Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

আমাদের ভূমি, আমাদের ভবিষ্যৎ

সোমনাথ মুখোপাধ্যায়

 


মরুকরণ বা মরুভূমির প্রসার আজকের পৃথিবীতে এক গভীর অনিশ্চয়তায় সৃষ্টি করেছে। পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তন এই সমস্যাকে দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর করছে। প্রকৃতিকে নিংড়ে নেওয়া বিভিন্ন মানুষী কার্যকলাপ যেমন অরণ্য সংহার, অনিয়ন্ত্রিতভাবে পশুপালন, ভৌম জলভাণ্ডারকে নিঃশেষ করে ফেলা, জীববৈচিত্র্যের বিনাশ সাধন, অবৈজ্ঞানিক কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা ইত্যাদি ক্রমশ পৃথিবীর বিস্তীর্ণ অ-মরু এলাকাকে শুষ্ক অহল্যাভূমিতে পরিণত করছে। উদ্বেগের কারণ এখানেই নিহিত রয়েছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা

 

গাঁয়ের নাম সর্বানন্দপুর। এই দিগরের সবাই জানে গাজনের গেরাম বলে। চোত মাসে বড় মেলা বসে, দূরদূরান্তের জনিমনিষ্যি এসে ভিড় জমায় এখানে। পসারিরা হরেক মালের পসরা সাজিয়ে দিনকয়েকের জন্য আস্তানা গাড়ে এই গেরামের সীমানায়। লোকজনের ভিড় আর উৎসবের আয়োজনে গমগম করে গোটা ‘সব্বানন্দপুর’ গেরাম। মেলার মাঠে বিরাট সামিয়ানা টানিয়ে নানান ধরনের গান, বাজনা, পুতুলনাচের আসর বসে। আয়োজন করা হয় পালাগান আর যাত্রার।

আজ যেমন গম্ভীরার আসর বসেছে।

এই অঞ্চলের জনপ্রিয় লোকগান গম্ভীরা। এবারের পালা “মা-টির কথা”। পালা শুরু হয়। ‘নানা’র কাছে এসে কেঁদে পড়েছে সনাতন। তার নালিশ তার‌ই প্রতিবেশী জগাই-এর বিরুদ্ধে। অভিযোগ রীতিমতো গুরুতর। জগাই নাকি সনাতনের তিনফসলি জমির মাখনপানা মাটি বেবাক হরণ করে নিয়ে গিয়েছে।

সনাতন: হায়, হায়, হায়, হায়, হায়। এ যে নিজের চম্মোচক্ষুরে বিশ্বাস করতে পারছি না! আমার পাঁচপুরুষের চাষের জমিটারে রাতারাতি এমন নাঙ্গা করে দিল কে?… বুঝেছি, এ লিশ্চ‌ই ওই জগাই ব্যাটার দুষকম্মো!…
জগাই: আরে খুড়া, রোসো, রোসো! বলি তোমার মাথাটা বিগড়ে যায়নি তো? … আমি করব তোমার ক্ষতি? কেন? তোমার সাথে আমার সাপ-নেউলের সম্পক্ক নাকি?

সনাতন আর জগাইয়ের ঝগড়া যেমন চলছে চলুক। আমরা বরং এই লোকগানের অবসরে এ বছরের পরিবেশ দিবসের মূল ভাবনা বা থিম নিয়ে একেবারে গোড়ার কথাগুলো সেরে নিই।

বিগত বছরগুলোর মতো এই বছরেও একটি বিশেষ থিমকে সামনে রেখে এই দিনটিকে উদযাপনের কথা ভাবা হয়েছে। বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৪-এর থিম— “ভূমি পুনরুদ্ধার, মরুকরণ এবং খরা পরিস্থিতির স্থিতিস্থাপকতা”।

এই উপলক্ষে যে স্লোগান তৈরি করা হয়েছে তা হল— “আমাদের ভূমি, আমাদের ভবিষ্যৎ”। এমন থিম এবং স্লোগানের মর্মার্থ হল পৃথিবীর ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় আমাদের—

 

