Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

Girija Devi: A goddess of all things

Hidayat Husain-Khan

(লেখাটি বাংলায় পড়ার জন্য এই লেখার শেষে দেখুন)

A direct descendant and proponent of one of the most treasured lineages of Hindustani classical music and the youngest son of the legendary Ustad Vilayat Khan, Hidayat Husain Khan harbours a rare, creative brilliance that effortlessly takes him across all genres and nuances of music. Hidayat travels effortlessly between the very classical to the very colloquial, from playing the intricate Etawa Gharana to performing with the Rolling Stones. An exquisite sitar player and vocalist well-versed in the ‘Gayaki ang’, Hidayat has lent his versatility in several film score compositions and has performed in numerous classical and fusion concerts, independently as well as in collaboration with illustrious musical names such as, Ndugu Chancler, Ronnie Woods, Alicia Keys, Usher, Zakir Hussain, Pete Townshend, Will.I.Am, Jay Z and Darryl Jones. He has enthralled audiences in major performances in Europe, Japan, USA, Malaysia, Canada, Singapore, and India. Hidayat has performed in prestigious venues such as Royal Albert Hall in London, Kennedy Centre in Washington D.C, Carnegie Hall and Alice Tully Hall in New York.

 

Losing someone near and dear always pains us. Appaji was very close to our family. She called my abba, the Late Ustad Vilayat Khansahab, her brother. I still remember how they exchanged paan and broke into laughter over small, trivial things whenever they met. She was also very affectionate towards us, the children of the family. It pains me to write this obituary for my beloved Appaji. Her never-fading smile had somehow made me believe that she would never leave us for her heavenly abode.

This effort takes me about fifteen years back. Appaji had a concert in the US. By then, I was also settled here. So, I had an opportunity to be present in that concert and listen to her. It was not a very formal gathering, and I remember – there was a Q&A session of sorts during the break. I asked her a question.

Although I am still riding the learning curve of the Hindustani classical music, I was a novice then, and I requested her to explain the difference between the various genres of the light classical music, such as thumri, dadra, tappa, kajri, chaiti and so on. Anyone adept at searching the Internet would say, these are all documented and can be obtained with a couple of mouse clicks. Yes, I do not dispute that. There are so many well written books and documents on these subjects. One has to read, decode, understand and analyse them in order to have the theories in place.

Still, I asked Appaji. Probably, with an expectation of getting something different. Something completely out of the ordinary way. I vividly remember the way she responded. In a few minutes, she made me feel that I had always known it all. Her reply was so simple, yet so profound.

In our parlance, there is something called ‘bol banana’. ‘Bol’ is the barest form of a song. You take out the tune. Then you take out even the lyrics. What remains is the mood of the song. As a musician, you are supposed to create that mood – either with your vocal chords or with your instrument. Appaji had legendary abilities in this field. When I asked her the question at the concert fifteen years ago, she demonstrated the differences with ‘bol banana’. Explaining the most complicated thing in the simplest of languages is the hallmark of a master. She did just that.

I have never had any formal training from her. Neither had I received any training from Ustad Amir Khansahab. Ustadji died before I was born. Yet, apart from Abba, he has had an indelible influence on my music. I am indebted to Appaji in a similar way. Probably the only difference is that I have had a number of opportunities to meet her. That is probably the only difference.

Appaji was one of the last virtuosos of the Hindustani classical music who understood concert. With perfect knowledge and understanding of ‘bol banana’, she could create magic, and depict the song in front of her listeners. Her presentation was always par excellence and always won hearts of millions. As a musician and a sitar player, I have learned from her how to apply strokes to create the exact ‘mijaaz’ of a thumri or a tappa. Whenever I play thumri, I close my eyes and I see her singing in front of me, with that lovely smiling face.

If Appaji sang a thumri, it was a thumri. If she attempted a tappa, it was a perfect tappa. The different genre never got mixed up while she performed. Nowadays, people apply murkiyan of thumri on Khayal without any hesitation. If she were to have a concert dedicated only to thumri, she would perform effortlessly for hours without singing any other genre. Such was the vastness of her knowledge.

Let me share with you one more memory of Appaji.

It must have been sometime in the late 1980s. Appaji had invited Abba to one of her concerts. In the invitation card, she wrote Ustad Vilayat Bhai on a side, from top to bottom. Then she, doing justice to her cheerful nature, did something extremely sweet. She wrote a sentence with each of the letters of the name of Abba. With ‘u’ she wrote – U are my best brother. I wish I remembered the rest, and could lay my hands on that piece of letter which had the touch of both my Abba and Appaji.

