মনসুর মণ্ডল
হেট স্পিচের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সমাজকে কালিমালিপ্ত করা, তাদের অপর করে প্রান্তিক অবস্থানে ঠেলে দেওয়ার ভেদবুদ্ধি আছে, আছে রাজনৈতিকভাবে তাদের নাগরিক অধিকার ও সামাজিক ন্যায়কে সঙ্কুচিত করে তোলার কপটতা। হেট স্পিচের স্পষ্ট রাজনৈতিক অভিব্যক্তি— ঘটনা ঘটাও, ফায়দা তোলো। কাঙ্ক্ষিত ফলাফল এই যে, বিভ্রান্ত-উগ্র একাংশ হিন্দু মবকে মুসলিমদের পিছনে লেলিয়ে দিয়ে মুসলিদের কোণঠাসা করা, মনে আত্মভয় ঢুকিয়ে দেওয়া
বিজেপি নেতারা ঘুসপেটিয়ার কুফল বোঝাতে ‘উইপোকা’ বলতে বড়ই পছন্দ করেন। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির জনসমাবেশগুলোকে তাতিয়ে দিতে ‘উইপোকাগুলোকে’ দেশছাড়া করার কথা বলে বেড়িয়েছিলেন স্বয়ং দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ঘুসপেটিয়া বলতে নির্দিষ্ট কোনও জাতি বা সম্প্রদায়ের লোকেদের বোঝানো যায় না বটে, কিন্তু ভারতে সিএএ-অনুমোদিত ‘অমুসলিম শরণার্থী’ তকমার সুবাদে সহজেই এটাতে ‘মুসলমান অনুপ্রবেশকারী’ ছাপ দেওয়া গিয়েছিল। পুরো বিষয়টির একটা সুস্পষ্ট রাজনীতিক অভিধা ছিল—অবশ্যই তা ধর্মীয় বিদ্বেষের রাজনীতি। কিন্তু গত ২১ সেপ্টেম্বর সংসদের বিশেষ অধিবেশনে বিজেপি সাংসদ রমেশ বিধুরীর মুখে যে ঘৃণা ভাষণ শোনা গেল, তাকে বোধহয় পুরোপুরি রাজনীতির নিক্তিতে মাপা যায় না। এটা এদেশের মানবসমাজের পচনশীল কোনও প্রকোষ্ঠে গেঁজে ওঠা মানববিদ্বেষ-বিষের অশ্লীল উদ্গার। সাংসদ কুনওয়ার দানিশ আলিকে উদ্দেশ্য করে বিজেপি সাংসদের বলা ‘কাটুয়া’, ‘মোল্লা’, ‘জঙ্গি’, ‘ভাড়ওয়া’ শব্দগুলো সংসদের রেকর্ড থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বটে; তাতে কি আর বাস্তব অবস্থার হেরফের হবে?
