মিতালি বর্মন
শীতকালটা বাদ দিলে বাকি সময়টা ধারদেনা করতেই হয়। বাচ্চাটা হয়েছে, শ্বশুর-শাশুড়িরও বয়স হয়েছে। ওদের টুকটাক রোগব্যাধি লেগেই থাকে। এবার এসব তো আর সময় দেখে হয় না। যেসব মাসে রোজগার ভাল হয় না, তখনই হয়তো অসুখবিসুখ লাগল। তখন ধার না করে উপায় কী! সব মিলিয়ে আয় কমেছে, খরচ বেড়েছে
আমাদের সংসারে আমার স্বামীই একমাত্র রোজগেরে। ও টোটো চালায়। সংসার বলতে আমার শ্বশুর-শাশুড়ি, আমরা স্বামী-স্ত্রী, আর আমার একটা সাড়ে তিন বছরের ছেলে— এই নিয়ে আমাদের পাঁচজনের সংসার। আমাদের ঠিকানা ঝড়খালি, ত্রিদিবনগর— সুন্দরবন।
আমি মূলত বাড়ির কাজই করি। আমরা গ্রামে থাকলেও কিন্তু চাষবাস আমাদের জীবিকা নয়। কারণ আমাদের নিজস্ব কোনও জমি নেই। এই নোনা জমিতে অবশ্য জমি থেকেও খুব সুবিধা কিছু হয় না। চাষ এখানে ভাল হয় না। বছর দুয়েক আগে তো একদমই হত না। এখন হচ্ছে কিছু টুকটাক।
এখান থেকে সবাই আগে বাইরে যেত কাজ করতে। আমরাও ছিলাম ব্যাঙ্গালোরে। তখন রোজগারটা খারাপ হত না। তারপর আমার বাচ্চা হওয়ার সময় এল, তখন চলে এলাম দেশে। সেই থেকে এখানেই আছি।
আমার স্বামী টোটো বারোমাসই চালালেও আয় সবসময় সমান হয় না। শীতকালে আয়টা একটু বেশি হয়। অন্য সময়ে তেমন নয়। শীতকালে মাসে ওর আয় ১০-১২০০০ টাকাও হয়ে যায়। কিন্তু গরমের সময়ে ওই ৩ থেকে ৪০০০ টাকা। ফলে শীতকালটা বাদ দিলে বাকি সময়টাতে ধারদেনা করতেই হয়। বাচ্চাটা হয়েছে, শ্বশুর-শাশুড়িরও বয়স হয়েছে। ওদের টুকটাক রোগব্যাধি লেগেই থাকে। এবার এসব তো আর সময় দেখে হয় না। যেসব মাসে রোজগার ভাল হয় না, তখনই হয়তো অসুখবিসুখ লাগল। তখন ধার না করে উপায় কী! সব মিলিয়ে আয় কমেছে, খরচ বেড়েছে। বাজার খরচা, চিকিৎসার খরচা— সবই খুব বেড়ে গেছে। এগুলো সামাল দেওয়াই এখন দায়। আগের চেয়ে সংসার চালানো অনেক কঠিন হয়ে গেছে।
পড়ুন, ইলেকশন এক্সপ্রেস ২০২৪
এর মধ্যে সরকারের থেকে খাদ্যসুরক্ষার চালটা পাই, ওটা বেশ কাজে লাগে। আমাদের বাড়িতে রান্নার গ্যাস আছে। গ্যাসের সাবসিডিও পাই। সেটাও উপকারে আসে।
টিভিতে খবর দেখি মাঝেমাঝে। আমাদের এই প্রত্যন্ত গ্রামে খবরের কাগজ আর কোথায়! তবে খবরে যা সব দেখি তার মধ্যে তো ভাল লাগার মতো কিছু পাই না। খালি মারামারি, গালাগালি। বাচ্চাদের ওপর, মহিলাদের ওপরও নির্যাতন করা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। এসব দেখে কী ভাল লাগবে? ভোট দেব। কিন্তু কী হলে কী হবে সে সব কি বলা যায়!
ছেলেটাকে ভাল করে বড় করতে চাই। পড়াশোনা শেখাতে চাই। কিন্তু সে-সবে যা খরচ ভাবলে ভয় লাগে। তার ওপর আমাদের এই গ্রামের দিকে ভাল পড়াশোনার সুযোগও তেমন নেই। সরকারে এটা নিয়ে কিছু করলে ভাল হয়।
*সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত। চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের পক্ষে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিদ্ধার্থ বর্মন