Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

স্নায়ুসূত্রে উত্তেজনা-প্রবাহ

শুভমন

 

 


ফ্যাসিবাদী কাঠামোয় অপপ্রচারের পন্থা মূলত তিন প্রকার। ডাহা মিথ্যাচার, আংশিক সত্যের অপলাপ এবং বিরুদ্ধ মতের কণ্ঠরোধ। হাল আমলের ভারতে তৃতীয় পথটির রমরমা সর্বজনবিদিত। প্রতিবাদী ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংবাদমাধ্যম কাউকেই রেয়াত করা হচ্ছে না। প্রথম পন্থাটি কিছু সময়ে কাজে দিলেও মানুষের কাছে সম্পূর্ণ মিথ্যাচারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা থেকেই যায়। বরং দ্বিতীয় পথটি মোক্ষম। আংশিক সত্যে রং চড়িয়ে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পেশ করা হয় তাকে সুসজ্জিত মোড়কে

 

গাঁদাগাছে হামেশাই একটা রোগ দেখা যায়। চলতি কথায় বলে মাকড় লাগা। পোশাকি নাম স্পাইডার মাইট। অসংখ্য বিন্দুবৎ পোকায় রাতারাতি সমস্ত পাতা, ডালপালা ছেয়ে ফেলে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মিহি জালে ঘিরে ফেলে গাছের গোটা শরীর। জালের মোড়কে আচ্ছন্ন গাছটি অচিরেই যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় পরিপার্শ্ব থেকে। ক্রমে সালোকসংশ্লেষের জোগানেও ভাঁটা পড়ে। ঠিক যেমন সেনাবেষ্টিত গাজায় বলপূর্বক পৌঁছতে দেওয়া হয় না প্রযোজনীয় রসদ, দিনের পর দিন বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয় বহির্বিশ্ব থেকে। ইত্যবসরে গাছের শরীরে সঞ্চিত যাবতীয় পুষ্টিরস শুষে নেয় মাকড়ের দল। ক্রমশ মৃত্যুর দিকে এগোয় গাছটি। প্রকৃতপক্ষে কেবল গাঁদা নয়, বিশ্বজুড়ে কয়েকশো প্রজাতির উদ্ভিদ এই মারণ রোগের শিকার। অসুখটি আন্তর্জাতিক।

পৃথিবীর ইতিহাসে যখনই কোনও শাসক নিজের কৃতকর্মের উপর আস্থা রাখতে পারেনি, তখনই প্রত্যক্ষ প্রচারের পাশাপাশি দেখা গেছে তাকে পরোক্ষ অপপ্রচারের আশ্রয় নিতে। অপপ্রচারের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে সে বিভিন্ন গণমাধ্যমকে। যেখানে আদতে কোনও মাধ্যম নয়, বরং ব্যবহৃত হতে থেকেছে দেশের জনসাধারণই।

অসংখ্য দেশবাসীর মগজধোলাইয়ের এই পরিকল্পিত প্রয়াসগুলি কি সংঘটিত অপরাধের পর্যায়ে পড়ে না? কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডাচ মনস্তাত্ত্বিক জুস্ট মারলো বিষয়টি নিয়ে প্রায় আড়াই দশক গবেষণা করে ১৯৫৬-তে একটি বই লেখেন— দ্য রেপ অফ দ্য মাইন্ড: দ্য সাইকলজি অফ থট কন্ট্রোল, মেন্টিসাইড অ্যান্ড ব্রেনওয়াশিং। তিনি একে গণমানসের ধর্ষণ বলেই আখ্যা দেন। তাঁর মতে জনগণের ভাবাবেগকে প্রভাবিত করতে প্রচারবিশেষজ্ঞরা মানুষের চিন্তার স্বতঃস্ফূর্ততায় জল ঢেলে দেয়। যা গণচেতনায় সাময়িক বন্ধ্যাত্ব আনে। অথচ প্রচারের কুহকে মশগুল মানুষ সেই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও আত্মাভিমানের বিভ্রমে বুঁদ হয়ে থাকে।

