সোমনাথ মুখোপাধ্যায়
বনে আগুন লাগার পেছনে প্রকৃতি ও মানুষ— এই দুই পক্ষই দায়ী। দাবানল খুব সাম্প্রতিক ঘটনা, এমনটাও নয়। যে-সব প্রাকৃতিক ঘটনার প্রভাবে বনে আগুন লাগে সেইসব প্রাকৃতিক ঘটনা অতীতেও সক্রিয় ছিল এবং তাদের কার্যকারণের তীব্রতাও হয়তো আজকের তুলনায় অনেক অনেক প্রবল ছিল
পর্ব্বতো বহ্নিমান
পরদিন প্রাতঃকালে দুগ্ধ পান করিয়া পদব্রজেই চলিলাম। অদূরেই নিবিড় বনে প্রবিষ্ট হইলাম, যেহেতু সে পথ বনের মধ্য দিয়া গিয়াছে।… সায়ংকালে সুঙ্ঘ্রী নামক পর্ব্বত-চূড়াতে উপস্থিত হইলাম।… দূর হইতে পর্ব্বতের স্থানে স্থানে কেবল প্রদীপের আলোক মনুষ্যবসতির পরিচয় দিতেছে।… এ পর্ব্বত কেলু বৃক্ষের বন।… গতকল্য সুঙ্ঘ্রী হইতে ক্রমিক অবরোহণ করিয়া বোয়ালিতে আসিয়াছিলাম। অদ্যও তদ্রূপ প্রাতঃকালে এখান হইতে অবরোহণ করিয়া অপরাহ্নে নগরী নদীর তীরে উপস্থিত হইলাম।… আমি সায়ংকালে এই নদীর সৌন্দর্য্যে মোহিত হইয়া একাকী তাহার তীরে বিচরণ করিতেছিলাম, হঠাৎ উপরে দৃষ্টিপাত করিয়া দেখি যে ‘পর্ব্বতো বহ্নিমান’, পর্ব্বতের উপরে দীপমালা শোভা পাইতেছে। সায়ংকালের অবসান হইয়া রাত্রি যত বৃদ্ধি হইতে লাগিল, সেই অগ্নিও ক্রমে তত ব্যাপ্ত হইল। উপর হইতে অগ্নিবাণের ন্যায় নক্ষত্রবেগে শত সহস্র বিস্ফুলিঙ্গ পতিত হইয়া নদীতীর পর্য্যন্ত নিম্নস্থ বৃক্ষসকলকে আক্রমণ করিল। ক্রমে একে একে সমুদায় বৃক্ষ স্বীয় রূপ পরিত্যাগ করিয়া অগ্নিরূপ ধারণ করিল, এবং অন্ধ তিমির সে স্থান হইতে বহুদূরে প্রস্থান করিল।… আমি পূর্ব্বে এখানকার অনেক বনে দাবানলের চিহ্ন দগ্ধ বৃক্ষসকল দেখিয়াছি, এবং রাত্রিতে দূরস্থ পর্ব্বতের প্রজ্বলিত অগ্নির শোভাও দর্শন করিয়াছি; কিন্তু এখানে দাবানলের উৎপত্তি ব্যাপ্তি উন্নতি নিবৃত্তি, প্রত্যক্ষ করিয়া আমার বড়ই আহ্লাদ হইল। সমস্ত রাত্রি এই দাবানল জ্বলিয়াছিল।
আজ প্রায় পাঁচ দশক পরে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘হিমালয় ভ্রমণ’ শীর্ষক প্রবন্ধটি পড়ে আমিও যুগপৎ আহ্লাদিত এবং শঙ্কিত হলাম। প্রথমে আহ্লাদের কারণ কী তা খুলে বলি। আহ্লাদের প্রথম কারণ, আজ এতদিন পরে আমাদের পাঠ্যপুস্তকে গ্রন্থিত একটি অসামান্য প্রবন্ধ পুনরায় পাঠের সুযোগ পেলাম। এই অবসরে আমার ফেলে আসা স্কুলজীবনের ফেলে আসা স্মৃতিকক্ষে একবার উঁকি দেওয়া গেল। এ এক পরমানন্দময় অনুভূতি। আহ্লাদের দ্বিতীয় কারণ আজ অনেকদিন পরে আমাদের বাংলাশিক্ষক শ্রী মণীশচন্দ্র ঘোষকে স্মৃতিকক্ষের প্রান্তে সেই দীপ্ত অবয়ব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে যেন দেখলাম, ঠিক যে-ভঙ্গিমায় বাঁ-হাতে পাঠ্যবইখানি ধরে বুকের কাছে হাত রেখে ক্লাসে ঢুকতেন তিনি। পাঠ্যবিষয় এবং পাঠদানকারী গুরুমশাইয়ের এ যেন এক আশ্চর্য যুগলবন্দি।
