কুন্তলা বন্দ্যোপাধ্যায়
Homegoing/ Yaa Gyasi
“the problem with America wasn’t segregation but the fact that you could not, in fact, segregate. Sonny had been trying to get away from white people for as long as he could remember, but, big as this country was, there was nowhere to go.”
ইয়া গিয়াসির হোমগোয়িং, তিনশো পাতার বই হয়েও বলতে হবে মারাত্মক রোগা, যদি মনে রাখি এই তিনশো পাতায় লেখক দুটি মহাদেশে ছড়িয়ে পড়া একটি পরিবারের দুটি শাখার সাতটি প্রজন্মের গল্প এঁটেছেন।
আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলের গোল্ড কোস্ট, এখন যা ঘানা, সেখানে আসান্তে আর ফান্তে, দুই দলের লোক থাকে। এরা এসেছে আকান নামে একই পূর্বপুরুষের থেকে, তাই বোধহয় রেষারেষিটা বেশি। অনেক অনেক বছর আগে কবে নামের এক সচ্ছল ফান্তে পুরুষের বাড়িতে বাঁধা চাকরের কাজ করত মামে নামের এক আসান্তে মহিলা। কবের দ্বারা ধর্ষিত হয়ে মামে, এফিয়া নামের একটি শিশুকন্যার জন্ম দেয়। কবের বাড়িতে, ক্ষেতে আগুন লাগিয়ে পালানোর সময় মামে ফেলে রেখে যায় সদ্যোজাত এফিয়াকে। এদিকে মামে পালিয়ে গিয়ে অন্য গ্রামের এক পরাক্রমশালী আসান্তে নেতাকে বিয়ে করে এসি নামের আরেকটি মেয়ের জন্ম দেয়। দুই বোন একে অপরের অজ্ঞাতে বড় হতে থাকে। এফিয়া নামজাদা সুন্দরী হয়ে ওঠে, তাকে পছন্দ করে বিয়ে করে নিয়ে যায় জেমস কলিন্স, দাসব্যবসা দেখাশোনার জন্য ঘানা উপকূলে ব্রিটিশ সরকারের প্রতিনিধি। কলিন্সের, অফ কোর্স, ইংল্যান্ডে সংসার, বউ বাচ্চা আছে, যেমন সব সাহেবেরই থাকে, আবার তাদের সবারই যেমন আফ্রিকায় একজন করে কালো বউও থাকে। জেমস কলিন্স এফিয়াকে ভালোবাসে, বলে ওর সাদা বউকে ওর মনেই নেই, কিন্তু যেদিন সাদা বউয়ের চিঠি আসে, জেমস এফিয়াকে ছোঁয় না, খাটের দূর প্রান্তে গিয়ে পিঠ ফিরিয়ে শুয়ে থাকে। এমন সময় ফান্তেরা আসান্তেদের গ্রাম আক্রমণ করে, এসিকে বন্দী করে নিয়ে আসে ব্রিটিশদের প্রাসাদোপম বাংলোতে। ঘানার উপকূলে গেলে সে সব বাংলো আজও দেখা যায়, ইতিহাসের চিহ্ন হিসেবে সুন্দর করে রংচং করে সংরক্ষণ করা হচ্ছে তাদের। জেমস কলিন্সের মতো লোকজন বন্দীদের কিনে নেবে, তারপর নারীপুরুষশিশু ঝাড়াবাছা করে তাদের রেখে দেবে বাংলোর নিচের গুদামঘরে। এসি জানল না, এই বাড়ির ওপরতলায় তার সহোদর বোন এফিয়া রানীর মতো ঘুরছে, এফিয়া জানল না, এই বাড়ির নিচে ঘুটঘুটে অন্ধকারে, হাঁটু পর্যন্ত জমে ওঠা মলমূত্রবমির মধ্যে বসে আছে তার সহোদর এসি। কখনও কখনও ওপর থেকে সাদা অফিসাররা