এই বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে যদি দুনিয়া জুড়ে কর্মকাণ্ডের সূচনা করা যায় এবং সেই পরিকল্পনা অনুসারে আমরা সবাই যদি সদর্থক সমাধানের পথে হাঁটতে শুরু করি তাহলেই “আমাদের ভূমি, আমাদের ভবিষ্যৎ”— এই স্লোগান সার্থক হবে। এই বিষয়গুলোকে আপাতদৃষ্টিতে স্বতন্ত্র বা আলাদা বলে মনে হলেও বাস্তবে এরা পরস্পরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মনে রাখতে হবে এদের স্থিতিশীল রাখতে পারলে পৃথিবীর বিপর্যস্ত বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্যের পুনরুজ্জীবন সম্ভবপর হবে— এমনটাই বিশ্বাস করেন সংশ্লিষ্ট আয়োজকরা। আসুন দেখে নেওয়া যাক।

 

মা-টির কথা

সর্বানন্দপুরের পালাগানের কথা ছুঁয়ে আমাদের আজকের আলোচনা শুরু করি। নামটি বড় চমৎকার বেঁধেছেন পালাকার। মাটি মায়ের সঙ্গে ঘরের মা-টিকে যেন একাকার করে দিয়েছেন। মা যেমন আমাদের আগলে রাখেন, ঠিক তেমনি মাটি মায়ের অঞ্চলছায়ায় আমাদের বেড়ে ওঠা, আমাদের জৈবনিক অস্তিত্বের ছন্দোময় রূপময়তা, সভ্যতার গৌরবময় বিকাশ। জমি বা মাটিকে ঘিরেই আমাদের কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, আমাদের পার্থিব জীবনের স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ, আমাদের অর্থনীতি এবং জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা‌। ঘরের মা অসুস্থ হয়ে পড়লে যেমন সংসারের শৃঙ্খলা বা ভারসাম্য নড়বড়ে হয়ে যায় ঠিক তেমনি ভূমি, জমি বা মাটি বেনিয়মের শিকার হলে বাস্তুতন্ত্রের বুনিয়াদটাই সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ে। পৃথিবীর আজ এমন‌ই দশা। আমাদের এ-কথা অবশ্য মাথায় রেখেই আগামীদিনে পা ফেলতে হবে। জমি বা ভূমিকে অবলম্বন করেই মানুষ, বন্যপ্রাণী এবং সবুজ উদ্ভিদদের বেঁচে থাকা, বেড়ে ওঠা, পূর্ণরূপে বিকশিত হ‌ওয়া। সুস্থ মা যেমন সুস্থ সন্তানের জন্মদান করতে সক্ষম, ঠিক তেমনি সুস্থ মাটি সমগ্র জীবকুলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। সকলের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জমি পুনরুদ্ধারের এই প্রক্রিয়াটি একান্তভাবে একটি প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত প্রক্রিয়া। ভূমি সুরক্ষার অর্থ কেবলমাত্র ভূপৃষ্ঠের শিথিল নমনীয় আচ্ছাদনের সংরক্ষণ নয়, এর সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে আরও আরও অনেক মহতী লক্ষ্য— বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখা, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা, মাটির প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতাকে বজায় রাখার মাধ্যমে কৃষি উৎপাদনকে সুরক্ষিত করা এবং এর মধ্যে দিয়ে খাদ্যের জোগানকে সুনিশ্চিত করা, প্রাকৃতিক বিপর্যয় বিশেষ করে বন্যার দাপটকে নিয়ন্ত্রণে আনা, ইত্যাদি। মোদ্দা কথা হল, আমরা যদি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে চাই, খরা-বন্যার মতো বিপর্যয়কে চিরতরে নিরসন করতে চাই এবং ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের জোগান অব্যাহত রাখতে চাই তাহলে জমি পুনরুদ্ধারের কাজে আমাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করা ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই।

ইউএনইপি-র তরফে করা সমীক্ষাসূত্রে জানা গেছে যে গোটা বিশ্বের জিডিপি-র ৫০ শতাংশ আসে প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে এবং এই খাতে বিনিয়োগ করা এক একক অর্থ তার তিরিশ গুণ পর্যন্ত ফলদায়ী হতে পারে। অর্থাৎ জমি বাঁচাও, ভবিষ্যৎ বাঁচাও।

