অভিজিৎ মুখার্জী
অভিজিৎ মুখার্জী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল এঞ্জিনিয়ারিং-এর অধ্যাপক। ওই একই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি জাপানি ভাষার শিক্ষকও। প্রকাশিত বই ‘যে ভারতীয়রা ইংরেজিতে লিখছেন’, এবং অনুবাদ গ্রন্থ ‘হারুকি মুরাকামির গল্প সংগ্রহ’। জাপানি ও অন্যান্য বিদেশি সাহিত্য নিয়ে নিয়মিত লেখেন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়।
কাজুও ইশিগুরো-র When We Were Young উপন্যাসে এক পুলিশ ইনস্পেক্টর একটি জঘন্য অপরাধ-সংক্রান্ত তদন্তের সূত্রে বলছেন:
“(It’s) the heart of the serpent. I’d go for it. Why waste precious time wrestling with its many heads? I’d go this day to where the heart of the serpent lies and slay the thing once and for all before… before…”
এইটেই আসলে কাজুও ইশিগুরো-র সাহিত্যসৃষ্টির গোপন উৎস -– সরীসৃপের একেবারে হৃদয়টিতে পৌঁছে সেখানে আঘাত হানা।
এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিলেতে প্রবাসী জাপানি লেখক কাজুও ইশিগুরো পাওয়ায় অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে, আর একজন জাপানি লেখক হারুকি মুরাকামি, গত বেশ ক’বছর ধরেই যাঁর এই পুরস্কার জেতার প্রত্যাশা অনেকে করে আসছিলেন, তাঁর সঙ্গে এবারের বিজেতার তুলনামূলক অবস্থান ঠিক কেমন। ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে সভ্যতার তাৎক্ষণিক পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে সাহিত্য অধিকাংশ সময়ই সমসাময়িক দর্শনের সাহায্য নিয়ে থাকে, এমনকী পরোক্ষে হলেও দর্শনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করে লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি। পোস্ট-স্ট্রাকচারালিজম যবে থেকে আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, বিভিন্ন ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক অবস্থানকে কেন্দ্রে রেখে একই পরিস্থিতির ডিকনস্ট্রাকশন সম্ভব অর্থাৎ সম্পূর্ণ বিপরীত ভিন্ন ভিন্ন চিত্র ও বিচার একই সঙ্গে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারে, তবে থেকেই ইতিহাসকে সাক্ষী রেখে ‘আমরা’ ও ‘ওরা’-র আখ্যান সাহিত্যে প্রতিনিয়ত দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। ইশিগুরো-র সাহিত্য মূলত হারিয়ে যাওয়া সভ্যতা ও সংস্কৃতির অন্তরঙ্গ চিত্র ও খুইয়ে বসা সম্ভাবনার সম্ভার। উলটোদিকে, জাপানি সমাজের ধর্মীয় দর্শন যে অখণ্ডতার বিশ্বাসে প্রোথিত তার অভিব্যক্তি মুরাকামির যাবতীয় লেখায়, সেখানে ‘আমরা ও ওরা’ হেন বিভেদের ভিত্তিতে কোনও সম্ভাবনার ইঙ্গিত নেই। অখণ্ডতার ধারণাকে অবলম্বন করে, ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে সুন্দর ও সত্যের ওপর স্থাপন করতে মুরাকামির নিরন্তর প্রয়াস, সাহিত্যের মাধ্যমে। নানারকম ন্যায্য যুদ্ধের শ্রুতি-প্রতিশ্রুতিতে ক্লান্ত পৃথিবী হয়তো এই কারণেই মুরাকামির মধ্যে নতুন এক আশ্বাস পেয়ে তাঁর সাহিত্যে উজ্জীবিত বোধ করার সুযোগ পায়। কিন্তু এ লেখায় মুরাকামি নয়, আমরা বরং দেখতে চাইব কীভাবে ইশিগুরো-র উপন্যাসে প্রচ্ছন্ন অথচ প্রায় এক কেন্দ্রীয় মোটিফের মতোই বারবার ফিরে আসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তার সবকিছু ওলটপালট করে দেওয়া ভয়াবহ, অমানবিক দিকটির চেহারা।
জন্ম ১৯৫৪-তে। মাত্র পাঁচ বছর বয়েস থেকেই ইশিগুরো আছেন বিলেতে, তাই ইংরিজিতে লেখেন। যেমন, ‘নতুন ডায়াস্পোরা’-র বহু ভারতীয়ও ইংরিজিতে লেখেন। এঁদের লেখাকে একত্রে Indian writing in English বলা হয়। এঁদেরই একজন হলেন সলমান রুশদি। ওঁর বয়ানে:
“The Indian writer, looking back at India, does so through guilt-tinted spectacles. I am speaking now of those of us who emigrated… and I suspect that there are times when the move seems wrong to us all, when we seem, to ourselves, post-lapsarian men and women. We are Hindus who have crossed the black water; we are Muslims who eat pork. And as a result – as my use of the Christian notion of the Fall indicates – we are now partly of the West. Our identity is at once plural and partial. Sometimes we feel that we straddle two cultures; at other times, that we fall between two stools… If literature is in part the business of finding new angles at which to enter reality, then once again our distance, our long geographical perspective, may provide us with such angles.”
