Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

ঢাকাতে— শহর থেকে শহরে

নীলাঞ্জন হাজরা

 

পূর্ব প্রকাশিতের পর

দ্বিতীয় পর্ব

‘‘মুসকুরাতে রহো ভাই! দিলমে যো ভি হো চেহরা মুসকুরানা চাহিয়ে!’’

চোস্ত উর্দুর এই বাক্যের চাবুকই ঢাকা সফরে আমার হাসি-আনন্দের ঘোর প্রথম ভেঙে দিল। হাসতে থাকো ভাই, হৃদয়ে যাই হোক না কেন মুখে হাসি চাই। ক্যামেরা তাগ করে একটা জুতসই ফ্রেম ধরার কসরৎ করছি, সহসা কথাগুলো উড়ে এল পিছন থেকে। পিছন ফিরেই দেখি আমার দিকে তাকিয়ে একগাল হাসতে হাসতে রাস্তার ভিড়ে এগিয়ে গেলেন এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক, পরণে ফুলহাতা জামা, ট্রাউজার্স, দাড়ি-গোঁফ পরিষ্কার করে কামান, ঢেউ খেলানো লম্বা চুল। ঘিঞ্জি রাস্তা। এমন রাস্তায় আমি এন্তার হেঁটেছি কলকাতাতেই— রাজাবাজার, খিদিরপুর, মোমিনপুর, চিৎপুরের একাংশে এমন বস্তির গলি অজস্র। কলকাতার সাধারণ লব্জে— মুসলমানপাড়া। যেখানে মূলত উর্দুভাষীদের বাস। ঢাকায় এ পাড়ার নাম মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্প। একদিন প্রতিদিনের কলকল্লোলিত ঢাকা শহরের মধ্যে গভীরহৃদয়ক্ষতর এক শহর। এ পাড়ায় কেউ বেড়াতে আসে না।

কিন্তু এ পাড়ায় না এসে আমার হৃদয়ের নিস্তার ছিল না। এ পাড়ায় আমার যাত্রা শুরু হয়েছিল কলকাতার বিখ্যাত চিনাপাড়া ট্যাংরার ততোধিক বিখ্যাত চিনা রেস্তোরাঁ কিম লিং-এ মদ্যপদের তারস্বরে চেঁচামেচির এক ভরাসন্ধ্যা থেকে, ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। আমার মুখোমুখি তখন যাঁকে আমি মনে করি ফয়েজ়-উত্তর পাকিস্তানের শ্রেষ্ঠ উর্দু কবি সেই অফজ়াল আহমদ সৈয়দ। সেই সন্ধ্যায় আমাদের দীর্ঘ হৃদয় বিনিময়ের মধ্যেই উঠেছিল ঢাকার কথা। আমিই তুলেছিলাম তাঁর এক আশ্চর্য কবিতার জের টেনে—

১৬৩ নম্বর পাতার একটি ছবি

কোনও অচেনা নদীর পাড়ে বসে
নিজের শহরের কথা মনে করার
কোনও প্রয়োজন মেয়েটির নেই

সে মহাখালী কলোনিতেই বেশ খুশি
যার উল্লেখ করা হয়
কোপেনহেগনে দেওয়া এক বক্তৃতায়

সে দিব্যি সাঁতরে চলে যেতে পারে
সেই পোশাক তৈরির কারখানাটায়
ম্যাট্রিক পাস করার পর থেকেই
যেখানে তার চাকরি
চাঁদা তুলে কেনা একটা ভিসিআর-এ
সে সকলের সঙ্গে বসে সপ্তাহে তিনটে সিনেমা দ্যাখে
আর মাসের প্রথম দিন কিনে আনে
একটা গোটা কালবৌস মাছ

তার কোনও বুড়ো বাপ
বাউন্ডুলে ভাই
বা অজানা শত্রু নেই

সে যে সারা জীবন অবিবাহিত থাকবে
তা মোটেই নয়
আছে এক যুবক
স্কুলে পড়ায়
নিউ ইয়র্কে ট্যাক্সি চালানো
কিংবা করাচিতে বাবুর্চি হওয়ার কোনও সাধ যার নেই

বাঁশের দেয়াল
আর টিনের ঘরে
সে দিব্যি খুশি

পাড়ার থিয়েটারে যখন
কোনও ভূমিকাতেই মেয়েটিকে নেওয়া হল না
ওর মোটেই খুব আফশোস হয়নি

সেদিনই ওকে
ওয়াটার সাপ্লাই ডিপার্টমেন্টের সামনে ধরনায় বসা
মহিলাদের প্রতিনিধি দলে রাখা হল