মানুষকে বোকা বানানো সহজ নয়। গতানুগতিক পদ্ধতিতে আচমকা তার চিরাচরিত চিন্তাধারার বদল ঘটানো দুঃসাধ্য। তাই তার মস্তিষ্ক প্রক্ষালনের জন্য প্রয়োজন সুকৌশলে জনসমষ্টির স্নায়ুসূত্রে আকস্মিক উত্তেজনা প্রেরণ। যার উৎস ধর্মীয় ভাবাবেগ, জাতীয়তাবাদী সুড়সুড়ি, সামাজিক শ্রেণিবৈষম্যের জাত্যাভিমান বা অন্য কোনও স্পর্শকাতর বিষয়। জনমানসে পায়ের তলায় মাটি হারানোর আশঙ্কাজনিত ভয়ের বাতাবরণ নির্মাণ এই অপপ্রচারের অন্যতম আয়ুধ। অর্থাৎ উত্তেজনাটি অপরিহার্য। আর ততোধিক গুরুত্বপূর্ণ হল প্রবাহ। কারণ ক্রমান্বয়ে ঢেউ না এলে মিথ্যে একসময়ে স্তিমিত হয়ে যায়। বিপরীতে সত্যের লার্জার দ্যান লাইফ সাজার কোনও দায় থাকে না। গোয়েবেলসের তত্ত্ব তো সকলেরই জানা।

ফ্যাসিবাদী শাসক উপলব্ধ যাবতীয় গণমাধ্যমকেই অপপ্রচারের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে। প্যামফ্লেট, পোস্টার, বেতার, দূরদর্শন, ওটিটি, পত্রপত্রিকা, সমাজমাধ্যম, সিনেমা, সাহিত্য, সঙ্গীত। স্তুতিনির্মাণে অপসাহিত্যের প্রয়োগ সুপ্রাচীন। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি ছাপা হরফের প্রতি দুর্বলতা। ছাপা অক্ষরে মিথ্যেও বহু ক্ষেত্রেই আপাত সত্যির বিভ্রম রচনা করে। শাসক তাই ভরসা খোঁজে স্তুতিসাহিত্য নির্মাণ ও ইতিহাস বিকৃতিতে। তথ্যসূত্ররূপে যার উল্লেখ চলতে থাকে পরবর্তী প্রচারমূলক নাটক, চলচ্চিত্র প্রভৃতিতে। উপলব্ধ মাধ্যমগুলির মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী অডিও-ভিজুয়াল। ফলে গোটা পৃথিবী জুড়েই দেশে দেশে যুগে যুগে চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র পরিচালকেরা একে যেমন প্রতিরোধের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন, ঋত্বিক ঘটক যেমন যুদ্ধের একটা হাতিয়ার হিসেবে সিনেমাকে দেখেছিলেন, বিপরীতে তেমনই প্রচারকের প্রিয় মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে এটি। হিটলারের জার্মানিতে প্রচারমূলক চলচ্চিত্রের প্রথম সারিতে জায়গা করে নিয়েছিল দ্য ভিকট্রি অফ ফেইথ (১৯৩৩), ট্রাম্প অফ দ্য উইল (৩৫), দ্য মাস্টার (৩৭), পিপল ইন দ্য স্টর্ম (৪১), দ্য গ্রেট লাভ (৪২) প্রভৃতি ছবি। ইতালিতে তেমনই সেন্টিনেলস অফ ব্রোঞ্জ (৩৭), দ্য ক্যাভালিয়ার  ফ্রম ক্রুয়া (৪০), বেনগাসি (৪২) ইত্যাদি। মুসোলিনি স্বয়ং বলেছিলেন যে সিনেমাই রাষ্ট্রশক্তির সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র। অন্যান্য বহু দেশে বহু শাসকের আমলেও এমন প্রচারসর্বস্ব চলচ্চিত্রের তালিকাটি নেহাত নাতিদীর্ঘ নয়।

 

পড়ুন, ইলেকশন এক্সপ্রেস ২০২৪

 

