Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

কলমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা: পক্ষ আমাদের নিতেই হবে

সুমন কল্যাণ মৌলিক

 


গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে বিবিসির সাম্প্রতিক তথ্যচিত্র সম্প্রচারিত হতেই তাদের দিল্লি-মুম্বাই অফিসে আয়কর হানা কেউ ভোলেনি। মণিপুরে এডিটরস গিল্ডের প্রতিনিধিদলের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। ফ্রি স্পিচ কালেকটিভের পক্ষ থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে ২০১০ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ১৬ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ১৫৪ জন সাংবাদিককে গ্রেফতার, জিজ্ঞাসাবাদ বা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে আটক করা হয়েছে। নয়জন বিদেশি সাংবাদিককে ভারত থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই তথ্য তাই আমাদের বিস্মিত করে না যে মিডিয়া স্বাধীনতা সূচকে পৃথিবীর ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৬১

 

আচ্ছে দিনের এই আত্মগর্বী দিনে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম গণতন্ত্র বলে অহরহ বিজ্ঞাপিত ভারতবর্ষের গণতান্ত্রিক মুখোশ খুলে বেরিয়ে পড়ছে এক কুৎসিত, অগণতান্ত্রিক, কর্তৃত্ববাদী ভারতের চেহারা। ২ সেপ্টেম্বর (২০২৩) অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানা এবং ৩ সেপ্টেম্বর (২০২৩) দিল্লিতে এনআইএ এবং দিল্লি পুলিশ অধিকারকর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানকর্মী, স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান সহ বহু মানুষের উপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের যে উদাহরণ স্থাপন করল তা আসলে ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দু ফ্যাসিবাদের আচরিত রাজনীতির এক অনিবার্য বহিঃপ্রকাশ। অনেকে এই পরিস্থিতিকে অঘোষিত জরুরি অবস্থা বলে আখ্যায়িত করছেন বটে, কিন্তু বর্তমান অবস্থা তার চেয়েও ভয়ঙ্কর। ইন্দিরা গান্ধির জরুরি অবস্থা ছিল এক স্বৈরাচারী শাসকের যে-কোনও মূল্যে শাসনক্ষমতায় টিকে থাকার এক নির্লজ্জ প্রয়াস। কিন্তু এখনকার অবস্থার মধ্যে শুধু স্বৈরাচার ও কর্তৃত্ববাদ নেই, এর পেছনে আছে এক ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী মতাদর্শ যা বহুত্ববাদী, সামান্য হলেও গণতান্ত্রিক ভারতকে মুছে দিয়ে এক হিন্দুরাষ্ট্র বানাতে চায়। গণতন্ত্রের জননী সন্ধানের নাটক এখন অতীত, বর্তমান শাসকদের প্রকল্পিত ভারতে গণতন্ত্রকে কবরে পাঠানোর যাবতীয় ব্যবস্থা মজুত। এই নগ্ন সন্ত্রাসের একটা কারণ অবশ্যই আগামী ডিসেম্বর মাসে (২০২৩) পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০২৪-এর সাধারণ নির্বাচন। দিল্লির শাসকদের প্রতিক্রিয়ায় এ-কথা পরিষ্কার যে-কোনও মূল্যে নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতে নির্বাচন পর্যন্ত এরকম ঘটনা আরও অনেকবার ঘটবে। গত কয়েকদিনের ঘটনা এবং তারও কিছুদিন আগের ঘটনায়[1] যে মানুষেরা আক্রান্ত হলেন, তাঁদের প্রত্যেকের মধ্যে একটা সাধারণ যোগসূত্র রয়েছে। এই মানুষেরা ২০১৪ সালে ছাপান্ন ইঞ্চি ছাতিবিশিষ্ট ‘হিন্দু হৃদয় সম্রাট’ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে যে নতুন, মহাশক্তিধর ভারতের গল্প দেশের মানুষকে গেলানো হচ্ছে, তা মেনে নেননি। তাঁরা ক্ষমতাকে প্রশ্ন করেছেন, প্রান্তিক, শোষিত মানুষের উপর নেমে আসা ধারাবাহিক অত্যাচারের বিরোধিতা করেছেন, সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের বদলে নিজ নিজ বিশ্বাস মোতাবেক নতুন দেশ গঠনের কাজে ব্রতী হয়েছেন। তাই আজ শাসকদের কাছে তাঁরা ‘দেশদ্রোহী’।

