অন্তরা মুখার্জী
আমি জানি না ভবিষ্যৎ কী দিন দেখাবে। এখন যখন লিখছি তখন জেনে গেছি শিক্ষক দিবসে দেশের শ্রেষ্ঠ আদালত আমাদের দিকে মুখ তুলে তাকাবেই না। কিন্তু বর্তমানে আমি তোমাদের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছি— আরও এক অধ্যায়ের পাঠ গ্রহণ করবার; শান্ত থেকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে লক্ষ্যে স্থির থাকা তোমাদের দেখে শিখছি; বিশ্বাস করো বিগত কিছু ঘন্টা ধরে সমাজমাধ্যমের কোনও স্লোগান, কোনও পোস্টার, কোনও বক্তব্য আমায় আর ছুঁয়ে যাচ্ছে না— আমার অস্তিত্ব জুড়ে একটাই প্রতীক— ফুলের মালা জড়ানো শিরদাঁড়া
আরজিকর মেডিকেল কলেজের জুনিয়র ডক্টরের নৃশংস হত্যার পর জনরোষ আর রাজনৈতিক চাপানউতোরের মাঝে সামাজিক মাধ্যমের দেয়ালে ঘুরে ফিরে আসছিল দুটি কাপলেট—
পুলিশ তুমি মারছ মারো/তোমার মেয়েও হচ্ছে বড়
পুলিশের মেয়ের চিন্তা ছাড়ো/সে লড়াই করেই হচ্ছে বড়
এ যেন কোনও কবিগানের আসর! আমি তোমাকে তেড়ে যাব, তুমিও বুঝিয়ে দেবে তোমার কাব্যিক ক্ষমতা! আর এসবের মাঝে হত্যা, বেআইনি কাজকর্ম, শাসানি, হুঁশিয়ারি, ধর্ষণ, দাদাগিরি, হাহাকার, বদলি, লেন-দেন আরও কত কী চাপা পড়ে যায় তো যাক!
ধুত্তেরি! ভাল লাগে না, মানসিক চাপ হয়।
প্রায় দু-দশক সরকারি চাকরি করার সুবাদে এতদিনে বুঝে গেছি যে, যে বা যারা ‘বদলি’ নামক মহামৃত্যুঞ্জয় অস্ত্র নিয়ে ছিনি-মিনি খেলতে পারে, তারা থাকে উপরের হাওয়ামহলে! কোটি কোটি বন্ধ দরজার আড়ালে তারা প্রখর রোদকে তুড়ি মেরে বৃষ্টিতে পরিণত করে। তাদের মাথায় ছাতা ধরা থাকে, হাতে হাতকড়া পরে না।
আর কত দেখব! কীই-বা আর শেখার আছে!
হতাশা-মিশ্রিত অসহায়তা নিয়ে বেদম জ্বরে কাবু আমি মাথার যন্ত্রণা না বাড়ানোর অজুহাতে মুঠোফোন বন্ধ রাখি। পাশের বাড়ির বোকাবাক্সে তখন মরণোত্তর কাটাছেঁড়া। চোখ বন্ধ হতেই আমার মেয়ে-তোমার মেয়ে-পুলিশের মেয়ে ইত্যাদি সব মিলেমিশে একাকার। কোথায় জোর দেব? ‘কার’ মেয়ে-তে? নাকি ‘মেয়ে’-তে? উত্তর পাইনি সেদিন।
স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে সমাজমাধ্যমের দেওয়ালে ডাক এল— মেয়েরা রাত ‘দখল’ করো। কলকাতার চৌহদ্দি ছেড়ে বিচারের দাবি রাখল শহরতলি, মফস্বল, গ্রামবাংলার মানুষ। দগ্ধ বাংলার অপ্রতিরোধ্য সাধারণ জনগণ। অভিবাদনে কষ্ট বোধহয় কিছুটা ভাগ হল? আচ্ছা, ‘দখল’ করে ভাগ হয়? শিখলাম, নতুন করে। তবে কোথাও একটা হিসেব ঠিক মিলছিল না! এর আগে যে-সব মেয়েরা রাত জেগেছে বলে আমি-আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছি, পাহারায় হোক বা প্রতীক্ষায়, সেদিন কি রাত তাদের ‘দখল’-এ ছিল না? আবার উত্তর পেলাম না।
