Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

শোক নয়— দ্রোহের বদলাপুর

অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়

 


কেন তিলোত্তমার ঘটনার সঙ্গে বদলাপুরের ঘটনার মিল পাওয়া যাচ্ছে? মহারাষ্ট্রের বদলাপুরের সেই মর্মান্তিক ঘটনায় আক্রান্ত দুই নাবালিকা ছাত্রীকে তাদের স্কুলের অভ্যন্তরেই যৌন-নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছে। আক্রান্ত দুই নাবালিকার বয়স চার। বিদ্যালয় পরিসর— ভারতীয় আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে এমন বিদ্যালয় পরিসরকেই শিশুদের পারিপার্শ্বিক অবস্থার নিরিখে বাড়ির চেয়েও বেশি নিরাপদ বলে মনে করা হয়। সেই ‘নিরাপদ’ পরিসরেই এমন দুই নিষ্পাপ শিশুকে শেষমেশ এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হল

 

বিচারের স্লোগান কি ক্রমশই নিস্তেজ হয়ে এল এবার? নাকি রাজনীতির দড়ি টানাটানিতেই তার বিসর্জন হল? অপ্রিয় প্রশ্নগুলিকেই এইবারে সামনে নিয়ে আসা উচিত। ‘নাগরিক সমাজ’-এর সদস্য হিসেবে যে বা যাঁরা রাজনীতি-অরাজনীতির দ্বন্যুক-বিভাজনে ক্রমশই ইন্ধন যুগিয়ে চলেছেন, তাঁদেরকে স্পষ্ট করে একথা বলার সময় এসেছে— রাজনীতি এবং দলীয় রাজনীতির উদযাপন এক জিনিস নয়। যে কোনও আন্দোলনই রাজনৈতিক। এক রাজনৈতিক মতের বিরুদ্ধে অন্য রাজনৈতিক মতের লড়াই। সেই লড়াই কেবল তৃণমূল-কংগ্রেস-বিজেপি-সিপিএমের ক্ষমতা দখলের হাত-ঘষাঘষি, মন-কষাকষির সহজ অঙ্কে পড়ে না। আন্দোলন শুরু হয়েছিল নারীর সম্ভ্রম রক্ষার প্রশ্নে, নারীর নূন্যতম নিরাপত্তা রক্ষার প্রয়োজনেই। সেখানে সন্দীপ ঘোষের দুর্নীতি অথবা আখতার আলির ভিজিল্যান্স কমিশনে যাওয়ার ঘটনা, এই সবকিছুই কিন্তু উঠে এসেছে কেবল আনুষঙ্গিক অন্যান্য প্রসঙ্গ হিসেবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন সব ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু নারী-নিরাপত্তার দাবিতে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, সেই আন্দোলনকে দুর্নীতির অভিমুখে ঘুরিয়ে দিয়ে, রাজ্যে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের দাবিকেই ক্রমশ মুখ্য করে তুলে, আদতে এমন স্বঘোষিত আন্দোলনকারীরাই আন্দোলনের অভিমুখটিকে সম্পূর্ণ ভুল পথে নিয়ে গেলেন। এঁদের কারও কারও রাজনৈতিক বোধ এতটাই নিম্নগামী যে, আরএসএস-সদস্য একজন সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নিজের ‘ফুটেজ’ তৈরির প্রয়োজনে দরকারমতো গেরুয়াধারী হয়ে পড়ে জলকামানের সামনে কিয়দক্ষণ দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই তাঁকে প্রায় চট্টগ্রাম-ফেরত বিপ্লবী নায়ক বানিয়ে দেওয়ার উচ্ছ্বাস দেখা গেল। এমনকি সেই ‘ফুটেজ’ তৈরির পরে-পরেই তাঁর আদ্যন্ত পুরুষতান্ত্রিক বক্তব্যটিকেও ঘুরপথে সমর্থনের চেষ্টা করা হল। ঠিক এই কারণেই নাগরিক আন্দোলনের রাজনৈতিক চরিত্র প্রয়োজন। সেই রাজনীতি পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে সমানাধিকারের কথা বলার রাজনীতি। সেই রাজনীতি হিন্দুত্ববাদ-ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলার রাজনীতি। সেই রাজনীতি সাভারকর-গডসের রাজনীতির বিরুদ্ধে কার্ল মার্কস-রবীন্দ্রনাথ-গান্ধির কথা বলার রাজনীতি। যে রাজনীতি সাভারকর, আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ভেকধারী সদস্যেরা প্রচার করে থাকে, সেখানে রাজনৈতিক প্রয়োজনে নারী-ধর্ষণকেও সরাসরি ব্যবহারযোগ্য অস্ত্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।[1][2] রাতদখলের নাগরিক-রাজনৈতিক আন্দোলন সরাসরি সেই ঘৃণ্য রাজনীতির বিরুদ্ধে গিয়ে দাঁড়ায়। তাই সচেতনভাবে এই নাগরিক আন্দোলনের রাজনৈতিক চরিত্র প্রয়োজন। সেই চরিত্র তৃণমূল-কংগ্রেস-বিজেপি-সিপিএম দ্বারা নির্ধারিত হয় না। সেই চরিত্রকে বুঝতে গেলে সমাজতত্ত্বেরই আলোচনায় আরও খানিক গভীরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এই কথাগুলোই বলে নেওয়ার প্রয়োজন ছিল বোধহয়।