নেমে আসে, নাকে রুমাল, চোখে আতঙ্ক, একেকজনকে টিপেটুপে দেখে বাইরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। এসি–রও মাঝে মাঝে পালা আসে, ওই কয়েক মুহূর্তে এসির সারা গায়ে সূর্যের আলো লাগে, চোখ খুলে নিজের শরীরের অন্য একটা অবাঞ্ছিত শরীরের পাঁচিল এড়িয়ে এসি আকাশ দেখে নেয়, ওইটুকু স্মৃতি নিয়ে আবার অন্ধকার খোঁয়াড়ে ফিরে যায়। অপেক্ষা করে। একদিন অপেক্ষা শেষ হয়। “ডোর অফ নো রিটার্ন” পেরিয়ে জাহাজে চাপিয়ে ওদের নিয়ে যাওয়া হয় সাদা চামড়ার দেশে। শুরু হয় ক্রীতদাসের জীবন।
হোমগোয়িং–এর গল্প এই এফিয়া আর এসির পরের সাত প্রজন্মের গল্প নিয়ে। প্রতিটি চ্যাপ্টার শুরু হচ্ছে সেই প্রজন্মের বংশধরের নাম দিয়ে। একটা চ্যাপ্টারের নায়ক এফিয়ার বংশধর, যারা স্বর্ণ উপকূলের বাংলোয় থেকে ক্রীতদাস ব্যবসা চালাল, পরের চ্যাপ্টারটা এসি–র বংশধরের, যাদের ভাগ্য এসি–র সঙ্গে জাহাজে চেপে অ্যামেরিকায় এসে পৌঁছোল। অনেকে বলেছেন, আমার নিজের পড়েও তাই মনে হয়েছে, এই প্রতিটি চ্যাপ্টার যেহেতু একটি নতুন প্রজন্ম, একটি নতুন সময়ের গল্প বলে, এদেরকে স্বয়ংসম্পূর্ণ গল্প হিসেবেও দেখা যায়। সেদিক থেকে গিয়াসির হোমগোয়িং–কে ‘অলিভ কিটরিজ‘ বা ‘রিভেঞ্জ‘–এর সঙ্গে তুলনা করা যায়। সকলেই যে এই ধাঁচ নির্বাচনের সমর্থন করেছেন তা নয়। অনেকেরই মনে হয়েছে, এই বিরাট পটভূমি ধরার জন্য এইরকম খণ্ড খণ্ড ছবি উপযুক্ত নয়। সব চরিত্র সমান গুরুত্ব পায়নি। গোটা গল্পটা একটা রুদ্ধশ্বাস দৌড়ে পরিণত হয়েছে।
আমার সেটা নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই। যেটা নিয়ে অভিযোগ আছে, সেটা হচ্ছে এই সাতটি প্রজন্মের জীবৎকালে ঘানা এবং অ্যামেরিকায় ঘটে চলা কালো মানুষের ইতিহাসের সব গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে আসতে গিয়ে হোমগোয়িং সামান্য ইতিহাস বইয়ের চেহারা পেয়েছে। গিয়াসি নিজে স্বীকার করেছেন এ সব বিষয়ে তাঁর গবেষণা হয়েছে “wide and shallow”। এই সব ঘটনাগুলো এতই গুরুত্বপূর্ণ, হাজারকয়েক শব্দের পরিচ্ছেদে তাদের ধরতে চাওয়া অপ্রতুল মনে হয়।
গত বছর প্রকাশের মুহূর্ত থেকেই প্রশংসার বন্যায় ভেসেছে হোমগোয়িং। আমি মনে করি, এ প্রশংসা গিয়াসির অর্জিত। এই বিরাট প্রেক্ষাপটকে, মানুষের প্রতি মানুষের নিষ্ঠুরতার অবিশ্বাস্য ক্ষমতাকে দু’মলাটের মধ্যে তুলে ধরার সাহস আর দক্ষতা সকলের থাকে না। জীবনের প্রথম উপন্যাসে তো নয়ই।