দ্য ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন টু কমব্যাট ডেজার্টিফিকেশন (UNCCD) মিশনের প্রধান লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ভূমিমানের অবনমন রোধ করার জন্য দুনিয়া জুড়ে সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়ে যেতে হবে। এর ফলে রক্ষা পাবে আমাদের মৃত্তিকাসম্পদ, রক্ষা পাবে ক্ষীয়মান পানীয় জলভাণ্ডার, সুস্থিত হবে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের অপার বৈভব, মরুভূমির প্রসার নিয়ন্ত্রণে আসবে, হ্রাস পাবে খরার দাপট।

মরুকরণ বা মরুভূমির প্রসার আজকের পৃথিবীতে এক গভীর অনিশ্চয়তায় সৃষ্টি করেছে। পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তন এই সমস্যাকে দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর করছে। নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমানাকে ছাপিয়ে ক্রমশই বাড়ছে শুষ্ক মরুপ্রায় এলাকার পরিসর। ১৯৯৪ সাল থেকে সংযুক্ত জাতিসঙ্ঘের নেতৃত্বে মরুভূমির প্রসার নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। কৃষি আবহ-বিজ্ঞানীদের মতে বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম প্রধান পরিবেশ সমস্যা হল শুষ্ক, আধা শুষ্ক এবং শুষ্ক উপ আর্দ্র অঞ্চলের মৃত্তিকার গুণগত মানের অবক্ষয় বা উৎপাদনশীলতার অবনমন। কেন এমন ঘটছে, তা যদি প্রশ্ন করা হয় তাহলে বলতে হবে যে প্রাকৃতিক নিয়মের পাশাপাশি মানুষের নিয়ন্ত্রণহীন কার্যকলাপকে এই সমস্যার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন পরিবেশবিজ্ঞানীরা।

 

সমস্যাটি নিছকই এ কালের তেমন বোধহয় নয়। সুসংহত গবেষণায় উঠে আসা তথ্য সূত্র থেকে জানা গিয়েছে যে আজকের পৃথিবীর বৃহত্তম মরুভূমি সাহারা আজ থেকে আনুমানিক প্রায় ৬০০০ বছর আগে গাছগাছড়ায় ভরা এক সবুজ গালিচা বিছানো এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। পৃথিবীর অক্ষের দোলন গোটা এলাকাটিকে বর্তমানে এক বৃক্ষহীন বালুকাময় মরুতে পরিণত করেছে। তবে প্রকৃতিকে নিংড়ে নেওয়া বিভিন্ন মানুষী কার্যকলাপ যেমন অরণ্য সংহার, অনিয়ন্ত্রিতভাবে পশুপালন, ভৌম জলভাণ্ডারকে নিঃশেষ করে ফেলা, জীববৈচিত্র্যের বিনাশ সাধন, অবৈজ্ঞানিক কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা ইত্যাদি ক্রমশ পৃথিবীর বিস্তীর্ণ অ-মরু এলাকাকে শুষ্ক অহল্যাভূমিতে পরিণত করছে। উদ্বেগের কারণ এখানেই নিহিত রয়েছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়েই বেড়েছে প্রকৃতির ওপর মানুষের উন্মত্ত আগ্রাসন। ভূপৃষ্ঠের যে কোমল আচ্ছাদনের ওপর নির্ভর করে জীবজগৎ এতকাল নানা বিচিত্র রূপে, বিচিত্র ধারায় বিকশিত হয়েছে তার ওপর‌ই পড়লো মানুষের হাত। যে নিয়মে প্রকৃতির চলন তার বিপরীতে চলতে চাইল মানুষ; ফলে বাড়ছে শূন্যতা, বাড়ছে হাহাকার।