কথাটা কাজুও ইশিগুরোর ক্ষেত্রেও ঠিক কতখানি, কীভাবে প্রাসঙ্গিক তার প্রসঙ্গে কিছু পরে আসব, তবে যে কথাটা ইশিগুরো ও ইংরিজিতে লেখেন এমন ভারতীয়দের উভয়ের ক্ষেত্রেই খাটে সেটা হল ইতিহাসে, চেতনায়, সংস্কৃতিতে পাশ্চাত্যের প্রাধান্যের বিরুদ্ধে একটা লড়াই, কখনও বা অন্তর্ঘাত। রুশদির নিজেরই একটা বিখ্যাত প্রবন্ধের নাম The Empire Writes Back With A Vengeance. লড়াইয়ের সুরটা যেখানে স্পষ্ট। পরবর্তী কালে বিল অ্যাশক্রফট ও তাঁর সহযোগীরা যখন The Empire Strikes Back লিখছেন, সেখানেও উল্লেখ থাকছে:
A characteristic of dominated literatures is an inevitable tendency towards subversion, and a study of the subversive strategies employed by post colonial writers would reveal both the configuration of domination and the imaginative and creative responses to this condition.”
জাপানের রাজনৈতিক ইতিহাস ভারতের থেকে অনেকটাই পৃথক। পাশ্চাত্যের উপনিবেশ হয়ে সে অর্থে জাপানকে কাটাতে হয়নি খুব একটা (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের বছর ছয়েক বাদ দিলে)। কিন্তু আজ বিশ্বায়নের নামে যে নব্য সাম্রাজ্যবাদের ভয়াল মেঘ জমেছে তৃতীয় বিশ্বের ভাগ্যাকাশে, তার খুব কাছাকাছি একটা অভিজ্ঞতা জাপানের হয়েছে ১৮৬৮ নাগাদ, মেইজি যুগের শুরু থেকে। পাশ্চাত্যের বাণিজ্যিক স্বার্থের কাছে আত্মসমর্পণ করে জাপানে যখন প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোতে বড়সড় পরিবর্তন আনা হয়, তখন থেকেই জাপানের জাতীয় ঐতিহ্য ও সামাজিক সংস্কৃতির ওপর গভীর প্রভাব পড়তে থাকে -– যার পরিণতি হবে অতি শোকাবহ এক বিপর্যয় -– যা প্রায় জাপানি গদ্যসাহিত্যের যে ‘ক্যানন’ তার প্রতিটি লেখকেরই উপজীব্য বিষয় হয়ে ওঠে।
গত শতকের গোড়ার দিকটায় বনেদি মাকিওকা পরিবারের চার কন্যা ও তাদের পরিজনেদের গল্প নিয়ে লিখলেন জুন্ইচিরো তানিজাকি, তাঁর ‘সাসামেয়ুকি’ উপন্যাসে। ক্রমশ জাপানি সমাজের নগরকেন্দ্রিকতার প্রবণতা, উপার্জন ও সঞ্চয়ের মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ববৃদ্ধি, বহিঃপৃথিবীর বিদেশিদের সংস্পর্শে আসার সাংস্কৃতিক অভিঘাত -– এইসব নিয়ে এক ভাঙনের ছবি সেই উপন্যাস।
আর এক নোবেলজয়ী লেখক ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা তাঁর ‘মেইজিন’ (১৯৫১) ও ‘সেম্বাজুরু’ (১৯৫৮) উপন্যাসেও আনলেন এই একই বিষাদের অভিব্যক্তি। ‘সেমবাজুরু’ কথাটার অর্থ ‘সহস্র সারস’। জাপানে একটা সামাজিক প্রথা হল অসুস্থ মানুষের আরোগ্য কামনায় কাগজ ভাঁজ করে (ওরিগামি) একহাজার ‘ৎসুরু’ নামের সারস জাতীয় পাখি বানিয়ে উপহার দেওয়া। হিরোশিমার শান্তি-উদ্যানে দেখা যায়, এরকম অজস্র শুভেচ্ছাসূচক কাগজের সারস সংরক্ষিত হয়ে আছে। উপন্যাসের এই নামের উৎস নিশ্চয়ই তৎকালীন জাপানি সমাজের গভীর অসুখ -– পাশ্চাত্যমুখীনতার অসুখ, ঐতিহ্যচ্যুতির অসুখ। তাই ওই উপন্যাসে আসে চা-পান (সাদো) উৎসবের কথা। যে উৎসবের বিশেষ কুটির, কুটিরের নানা খুঁটিনাটি, বহুপ্রাচীন বাসনপত্র ও সর্বোপরি উৎসব উদ্যাপনের পদ্ধতিটি নিয়ে আসে এক কালাতীতের আভাস -– জাপানের আভিজাত্যের ঐতিহ্যের স্মরণিকা। এ-প্রসঙ্গে মনে পড়ছে, ১৯৪৫-এর যুদ্ধে মার্কিন শক্তির কাছে পূর্ণ পরাভবের পর কাওয়াবাতা বলেছিলেন, “এখন থেকে এলিজি ছাড়া আর বোধহয় কিছুই লেখা সম্ভব হবে না আমার পক্ষে।” প্রায় একই ধরনের অতলান্ত বিষাদ থেকে কাওয়াবাতার সমসাময়িক (বয়েসে কিছু ছোট) আর এক মহীরূহ লেখক ইয়ুকিও মিশিমা লিখলেন চারটি উপন্যাসের এক মহাকাব্যিক টেট্রালজি।