মোদি জমানার শুরু থেকেই দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়েছিল। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার প্রাথমিক, প্রণালীবদ্ধ, এবং ‘সংঘ’বদ্ধও বটে- তার প্রকাশ হেট স্পিচ। ধর্মীয় সংখ্যালঘু থেকে দলিত ও নিম্নবর্ণ পর্যন্ত এর বহর। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উভয় মঞ্চ থেকেই সময়ে সময়ে ঘৃণা-বিদ্বেষ প্রচার করা হয়েছে। মোদি জমানায় মূল নিশানা করা হয়েছে সংখ্যালঘুদের, বিশেষত মুসলমান সম্প্রদায়কে। মুসলমান শাসন আমলের ইতিহাস, হিন্দু-মুসলমানে ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতির বৈসাদৃশ্য, সন্ত্রাসবাদ, এসবকে বিষয়বস্তু করে মুসলমান সম্প্রদায় সম্পর্কে হিন্দুমনে বিষ ঢোকানোর কাজ ধারাবাহিকভাবে চলেছে। সে কারণেই হেট স্পিচকে হিন্দুত্বের রাজনৈতিক চক্রের একটি ধারালো হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে। এটা এখন চূড়ান্ত অনিষ্টের সীমায় পৌঁছেছে, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক মঞ্চকে ঘৃণা ভাষণ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আক্ষরিক অর্থেই আমাদের দেশে অভূতপূর্ব।
হেট স্পিচের পিঠোপিঠি থেকেছে মব লিঞ্চিং। ধর্মীয় বা জাতপাতগত ঘৃণা-বিদ্বেষের বিষে পুষ্ট হয়েছে মব লিঞ্চিংয়ের প্রবণতা। হিন্দুত্ব অনুশীলনের একটা পর্যায়ে মব লিঞ্চিংয়ের সূত্রপাত। পন্থা হিসেবে এটার সূত্রপাত মোদি জমানার কিছুটা আগেই। তখন এর ছিল সামাজিক অবয়ব। জাতপাতকে কেন্দ্র করে লিঞ্চিং-এর ঘটনা ঘটত বেশি। ঘটনা ঘটত বিক্ষিপ্তভাবে, সাধারণত অন্য কোনও ঘটনার বিষম প্রতিক্রিয়া হিসেবে। ২০১৪-র পর থেকে অবস্থা বদলে যেতে থাকল। ধর্মীয় ভেদাভেদ ব্যাপারটা মব লিঞ্চিংয়ের তালিকায় এক নম্বরে চলে এল। মূল নিশানা করা হল মুসলমান সম্প্রদায়কে। এটা যখন হল, তখন রাজনীতিতে ধর্মীয় ঘৃণার চাষ শুরু হয়েছে ভাল মাত্রায়। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সময়কালে ধর্মীয় ঘৃণাজনিত মব লিঞ্চিংয়ের বৃদ্ধি শতকরা ৯০ ভাগ।
হেট স্পিচের ঝুলিতে অনেক জঞ্জালই জমা আছে। মুসলমান সমাজে তাৎক্ষণিক তিন তালাক নিয়ে একপ্রস্থ হৈচৈয়ের পর ২০১৯-এ ‘দ্য মুসলিম উইমেন (প্রোটেক্শন অফ রাইট্স অন ম্যারেজ) অ্যাক্ট’ এল, যাতে একতরফা তিন তালাক দিলে তালাকদাতার দুই বছর জেল ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। যেখানে আমাদের দেশে বিবাহবিচ্ছেদকে দেওয়ানি সমস্যা হিসেবে দেখা হয়, সেই জায়গায় তিন তালাকে ফৌজদারী দণ্ড দেওয়া আসলে মুসলিমদের এক অপরাধপ্রবণ সম্প্রদায় হিসেবে দেখানোর ফন্দি ছাড়া কিছু নয়।