UNCCD-র হিসেব অনুযায়ী বিশ্বের ২৫০ মিলিয়ন মানুষের জীবন ইতিমধ্যেই ভূমিমানের অবক্ষয়জনিত মরুকরণের কারণে বিভিন্নভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, মরুকরণের এই প্রবণতায় যদি এই মুহূর্তে লাগাম টানা না যায় তাহলে আগামী ২০৪৫ সালের মধ্যে পৃথিবীর প্রায় ১৩৫ মিলিয়ন মানুষ তাদের বর্তমান বাসস্থল থেকে উৎখাত হতে বাধ্য হবে। এমনটা যদি সত্যি হয় তাহলে তা হবে মানবসভ্যতার সবচেয়ে গুরুতর সমস্যার একটি।

এ-কথা মানতেই হবে যে পৃথিবীর বাতাবরণের ভারসাম্যে বড়সড় পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে বিগত বছরগুলোয়। জলবায়ুর খামখেয়ালিপনায় বাড়ছে খরা বন্যার প্রকোপ। এর ফলে কেবলমাত্র ভূমির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত কৃষক সম্প্রদায়ের মানুষেরাই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন না, কৃষিজ পণ্যের ওপর নির্ভরশীল অগণিত সংখ্যক মানুষ খাদ্যসঙ্কটের আশঙ্কায় আশঙ্কিত থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। জমির গুণগত উৎকর্ষতার অবক্ষয়, মরুকরণের প্রবণতা বেড়ে যাওয়া আর জমির খরাগ্রস্ত হয়ে পড়া— সব সমস্যার কার্যকারণ উৎস এক। ফলে পৃথিবীর যে-কোনও একটি অংশে এই তিনটি সমস্যার একটি প্রকটিত হলেই অন্যান্য উপসর্গগুলোও ফুটে উঠতে থাকে। বিপর্যয়ের কালো মেঘ জমতে থাকে আমাদের সকলের ওপর।

এমন আতঙ্ক নিয়েই সর্বানন্দপুরের সনাতন হাজির হয়েছে গম্ভীরা গানের নানার আসরে। তার মাখনপানা জমি উজাড় হয়ে যেতে দেখে সে প্রতিকার চাইতে এসেছে নানার কাছে।

সনাতন: বাবা গো! এবার মনে হয় চাষবাস ছেড়ে ঠুঁটো জগা হয়ে বসে থাকতে হবে।
নানা: বলো কী গো কাকা! তুমরা সব চাষবাস ছেড়ে দিলে আমরা খাব কী?… তা চাষকম্মো ছাড়বে কেন? মা-টি রে ছেড়ে যাবে কোথায়?
বিপিন: বাবা, আমরা তো মা-টিরে ছাড়ি নাই। মা-টিই যে মোদের ছেড়ে যাচ্ছে।…
নানা: …ইবার তোমাদের শুধাই— এই ধরিত্রী রে তোমরা কি তোমাদের মা বলে মানো?… যদি ই কথাটা তোমাদের মনের কথা হয়, তাই হ‌ইলে জেনো মা-টি হ‌ইল ধরিত্রী মায়ের লজ্জাবস্ত্র; ধরিত্রী মা নিজের রুখু পাথুরে শরীলডারে ঢেকে রাখে মাটির কোমল বসনে। এই বসন যখন খসে পড়ে মা যে তখন নগ্নিকা হয়ে যায়। আমরা কি দুঃশাসনের মতো আমাদের মাটি মায়ের বসনডারে ছিনায়ে নেব? আমাদের মায়েরে লজ্জায় ফেলে দেব?
সকলে সমস্বরে: না, না, কখনওই না। আমরা মাটি মায়ের সম্মান রাখব। বলো ঠাকুর মোদের কী করতে হবে?

সর্বানন্দপুরের মানুষজনের মতো একই প্রশ্ন আজ আমাদের সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে— কীভাবে আমরা ধরিত্রীর মাটির আঁচলকে রক্ষা করব?

