Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম

দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম | ছটি কবিতা

ছটি কবিতা

 

যা লেখা হয়নি তার ছায়া

আদি সম্মোহন, তুমি জেগেছিলে বলে সন্ধ্যা দীর্ঘায়িত হল—
বিষাদময় দীর্ঘ-পথকে মনে হল পরমায়ু, বেদনা সরে গেল।

কী আর থাকে, আলো অন্ধকারে কবিতার মতো মুখশ্রী;
জনপদ ভর্তি বিজ্ঞাপনকে অনায়াস হারিয়ে
আমাদের দারিদ্র্য জেগে উঠল মিথ্যে নগরীর মতো
মিথ্যে প্রগতি, মিথ্যে প্রতিশ্রুতি। তবুও মাথায় মুকুট

গোপন কথাটি গোপনে নিয়ে নেমে যায় সম্রাট,
পৃথিবীতে তখনও শোক, বিরহ, সন্তাপ
ধর্ম-গানের সুর মিশে যাচ্ছে কোনও অচেনা গানের কোরাসে
তুমি জানতেও পারলে না কোথায় আনন্দ সবিস্তার

লুণ্ঠিত স্বপ্নের দেশে, তোমাকে পেয়ে, জেগেছিল স্বপ্ন-কতক
আকাশকে মনে হয়েছিল মেঘ-বর্ণ রাত্রির ভেতর
কল্পিত ব্রহ্মদেশ, আদিগন্ত তার জানলা খোলা…

 

শিলাউর-২

বিকেলের রোদ হলুদ পতঙ্গ মতো ঢুকে,
তন্দ্রাঘোর কাটে। জাগে আদি শৈশব,
জানলার রেলিং থেকে উড়ে যায়
কৃত্রিম অভিজ্ঞতাগুলি।

উড়ে যায় শূন্যতা, ইট-পাথরের ঝঞ্ঝাট
গ্রন্থপাঠ, মাননীয়ার প্রতিশ্রুতি, রাষ্ট্র—
সারসত্যে থাকে জন্ম, আবছায়া গ্রাম
জলশব্দের কাছে নিচু হওয়া অশ্বত্থ।

বিকেলের রোদ অরাজনৈতিক, অপলক
নীরবতা ভেঙে মনন থেকে করে দূর
অনিসন্ধিৎসু অপ-আলাপ যথা—
যোগসূত্রে সন্ধ্যা, ধোঁয়ার কুণ্ডলী…

শস্য সুন্দর আলোয় হাসে ভিটে-গ্রাম।

 

তুলনা

দেখি বিস্ময়ে, ক্রীড়ারূপ বিবিধ কৌশল,
যেন মনীষার ইচ্ছেতে সাজানো—
যখন যা কিছু, শিল্প ও শিল্পঅনুত্তীর্ণ
ধারণার জয়, পৃথিবীর অলি-গলি জুড়ে।

মনোলোভা ওগো, কাতরতা গোপন করি—
যে খেলা চিরদিনের, তার থেকে ফিরায়ে
দেখি রোদ-ছায়ায় ঘুমকাতুরে পাহাড়,
আমারও যদি ঘুম পায়!

খুঁজিতেছ যারে, পথে পথ তারে দেখি
ধারণা যদি, আড়াল করি সংবাদ
অথচ বাহকের জামা জড়িয়েছে শরীর
অনুশোচনা বাতাসে ধূলিতে, অণু সূক্ষ্মাণুয়

হঠাৎ কে ডাকে সুদূরপুরে, সমুদ্রের গানে?
আগুন উত্তাপ আনি, বিভ্রম তৈরি করি
আমিও কি জানি কম, চমকে দেয়া অধ্যায়?

 

শূন্যতায়

কুয়াশায় তোমাকে লৌকিক ভেবে
যে পথ গেছে মৃত্যুর দিকে—
আমি পৌঁছে গেছি তার সন্নিকট,
ব্যাগভর্তি বিষণ্ণতা লটকে আছে
যেন বৃষ্টিরূপ, ধূসর পাণ্ডুলিপি
যেন তুমি নও, আমাকে যা অচ্ছুৎ
নির্বাসনে পাঠায় তারই ছবি
সাদা রাত্রিতে খুলে পড়ছে কবিতা!

 

মনে পড়া বিষয়ক

উপমা আড়াল হয়েছে—
রাত্রির ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে
পুরাকাল, বসতবাড়ি, আরও কিছু।

প্রথম কান্নার পাশে দাগ টানছে
না-দেখা ছবি, না-করা যাপন কতক
কোরাস তুলছে ঘুম-ভাঙা ঝিঝি।

শুয়ে আছে রেললাইন, পড়শি দূরে
পাহারা দিচ্ছে দিন অবাঞ্ছিত থাকা
পথ-কুকুর, ভূখা বিড়াল কতক।

সুর ভেসে আসছে, ভেসে যাচ্ছে
নদী নেই তবু জল চলাচলের তীব্রতা
ডেকে আনছে বিরহবীজ কিছু।

তোমাকে মনে পড়ছে, মনে পড়ছে না
চেতনারহিত মুহূর্তের বয়স যাচ্ছে
অনন্ত আকাশে, রাত্রিতে ভেসে…

 

আরেকটি কবিতা প্রসঙ্গে

পাঁচজন পাঠকের কথা মিথ্যে জানুন
সত্য এই, একটাও কবিতা লেখা হল না আমার।
লোকে কেমন দিব্যি একশোটা গ্রন্থ নামাচ্ছে
রাজনৈতিক প্রশস্তির। আমি লিখতে পারিনি
সেতু ও সম্ভাবনার কথা। চতুর্দিক ঘিরে আসে
কালো মেঘ, স্বপ্নভঙ্গের প্রতি জন্মায় দৃঢ় বিশ্বাস
আমি লিখতে যদি যাই এইসব, সাহস ফুরোয়
বুকের ভেতর একটা কাপুরুষ, নিত্য ভয় দেখায়।

পাঁচজন পাঠকের কথা ভুল জানুন।
আমি তো দেখতে চেয়েছি বিপণি বিতানে হাসি।
দেখতে চেয়েছি ধুলো থেকে কেমন বৃষ্টি গড়ায়
তাবু ভেঙে যায়, উৎফুল্ল মানুষের হাসিতে—
কেমন সুর উঠে গানের। কিন্তু হায়, মানুষেরা
সকাল করে দাঁড়িয়ে পড়ে টিসিবি লাইনে,
খুলে ফেলে আত্মপরিচয় লুকোনো সমস্ত সরঞ্জাম,
তাদের ভিড় ওপথে যাবে আর! সংশয় আর দ্বিধায়
আমি যাইনি পৃথিবীর সে রাস্তায়,

যে রাস্তা ছোটে বইমেলায়…