খুশি থাকতে কেউ তাকে শেখায়নি
এটা তার স্বাভাবিকভাবেই আসে
সে জানে না দারিদ্র্যের রেখা
তার মুখের কোন্‌খান দিয়ে গেছে

তার দরিদ্র দেশ
দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে

সে দুনিয়ার সব্বাইকার থেকে বেশি স্বাধীন
এবং বেশি খুশি

তাঁর এই কবিতা উর্দুতে লেখা। বাংলায় তরজমা করার সময় আমাকে গভীরে ঝাঁকিয়ে দিয়ে গিয়েছিল। পাকিস্তানি খানসেনার যে বর্বরতা সে সময়ের পূর্বপাকিস্তানকে, ঢাকা শহরকে তো বটেই, রক্তে ভাসিয়ে দিয়েছিল তার প্রত্যক্ষ সাক্ষী অফজ়াল সাহেব। এটা আমার জানা ছিল না, সেই সন্ধ্যার আগে।

তাই নাকি? হ্যাঁ, ১৯৭১-এ আমি ঢাকারই মানুষ ছিলাম। তখন তাঁর বয়স ২৫। ১৯৪৬-এ জন্ম তাঁর, অবিভক্ত ভারতের উত্তরপ্রদেশের গাজ়িপুরে। ১৯৪৭-এর দেশভাগের ভয়াবহ দিনে পাকিস্তানমুখী কাতারে কাতারে মুসলমান পরিবারের মধ্যে ছিল তাঁর পরিবারও। তবে পশ্চিম পাকিস্তানে নয়, তাঁরা এসে উঠেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকায়।

কাজেই আশৈশব ঢাকাকেই নিজের শহর বলে জেনে এসেছিলেন অফজ়াল। তাঁর সঙ্গে আমার প্রায় দুই দশকের পরিচয়ে জেনেছি, কী ভীষণ মিতবাক তিনি। কার্যত কথাই বলেন না। আবেগমথিত কথোপকথন তো দূর অস্ত্‌। কিম লিং-এর সেই সন্ধ্যায় ব্যতিক্রম ঘটেছিল। বকবক করেননি মোটেই। কিন্তু ভাঙা ভাঙা বাক্যে গভীর আবেগে আমাকে বলেছিলেন— আমি জানতে চাই, কেন আমাকে বাংলা শেখানো হয়নি। আমি জানতে চাই, কেন ছোটবেলায় আমাকে বাঙালিদের সঙ্গে মিশতেই দেওয়া হত না। কেন বাঙালিদের থেকে আমি আলাদা বড় হলাম? আর শুনিয়েছিলেন এক সাংঘাতিক কাহিনি। ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়েছে। বাসে করে ফিরছেন অফজ়াল সাহেব। সহসা তাঁর বাস ঘিরে ধরে সশস্ত্র একদল যুবক। বাসের দরজা বন্ধ করে দেয় কন্ডাকটর। বচসা, চিৎকার চেঁচামেচি। এরই মধ্যে তাঁকেই দেখিয়ে বলা হয়, বাস থেকে যেন তাঁকে নামিয়ে দেওয়া হয়। সেই পরিস্থিতি থেকে কোনওক্রমে পরিত্রাণ পেয়ে বাড়ি পৌঁছে এক বস্ত্রে পরিবার সহ ঢাকা ছাড়েন অফজ়াল। সেখান থেকে কলকাতা-কাঠমান্ডু হয়ে শেষে করাচি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার নিঃশর্ত সমর্থক আমি— সেদিনও ছিলাম, আজও আছি— বলেছিলেন কবি। কিন্তু আর তাঁর ঢাকা ফেরা হয়নি।

আমি গুরুবাদী মানুষ নই। কিন্তু যদি কোনও একজন কবি আমার মনে কবিতার সংজ্ঞাটাই বদলে দিয়ে থাকেন তিনি অফজ়াল। ঢাকা পৌঁছনোর কয়েকদিন আগে হোয়াট্‌সঅ্যাপ করলাম— ঢাকায় কোন পাড়ায় থাকতেন আপনি? মোহাম্মদপুর, মীরপুর, পল্লবী— উত্তর এল। ঢাকা-সফরসূচিতে জায়গা করে নিয়েছিল আমার প্রিয়তম কবি, প্রিয়তম মানুষদের একজন, অফজ়াল সাহেবের কৈশোর-শৈশবের মোহামম্মদপুর। পঞ্চাশ বছর আগে এই মোহাম্মদপুরের নাগরিক চেহারা কেমন ছিল আমি জানি না। কিন্তু ইতিহাসের পাতা উলটালেই দেখা যাবে, হরেক কিসিমের জাতীয়তাবাদের ওপর এক বিরাট প্রশ্নচিহ্ন হয়ে পড়ে আছে ঢাকা শহরের মীরপুর মোহাম্মদপুরের পল্লবীর মতো পাড়াগুলি। এখানে না এলে ইতিহাসের সেই গরমিল প্রত্যক্ষ করা হয় না।