আশঙ্কার হেতু
আহ্লাদ ও আশঙ্কা— এও যেন এক আশ্চর্য সমাপতন। এই মুহূর্তে আশঙ্কার কথা জানাতে গিয়ে মাথায় আসছে দুনিয়াজোড়া দাবানলের অগ্নিগর্ভ দুঃসংবাদ। খবরের কাগজ আর টিভির পর্দায় ভেসে ওঠা পৃথিবীর নানা প্রান্তের ভয়াবহ দাবাগ্নির ছবি দেখে মনের মধ্যে অন্য এক আশঙ্কিত পরিণতির কথা ভেসে ওঠে। এই আশঙ্কা প্রসঙ্গে কিছু জরুরি তথ্য পেশ করা যাক। দাবানলের তাণ্ডব পৃথিবীর সমস্ত মহাদেশীয় ভূখণ্ডকেই সাম্প্রতিক অতীতে বারংবার ছুঁয়ে গেছে।
আফ্রিকা | ১. দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইসনা
২. আলজেরিয়া ৩. দক্ষিণ আফ্রিকা, টেবল মাউন্টেন ৪. মরক্কো |
২০১৭
২০২১ ২০২১ ২০২২ |
এশিয়া | ১. চিন এবং সংলগ্ন রাশিয়া, মোট ১৮ মিলিয়ন একর বনভূমি দাবানলের গ্রাসে পড়ে
২. প্যাট সিং লেন দাবানল ৩. ভারত, বান্দিপুর দাবানল ৪. ভারত, উত্তরাখণ্ডের দাবানল ৫. ভারত, জুকো উপত্যকার দাবানল ৬. ভারত, সিমলিপাল দাবানল |
১৯৮৭
১৯৯৬ ২০১৯ ২০১৬, ২০২০ ২০২০-২১ ২০২১ |
উত্তর আমেরিকা | এই মহাদেশের কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত দাবানল-প্রবণ। ছোট-বড় মিলিয়ে এই দুই দেশের নথিভুক্ত দাবানলের সংখ্যা প্রায় ৬০০০। ২০২২ থেকে ২০২৩-এর আগস্ট পর্যন্ত কানাডার ১৯,৭৭০,০০০ একর জমির বনাঞ্চল দাবাগ্নির কবলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপের বিস্তীর্ণ অংশ দাবানল-কবলিত। মেক্সিকো এবং গ্রিনল্যান্ডও দাবানলের প্রকোপ থেকে রেহাই পায়নি | ২০২২-২৩ |
ওশিয়ানিয়া | ১. অস্ট্রেলিয়া, ব্ল্যাক সামার দাবানল। বনাগ্নি এখনও সক্রিয়
২. নিউজিল্যান্ড |
২০১৯-২০
২০২১ |
দক্ষিণ আমেরিকা | এই মহাদেশে আন্দিজ পর্বত ও তার সংলগ্ন বনভূমি দাবানলের আগুনে পুড়ে অঙ্গারে পরিণত হয়েছে। আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, ব্রাজিল, চিলি, ইকুয়েডর, ভেনেজুয়েলা— সব দেশই দাবাগ্নির শিকার। এই আগুনে নষ্ট হয়েছে বিপুল পরিমাণ বনভূমি। চিলি এই সময়ে বিধ্বংসী দাবানলে বহ্নিমান | ২০১৯-২৩ |
