Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

কয়েকটি প্রশ্ন— ভাবার জন্য, ভাবানোর জন্য

চার্বাক হেমব্রম

 

এই সামান্য মুসাবিদায় কয়েকটি প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, যাতে বিপথগামী আন্দোলনের দিশা যাঁরা দেখাবেন, তাঁরা সঠিক পথে থাকার ক্ষেত্রে এই প্রশ্নগুলি নিয়ে ভাবতে পারেন‌‌। এখন, এই ব্রাহ্মলগ্নেই কথাগুলো বলার সময়‌। সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, সুপ্রিম কোর্টে শুনানির দিকে তাকিয়ে সকলেই। চার তারিখ, পূর্বনির্ধারিত শুনানির তারিখের আগের রাত দখল করতে চেয়ে যেভাবে জনবিস্ফার ঘটেছে বাংলা জুড়ে, তার স্বতঃস্ফূর্ততা, দাপট— দেখার মতো

 

এ-বঙ্গের বাঙালি জাতির যে কিছুই হওয়ার নয়, অর্থাৎ রাজনৈতিকভাবে যে তাদের মেরুদণ্ড জাগরুক হওয়া সম্ভব নয়, আরজিকর-কাণ্ডের প্রতিবাদ এই ক-দিনে সে-কথা প্রমাণ করেছে। একইসঙ্গে এ-ও প্রমাণিত, এই পশ্চিমভাগের বাঙালির আন্দোলন-চেতনার হাড়ে-মজ্জায় সমস্যা‌‌। কিন্তু সে-সব সমস‍্যা সমাধানযোগ‍্য। এই সামান্য মুসাবিদায় কয়েকটি প্রশ্ন তাই তোলা হচ্ছে, যাতে বিপথগামী আন্দোলনের দিশা যাঁরা দেখাবেন, তাঁরা সঠিক পথে থাকার ক্ষেত্রে এই প্রশ্নগুলি নিয়ে ভাবতে পারেন‌‌। এখন, এই ব্রাহ্মলগ্নেই কথাগুলো বলার সময়‌। সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, সুপ্রিম কোর্টে শুনানির দিকে তাকিয়ে সকলেই। চার তারিখ, পূর্বনির্ধারিত শুনানির তারিখের আগের রাত দখল করতে চেয়ে যেভাবে জনবিস্ফার ঘটেছে বাংলা জুড়ে, তার স্বতঃস্ফূর্ততা, দাপট— দেখার মতো।

বারবার যে নাগরিক আন্দোলন, গণআন্দোলনের কথা বলা হচ্ছে, তা আসলে কাদের আন্দোলন? নাগরিকদের? কোন নাগরিক? কলকাতার? বিগত কয়েকবছরের ভোট কি প্রমাণ করেনি যে, গ্রামবাংলার মানস না ঘুরলে বাংলায় কোনও সদর্থক রাজনৈতিক পরিবর্তন সম্ভব নয়? আচ্ছা, ধরে নেওয়া গেল, ভোট এবং রাজনৈতিক পালাবদল এই অভ্যুত্থানের উদ্দেশ‍্যই নয়‌‌‌। তাহলে উদ্দেশ্য কী? বিচার প্রার্থনা? কে চাইবে বিচার? জনতা। কার কাছে? সুপ্রিম কোর্ট, সিবিআই। কারণ তদন্ত বা বিচার, কোনওটাই আর রাজ‍্য সরকারের তদ্বিরে, ন‍্যায‍্য কারণেই নেই‌। তাহলে রাজ‍্যের প্রশ্রয়ে, প্ররোচনায় যে ঘুঘুর বাসা তৈরি হয়েছে, তা ভাঙার দাবি কে তুলবে? উত্তর, জনতাই তুলছে। সেই দাবির অন্তিম পরিণতি কী? নারী কুইয়‍্যার মঞ্চ, যা ১৪ আগস্টের রাতদখলের পরেই উদ্ভূত, তাঁরা কিন্তু কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, মমতার পদত‍্যাগ চাইছি, কিন্তু বিকল্প কী? আচ্ছা, এই প্রশ্ন কি কয়েকদিন আগে ঘটে যাওয়া বাংলাদেশের গণআন্দোলনের ক্ষেত্রে তোলা যেত? শেখ হাসিনার পরে কে, এই প্রশ্ন তো আন্দোলনকারীরাই নস‍্যাৎ করেছিল, খারিজ করেছিল সবেগে‌। এই প্রশ্নের সঙ্গে ‘ইফ নট মোদি দেন হু’, এই প্রশ্নের কতটুকু দূরত্ব? নারী কুইয়‍্যার বা রাতদখলের মঞ্চ সবচেয়ে এফেক্টিভ, কার্যকরী নাগরিক মঞ্চ,‌ যা আদ‍্যন্ত রাজনৈতিক, ও আপাতত অ-দলীয়‍। তাই তাদের এই প্রশ্ন করা সঙ্গত‌। এবং কেবল তাদের সঙ্গেই এই ডায়লগে যাওয়া সম্ভব। তাই বলা। চর্বিতচর্বণ অপ্রয়োজনীয়। সবাই সবটা জানেন। সন্দীপ ঘোষের এই অপরাধের নেপথ‍্যে ভূমিকা, দীর্ঘদিন ধরে আরজিকরে দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের কাণ্ডারি হয়ে থাকার যে অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে, তাঁর সঙ্গে তো সরাসরি তৃণমূল সরকারের যোগ স্পষ্ট‌। প্রমাণ লোপাট থেকে মৃতা ও নির্যাতিতার বাবা-মাকে ক্রমাগত ম‍্যানিপুলেট করা, টাকা অফার করা, জোর করে ভিডিও করানোর যে অভিযোগ সামনে আসছে তাঁদেরই তরফে, তাতে সরকার-বিরোধিতা ছাড়া ও এই দুর্বিনীত, মিথ‍্যাচারী, স্বৈরাচারী সরকারের সামগ্রিক পতন ছাড়া আর কোনও দাবির মূল‍্য থাকতে পারে?