১৯৪৭ সালে যখন ইতিহাসের ভারে আর ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ-নির্ভর দ্বিজাতিতত্ত্বের জিগিরে তৈরি হয়ে গেল ‘মুসলমানদের রাষ্ট্র’ পাকিস্তান, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে এমন আনুমানিক ১০ লক্ষ মুসলমান ভারত ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, বা চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন তদানীন্তন পূর্বপাকিস্তানে যাঁদের মাতৃভাষা বাংলা নয়, উর্দু। কোনও এক অজ্ঞাত কারণে বাংলাদেশের বাঙালিদের কাছে এঁরা সক্কলেই ‘বিহারি’! (কথিত আছে, ১৮৭০ সালে ব্রিটিশ সরকার রেল কোম্পানির কাজের জন্য ৭০০০ বিহারিকে প্রথম পূর্ববঙ্গে নিয়ে আসেন। সেই থেকেই নাকি অবাঙালি মুসলমানরা এখানে বিহারি বলে চিহ্নিত হয়ে থাকেন)।

ছিন্নমূল এই মানুষেরা যখন সবে ঢাকা ও পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য অঞ্চলের নানা শহরে একটু থিতু হতে শুরু করেছেন, যখন তাঁদের বেশ একটু দাপটও তৈরি হচ্ছে ভাষাগতভাবে পাকিস্তানের মূল শাসকদের কাছের বেরাদর হিসেবে, তখনই তাঁরা আবিষ্কার করলেন ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের দেওয়ালে গভীর ফাটল ধরিয়েছে ভাষাগত জাতীয়তাবাদ। উর্দুই হবে পাকিস্তানের প্রথম ও প্রধান ভাষা, পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের এই ফরমানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন তাঁদের নতুন জীবনের নয়া পড়শিরা একজোট হয়ে।

বাঙালি জাতীয়তাবাদের সেই ঢেউ যখন প্রবল জোয়ারে পরিণত হয়ে পশ্চিমি শাসকদের বর্বরোচিত সেনা হামলার রক্তস্রোত প্রতিহত করে অকুতোভয় সশস্ত্র যুদ্ধে বাঙালির এক নতুন দেশের জন্ম দিল, সেই লাখ দশেক উর্দুভাষী মানুষ ফের মুসলমান-প্রধান দেশেই সংখ্যালঘু হয়ে পড়লেন। ইতিহাসের ভয়াবহ নানা সঙ্কটের মুহূর্তে বন্দি কুশীলবদের চিন্তা-ভাবনা, আবেগ, সিদ্ধান্তের বিচার বহু দশক পরে পিছন ফিরে তাকিয়ে করতে যাওয়া ভারী বিপজ্জনক। বিপদ বাড়ে আমার মতো কোনও বিদেশি তা করে ফেলতে গেলে। একথা মনে করার যেমন কোনও কারণ নেই যে, লাহোর-করাচির গোপন রুদ্ধদ্বার কক্ষে নেওয়া নানা সিদ্ধান্ত নির্ধারণ এমনকী তা প্রভাবিত করারও কোনও উপায় এই উর্দুভাষী মানুষগুলির ছিল, তেমনই শাক দিয়ে এ মাছও ঢাকা যাবে না যে, তাঁদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ পশ্চিমি শাসকদের বর্বরতার বিরুদ্ধে তাঁদের চারপাশের সকাল-সন্ধ্যা ওঠাবসার সঙ্গী বাঙালিদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একজোট হয়ে না দাঁড়িয়ে সেই বর্বর উগ্র, প্রায়শই হিংসাত্মক সমর্থনে জোট বেঁধেছিলেন। ভাষাগত জাতীয়তাবাদ একই ধর্মের মানুষকে দ্বিধাবিভক্ত করে যুযুধান দুই শিবিরে মুখোমুখি করল।

১৯৭১-এর ডিসেম্বরে ইতিহাসের চাকা ঘুরে গেল। পশ্চিমিরা পশ্চিমে পালালেন। ক্রুদ্ধ, রক্তস্নাত বাঙালি জনসমুদ্রের মাঝে রয়ে গেল মোহাম্মদপুর, পল্লবী, মীরপুর, আরও অনেক উর্দুভাষী-প্রধান অঞ্চল। মাত্র আড়াই দশক আগে তাঁরা ধর্মীয় আলিঙ্গনে বদ্ধ হয়েছিলেন। স্বৈরাচারী শাসকের নির্মমতার বৃহত্তর প্রেক্ষিতে বাঙালি ও ‘বিহারি’-রা জড়িয়ে পড়লেন ভয়াবহ দাঙ্গায়।