সমস্যা গহীন। তবে হাল ছেড়ে দিলেই বা চলবে কেন? ধরিত্রী যে আমাদের সকলের বাসভূমি তাই তাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। গতবছরের মার্চ মাসের শেষের দিকে COP-16 সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিদের সভায় ল্যান্ড ডিগ্রেডেশন নিউট্রালিটি টার্গেট সেটিং প্রোগ্রাম (LDN TSP)-এর দ্বিতীয় পর্যায়ের কর্মকাণ্ডের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে গিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ১৮টি দেশের প্রতিনিধিরা একযোগে ভূমি পুনরুদ্ধার প্রকল্পের সদর্থক মোকাবেলায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার অঙ্গীকার করেন। এই সম্মেলনে জমির পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে এক টেকস‌ই ভূমি ব্যবস্থাপনার ওপর বিশেষ নজর দেওয়ার কথা বলা হয়। এই উদ্দেশ্যকে সফল করতে জৈব সম্পদের সংরক্ষণ, কৃষি উৎপাদনকে সুরক্ষিত রাখতে জৈব কৃষির সম্প্রসারণ, জলবায়ুর পরিবর্তনকে রোধ করতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দেওয়ার কথা বলা হয়। সমগ্র পৃথিবীকে খণ্ড খণ্ড ভাবে না দেখে একটি কার্যকর একক হিসেবে দেখতে হবে। এই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এজেন্সিগুলোর সম্মিলিত কর্মপরিষেবার ওপর বিশেষ জোর দেওয়ার কথাও বলা হয় ঘোষণাপত্রে। এই ঘোষণাপত্রের কার্যক্রমকে সামনে রেখেই ২০১৬ সাল থেকে পৃথিবীর ১৩১টি দেশ‌ ৪৫০ মিলিয়ন হেক্টরেরও বেশি জমিকে পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। কীভাবে আমরা পরিপূর্ণ লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হব?

 

ভূমি পৃথিবীর প্রাণবৈচিত্র্যের ধারক, বাহক, সঞ্চালক। তাই ভূমিমানের উন্নয়ন মানেই হল প্রাণসম্পদের তথা মানুষের উন্নয়ন। এই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে জাতিসঙ্ঘের পরিবেশ কর্মসূচির ইকোসিস্টেম বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর ব্রুনো পোজি বলেছেন— “মানুষের ক্রিয়াকলাপ পৃথিবীতে যে ক্ষতি করেছে তাকে পুনরুদ্ধার করতে আমরা সঙ্কল্পবদ্ধ। এই কাজে আমাদের প্রত্যেকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে যা প্রজাতি হিসেবে আমাদের ভবিষ্যতের সুরক্ষাকে সুনিশ্চিত করতে পারে।”

আসন্ন বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রাক্কালে সেই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নতুন করে পরিচয় করে নিতে হবে আমাদের। পার্থিব ভূমিসম্পদের পুনরুদ্ধারের জন্য ইউএনইপি-র প্রস্তাবিত কর্মসূচিতে সাতটি উপায়ের কথা বলা হয়েছে।

 

১. টেকস‌ই কৃষিব্যবস্থার সম্প্রসারণ

আজকের শিল্পোন্নত দুনিয়াতেও পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার একটা বড় অংশ কৃষির সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। শিল্পের প্রসার পৃথিবীর সমস্ত দেশে সমানভাবে হয়নি, ফলে উন্নয়নশীল দেশের বিপুলসংখ্যক দারিদ্র্যপীড়িত জনগণের সিংহভাগই প্রথাগত অনুন্নত কৃষি-উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত। কৃষি-বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য লোপ পাওয়ায় উৎপন্ন ফসলের পরিমাণ নানা কারণেই হ্রাসমান অথচ খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে। প্রথাগত কৃষি জমির উৎপাদনশীলতার অবনমনের অন্যতম কারণ।

এর বিকল্প হিসেবে বিজ্ঞানসম্মত টেকস‌ই কৃষির প্রবর্তন অত্যন্ত জরুরি। কৃষিভর্তুকি যাতে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের উন্নয়নের সহায়ক হয় সেই বিষয়ে ব্যবস্থা করতে হবে। যে সমস্ত ফসল খরা সহনশীল এবং যে ফসলের উৎপাদন জমির উৎপাদনশীলতা রক্ষায় খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সেই সমস্ত ফসলকে প্রাধান্য দিতে হবে। এই কাজে প্রাচীন কৃষিজ্ঞানের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। মোট কথা কৃষিকে বিকাশের ও স্থায়িত্বের সহযোগী করে তোলা দরকার।

