Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

বীরভূমের বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক আবহ এবং আসন্ন লোকসভা ভোট

মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায়

 


জেলা হিসেবে বীরভূম এগিয়ে থাকা নয়। একপ্রান্তে রাজনগর, খয়রাসোল, অন্যদিকে মুরারই, নলহাটি। পথঘাটের অবস্থা ভাল, যোগাযোগ বেড়েছে, কিন্তু রোজগার বাড়েনি। বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ দক্ষিণভারতে অভিবাসী শ্রমিক। উন্নয়নের স্বাভাবিক চলনে যে শিল্প লাগে এখানে সে সবকিছু নেই, আছে এক ভয়াবহ খাদানশিল্প। ওই অঞ্চলে দূষণ মাত্রাতিরিক্ত। তার ওপরে সেই বহুবিতর্কিত দেউচা-পাঁচামি কয়লা প্রকল্প। একই সঙ্গে দূষণ ও উচ্ছেদ। কিন্তু যে-কোনও নির্বাচনে অনুন্নয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলেও বর্তমানে এ-দেশে সাম্প্রদায়িক পক্ষপাতিত্বের যে রাজনীতি কেন্দ্রীয় শাসকের প্রধান হাতিয়ার তার ছোঁয়া এখানেও লাগানোর চেষ্টা চলছে

 

সমাজমাধ্যমের একটি জনপ্রিয় স্থানীয় পৃষ্ঠায় বীরভূম কীসের জন্য বিখ্যাত এই প্রশ্নের বিবিধ উত্তরের মাঝে সবচেয়ে চর্চিত উত্তরে, না রবীন্দ্রনাথ নন, নামটি উঠে এল অনুব্রত মণ্ডলের। কিছুদিন আগেও এই নামটি বা ডাকনামে কেষ্টদা এই জেলার রাজনীতির সর্বেসর্বা ছিলেন, বলা হত তাঁর ইশারা ছাড়া গাছের একটি পাতাও নাকি নড়ে না। ২০২১ সালের স্মরণীয় বিধানসভা ভোট যখন বাংলা বিজয় সুনিশ্চিত করতে বিজেপির প্রচার তুঙ্গে, অর্থ ও প্রচারের মহিমায় এই বুঝি গেল গেল, তখনও শেষ হাসিটি তিনিই হেসেছিলেন। কিন্তু এখন চলছে শনির দশা, সকন্যা অনুব্রত তিহার জেলে। ফলে পরিস্থিতি খানিক বদলেছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে লাভবান হওয়ার কথা যে-দলের তাদের অবস্থাও সঙ্গীন। জেলার দুটি লোকসভার একটিতে বোলপুর কেন্দ্রে  বিজেপির প্রার্থী পিয়া সাহা নতুন মুখ এবং স্বল্পপরিচিত, অন্যদিকে বীরভূম আসনে বিজেপির প্রার্থীসঙ্কট।‌ বীরভূম কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী যখন সাঁইথিয়ায় প্রচারে ঢাক বাজাচ্ছিলেন সেই সময় তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। বিজেপি হয়তো অবস্থা বুঝেই আর একজনকে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল, এবার দেওয়ালে একের জায়গায় অপরের নাম লিখতে হবে, তাঁকে পরিচিত করাতে হবে, সে এক বিশাল হাঙ্গামা। এই জেলায় দুটি লোকসভা কেন্দ্র একটি বীরভূম, অন্যটি বোলপুর, যেটি তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত। বোলপুর কেন্দ্রের সঙ্গে লেজুড় হিসাবে যুক্ত আছে পূর্ব বর্ধমানের তিনটি বিধানসভা। শেষ ভোটে এখান থেকে দুই কেন্দ্রেই তৃণমূল নির্বাচিত হয়ে আছে। তৃণমূলের তরফে কোনও বিশেষ চমক নেই, গতবারের মতোই বোলপুর কেন্দ্রে প্রার্থী অসিত মাল এবং বীরভূম কেন্দ্রে প্রার্থী শতাব্দী রায়।

জেলায় ঘোরাঘুরি করলে বোঝা যাবে যে বোলপুর কেন্দ্রের চেয়ে বীরভূম কেন্দ্র নিয়ে সবাই বেশি চিন্তিত। যার অন্যতম প্রধান কারণ হল এই কেন্দ্রে তৃণমূলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং ইন্ডিয়া জোটের তরফে কংগ্রেসের যাকে প্রার্থী করা হয়েছে সেই মিল্টন রশিদ যথেষ্ট জনপ্রিয়। বিজেপির তরফে প্রার্থী হয়েছিলেন শীতলকুচি-খ্যাত আইপিএস অফিসার দেবাশিস ধর, কিন্তু ভোটে দাঁড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন তাঁর দফতর থেকে না নেওয়ায় তাঁর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটপ্রচারে এসে এরকম একটি আভাস দিয়েছিলেন, ফলে রাতারাতি বিজেপি অন্য একজনকে দিয়ে মনোনোয়নপত্র দাখিল করায় আপাতত দেবাশিসের বদলে দেবতনু বিজেপির বীরভূম কেন্দ্রের প্রার্থী। দেওয়াললিখন বদলাতে হচ্ছে আর দেবাশিস আদালতে গেছেন। অতএব বিজেপিকে সমস্তটাই নতুন করে সাজাতে হচ্ছে।

