দেবজিৎ ভট্টাচার্য
আধা-সামন্ততন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার যে প্রক্রিয়া গো-বলয়ে প্রধানত ব্রাহ্মণ্যবাদীদের হাত ধরে হয়, তা এখানে ঘটে উচ্চবর্ণের নেতাদের হাতে। বর্তমানে সাম্রাজ্যবাদী লগ্নিপুঁজি-সাম্রাজ্যবাদ মদতপুষ্ট মুৎসুদ্দি পুঁজির স্বার্থে তৈরি হওয়া হিন্দুত্ব ও ফ্যাসিবাদী রাজনীতিও এই আধা-সামন্তচক্রের দ্বারাই আজ দেশজুড়ে দ্রুতগতিতে প্রসারিত হচ্ছে। যার সুষ্ঠ ও স্থায়ী কোনও সমাধান নেই বিধানসভা নির্বাচন কিংবা পঞ্চায়েত ভোটে।
ঝাঁঝালো লাশের গন্ধেই একথা আজ সবার কাছে স্পষ্ট যে দুয়ারে পঞ্চায়েত। যাই হোক, সেসব আজকের সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে মোটামুটি সবাই সবটা জানে। সেসব তথ্য দিয়ে আমি এই নিবন্ধটি ভরপুর করছি না। আমি বলতে চাইছি – এদিকে নবজোয়ারের পঞ্চাশ দিন পেরিয়ে গেল, দুয়ারে গিয়ে চোর-চোর ডাক শুনেও শাসকদলের একটুও চিন্তা নেই। কেন? কেন না তারা জানে ভালো করেই জানে, বাংলার গ্রামে গ্রামে পোক্ত আধা-সামন্তচক্র পঞ্চায়েত ভোটের সবটাই ভালোভাবে দেখভাল করে নেবে। আধা-সামন্তচক্র, সেটা কী বস্তু? তা নিয়েই আলোচনায় আসছি।
পঞ্চায়েত ব্যবস্থা
পশ্চিমবঙ্গে ত্রি-স্তরীয় পঞ্চায়েত ভোট হয়। এ রাজ্যে ২০ লক্ষের বেশি মানুষ পঞ্চায়েত ভোটে অংশগ্রহণ করেন। বলা হয়, এই ভোট রাজ্যের গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। প্রাচীন ভারতে পাঁচজন সদস্য নিয়ে স্বশাসিত স্ব-নির্ভর গ্রামীণ পরিষদ গঠিত হত, তাকেই মূলত বলা হত পঞ্চায়েত। আধুনিককালে এই শব্দটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এক সমষ্টিগত চেতনা। ‘পঞ্চায়েত’ শব্দটির লোকপ্রচলিত অর্থ ‘পাঁচ জনের জন্য’। সাংবিধানিক স্বীকৃতি পাওয়ার পর বর্তমানে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ভারতীয় ‘প্রজাতন্ত্র’-এর প্রশাসনিক কাঠামোয় তৃতীয় স্তরের শাসনব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত ও পরিচালিত। বর্তমানে গ্রামবাংলাকে কেন্দ্র করে যে প্রশাসনিক, জনকল্যাণমূলক, বিচারবিভাগীয় ও প্রতিনিধিত্বমূলক স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত হয়েছে, তাকেই পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা বলা হয়ে থাকে। ১৯৭০ সালে প্রথম সর্ববঙ্গীয় “গ্রামীণ চৌকিদারি” পঞ্চায়েত আইনের মাধ্যমে আধুনিক গ্রাম পঞ্চায়েত ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। স্বাধীনতার পর তথাকথিত ‘গণতান্ত্রিক’ ভারতে এই ব্যবস্থা তৃণমূল স্তর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন আইন পাশ হয়, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে। ১৯৫৭ সালে সর্বপ্রথম পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত আইন বিধিবদ্ধ হয়। ১৯৫৭ ও ১৯৬৩ সালের আইনানুসারেই পশ্চিমবঙ্গে চার-স্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু হয়। এরপর ১৯৭৩ সালে নতুন আইনের মাধ্যমে চালু হয় ত্রি-স্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা। ১৯৯১ সালে ভারতীয় সংবিধানের ৭৩তম সংশোধনী অনুসারে ‘পঞ্চায়েতীরাজ’ চৌকিদারি পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয়। রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের পরেই সব থেকে বড় ভোট এই পঞ্চায়েত ভোট। এক্ষেত্রে সরকার জনগণের কাছ থেকে নানা উপায়ে সংগৃহীত টাকা বা কর গ্রামীণ জনসাধারণের উন্নয়নকল্পে ব্যয় করে থাকে এবং জনগণও কেবলমাত্র ভোটের মাধ্যমকেই তাঁদের এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের একমাত্র উপায় হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হয়। আসলে জনগণকে বাদবাকি সমস্ত দিক থেকে বঞ্চিত করে তাঁদের ভোটটিকেই রাষ্ট্রনির্মাণের একমাত্র অস্ত্র হিসেবে মেনে নিতে হবে– তাঁদেরকে রাষ্ট্রপক্ষ এমনটাই বুঝিয়ে থাকে, আদতে নিজেদের আখের গোছানোর স্বার্থে।
প্রধান দ্বন্দ্ব প্রজাতন্ত্র বনাম সামন্তবাদ
পশ্চিমবঙ্গে এখনও সত্তর শতাংশ মানুষ কৃষির সঙ্গেই যুক্ত অর্থাৎ বেশিরভাগ মানুষ জমির উপরেই নির্ভরশীল। এখনকার অর্থনীতিও কৃষিভিত্তিক। গ্রামেগঞ্জে গেলেই দেখা যায় – রয়েছে বেশি পরিমাণে ক্ষুদ্র এবং ভূমিহীন কৃষক, যারা বর্তমানে বছরে ছয় থেকে আট মাস কৃষিকাজ করেন, আবার চার থেকে ছয় মাস মজুরিভত্তিক শ্রমে অথবা শহরাঞ্চলে বিভিন্ন ছোট-বড় কারখানায় এসে মালিকের মুনাফার স্বার্থেও শ্রম দিয়ে থাকেন। গ্রামেগঞ্জে কৃষকেরা প্রধানত শিকার হন সামন্তশ্রেণির হাতে অর্থাৎ জমিদার, ফড়ে তথা শাসকদলের পঞ্চায়েতের নেতৃত্বের হাতে, তাদের পোষা পুলিশ-প্রশাসনের হাতে। আবার ছোট-বড় কারখানায় কাজ করতে এসে তারাই ফের নিগৃহত হন ‘কাজ পাইয়ে দেওয়া’র নামে দালাল চক্রের হাতে, যারাও শাসকদলেরই অংশ। বর্তমানের এই পুরো চক্রটা এক ধরনের আধা-সামন্ততান্ত্রিক কায়দায় শোষণ। গ্রাম থেকে শহরে কাজের খোঁজে কৃষকেরা আসেন মূলত শাসকদলের লোকাল নেতাদের জমি কেড়ে নেওয়ার পর, অথবা উৎপন্ন ফসলের সঠিক দাম না পেয়ে, কিংবা গ্রামীণ পঞ্চায়েতের সার-বীজ নিয়ে কালোবাজারির হাত থেকে রক্ষা পেতে। শহর থেকে রোজগার করা টাকা দিয়ে বহুজন নিজেদের কেড়ে নেওয়া জমি ফেরত নেন, আবার আধা-সামন্তশ্রেণির হাত থেকে নেওয়া ঋণও ধীরে ধীরে চুকিয়ে থাকেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল কংগ্রেস সরকার ২০১৪ সালে, পূর্বের অর্থাৎ ১৯৫৫ সালের ভূমি সংস্কার আইন সংশোধন করেছেন। এতে অনুচ্ছেদ ১৪Y সংশোধন করার নামে ফের নয়া জমিদারি প্রথার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে খুবই সুন্দরভাবে, অতি সুকৌশলে। এর নজির আমরা বর্তমান শাসকদলের পঞ্চায়েত প্রধান-উপপ্রধান ও অন্যান্য নেতাদের মালিকানায় জমির পরিমাণ দেখলেই বুঝতে পারব। গত দুই-তিন বছর ধরে এই পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল রাজ্যে কৃষকের মৃত্যুর পরিমাণ শূণ্য বললেও, একটি আরটিআই রিপোর্ট থেকে জানা যায় কেবলমাত্র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতে ২০২১ থেকে ২০২২ এর মাঝামাঝি পর্যন্ত ১২২ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশ ঋণের জালে ফেঁসে এবং শাসকদলের জমিদারি নেতৃত্বের জমি কেড়ে নেওয়ার কারণে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। এছাড়াও গ্রামে এখন ১০০ দিনের কাজ শুরু