 

২. মাটি সংরক্ষণ

আমাদের পায়ের নিচে থাকা মাটি হল পৃথিবীর সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় আবাসস্থল। খোঁজখবর করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে সকল প্রাণপ্রজাতির ৬০ শতাংশ মাটিতেই বসবাস করে। আমাদের আহার্যের ৯৫ শতাংশ আসে মাটিতে উৎপন্ন উপাদান থেকে। মাটি যদি সুস্থ হয় তাহলে তা কার্বন সিঙ্ক হিসেবে কাজ করে, কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো গ্রিনহাউস গ্যাসকে আবদ্ধ করে রাখতেও মাটির ভূমিকা অনন্য।

মাটির স্বাস্থ্য বজায় রাখতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সার, অণুখাদ্য প্রয়োগ করা হয়। এগুলোর অনিয়ন্ত্রিত প্রয়োগ জমিকে দুর্বল করে দেয়। আগামী দিনে এই ক্ষতিকর উপাদানগুলোর পরিবর্তে জৈব সার যেমন কম্পোস্টের ব্যবহার বাড়ানো প্রয়োজন। প্রথাগত সেচব্যবস্থার পরিবর্তে আধুনিক সেচন-কৃষিকে জনপ্রিয় করে তুলতে হবে, কেননা জলবায়ুর পরিবর্তন সেচের জন্য জলের প্রাপ্যতার বিষয়টিও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মাটির খরা প্রবণতাকে রুখতে নিতে হবে উপযুক্ত পদক্ষেপ। মনে রাখতে হবে মাটিতে জৈব উপাদানের পরিমাণ বাড়লে মাটির জলধারণের ক্ষমতা বেড়ে যায়।

 

৩. পরাগ সংযোগকারী কীটপতঙ্গের সংখ্যা বৃদ্ধি

সাম্প্রতিক সময়ে পরাগ সংযোগের জন্য অপরিহার্য কীটপতঙ্গের সংখ্যা, বিশেষ করে মৌমাছিদের সংখ্যা বেশ কমেছে বলে গবেষণায় জানা গিয়েছে। পরাগ সংযোগকারী কীটপতঙ্গের সংখ্যা কমে গেলে জীববৈচিত্র্যের সঙ্কট দেখা দেয়, ফলে ভূমির উৎপাদন ব্যবস্থায় তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা খুব জরুরি। লক্ষ করে দেখা গেছে যে বাস্তুসঙ্কটের কারণেই মানুষের উপকারে আসে এমন কীটপতঙ্গের সংখ্যা কমে যায়। প্রচলিত ভূমিব্যবস্থার যথেচ্ছ রূপান্তর বন্ধ করতে হবে যে কোনও উপায়ে। শহরাঞ্চলে গাছের সংখ্যা কমে গেছে, এই বিষয়ে নজর দিতে হবে। কীটপতঙ্গরা আকৃষ্ট হয় এমন ফুলের গাছ লাগানো জরুরি।

 

৪. স্বাদু জলের ভাণ্ডারের সংরক্ষণ

পৃথিবীতে মিঠা বা পেয় জলের ভাণ্ডার অত্যন্ত সীমিত। অথচ এই সামান্য পরিমাণ জলের ওপর নির্ভরশীল পৃথিবীর সকল প্রাণসম্পদ। ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা করার ক্ষেত্রে এই জলাশয়গুলো খুব বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে জলের এই গুরুত্বপূর্ণ উৎসগুলো মানুষের কাজকর্মের ফলে ক্রমশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এদের পুনরুজ্জীবন প্রয়োজন কেননা এগুলো বাস্তু-পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। বন্যার জল ধরে রেখে জলের এই উৎসগুলো শহরের বন্যার প্রকোপ কমায়। এমন মিষ্টি জলের উৎসগুলোকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হলে তা পরোক্ষভাবে মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে, ফলে একদিকে যেমন খরার প্রকোপ প্রশমিত হয় ঠিক তেমনি মৃত্তিকার গুণগত উৎকর্ষতাও বজায় থাকে।

 