সলমান রুশদি ও বিশ্বযুদ্ধোত্তর জাপানি সাহিত্যের এইসব উদাহরণ থেকে যেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, তা হল এই যে একটা ‘শিফট’, অর্থাৎ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের দখলটা যে চলে যাচ্ছে পাশ্চাত্যের হাতে, তারই বিরুদ্ধে নিজেদের মতো করে একটা প্রতিরোধ তৈরি করতে চাইছেন উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারতীয় লেখকেরা ও উত্তর-মেইজি জাপানি ঔপন্যাসিকরাও। তাই জাপানি লেখক হওয়া সত্ত্বেও, ভারতীয় যে লেখকরা ইংরিজিতে লিখছেন তাঁদের সঙ্গে ইশিগুরোর যাত্রাটা অনেকটাই যেন সমান্তরাল। অথচ ইনি কিন্তু একা। বিলেতে বসে আর কোনও জাপানি লেখক জাপানের ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্রতিরোধটা তৈরি করার কাজে ব্যাপৃত নেই। একেবারে একা, আর তাই অসম্ভব সাবধানী ও নিখুঁত পূর্বপরিকল্পনাপ্রসূত পথে ওঁর দীর্ঘ ও তাৎপর্যময় সাহিত্যযাত্রা। ওঁর সেই এককযাত্রার স্বরূপটাই এ লেখায় আলোচনার চেষ্টা করছি আমরা।
ইশিগুরোর লেখালেখির কেরিয়ারের একেবারে শুরু থেকেই ওঁর পরপর চারটে উপন্যাস ইংরিজি সাহিত্যের সর্বোচ্চ পুরস্কার বুকারের জন্য মনোনয়ন পায়। তার মধ্যে ১৯৮৯-এ ওঁর তৃতীয় উপন্যাস The Remains of the Day বুকার পুরস্কারে ভূষিত হয়। নিজের কেরিয়ারের সাবধানী পরিকল্পনার দিকটা একটু আড়াল করে, সাহিত্যজগতে নিজের আবির্ভাব প্রসঙ্গে বছর পাঁচেক আগের এক সাক্ষাৎকারে লিন্ডা রিচার্ডসকে তিনি জানান:
“I think I kind of unnecessarily put myself in the position of being a kind of international, if you like, quote-unquote writer. That’s how, I kind of branded myself right from the start; as somebody who didn’t know Japan deeply, writing in English, whole books with only Japanese characters in. Trying to be part of the English literary scene like that. Part of the reason that I was able to make my career as a novelist very rapidly in Britain in the 1980s was because there was – just at the time when I started to write – a great hunger for this kind of new internationalism… publishers in London and literary critics and journalists in Londonsuddenly wanted to discover a new generation of writers who would be quite different from your typical older generations of English writers…
The people writing in English – people like Salman Rushdie – became the new heroes. And I think I was almost kind of allowed onto the literary scene because I seemed to be an international writer. I kind of thought that was the role I was supposed to play. That’s why I was there. And so I think for that reason I perhaps am very conscious of the whole international thing.”