জ্বর কমলে, মাথার ভিতর ঘিলুদের স্বাভাবিক দাপাদাপিতে চিনলাম কয়েকটা মুখ; সারা বাংলা যখন উত্তাল, পথে-ঘাটে স্পর্ধার বহির্প্রকাশ ঘটিয়ে হুমকি আসছে ‘আরজিকর করে দেব’, তখন সেই আরজিকর কলেজের থেকে উঠল কর্মবিরতির ডাক; কোনও রঙে তারা রাঙিয়ে দিয়ে যেতে বলছে না, কেউ দাগিয়ে দিতে চাইলে তারা যে কোনও ‘অভিযানে’-র ডাক দেয়নি সেটাও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছে, রাগে চেঁচামেচি করে সমাজ মাথায় তুলছে না, মিডিয়ার সামনে এসে ‘ফুটেজ’ চাইছে না, এমনকি বিচার চাওয়ার যাত্রায় উড়িয়ে দিচ্ছে না সতীর্থদের ভূমিকা! শুধু বার্তা দিতে কখনও সাদা কাগজ হাতে নিয়ে, কখনও বা স্বতঃফূর্তভাবে গুছিয়ে কিছু কথা বলে যাচ্ছে; হঠাৎই তাদের লিঙ্গ খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হল না; ‘কার মেয়ে’— এই জটিল প্রশ্নের জাল ছিঁড়ে এবং মেয়েদের রাতদখলের সোচ্চার দাবি ছাড়িয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়াল কয়েকটা অটুট শিরদাঁড়া— ‘জুনিয়র ডাক্তার’দের দল। বলিষ্ঠ স্বর, স্থির দৃষ্টি, শক্ত চোয়াল, পরিষ্কার উদ্দেশ্য— কর্মরত অবস্থায় খুন হওয়া তাদের মতোই এক জুনিয়র ডাক্তারের বিচার চাই। পুলিশি তাণ্ডবের বিচার চাই। তাদের কর্মবিরতি, এককাট্টা আন্দোলন এবং যুক্তিযুক্ত প্রশ্নের মাঝে মুখ থুবড়ে পড়তে দেখলাম তাবড় তাবড় ব্যক্তিত্বদের। মুখোশ খসে পড়ল শীর্ষ আধিকারিকদের। ঘুণধরা স্বাস্থ্যব্যবস্থার নগ্ন নৃত্যের তালে ‘জুনিয়র ডাক্তার’রা যে পা মেলাতে বাধ্য নয় সেটা তারা পরিষ্কার বুঝিয়ে দিল!
আপামর পশ্চিমবাংলার মানুষ আজ বারবার রাস্তায় নামছেন। ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে, এমনকি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও অভয়ার ‘বিচার চাই’ দাবি উঠেছে। গঠিত হচ্ছে নানা মঞ্চ, সৃষ্টি হচ্ছে গান-কবিতা-স্লোগান। যেন মন থেকে ভয় নামক ‘চেম্বার’টা সরে গেছে; জনগণ প্রশ্ন করতে শিখে গেছে। চোখের ছানি কাটার পর যেমন স্পষ্ট দেখা যায়, জনগণ আজ স্পষ্ট বুঝতে পারছে ধামাচাপা দেওয়া, আজগুবি সব যুক্তি-তক্কো। তবু নিরন্তর বাকবিতণ্ডা, কৌশল এবং রাজনৈতিক ছলা-কলার ভিড়ে একটু একটু করে জায়গা করে নেয় সংশয়:
আমার চারপাশ ডুবে আছে আর্তনাদের প্রতিবাদে।
ধুঁকছে শরীর, অশান্ত মন; আঙুলের ডগায়
খুনের দাগ ঘুমাতে দেয় না।
কোথাও কি ক্লান্তির ক্রুশে বইছি গতজন্মের পাপ?
অভয়, আশ্রয়, আশ্বাস— খসে যায় রোজ
মেলাবেন? তিনি কবে মেলাবেন?