ওপরের এই তালিকাটি সংক্ষিপ্ত হলেও এর থেকে বিশ্বের দাবানল-প্রবণ অঞ্চল তথা বনভূমির অবস্থান বিষয়ে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। অতি সম্প্রতি দাবানল সংক্রান্ত তথ্যগুলো সম্পর্কে অনুপুঙ্খ ধারণা লাভ করার জন্য উন্নত মানের ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। এর ফলে দাবানল-প্রবণ অঞ্চলগুলিকে চিহ্নিত করাও সহজ হচ্ছে বন সঙ্গরক্ষণের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের পক্ষে। এমনই এক গবেষণাসূত্রে জানা গেছে যে, দাবানলের পক্ষে অতি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলি প্রধানত মধ্য আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উত্তর-পশ্চিম, পূর্ব ও মধ্য সাইবেরিয়া এবং উত্তর আমেরিকার উত্তরাংশ জুড়ে অবস্থান করছে। কানাডা, রাশিয়া, ব্রাজিল, অ্যাঙ্গোলা এবং কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র সর্বাধিক দাবানল-প্রবণ অঞ্চলের অন্তর্গত। আশঙ্কার বিষয় হল এই যে পরিবর্তিত আবহিক পটভূমিতে দাবানলের সম্ভাবনা ক্রমবর্ধমান। বিশ্ব-উষ্ণায়নের ফলে বাড়ছে শুষ্কতা, যার প্রভাব অনিবার্যভাবে পড়ছে বনভূমির ওপর। সাম্প্রতিককালে দক্ষিণ ইউরোপের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে যে তাপপ্রবাহের দাপট লক্ষ করা গেছে, তার প্রভাবে সেখানকার একাধিক রাষ্ট্রের বনভূমি দাবানলের শিকার হয়েছে। বনাঞ্চল এবং সন্নিহিত জনপদগুলিতে এখন দাবানল এক নির্মম বাস্তবতা— এটা স্বীকার করে নিয়েই এবার জেনে নেওয়া যাক দাবানলের পেছনে থাকা প্রাকৃতিক এবং অ-প্রাকৃতিক তথা মানবিক ঘটনার কার্যকারণের বিষয়গুলিকে।
বনে আগুন লাগছে কেন?
বনে আগুন লাগার পেছনে প্রকৃতি ও মানুষ— এই দুই পক্ষই দায়ী। দাবানল খুব সাম্প্রতিক ঘটনা, এমনটাও নয়। যে-সব প্রাকৃতিক ঘটনার প্রভাবে বনে আগুন লাগে সেইসব প্রাকৃতিক ঘটনা অতীতেও সক্রিয় ছিল এবং তাদের কার্যকারণের তীব্রতাও হয়তো আজকের তুলনায় অনেক অনেক প্রবল ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বনাঞ্চল থেকে সংগৃহীত জীবাশ্ম কাঠকয়লা থেকে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে একশো মিলিয়ন বছর আগেও অগ্নিসংযোগের ঘটনা বারংবার পৃথিবীর বনাঞ্চলকে ছারখার করেছে। সহজদাহ্য কার্বন-সমৃদ্ধ গাছপালা, শুষ্ক জলবায়ু, বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত দাহ্য অক্সিজেন গ্যাস, বজ্রপাত এবং আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত দাবানল সৃষ্টির প্রধান প্রাকৃতিক কারণ।