দীর্ঘ উদ্ধৃতি, কিন্তু তুমুল প্রাসঙ্গিক। বিশেষত এর শেষ তিনটি বাক্যের দু’রকম অর্থ করা যায়। প্রকৃত অর্থটির ইতিহাস আমরা ধীরে ধীরে ওঁর উপন্যাসগুলিতে খুঁজে নেব। আসল কথা, পৃথিবীর ইতিহাস তো মোটেই এই international বা আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সৃষ্টি করা হয়নি। ওটাকে পেশ করা হয় একান্তই পাশ্চাত্যের গৌরবগাথার উপযোগী করে নিয়ে। তাই ইশিগুরোর সব উপন্যাসেই ইতিহাসের, স্মৃতির নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহজ্ঞাপক বাক্যের ছড়াছড়ি। কোথাও আমরা পাচ্ছি:
“Memory can be an unreliable thing”
আবার কোথাও বা “As I say, I am sure these impressions are not accurate, but that is how the evening remains in my mind.”
অথবা, “Even to-night, when I sat down here and tried to gather in some sort of order these things I still remember, I have been struck anew by how hazy so much has grown.”
এমনকী, “It is possible this is a case of hindsight colouring my memory.”
এরকম অজস্র বাক্য হরবখত উঠে আসে ইশিগুরোর প্রত্যেকটি উপন্যাসে। জাপানি গদ্যসাহিত্যের অন্য প্রবীণ-পুরুষদের লেখাতেও একই সাবধানবাণীর মোড়কে অভিযোগ অভিব্যক্তি পায়। হারুকি মুরাকামি আমাদের শেখান যে, সমস্ত স্মৃতিই আসলে এক নির্মাণ, একটা কনস্ট্রাক্ট, কল্পিত, ফের গড়ে নেওয়া। মিশিমার প্রধান চরিত্র ভয় পায় যে, যখন ইতিহাস তৈরি হবে তখন তার মতো তরুণের চিন্তাধারার কোনও সূত্রই তা থেকে আর পাওয়া যাবে না। বেশি পিছিয়ে যেতে হবে না, ঠিক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেই জাপানের সামাজিক পরিস্থিতি কী দাঁড়াল, আমরা কি স্পষ্ট জানতে পেরেছি কোনও সূত্রে? বিধ্বস্ত, চূর্ণ একটা দেশে সামাজিক ফাটলগুলোর চেহারা কী দাঁড়াল -– আর কিছু না হোক, শুধু এটুকুই মর্মস্পর্শী করে আমাদের জানিয়ে দেওয়ার জন্যও ইশিগুরো যথেষ্ট ধন্যবাদার্হ।
মিশিমা-র ‘তেন্নিন গোসুই’ উপন্যাসেই আমরা টের পেয়েছিলাম একটা অসম্মানের সংস্কৃতির জন্ম নেওয়ার কথা। সেটা আরও স্পষ্টত রাজনৈতিক চেহারা নিয়ে এল ইশিগুরোর উপন্যাসে। সামাজিক পারিবারিক সম্পর্কগুলো যে বন্ধন ও প্রথাকে এযাবৎ অবলম্বন করে বেঁচে ছিল সেগুলো যেন বিলোপ করার একটা জোয়ার এসে আছড়ে পড়ল যুদ্ধে হারের ফলে, সেই মানসিক আঘাতের প্রতিক্রিয়ায়। জাপানে বসেই জাপানিরা তখন যেন পারস্পরিক সম্পর্কহীন। যেন পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুকরণে তৈরি হওয়া একটা নতুন পর্যায় শুরু হতে চলেছে তার ইতিহাসে। বেঁচে থাকার মূল আকর্ষণ, ভিত্তি -– সবই সেখানে আর্থিক বা পেশাগত সাফল্যটুকুমাত্র।
‘A Pale View of Hills’ (১৯৮২) উপন্যাসে এরকমই সমাজে দুই নারী এৎসুকো আর সাচিকো-র গল্প দিয়ে কাহিনি শুরু হচ্ছে। সাচিকো-র আপন বলতে শুধু তার ছোট মেয়ে মারিকো। সাচিকো আর জাপান নিয়ে কোনও স্বপ্ন দেখে না। সে চলে যাবে আমেরিকা। সাচিকো এৎসুকোকে বলে:
“Mariko would be happier there. America is a far better place for a young girl to grow up. Out there, she could do all kinds of things with her life. She could become a business girl. Or she could study painting at college and become an artist. All these things are much easier in America, Etsuko. Japan is no place for a girl. What can she look forward to there?”