অনুব্রত মণ্ডলের উপস্থিতিতে গত একুশের ভোটে, মানে বিধানসভা ভোটে বিজেপির প্রবল হাওয়াতে বেশ কিছু নেতা-নেত্রী পাঁচিলে চড়ে বসেছিলেন এই ভেবে, যে-কোনও দিকেই নেমে পড়ব। কিন্তু একুশের সেই বিখ্যাত ভোটে তৃণমূল জিতে যাওয়ায় পাঁচিলের দাদা-দিদিরা এখন আবার তৃণমূলে। অনুব্রতর বীরভূমে উন্নয়ন ইত্যাদি ভয়ানক জিনিসপত্র রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকার দরুন গত পৌরসভা নির্বাচনে এখানে বিজেপি প্রার্থী দিতে পারেনি। কিন্তু পরবর্তীকালে অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর তারা যথেষ্ট উৎসাহী এবং উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে, শুধু তারাই নয় এখানকার অপর বিরোধীপক্ষ অর্থাৎ সিপিএম এবং কংগ্রেস উভয়েই খানিকটা আশাবাদী হয়েছে। তবে বীরভূমে বিরোধী বিজেপির মূল বক্তব্য এখনও গরুর রচনাতেই আটকে আছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও অনুব্রতর কথাই বলেন।

 

পড়ুন, ইলেকশন এক্সপ্রেস ২০২৪

 

বীরভূম শব্দের উৎস নিয়ে বহু মত আছে। সাঁওতালি ভাষায় বীর মানে জঙ্গল, এখানে একদা ঘন জঙ্গল ছিল আবার আরেক মতে বীর শব্দের সঙ্গে তন্ত্রের যোগ আছে। কিন্তু বর্তমান বীরভূমে সাদা বাংলায় বীর বাহুবলীদেরই রাজত্ব। তৃণমূলের তরফে অনুব্রতর স্থলাভিষিক্ত করার জন্য আর এক শক্তিমান কাজল শেখকে জেলা পরিষদের সভাধিপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু কাজল শেখের অতি তৎপরতা এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি করে যে শেষপর্যন্ত তাঁকে খানিকটা কিনারায় সরিয়ে দেওয়া হয়। অনুব্রত মণ্ডল কাজ করতেন ঘরে বসে। তাঁর দূর-পরিচালনায় সমস্ত খেলাই ‘সফল’ভাবে চলত, যার যা অভাব-অভিযোগ তা নিয়ে সকলেই তৃণমূল অফিসে হাজিরা দিতেন। সেখানেই ফয়সালা হত।‌ কাজল শেখের কর্মপদ্ধতি একটু আলাদা। তিনি স্কুলে ঢুকে মিড ডে মিল চেখে দেখেন, উচ্চমাধ্যমিকের সরকারি মিটিংয়ে ঢুকে বক্তব্য রাখেন। যেগুলি বহু জায়গায় তৃণমূলকেই সমস্যায় ফেলে।

বাহুবলীদেরই রাজত্ব। নানুরের পাপুরিতে নিজের এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারকারী কাজল সম্পর্কে বলা হয় সেখানে নাকি কাজলের অনুমতি ছাড়া কেউ শ্বাস নিতে পারেন না।

অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে কাজল শেখের দ্বন্দ্ব প্রাচীন।‌ শোনা যায় এই দ্বন্দ্বের ফলে তৃণমূলের উপর রাগ করে কাজল নানুর বিধানসভা কেন্দ্রের একটি বিধানসভা ভোটে সিপিএম প্রার্থীকে জিতিয়ে দেন। সেই শ্যামলী প্রধান এখন বোলপুরে ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী, অবশ্য এখন কাজল শেখ আর তার পাশে নেই। বোলপুর বিধানসভার বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিংহ রাজ্যের মন্ত্রী, বিশ্বভারতীর প্রাক্তন অধ্যাপক এবং সাধারণভাবে সকলের পছন্দের লোক, কিন্তু ভোটের আগে তার বাড়িতে ইডি তল্লাশি করে টাকাপয়সা পেয়েছে বলে বাজারে খবর। যদিও টাকাপয়সা সংক্রান্ত অনিয়ম তাঁর বিরুদ্ধে আগে কেউ তেমন শোনেননি। কাজলকে পুনরায় কোর কমিটিতে নিয়ে আসা হয়েছে।‌

বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস উভয়েরই অবস্থা রাজ্যের অন্যান্য বেশিরভাগ জায়গার মতোই টিমটিমে, যে-কোনও ইস্যুতে শ্যাম রাখি না কুল রাখি, এইভাবেই তাদের দিন যায়। সাংগঠনিক দুর্বলতাও এদের প্রচারে পিছিয়ে রাখছে।

জেলা হিসেবে বীরভূম এগিয়ে থাকা নয়। উন্নয়ন শব্দটি এখানে অন্য মাত্রা পেলেও বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত জেলা। ঝাড়খণ্ডের সীমাবর্তী হওয়ার কারণে সেই জায়গাগুলিতে অন্যরকম রাজনৈতিক প্রভাব আছে। বোলপুরে উন্নয়নের গতিপথ বড় বিচিত্র। এই লোকসভা কেন্দ্র তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত হওয়ার আগে এখানে সাতবারের অবিসংবাদিত সাংসদ ছিলেন লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ বামফ্রন্টের সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। কালে সেই কৌলিন্য হারিয়েছে এই লোকসভা। বর্তমান প্রধান বিরোধীপক্ষের কাছে এই কেন্দ্রটি গুরুত্বহীন, ফলে বিজেপির তারকা প্রচারক দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে উত্তরপ্রদেশের মুখমন্ত্রী উভয়েই এসেছেন বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের প্রচারে।

শ্রী সোমনাথ চট্টোপাধ্যাযের আমলেই শান্তিনিকেতনে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জমির চেহারা বদলে রীতিমতো উপনগরী তৈরি হয়েছে মধ্য ও উচ্চবিত্ত বাঙালির ঔপনিবেশিক স্বপ্নপূরণে।‌ তৃণমূল আমলে সেটি এতটাই বিস্তীর্ণ এবং বিকট যে খোয়াই-সংলগ্ন গোটা অঞ্চল জুড়ে আমাদের ছোট নদী কোপাই ছাড়িয়ে এক ভয়াবহ পর্যটনশিল্প তৈরি হয়েছে। বিশ্বভারতীর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ এখন সোনাঝুরির হাট যেখানকার তথাকথিত হস্তশিল্পের বিকিকিনি এবং নাচগানের তামাশা এক অদ্ভুত অর্থনীতি ও পরিবেশ ধ্বংসের মাইলফলক হয়ে থাকবে। এই ‘শান্তিনিকেতনী’ আবহ পেরোলেই রুক্ষ ও মুমুর্ষু জেলা। একপ্রান্তে রাজনগর, খয়রাসোল, অন্যদিকে মুরারই, নলহাটি। গোটা পশ্চিমবঙ্গের মতোই পথঘাটের অবস্থা ভাল, যোগাযোগ বেড়েছে, কিন্তু রোজগার বাড়েনি। বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ দক্ষিণভারতে অভিবাসী শ্রমিক। উন্নয়নের স্বাভাবিক চলনে যে শিল্প ইত্যাদি লাগে এখানে সে সবকিছু নেই, আছে এক ভয়াবহ খাদানশিল্প। মহম্মদবাজার এলাকায় স্বাধীনতার সময় থেকেই যেটি মালিকের সিন্দুক ভর্তি করলেও শ্রমিকদের কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে রেখেছে। ওই অঞ্চলে দূষণ মাত্রাতিরিক্ত, অতিমারির সময়ে খাদান বন্ধ থাকায় হাজার হাজার মানুষ বিপন্ন হয়। তার ওপরে আসে সেই বহুবিতর্কিত দেউচা-পাঁচামি কয়লা প্রকল্প। একই সঙ্গে দূষণ ও উচ্ছেদ। সেই নিয়ে তখন সরগরম হয় গোটা রাজ্য কিন্তু কেন্দ্র এবং রাজ্যের সরকার উভয়েই পক্ষে থাকায় এ-নিয়ে তেমন কিছু শেষ‌ অবধি ঘটল না। জমি হারানো, চাকরি পাওয়া, টাকা পাওয়া ইত্যাদি হিসেবেই বিষয়টি আটকে রইল। যদিও প্রকল্পের কাজ তেমন কিছু হয়েছে বলে জানা যায় না। রামপুরহাট যোগাযোগের কারণে বাণিজ্যিক দিক থেকে খানিকটা সফল এবং চাকচিক্যময় কিন্তু তার ফল সাধারণে নেই। জেলার ৮৫ ভাগ মানুষ গ্রামেই বাস করেন।‌

বীরভূমের আর এক দুর্নীতির উৎস বালির ঘাট। নদীর বুক থেকে যথেচ্ছ বালি তুলে নেওয়ায় একদিকে যেমন নদী মরছে, অন্যদিকে ঘাটের দখল নিয়ে চূড়ান্ত দ্বন্দ্ব ও মারামারি লেগেই আছে।