বিজ্ঞানীরা বজ্রপাতের ঘটনাকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ বলে করেন। বজ্রপাত হল প্রাকৃতিক দেশলাইকাঠি। মেঘে মেঘে ঘষা লেগে বজ্র সৃষ্টি হলে তা তীব্র গতিতে আছড়ে পড়ে ভূপৃষ্ঠে। বজ্র কোথায় পড়বে তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না অথচ তড়িদাহত বনাঞ্চল দাবানলের আগুনে বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন যে একটি সাধারণ বজ্রপাতের ঘটনা ৩০০ মিলিয়ন ভোল্ট এবং ৩০০০০ অ্যাম্পিয়ার বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপন্ন করে, সেখানে গৃহস্থালি কারেন্ট হল ১২০ ভোল্ট এবং ১৫ অ্যাম্পিয়ার। ফলে একটা সাধারণ বজ্রপাতের ঘটনা থেকেই দাবানলের সৃষ্টি হতে পারে। বিশ্ব-উষ্ণায়নের ফলে পার্থিব বায়ুমণ্ডল ক্রমশই বজ্রপাতের সম্ভাবনাকে আগের তুলনায় অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। দাবানলের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে দাবানলের পৌনপুনিকতা। এর ফলে কেবল মূল্যবান বনজ সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে তা নয়, বিপন্ন হচ্ছে বিপুল সংখ্যক অরণ্য-আবাসিকের জীবন, স্থানীয় জনপদের নাগরিকরাও এর শিকার হচ্ছেন। সব মিলিয়ে ক্ষতি হচ্ছে বিপুল পরিমাণ জাতীয় সম্পদের। অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা বজ্রপাতের ঘটনাকেই সেই দেশে দাবানল সৃষ্টির অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন।
আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত থেকেও বিধ্বংসী দাবানলের সৃষ্টি হতে পারে। কার্বনসমৃদ্ধ গাছপালা আগ্নেয় লাভার সংস্পর্শে জ্বলে উঠে তা থেকে বড় মাপের দাবানল সৃষ্টি হয়। হাওয়াই দ্বীপের আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত লাভা বারংবার ওই অঞ্চলের বনভূমি নাশের কারণ হয়ে উঠেছে। অগ্ন্যুদ্গমের সময়ে নির্গত ছাই, ভস্ম, সিন্ডার প্রভৃতি বহু দূরে উৎক্ষিপ্ত হয়ে প্রবল বনাগ্নি সৃষ্টি করে থাকে। তবে আগ্নেয়গিরিগুলি যেহেতু নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ সেই কারণে দাবানলের ঘটনা সন্নিহিত অঞ্চলেই প্রাধান্য পায়।
এই দুই প্রধান প্রাকৃতিক উৎস ছাড়াও শুকনো ডালপালার ঘর্ষণের ফলেও দাবানল সৃষ্টি হয়ে থাকে। ডালপালার পারস্পরিক ঘর্ষণের ফলে উৎপন্ন তাপ থেকে বনে আগুন লাগে। ভারতের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে এমনভাবে দাবানলের সৃষ্টি হয়। তবে মনুষ্য-নিয়ন্ত্রিত এই সময়ে মনুষ্যসৃষ্ট নানা কারণেই পার্থিব বনাঞ্চল দাবানলগ্রস্ত হয়।
দাবানল: মানুষ যখন কাঠগড়ায়