দুঃস্বপ্নের মতো করে একটি তরুণীর ছবি বারবারই সাচিকো আর মারিকোর বিভ্রান্ত মানসপটে ফিরে ফিরে ফুটে ওঠে। ওরা দেখেছিল তরুণীটি তার শিশুকে জলে ডুবিয়ে মারছে। আমেরিকায় যাওয়ার আগে মারিকো-র প্রিয় বেড়ালছানাটিকে জলে ডুবিয়ে মারতে গিয়ে সাচিকো যা বলে সেটাই শেষ বিচারে এ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় দীর্ঘনিশ্বাস:
‘“Can’t you think of anything else?’ She said, lowering her voice almost to a whisper. ‘Aren’t you old enough yet to see there are other things besides these filthy little animals? You’ll just have to grow up a little. You simply can’t have these sentimental attachments forever. These are just… just animals don’t you see? Don’t you understand that, child?’”
এই পুরনো সেন্টিমেন্টাল জগৎ একটুখানি জায়গা পায় কাহিনির এককোণে -– এৎসুকো-র শ্বশুর ওগাতা আর যুদ্ধে আত্মীয়-পরিজন হারিয়ে, সহায়সম্বল খুইয়ে নিঃস্ব, বর্তমানে সস্তার সরাইখানার মালকিন, একদা সম্ভ্রান্ত গৃহবধূ মিসেস ফুজিওয়ারা-র পারস্পরিক ব্যবহারের মধ্যে। শুধু সেটুকুর মধ্যে একটুখানি ছেঁড়া মেঘের মতো আটকে থাকে ফেলে আসা, ফুরিয়ে যাওয়া জাপান। এৎসুকোকেও শেষপর্যন্ত পা বাড়াতে হয় জাপানি সমাজ ছেড়ে নতুন সম্পর্কের দিকে। মেয়ে কেইকোকে নিয়ে সে চলে আসে বিলেতে, ইউরোপিয়ান দ্বিতীয় স্বামীর সংসারে জন্ম নেয় তার ছোট মেয়ে নিকি। সমস্ত সম্পর্ক খুইয়ে বিলেতে নতুন পরিবেশে এসে কেইকো মানিয়ে নিতে পারে না -– সে আত্মহত্যা করে। এই প্রসঙ্গে, প্রায় সমালোচকের মতো আপাত-নির্লিপ্ততায় ইশিগুরো আমাদের জানান:
“Keiko, unlike Niki, was pure Japanese, and more than one newspaper was quick to pick up on the fact. The English are fond of their idea that our race has an instinct for suicide, as if further explanations are unnecessary; for that was all they reported, that she was Japanese and that she had hung herself in her room.”
ইতিহাস! এভাবেই এযাবৎ লেখা হয়ে এসেছে ইতিহাস।
এৎসুকো-র দ্বিতীয় পক্ষের মেয়ে নিকি বিশুদ্ধ জাপানি নয়, তার বেড়ে ওঠাও পাশ্চাত্য সমাজে। সে লন্ডন শহরে একা থাকে, হয়তো তার সম্ভাব্য স্বামী ডেভিডের সঙ্গে। ছেলেটির নাম ডেভিড কিনা তা-ও এৎসুকো নিশ্চিত করে জানতে পারেনি, বিয়েটাই তো আসলে হবে কিনা সে নিয়েই কারও মাথাব্যথা নেই। ছুটির শেষে লন্ডনে ফিরে যাওয়ার আগে সুটকেস গোছাতে গিয়ে তার ঢাকনা আর চাপা দেওয়া যায় না -– আত্মকেন্দ্রিকতা আর বহুপণ্যভোগ এতটাই ভরে রাখে বিচ্যুত জীবনের পরিসর। সেগুলোই ছাপিয়ে ওঠে জীবনকে। এ তো জাপানের জীবনধারায় ছিল না। এই প্রসঙ্গে অবধারিত মনে পড়ে যায় ‘জাপানযাত্রী’ রবীন্দ্রনাথকে:
“মানুষের জীবনযাত্রাকে এরা একটি কলাবিদ্যার মতো আয়ত্ত করেছে। এরা এটুকু জানে যে জিনিসের মূল্য আছে, গৌরব আছে, তার জন্যে যথেষ্ট জায়গা ছেড়ে দেওয়া চাই। পূর্ণতার জন্য রিক্ততা সবচেয়ে দরকারি। বস্তুবাহুল্য জীবনবিকাশের প্রধান বাধা।”