২০১৯-এর ডিসেম্বরে সিএএ-২০১৯-এর বিরোধিতায় দেশে আলোড়ন শুরু হয়েছিল, মুসলিমরা কাতারে কাতারে পথে নেমেছিল, কোথাও কোথাও বিক্ষোভ সহিংস চেহারা নিয়েছিল। সেসময় দুমকায় নির্বাচনী জনসভায় দেশের প্রধানমন্ত্রী বললেন, পোশাক দেখেই বোঝা যায় কারা হিংসা ছড়াচ্ছে। কথাটার ইঙ্গিত যে মুসলিমদের দিকে ছিল, সেটা বুঝতে কারও বাকি ছিল না। সিএএ-র বিরোধিতায় দিল্লীতে শাহিনবাগের ধর্না যখন দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক অনুকরণীয় মডেল হয়ে উঠেছে, বিজেপির সাংসদ পরবেশ ভার্মা দিল্লিতে এক নির্বাচনী সভায় বললেন, শাহিনবাগের প্রতিবাদীরা দিল্লিবাসীদের বাড়িতে ঢুকে ঘরের মেয়েদের ধর্ষণ ও হত্যা করবে।
‘সুল্লি ডিলস্’ (২০১৯-এ) ও ‘বুল্লি বাঈ’ (২০২০)—দু’টি ছিল ইন্টারনেট অ্যাপ। এতে বাছাই করা মুসলিম মহিলাদের, যাঁদের অ্যাপটির সঙ্গে কোনও যোগ ছিল না, বিভিন্ন সমাজ মাধ্যম থেকে নাম-পরিচয়-ছবি নিয়ে নামে নামে দাম ধরে আপলোড করে অনুরাগীদের আকৃষ্ট করা হচ্ছিল। এক ভার্চুয়াল নিলামের কল্পলোকে আত্ম-রমণে মেতে ওঠেছিল তারা। উপভোক্তারা মেতে উঠেছিল এক কদর্য অসুস্থ উল্লাসে। শতাধিক মহিলার নাম এই নেট-মৃগয়ায় জড়ানো হয়েছিল। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী থেকে লেখিকা, সমাজকর্মী, সাংবাদিক, সমাজে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব, যাঁরা ধর্মীয় ঘৃণা-অসহিষ্ণুতা ও সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নে বাদ-প্রতিবাদে শামিল হতেন।
ধর্মগুরু ইয়েতি নরসিংহানন্দ (২০১৯-এর ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হরিদ্বার ধর্ম-সংসদের অন্যতম হোতা, যেখানে মুসলিমদের নিকেশ করার ডাক দেওয়া হয়েছিল) মুসলিম মহিলাদের যে কারও জন্যই সহজলভ্য যৌনতার পাত্রী হিসেবে দেখিয়ে থাকেন হামেশাই। নরসিংহানন্দের মতো মনোবৃত্তি পোষণ ও প্রচারে গুরু-মহন্তের সংখ্যা নেহাত কম নয়। সবটা মেলালে দেখব মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা-বিদ্বেষ প্রচারের একটা সুচিন্তিত কর্মকাণ্ড।
হেট স্পিচের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সমাজকে কালিমালিপ্ত করা, তাদের অপর করে প্রান্তিক অবস্থানে ঠেলে দেওয়ার ভেদবুদ্ধি আছে, আছে রাজনৈতিকভাবে তাদের নাগরিক অধিকার ও সামাজিক ন্যায়কে সঙ্কুচিত করে তোলার কপটতা। হেট স্পিচের স্পষ্ট রাজনৈতিক অভিব্যক্তি— ঘটনা ঘটাও, ফায়দা তোলো। কাঙ্ক্ষিত ফলাফল এই যে, বিভ্রান্ত-উগ্র একাংশ হিন্দু মবকে মুসলিমদের পিছনে লেলিয়ে দিয়ে মুসলিদের কোণঠাসা করা, মনে আত্মভয় ঢুকিয়ে দেওয়া। এজন্য ‘গদ্দার’, সন্ত্রাসী, ‘পাকিস্তানের চর’, ‘উইপোকা’, এরকম কিছু রাজনীতির রঙ মাখানো শব্দ ব্যবহার দস্তুর। সংসদে রমেশ বিধুরীর মুখনিঃসৃত বাণীতে এই মাপের শব্দ আছে, পাশাপাশি আছে ‘মোল্লা’, ‘কাটুয়া’। দানিশ আলিকে সন্ত্রাসী বলা পুরনো বিকার; কিন্তু মোল্লা ও কাটুয়ার বেলায় কী বলব? ওপর ওপর মনে হতে পারে, রমেশ বিধুরী মুসলিম বিদ্বেষের আতিশয্যে একচোট খেউর করে বসলেন। আসলে কিন্তু তিনি সামাজিক দিক থেকে প্রাসঙ্গিক কথাই বললেন। একটু কান পাতলেই এইসব কথাই তো শোনা যায় প্রতিটি সামাজিক পরিসরে।