নবগঠিত বাঙালি বাংলাদেশ উর্দুভাষাভাষীদের নাগরিকত্বের অধিকার দিতে অস্বীকার করল। তাঁদের আর কোনও রাষ্ট্রীয় পরিচয় রইল না, যার আসল অর্থ তাঁদের আর কোনও কিছুর ওপর কোনও আইনি অধিকারই রইল না। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতোই, রাষ্ট্রপুঞ্জের শরণার্থী কমিশনের সংজ্ঞায় এঁদের শরণার্থী বলাও সম্ভব হল না। দেশের ১৩টি অঞ্চলে ৭০টিরও বেশি শিবিরে এঁরা ‘শরণার্থীদের মতো’ বাস করতে লাগলেন।

শরণার্থী শিবিরে কেমন থাকেন মানুষেরা? একটি ঘরে থাকেন ১০ জন। ৯০টি পরিবারকে ব্যবহার করতে হয় একটি শৌচালয়। পরিসংখ্যানের সামান্য তারতম্য হতে পারে কিন্তু বোধ করি বিশ্বের— অন্তত উন্নয়নশীল বিশ্বের— যে কোনও শরণার্থী শিবিরের এ ছবি এক। মোহাম্মদপুরে বা বাংলাদেশের অন্যত্র এই সংখ্যালঘু নিজদেশে দেশহীন মানুষগুলির কপালে ইতিহাসের জেরে জুটেছে চারপাশের সাধারণ সমাজের উপর্যুপরি ঘৃণা।

এখন তাঁদের সংখ্যা কম-বেশি পাঁচ লক্ষ। সৌভাগ্য, বাংলাদেশের সচল গণতান্ত্রিক নাগরিক সমাজের এক উল্লেখযোগ্য অংশ আর এই ঘৃণার শিকলে আবদ্ধ থাকতে রাজি নন। তাঁরা পথে নেমেছেন। যেমন আমার নব্যবন্ধু জাকির সাহেব— নাগরিক উদ্যোগ নামের একটি এনজিও-র কর্ণধার। এমনতর মানুষদের উদ্যোগেই চাকা ফের ঘুরতে শুরু করেছে, ধীরগতিতে হলেও। বাংলাদেশের শীর্ষ আদালত ২০০৩ ও ২০০৮ সালের দুটি পৃথক রায়ে ১৯৭১-এর আগে বা পরে জন্মানো উর্দুভাষাভাষী মানুষদের বাংলাদেশের নাগরিকত্বের আইনি স্বীকৃতি সুনিশ্চিত করেছেন। কিন্তু অনতিবিলম্বেই ডিমক্লিসের তরবারির মতো হাজির হয়েছে ২০১৬-র খসড়া নাগরিকত্ব বিল, যাতে শিলমোহর দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রিসভা। এ বিলের নানা ধারায় রয়েছে আদালতের রায় খারিজের অধিকার, আছে পিতামহ বা পিতামহীর ‘দেশদ্রোহিতা’-র অপরাধে নবজাত শিশুর নাগরিকত্বের প্রশ্ন তোলার অধিকার। দারুণ আশার কথা এই যে, এ বিলকেও নাগরিক সমাজের জোরালো প্রতিবাদ কার্যত হিমঘরে পাঠিয়ে দিতে পেরেছে।

আইনি অধিকার অনেকটা আদায় করা গিয়েছে বটে, কিন্তু শিক্ষা-স্বাস্থ্য-বাসস্থানের নিরিখে এ মানুষগুলি এখনও শরণার্থী শিবিরের নরকের বাসিন্দা। সর্বোপরি, আজও তাঁদের ঘিরে আছে ঘৃণার পাঁচিল— হালায় পাকিস্তানির বাচ্চা। জনমনের বাঁক বদলানো সহজকথা নয়। এ হেন মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে বাঙালির ‘সাইট সিয়িং’-এর কিছু থাকতে পারে না। তবু হাজির হয়েছিলাম জাকিরসাহেবের সৌজন্যে, তাঁর সহকর্মী এ বি এম আনিসুজ্জমান সাহেবের সঙ্গে। যে কোনও গণতন্ত্রের সাফল্যের অন্যতম মানদণ্ড সে দেশে সংখ্যালঘুরা কেমন আছেন। উন্নয়নশীল এশিয়ার যেসব দেশে যাওয়ার সুযোগ আমার হয়েছে— পাকিস্তান, ইরান, নেপাল, তুর্কি— মায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের শিখর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইওরোপের অস্ট্রিয়া, ব্রিটেন, ইতালি, হাঙ্গেরি, এবং আমার নিজের দেশ ভারত, কোথাওই সংখ্যালঘুরা একেবারে দুধে-ভাতে রয়েছেন এমন প্রত্যক্ষ করিনি। বাংলাদেশেও না। কিন্তু ঢাকায় প্রতিবাদ আছে, আর সে প্রতিবাদ স্পষ্টতই কিছু অংশে সফল। আমার ছোট্ট ঢাকা-সফরের নানা দেখার মধ্যে এ দেখাটাও, জাকিরসাহেব-আনিসসাহেবের মতো মানুষের সঙ্গে পরিচয়টাও, কোনও অংশে কম রঙিন, কম আকর্ষণীয় মনে হয়নি আমার। সাইট সিয়িং-এর পরোয়া করি না।

