Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

রাজ্য সরকারের অবিমৃষ্যকারিতায় অনিশ্চয়তার আশঙ্কায় পিছিয়ে পড়া মানুষজন

দেবাশিস মিথিয়া

 


এই নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ওবিসিদের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন নিয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলেনি। ওবিসিদের শংসাপত্র বাতিল লোকসভা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে এই আশঙ্কায় তারা অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে দুষছে। নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলো, বরাবরই বঞ্চিত পিছিয়ে পড়া জনগণকে দাবার বোড়ে হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে। এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে রাজ্য সরকারের অবিমৃষ্যকারিতায় শংসাপত্র থাকা সত্ত্বেও এই মুহূর্তে ঘোর অনিশ্চয়তায় অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির একদল মানুষ

 

গত ২২ মে, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা-র ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) সংক্রান্ত ২০১২ সালের বিধি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে। ফলে ওই বিধি অনুযায়ী যে ওবিসি শংসাপত্র দেওয়া হয়েছিল বাতিল হয়েছে সেগুলিও। এতে প্রায় পাঁচ লাখ শংসাপত্র বাতিল হতে বসেছে। তবে কোর্ট এও জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই ওই শংসাপত্র ব্যবহার করে যাঁরা চাকরি বা পরীক্ষা পাশের সুবিধা পেয়েছেন তাঁদের থেকে সেগুলি কেড়ে নেওয়া হবে না। তবে এখন থেকে ওই শংসাপত্র আর ব্যবহার করা যাবে না। যদিও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচনী জনসভায় দাঁড়িয়ে এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।

২০১২ সালের ওবিসি সংরক্ষণ আইন বাতিলের নির্দেশে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ২০১০ সালের ওবিসি সংরক্ষণের বিষয়টিকেও চিহ্নিত করেছে। সেই আইনে মুসলমানদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এখন প্রশ্ন হল, ২০১০ সালে তৎকালীন বাম সরকার কেন মুসলমানদের জন্য সংরক্ষণ ঘোষণা করেছিল? মমতা ব্যানার্জির আন্দোলনের চাপে ২০০৮ সালের অক্টোবরে টাটারা সিঙ্গুর থেকে মোটরগাড়ির কারখানা গুজরাতের সানন্দ-এ স্থানান্তরিত করে। ধাক্কা খায় বাম সরকারের শিল্পায়নের ভাবনা। ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়ায় রাজেন্দ্র সাচার কমিটির রিপোর্ট, যা নিয়ে সেই সময়ে জোর চর্চা শুরু হয়। রিপোর্টে দেখা যায় রাজ্যের সরকারি চাকরি, শিক্ষায় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব খুবই কম। নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয় বামফ্রন্ট সরকার। তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা গঠিত রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে একটি কমিশন গঠন করে। যার নেতৃত্বে ছিলেন মাসুদাল হোসেন। পরবর্তীতে এই কমিশনের দায়িত্ব পান বিধায়ক মোর্সেলিন মোল্লা। কমিশনের সমীক্ষা ও মতামতের ভিত্তিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে আর্থ-সামাজিকভাবে পিছিয়ে থাকা কিছু অংশকে সরকার ওবিসি তালিকাভুক্ত করে তাদের জন্য সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়। সরকার ঘোষণা করে মুসলমানদের মধ্যে যাঁরা আর্থিক, শিক্ষাগত ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে রয়েছেন, তাঁরাও হিন্দু সমগোত্রীয়দের মতো ওবিসি সংরক্ষণের আওতাভুক্ত হবেন। গোটা দেশের মধ্যে এ-রাজ্যেই প্রথম ওবিসি সংরক্ষণ ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৭ শতাংশ করা হয়। এই অতিরিক্ত ১০ শতাংশ সংরক্ষণের আওতায় কারা আসবেন তা ঠিক করতে প্রথমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব বিভাগকে দিয়ে একটি সমীক্ষা করানো হয়। একইসঙ্গে সংখ্যালঘু উন্নয়ন দপ্তর, অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দপ্তর-সহ কমিশনের থেকে প্রতিনিধি নিয়ে গঠন করা হয়েছিল একটি কমিটি। সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ৬ মাসের মধ্যে তৎকালীন অনগ্রসর জাতি কমিশন ৪১টি মুসলিম সম্প্রদায়-সহ মোট ৪২টি সম্প্রদায়কে তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করে। বামফ্রন্ট সরকার সেই তালিকা মেনে নেয়। সেই সময় “ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ” এই অজুহাতে, সঙ্ঘ পরিবার রাজ্যের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যায়। শীর্ষ আদালত সেই অভিযোগ খারিজ করে দেয়। তবে হাইকোর্টের সাম্প্রতিক রায়ে এই ৪২টি শ্রেণি এখন থেকে চাকরিতে আর সংরক্ষণের সুবিধা পাবে না।