আমাদের দেশে মুসলিমদের মধ্যে পদবি হিসেবে মোল্লা শব্দটার চল, আবার তির্যক অর্থেও মোল্লা শব্দকে টানাটানি করা হয়। কোনও মুসলিম ব্যক্তিকে ধর্মান্ধ ও গোঁড়া বোঝাতে ‘মোল্লা’, ‘মোল্লার বাচ্চা’ বলে গালমন্দ করা চলে। হিন্দুদের মধ্যে অনেকেই এভাবে বলে থাকে। ‘মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত’ প্রবাদ বাক্যটাই বা কম যায় কীসে? এটা এমনই স্বতঃসিদ্ধ কথা যে, বক্তা ভাবতেই চায় না, এই নামে একটা পদবি আছে। আর কাটুয়া শব্দটার (বাংলায় কাটা— এটা পুরুষের খৎনা অর্থাৎ লিঙ্গের অগ্রভাগের চর্মচ্ছেদন সম্পর্কে বিকৃতভাবে কথিত) কদর মুসলিমদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার জন্যই। হিন্দুদের অনেকের মধ্যে, বিশেষ করে অশিক্ষিত ও অল্প শিক্ষিতদের মধ্যে, মুসলিমদের হয় নিছক খানিক খাটো করার মজা নিতে, নয়তো ঘৃণা প্রকাশ করতে শব্দটা অনায়াসে মুখে উঠে আসে। মজা করার বেলায় হামেশাই হিন্দু বক্তা ও মুসলিম শ্রোতার মধ্যে গল্পগুজবের ফাঁকেই কথাটা শোনানো হয়। এছাড়া ঘৃণা প্রকাশের সময় হিন্দু সমাজের ভিতরেই সচরাচর এমন ঘটনা ঘটে। সেদিক থেকে এই প্রবণতা হিন্দু সমাজের ভিতরে ভেদবুদ্ধির চোরাস্রোতের মতো, মুসলমান সমাজের প্রতি সরাসরি সাংঘর্ষিক নয়। কিন্তু রমেশ বিধুরী সংসদে যা করলেন, সেটা সমাজের এই প্রবণতার ছায়াপাত নয়, বরং বৃহত্তর সমাজে তাঁর এই অপকীর্তির ছায়াপাতের উদ্দেশ্যেই করলেন। ‘মোল্লা’, ‘কাটুয়া’ শব্দ খরচ করে তিনি সমাজের এই নিয়ে আপাত-নিরীহ, অসংলগ্ন ভেদবুদ্ধিকে কিছু রসদ যোগাবার চেষ্টা করলেন। এর কিছু-না-কিছু প্রভাব তো সাধারণ্যে পড়বেই। মুসলিমদের অপর করে রাখার, হেয় করার সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম সামাজিক অসংগতিগুলোকে খুঁচিয়ে চাগিয়ে তোলার মতলব এটা। আমরা যতই নিন্দা করি না কেন, সংসদে দাঁড়িয়ে বুক ফুলিয়ে ‘সত্যি কথা’ বলতে পারা জন্য বিধুরী এই মুহূর্তে অনেক মানুষের কাছে হিরো। ঠিক যেমন কিছুদিন আগেই, বিলকিস বানোর জেলফেরত গণধর্ষকরা মহাসমারোহে প্রায় নাগরিক সম্বর্ধনা পেলেন।
বিজেপির মন্ত্রী রাজনাথ সিং পরে ঘৃণা ভাষণ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেন বটে; কিন্তু ঘটনা যখন ঘটে, তখন রমেশ বিধুরীর পিছনে বিজেপির দুই প্রাক্তন মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ ও হর্ষবর্ধনের সহাস্য মুখ কি বিজেপির অন্দরের আসল মতিগতির কিছু আভাস দেয়নি? সেদিক থেকে এই দুঃখ প্রকাশের মধ্যে আদৌ সদর্থক কিছু থাকতে পারে কি?
