Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

নোবেল ২০২৩— সপ্তম বর্ষ, ষষ্ঠ যাত্রা

স্টেশনমাস্টারের কলম

 

অ্যালফ্রেড সাহেবের দান করা অর্থের সুবাদে যে পুরস্কার চালু হল ১৯০১ সালে, তার কথা বরং লোকে মনে রেখেছে। ‘সকলে কুড়ায় বেল, তুমি একা বাগাও নোবেল’— কবির এহেন স্তুতি, তা ব্যাজস্তুতিও যদিবা হয়, নোবেলের বিশেষত্বকেই স্বীকার করে। বস্তুত, এই দীর্ঘ প্রায় ১২৫ বছরের পরিসরে নোবেল পুরস্কার— প্রাপকের নির্বাচন নিয়ে শত আপত্তি, অভিযোগ সত্ত্বেও— বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি ও অর্থনীতির জগতে শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম শিরোপা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে।

চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের তরফে প্রায় প্রতি বছরেই চেষ্টা থাকে সেই বছরের নোবেলজয়ীদের কাজকে ওই-ওই বিষয়ে অদীক্ষিত পাঠকের কাছে সহজবোধ্য কিন্তু অসরলীকৃত অবস্থায় পৌঁছে দেওয়ার।

 

১৮৯৬ সালের ডিসেম্বরে অ্যালফ্রেড নোবেল চোখ বুঁজলে কয়েকটি সংবাদপত্রে লেখা হয়— মৃত্যুর সওদাগর মৃত। আরও লেখা হয়— নোবেল মানুষকে দ্রুততর উপায়ে মারবার কৌশল আবিষ্কার করে অশেষ ধনরাশির অধিকারী হন। এগুলোর কোনওটাই অজানা নয়। এসব নিয়ে আজকাল বিশেষ মাথাও ঘামায় না কেউ। নোবেল সাহেবের মৃত্যুর পর সভ্যতা আরও অনেক এগিয়েছে। মানুষ মারার আরও দ্রুততর পথ আবিষ্কৃত হয়েছে।

অ্যালফ্রেড সাহেবের দান করা অর্থের সুবাদে যে পুরস্কার চালু হল ১৯০১ সালে, তার কথা বরং লোকে মনে রেখেছে। ‘সকলে কুড়ায় বেল, তুমি একা বাগাও নোবেল’— কবির এহেন স্তুতি, তা ব্যাজস্তুতিও যদিবা হয়, নোবেলের বিশেষত্বকেই স্বীকার করে। বস্তুত, এই দীর্ঘ প্রায় ১২৫ বছরের পরিসরে নোবেল পুরস্কার— প্রাপকের নির্বাচন নিয়ে শত আপত্তি, অভিযোগ সত্ত্বেও— বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি ও অর্থনীতির জগতে শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম শিরোপা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে।

 

চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের তরফে প্রায় প্রতি বছরেই চেষ্টা থাকে সেই বছরের নোবেলজয়ীদের কাজকে ওই-ওই বিষয়ে অদীক্ষিত পাঠকের কাছে সহজবোধ্য কিন্তু অসরলীকৃত অবস্থায় পৌঁছে দেওয়ার। এই বছর আমাদের সেই চেষ্টায় আমরা সঙ্গে পেয়েছি স্ব-স্ব ক্ষেত্রে বিশিষ্ট মানুষজনের। রসায়ন বিষয়ে লিখেছেন বিশিষ্ট রসায়নবিদ ও বর্তমানে রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ সেন্টিনারি কলেজের এমেরিটাস অধ্যাপক সঞ্জীব বাগচী। কলকাতার আশুতোষ কলেজ এবং আইএমটি গাজিয়াবাদের প্রাক্তন অধ্যাপক দেবব্রত দত্ত লিখেছেন অর্থনীতির ক্ষেত্রে ক্লডিয়া গোল্ডিনের কাজ নিয়ে। সাহিত্যে বাংলায় স্বল্পপঠিত এবং প্রায় অচর্চিত ইয়ন ফসসের রচনাশৈলী নিয়ে আলোকপাত করেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতিকর্মী আলম খোরশেদ। ইরানের নারীবাদী আন্দোলনে নার্গেস মোহাম্মদির নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ের গুরুত্ব নিয়ে লিখেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শিবাশিস চট্টোপাধ্যায়। শারীরবিদ্যা ও চিকিৎসায় এই বছরের নোবেলজয়ীদের কাজের গুরুত্ব নিয়ে লিখেছেন ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট ও সায়েন্সের জৈবরসায়ন বিভাগের অধ্যাপক দীপঙ্কর নন্দী। পদার্থবিদ্যায় এই বছরের নোবেল পুরস্কারপ্রাপকদের কর্মকাণ্ড নিয়ে কলম ধরেছেন রমন রিসার্চ ইন্সটিটিউটের দুজন স্বনামধন্য অধ্যাপক— ঊর্বশী সিনহা এবং রেজি ফিলিপ। নিজের নিজের কাজের অপরিসীম ব্যস্ততা সত্ত্বেও বিজ্ঞানচর্চার জনপ্রিয়তা বাড়ানোর তাগিদে এঁরা কলম ধরেছেন। এঁদের সকলকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই।

এ-যাত্রায় নোবেল পুরস্কারের আলোচনার সঙ্গে একটি বিশেষ ক্রোড়পত্রও আমরা প্রকাশ করতে চলেছি। কারণ, বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় গুরুত্ব দাবি করে। তা হল মলয় রায়চৌধুরীর সাহিত্যকৃতি। ২৬ অক্টোবর তারিখে প্রবাসে প্রয়াত হয়েছেন বাংলা সাহিত্যের ‘মূলধারা’ থেকে স্বেচ্ছাবিচ্যূত, তবু এ-সংসারের এক গুরুত্বপূর্ণ গ্রহ, ‘হাংরি’ আন্দোলনের অন্যতম প্রবক্তা ও প্রতিভূ মলয়। তাঁর কথা মনে রেখে তাঁরই সমসময়ের কয়েকজন সহযোদ্ধা, গুণগ্রাহী ও সন্তানসম কয়েকজন লেখক— রবীন্দ্র গুহ, অভি সমাদ্দার, অনুপম মুখোপাধ্যায় ও তন্ময় ভট্টাচার্য— তাঁকে নিয়ে লিখলেন। এঁদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। দিল্লিপ্রবাসী অথচ বে ইন্তেহাঁ কলকাত্তাইয়া সাংবাদিক ও কবি, অথবা কবি ও সাংবাদিক অগ্নি রায়ের প্রতি আমাদের সটান স্যালুট। তাঁর সূত্রে আমাদের হস্তগত হয়েছে মলয়ের অপ্রকাশিত একটি গন্ধস্মৃতিচারণ: জীবনের গন্ধ। সঙ্গের ছবিগুলিও অগ্নিই আমাদের দিয়েছেন।

 

কবিতা-গল্প-নিবন্ধ-ধারাবাহিক উপন্যাসের মতো নিয়মিত বিভাগগুলি থাকল যথারীতি।

পড়বেন, মতামত জানাবেন, ভাল থাকবেন।