চুপ করে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম মানুষগুলিকে। ঘৃণিত, উপেক্ষিত, উর্দুভাষী, ‘ক্যাম্পের’ বাসিন্দাদের। স্রেফ দেখছিলাম। কেউ পা ছড়িয়ে বুক চাপড়ে কাঁদতে বসেননি। সরু সরু রাস্তা। রিকশ আর ভ্যানগাড়ি আর মানুষের ঠেলাঠেলি। দুধারে হরেক কিসিমের ঘুপচি ঘুপচি দোকানের সারি। পোশাকের দোকান, দর্জি, মুদি, আয়না-ঠাসা একরত্তি সেলুন, মাংসের দোকান— বড় বড় চাঙড়ে গরু কেটে টাঙানো আছে। রাস্তাকে আরও সঙ্কীর্ণ করে দিয়ে জায়গায় জায়গায় পশরা সাজিয়ে বসেছেন সবজি আর ফলওয়ালারা। জীবন চলেছে জোর কদমে। ছেলে-মেয়ে-বুড়ো-বুড়ি-জোয়ান-প্রৌঢ়— গমগমে সড়ক। হিজাব ও হিজাববিহীন নানা বয়সী মহিলাদের থেকেও মজা লাগল পুরুষদের দাড়ির বাহার দেখে— অপূর্ব প্রসাধিত শ্মশ্রু। শুভ্র, নিকষ, নুন-গোলমরিচ, মেহেন্দি-রঙিন। ছাঁটেও বাহার। কারও মৌলভিসুলভ, কারও বাদশাহি মেজাজের, কারও বা চটুল বাবুয়ানির। সঙ্গে মানানসই টুপি। এ প্রসাধনে অর্থনৈতিক বরফট্টাইয়ের ঝাঁঝ নেই, সাবলীল আত্মমর্যাদার রঙিন ছবি আছে।

এইসব দেখতে দেখতেই ভাবছিলাম, সব দেশেই সংখ্যালঘুদের এমন একত্রে থাকার প্রবণতা কেন? সে কি সংখ্যাগুরুর ভীতি? নাকি ভিন্ন সংস্কৃতিতে মিশে যাওয়ার প্রতি এক অন্তর্গত স্বাভাবিক তীব্র অনীহা? আবার এও ভাবছিলাম যে, এই জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দাদের মতো মানুষরা যেভাবে সংখ্যাগুরুর সান্নিধ্যে বসবাসের বাসনায় দূর-দূরান্ত থেকে পাড়ি দিয়ে এসে ফের সংখ্যালঘু হয়ে পড়লেন, তাও ইতিহাসের এক বিচিত্র বাঁক।

কিন্তু সকলেই যে এমন মানসিক দেওয়াল তুলে পৃথক থেকেছেন তাও বোধকরি নয়। সে ইঙ্গিতও— প্রমাণ নয় যদিও, ইঙ্গিত— মিলেছিল এই ক্যাম্পের পরিবেশ থেকে মনে-ও-পরিবেশে লক্ষ যোজন দূরে এক দুরন্ত দোকানে।

আগেই বলেছি, আমি তন্নিষ্ঠ পর্যটক। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কোথায় যাব, কী চড়ে যাব, কী দেখব, কী করব, কোখায় খাব, কী খাব, এই সব— গুগ্‌ল মানচিত্রের প্রিন্টআউট সহ আমার সঙ্গের ঝোলাতে থাকে। আমার সে হেন সফরসূচিতে নিচে দাগ দিয়ে লেখা ছিল এই দোকানটার নাম। ‘‘আজ বিকেলে রুমী ক্রিকেট খেলা দেখে তার বন্ধুদের নিয়ে আসবে হ্যামবার্গার খাওয়ানোর জন্য। গোসল সেরে বারোটার দিকে বেরোলাম জিন্না এভিনিউয়ের পূর্ণিমা স্ন্যাকবার থেকে ডিনার-রোল কিনে আনার জন্য।’’ এভাবেই শুরু হচ্ছে জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’, যে যুগান্তকারী বইয়ের পাতা থেকেই আমার এই ব্যক্তিগত বাংলাদেশ সফরের উড়ান।