সাম্প্রতিক অপপ্রচারের অনুষঙ্গ মূলত রাজনীতিকেন্দ্রিক হলেও ইংরেজি প্রোপাগান্ডা শব্দের ব্যুৎপত্তি কিন্তু নিখাদ ধর্মীয় পরিসরে। রোমান ক্যাথলিক ধর্মযাজক পঞ্চদশ গ্রেগরি ১৬৬২-তে “কংগ্রেগাতিও দে প্রোপাগান্দা ফিদে” নামে যে সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেন, সেই লাতিন শব্দবন্ধ থেকেই প্রোপাগান্ডা শব্দের জন্ম। আর ধর্মীয় ভাবাবেগকে যদি সুকৌশলে উস্কে দেওয়া যায় রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থতায়, তবে যে প্রচারকের পোয়াবারো। এ-দেশে সমসময়ের বেশ কিছু চলচ্চিত্রের কথাই ধরা যাক। কাশ্মির ফাইলস, রাম সেতু, কেরালা স্টোরি, ৭২ হুরে, রাজাকার, স্বতন্ত্র বীর সাভারকার, আর্টিকল ৩৭০, জেএনইউ, সবরমতী রিপোর্ট, গোধরা, ডাইরি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল— প্রবাহটা চলতেই থাকছে। আদতে এগুলি কিন্তু আলাদা আলাদা সিনেমার নাম নয়, বরং একটাই পূর্ণদৈর্ঘ্য “ছায়া”-ছবির এক একটি ফ্রেম!

সংখ্যালঘু-বিদ্বেষ, সরকারের অন্ধ গুণকীর্তন, রাষ্ট্রব্যবস্থার সমালোচকদের প্রতি বিষোদ্গার এবং সমাজে সার্বিক ঘৃণা বণ্টনই সে-ছবির সারাৎসার। হিন্দি বলয়ে এমন ছবিকে চিহ্নিত করা হচ্ছে গোদি মুভি নামে। এ রোগের উপসর্গগুলিরও একটা নির্দিষ্ট চরিত্র চোখে পড়ছে। সচরাচর সিনেমার বিষয়বস্তুর আভাসটুকু কেবল দেওয়া থাকে তার ট্রেলারে, ক্লাইম্যাক্স ফাঁস করা হয় না। অংশত উচ্চারিত হয় বলেই তা কৌতূহল জাগায় দর্শকের মনে। কিন্তু এ-ধরনের ছবিগুলির ট্রেলারও হচ্ছে স্বয়ংসম্পূর্ণ বিদ্বেষ-বিভূষিত! কারণ শেষমেশ মূল ছবি না দেখলেও যাতে ট্রেলারটুকুই ঘৃণা বিপণনের তাগিদে ছড়িয়ে দেওয়া যায় যথেচ্ছভাবে। বণ্টনের তাড়না এমন মাত্রায় গিয়ে ঠেকেছে যে হাতে গরম গোদি মুভি পাতে পড়া মাত্রই অতি দক্ষিণপন্থী শাসিত রাজ্যে তাদের কর ছাড়ের হিড়িক পড়ে যাচ্ছে।

ফ্যাসিবাদী কাঠামোয় অপপ্রচারের পন্থা মূলত তিন প্রকার। ডাহা মিথ্যাচার, আংশিক সত্যের অপলাপ এবং বিরুদ্ধ মতের কণ্ঠরোধ। হাল আমলের ভারতে তৃতীয় পথটির রমরমা সর্বজনবিদিত। প্রতিবাদী ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংবাদমাধ্যম কাউকেই রেয়াত করা হচ্ছে না। প্রথম পন্থাটি কিছু সময়ে কাজে দিলেও মানুষের কাছে সম্পূর্ণ মিথ্যাচারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা থেকেই যায়। বরং দ্বিতীয় পথটি মোক্ষম। আংশিক সত্যে রং চড়িয়ে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পেশ করা হয় তাকে সুসজ্জিত মোড়কে। যাকে বলে তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম।