২০১২ সালের আগে পর্যন্ত অনগ্রসর জাতি কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে ওবিসি তালিকা তৈরি করা ছিল বাধ্যতামূলক। আইনে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল কোনও জনগোষ্ঠী ওবিসি তালিকাভুক্ত হতে চাইলে প্রথমে কমিশনের কাছে আবেদন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী আদৌ আর্থিক, সামাজিক ও শিক্ষাগতভাবে পিছিয়ে পড়া কিনা কমিশন তার সমীক্ষা করবে। দাবির যৌক্তিকতা থাকলে শুনানির জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করবে কমিশন। ওই বিশেষ জনগোষ্ঠীর আবেদনের বিরোধিতা করে শুনানিতে অন্য যে কেউ অংশগ্রহণ করতে পারবে। সব দিক বিবেচনা করে কমিশন ওই জনগোষ্ঠীকে ওবিসি তালিকাভুক্ত করে সরকারের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠাবে।

২০১২ সালের পর ছবিটা বদলে যায়। ২০১২ সালের ১১ মে, তৃণমূল কংগ্রেস সরকার আরও ৩৫টি সম্প্রদায়কে (ওবিসি-এ গোত্রে ৯টি এবং ওবিসি-বি গোত্রে ২৬টি) তালিকাভুক্ত করে তাদের ওবিসি শংসাপত্র দেয়। সমস্যার সূত্রপাত এখানে। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ হল এক্ষেত্রে ১৯৯৩ সালের অনগ্রসর জাতি সংক্রান্ত আইন মানা হয়নি। এই যুক্তিতে হাইকোর্ট ২০১০ সালের পর থেকে দেওয়া সমস্ত শংসাপত্র বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে। দেখা যাক, ১৯৯৩ সালের অনগ্রসর জাতি সংক্রান্ত আইনটি কী ছিল? ১৯৯৩ সালের আইনে বলা ছিল কোনও জাতিকে ওবিসি তালিকাভুক্ত করতে হলে নির্দিষ্ট সমীক্ষা করতে হবে। নিয়ম মোতাবেক শুনানি করে, কী কারণে তাদের ‘অনগ্রসর’ বলে চিহ্নিত করে তালিকাভুক্ত করা হল— তার রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনতে হবে। এগুলির কোনওটাই ২০১২-র পর মানা হয়নি। এই আইনকে শুধু বুড়ো আঙুল দেখানো হয়েছে তাই নয়, ২০১২ সালের সংরক্ষণ চালু হয়েছে রাজ্য প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী। ওই আইনে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির জন্য রাজ্য সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের ঘোষণা করার ক্ষমতা দেওয়া আছে শুধুমাত্র রাজ্য বিধানসভাকে। অনগ্রসর জাতি কমিশনের ভূমিকাকে সেখানে অগ্রাহ্য করা হয়েছে।

অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি সংক্রান্ত ২০১২ সালের আইন বাতিলের নির্দেশে চোখ বোলালে বিষয়টা আর একটু পরিষ্কার হয়। আদালতের নির্দেশে বলা হয়েছে:

সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির নিরিখে বিচার করলে, পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা দেশে জাত-ভিত্তিক বৈষম্য এখনও দারুণভাবে বিরাজমান। এসসি, এসটি এবং ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষরা বাকিদের সঙ্গে একই স্তরে পৌঁছতে পারেনি, অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির জনগণের আনুমানিক অনুপাত মোট জনগণের প্রায় ৫৫ শতাংশ। চাকরির উচ্চ পদে, ব্যবসায় এমনকি রাজনীতির উঁচু স্তরে তাদের প্রতিনিধিত্ব তুলনামূলকভাবে কম। সংরক্ষণের মূল লক্ষ্য এ-রাজ্যে এখনও অধরা। এইরকম এক কঠিন পরিস্থিতিতে ওবিসি সংরক্ষণ সংক্রান্ত হাইকোর্টের সাম্প্রতিক রায় সমস্যাকে আরও বাড়াল— তা নিশ্চিত করে বলা যায়। অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিকে উপরের দিকে টেনে তুলতে গেলে তাদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য ও পরিসংখ্যানের প্রয়োজন। বর্তমানে রাজ্যে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির জাতভিত্তিক মানুষের সংখ্যা ঠিক কত তার কোনও তথ্য নেই। সঠিক তথ্য না থাকলে ওবিসিদের সামাজিক কল্যাণের জন্য প্রয়োজনীয় নীতি নির্ধারণ করা প্রায় অসম্ভব। রাজ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির প্রকৃত এবং সঠিক সংখ্যা জানতে সরকারের একটি জাতভিত্তিক আদমসুমারি করা প্রয়োজন। সেটা করতে পারলে জানা যাবে সংরক্ষণের সুবিধা সঠিক লোকের কাছে পৌঁছেছে কিনা। নাকি নির্দিষ্ট কিছু সম্প্রদায় কেবল সংরক্ষণের সুবিধা ভোগ করছে? যেসব সম্প্রদায় এখনও সংরক্ষণের সুবিধা পায়নি অথচ তা তাদের টিকে থাকার জন্য একান্তই জরুরি সেগুলিকে চিহ্নিত করা গেলে তাদের কাছে বিশেষ সুবিধা পৌঁছে দেওয়া যাবে।

 

পড়ুন, ইলেকশন এক্সপ্রেস ২০২৪

 

সংবিধানের ১২৭ তম সংশোধনী বিলে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর শ্রেণির নিজস্ব তালিকা প্রস্তুত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই বিশেষ ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে বঞ্চিত এবং সমাজের মূল স্রোতের বাইরে থাকা সম্প্রদায়গুলিকে চিহ্নিত করতে হবে। দেশের অনেক রাজ্যই জাতভিত্তিক জনগণনার কাজ শেষ করেছে। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশা, বিহার ছাড়াও ইউপি, উত্তরাখণ্ড, কর্নাটক, তেলেঙ্গানা, কেরল এই কাজ করেছে। কারও রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, কারও এখনও হয়নি। এ ব্যাপারে উল্লেখ্য, ১৯৬৮ সালে কেরলে ইএমএস নাম্বুদিরিপাদের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট সরকার রাজ্যের প্রত্যেক জনগণের একটি আর্থ-সামাজিক সমীক্ষা করে। উদ্দেশ্য বর্ণবৈষম্যের মূল্যায়ন করা। ২০১১ সালের আদমসুমারির আগে পর্যন্ত, স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে এটিই ছিল সরকার পরিচালিত একমাত্র জাতভিত্তিক সমীক্ষা। নজর কাড়ার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে বিহার। তারা ২০২২ সালে জাতভিত্তিক সমীক্ষা করে, ২০২৩-এর ২ অক্টোবর সেই সমীক্ষার প্রথম রিপোর্ট প্রকাশ করে। রিপোর্টে পাওয়া গেছে, রাজ্যের ১৩.০৭ কোটি জনসংখ্যার ৩৬.০১ শতাংশ অত্যন্ত অনগ্রসর। ২০১৪ সালে কর্নাটকের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া ওবিসি সংরক্ষণের বিশদ জানতে তাদের সামাজিক ও শিক্ষাগত সমীক্ষার নির্দেশ দেন। যদিও সেই রিপোর্ট এখনও প্রকাশিত হয়নি। এই সমীক্ষা চালাতে কর্নাটক সরকারের খরচ হয়েছিল ১৬৯ কোটি টাকা। ১.৬ লক্ষ সরকারি কর্মচারীর সহায়তায় তারা ১.৩ কোটি পরিবারের পরিসংখ্যান সংগ্রহ করে।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জাতভিত্তিক সমীক্ষার কোনও পরিকল্পনা আছে কিনা তার প্রকাশ এখনও পাওয়া যায়নি। এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে এমনকি জনসভা থেকে তৃণমূল কংগ্রেস অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির জন্য আলাদা করে কোনও প্রতিশ্রুতি দেয়নি। তবে তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্য সরকার দাবি করে চলেছে এ-পর্যন্ত ওবিসি-রা যা কিছু সুযোগসুবিধা পেয়েছে তার সবটা তাদেরই দান। প্রকৃতপক্ষে ওবিসি-দের উন্নতি কতটা হয়েছে তা তারাই বলতে পারবে। পশ্চিমবঙ্গে অর্ধেকের বেশি মানুষ অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির মধ্যে পড়েন। তার মধ্যে বড় অংশ মুসলমান। তাই হাইকোর্টের এই রায়ে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব পড়েছে রাজ্যের বিরাট সংখ্যক মানুষের উপর।

সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে পিছিয়ে পড়া কোনও জাতের উন্নতি করতে শুধু আইন প্রণয়ন করলে চলে না। আইন প্রণেতাদের সঙ্কীর্ণ স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে হয়। কোনও জনগোষ্ঠীর পিছিয়ে থাকাকে ভোটের রাজনীতিতে ব্যবহার না করে তাদের প্রকৃত উন্নয়ন ঘটানোই লক্ষ্য হওয়া উচিত যে কোনও রাজ্য সরকারের। দেশে এখন সাধারণ নির্বাচন চলছে। ভোটের আগে সব রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় এলে কী কী করবে সেই সংক্রান্ত নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছে। একমাত্র কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ‘ন্যায়পত্রে’ পরিষ্কার করে বলেছে যে আগামী দিনে তারা সরকার গড়লে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির জন্য কী কী করবে:

কংগ্রেসের ইশতেহার প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে বিজেপির কাছে ওবিসিদের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার মতো কিছুই নেই। ফলে আগামীদিনে বিজেপি পুনরায় সরকার গড়লে ওবিসিদের উন্নয়নে কী করবে সে কথা তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ‘মোদির গ্যারান্টি’তে বলা নেই। কিন্তু ওবিসি ভোট ধরে রাখার জন্য তারা বারবার বলার চেষ্টা করছে কংগ্রেসের ওবিসি-প্রীতিতে মুসলিম সংরক্ষণের ‘বিপদ’ কতটা। বাংলায় ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের পর মোদি তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা করে একাধিকবার বলেছেন, “বাংলায় তৃণমূল জাল ওবিসি শংসাপত্র বানিয়ে পিছিয়ে থাকা শ্রেণির সংরক্ষণ লুট করে মুসলমানদের দিয়ে দিয়েছিল।” তবে ওবিসি, এসসি এবং এসটিরা জানে যে সংরক্ষণের আসল বিপদ মুসলমানরা নয়, হিন্দুত্ব ও বেসরকারিকরণের অ্যাজেন্ডা। বিজেপি ওবিসিদের সম্পূর্ণভাবে কৃষি-শ্রমের বাজারে ঠেলে দিতে চায় এবং অর্থনীতির চাবি তুলে দিতে চায় হিন্দুত্ববাদী পুঁজিপতিদের হাতে।

আগেই বলেছি এই নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ওবিসিদের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন নিয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলেনি। ওবিসিদের শংসাপত্র বাতিল লোকসভা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে এই আশঙ্কায় তারা অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে দুষছে। নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলো, বরাবরই বঞ্চিত পিছিয়ে পড়া জনগণকে দাবার বোড়ে হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে। অভিজ্ঞতা বলে নিজেরদের অপদার্থতা ঢাকতে রাজ্য সরকার হাইকোর্টের রায়ের (ওবিসি সংক্রান্ত ২০১২ সালের আইন বাতিল) বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাবে। এটাই এখন বর্তমান সরকারের রীতি। আর চূড়ান্ত রায় বেরোনো পর্যন্ত ভুক্তভোগীদের উৎকণ্ঠায় থাকতে হবে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে রাজ্য সরকারের অবিমৃষ্যকারিতায় শংসাপত্র থাকা সত্ত্বেও এই মুহূর্তে ঘোর অনিশ্চয়তায় অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির একদল মানুষ। এর চেয়ে বড় তামাশা আর কী হতে পারে!


*মতামত ব্যক্তিগত