হোমগোয়িং গিয়াসির প্রথম উপন্যাস। বই প্রকাশের সময় তাঁর বয়স ছিল ছাব্বিশ। তথ্যটা আগেই জানতাম। বইটা শেষ করার পর জানাটা নতুন করে বুকে ধাক্কা মারল। ছাব্বিশ। জীবনে কিছু কিছু সময় আসে, যত দিন যাচ্ছে তত ঘন ঘন আসছে, যখন নিজেকে সান্ত্বনা দিতে, ভুলিয়ে রাখতে, “এজ ইজ জাস্ট আ নাম্বার” মাথার ভেতর ক্রমাগত জপ করে চলা ছাড়া উপায় থাকে না। হোমগোয়িং পড়ার পর থেকে আমার সেই সময় চলছে।
*****
A Rising Man/ Abir Mukherjee
এ বছরের শুরুতে আমার বই পড়া সংক্রান্ত একটা রেজলিউশন ছিল, ননককেশিয়ান গোয়েন্দার স্টক বাড়ানো। বই পড়া সংক্রান্ত বাকি সব রেজলিউশনের মতো, এটা রক্ষাতেও আমি ডাহা ফেল করতে চলেছি। তবে হারা জেতায় লাজ নেই, যত লাজ নিশ্চেষ্ট হয়ে অদৃষ্টের হাতে সব ছেড়ে বসে থাকায়। সে জন্য হাফ বছর পেরিয়ে যেতে আমি নড়েচড়ে বসলাম। আর অমনি গার্ডিয়ান পত্রিকায় একখানা গোয়েন্দা উপন্যাসের গ্লোয়িং রিভিউ চোখে পড়ল। উপন্যাসটার কথা অনেকদিন ধরেই এদিকওদিক থেকে কানে আসছিল। গার্ডিয়ানের রিভিউ মনে জোর দিল, কিন্ডলে কিনে ফেললাম আবীর মুখার্জির আত্মপ্রকাশকারী উপন্যাস ‘আ রাইজিং ম্যান’। স্যাম উইন্ডহ্যাম সিরিজের প্রথম বই।
এই শেষের তথ্যটা আমি জানতাম না। আমি শুধু জানতাম মুখার্জির উপন্যাসের ঘটনা ঘটছে স্বাধীনতাপূর্ব ভারতবর্ষের কলকাতা শহরে। গল্পে একজন বাঙালি পুলিসের সাহসিকতার কথাও পড়েছিলাম, পড়ে ধরেই নিয়েছিলাম যে এ গল্পের গোয়েন্দাও কালা আদমি।
বই কেনার পর দেখি গোয়েন্দা আপাদমস্তক সাহেব, ক্যাপ্টেন স্যাম উইন্ডহ্যাম। গল্পের কালা আদমি সার্জেন্ট ‘সারেন্ডার–নট’ ব্যানার্জি, ক্যাপ্টেন উইন্ডহ্যামের তোপসের ভূমিকায়।
যাকগে, একটা রেজলিউশন (ননককেশিয়ান গোয়েন্দার বই পড়ার) রাখা হল না, আরেকটা (বই পড়ার) রাখা হল।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধক্ষেত্রের আতঙ্ক স্বচক্ষে দেখে, স্ত্রীবিয়োগের যন্ত্রণা সয়ে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের গোয়েন্দা ক্যাপ্টেন উইন্ডহ্যাম এসেছেন কলকাতায় ইম্পিরিয়াল পুলিশবিভাগের গোয়েন্দা হিসেবে যোগ দিতে। নতুন শহরের সঙ্গে পরিচিতির সুযোগ পাওয়ার আগেই একটি ঘনঘোর রহস্যে উইন্ডহ্যামের দায়িত্বে এসে পড়ে। একজন উচ্চপদস্থ ‘সাহিব’, নেটিভ আদমিদের পাড়ার গলির নালার মধ্যে খুন হয়ে পড়ে আছেন, মৃতদেহের মুখে কাগজ পোরা, তাতে বাংলায় ভারত ছাড়ার হুমকি লেখা।
