এরা সকলেই ইংরেজিতে কথা বলছিল। এবার কাটা কাটা বাংলায় এই কথাটা বলল সরিৎ।

—সরিৎ, তুমি…

কথা প্রায় বেরোচ্ছে না মৌলিনাথের মুখ থেকে।

—জেনে তো গেছেন সবই। ন‍্যাকামোটা করবেন না।

সরিৎ চিবিয়ে চিবিয়ে কথাটা বলেই একটু করে এগোতে থাকল ওদের দিকে। ওরাও একধাপ করে সিঁড়ি নামতে শুরু করল।

—ন‍্যাকামি কে করছে সরিৎ? তুমিই তো এতক্ষণ…

কথা শেষ হল না মৌলিনাথের। হঠাৎ আর্তনাদ করে সরিতের ওপর ঝাঁপাল অ্যাঞ্জেলা।

—লায়ার, বাস্টার্ড! আমি জানতাম, সব কলকবজা তোমারই! ঠিকই জানতাম। ইউজলেস ইডিয়ট! কী পেলে তুমি শাহিদকে কিডন‍্যাপ করিয়ে? তুমি কি উন্মাদ?

শেষ প্রশ্নটার তীব্রতার মধ্যেই সরিৎ হঠাৎই বেসমেন্টের সিঁড়ি থেকে একটা ভাঙা ফুলদানি তুলে নিয়েছে। এবং সেটা সোজা বসে গেছে অ্যাঞ্জেলার মাথায়।

অ্যাঞ্জেলার প্রশ্নের শেষটুকু মিলিয়ে গেল। ও দু ধাপ গড়িয়ে পড়ল বেসমেন্টের শেষ সিঁড়িতে। ওর মাথার পাশ দিয়ে পিলপিল করে বেরোনো আরশোলার বাহিনির মতো গড়িয়ে এল রক্ত।

মৌলিনাথ এক সেকেন্ড থমকাল। তারপর দিগ্বিদিক-জ্ঞানশূন্য হয়ে পকেট থেকে পিস্তলটা বের করে সরিতের দিকে ফিরে চালাল গুলি।

সরিৎ বিষয়টার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে গেলেও অসতর্ক হল না। দেওয়াল ঘেঁষে ও দাঁড়িয়ে পড়ল লহমায়। গুলিটা ওকে মিস করল। মুহূর্ত বিলম্ব না করে সরিৎ ঝাঁপিয়ে পড়ল মৌলিনাথের ওপর। একহাতে ওর পিস্তলটা চেপে ধরে সজোরে মারল ঝাঁকুনি। পিস্তলটা ছিটকে পড়ল বেসমেন্টের এককোণে। মৌলিনাথ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওরই অন‍্য পকেটে জারটার নাগাল পেল সরিৎ। সেটা হাতে নিয়ে অস্ত্রের জোরেই মৌলিনাথের মাথায় মারল। একবার, দুবার, তিনবার।

মৌলিনাথের মাথা থেকে বেরিয়ে এল রক্ত। সংজ্ঞা হারাল সে‌।

আর কাচের জারটা হাতে নিয়ে চতুর্থবার মৌলিনাথকে মারতে গিয়ে থমকে গেল সরিৎ।

জারের মধ্যে ওটা কী? আকাশি রঙের? এটার কথাই কি মৌলিনাথ বলছিল? এটাই পেয়েছিল শাহিদ?

রাত বাড়ছে। বেসমেন্টে অ্যাঞ্জেলা আর মৌলিনাথ বন্দি। একটার পর একটা সিগারেট খেয়ে চলেছে সরিৎ। কথা ছিল, বিষয়টার আগাপাশতলা বোঝা হয়ে গেলে অভিযান হোক বা গবেষণা, তার নেতৃত্ব দেবে সরিৎ। পয়সা দেবে রডরিগেজ। কিন্তু তাতে লাভ? সরিৎ কি আদৌ পেটেন্ট পাবে? না। পাবে কেবল একগুচ্ছ পয়সা। যদি যুগান্তকারী কোনও মহাজাগতিক সত‍্য আবিষ্কার হয়, তার কৃতিত্ব হবে রডরিগেজের, ওর মতো এক বেইমান বঙ্গসন্তানের হবে কি?

জারটা আরেকবার দেখল সরিৎ। ভেতরে ঝলমল করছে আকাশি রঙের অভ্রটা!

সরিৎ সিগারেটটা নেভাল অ্যাশট্রেতে। মনস্থির করে ফেলেছে ও।

ফোনটা তুলে নিল সরিৎ। রডরিগেজের নম্বর ডায়াল করল।

—সব কথা শাহিদের ল‍্যাব অ্যাসিস্ট‍্যান্ট জানে। ও এখন আমার জিম্মায়। সঙ্গে ওর গার্লফ্রেন্ডও। ইউ নো হোয়াট টু ডু।
—আর ফর্মুলা?

রডরিগেজের ঘড়ঘড়ে প্রশ্ন।

জারটার দিকে তাকাল সরিৎ। আবারও।

—পাইনি।

নির্দ্বিধায় বলল সে।

ফোনটা রেখে দিল সরিৎ। অনেক কাজ এখন। গোছগাছ করতে হবে। আমেরিকা ছাড়তে হবে কালই‌।

 

[ক্রমশ]