দাবানল— এত বড় একটা ঘটনা— অথচ এর পেছনে মানুষের কোনও ভূমিকা থাকবে না এটা হতেই পারে না। এখন অ্যানথ্রোপোসিন যুগে সব কিছুর পেছনেই মানুষের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে। এই অবস্থায় দাবানলকেই বা বাদ দেব কী করে? আমাদের আদিপুরুষেরা দাবানলের ঘটনার সঙ্গে বিলক্ষণ পরিচিত ছিল। সেক্ষেত্রে ঘটনাটা ছিল নেহাতই প্রাকৃতিক। তবে প্রকৃতি-পরিবেশের রীতিনিয়মের সঙ্গে ধীরে ধীরে পরিচিত হওয়ার সুবাদে মানুষ নিজের বর্ধিত চাহিদাগুলিকে মেটানোর কাজে আগুনকে ব্যবহার করতে শুরু করে। সংগ্রহকারী বা শিকারির জীবন ছেড়ে মানুষ কৃষির পত্তন করে। বনের গাছপালা পুড়িয়ে সেই জমিকে মানুষ চাষের কাজে ব্যবহার করা শুরু করেছে ওই দাবানল ঘটিয়েই। জঙ্গল কাটো, পোড়াও, জমিতে ফসল ফলাও— এই ছিল আদিকৃষির মূল দর্শন। এভাবেই আগুন হাতিয়ার করে মানুষ বনজ সম্পদকে বিনষ্ট করে দাবানল ঘটিয়েছে বারংবার। আজও সেই ধারা বহমান।
বসতি স্থাপনের প্রয়োজনেও মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে দাবানল সৃষ্টি করেছে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ আমরা পাই মহাভারতে। পাণ্ডবদের রাজধানী তৈরি হবে হস্তিনাপুরে। অগ্নিদেবের ডাক পড়ল খাণ্ডববন দহনের। পরম কৃতার্থ হয়ে অগ্নিদেব খাণ্ডববনে আগুন লাগিয়ে তা ছারখার করলেন। অরণ্যের সমস্ত প্রাণীরা আগুনে পুড়ে মারা গেল। ময়দানব দাবানলের আঁচ থেকে বাঁচল বটে, তবে তার হাতেই তৈরি হল হস্তিনাপুর নগর, বিচিত্র বৈভবমণ্ডিত রাজপ্রাসাদ। ছেদন ও দহনের সেই ধারাকে আজও বজায় রেখেছে মানুষ।
সেকালের কথা ছেড়ে একালে এলেও দেখব নিতান্ত অবহেলায় জ্বলন্ত সিগারেটের শেষাংশ ভালভাবে না নিভিয়ে ছুড়ে ফেলার ফলে ভয়ঙ্কর দাবানলের সৃষ্টি হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় সারা বছর যত দাবানলের ঘটনা ঘটে তার ৮০ শতাংশের পেছনে ছুড়ে ফেলা জ্বলন্ত সিগারেটের টুকরোর বড় হাত রয়েছে। ভাবা যায়! ধূম্রপায়ী বাবুদের অনবধানতার কারণে পার্থিব সম্পদের কত বড় ক্ষতি হচ্ছে! এমন তুচ্ছ বিষয়ে ভাববার অবসর কই?
বিদ্যুৎ সরবরাহকারী তারের ত্রুটির জন্যও দাবানল সৃষ্টি হতে পারে। আসলে দহনের জন্য একটা সামান্য স্ফুলিঙ্গই যথেষ্ট। জমিতে পড়ে থাকা শুকনো পাতা একবার দপ করে জ্বলে উঠলে তার থেকে কী ভয়ঙ্কর পরিণতি হতে পারে এই সময়ের দাবানলের দাপাদাপি তারই প্রত্যক্ষ প্রমাণ। বনভোজন বা ক্যাম্প ফায়ারের পর ঠিকঠাক না নিভিয়ে দেওয়া আগুন ধিকিধিকি জ্বলতে জ্বলতে একসময়ে লেলিহান অগ্নিশিখার রূপ ধরে ছারখার করে দেয় বিস্তীর্ণ বনাঞ্চলের কার্বনের ভাণ্ডারকে। বায়ুমণ্ডলে মিশ্রিত হয় বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড, ছাই, ভস্ম। বাড়ে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ, পৃথিবী তপ্ত থেকে তপ্ততর হয়, বিপন্ন হই আমরা। এও এক নাকের বদলে নরুণ পাওয়ার গল্প।