ইতিহাসের ফেরে এই জিন্না এভিনিউ আজ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। পূর্ণিমা আমায় দেখতেই হবে, আমার এই নাছোড় অনুরোধে পশ্চিম ঢাকার গমগমে গুলিস্তানে সে রাস্তারই এক মোড়ে ভিড়-ভাড়াক্কার প্রথম সন্ধ্যায় আমায় হাজির করলেন জাকির সাহেব। সর্বনাশ— লোকে লোকারণ্য একরত্তি দোকানের ওপরের সাইনবোর্ডে যে জ্বলজ্বল করছে ‘নিউ পূর্ণিমা স্ন্যাকবার’। আসল দোকান তাহলে গায়েব? আর একটু ঠাহর করতেই ভুল ভাঙল। দেখি দোকানের ডানদিকে ভাজা হচ্ছে জিলিপি, যার মুচমুচে গন্ধে চারপাশ ম ম। আর তারই পাশে লেখা আছে, ‘পূর্ণিমা স্ন্যাকবার’। জানলাম ১৯৬২-তে যখন এই স্ন্যাকবার খোলা হয় তখন এখানেই একটা অন্য দোকান ছিল ‘পূর্ণিমা’ নামে, কাজেই গোড়াতেই এ দোকানের নামে ‘নিউ’ যোগ করে দেওয়া হয়েছিল। জানালেন দোকানের মালিক শেখ মোইনউদ্দিন।

পুরান ঢাকার ‘ঐতিহ্যবাহী বাকরখানি’ ছাড়াও এ দোকানে মেলে ‘না হলেও মাশাল্লাহ বিশ আইটেম’— ‘সিংগারা কলিজা’, ‘সিংগারা আলু’, ‘সিংগারা ভেজিটেবল’, ‘ডিমচপ’, ‘ডিমচপ বনসহ’, ‘ঝাল পেটিস’, ‘চিকেন সমুচা’, ‘ভেজিটেবল সমুচা’, ‘পনিরের সনুচা’, ‘চিকেন বার্গার’, ‘শামি কাবাব বার্গার’, ইত্যাদি আর ‘খাঁটি দুধের লাচ্চি’।

–আপনাদের সিগনেচার আইটেম কী?
–সব থেকে বিখ্যাত, জিলাবি। আর কলিজা সিংগারা।

সকৌতুকে লক্ষ করলাম তার পরে নিজে থেকেই যোগ করে দিলেন, ‘খাসির কলিজা। গরুর কলিজা নয়!’ আমার ভাষাই আমার একটি পরিচিতি ফাঁস করে দিয়েছে— আমি পশ্চিমবঙ্গীয় ইন্ডিয়ান। আর তার থেকেই অবশ্যম্ভাবী স্টিরিওটাইপ— আমি নির্ঘাৎ হিন্দু, অতএব গোমাংস হারাম। এ অভিজ্ঞতা আমার প্রথম নয়। ২০১৪ সালে লাহোরের বিশ্ববিখ্যাত ফুড স্ট্রিটে আমাদের ১৩ ভারতীয়কে ঘটা করে খাওয়াতে নিয়ে গিয়ে পাকিস্তানি সরকার আমাদের যে প্রহসনের বলি করে ফেলেছিলেন প্রায়, তাকে বলা যায় ‘মাদার অফ অল স্টিরিওটাইপ্‌স’। কিন্তু সে গপ্পো অন্যত্র বলেছি (মুসাফির এ মন: সফরনামা সঙ্কলন। প্রকাশক সৃষ্টিসুখ)।