যে-কোনও নির্বাচনে অনুন্নয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। কিন্তু বর্তমানে এ-দেশে সাম্প্রদায়িক পক্ষপাতিত্বের যে রাজনীতি কেন্দ্রীয় শাসকের প্রধান হাতিয়ার তার ছোঁয়া এখানেও আছে।

 

পড়ুন, গুজরাত গণহত্যার বিচার হয়নি

 

বীরভূমের জনসংখ্যার মধ্যেও এক বিশেষ বৈচিত্র্য আছে। এখানে মুসলমান জনসংখ্যা ৩৫ শতাংশের বেশি, তফসিলি জাতি ২৯ শতাংশ এবং জনজাতি গোষ্ঠীও ৭ শতাংশ। কোনও বিশেষ গোষ্ঠীর আধিপত্য এখানে নেই। বরং এই বৈচিত্র্যের ফলেই এখানকার মাটিতে এক বহুত্ববাদী সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। এখানকার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ঈর্ষণীয়। একদিকে চণ্ডীদাস, একদিকে জয়দেব। তারই মধ্যে বাউলের সহজিয়া সাধনা। পাঁচটি সতীপীঠ এবং এক সিদ্ধপীঠ এক জেলায়, পাশাপাশি দুই বৃহৎ পীরস্থান পাথরচাপড়ির দাতাবাবা আর খুষ্টিগিরির পীর বংশ।‌ নিত্যানন্দের বীরচন্দ্রপুর। আর সবার উপরে রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন। ঘটনাক্রমে এই বিশ্বভারতী গত পাঁচ বছর রাজনৈতিক উত্তাপে জর্জরিত ছিল। কেন্দ্রীয় শাসকের অনুমোদিত উপাচার্য পদে পদে সমস্যার সৃষ্টি করেছেন ছাত্র, অধ্যাপক, কর্মী, বোলপুরের সাধারণ মানুষ, সবার সঙ্গে। তাঁদের স্মরণে আছে কীভাবে বিশ্বভারতীকে সবদিক থেকে নষ্ট করে ফেলার কাজটি করছিলেন তিনি। সকলেই মনে করেন যে তাঁর আমলে রবীন্দ্রনাথের ভাবনাকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলেছে, সর্বোপরি অমর্ত্য সেনকে যেভাবে অপমান করা হয়েছে, তাতে এই অঞ্চলে সমর্থন পাওয়া মুশকিল।

কিন্তু গোটা রাজ্যের মতো এখানেও পরিস্থিতি বদলেছে মূলত রামের নামেই। সম্প্রতি যোগী আদিত্যনাথ সিউড়িতে রামনবমীর মিছিলে আক্রমণকারীদের উল্টো করে ঝোলানো এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের উত্তরপ্রদেশীয় নিদান দিয়েছেন। প্রবীণ সমাজকর্মীদের স্মৃতিতে এই জেলায় একসময় বিজেপি এবং মুসলিম লিগ উভয়েরই নির্বাচনে জামানত বাজেয়াপ্ত হত, তুলনায় অতিবামেরা জনপ্রিয় ছিলেন, কিন্তু এখন অবস্থা বদলেছে। বেশ কিছু হিন্দুপ্রধান গ্রামে বিজেপির প্রতি প্রচ্ছন্ন সমর্থন আছে, মুসলমান-প্রধান অঞ্চলে প্রথমে তৃণমূল এবং পরে কংগ্রেস-সিপিএমের স্থান। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সময় নানাবিধ উস্কানির ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে জেলায় অতি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে কখনওই উত্তেজনা ছড়ায়নি। আদিবাসীদের একাংশকে হিন্দু বানানোর চেষ্টা প্রবল, তবু এই জেলায় আদিবাসী সম্প্রদায় বহু বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে থাকেন সেই বাম আমলে থেকে, ফলে এখানে হিন্দু-হিন্দি-হিন্দুস্তানের পক্ষে তেমন সমর্থন হবে না।

যদিও লোকসভা ভোট, তবু সাধারণের ভোট দেওয়ার মাপকাঠি সর্বদাই স্থানীয় অবস্থা। সার্বিকভাবে দেখলে পঞ্চায়েত এবং পৌরসভা যেখানে মানুষ স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছে পরিষেবা ঠিকমত পেয়েছেন, সেখানে তাঁর কল্যাণেই ভোট আসবে বলে মনে হয়। প্রার্থী সেখানে প্রধান বিচার্য হবে না। বীরভূমের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভূমিপুত্র তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় যে গণদেবতাকে জেগে উঠতে দেখেছিলেন সমাজ ও রাষ্ট্রের দু্ঃসময়ে, আপাতত শেষ কথা সেখানেই নিহিত।


*মতামত ব্যক্তিগত