Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

ঈশানী বসাক

ঈশানী বসাক | চারটি কবিতা

চারটি কবিতা

 

রোস্ট

চামড়া আর মাংসের গন্ধমাখা ডালের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয় জানতাম। কিন্তু তবু মড়ার উঠে বসার কাছে শিকার রেখে বসে আছি। এমন এক প্রেমিক থাকবে যার কাচের স্বচ্ছতার কাছে হেরে যাব। সেসব অতীত থেকে নিয়ে এসেছি আতর। সমুদ্রের হাওয়া ছুটে আসে। এদিকে সেদিকে ধুনো রাম। কারা রেখেছে বিসলেরির তেতো শুরু। গলায় ধুনকি দিয়ে নেমে যায়। আকাশভরা তারার নিচে তিন বিভাগ ছয় তালের ঢেউ ধাক্কা দিচ্ছে। জানি সরছে সবকিছু অথবা হয়তো আমিই… একদিন পাহাড় থেকে নেমে আসব বিশালাক্ষী দেবী। যে পূজার প্রচলন নেই সেখানে ফেলে আসব বুকচেরা রক্ত। তাতে খুশি হবে জলের নোনা উত্তাপ। আমার মাংসগন্ধ, পোড়া অসহায় মানুষ নিতে দেব না তোমায় সমুদ্র। আমি ভিক্ষু হতে পারি সুজাত তবে… ফিরে আসা শুধু আমার ছিল? এমন কোনও চাল নিয়ে এসো যা একাই ফুটেছে ধান চারায়। মেনে নেব…

 

অনিশ্চিত

এ বিশ্ব একটা জাল। প্রতিটি মানুষ আর বস্তু, মানুষের সঙ্গে মানুষের— সবার মধ্যেই রয়েছে সম্পর্ক। তবে কোনওকিছুই অনিবার্য নয়। পেঁয়াজের খোসা যেমন ছাড়াতেই থাকে নিজেকে তবু প্যাঁচ কমে না সেরকমই এই সম্পর্ক। ধূসর পাণ্ডুলিপির কবিতার পাতা হয়ে ওঠা তুমি। যতদিন লিখে যেতে পারব ততদিন ফুটবে কুঁড়ি৷ কুড়িগ্রাম হয়ে ছড়াতে থাকবে সুবাস যেন আ থাউস্যান্ড ডাফোডিলস ফ্লাটারিং দেয়ার হেডস ইন দ্য ব্রিজ৷ সেই কুড়িগ্রামের মাঝেই ভেসে থাকবে এক একাকিনী। যেদিন আর লিখতে পারবে না সেদিন হয়তো সম্পর্কটায় তার আর প্র‍য়োজন নেই। সে এক ঘন ঢেউয়ের মতো তখন। কাছে আসার আগেই চুরমার… যতক্ষণ আশ ততক্ষণ শ্বাস। সে অনিবার্য থেকে যাওয়া নিয়ে জুড়ে জুড়ে যে পথ সেখানেই কারা যেন ফেলে রেখে গেছে ফিতে। দুধের পাতলা সর চিনি দিয়ে অল্প মুখে দিতেই ভয়, শেষ হয়ে যাবে তো। ফুরিয়ে যাওয়ার আগে….

 

মায়া

যে ঢেউ সংসার দেয় তার কাছে হেরে যাচ্ছি
নিয়তি অনেকটা বালির তাল
যেকোনও সময় বসে যেতে পারে পা
ক্রমশ চোখে ফুটে ওঠে মাধবীলতার খাঁচা
তার মধ্যে ছটফট করে নকল কাচের হীরে মোতি
যদি তুমি একটা ধারণ করো তবে সম্মতি দাও
চলে যাই বস্তুত যা কিছু হাতের বাইরে সেখানে
জল ছুঁয়ে ফেলে বিপদ বুঝিনি
তবে ঘন ঘাসের জঙ্গলে ধাতু খুলে ফেলে পোশাক ছাড়ব
এত নগ্ন হয়ে যাচ্ছি ঘর ঘর বলে
কই কেউ তো নোনা জল চেটে পালাতে বলল না

 

বিচ্ছেদ

হয়তো আমরা এখনও কথা বলব, যোগাযোগ রাখব, কিন্তু সেসব অনেকটা ফ্যামিলি অ্যালবামের জন্য। ছবিতে যেন এতটুকু অশান্তি না দেখা যায়। রেডরোডে ঘন কুয়াশার বুক চিরে ট্রাম চলে যেতে পারে ভেবে আমি আটকাতে শুয়ে পড়ি লাইনে। আমি হয়তো হাজার কিমি হাঁটতে পারব না তাই চলে যাওয়া আর বিরতির মধ্যে কোনও পার্থক্য দেখতে পাই না। না ফেরার পথে সময় সাধারণত বাজারের মতো। কে কতটা কম কিমি দেখাতে পারে। আমরা এরপরও হয়তো কথা বলব, সংসার করব, কিন্তু তা হবে অনেকটা অভিবাসী শ্রমিকের গলায় জমা কাঁটার মতো। গরম ভাত গেলার অভাব থাকলেই আমি খচখচে যন্ত্রণা রেখে দিতে পারব। তুমি তখনও শুধু ১৯ আর ২২ ক্যারাটের চোখে পা থেকে মাথা অব্ধি মানুষ মেপো।