দ্বিতীয় সমস্যা, প্রথম থেকেই এই আন্দোলন খণ্ডিত। ঐক‍্যবদ্ধ নাগরিক চেতনা যে বৃহৎ সমাবেশের মাধ‍্যমে বা মহামিছিলের মাধ‍্যমে জুড়ে দেওয়া সম্ভব, এমন দুটি মাত্র উদ‍্যোগ গৃহীত হয়েছে এখনও ইস্ত‌ক‌। একটি ‘আমরা তিলোত্তমা’ শীর্ষক একটি সংগঠনের আহ্বানে নাগরিক মিছিল, অন‍্যটি সরাসরি রাজ‍্য বামফ্রন্টের মহামিছিল। প্রথমটির আয়োজকরা মূলত টলিউড ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত। ওয়াকিটকি, ভলান্টিয়ার, মাথায় বেগুনি ফেট্টি, সেলেবদের হাঁটাহাঁটির আলাদা বন্দোবস্ত— ইত্যাদি দেখে দিব‍্য বোঝা গেল, এই মহামিছিলের দায়িত্ব কোনও ইভেন্ট অর্গানাইজারকে দেওয়া হয়েছে। সে বেশ! ওঁরা তো দাবি করছেন, আগে মিছিল করেননি‌। শিখছেন। শিখুন। ভাল কোর্স। কোর্স ফি-ও নেই। সেই মিছিলের ইশতেহারে সেই রাতদখল মঞ্চের অনুসরণেই তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার ও সুরক্ষার দাবি‌। অথচ, সেই মিছিলেই রেনবো ফ্ল‍্যাগ দেখে অনেক ভলান্টিয়ার নাকি ভড়কে গিয়েছিলেন, এবং নামিয়ে নিতে বলেছিলেন। লাল পতাকা না-হয় বিষম ব‍্যাপার, কিন্তু রেনবো ফ্ল‍্যাগ এই বিশ্বায়নের হাওয়ায় পুষ্ট বঙ্গজনরা চেনেন না? অতীব আশ্চর্য! তারপর আবার ওই সেলেবরা দু-একজন সেলেব হয়ে ওঠা অদলীয়, স্বাধীন, অরাজনৈতিক ইত্যাদি নানা শাস্ত্রীয় বিশেষণে বিশিষ্ট, এককালে প্রেসি-যাদবপুর কাঁপানো বিপ্লবীদের সঙ্গে স্টেজ ও ব‍্যাকস্টেজ ভাগ করলেন। কী দাবিতে? সরকারপক্ষের কেউ কেউ এসে তাঁদের সঙ্গে দেখা করবেন, তাঁরা কথা বলবেন, এই দাবিতে। দেখা গেল, রাত বারোটার আগে তাঁরা কোন কোন দফতরে মেল করবেন, তাই ঠিক করে উঠতে পারেননি। বাংলাদেশের প্রসঙ্গ এইজন্যই জরুরি, ওখানে স্বতঃপ্রণোদনায় আন্দোলন যে মাত্রায় ছড়িয়েছে, তা ইভেন্ট অর্গানাইজারের কম্ম ছিল না। যাক গে, সেই মহামিছিলের শেষাংশ বিজেপির ধর্না মঞ্চ থেকে নিঃসঙ্কোচে দখল করা হল, তাতে ওঁরা নীরব থাকলেন। সারারাত শূন‍্যগর্ভ ধর্নায় বসে ভোরে বাড়ি গেলেন। এত কথা বলা এই কারণেই, সেই মহামিছিল সদর্থেই মহামিছিল হয়েছিল। সংখ‍্যার নিরিখে তো বটেই, তাছাড়াও সব শ্রেণির, সব ধরনের মানুষ, তাতে আয়োজকদের পরিচয়ের গ্ল‍্যামার কোশেন্ট না জেনে, কেবল ‘মহামিছিল’ শব্দটির জোরেই যোগ দিলেন এই মিছিলে। আমরা তিলোত্তমা সংগঠনটি থাকবে‌। তাদের কর্মসূচি নেওয়া হবে। তখন তারা যেন আরেকটু পরিকল্পনা, স্বতঃস্ফূর্ততা, এবং রাজনৈতিক দার্ঢ‍্য রাখেন। ‘পথের দাবী’ বলে একটি মিছিল আয়োজিত হল, বামেদের, বা বলা ভাল সংসদীয় বামেদের আয়োজনেই, ওয়াকিবহাল মহল মাত্রেই বুঝেছে‌। সেখানেও তো বাম বিদ্বজ্জন, অধ‍্যাপকরা হাঁটলেন, যে পতাকা বা প্ল‍্যাকার্ড নিয়ে এত ছুঁৎমার্গ, তা বর্জন করেই হাঁটা হল। সেই মিছিল সফল হল কী করে? সিপিএম তো সরাসরি এই মিছিলের আয়োজনে ছিল না। কিছু বুদ্ধিজীবীই তো তা করল। তারপরেও তা সফল হল, কারণ রাজনৈতিক মিছিলকে কোনও ভয়াবহ কঠিন অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে তাঁরা দেখেননি। সোজা কথা। সরাসরি বামফ্রন্টের মহামিছিল সফল তো বটেই, মিডিয়ার হাজারো অবহেলা, তবুও-বাম, হঠাৎ-বাম, লিবারেল বুর্জোয়া নারীবাদী প্রমুখের নাক সিঁটকানির বিপ্রতীপে ওই মিছিলই কেবল জনগণের মাঝে গিয়ে পৌঁছে গেল।