কিন্তু এখানে কলিজা সিংগারা খাওয়া হল না, কারণ তা এর মধ্যেই শেষ। কাজেই একটি ভেজিটেবল সামুচা আর একটি জিলিপি চাইলাম। আর লাচ্চি। সামুচাটির স্বাদ বাড়িতে চিঠি লিখে জানানোর মতো কিছু নয়। লস্যি, থুড়ি লাচ্চিটি দিব্যি, কিন্তু আর এক বন্ধু রশিদ রবিনের উস্কানিতে এর থেকে ঢের ভাল লস্যি খেয়েছি পুরান ঢাকার বিউটি লাচ্চি নামের শরবৎ আর লাচ্চির দোকানে। কামাল করল জিলাবি। কয়েক বছর আগে এপার বাংলার সেরা হালুইকারদের অন্যতম কৃষ্ণনগরের শ্রীবিজয়কুমার মোদক উৎকৃষ্ট ল্যাংচা কেমন হওয়া উচিত তার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছিলেন— আপনি মুচমুচে ল্যাংচায় কামড় দেবেন আর পিচিক করে খানিকটা রস আপনার পাঞ্জাবিতে ছিটকে পড়বে, তবেই তা খাঁটি ল্যাংচা। নিউ পূর্ণিমা স্ন্যাকবারের জিলাবি ঠিক তাই। সাধে কী বঙ্গবন্ধু স্বয়ং এ পথে যাতায়াতের সময় সুযোগ পেলেই গাড়ি দাঁড় করিয়ে সের খানেক তুলে নিতেন! এ জিলাবি রূপে ও রসে পশ্চিমবঙ্গে আমি যে জিলিপি খেয়েছি তার থেকে বেশ আলাদা— শ্যামবর্ণা ইনি অনেক বেশি স্বাস্থ্যবতী, বাহিরের শুষ্কতার অন্তরালে গভীরে রসিক!

নবম শতকের দুনিয়াকে তাক লাগানো শহর বাগদাদের হালুইকারদের মহাসৃষ্টি ‘জ়ুলাবিয়া’ রসনার টানে রসের স্রোতে ভাসতে ভাসতে ভারতীয় উপমহাদেশের মুঘলাই উত্তরাঞ্চলে ‘জলেবি’ হয়ে পশ্চিমবঙ্গীয় বাঙালির ‘জিলিপি’ হয়ে ওঠার সফর আমি করে দেখেছি ইতিহাসের পাতে। সে লেখায় ঢাকার এমন ‘জিলাবি’-র স্রষ্টাকে নিয়ে কোনও পৃথক অনুচ্ছেদও থাকবে না তা কি হয়? কাজেই আমার কুতূহলী ইতিহাসকার চরিত্র হাজির হল। ওই ভিড়ের প্রবল চেঁচামেচি আর নিমেষে নিমেষে খদ্দেরের বিলের হিসেব সামলাতে সামলাতেই হাসিমুখে আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেন মোইনউদ্দিনসাহেব। সে কথোপকথনের এক টুকরো হুবহু তুলে দিলাম—

—এই দোকান আপনারই?
—আমার বাবাই এর প্রতিষ্ঠাতা।
—বাবার নাম কী ছিল?
—শেখ আমীনউদ্দিন।
—উনি এসেছিলেন?
—উনি এসেছিলেন ইউপি থেকে, উত্তরপ্রদেশ। ওনার বাবা একজন ট্রেনি ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যখন ইন্ডিয়া পাকিস্তান বাংলাদেশ এক ছিল ওই সময় ব্রিটিশ গভার্নমেন্ট ওনাকে বাংলাদেশে…
—উত্তরপ্রদেশের কোথা থেকে?
—বাস বরেলি।
—১৯৬২ সাল নাগাদ এসেছিলেন?
—১৯৬২, ইয়েস।
—উনি বাঙালি ছিলেন?
—উনি তো… ইন্ডিয়ার থেকে আসছিলেন।
—হ্যাঁ, কিন্তু ভাষাভাষী কী ছিলেন?
—ভাষা, বাঙ্গালি। দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে এখন তো আমরাই বাঙালি।
—না, বুঝতে পেরেছি…
—স্বাধীন দেশের মানুষ স্বাধীন…
—না, আপনার বাবার কথা বলছি?
—ওঁরা ইন্ডিয়া থেকে আসছিলেন, উনি বাই বর্ন (যৎশ্রুত) ইন্ডিয়ান।
—মানে ইউপিআইট?
—ইউপি। উত্তরপ্রদেশ।
—আচ্ছা, আচ্ছা।

সাক্ষাৎকার নেওয়ার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আমাকে ইঙ্গিত দিচ্ছিল এ নিয়ে আর খোঁচানো একদম নয়, প্রসঙ্গ পালটে ফেলেছিলাম। ‘দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে এখন তো আমরাই বাঙালি’, এটাই তো শেষ কথা।

মহম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম, এই শেষ সত্যটা এখানে কায়-মনো-বাক্যে কবে প্রতিষ্ঠিত হবে? ক্যাম্পের ঘিঞ্জি রাস্তায় আর একটু এগোতেই প্রত্যাশিত গন্ধটা নাকে এল— সহিদ বিরিয়ানি হাউজ। ছোট্ট দোকানের মুখে এক বিপুল ডেকচি থেকে থালায় করে হালকা হলদের ছিটে দেওয়া সফেদ বিরিয়ানি তুলে মহাব্যবস্ততায় লাল শালুমোড়া পেল্লায় পেল্লায় হাঁড়িতে পাচার করা হচ্ছে, যার নিচে ধিমে আঁচের চুলা। স্পষ্টতই দূরের রসুইঘরে পাক হয়ে এবার দোকানে হাজির সারাদিন গরমা-গরম পরিবেশনের জন্য। সে কী খুশবু!