তিলোত্তমার সঙ্গে যে অপরাধ হল সেই প্রসঙ্গে সহমর্মী এক চিকিৎসকের বক্তব্য শুনছিলাম। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় তিনি তুলে এনেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, হাথরাস, উন্নাও, কাঠুয়া, কামদুনি অথবা আরও অন্যান্য অনেক ঘটে যাওয়া ঘটনার থেকেই তিলোত্তমার ঘটনা স্বতন্ত্র। যুক্তি হিসেবে তিনি বলেছিলেন, উক্ত সবকটি ঘটনার বিপরীতে, তিলোত্তমা যে পরিসরে আক্রান্ত হন তা ছিল তাঁর নিজের কর্মক্ষেত্র। একজন মানুষ, একজন নারী— যদি তাঁর কর্মক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ নিরাপত্তাটুকু না পেয়ে থাকেন— সেই পরিপ্রেক্ষিতে তখন সমাজের সবচেয়ে অন্ধকার অবস্থাটুকুই চরম দুর্ভাগ্যে স্বীকৃতি পায় বোধহয়। এই কারণেই তিলোত্তমার বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন এমন সার্বিক জনবিস্ফোরণের চেহারা নেয়। একই সময়ে ঘটে যায় বদলাপুর। সেই ঘটনাতেও আমরা এই একই প্রসঙ্গে তিলোত্তমার ছায়া দেখতে পাই। যদিও ‘রাত দখল’ ও সমতুল স্বতঃস্ফূর্ত নাগরিক আন্দোলনের বিপরীতে, গড়ে ওঠা অনেক ‘রামশ্যামযদুমধু’র ‘রাজনৈতিক’ সংগ্রাম-আন্দোলনে আমরা বদলাপুর-প্রসঙ্গ পাই না। এমনকি পাই না উত্তরপ্রদেশে আরও সম্প্রতি ঘটে যাওয়া দুই দলিত নাবালিকাকে খুন করে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ। বর্ধমানে আদিবাসী-কন্যা ধর্ষণ ও খুনের যে সাম্প্রতিকতম ঘটনা, সেটিও আরএসএস-বিজেপির ছদ্ম ‘ছাত্রসমাজ’-এর আন্দোলনে গুরুত্ব পেয়ে উঠতে পারে না। এমনকি সংবাদে প্রকাশ, পিছন থেকে এমন রাজনৈতিক ফায়দা তোলার উদ্দেশ্যেই মহারাষ্ট্রের মুম্বাই শহরের অভিজাত আবাসনের তরফে ‘আয়োজিত’ ছদ্মবেশী ‘রাতদখল’-এর এমন এক আন্দোলন-পরিসরেই পার্শ্ববর্তী এলাকার বহুজন মহিলাদের অংশগ্রহণ অবধি করতে দেওয়া হয়নি।[3] আদতে সার্বিক ‘রাতদখল’-এর বৃহত্তর আন্দোলন আরজিকর থেকে বদলাপুর সকল নারী নির্যাতনের ঘটনার বিচার চায়। তারা বর্ণ, জাতি, পোশাক, বয়সের ভিত্তিতে ধর্ষিতার শ্রেণিবিভাগ করে না। তারা রূপান্তরকামী, সমকামী, তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি-সহ সকল মানুষের জন্য মনুষ্যত্বের সমানাধিকার চায়। আর ঠিক এইখানেই সার্বিক ‘রাতদখল’-এর বৃহত্তর নাগরিক-রাজনীতির বিপক্ষে দলীয় কুৎসিত রাজনীতির পরাজয়। দলীয় রাজনীতি তাই দুর্নীতি, ক্ষমতার পরিবর্তন, ও আরও সমস্ত অন্যান্য অপ্রাসঙ্গিক-আনুষঙ্গিক ঘটনাকেই বেশি করে সামনে নিয়ে এসে বৃহত্তর এই নাগরিক-রাজনীতির পরাজয় ঘটাতে চায়। তবু এই নাগরিক আন্দোলন এত সহজে পরাস্ত হওয়ার নয়।