৫. শহর ও নগরগুলোর সবুজায়ন

গাছেরা হল ধরিত্রীর সখী। ভূমির ওপর শাখাপ্রশাখা মেলে আকাশের দিকে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাছেরা বাস্তুতন্ত্রের বুনিয়াদ রচনা করে। মাটি বা ভূমি থেকে গাছেরা যেমন প্রয়োজনীয় পুষ্টিমৌল আহরণ করে, ঠিক সেভাবেই মাটিকে ফিরিয়ে দেয় বিভিন্ন জৈব উপাদান যা মাটির ভৌত রাসায়নিক জৈব চরিত্রের সংরক্ষণ ও সংবর্ধনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। মাটি ও গাছকে আশ্রয় করেই গড়ে ওঠে এক অনন্য যাপনের ধারা।

দুশ্চিন্তার কারণ হল এই যে বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ শহরবাসী এবং জনবিজ্ঞানীদের অনুমান নগরমুখী জনসঞ্চালনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ পৃথিবীর শতকরা ৭৫ ভাগ মানুষ শহরের আবাসিক হয়ে উঠবে। শহুরে মানুষের জীবন পরিবেশানুগ নয়। চরম ভোগবাদী যাপনে অভ্যস্ত শহরবাসীরা পার্থিব সম্পদের ৭৫ শতাংশ ভোগ করে, মোট পার্থিব বর্জ্যের ৫৫ শতাংশ উৎপাদন করে, বাস্তুতন্ত্রের পক্ষে চরম ক্ষতিকারক গ্রিনহাউস গ্যাসের ব্যাপক অংশটাই উৎপাদিত হয় শহুরে যাপন উৎসগুলো থেকে, যা প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে নিয়ত বিপর্যস্ত করে। এর পাশাপাশি শহরের কলেবর বৃদ্ধি পায় চারপাশে ছড়িয়ে থাকা প্রাকৃতিক পরিবেশের অবাঞ্ছিত রূপান্তরের বিনিময়ে। আধুনিক শহর বা নগর মানেই হল প্রাণহীন কংক্রিটের জঙ্গল। সুতরাং নগরের পরিসর বৃদ্ধির অর্থ‌ই ভূমির অবনমন, জীববৈচিত্র্যের অবক্ষয়, শুষ্কতার প্রসার।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নগরীর সংখ্যা যত বেড়েছে ততই দূরে সরে গেছে পরিবেশ ভারসাম্য। আগামী দিনে প্রকৃতিকে নতুন করে টেনে আনতে হবে শহর বা নগরবসতির চারপাশে। যথেচ্ছভাবে কংক্রিটের মলাটে ভূমির ব্যবহারিক চরিত্রে পরিবর্তন না ঘটিয়ে শহরের সবুজায়ন ঘটাতে হবে। গাছেরা মাটিকে ফিরিয়ে দেবে তার হারিয়ে যাওয়া সম্পদ, গাছকে কেন্দ্র করেই শুরু হবে প্রাণের কোলাহল, ফিরে আসবে পাখপাখালি, কীটপতঙ্গ, বাড়বে প্রাণের সমারোহ, কমবে খরা বন্যার প্রকোপ, টেকস‌ই হয়ে উঠবে নাগরিক সমাজের যাপন।

 

৬. নজর পড়ুক উপকূল আর সমুদ্রপ্রান্তিক অঞ্চলে

কুনমিং-মন্ট্রিল গ্লোবাল বায়োডাইভার্সিটি ফ্রেম‌ওয়ার্কের সিদ্ধান্তগুলোকে কার্যকর করার বিষয়ে আজ উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। আজ যখন দিকে দিকে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যহীনতা, জীববৈচিত্র্যের অবক্ষয়, ভূমির অবনমন, মরুভূমির প্রসার নিয়ন্ত্রণ, খরা পরিস্থিতির স্থিতিস্থাপকতার মতো বিষয় নিয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনা শুনতে পাই তখন পৃথিবীর উপকূলীয় ও সমুদ্রপ্রান্তিক অঞ্চলগুলোকে পুনরুদ্ধার প্রয়াসের বাইরে রাখতে পারি না।