তবে মোহাম্মদপুরে সেদিনের সেরা নাটকটি দেখলাম আর কিছু এগিয়ে। রাস্তার ধারে একটা বড় প্লাস্টিকের গামলায় বিরিয়ানি নিয়ে বসেছেন এক মহিলা! প্লাস্টিকের বাটিতে চামচে দিয়ে পরিবেশন। আর ঠিক তার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়েই শুরু হল টুকটুকে-গোলাপি-হিজাবে-দেহ-ঢাকা এক শিশুর বায়না। তার মা কিছুতেই কিনে দেবেন না, আর সে খাবেই। চেঁচামেচি, কান্নাকাটি নয়— সে নেগোসিয়েশন বর্ণনা করা অসম্ভব। চোস্ত উর্দুতে আর জেদি শিশুর শরীরী ভাষায়। অবশেষে জয়ের মুহূর্তের মুখে-চামচে-পোরা পরম পরিতৃপ্তির হাসিটুকু ক্যামেরাবন্দি করতে পেরেছিলাম বটে, কিন্তু ক্যামেরা দেখেই চট করে লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় ছবিটা ঠিক জুতের হল না। না হোক। এ হাসির ‘‘ভাষা এমন কথা বলে, বোঝে যে সকলে, উঁচা-নীচা-ছোট-বড় সমান’’! এ হাসির জন্য আমি চাঁদে পাড়ি দিতে তৈয়ার।

সেই গমগমে পাড়া থেকে চলে আসার সময় এও মনে হল যে, তাকে কলকাতার খিদিরপুর-রাজাবাজার-মোমিনপুর-চিৎপুরের মতো পাড়ার সঙ্গে তুলনা করলাম বটে কিন্তু একটা তফাত আমার চোখ এড়ায়নি— একটি দোকানের একটিও সাইনবোর্ড, নোংরা দেওয়ালে সাঁটা হরেক কিসিমের ছেঁড়া, আধছেঁড়া, আস্ত পোস্টারের একটিও উর্দুতে লেখা নয়। সব বাংলা। ক্বচিৎ একটা-দুটো ইংরেজি। এমনকী চোখে পড়ল একটা আরবি পোস্টারও। কেন যেন মনে পড়ল, এ পর্বের এক্কেবারে গোড়ায় উল্লিখিত জনৈক উর্দুভাষীর হাসির কানায় কানায় ভরা নয়নের জলে হাত ডুবিয়ে তুলে আনা ওই বাক্যটা— ‘‘মুসকুরাতে রহো ভাই! দিলমে যো ভি হো চেহরা মুসকুরানা চাহিয়ে!’’ আর তারই জেরে মনে পড়ল কিংবদন্তি মেহদি হাসানের গাওয়া, পাকিস্তানি গীতিকার ফরহাত শেহজ়াদ রচিত এক গজ়লের একটা শে’র— ‘‘রিস্‌ রাহা হো খুন দিল-সে, লব মগর মুসকুরাতে রহে। কর গয়া বরবাদ মুঝকো ইয়ে হুনর ক্যাহনা উসে।।” হৃদয় থেকে টপুয়িয়েই চলেছে রক্ত, তবু হেসে চলেছে ঠোঁট। এ শিল্প আমায় ধ্বংস করে গেল, কথাটা ওকে বোলো।।

তবু এ তো ঢাকা— তাই যেন আরও বেশি করে মনে পড়ল গজ়লটার ‘মাতলা’ বা গোড়ার শে’রটা— ‘‘কোঁপলে ফির ফুট আয়ি শাখ পর ক্যাহনা উসে। উও না সামঝা হ্যায়, না সামঝে গা, মগর ক্যাহনা উসে।।” শাখায় শাখায় ফের ফুটেছে কচি পাতা, কথাটা ওকে বোলো। বোঝেনি ও, বুঝবেও না কোনওদিন, তবু ওকে বোলো।।’

 

[ক্রমশ…]

___

*এই লেখার সঙ্গের সব ছবি নীলাঞ্জন হাজরার তোলা