কেন তিলোত্তমার ঘটনার সঙ্গে বদলাপুরের ঘটনার মিল পাওয়া যাচ্ছে? মহারাষ্ট্রের বদলাপুরের সেই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় আক্রান্ত দুই নাবালিকা ছাত্রীকে তাদের স্কুলের অভ্যন্তরেই যৌন-নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছে। আক্রান্ত দুই নাবালিকার বয়স চার। বিদ্যালয় পরিসর— এই শব্দদুটির উপরেই জোর দিতে চাইব, কারণ ভারতীয় আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে এমন বিদ্যালয় পরিসরকেই, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এমন শিশুদের পারিপার্শ্বিক অবস্থার নিরিখে বাড়ির চেয়েও বেশি নিরাপদ বলে মনে করা হয়। সেই ‘নিরাপদ’ পরিসরেই এমন দুই নিষ্পাপ শিশুকে শেষমেশ এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হল। ‘শিশুদের পারিপার্শ্বিক অবস্থা’র কথা উল্লেখ করলাম কারণ, দীর্ঘ সময় যাবৎ অপরাধ-বিষয়ক সঙ্কলিত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে— ভারতে ঘটে যাওয়া অধিকাংশ নারী-নিগ্রহের ঘটনাই কেবল যে পরিচিত পুরুষদের তরফেই ঘটানো হয়ে থাকে তা নয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চরম নিকটাত্মীয়, স্বজনদের তরফেই নারীদের উপর এমন অত্যাচারের ঘটনা ঘটানো হয়।

এমনটাই ‘সনাতনী’ ঐতিহ্য আমাদের। যে ঐতিহ্য ‘দ্রৌপদী’র চরম লাঞ্ছনার সময়েও ‘তিষ্ঠ ক্ষণকাল, এখনও সময় হয়নি’ বলে আমাদের অপেক্ষার পরামর্শ দিয়ে থাকে। ‘সীতা’র অগ্নিপরীক্ষার ঘটনাকে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয় ‘রাজ-নীতি’র অজুহাতকে সামনে নিয়ে এসেই। লড়াইটা সেই পরিসর থেকেই শুরু করা প্রয়োজন। ‘রাত-দখল’-এর ‘নাগরিক-রাজনৈতিক’ আন্দোলন তাই সার্বিক সমাজ-পরিবর্তনের কথা বলে। কেবলই প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা দখল বা পরিবর্তন এর উদ্দেশ্য নয়।

তিলোত্তমার ঘটনার সঙ্গে একই সময়ে অসমে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ঘটেছে বদলাপুরের ঘটনা। উত্তরপ্রদেশে একাধিক নারী-নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে। বর্ধমানে ঘটেছে আদিবাসী-কন্যাকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা। রাতদখল-এর আন্দোলনকারীরা এই সকল ঘটনারই বিচার চায়। এই লেখা লিখতে লিখতেও খবর পেয়ে চলেছি। প্রধানমন্ত্রীর নিজের রাজ্য গুজরাত, গতকাল সে রাজ্যের ভালসাদ এলাকায় তিন বছরের এক শিশুকন্যাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, সরকার, রাষ্ট্রপতি, এমন পদাধিকারীরাই যদি একেকজন কেবল পদত্যাগ করেন, সমাজের এই নিবিড়তর অন্ধকার কি তারই সঙ্গে একাদিক্রমে দূর হতে পারবে? এই অন্ধকার প্রশাসন-সৃষ্ট যত না, তার চেয়ে অনেক বেশি সমাজ-সৃষ্ট। আমাদের এ-কথা বোঝার সময় এসেছে।

তাই বলে তিলোত্তমাকে নিয়ে যে সার্বিক নাগরিক আন্দোলন, তারই যদি শিকড় খুঁজতে চাই? রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে বহুকাল যাবৎ জমে থাকা ক্ষোভ শুকনো বারুদের মতোই কেবল এক ফুলকির অপেক্ষায় নিঃশব্দ প্রহর গুণে চলেছিল। নিজের সবচেয়ে নিরাপত্তার জায়গা, নিজ-কর্মপরিসরেই তিলোত্তমার এই ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা, ও তৎপরবর্তীতে বরিষ্ঠ চিকিৎসক-অধ্যাপকদের তরফে সেই একই প্রতিষ্ঠান-পরিসরে সীমাহীন দুর্নীতিতে জড়িয়ে থাকার এই নির্লজ্জ আবরণ-উন্মোচন, আদতে সেই ফুলকিরই কাজ করেছে। তারই সঙ্গে, ক্ষমতাদখলের চেষ্টায় থাকা বিশেষ কোনও রাজনৈতিক দল সেই আগুনকে অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায়, আরও ছড়িয়ে পড়তেও নানা অনৈতিক উপায়ে সাহায্য করেছে। কিন্তু চাকরি-দুর্নীতি, শিক্ষা-দুর্নীতি থেকে শুরু করে বিবিধ ঘটনায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে জমে থাকা বিরাট ক্ষোভ, সর্বোপরি নিজ-কর্মপরিসরেই পরিচিত মেয়ের এই ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে এই বিরাট আন্দোলন তৈরিতে সবরকমে সহায়তা করেছে। কিন্তু তার পরবর্তীতেও আমরা যদি ‘রাতদখল’-এর সঙ্গে থাকা বিবিধ সামাজিক সংগঠনগুলির প্রধান দাবিসমূহকে পাশাপাশি বসাতে চাই?

