Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

মানুষ নেমেছে পথে…

অমিতাভ ভট্টাচার্য (লেখা) ও বিজয় চৌধুরী (ছবি)

 


মানুষ নেমেছে পথে। বড় ভূমিকা নিয়েছে মূলত নারী ও ছাত্রছাত্রীরা। মাননীয়া বলছেন বিরোধীদের চক্রান্ত। নিজেই হাস্যকরভাবে বিচার চেয়ে হাঁটলেন। আবার নামানো হল লুম্পেন-গুন্ডা-সহ পুলিশের অত্যাচার। তথাকথিত সব রাজনৈতিক দলকে বাইরে রেখে ছাত্ররা গণপরিষদ গড়ে তুলে এই আন্দোলনকে সুনির্দিষ্ট করতে এগিয়ে আসুন। সমস্ত অনুদানের ছলে বেনিফিসিয়ারি তৈরির সরকারি ঘুষকে ছুড়ে ফেলে কালান্তক যমদের উৎখাত করুন। আসুন রাস্তায় নামি

 

সারা শহর উথালপাথাল, ভীষণ রাগে যুদ্ধ হবে।

আশঙ্কা করেছিলেন কবি নবারুণ ভট্টাচার্য। সত্যি এক অসামান্য লড়াই দেখছে মানুষ। যেখানে কয়েকটা শব্দ ফুলকি হয়ে জ্বালাল আগুন— রাত দখল করো। দেখলাম বৃষ্টি উপেক্ষা করে বর্ষারাতে বজ্রনির্ঘোষ সারা বাংলা জুড়ে। সত্যি বলতে নন্দীগ্রাম সিঙ্গুর-কালে গড়ে ওঠা জনরোষের পর এই প্রথম একটা জনজাগরণ। অধুনা ভিজে কাক অতীতের এক গানওয়ালাকেও সে-সময়ে দাপাদাপি করতে দেখা যেত, যার গিটার নাকি রাগে গরগর করত— তিনি হাওয়া। আরও কত সব পণ্ডিত— অনেকে আবার গ্রামসি পড়তে অভ্যস্ত। সব্বাই এখন সকালে চটি না চেটে জলগ্রহণ করেন না। বাম আমলেও অনাচার, অত্যাচার, পাশবিকতা, অনুন্নয়ন কম ছিল না। লোকে মজা করে বলত ‘থার্টি ফাইভ ইয়ারস অব সলিটিউড’। শ্মশানের নীরবতা ছিল। এলসি বাবুদের হুমকি ছিল, আজকের মতোই তোলাবাজি, মাছের ভেড়ি আর প্রোমোটরির হেভি ইন্ডাস্ট্রি ছিল। আর ছিল স্টালিনীয় ধাঁচে মাতব্বরি-সহ স্নিফার ডগের মতো ক্রিমিনালদের কাজে লাগানো। এখন স্নিফার ডগরাই সামনের সারিতে। তখনকার সুজিত-মজিদরাই এখন অজিত-প্রজিত হয়েছে। আমার বাবা বলতেন ‘টুলগুলোই সব বেঞ্চি হয়েছে।’

 

সে কয় দশকও সিভিল সোসাইটির ভেক ধরা এই চটিচাটারা বামের হাতে তামাক খেতেন আর গাইতেন বামফ্রন্টের বিকল্প উন্নততর বামফ্রন্ট। তারপর নন্দীগ্রাম সিঙ্গুর-কালে জনরোষ ফেটে পড়লে এঁদের নাকি চোখের মায়োপিয়া সেরে যায়। যখনই নিশ্চিত হন যে সরকার পতন অনিবার্য তখনই সটান একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে ‘পরিবর্তন চাই’ ব্যানারে চিৎকারে গলা ফাটালেন। হুতোমের ভাষায় এই ‘বর্ণচোরা আঁব’রা এখন জল মাপছেন। পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখলেই আবার হল্লা মচাবেন, মড়াকান্না জুড়বেন। গুটি গুটি হামা দেবেন নব্য সরকারের কোলে। যাঁরা এখন বলেন ‘তাই তাই তাই, দিদির বাড়ি যাই, দিদি দিল টুকরো রুটি, চুষে চুষে খাই।’ দেখবেন এঁরাই তখন বিভিন্ন পদে। ‘বুদ্ধিজীবী’ নামক এক অশালীন খিস্তির জন্ম দিল এ রাজ্য।

 

বিগত বছরগুলো ধরে সরকারি আদরে গড়ে ওঠা নিম্নমেধার মানুষ, লুম্পেন, চোর-জোচ্চোর, ধর্ষক, খুনি, চাটুকার নট, শিল্পী-বুদ্ধিজীবীদের রমরমা। এরা মাননীয়ার কবিতা, গানে, আঁকাতে নালঝোল ফেলেন। গুটিকয় অতি চটিচাটা তো বলেই ফেললেন যে ওঁর চিত্র আধুনিকতার অন্য মাত্রা আনল। কষ্ট হয়, এ-রাজ্যে এখন কেন হুতোম নেই নকশা লেখার।

 

ভাণ্ডার-শ্রী নামাঙ্কিত ভিক্ষে বিলি এখন কল্পতরু। নবারুণবাবু ঠিকই বলেছিলেন— ‘খুলে দিয়েছি রাজকোষ, এবার যত খুশি চোষ’। আজই কাগজে দেখলাম এই হরির লুঠের অর্থ নাকি কর্জের অর্থ— জমে দই। এই ঘোর অন্ধকারের মধ্যে চলেছি আমরা। এই তমসার প্রবাহে নিরন্তর ঘটে গেছে সেই বানতলা, হাথরস, নির্ভয়া থেকে কামদুনি আর এই ভয়াবহ আরজিকরের পাশবিকতা। মানুষ নেমেছে পথে। বড় ভূমিকা নিয়েছে মূলত নারী ও ছাত্রছাত্রীরা। মাননীয়া বলছেন বিরোধীদের চক্রান্ত। নিজেই হাস্যকরভাবে বিচার চেয়ে হাঁটলেন। আবার নামানো হল লুম্পেন-গুন্ডা-সহ পুলিশের অত্যাচার। তথাকথিত সব রাজনৈতিক দলকে বাইরে রেখে ছাত্ররা গণপরিষদ গড়ে তুলে এই আন্দোলনকে সুনির্দিষ্ট করতে এগিয়ে আসুন। সমস্ত অনুদানের ছলে বেনিফিসিয়ারি তৈরির সরকারি ঘুষকে ছুড়ে ফেলে কালান্তক যমদের উৎখাত করুন। আসুন রাস্তায় নামি। মনে রাখবেন মার্টিন লুথার কিং একদা বলেছিলেন ‘if you are waiting for a leader then you are not hearing your own voice.’


*মতামত ব্যক্তিগত। সমস্ত ছবিগুলি বিজয় চৌধুরীর তোলা