তত্ত্বকথায় বলা হয় বিরুদ্ধতা যে-কোনও প্রাণবন্ত গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত এবং মিডিয়া চতুর্থ স্তম্ভ। আজ ভারতবর্ষের শাসকদের কাছে স্বাধীন মিডিয়া চক্ষুশূল। কর্পোরেট শাসিত মেইনস্ট্রিম মিডিয়া[2] তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা বহুকাল আগেই হারিয়েছে। বিকল্প স্বর হিসাবে জেগে আছে ছোট পত্রিকা, ওয়েব ম্যাগাজিন। সেই বিরুদ্ধতাকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য ধারাবাহিকভাবে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র মিডিয়ার উপর ধারাবাহিকভাবে আক্রমণ চালানো হচ্ছে। এমনকি এবারের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যবস্তু নিউজক্লিক আগেও রাজরোষে পড়েছে। ২০২১ সাল থেকে ভারত সরকারের বিভিন্ন এজেন্সিগুলি[3] নিউজক্লিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দমনমূলক কার্যকলাপ চালিয়েছে। এর আগেও নিউজক্লিকের অফিস এবং কর্মচারীদের বাসভবনে বারংবার ইডি সহ সমস্ত কেন্দ্রীয় এজেন্সি অভিযান চালিয়েছে। বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম যেমন ল্যাপটপ, ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। যদিও বিগত দু-বছরে একাধিকবার অনুসন্ধান চালিয়েও ইডি নিউজক্লিকের বিরুদ্ধে বেআইনি আর্থিক লেনদেন বা অর্থ পাচারের কোনও অভিযোগ দাঁড় করাতে পারেনি। এবার তো নিউজক্লিক-প্রতিষ্ঠাতা ৭৬ বছরের প্রবীর পুরকায়স্থ এবং প্রশাসনিক প্রধান অমিত চক্রবর্তীকে[4] দানবীয় ইউএপিএ আইনে গ্রেপ্তার করা হল। সমস্ত পেশাগত দায়বদ্ধতাকে নাকচ করে নিউজক্লিকের সমস্ত সাংবাদিকের ল্যাপটপ, ফোন[5] কেড়ে নেওয়া হল। রাষ্ট্রীয় বাহিনির হিংস্রতা এতটাই তীব্র যে ২৪ ঘন্টা পার হয়ে যাওয়ার পরেও এই দুই সাংবাদিককে গ্রেফতারের কোনও এফআইআর কপি দেওয়া হয়নি। অথচ গোদি মিডিয়ার বশম্বদ সাংবাদিকদের কাছে সেই এফআইআরের কপি রয়েছে। নিউজক্লিকের বিরুদ্ধে চিন থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে। সে-সম্পর্কিত কোনও তথ্যপ্রমাণ সরকার দেখায়নি। এক্ষেত্রে দেশের অগ্রগণ্য আইনজীবী প্রশান্তভূষণ এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উপস্থিত করেছেন। তিনি বলেছেন অতিমারিকালে পিএম কেয়ার্স ফান্ডে চিনা মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো কোটি কোটি টাকা[6] দিয়েছে। তাহলে তো এই ফান্ড পরিচালকদেরও গ্রেফতার করা উচিত। আসলে গোটা বিষয়টাই এক পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যাতে করে নিউজক্লিকের মতো স্বাধীন মিডিয়ার কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করা যায়।