সেখানে বলা হচ্ছে,

১) সমস্ত নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনার স্বচ্ছ ও দ্রুত তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে।
২) দুর্নীতিতে জড়িত সকল ব্যক্তিকে অপসারণ করতে হবে।
৩) স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় চিকিৎসক, নার্স-সহ অন্যান্য বিভাগে কর্মী নিয়োগ করতে হবে।
৪) স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রত্যেক স্তরে চলে আসা শাসকদলের আধিপত্য, নিয়ন্ত্রণ ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।
৫) বেসরকারি হাসপাতাল-সহ সমস্ত হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
৬) বিশাখা-আইন অনুযায়ী সকল কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে, ইত্যাদি।

আবারও বলছি তাই, এই আন্দোলন সার্বিক সমাজ-পরিবর্তনের আন্দোলন।

কিন্তু এর পরবর্তীতেও বদলাপুর। মুম্বাই উচ্চ-আদালতে বিশেষ তদন্তকারী দল তাদের প্রাথমিক তদন্ত-রিপোর্ট জমা দিয়ে জানিয়েছে, বিদ্যালয় পরিসরে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরাগুলি ব্যবহারযোগ্য অবস্থায় ছিল না। এই বিষয়ে মহারাষ্ট্র সরকার তড়িঘড়ি সংশ্লিষ্ট সকল শিক্ষক-কর্মচারী-আধিকারিককে চিহ্নিত করে, এতটুকুও সময় নষ্ট না করে তাদের সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ ধরিয়েছে। কিন্তু কোন জায়গাতে তাহলে আমরা এসে দাঁড়িয়েছি এখন?

হাসপাতালে চিকিৎসকেরা সুরক্ষিত নন, রোগীরা সুরক্ষিত নন, স্কুলের ভিতরে নাবালিকা ছাত্রীরা অসুরক্ষিত। কোনও সরকারের পদত্যাগে, অথবা কোনও আইন বলবতের মাধ্যমেই এই চূড়ান্ত লজ্জাকর পরিস্থিতির সার্বিক সমাধান সম্ভব? উত্তর সহজ নয়। আমরা কেবল চেষ্টা করতে পারি। ‘নট অল মেন’-এর কথা আমরা মুখে বললেও তখন, মাথা নামিয়ে নিতে বাধ্য হই। সামগ্রিক সমাজের চরিত্রবদল ভিন্ন ধর্ষণের এই অন্যায় রুখে দেওয়া অসম্ভব। আমরা অবশ্যই বলব, শোক নয়— দ্রোহের বদলাপুর।

শোক নয়— দ্রোহের আরজিকর
শোক নয়— দ্রোহের হাথরাস, উন্নাও, কামদুনি, গুজরাত

এই দ্রোহ ব্যক্তি-নির্দিষ্ট নয়, এক সার্বিক সামাজিক-রাজনৈতিক বক্তব্যের সপক্ষে এই দ্রোহের উচ্চারণ সোচ্চারে ধ্বনিত আজ।

যে দ্রোহের চোখ, প্রতিটি ধর্ষক পুরুষের চোখে চোখ রেখে বলতে চায়— আর নয় কখনও নয়।

প্রত্যেক দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি ও সমষ্টির চোখে চোখ রেখে বলতে চায়— আর নয় কখনও নয়।

এভাবেই নারী অথবা পুরুষ পরিচয় থেকে ক্রমশ মানুষ হয়ে উঠতে চাওয়া নতুন অবয়বগুলো রাত পেরিয়ে এক নতুন সমাজ নিঃশেষে দখলের পথে বুক চিতিয়ে এগিয়ে যায়।


[1] Ashraf, Ajaz. Reading Savarkar: How a Hindutva icon justified the idea of rape as a political tool. Scroll.in. May 28, 2016.
[2] Savarkar. Six Glorious Epochs of Indian History. Jan, 1971. p.176.
[3] Santha, Sukanya. Bahujan women asked to leave ‘Reclaim the Night’ march in Mumbai. The Wire. Aug 17, 2024.


*মতামত ব্যক্তিগত