Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

ছেলেমেয়ে দুটো যেন লেখাপড়া শিখে ঠিকঠাক দাঁড়াতে পারে

বন্দনা পালিত

 


ছেলেটা কলেজে পড়ছে, মেয়েটা স্কুলে। আমাদের জীবন তো এরকম খেটেখুটেই চলবে, এখন একমাত্র চিন্তা ওদেরকে ঠিকঠাক পড়াশোনা শিখিয়ে একটু নিজের পায়ে দাঁড় করানো। ছেলেটা একটা ঠিকঠাক চাকরি পাবে কি? চেষ্টা তো করছি অনেক। কিন্তু কী করব? রোজগার তো বেশি নয় আমাদের। রোজগারটা আরেকটু বেশি হলে আরেকটু ভাল মাস্টার দিতে পারতাম। আরও ভাল করে পড়াতে পারতাম

 

নিজের এত ঝামেলা যে দেশের কথা ভাবার সময় কই? আমি হাওড়ার রামরাজাতলায় থাকি। কয়েক বাড়ি রান্নার কাজ করি। মাসে সব মিলিয়ে ৭০০০ টাকা রোজগার হয়। আমার স্বামী ভ্যান চালায়। দিনে ভ্যান চালায়, রাতে সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করে। সারাদিনই কাজে যায়, তবে ওর রোজগার নিয়মিত নয়। ভ্যান-ট্যান চালানো বোঝেনই তো। হলে হল, না হলে নয়। ঠিকঠাক কাজ হলে ওর ওই দুটো কাজ মিলিয়ে মাসে ১০-১২ হাজার টাকা হয়।

আমাদের এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলেটা কলেজে পড়ছে, মেয়েটা স্কুলে। আমাদের জীবন তো এভাবেই চলবে, এখন একমাত্র চিন্তা ওদেরকে ঠিকঠাক পড়াশোনা শিখিয়ে একটু নিজের পায়ে দাঁড় করানো। ছেলেটা একটা ঠিকঠাক চাকরি পাবে কি? ওদের জীবনও আমাদের মতো না হোক, এটাই ভাবি।

চেষ্টা তো করেছি অনেক। কিন্তু কী করব? রোজগার তো বেশি নয় আমাদের। রোজগারটা আরেকটু বেশি হলে আরেকটু ভাল মাস্টার দিতে পারতাম ওদের। আরও ভাল করে পড়াতে পারতাম।

আমাদের স্বামী-স্ত্রীর রোজগার এখন মাসে ১৮-১৯ হাজার টাকা। আমি কদিন আগেই একটা নতুন বাড়ির কাজ পেয়েছি, সেখানে ২৫০০ টাকা পাই। এই কাজটা পেয়ে আয়টা একটু বেড়েছে। কিছুটা সাশ্রয় হয়েছে।

তবে খরচ বাড়াটা বোধহয় আরও বেশি। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচা বাড়ছে। এতেই আমাদের সবচেয়ে বেশি খরচ হয়। ওদের ক্লাস উঁচু হচ্ছে, বইখাতা, মাস্টারের মাইনে সবই বেশি বেশি হচ্ছে। তাই রোজগার বেড়েও মাঝেমধ্যেই ধারদেনা করতে হয়। মনে হয় আরও কিছু রোজগার বাড়লে ভাল হত। কিন্তু কত আর করব!

লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে যে ১০০০ টাকা করে পাই তাতে একটু উপকার হয়। মাঝে একসময় ৩ মাস টাকা বন্ধ ছিল। তখন আবার কষ্ট। স্বাস্থ্যসাথী আছে। রোগ হলে চিকিৎসা পাব এই আশা তো আছে। মেয়েটা কন্যাশ্রী পায়, সেটাও একটা বড় সুবিধে।

 

পড়ুন, ইলেকশন এক্সপ্রেস ২০২৪

 

তবে ওই যা বললাম, দেশের কথা আলাদা করে ভেবে দেখা হয় না। লোকের বাড়ি বাড়ি কাজ করি। কাজ করে ফিরেই আবার সংসারের কাজ। রাতে একটু অল্প সময় পাই। তখন টিভিতে সিরিয়াল দেখি। তবে আমি এক বাড়িতে রান্না করি, ওই বাড়ির মেসোমশাই দেশের সম্বন্ধে, সমাজের সম্বন্ধে অনেক কথা বলেন। সেগুলো যা শুনি তাতে ভাল লাগার মতো তো কিছুই দেখতে পাই না।

ভোট তো দেব। কিছু পাব ভেবে তো আর ভোট দিতে যাই না। এটা আমার অধিকার। না দিলে তো নষ্ট হবে। এই ভোট পাঁচ বছরে একবার হয়। তাই দিয়ে আসি। ভোট না দিতে গেলে আবার পার্টির লোকরা চোদ্দোবার বাড়ি এসে ‘ভোট দিতে যাবে কখন’ করতে থাকে। ভোটে সরকার পাল্টাক আমি চাই। নতুন সরকার এসে ভাল কিছু করবে, কিছু না কিছু সুযোগসুবিধা দেবে নিশ্চয়ই। দেখতে হবে তো!

আমাদের কথা তো বললাম। কষ্ট সয়ে গেছে। জীবন এভাবেই চলবে বুঝে গেছি। তাই রোজের জীবনে সেরকম আলাদা করে আর কষ্ট বুঝতে পারি না। জিনিসপত্রের দাম, পড়াশোনার খরচ— এগুলো কিছু কমলে ভাল হয়।

 


*সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত। চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের পক্ষে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দেবাশিস মিথিয়া