তদন্ত শুরু হল। যা যা গোলমাল বাধার সবই বাধল। উইন্ডহ্যামের সহকারী ডিগবি, ঘোর রেসিস্ট, ঘোর ভারতবিদ্বেষী। রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির ঘুণধরা ব্রিটিশরাজ। সরকারি আনুকূল্যপ্রাপ্ত দুর্নীতিগ্রস্ত পাটকলের ফিরিঙ্গি মালিক। বেইমান ভারতীয় খোচর। ‘টেররিস্ট’ স্বাধীনতা সংগ্রামী। কোঠাবাড়ির আবেদনময়ী মালকিন। রহস্যময়ী অ্যাংলোমেম টাইপিস্ট। এই পরিস্থিতিতে স্যাম উইন্ডহ্যামের একমাত্র সঙ্গী অধস্তন পুলিস সার্জেন্ট ব্যানার্জি। যার খটমট নাম জিভে কায়দা করতে না পেরে সাহেবরা ‘সারেন্ডার–নট’ করে নিয়েছে।
আ রাইজিং ম্যান–এর প্রেক্ষাপট চরম ইন্টারেস্টিং, সেই প্রেক্ষাপটের সদ্ব্যবহারও করতে ভোলেননি শ্রী মুখার্জি। সে সময়ের কলকাতার বর্ণনা, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস, টেরিটিবাজারে চিনা আফিমের আড্ডা, একই শহরে নেটিভ এবং সাহেবদের পাশাপাশি কিন্তু যোজনদূরত্ব অবস্থান, এ সব কিছুই ছুঁয়ে গিয়েছেন তাঁর গল্পে।
আর সেটা করতে গিয়েই গল্পটার দিকে নজর দেননি। বা আরেকটু ক্রিটিক্যাল হয়ে বলা যায়, সেটা করেছেন বলেই গল্পের দিকে নজর না দিয়েও পার পেয়ে গেছেন।
রাইজিং ম্যান–এর ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং যতটা টানটান, রহস্য সমাধানের প্রক্রিয়া ততটাই ফুটোফাটা। বা বলা উচিত ফুটোগুলো চাপা দিতে অক্ষম লেখক। গোয়েন্দাগল্প পড়েটড়ে আমার যা মনে হয়েছে, ভুল ধরতে চাইলে সব তদন্তেরই ভুল ধরা যায়। যাকে জেরা করলে সেকেন্ড সিনে খুনি বেরিয়ে যাবে তার জেরা টাঙিয়ে রাখা হয়ে লাস্টের আগের সিন পর্যন্ত। করিৎকর্মা লেখক এইসব ধাপ্পাবাজি সাফল্যের সঙ্গে চাপাচুপি দিয়ে রাখতে পারেন। মাঝখানে রেড হেরিং, ফলস ক্লু দিয়ে পাঠককে এমন গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে রাখেন যে সে অন্য কথা ভাবার সময় পর্যন্ত পায় না। আবীর মুখার্জি সেটা পারেননি। উইন্ডহ্যাম পাগলের মতো দৌড়চ্ছেন এদিকসেদিক, আর আমি ভেবে চলেছি ওই ব্যাপারটার কী হল, ওই লাইন অফ ইনভেস্টিগেশনটা পারসু করল না তো। (মনে রাখতে হবে, আমি কিন্তু গোয়েন্দাগল্পের অত্যন্ত বিশ্বাসী পাঠক, আমি ভুল পথে ভেসে যেতেই চাই, সেই আমারই যখন এতসব প্রশ্ন মনে জাগছে, সেয়ানা পাঠকদের জাগতে বাধ্য।)
তবে লেখকের এটা প্রথম গোয়েন্দা উপন্যাস, কাজেই গ্রেস দিতে চাইলে দেওয়া যায়। যে বিষয়টায় আমি গ্রেস দিতে পারছি না (নাকি চাইছি না?) সেটার কথা বলে শেষ করি। স্যাম উইন্ডহ্যাম সবে একবেলা হল কলকাতায় এসে নেমেছেন, এর আগে তিনি আধখানা বাঙালিও চোখে দেখেননি, অথচ বাঙালি এবং কলকাতা নিয়ে তাঁর উচ্ছ্বাস দেখার মতো। ভারতবর্ষের বাকি প্রদেশের ওপর ব্রিটিশ সাম্রাজ্য আরামসে আধিপত্য চালাচ্ছে, কেবল এই বাগ্মী, তেজস্বী এবং মোস্ট ইম্পরট্যান্টলি, বুদ্ধিমান বাঙালির দল তাঁকে স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। আর কলকাতা, আহা। এরকম বর্ণময়, ইউনিক শহর পৃথিবীতে আর দুটি আছে কি না সন্দেহ। এ কি সদ্য প্রিয়বিরহে শোকার্ত, দেশ ছেড়ে আসা সাহেবের জবানবন্দী, নাকি প্রবাসী কলকাতাবাসীর ফেসবুক পোস্ট, মাঝে মাঝে আমার সত্যি গুলিয়ে যাচ্ছিল।