এবার যে সাংবাদিকদের আটক করা হয়েছে তাঁদের সম্বন্ধে কিছু সাধারণ তথ্য জেনে নেওয়া দরকার। অভিসার শর্মা, ইউটিউবে এক নিউজ চ্যানেল চালান যার দর্শকসংখ্যা তিরিশ লক্ষ। সাধারণভাবে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় যে-সমস্ত খবরগুলোকে উল্লেখ করা হয় না, অভিসারের চ্যানেলে সেগুলোরই প্রাধান্য থাকে। তাঁর সাম্প্রতিক দুটো প্রোগ্রাম হল বিহারের জাতিগণনা কীভাবে বিজেপির নির্বাচনী রণকৌশলকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে, এবং অপরটি হল ওল্ড পেনশন স্কিম পুনরায় চালুর দাবিতে দিল্লির রামলীলা ময়দানের ঐতিহাসিক সমাবেশ। সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা ভারতবর্ষে বহুচর্চিত নাম। মোদি সরকারের স্নেহধন্য আম্বানি ও আদানি গোষ্ঠীর ব্যবসায়িক কাজকর্ম নিয়ে তাঁর একাধিক অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন, বই শুধু এই দুই গোষ্ঠীকেই নয়, কেন্দ্রের শাসকদলকেও বারংবার বিড়ম্বনায় ফেলে দিয়েছে। লেখক ও সাংবাদিক উর্মিলেশ তাঁর জনপ্রিয় টকশোতে একাধিকবার সরকারের বিভিন্ন দুর্নীতিকে উন্মোচন করেছেন। লেখক, চলচ্চিত্রকার ও সহমতের প্রতিষ্ঠাতা সম্প্রতি ঐতিহাসিক নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘ইতিহাস কি পান্নে’ শো-তে নরেন্দ্র মোদির ইতিহাস-অজ্ঞতা নিয়ে একাধিক তির্যক মন্তব্য করেছেন। অনিন্দ্য চক্রবর্তী রাজনীতি, কূটনীতি, ইতিহাস, অর্থনীতি নিয়ে নিউজক্লিকে নিয়মিত কলাম লেখেন। কিছুদিন আগের রচনা— ‘Why the right wing hates the Romila Thapar and Irfan Habibs‘ হিন্দুত্ববাদী ইতিহাস রচনার অসম্পূর্ণতা ও মিথ্যাচারকে সর্বসমক্ষে তুলে ধরেছিল। এই সাংবাদিকদের জেরা করার সময় যে প্রশ্ন করা হয়েছে তা হল দিল্লি দাঙ্গা, কৃষক আন্দোলন, এনআরসি, নোটবন্দি নিয়ে কেন তাঁরা বারবার সরকার-বিরোধী লেখা লিখেছেন! এককথায় বলা চলে নিউজক্লিক সেই মুষ্টিমেয় বিকল্প সংবাদমাধ্যমগুলির মধ্যে একটি যা নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহের বিকাশগাথাকে উপর্যুপরি চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছিল।

কখনও দিল্লি পুলিশ, রাজ্য পুলিশ, ইডি বা সিবিআইকে ব্যবহার করে স্বাধীন সাংবাদিকদের হেনস্থার উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই কারণ এই ঘটনা প্রথম নয়। গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে বিবিসির সাম্প্রতিক তথ্যচিত্র সম্প্রচারিত হতেই তাদের দিল্লি-মুম্বাই অফিসে আয়কর হানা কেউ ভোলেনি। মণিপুরে এডিটরস গিল্ডের প্রতিনিধিদলের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হল এই জমানায় সন্ত্রাসবাদ ও সাংবাদিকতাকে একাসনে বসানো হচ্ছে। ফ্রি স্পিচ কালেকটিভের পক্ষ থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে ২০১০ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ১৬ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ১৫৪ জন সাংবাদিককে গ্রেফতার, জিজ্ঞাসাবাদ বা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে আটক করা হয়েছে। নয়জন বিদেশি সাংবাদিককে ভারত থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই তথ্য তাই আমাদের বিস্মিত করে না যে মিডিয়া স্বাধীনতা সূচকে পৃথিবীর ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৬১।

২ অক্টোবর (২০২৩) অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানার ৬২টি জায়গায় এনআইএ-র অভিযান প্রান্তিক মানুষদের সংগঠিত হওয়ার অধিকারের উপর একটা বড় হামলা। এই তল্লাশির একটা পশ্চাদপট আছে। ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর এই দুই রাজ্যের ৬৩ জন অধিকারকর্মীর বিরুদ্ধে ‘মুনচিংপুট ষড়যন্ত্র’ মামলা দায়ের হয়, পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে মাওবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার অভিযোগ আনে। ২০২১ সালের ৭ মার্চ এনআইএ কেসের দায়িত্ব নেয়। ওই বছরই (৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল) এইচআরএফ, সিডিআরও, সিএলসি (অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানা), বিরাসম সহ বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীদের বাড়িতে তল্লাশি চলে। গত ২৯ মাসে এইসব সংগঠন ও তাদের কর্মীদের বিরুদ্ধে তদন্ত এজেন্সি কোনও প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। এমনকি ইউএপিএ অ্যাক্টে বিচারের জন্য যে স্পেশাল কোর্ট গঠিত হয়েছে, তারাও অভিযুক্তদের জামিন মঞ্জুর করতে গিয়ে বলেছে যে তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতগ্রাহ্য কোনও প্রমাণ নেই। সেই একই মামলাকে শিখণ্ডী হিসাবে খাঁড়া করে এবারের অভিযান হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এনআইএ একটা মামলারও তদন্ত সম্পূর্ণ করছে না বরং মামলাগুলো চালু রেখে অধিকারকর্মীদের সন্ত্রস্ত করতে চাইছে। এই একই ছকে কিছুদিন আগে উত্তরপ্রদেশে পিইউসিএল প্রেসিডেন্ট সীমা আজাদ সহ একাধিক সমাজকর্মীদের বাড়িতে দিনভর তল্লাশি চলেছে। এই সন্ত্রাসের আবহাওয়ায় আমরা সবাইকে স্মরণ করাতে চাই বর্তমানে দেশের প্রধান বিচারপতি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের ‘রোমিলা থাপার বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া’ মামলায় মন্তব্য—