তৃতীয় সমস্যা, সেলেবদের ফেকবাজি বা দালালি নিয়ে আপনার অসুবিধে থাকতেই পারে। কিন্তু ফেসবুক থেকে রাস্তা, সর্বত্র এই অ-সরকারি শিল্পীদের সিনেমা নাটক বিনোদনকে চিরতরে বয়কট করে এঁদের আক্রমণের ডাক দেওয়া আসলে মব ভায়োলেন্স, ধর্ষকাম ও অসুখ‌। বুদ্ধিজীবী কারে কয়, গ্রামশি থেকে চমস্কি তা বলে গেছেন, বুদ্ধিজীবীরা কী করবেন, তাদের দায় নিয়ে এডওয়ার্ড সাইদ কথা বলে গেছেন। সরাসরিই বলছি, বাংলার গণচেতনা এসবের নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ তো করতে পারবে না‌। শিল্পসংস্কৃতির ক্ষেত্রে যাঁরা শ্রম দিচ্ছেন, তাঁদের, বিনীতভাবেই বলি, বুদ্ধিজীবী বলে না। বাম আমলের শেষে শঙ্খ ঘোষ, মৃণাল সেন, তরুণ সান‍্যাল, মীরাতুন নাহার, অপর্ণা সেন (এঁদের মধ্যে শঙ্খ ঘোষ, মৃণাল সেন আর তরুণ সান‍্যাল আজ জীবিত নেই) এঁদের উপস্থিতির কারণেই মূলত বুদ্ধিজীবী শব্দটির উৎপত্তি। কারণ এঁদের কর্মজগতের বাইরেও এঁরা পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন দীর্ঘদিন ধরেই। কবীর সুমন বা শুভাপ্রসন্নর মতো নেহাত বদ লোক বাদ দিলে (কবীর সুমনের সাঙ্গীতিক অবদানকে এরপরেও স্বীকার করব) বেশিরভাগই কিন্তু তাঁদের রাজনৈতিক অবস্থানের জন‍্যই‌ সমালোচিত হয়ে এসেছেন চিরকাল, কোনও না কোনও পক্ষের দ্বারা। কিন্তু অবাক লাগে, অপর্ণা সেন বা কৌশিক সেন, এই রাজ‍্য সরকারের আমলে অনেক ছুটকো সেলেবের চেয়ে বেশি সময় ধরে প্রতিবাদী থেকেছেন। তার জন্য ভুগেওছেন। তৃণমূলের থেকেই গালাগালি খেয়েছেন। তখন একদল দূরে বসে মজা লুটেছে। আজ তাঁরা অপর্ণা আর কৌশিক সেনকে দেখলেই প‍্যাথোলজিকাল সমস‍্যায় ভোগেন। কারণটা কী? আজ পর্যন্ত কোনও সরকারি কমিটিতে তাঁদের উপস্থিতি দেখা গেছে? কোন ইস‍্যুতে তাঁরা‌ সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন? তাহলে তাঁদের নিয়ে অ্যালার্জিটা এখনও কেন থাকবে? কেবল পরিবর্তন চাই-এর হোর্ডিংয়ে নাম ছিল বলে? না কি, সরাসরি বলুন, ওঁরা বিজেপি বিরোধিতা করেছেন বলে? ওঁরা তো প্রায় একটা এনজিওসম নাগরিক মঞ্চের দাবি সেই কবে থেকেই রাখছেন, এখন তো আপনার দাবিও আদতে তাই‌। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের নামে ফেক ভিডিও ছড়িয়ে তাঁর ওপর ধর্ষকের মতোই হামলা করাকে জাস্টিফাই করা যাবে না। আর কারও সঙ্গে তো ঘটছে না বলেও সালিশি করবেন না, এটা অনেকটা ভিকটিম ব্লেমিংয়ের আওতাতেই পড়বে। যদিও এই ঘটনার পরম্পরা ইঙ্গিত করছে, ঋতুপর্ণার গাড়ি হাঁকিয়ে বডিগার্ড কাঁধে ঝুলিয়ে আসাটা অনেকজনকে উসকেছে। কিন্তু সে রাতে যাঁরা শ্যামবাজার দেখেছেন, জানবেন, হঠাৎ করে ক্যাওটিক হয়ে ওঠার মতো মব ওখানে উপস্থিত ছিল না। তাহলে এই ক্যাওস তৈরি হল কেন? এই প্রশ্ন তো ভাবাবেই। বিশেষ করে, ঋতুপর্ণার প্রাণহানির আশঙ্কা করা হঠাৎ করেই, এবং কুণাল ঘোষের তাই নিয়ে প্রেস কনফারেন্স কাঁপানো ও তাঁর উপদিষ্ট সংবাদপত্রের হেডিং দেখার পর। অন‍্যদিকে এই যে দামিনী বেণী বসু বাংলার রোজা লুক্সেমবার্গ হয়ে‌ উঠছেন,‌ আসলে তিনি কঙ্গনা রানাওয়াতও তো হতে পারেন। তিনি আদানির অনুষ্ঠানে গিয়ে বেহায়ার মতো স্মৃতি ইরানির হাত থেকে পুরস্কার নেন, ধর্ষণের এনেবলারের পাশে দাঁড়িয়ে সরাসরি হরিবংশ রাই বচ্চন কোট করে ধর্ষণের ‘বিচার’ চান। তারপর আবার একটি সরকারের অনুগ্রহধন‍্য সংবাদমাধ‍্যমে ‘সরকার বলতে কেবল তৃণমূল আর বিজেপি ভাবলে তো মুশকিল’ বলে নির্লজ্জ দালালি করেন। এঁরা তো বিশ্বাসঘাতক, ভণ্ড, দ্বিচারী, এবং ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর চেয়েও বেশি হার্মফুল! আপনি চাইবেন, আর তথাকথিত গ্ল‍্যামার জগতের অংশীদাররা এই কাল থেকেই ডিক্লাসড হবেন, এমন হয় না কি? আপনি আদতে সেলেবচাটা, যশকামী, বিকৃতমস্তিষ্ক। তাই ফেসবুকের নর্দমা থেকে রাস্তাঘাট, সর্বত্র বর্জ‍্য ছড়াচ্ছেন। সেলেবরা কথা বলবেন না বলবেন না, বললে কীভাবে বলবেন, তা আপনি ঠিক করবেন না। আগে রেজিমেন্টেড হোন। নাগরিক আন্দোলনের ম‍্যানিফেস্টো আনুন। এক সংগঠনের ছাতার তলায় আসুন। তারপর আপনার বাতেলা শুনব‌। দু-পয়সার জনবিচ্ছিন্ন ফেসবুক আঁতেল বলেই দুনিয়াটাকে কফিহাউস ভেবে প্রকাশ‍্যে সব মতামত রাখবেন না। এখন অমর্ত্য সেনকে গাল পাড়তেও দ্বিধা করছে না। দু-দিন বাদে বিজেপি অমর্ত্য সেনকে আক্রমণ করলেও তাই নিয়ে এদের হেলদোল থাকবে না তো? এই বুদ্ধিজীবী-বিরোধিতার আখ‍্যান, মূলত অ্যাকাডেমিক্সকে ঘৃণা করার আখ‍্যান, বিজেপির একচেটিয়া, আপনাকে ওই আখ‍্যানে অংশ নিতে হলে বিজেপির ছাতার তলায় আশ্রয় নিতে হবে। নিতে হলে নিন, ন‍্যাকামি করবেন না। আন্দোলনে মানুষ নেমেছে। সেলেবরা তার অংশ হবে বা হবে না। কারণ, আদতে তাদের অস্তিত্ব এখন অমূলক, অর্থহীন ও অকিঞ্চিৎকর। আপনি কে হরিদাস পাল? ফেসবুক আপনাকে যে মঞ্চ দিয়েছে বলে আপনি ভাবছেন, তা আদতে পুতুলনাচের মঞ্চ।