নাইজেরিয়ার লেখক চিনুয়া আচেবে-র বিখ্যাত উপন্যাস ‘Things Fall Apart’-এও এই একই প্রক্রিয়ার প্রতিফলন। একটি সংস্কৃতির কেন্দ্র ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। দূরের সংস্কৃতি এসে প্রাধান্য বিস্তার করে বসছে জীবনযাত্রায়। ডবলিউ বি ইয়েট্স-এর কবিতার পংক্তি “Things fall apart the centre cannot hold” থেকে নাম ধার নেওয়া আচেবে-র এই উপন্যাসে আমরা দেখি, কীভাবে সংস্কৃতির কেন্দ্রটি কেবলই একটু-একটু করে সরে যায়। এই ‘ইমপার্মানেন্স’ বা স্থিতিশীলতার অভাব থেকেই উঠে আসে ইশিগুরো-র পরবর্তী উপন্যাস ‘An Artist of the Floating World’-এর (১৯৮৬) বিষয়।
ভি এস নাইপল তাঁর ‘Beyond Belief’ বইয়ে এমত অভিমত প্রকাশ করেছিলেন যে, কোনও জাতি অপরের সাংস্কৃতিক প্রাধান্যের কাছে আত্মসমর্পণ করার আগে প্রথমে হারিয়ে ফেলে তার নিজের সংস্কৃতি সম্পর্কে স্পষ্ট অবস্থান। এটাই আশ্চর্যজনকভাবে লক্ষ করা যায় জাপানের ক্ষেত্রেও -– অন্তত এই উপন্যাসের সূত্রে আহৃত ধারণা থেকে তো বটেই। অদ্ভুত স্ববিরোধ-আক্রান্ত জাপানের ছবি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কিছু আগের ও পরের দিনগুলোতে। পাশ্চাত্যের সাংস্কৃতিক উপনিবেশবাদ কীভাবে কাবু করে ফেলেছিল জাপানি সমাজকে, ওই যুদ্ধে হারের পর থেকে, সে বিষয়েও একটা বাস্তব ছবি পাওয়া যায় এই বইয়ে। গল্পের প্রধান চরিত্র, চিত্রকর ওনো নিজের ছবি আঁকার জীবনের দিকে তাকিয়ে দেখতে পান, সেই জীবনকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা কীভাবে স্ববিরোধিতায় পূর্ণ হয়ে থাকে। প্রথাগত আর সৃষ্টিশীল, বাস্তব আর কৃত্রিম, অদ্ভুতভাবে ক্রমান্বয়ে পরস্পর জায়গা-বদলের এক চক্র অনুসরণ করতে-করতে গিয়েছে তাঁরই অভিজ্ঞতার সূত্রে।
এই উপন্যাসে ইশিগুরো অমোঘভাবে নিজের সাহিত্যসৃষ্টির ‘মিশন’টিকে একপ্রকার প্রচ্ছন্ন ‘ন্যারেটিভ’-এ লিপিবদ্ধ করেছেন সমঝদার পাঠকের জন্য। জাপানি ঐতিহ্যে, সন্ধ্যার পর নগরীর যে অঞ্চলটিতে ছিল পাশাপাশি নানা পানশালা, যেখানে শিল্পী সাহিত্যিকেরা গিয়ে ভিড় করতেন প্রত্যেক সন্ধ্যায়, সেই প্রমোদ-মহল্লার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘The Floating World’। এক ব্যর্থ শিল্পী গিসাবুরো সম্পর্কে চিত্রকর মোরি, যিনি ওনো-র শিক্ষক, আমাদের জানান,
“Sometimes we used to drink and enjoy ourselves with the women of the pleasure quarters, and Gisaburo would become happy. Those women would tell him all the things he wanted to hear, and for the night anyway, he’d be able to believe them. Once the morning came, of course, he was too intelligent a man to go on believing such things. But Gisaburo did not value those nights any the less for that. The best things, he always used to say, are put together of a night and vanish with the morning. What people call the floating world, Ono was a world Gisaburo knew how to value.