People ask me, whether her disciples will live upto Appaji’s standards, and would be able to carry her legacy forward. Appaji has given to us a vast treasure trove. I tell them, it is now upto us as to make the most of it. I also advise them to take a broader meaning of the word ‘disciple’, to include us all who have not been her ‘gandabandh shagird’, but have been inspired by her and understood her beautiful music. I give them examples of Ustad Shahid Parvej Khan and Ustad Budhaditya Mukherjee – the two most gifted sitar players of our times. Both of them have attended only a few sessions with Abba. Yet Abba lives in them, too. Shahid bhai once told me after Abba’s demise – he did not have to copy Abba, since he understood Abba’s music. Ustad Amir Khan did not have any disciple in the narrow meaning of the term. Yet, today the entire population of Hindustani classical musicians are his students. There is hardly any vocalist, or even an instrumentalist for that matter, today who does not follow Ustad Amir Khan in some way or the other.

Although she has left for us many splendid recordings, I would like to share with you some of my absolute favourites:

Chaiti with Ustad Bismillah Khan


Thumri in Bhairavi – raske bhare tore nain


Thumri in Kafi


Thumri in Desh – piya nahin aye

I express my deepest condolence to her bereaved family. May your soul rest in peace, Appaji. We love you.

 

গিরিজা দেবী : আদিগন্ত এক ঈশ্বরী

হিদায়ত হুসেইন খান

 

সেতারমার্তণ্ড উস্তাদ বিলায়ত খানের কনিষ্ঠ পুত্র হিদায়ত হুসেইন খান এটাওয়া ঘরানার সুযোগ্য উত্তরসূরি ধ্রুপদী থেকে পদাতিকের সঙ্গীতে অনায়াস বিচরণ করেন হিদায়ত এটাওয়া ঘরানার সূক্ষ্ম রাগদারীর থেকে রোলিং স্টোনের সঙ্গে বাজানো, দুয়েতেই তিনি সমান স্বচ্ছন্দ ও সপ্রতিভ গায়কী অঙ্গের এই সেতারশিল্পী বহু চলচ্চিত্রের সুরেও নিজের স্বাক্ষর রেখেছেন ইয়োরোপ, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, ক্যানাডা, সিঙ্গাপুর, এবং অবশ্যই ভারতে নিজের অগণিত অনুষ্ঠান ছাড়াও বহু বিশ্বশ্রুত শিল্পীদের, যেমন – নদুগু চান্সলার, রনি উডস, অ্যালিসিয়া কীজ, আশার, জাকির হুসেইন, পীট টাউনশেন্ড, Will.I.Am, জে জী, ড্যারিল জোন্স-প্রমুখের সঙ্গে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন হিদায়ত সেই সব বিরল শিল্পীদের একজন, যিনি বাজিয়েছেন লন্ডনের রয়াল অ্যালবার্ট হল, ওয়াশিংটনের কেনেডি সেন্টার ও নিউ ইয়র্কের কার্নেগি হল ও অ্যালিস টালি হলে

 

নিকটজনকে হারানো সব সময়েই দুঃখের। গিরিজা দেবী, আমরা বলতাম আপ্পাজী, ছিলেন আমাদের খুব কাছের মানুষ। আমার আব্বা উস্তাদ বিলায়ত খানকে উনি ডাকতেন ভাই বলে। আমার খুব মনে পড়ছে, যখনই ওঁদের দেখা হত, কিভাবে ওঁরা নিজেদের মধ্যে পান দেওয়ানেওয়া করতেন, আর নানান তুচ্ছ বিষয়েও হেসে গড়িয়ে পড়তেন। আমাদের পরিবারের ছোটদের, মানে আমাদের প্রতিও আপ্পাজী ছিলেন ভীষণ স্নেহশীলা। এই আপ্পাজীর স্মরণে কিছু লিখতে আমার হাত সরছে না। ওঁর উজ্জ্বল হাসিটা দেখে মনে হত, কখনওই উনি আমাদের ছেড়ে যেতে পারেন না।