ব্যাপারটা খোলসা করার জন্য দুয়েকটা নমুনা নেড়েচেড়ে নেওয়া যাক বরং। আর্টিকল ৩৭০ ছবির সংলাপে নায়িকা জুনি হাকসার[1] অভিযোগ করছেন, তাঁর স্কুলের যে সহপাঠী প্রতিটি পরীক্ষায় প্রথম হতেন, সেই শিবম কুমার এখন সাফাইকর্মীর চাকরি করতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ আর্টিকল ৩৭০ নাকি কোনও তফসিলি জাতির মানুষকে সরকারি চাকরি করার অধিকারই দিত না! জুনি আরও বলছেন যে কোনও কাশ্মিরি নারী কাশ্মির-বহির্ভূত কাউকে বিয়ে করলে আর্টিকল ৩৭০ তাঁকে পারিবারিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে।

এখন বাস্তবে যে-ছেলে এতটাই মেধাবী যে প্রত্যেক পরীক্ষায় প্রথম হন, তাঁকে তো সরকারি চাকরির মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকতে হবে না। তিনি নিজের কৃতিত্বেই অন্য কোনও কর্ম সংস্থান করে নিতে পারবেন। প্রকৃতপক্ষে আর্টিকল ৩৭০ অনুসারে জম্মু ও কাশ্মিরে নিজস্ব সংবিধান প্রযোজ্য ছিল। কাশ্মিরের সংবিধান জাত, ধর্ম, লিঙ্গ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষকে স্নাতক স্তর পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষালাভের সুযোগ দেয়। এবং কর্মক্ষেত্রে সকলের সমান অধিকার প্রদান করে।[2]

কাশ্মিরে মোট তফসিলি জনগোষ্ঠীর সংখ্যা তেরোটি। বরওয়ালা, বসিৎ, বটওয়াল, চামার বা রামদাসিয়া, চুহরা, ধিয়ার, ডোম বা মহাশ, গরদি, জলাহা, মেঘ বা কবীরপন্থী, রতল, সরিয়ারা এবং ওয়াতাল।[3] এঁরা প্রত্যেকেই শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে সমান অধিকার পান। তবে কারা পান না? ১৯৫৭-য় জম্মুতে সাফাইকর্মীরা একত্রে ধর্মঘট ঘোষণা করলে বেগতিক দেখে তদানীন্তন বক্সি সরকার পাঞ্জাব থেকে বাল্মীকি জনজাতির কিছু সাফাইকর্মীকে জম্মুতে নিয়ে আসে। তাঁদের পরিবার-সহ থাকার জন্য বাসস্থান দেওয়া হয়। তাঁদের সন্তানদের শিক্ষার দায়িত্ব নেওয়া হয়। কিন্তু সমস্যা দেখা যায় পরবর্তী প্রজন্মে গিয়ে। এঁদের পরবর্তী প্রজন্ম যেহেতু কাশ্মিরি নাগরিক নন, তাই কাশ্মিরের সংবিধান তাঁদের ওপর প্রযোজ্য হয় না। ফলে সংবিধান প্রদত্ত সুযোগসুবিধা থেকেও তাঁরা বঞ্চিত হয়ে পড়েন।

২০০১-এর শেষ আদমসুমারি অনুযায়ী জম্মু-কাশ্মিরে তফসিলি জনজাতির সংখ্যা ৭ লক্ষ ৭০ হাজার।[4] আর বাল্মীকি জনজাতির সংখ্যা পাঁচ হাজারের কম। অর্থাৎ তাঁরা মোট তফসিলির প্রায় ০.৬ শতাংশ। এ-কথা অনস্বীকার্য যে একজন মানুষও প্রাপ্য সরকারি সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়াটা বাঞ্ছিত নয়। কিন্তু সিনেমাটিতে ওই ০.৬ শতাংশ প্রকৃত সত্যকে সমগ্র (১০০ শতাংশ) তফসিলি জাতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় ১৬০ গুণ অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয়েছে।