Individuals who assert causes which may be unpopular to the echelons of power are yet entitled to the freedoms which are guaranteed by the constitution. Dissent is a symbol of a vibrant democracy. Voices in opposition can not be muzzled by persecuting those who take unpopular causes.

সাংবাদিক ও সমাজকর্মীদের উপর বর্তমান সরকারের এই ধারাবাহিক আক্রমণের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটকে উপলব্ধি করা আজ সবার আগে প্রয়োজন। আজ ভারত সরকার আগামী যুদ্ধের লক্ষ্যবস্তু হিসাবে ‘নাগরিক সমাজ’-কে চিহ্নিত করেছে। গত আট বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে সংসদীয় বিরোধী দলগুলোর অপরিসীম ব্যর্থতা সত্ত্বেও কর্পোরেট মদতপুষ্ট অর্থনীতি ও হিন্দুত্ববাদের আগ্রাসন আজ প্রতিস্পর্ধার সম্মুখীন। প্রতিবাদের মুখ হিসাবে আজ উঠে এসেছে নাগরিক সমাজ। কখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কখনও ন্যায় প্রতিষ্ঠার আদর্শে অনুপ্রাণিত আইনজীবী, সত্যকথনে আগ্রহী সাংবাদিক, কর্পোরেট পুঁজির নিয়ন্ত্রণে না থাকা নিউজ পোর্টাল, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উদ্দীপ্ত বুদ্ধিজীবী বা দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা অধিকার সংগঠন— প্রতিরোধের বার্তা আজ স্পষ্ট। ভীমা-কোরেগাঁও-এর শতবর্ষ পূর্তি পালন হোক বা আকলাখ হত্যাকাণ্ড, জিএসটি-বিমুদ্রাকরণের স্বরূপ উন্মোচন বা রাফাল বিমান ক্রয় দুর্নীতির পর্দা ফাঁস— নাগরিক সমাজের সক্রিয়তা মোদি সরকারকে একাধিক অস্বস্তিকর প্রশ্নের সম্মুখীন করে তোলে। এই খণ্ড খণ্ড প্রতিরোধগুলো একটা ঐক্যবদ্ধ বিরোধিতার আকার নেয় এনআরসি-বিরোধী আন্দোলনের সময়। দিল্লির সরকার কখনও টুকরে টুকরে গ্যাং, কখনও খান মার্কেট অ্যাক্টিভিস্ট, আর্বান নকশাল, খলিস্তানি আখ্যা দিয়ে এই নাগরিক প্রতিরোধগুলিকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করে। এই যুদ্ধের ভয়াবহতার উদাহরণ হল ভীমা- কোরেগাঁও মামলা যার কারণে আজ অধিকার আন্দোলনের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা জেলে। আজ তাই নাগরিকদের কাছে নিরপেক্ষ থাকার কোনও সুযোগ নেই। হিন্দু রাষ্ট্রের হুঙ্কারকে পরাজিত করে বহুত্ববাদী, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ভারতের যাত্রা অক্ষুণ্ণ রাখার যুদ্ধে আমাদের পক্ষাবলম্বন করতেই হবে।


[1] সীমা আজাদ সহ বিভিন্ন সমাজকর্মী ও পত্রিকা সম্পাদকদের বাড়িতে দিনভর তল্লাশি এবং ঝাড়খণ্ডে দামোদর তুরি সহ বিভিন্ন সমাজকর্মী এবং ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়।
[2] গোদি মিডিয়া নামে খ্যাত বা কুখ্যাত।
[3] ইডি, ইনকাম ট্যাক্স, দিল্লি পুলিশের ইকনমিক অফেন্স উইং।
[4] অমিত চক্রবর্তী শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী।
[5] এগুলিতে তাঁদের পেশাগত কারণে সংগৃহীত ব্যক্তিগত তথ্য আছে।
[6] শাওমি: ১০ কোটি, ওয়ান প্লাস: ১ কোটি, ওপো: ১ কোটি, হুয়াই: ১ কোটি, টিকটক: ৩০ কোটি।


*মতামত ব্যক্তিগত