মনে পড়ছে বছর পনেরো আগের কথা। অ্যামেরিকাতে একটা কনসার্টে এসেছিলেন আপ্পাজী। ততদিনে আমিও পাকাপাকিভাবে চলে এসেছি এই দেশে, মানে অ্যামেরিকায়। আমিও গেছিলাম সেই কনসার্টে, আপ্পাজীর গান শুনব বলে। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনুষ্ঠান হলেও সেখানে দুই অংশের অনুষ্ঠানের মাঝখানের সময়ে একটা প্রশ্নোত্তর পর্বের ব্যবস্থা ছিল। আমি আপ্পাজীকে একটা প্রশ্ন করেছিলাম।

যদিও আমি এখনও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শিক্ষার্থী, তখন আমি ছিলাম যাকে বলে একেবারেই অর্বাচীন। আপ্পাজীকে অনুরোধ করেছিলাম – ঠুমরী, দাদরা, কাজরী, চৈতী, টপ্পা – এইসব শৈলীর গঠনগত পার্থক্য বুঝিয়ে দেবার জন্য। ইন্টারনেটে দখল আছে এমন যে কেউ বলতে পারেন – নেটে অগুনতি বই বা সাইট আছে যেখানে এসবের চুলচেরা বিশ্লেষণ রয়েছে। সেসব পড়ে, বুঝে আত্মস্থ করলেই হল। এই কথার আমি বিরোধিতা করছি না।

তবু, আমি আপ্পাজীকে প্রশ্নটা করেছিলাম। হয়তো আমার মনে এমন একটা আশা ছিল, যে উনি যা বলবেন সে-কথা ছাপার অক্ষরে আর কোথাও পাব না। এমন কিছু কথা, যা শুধু আপ্পাজীর পক্ষেই বলা সম্ভব। আমার স্পষ্ট আছে সেদিনের কথা। মনে আছে, আপ্পাজী যা বলেছিলেন। তাঁর কয়েক মুহূর্তের ব্যাখ্যা শুনে মনে হয়েছিল – এই বিষয় তো আমার অজানা কিছু নয়! যেন যুগ-যুগ ধরে এই বিষয়ে আমার জ্ঞান। এমনই সরল, অকপট আর স্পষ্ট ছিল আপ্পাজীর উত্তর।

‘বোল বানানা’ বলে আমাদের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে একটা লব্জ আছে। ‘বোল’কে বলা চলে সঙ্গীতের সবথেকে নগ্ন রূপ। একটা গান থেকে তার সুর বের করে নিন। তারপর তার কথাও। যেটা পড়ে থাকবে সেটা হল সেই গানটার ভাব। একজন শিল্পী হিসাবে আমাদের ওই ভাবটাকেই তুলে ধরতে হয়। সে গলা দিয়ে হোক, বা যন্ত্র দিয়ে। আপ্পাজির দক্ষতা ছিল এ বিষয়ে প্রবাদপ্রতিম। পনেরো বছর আগের সেই কনসার্টে আমি তাঁকে যখন প্রশ্নটা করি, উত্তরে তিনি তখন এই ‘বোল বনানা’র সাহায্যে আমাকে তফাতগুলো দেখিয়ে দিয়েছিলেন। সবচেয়ে জটিল জিনিসকে সবচেয়ে সহজ করে বোঝাতে পারাটাই একজন প্রকৃত শিক্ষকের, একজন মহান সঙ্গীতসবোদ্ধার চিহ্ন।

আপ্পাজির কাছে আমি কখনওই প্রথাগতভাবে কোনও শিক্ষা নিইনি। যেমন নিইনি উস্তাদ আমীর খানসাহেবের কাছ থেকে। আমার জন্মের আগেই উস্তাদজি মারা যান। তবুও, আব্বাকে বাদ দিয়ে আমার সঙ্গীতের ওপর যদি কারও প্রভাব থাকে, তা উস্তাদ আমীর খানসাহেবের। আপ্পাজির কাছেও আমি একইভাবে ঋণী। পার্থক্য একটাই। আপ্পাজির সঙ্গে আমি বেশ কয়েকবার দেখা করার সুযোগ পেয়েছি।

আপ্পাজির মতন সঙ্গীতের আসর বোঝেন, এমন খুব কম ওস্তাদকেই আমি দেখেছি। ‘বোল বনানা’-র সাহায্যে আসরে যাদু সৃষ্টি করতে পারতেন আপ্পাজি। সঙ্গীতের ছবি ফুটিয়ে তুলতেন শ্রোতাদের সামনে। আপ্পাজির পেশকারী ছিল সর্বোচ্চ মানের। একজন সঙ্গীতশিল্পী ও সেতারবাদক হিসাবে আপ্পাজির থেকে আমি শিখেছি, কোথায় কিভাবে বাজালে ঠুমরী আর টপ্পার মেজাজ আনা যায়। এখনও কোনও আসরে ঠুমরী বাজাতে গেলেই আমি আপ্পাজিকে দেখতে পাই, আমার বন্ধ চোখের সামনে বসে সুর লাগাচ্ছেন। অমলিন হাসিতে উদ্ভাসিত তাঁর মুখ।