… The finest, most fragile beauty an artist can hope to capture drifts within those pleasure houses after dark. And on nights like these, Ono, some of the beauty drift into our own quarters here…”
উপন্যাসটি পড়া শেষ হওয়ার পর হালকা এক বিষাদ ছেয়ে থাকে। যুদ্ধ-পূর্ববর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বিশ্বাস সম্বন্ধে ওনো-র বন্ধু মাৎসুদা যেমন বলেন,
“এটুকু বলা যায় যে, আমরা যা বিশ্বাস করতাম তার ভিত্তিতেই এগিয়েছিলাম, প্রাণপণ চেষ্টায়। তবে, শেষ অবধি দেখা গেল, আমরা ছিলাম খুবই সাধারণ ক্ষমতার মানুষ। সাধারণ মানুষ, যাদের তেমন কোনও অন্তর্দৃষ্টি ছিল না। ওরকম একটা সময়ে যে আমরা নেহাৎই অমন সাধারণ মানুষ ছিলাম, সেটাই দুর্ভাগ্যের।”
ওনো-ও ভাবেন,
“এটুকুই ভেবে সান্ত্বনা যে, আমরা যা করেছিলাম তা নিজেদের বিশ্বাস অনুযায়ী করেছিলাম। এটা ঠিক, আমরা কিছু মরিয়া পদক্ষেপ করেছিলাম, অনেক সময়ই সাত পাঁচ তেমন বিবেচনা না করেই। কিন্তু যা বিশ্বাস করি তাকে বাস্তবায়িত করার কোনও চেষ্টা না করে, ভয় পেয়ে, সংকোচ করে পিছিয়ে আসার চেয়ে সেটা ভাল।”
স্পষ্টতই বোঝা যায়, পরস্পরবিরোধী দুই মূল্যবোধের দোলাচল কীভাবে ধরে রাখে গল্পের দুটি বিপরীত মেরুকে -– ভাসতে থাকা নিরালম্ব এক সময়ের চিত্রনাট্য গোপনে গ্রাস করে নেয় পাঠকের মন।
তা হলে? এই যে সভ্যতার দীর্ঘ ইতিহাস -– এই স্থায়িত্বহীনতা, ইমপার্মানেন্স-এর যুগে তার কতটুকু তবে সার্থকতামণ্ডিত হয়ে টিকে থাকে? সভ্যতার ইতিহাসের ঠিক কতটুকু মৌলিক, অবিকৃত অবদান স্থান-কাল নির্বিশেষে মানুষ অবলম্বন করতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই গড়ে ওঠে পরবর্তী উপন্যাস, সম্ভবত ইশিগুরো-র সবচেয়ে আলোচিত উপন্যাস ‘The Remains of the Day’। এই উপন্যাসের পটভূমি অবশ্য এবার খোদ বিলেত। বিলেতের অভিজাত সমাজে এক বাটলার মিঃ স্টিভেন্স-এর বয়ানে বিধৃত এর কাহিনি। তবে, যাঁরা জাপানি ভাষায় ব্যবহৃত চিনা হরফ সম্পর্কে অবহিত তাঁরা বুঝবেন, এই ‘Day’, কোন অর্থে জাপানও বটে। অর্থাৎ প্রচ্ছন্নভাবে এই প্রশ্নটিও এ বইতে চর্চিত হল -– জাপানের সামাজিক ঐতিহ্যের অবদানই বা এই ভাসমান দুনিয়ায় কতটুকু স্বীকৃতি পেতে পারত।
একটা ব্যাপার অতএব ইশিগুরো-র প্রায় সব উপন্যাসে দেখা যাচ্ছে ব্যতিক্রমহীনভাবে -– সেটা হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তার সবকিছু ওলটপালট করে দেওয়া ভয়াবহ, অমানবিক দিকটা কোনও না কোনওভাবে উপন্যাসগুলোর কাহিনিগত ভিত্তি হয়ে থাকছে। নাগাসাকিতে জন্ম তো! অনেকটা হাইকু-র মতো করে এই উপন্যাস মেলে ধরছে দুটি সমান্তরাল ন্যারেটিভ -– একটি বলছে পরিবর্তনশীল সময়ের সঙ্গে বিশ্বজুড়ে ঘটনার গতিপ্রকৃতির গল্প, আর অন্যটিতে মিঃ স্টিভেন্স কেবলই খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে সমাজের কিছু মৌলিক প্রশ্নের উত্তর যা কালের আঘাতকে উপেক্ষা করতে পারে -– কিছু মূল্যবোধ, কিছু সংজ্ঞা, যা ধ্রুবতারার মতো অচঞ্চল।
ইশিগুরো-র পরের উপন্যাস, ‘When We Were Orphans’ (২০০০) -– সেখানেও কাহিনির কেন্দ্রে রয়েছে কীভাবে বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবীতে মানুষ তার যাবতীয় মানবিকতা, সভ্যতার দর্শন বিসর্জন দিয়ে ‘প্রফেশনালিজ্ম’(!) সম্বল করে তৈরি করছে আর একটি বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি। এই যে পাশ্চাত্যের পৌরোহিত্যে বর্তমান সভ্যতার অগ্রগতি, যার সীমাবদ্ধতার বিরুদ্ধে ইশিগুরো-র লেখনী, সেটা তো ইংরিজিতে লিখছেন যে ভারতীয়রা তাঁদেরও মুখ্য উপজীব্য, এবং সে হিসেবে এঁদের সাহিত্যযাত্রা কোথাও যেন বেশ সমান্তরাল। বিশেষ করে অমিতাভ ঘোষের ইতিহাসবীক্ষার সঙ্গে ইশিগুরো-র ইতিহাসচিন্তনে কোথায় যেন বেশ মিল। পাশ্চাত্যের আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, ঔপনিবেশিক যুগের আগের ‘নস্ট্যালজিয়া’ -– এ দুটোই লক্ষ করা যায়। অতএব যে প্রসঙ্গটা এঁদের দুজনের উপন্যাসেই অবধারিতভাবে এসেছে, তা হল লোভী ইংরেজের চিনে আফিম চালানের ব্যবসা। অমিতাভ ঘোষের ‘The Sea of Poppies’-এ আফিম-যুদ্ধের ঠিক আগের সময়টার কাহিনি, আর ইশিগুরো-র ‘When We Were Orphans’-এর কাহিনিকাল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগেকার।