রাত দখলের মঞ্চের প্রথম আহ্বায়কদের একজন ছিলেন রিমঝিম সিনহা। তিনি কলকাত্তাইয়া স্বাধীন হরেকরকম্বা ছাত্ররাজনীতির অংশীদার। প্রথম দিন থেকেই তাঁর কাজকর্ম সন্দেহজনক ও সমস্যাজনক ঠেকেছে অনেকের কাছে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে চাওয়া হোক, বা তথাগত রায়ের তাঁকে প্রশংসা করে ট্যুইট করা, সন্দেহের কারণও ছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, তিনি রাতদখলের মঞ্চ তৈরি করতে চাইছেন, যার পরামর্শদাতা হিসেবে থাকবেন অপর্ণা সেন, জঁ দ্রেজ, দীপেশ চক্রবর্তীর মতো পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল। এর মধ্যে দীপেশ মি-টু আন্দোলনের প্রথমভাগেই অভিযুক্ত। তাঁকে নিয়ে কথা হবেই। জঁ দ্রেজ দীর্ঘদিন ধরে অনুন্নয়ন নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এটা কি নন্দীগ্রামের সময়ের এনজিও পলিটিক্সের অনুসৃতি? না কি বাংলাদেশ মডেল? এই জাতীয় নাগরিক মঞ্চ দিনের শেষে শাসকের সুবিধার্থেই কাজ করে। যেমন, ২০২১-এর নো ভোট টু বিজেপি। আবার লোকপাল বিল মঞ্চ থেকে উঠে আসা আপ জাতীয় প্ল্যাটফর্ম হলে তার কোনও উপযোগিতাই নেই। আপ জাতীয় দল হিসেবে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তাও দখল করেছিল। কিন্তু আন্না হাজারে মডেলে চললে, গল্পটা খুব চেনা ছকের হবে। কাজেই, নজর থাকবে।


*মতামত ব্যক্তিগত