আপ্পাজির গান ছিল শুদ্ধ। ঠুমরী বা টপ্পা, বা অন্যান্য যে কোনও শৈলীর গান যখন উনি গাইতেন, তার বিশুদ্ধতা থাকত অটুট। আজকাল শুনি, কিছু শিল্পী খেয়াল গাইতে গিয়ে অবলীলায় ঠুমরীর মুড়কি লাগিয়ে দেন। আপ্পাজির জ্ঞান ছিল এতই গভীর, যে ঘন্টার পর ঘন্টা উনি একই শৈলীর গান গাইবার ক্ষমতা রাখতেন।

আপ্পাজির সঙ্গ করার আরেকটা স্মৃতি আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিই।

মনে হয় আশির দশকের শেষ দিকের ঘটনা। আব্বাকে আপ্পাজি নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন তাঁর একটি আসরে। সেই নিমন্ত্রণের চিঠি এসেছে। চিঠির একদিকে উপর থেকে নীচে ইংরিজিতে লেখা আব্বার নাম – Ustad Vilayat Bhai। ইংরিজির প্রতিটা অক্ষর নিয়ে তার সঙ্গে আপ্পাজির হাতের লেখা। U দিয়ে, U are my best brother। এইরকম ভাবে। সবগুলো এখন আর আমার মনে নেই। এই চিঠিটা হাতের কাছে থাকলে আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারতাম।

অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, আপ্পাজির শিষ্যশিষ্যারা কি পারবেন আপ্পাজির আলো বাঁচিয়ে রাখতে? আমি তাঁদের বলি, আপ্পাজি আমাদের অশেষ মাণিক্যের ভাণ্ডার দিয়ে গেছেন। সেই মণিরত্নকে কিভাবে আমরা কাজে লাগাব তার দায় আমাদের ওপরেই ন্যস্ত। তাঁদের আমি এ-ও বলি, ‘শিষ্য’ এই শব্দের বৃহত্তর অর্থের দিকে দৃষ্টি দিন। আমরা, যারা আপ্পাজির ‘গাণ্ডাবন্ধ শাগির্দ’ নই, যারা আপ্পাজির সঙ্গীত শুনেছি, তার থেকে শিখেছি, তাঁরাও কি আপ্পাজির ছাত্রছাত্রী নই? উদাহরণ দিয়ে তাঁদের আমি বলি দু’জনের নাম – উস্তাদ শাহিদ পারভেজ খান আর পণ্ডিত বুধাদিত্য মুখোপাধ্যায় – এযুগের শ্রেষ্ট দু’জন সেতারবাদক। দুজনেই আব্বার কাছে হাতে গোণা কিছু ক্লাস করেছেন। কিন্তু আব্বা এঁদের মধ্যেও বেঁচে আছেন। আজও। আব্বা চলে যাবার পর শাহিদভাই আমাকে বলেছিলেন – আব্বার বাজনা ওঁকে নকল করতে হয় না, কারণ উনি আব্বার বাজনার আত্মাকে বোঝেন। সে-অর্থে উস্তাদ আমীর খানের কোনও শিষ্য ছিল না। তবু, আজকের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতের সকলেই ওঁর ছাত্রছাত্রী। এমন কোনও কণ্ঠশিল্পী, বা যন্ত্রশিল্পী আছেন কি, যিনি উস্তাদ আমীর খানকে অনুসরণ করেন না?

আপ্পাজি অনেক অবিস্মরণীয় গান রেখে গেছেন। তাঁরই কিছু, যেগুলো আমার খুব প্রিয়, আপনাদের শুনবার জন্য রাখলাম –

চৈতী – উস্তাদ বিসমিল্লাহ খানের সঙ্গে

ভৈরবী ঠুমরী – রসকে ভরে তোরে নয়ন

কাফি ঠুমরী

দেশ ঠুমরী – পিয়া নহীঁ আয়ে 

আপ্পাজির পরিবারকে আমার সমবেদনা জানাই। আপনার আত্মা শান্তি পাক, আপ্পাজি। আমরা আপনাকে ভালোবাসি।