এ গল্পের এক চরিত্র, পেশাদার গোয়েন্দা ক্রিস্টোফার ব্যাঙ্ক্স, হারানো মায়ের খোঁজে বেরিয়ে জানতে পারে, তার মাকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছে এক চিনা দস্যু। ওই লোকটির আফিমের কারবারের বিরোধিতা করেছিলেন মা। তারপর থেকে চলে মায়ের ওপর অকথ্য অত্যাচার -– শুধু যে শরীর দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছিল সেই দস্যুর কাছে তা-ই নয়, দস্যুর বাড়িতে ডিনারে আমন্ত্রিতদের সামনে তাঁকে বিবস্ত্র করে চাবুক মেরে অতথিদের মনোরঞ্জন করা হত। মহিলা আত্মহত্যা করে এড়াতে পারতেন এসবই, কিন্তু শিশু ক্রিস্টোফারের ভবিষ্যতের কথা ভেবে, তার অনাথ হয়ে যাওয়া আটকাতে বাধ্যত রাজি হন এক চুক্তিতে, যেখানে ওঁর বন্দিত্বের বিনিময়ে ওই দস্যু বহন করবে শিশুটির শিক্ষা ও আনুষঙ্গিক যাবতীয় ব্যয়। যেন, ক্রুশবিদ্ধ যিশুর শাস্তিতে মুক্তি পেল বারাব্বাস।
এ খবর যিনি এনে দেন, সেই আঙ্ক্ল ফিলিপ বলছেন ক্রিস্টোফারকে, নাকি আসলে প্রকারান্তরে ইশিগুরো-ই বলছেন পাশ্চাত্যের ঔপনিবেশিক দেশগুলোর মানুষদের, সেখানকার আপাতদৃষ্টিতে উন্নত সমাজকে:
“But now do you see how the world really is? You see what made possible your comfortable life in England? How you were able to become a celebrated detective? A detective (অপরাধ ও অপরাধীকে চিহ্নিত করে যে)! What good is that to anyone? Stolen jewells, aristocrats murdered for their inheritance. Do you suppose that’s all there is to contend with? Your mother, she wanted you to live in your enchanted world for ever. But it’s impossible. In the end it has to shatter. It’s a miracle it survived so long for you.”
আচ্ছা, এই কথাগুলো শুনতেই কি তা হলে তথাকথিত ‘ইন্টারন্যাশনাল রাইটার’দের এত চাহিদা এখন বিলেতে? সভ্যতার এই পর্যায়টায় এসে ওসব দেশের নাগরিকরাই বা (নিদেনপক্ষে যারা বই পড়ে) কী ভাবছে? সাক্ষাৎকারে ইশিগুরো জানাচ্ছেন লিন্ডা রিচার্ড্সকে:
“… if you wanted to know about the world for quite a lot of the last two or three centuries, you had to know about British culture.
But that finished, you see. And I think it took a little while after the end of the Second World War for the British to realize this. And then, suddenly, around the world the time when I started to write, I think people came to this realization: We’re not the centre of the universe. We’re just this little backwater in Europe. If we want to participate in the world, culturally speaking, we’ve got to find out what’s happening in the rest of the world.”
টিমোথি ব্রেনান তাঁর Nation and Narration বইয়ের একটি প্রবন্ধে লিখছেন:
“For the period following the Second World War, English society was transformed by its earlier imperial encounters. The wave of post-war immigration to the imperial ‘centers’ – including in England the influx of large numbers of non-white people from Africa and the Caribbean, and in America, from Asia and Latin America – amounted to what Gordon Lewis called ‘a colonialism in reverse’ – a new sense of what it means to be ‘English’. To a lesser extent, the same happened in France.”
এ কি কম কথা? গত প্রায় অর্ধ-শতাব্দী জুড়ে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যে উলটো স্রোত বইতে দেখা যাচ্ছে -– যে স্রোতে নৌকো ভাসিয়েছেন রুশদি থেকে আচেবে, অমিতাভ থেকে ইশিগুরো-রা -– টিমোথি ব্রেনান-এর এ কথায় তাঁরা নিশ্চয়ই হৃদয়ের এককোণে কোথাও একটু তৃপ্তি এবং অবশ্যই প্রবল আত্মবিশ্বাস অনুভব করতে পারেন।