হয়েছে সেখানেও এই আধা-সামন্তচক্রের দাদাগিরি, কাজে নিযুক্ত শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি মেরে দেওয়া তো লেগেই থাকে, তার মধ্যে এই কাজও এই চক্রের টাকা খাওয়াখাওয়ি-র ঝামেলায় দুই-তিন সপ্তাহ পর বন্ধ হয়ে যেতে বসে। তার ওপর আবার এই চক্রের দোসর হয়ে ‘গোদের উপর বিষফোঁড়ার’ মতো ঘটছে গ্রামে-গ্রামে উন্নয়নের নামে ঢালাও সাম্রাজ্যবাদী লগ্নিপুঁজি, সাম্রাজ্যবাদ মদতপুষ্ট মুৎসুদ্দি পুঁজি-বিদেশি বহুজাতিক সংস্থাগুলোর অবাধ অনুপ্রবেশ। ফলত, অক্সিজেন পেয়ে এই চক্র দিন কে দিন আরও পোক্ত আরও ক্ষমতাশালী হয়ে উঠছে। তাই শাসকদলের চুরি-ডাকাতি-জালিয়াতির খবর যা যা সংবাদমাধ্যমে উঠে আসছে তার সবটাই ঘটছে আধা-সামন্ততান্ত্রিক চক্রের মধ্যে দিয়ে, যা নিয়ে প্রকৃতপক্ষে কোনও বিরোধিতা নেই বিরোধী শিবিরে। তার কারণ বিরোধীরা জানে, ক্ষমতার পাশা উল্টোলে ও বিরোধীরা গদিতে ফিরলে, এই একই আধা-সামন্ততান্ত্রিক মেশিনারি তাদের হয়েই কাজ করবে।
দলাদলির ভোট রাজনীতি
বর্তমানে বহু লাশের ধোঁয়ার মধ্যে দিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের নমিনেশন দেওয়া সম্পূর্ণ প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের। শাসকদল তাদের উন্নয়নের পাখনা ফের মেলে ধরেছে, বেশ কিছু প্রকল্পের মধ্য দিয়ে। যেমন – সেতুশ্রী, রাস্তাশ্রী ইত্যাদি। গ্রামীণ মানুষের আয় সুনিশ্চিত হলে, গ্রামের কৃষকের হাতে চাষের জন্য পর্যাপ্ত জমি থাকলে, উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পেলে– তারা নিজেরাই পঞ্চায়েত স্তরে এই কাজগুলি করে নিতে পারতেন। কারণ রাস্তা, সেতু, পরিকাঠামো- গ্রামের মানুষজন এগুলির প্রয়োজনীয়তা বোঝেন। কিন্তু এখন তাদের কাছে এই উন্নয়নের সবটাই তাৎক্ষণিক, সাময়িক, কেবলমাত্র ভোট-সর্বস্ব। কিন্তু শুধুমাত্র আসন্ন ভোটকে মাথায় রেখে শাসকদলের এমন প্রকল্পমাফিক ঠেকা-দেওয়া উন্নয়ন তাদের খুব একটা কাজে লাগবে না। কারণ গ্রামীণ জনজীবনে তাদের কাছে প্রধান সমস্যা হল ওই আধা-সামন্তচক্র, যা ‘শাসকদল-পুলিশ-পঞ্চায়েত’ দ্বারা বেষ্টিত। আপনারা বলুন, যার খিদেতে পেট জ্বলে যাচ্ছে, সেসময় তার ঘরে বাথরুমের দরজা লাগিয়ে দিলে কি দিলে সে তার পেটের ক্ষুধা থেকে মুক্তি পাবে? অথচ নবান্ন-কেন্দ্রীক রাজ্য সরকার ঠিক এমনটাই করছে! গ্রামীণ আধা-সামন্ততান্ত্রিকে চক্রে লাগাম না টেনে নানা চাপিয়ে দেওয়া সামাজিক প্রকল্পের মধ্য দিয়ে উন্নয়নের দাড়ি-কমা টানতে চাইছে। গ্রামীণ জনজীবনে উন্নয়নের মান বাড়াতে কৃষকের প্রধান সমস্যা ও সমস্যাগুলি এড়িয়ে গিয়ে বাদবাকি কাজ করছে। ফলে সেখান থেকেও এই আধা-সামন্তচক্র দুর্নীতি-চুরি-ডাকাতি করে চলেছে ও আরও ফুলেফেঁপে উঠছে। আর বিরোধীরাও ইতিমধ্যে ‘স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত’ পঞ্চায়েত গড়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে কোমর বেঁধে। তারা শাসকদলের কটা চোর-ডাকাত নেতানেত্রীর দিকে আঙুল দেখাচ্ছে কিন্তু মূল সমস্যা অর্থাৎ গ্রামীণ বৃহৎ আধা-সামন্তচক্রের ছড়িয়ে থাকা হালের বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আখেরে তাতে কী হবে? বিরোধীরা ভোটের