*****
Vyasa: The Beginning/ Sibaji Bandyopadhyay and Sankha Banerjee
২০১৭-র সেপ্টেম্বরে একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার ঘটল, আমি আমার জীবনের প্রথম গ্রাফিক নভেলটা পড়লাম। তাও আবার যে সে নভেল না, একেবারে মহাভারত। শিবাজি বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আর শঙ্খ ব্যানার্জির ছবিতে মহাভারতের শুরুর দিকের অংশ নিয়ে গ্রাফিক নভেল বার করেছে পেঙ্গুইন র্যান্ডম হাউস, নাম দিয়েছে ব্যাস : দ্য বিগিনিং, দাম করেছে চারশো টাকা। দামটা আমার মতে খুবই ন্যায্য, কারণ মোটা বই, মোটা পাতা, ঝকঝকে বাঁধাই।
ব্যাস দি বিগিনিং–এর বেশিরভাগ গল্প — সত্যবতী পরাশর, সত্যবতী শান্তনু, ভীষ্মের শপথগ্রহণ, অম্বা অম্বিকা অম্বালিকা বৃত্তান্ত, দ্রোণ বনাম দ্রুপদ, শর্মিষ্ঠা বনাম দেবযানী, যযাতির যৌবনযাতনা ইত্যাদি আমার জানা ছিল, আবার জন্মেজয়ের যজ্ঞে মহাভারতের কথা শুনে এসে নৈমিষারণ্যে বসে সেই গল্প শোনাচ্ছিলেন যে উগ্রশ্রবা সৌতি, তাঁর বাবাও যে চমৎকার গল্প বলিয়ে ছিলেন আর বাবার নাম যে ছিল লোমহর্ষণ, এটা জানা ছিল না।
ব্যাস–এর ভাষা আমার চেনা লোকদের কারও কারও অপছন্দ হয়েছে, কিন্তু আমার খুবই পছন্দ হয়েছে। সাধারণত মহাকাব্য আমরা যে রকম শ্রদ্ধাপূর্ণ, নতমস্তক ভাষায় পড়তে অভ্যস্ত শিবাজি সেটা সম্পূর্ণ পরিহার করেছেন। যেমন শর্মিষ্ঠা দেবযানী ঝামেলায় চরিত্ররা একে অপরকে অবলীলায় ‘দ্যাট বিচ!’ বলে তিরস্কার করছে, উগ্রশ্রবার শ্রোতারা তো ভয়ানক রসিক।
লেখার থেকেও নজর কেড়েছে আমার ব্যাস–এর ছবি। মহাভারতের (বা যে কোনও মহাকাব্যেরই) যা মূল সুর, হিংস্রতা, সেটা ব্যাস দ্য বিগিনিং–এর প্যানেলে প্যানেলে পরিস্ফুট। জন্মেজয়ের যজ্ঞে সাপদের ধরে ধরে আগুনে ফেলার সময় সাপদের চোখেমুখে যে মৃত্যু-আতঙ্ক, আমি দ্বিতীয়বার তাকাতে পারিনি। উগ্রশ্রবা এ গল্পে দাড়িওয়ালা বোরিং সাধু নন, তিনি রীতিমতো গল্পের মুড বুঝে মেকআপ পাল্টান, চোখ নাক মুখ আঁকেন, প্রপস বদলান।
বইটি একটি সিরিজের অংশ। ব্যাস : দ্য বিগিনিং শেষ হয়েছে দ্রৌপদী এন্ট্রি নেওয়ার ঠিক আগে। পরের বইগুলো অতি অবশ্যই পড়ব, ঠিক করে রেখেছি।
চিত্রসূত্র : গুগুল ইমেজেস