আবার কাশ্মিরি নারী অ-কাশ্মিরি কাউকে বিয়ে করলে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার যে গল্প ছবিটিতে শোনানো হয়েছে, সেটি আদতে পুরনো আইনের একটি অলক্ষ্যিত ফাঁক। ২০০২-এর ৭ অক্টোবর জম্মু-কাশ্মির হাইকোর্ট ওই নিয়ম খারিজ করে দেয়।[5]

 

পড়ুন, গুজরাত গণহত্যার বিচার হয়নি

 

অপপ্রচারমূলক চলচ্চিত্রে এভাবেই অতিকথন চলছে! এ-ছবিতে খলনায়ক বানানো হয়েছে মানবাধিকার কমিশন ও সুশীল সমাজকে। জাহাঙ্গির ন্যাশানাল ইউনিভার্সিটি নামাঙ্কিত জেএনইউ ছবিতে নাম বিকৃত করে আদতে সন্ত্রাসবাদের আখড়া সাজানো হয়েছে দেশের প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটিকে। কাশ্মির ফাইলসে গোপন রাখা হয়েছে ৯০-এর রাষ্ট্রপতিশাসিত কাশ্মিরে পণ্ডিত বিতাড়নের পেছনে তদানীন্তন রাজ্যপাল জগমোহন মলহোত্রার কদর্য অবদান। যিনি ইমার্জেন্সির সময় সঞ্জয় গান্ধির দিল্লি সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পে তুর্কমান গেটে মুসলিম বস্তির উপর বুলডোজার চালিয়ে প্রথম সংবাদ শিরোনামে আসেন। পরবর্তীতে যিনি প্রথমে রাজ্যসভায় ও পরে লোকসভায় বিজেপির সাংসদ হন। বস্তার ছবিতে বামপন্থীদের প্রকাশ্য রাস্তায় সরাসরি গুলি করে হত্যা করার ফতোয়া জারি করা হচ্ছে। পিঠ বাঁচাতে সিনেমাগুলির শুরুতে উল্লেখ করা থাকছে যে সেগুলি আদৌ বাস্তবভিত্তিক নয়, বরং সম্পূর্ণ কাল্পনিক। তা সত্ত্বেও উপস্থাপনের আতিশয্যে মজে যাচ্ছেন বহু দর্শকই।

জনগণের এমন মগজধোলাইয়ের পরেও এই ভেবে অনেকে চুপ থাকেন যে সরাসরি তাঁদের তো আর কোনও ক্ষতি হচ্ছে না। গলদ থেকে যায় সেখানেই। কারণ চরিত্রগতভাবে ফ্যাসিবাদ কাউকেই ছাড়ে না। প্রতিটি প্রজাকে বঞ্চিত করার মধ্যে দিয়েই সে নিজেকে টিকিয়ে রাখার রসদ খোঁজে মাকড়ের মতো।

তবে আশার কথা, পৃথিবীর ইতিহাসে ফ্যাসিবাদ কখনওই দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। মানুষ ঠকানোর অপপ্রয়াসকে মানুষই একদিন সপাটে প্রত্যাখ্যান করে। দু-একটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে অপপ্রচারের অধিকাংশ ছবিই কিন্তু ইদানিং প্রেক্ষাঘরে দীর্ঘায়ু হচ্ছে না আর। ওটিটির অতিথি হতে হচ্ছে অনতিবিলম্বে। দেশের বিভিন্ন মহলে এই সিনেমা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠেছিল আগেই, গণভাষ্যেও সে প্রতিরোধ কিন্তু এখন থাকছে না আর অব্যক্ত।


[1] অভিনয়ে ইয়ামি গৌতম।
[2] Justice Anand, A. S. The Constitution of Jammu & Kashmir — Its Development & Comments. 8th Ed. Universal. p195.
[3] Dr. Dabla, Bashir Ahmad. Scheduled Caste in Jammu & Kashmir, a study of Education and Social Mobility among SC children. 1st Ed. Jay Kay Books. p55.
[4] Census of India 2001.
[5] দ্রষ্টব্য, টীকা ১। পৃ.১৮৬-৮৭।