ব্ল্যাকহোল
১.
স্বপ্নে দেখেছি অজস্র মৃত পাখি, পশু
বিষাক্তফুল ও ঝর্ণা— ভোররাতে
তোমার উন্মুখ চিঁহি, হ্রেষাধ্বনি
হায়নার শুকনো কালোজিভ আমাকে দিয়ে
লিখিয়ে নিচ্ছে অন্ধকার যুগ, অতিবাৎসল্য
ব্ল্যাঙ্কস্পেস
ঠিক এই বাঁকে এসে কবিতার রোঁয়াওঠা পাতায়
করতালিসঙ্গ টানি।
গ্রীবায় জড়ানো নাড়ি, অ্যাম্বুলেন্সের স্বভাবজাত দোষে
একাকী দাঁড়িয়ে থাকে আমার জরায়ুহীন সন্তান…
২.
সমকাল স্বীকৃতি দেবে না জেনেও
আমায় গিলে খাচ্ছে যযাতির অহংসর্বস্বভাব।
রাজ্য যাবে, সম্পর্ক, বীজ ও শান্তি
তবু নিরবচ্ছিন্ন ড্যামের উপর থেকে ঝাঁপ দেওয়ার
প্রবণতা আমার গেল না কিছুতেই!
কবিদের মৃত্যু চাই
কবিদের মৃত্যু চাই
কবিদের মৃত্যু চাই—
আমার এই দরখাস্ত নামঞ্জুর করবেন যিনি
তাঁকে আমি দু-বেলা পাত পেড়ে খাওয়াই নিজমাংস
অখণ্ড মণ্ডলাকার, আতপঘ্রাণ ফিকে হয়ে আসে
৩.
দুটো-ছেচল্লিশ গতে আবহমানে খুঁজে পেয়েছি
তোমার পূর্ব প্রেমিকাকে।
পূর্ব শব্দে দেশ মনে পড়ে— অস্থিরতা, কায়া
সূচিপত্রে তোমাদের নাম পাশাপাশি থাকলে
রাষ্ট্রজুড়ে বয় অরন্ধন, হরতাল, পিকেটিং।
অতএব একটা হেস্তনেস্ত হওয়ার আশঙ্কায়
তুমি আয়োজন করেছ শালগ্রাম, ষোড়শোপচার
আধা সামরিক বাহিনির।
আমারও কাজমাফিক কুড়িয়ে নেওয়া গুলিবিদ্ধ চোখ
নিথর নাভি, মরদেহ
মথিতকুসুম ঘটে যদি, বিপদুত্তীর্ণ প্রস্তাব
অস্থি-মজ্জা বিকিয়ে সুস্বাদু দু-এক পদ রেঁধে নেওয়া যাবে ফের…
৪.
এত সহজে ‘মা’ ডেকো না
এই ঘোষণাকে মান্যতা দিয়ে তার গলায় পরাও
প্রভুভক্ত কুকুরের চেন কিংবা শীতকালীন কবিতা
আমার ভিতরে পুনরায় বেড়ে উঠছে ভবিষ্যজন্মের কবি— তোমার
চেরাজিভে বুলিয়ে দেওয়া পীতবর্ণ কষাটে স্বাদ।
সিজার-টেবিলের অভয়াচরণে বসে আমি
দিবারাত্র হাতুড়ি মেরেছি মস্তিষ্কে
স্তরের পর স্তর কেটে তুলে এনেছি পদ্মগোখরো জাত, পৃথিবীর
আদিমতম বিষ
প্রকৃত মা-ডাকে জঙ্গলের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসেন
সহস্রাব্দের কমলেকামিনী
তাঁর দিগম্বরী স্তন থেকে ঝরে পড়ে ক্ষীর, দুধ, চাঁড়াল মায়া
অবাণিজ্যিক গৃহীত অক্ষর
তোমার কবিতার সে-নারীটি আসলে
স্বরবর্ণহীন গাছ
মধ্যেমধ্যে বাজ পড়ে, থেকে-থেকে শুকিয়ে যায়
তুমি তাকে মা ভেবে ভুল করেছিলে…
৫.
কেন পায়ে পড়ছ এভাবে?
কেন দু-পা বুকের উপর তুলে দানবসত্তার কাছে
পরাজিত হচ্ছ বারবার?
তোমার বিবাহপ্রস্তাবের পাশে আমি ভেঙে যাচ্ছি আড়াআড়ি, কৌণিক
জলকাদা মাটি ঠেঙিয়ে ফেরাতে পারছি না আর—
রাখালধর্ম প্রবচনে লিখে রাখছি পালে বাঘ পড়তে নেই,
পালে বাঘ পড়তে নেই
আমার সন্তানের হত্যাকারী তুমি, পিতা শব্দের কলঙ্ক
এ-কথা জেনেও টেনে নিচ্ছি ঔরস
তোমার কবি-পরিচয়।
স্বপ্নে দেখা সেই মৃত বিড়াল রক্তবমি করে শুয়ে থাকে
কানা দেবদাসের মতো
জানতে চায় কেচ্ছা, কালিমা, সঙ্গোপন!
কবিতার কাছে মিথ্যে বলব না বলে, মাথাকুটে হে তন্ময়তা
স্বীকার করছি এসব অজন্তা-ইলোরা স্থাপত্য আসলে
আমাদের যৌথ ষড়যন্ত্র, রতিক্রিয়া
আমারও জন্মদাগ, ধর্ম, দায়
পাহাড়ে শোনিত আভা যেমন এখনও অটুট…