সমুদ্রের কাছে আমাদের বিপুল ঋণ। পার্থিব জলবায়ুর ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে সমুদ্রের ভূমিকা অপরিসীম। সামুদ্রিক উদ্ভিদ আর সবুজ প্ল্যাঙ্কটনেরা জোগায় জরুরি অক্সিজেন, সামুদ্রিক মাছ আমাদের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে, তীব্র জলসঙ্কটের সম্মুখীন হয়ে ভাবতে হচ্ছে সমুদ্রের অফুরান জলের উৎসকে কাজে লাগানোর কথা, উপকূলীয় এলাকার মানুষের জীবন ও জীবিকা সমুদ্রের সঙ্গেই বাঁধা পড়ে আছে না জানি কতকাল! কোনও অবস্থাতেই এই সম্পর্ককে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। মনে রাখতে হবে যে পৃথিবীর নীল বাস্তুতন্ত্রগুলোকে পুনরুদ্ধার ও পুনঃসংস্থাপন করতে না পারলে শুদ্ধিকরণ প্রয়াস কখনওই পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করবে না। উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, নলখাগড়ার বনভূমি, প্রবাল প্রাচীর সব‌ই আজ বিপন্নতার শিকার। দূষণ, কৃষিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থের সঞ্চয়, উপকূলীয় জনপদের বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্যের বোঝা সামুদ্রিক পরিবেশকে বিষিয়ে তুলেছে। এইসব থেকে এগুলিকে রক্ষা করতে হবে। বিভিন্ন মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে যে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য তথা প্লাস্টিক সমুদ্রের জলে মিশছে তাকে পুনরুদ্ধার করে নীল বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে হবে।

 

৭. চাই প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান

পুনরুদ্ধার প্রকল্পের যথাযথ রূপায়ণের জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তার সংস্থানের জন্য দেশীয় সরকারগুলোকে প্রস্তুত থাকতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে কাজগুলোকে রূপায়িত করার যে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে তার জন্য প্রয়োজন প্রায় ৫৫০ বিলিয়ন ডলার। পৃথিবীর নানান মহাদেশে ছড়িয়ে থাকা দেশগুলোর আর্থিক সামর্থ্য সমান নয়। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই অর্থসংস্থান করতে হবে। কাজ অনেক— দক্ষ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রচলন, বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধার, মৃত্তিকার অবক্ষয় রোধ, খরা পরিস্থিতির মোকাবিলা, উন্নত টেকস‌ই কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থার প্রচলন। তালিকা বর্ধমান, সুতরাং চাই বিপুল পরিমাণ অর্থ। সেই অর্থের ঠিকঠাক ব্যবহার যাতে হয় সেই বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে। সরকারের পক্ষে এই অর্থের জোগান দেওয়া সম্ভব না হলে বেসরকারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ক্রাউড ফান্ডিং-এর কথা মাথায় রাখতে হবে। মোট কথা অর্থের অভাব যাতে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে কোনওভাবেই বাধা হয়ে না দাঁড়ায় সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে সকলকে।

 

এইসব কর্মপরিকল্পনাকে সামনে রেখেই আজ, ৫ জুন কিংডম অফ সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এই দেশটি মরুকরণ ও খরা পরিস্থিতির শিকার। তাই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজক হিসেবে এই দেশটিকেই বেছে নেওয়া হয়েছে সঙ্গত কারণেই।

এত বড় একটা লক্ষ্যকে সামনে রেখে আগামী দিনে পথ চলতে হবে আমাদের প্রত্যেককে হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ রেখে। পারস্পরিক দ্বিধা, দ্বন্দ্ব, মতের গরমিল— এই সবের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে সকলকে। মনে রাখতে হবে আমাদের ভবিষ্যৎ, এই কর্মসূচির সফল রূপায়ণের ওপর‌ই নির্ভরশীল। আমরা যেন সে-কথা বিস্মৃত না হ‌ই।

 


*নিবন্ধে ব্যাবহৃত নাটকের অংশ রূপালী প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ছোটদের নাট্য সপ্তক শীর্ষক নাট্যসঙ্কলন গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।