হেট স্পিচের মব লিঞ্চিং আছে, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা আছে– সেসব মুসলমান সমাজকে সরাসরি পীড়ন করার ব্যাপার। এটা একটা দিক। অন্যদিকে, হেট স্পিচ মুসলিমদের ভিতর থেকে সঙ্কুচিত করা, হীনম্মন্যতার আবর্তে নিক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে চালিত। খবর, সাংবাদিকদের সামনে তাঁর অপমানের কথা বলার সময় দানিশ আলি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ওসব শোনার পর সারারাত ঘুমোতে পারেননি। এটাই তো রমেশ বিধুরীদের পরম কাঙ্ক্ষিত— আত্মসম্মানে আঘাত করো, মননে ভাঙচুর করে দাও।
এই অপকীর্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে– রাজনৈতিক দল, সামাজিক মাধ্যম, সবদিক থেকেই। প্রতিবাদ সবসময়ই হয়। ২০১৯-এ ভারতে ঘৃণাজনিত মব লিঞ্চিংয়ের ঘটনায় উদ্বিগ্ন দেশের ৪৯ জন খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবি প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি দিয়েছিলেন ন্যায়বিচারের আর্জি জানিয়ে, জাতি-ধর্ম-বর্ণে সম্প্রীতির আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছিলেন। এই উদ্যোগ যখন ইতিবাচক চর্চার ক্ষেত্র প্রসারিত করল, তখনই অন্য ৬১ জন বুদ্ধিজীবি এই চিঠির বিরোধিতা করে ও মোদি জমানার গুণগান করে পাল্টা চিঠি পাঠালেন। তাঁদের অভিমত ছিল, মব লিঞ্চিং বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং তাতে উদ্বেগের কিছু নেই। বরং ভারত মোদির দেখানো লাইনে ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’-এর পথেই চলছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্য সভায় বিরোধিতার স্বরকে ‘আন্দোলনজীবী’ নাম দিয়ে রঙ্গব্যঙ্গ করেন। হরিদ্বার ধর্ম-সংসদের সাম্প্রদায়িক কীর্তিকলাপ নিয়ে দেশ জুড়ে প্রতিবাদ সত্ত্বেও উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকার নিরুত্তর ছিল। ঘটনায় এফআইআর হলেও উত্তরাখণ্ডের পুলিশ হাত গুটিয়ে বসে ছিল। কেন্দ্র সরকার বিষযটা এড়িয়ে গিয়েছিল। অবশেষে বর্ষীয়ান আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ, দুষ্যন্ত দাভে, সালমান খুরশিদ, পাটনা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অঞ্জনা প্রকাশ, পাঁচজন প্রাক্তন সেনাকর্তাসহ দেশের ৭৬ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ন্যায়বিচারের আর্জি নিয়ে শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হলে তাঁর হস্তক্ষেপে উত্তরাখণ্ড পুলিশ নড়াচড়া শুরু করেছিল। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার প্রতিবাদে অনেক শিল্পী-সাহিত্যিক তাঁদের রাষ্ট্রীয় খেতাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। প্রতিবাদ, তাকে তো বাধা ঠেলেই এগোতে হবে। সমাজের প্রতি সংবেদন নিয়ে এরকম বৌদ্ধিক লড়াই সপ্রতিভও বটে। কিন্তু দিনে দিনে, অন্তত রমেশ বিধুরীর অপকীর্তির পর, এই বাস্তবতা সামনে চলে এসেছে যে, লড়াইটা নিজেদের ভিতরেও রয়েছে। যে সমাজের প্রতি আবেদন, তার ভিতরে রয়ে গেছে সূক্ষ্ম সুক্ষ্ম ধর্মীয় বা সামাজিক ভেদবুদ্ধি, পরস্পরকে জানা-বোঝার দুর্বলতা। লড়াই এখানেও আছে। এটা একটা মনস্তাত্ত্বিক লড়াই। ভিতরে-বাইরে লড়াইটা একসঙ্গেই লড়তে হবে।