Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা চালানো, বড় করা— এটাই এখন সবচেয়ে বড় চিন্তা

সুজিত চক্রবর্তী

 


আমার মেয়ে আর ছেলে দুজনেই স্কুলে পড়ে। মেয়ে ব্রাহ্ম গার্লসে, ছেলে টাকি-তে। ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করে বড় কিছু হোক, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার কিছু, সে তো চাই বটেই। কিন্তু তাতে তো খরচা আছে প্রচুর। সংসার-খরচের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে এখন এই ছেলেমেয়েদের পড়াশোনাতেই। ওরা বড় হচ্ছে, বইখাতা কেনা, একজন দিদিমণি আছেন— তাঁর মাইনে দেওয়া, এসবেই সবচেয়ে বেশি খরচ। কিন্তু আয় তো বাড়েনি

 

আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা সবই কলকাতায়। কলকাতার কেশব চন্দ্র সেন স্ট্রিটে, হরিজন বস্তিতে। বিয়ে করেছি ১৩ বছর হল। এক ছেলে, এক মেয়ে আছে। মেয়ে বড়, ছেলে ছোট। বাড়িতে বৌ আর ছেলেমেয়েরা ছাড়া আর আমার মা আছে। মা উপার্জন করে। সেটা দিয়ে মা নিজের খরচ চালায়। আমি মায়ের টাকায় হাত দিই না।

আমি বাইন্ডিং-খানায় কাজ করি। বই-বাঁধাই কারখানায়। আমার এখানে বারোমাসই কাজ থাকে। মোটামুটি মাসে ১০০০০ টাকা মতন রোজগার হয়। এটাই আমার পরিবারের মোট রোজগার। বৌ ঘরের কাজকর্মই করে, টাকা উপার্জন কিছু করে না। আমার রোজগারের টাকা দিয়েই মোটামুটি টেনেটুনে চলে। তবে ধারদেনা তো করতেই হয়। বারোমাসের মধ্যে অন্তত পাঁচ-ছ মাস ধার করতে হয়। গত কয়েক বছরে আমার আয় সেরকম কিছু বাড়েনি।

আগের চেয়ে এখন সংসার চালানো অনেক কঠিন হয়েছে। আয় বাড়েনি, কিন্তু জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। ছেলেমেয়েরা বড় হচ্ছে, ওদের পড়াশোনার খরচ বাড়ছে। আমার মেয়ে আর ছেলে দুজনেই স্কুলে পড়ে। মেয়ে ব্রাহ্ম গার্লসে, ছেলে টাকি-তে। ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করে বড় কিছু হোক, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার কিছু, সে তো চাই বটেই। কিন্তু তাতে তো খরচা আছে প্রচুর। কেউ যদি সাহায্য-টাহায্য করে পরবর্তীকালে, দেখা যাবে।

সত্যি বলতে, সংসার-খরচের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে এখন এই ছেলেমেয়েদের পড়াশোনাতেই। স্কুলের বইখাতা কেনা— যত ক্লাস বাড়ছে, বইপত্রও বাড়ছে, একজন দিদিমণি আছেন— তাঁর মাইনে দেওয়া, এসবেই সবচেয়ে বেশি খরচ হয়। আমাদের কাজের অবস্থাও তো ভাল না। দেশে খেটেখাওয়া মানুষদের কারও কাজকর্মই ঠিকমতো চলছে বলে মনে হয় না। ফলে পকেটে পয়সাও ঠিকমতো আসছে না। বললামই তো, যে খরচ বাড়ছে দিন-দিন, অথচ আয় একই জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। সংসার চালানো, ছেলেমেয়েদের মানুষ করা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

 

পড়ুন, ইলেকশন এক্সপ্রেস ২০২৪

 

বাড়িতে মায়ের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের কার্ড আছে, বৌয়ের নেই। সরকারের থেকে এখন এইসব যা যা পাই, তার মধ্যে রেশনের চালটা ফ্রিতে পাচ্ছি, আর মা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পাচ্ছে। এগুলোতে কিছুটা উপকার হয়।

কাজের পর বাড়ি গিয়ে টিভিতে খবর দেখি প্রতিদিন। খবরের কাগজ পড়া হয় না। এবার ওই খবর দেখে যা বুঝি, দেশ বলুন, বা আমাদের রাজ্য, ভালভাবে মোটেই চলছে না। চারিদিকে চুরি-ছিনতাই… একে কি ভালভাবে চলা বলে? যাদের চাকরি পাওয়ার যোগ্যতা নেই, তারা চাকরি পেয়ে যাচ্ছে, যাদের যোগ্যতা আছে তারা পাচ্ছে না— এই তো সব চলছে! কার কথা আর কী বলব, সব তো একই। পরিবর্তন হলে যে উন্নতি হবে তার কোনও গ্যারান্টি আছে? কেউই গ্যারান্টি দিতে পারবে না। হতে পারে উন্নতি— হলেও হতে পারে। তবে তার গ্যারান্টি দিয়ে বলা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়।

ভোট তো আমরা দিই মানুষটা বা দলটা ভাল করবে ভেবেই। কিন্তু তা যখন হয় না তখন তো খারাপই লাগে, আবার দল বদলাতে হয়। এবারও ভোট দেব। দেখা যাক কী হয়…

 


*সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত। চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের পক্ষে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বুলবুল ইসলাম