মধ্য দিয়ে পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় এলেও কী এই সমস্যার কোনও সুরাহা হবে? একদমই নয়! কারণ এটা আধা-সামন্ততান্ত্রিক, আধা-ঔপনিবেশিক ভারতের রাষ্ট্রব্যবস্থার মূল সমস্যা। এর সুরাহা করতে হলে একমাত্র গ্রামীণ আধা-সামন্ততান্ত্রিক চক্রকে গোড়া থেকে পুরোপুরি উপড়ে ফেলা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। একমাত্র এটা করা গেলেই গ্রামীণ জনজীবনে উন্নয়নের মান বাড়বে, তথা রাজ্য এবং গোটা দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ হতে পারে। এই আধা-সামন্তচক্রের বিছানো জালের মেলবন্ধনের কারণেই বিরোধী দলের নেতারা কিছু কিছু জায়গায় ভোটে জিতে গেলেও তাদেরকে এই চক্রের মাথা শাসক দল, রাজনৈতিক-প্রশাসনিক ক্ষেত্রগুলির মধ্য দিয়ে আঞ্চলিকভাবে সমস্ত দিক থেকে কোণঠাসা করে, নিজেদের দিকে টেনে নিচ্ছে। তাছাড়াও বিরোধী দলে যারা জিতছে তারাও ফাটকা ও কাঁচা টাকার লোভে খুব শীঘ্র এই চক্রেরই অংশীদার হয়ে উঠছে এবং দিনের শেষে জনগণের বিরুদ্ধ-অবস্থান নিচ্ছে। অর্থাৎ পঞ্চায়েত স্তরে ক্ষমতা বদলের মধ্য দিয়ে আধা-সামন্তচক্রের কোনও ক্ষয় ঘটছে না, বরঞ্চ সব দলের যোগদানে তা আরও পোক্ত হচ্ছে। শুধুমাত্র যা হচ্ছে, তা হল পাঁচ বছর অন্তর অন্তর এই ভোটের মধ্য দিয়ে জনগণের সাথে রাষ্ট্রের ক্রমশ বাড়তে থাকে দ্বন্দ্ব খানিকটা প্রশমিত হচ্ছে কিন্তু মূলগত কোনও পরিবর্তন ঘটছে না। কিন্তু শাসক দলের এই দলাদলির রাজনীতি, একে অপরকে দোষারোপের রাজনীতি এবং দিনের শেষে গ্রামীণ আধা-সামন্তচক্রকে টিকিয়ে রাখার প্রয়াস আজ জলের মতো স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে জনগণের চোখে। যে কারণে জনগণ আজ বিকল্প খুঁজছে, ক্ষণে ক্ষণে স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহবাদী রূপ ধারণ করে চলেছে।
উপসংহার
পশ্চিমবাংলায় ভোটের রাজনীতিতে বরাবরই সবচেয়ে বেশি খুনোখুনি হয়ে এসেছে, যাতে নিম্নবর্ণের সাধারণ মানুষ বেঘোরে প্রাণ হারিয়েছেন। ঠিক যেমন উত্তর ভারতের রাজনীতিতে সরাসরি ব্রাহ্মণ্যবাদীদের নেতৃত্বে জাত-ধর্মের ভিত্তিতে হানাহানির ঘটনা ঘটে। ওখানে জাতপাত, এখানে শ্রেণি – গো-বলয়ের রাজনীতির সাথে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির তফাত কেবলমাত্র এখানে। কিন্তু একটা জায়গায় এই দুই তরফের রাজনীতির মিল রয়েছে, তা হল ধর্ম ও ভোটের রাজনীতির মাধ্যমে শাসকদল-নেতা-মন্ত্রী, রাজনৈতিক-প্রশাসনিক সরকারের অদলবদল ঘটিয়ে, দুই জায়গাতেই সামন্তবাদ বহাল তবিয়তে টিকে থাকে। আধা-সামন্ততন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার যে প্রক্রিয়া গো-বলয়ে প্রধানত ব্রাহ্মণ্যবাদীদের হাত ধরে হয়, তা এখানে ঘটে উচ্চবর্ণের নেতাদের হাতে। বর্তমানে সাম্রাজ্যবাদী লগ্নিপুঁজি-সাম্রাজ্যবাদ মদতপুষ্ট মুৎসুদ্দি পুঁজির স্বার্থে তৈরি হওয়া হিন্দুত্ব ও ফ্যাসিবাদী রাজনীতিও এই আধা-সামন্তচক্রের দ্বারাই আজ দেশজুড়ে দ্রুতগতিতে প্রসারিত হচ্ছে। যার সুষ্ঠ ও স্থায়ী কোনও সমাধান নেই বিধানসভা নির্বাচন কিংবা পঞ্চায়েত ভোটে। সংসদীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সামন্তবাদকে খতম করা যাবে না।