এমন এক সূর্যাস্তের সময় টিভিতে ভেসে ওঠে সাদা ফুলের মালা জড়ানো ধবধবে এক কৃত্রিম মেরুদণ্ড। ২২ ঘন্টা রাস্তায় বসা জুনিয়র ডাক্তাররা চায় পুলিশকর্তার সঙ্গে দেখা করে, তাদের দাবি জানিয়ে কৃত্রিম মেরুদণ্ড উপহার দিতে। এই বার্তা তাদের হার-না-মানা সঙ্কল্পের প্রতীক— মেরুদণ্ড বিকৃত করে যারা ডাক্তারি নামক পূজনীয় পেশাকে বিক্রি করেছে তাদের সংক্রামিত শরীর চিহ্নিত করার সঙ্কল্প। কোনও আর্থিক সহায়তা চাইনি তারা, বরঞ্চ সাধারণ মানুষের ভালবাসার বন্যায় ভেসে গেছে। এমনকি রাতজাগা মেরুদণ্ডের দল লোহার শিকলের এপারে একসঙ্গে গেয়ে উঠেছে জাতীয় সঙ্গীত। কোনও পাল্টা স্লোগান নয়, তারুণ্যের উদ্যমে, আবেগের বশে স্পর্ধা দেখানোর চেষ্টা নয়— শুধু শান্ত কিন্তু একরোখা জেদকে সম্বল করে ২২ ঘন্টা অপেক্ষা করে বুঝিয়ে দিয়েছে কোনওভাবেই তাদের শিরদাঁড়া বেঁকানো যাবে না। তফাত দেখিয়েছে জুনিয়র শিরদাঁড়ারা। তাদের এই দৃঢ় প্রত্যয় আমাকে উদ্বুব্ধ করছে। শেখাচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কীভাবে করতে হয়, জানছি যন্ত্রণা চেপে, ভবিষ্যতের পরোয়া না করে কীভাবে স্থিরচিত্তে লড়াই করে যেতে হয়।
এখন আমার জ্বর নেই, ঘোর আছে— এমন এক স্বপ্নের ঘোর যা হয়তো দীর্ঘ সাতাশ দিন ধরে তারা প্রতি মুহূর্তে বুনে চলেছে। বয়সে তারা আমার ছাত্র-ছাত্রীসম। কিন্তু কর্মে এবং মর্মে, নির্দ্বিধায় স্বীকার করি, তারা আমার শিক্ষক। বয়সের সঙ্গে, অভিজ্ঞতার গুঁতোয়, অতীতের একটা দিক প্রায় ভুলতেই বসেছিলাম! কিন্তু বেশ কিছু সিনিয়র ডাক্তারদের সহযোগিতায় জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন যেভাবে জোরকদমে এগিয়ে যাচ্ছে, সেটা অনুধাবন করতে করতে আমি খানিক পিছু তাকালাম!
স্মৃতির আয়নায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম এক সিনিয়র ডাক্তার খাতা দেখছেন, পাশে তার ফ্রকপরা ছোট্ট মেয়ে।
—এই দাদাকে একটু নম্বর দিয়ে দাও…
—কেটে দিচ্ছ কেন গো?
মুচকি হেসে তিনি খাতা দেখে চলেছেন। খুব তাড়াতাড়ি খাতা দেখে জমা দিতে হবে যে!
দাদা-দিদিদের দল-বল হৈ হৈ করতে করতে স্যারের পায়ে আবির দিয়েই দাবি জানাত “খাওয়াতে হবে, স্যার”; বিজয়ার পর বাড়িতে মহাভোজে সামিল হয়েছে কত-শত দাদা-দিদিরা! গল্প-গান-কবিতায় কেটেছে স্যার-ছাত্র-ছাত্রী সংলাপ। সেই একই মফস্বলের মেডিকেল কলেজের সুবর্ণজয়ন্তী হলে বৃদ্ধ স্যারকে আবদারে, সম্মানে বরণ করেছিল সেই দাদা-দিদিদের দল। তাহলে কেন আজ কিছু মাস্টারমশাইদের অচেনা লাগছে?
মাস্টারমশাই, ঠিক করে ভেবে বলুন তো, আপনি সত্যিই কিছু দেখেননি? আর কিছুই জানেন না? কারচুপি কি শুধুই আর্থিক?
খুব বেশি আলোকবর্ষ আগের তো ঘটনা নয়! এ-কথা ঠিক যে সেই ছোট্ট ফ্রকপরা মেয়েটি এখন নিজে শিক্ষিকা, তার ডাক্তার-শিক্ষক বাবা এখন তারাদের দেশে— কিন্তু যে ডাক্তারি ঘরানায় সে বড় হয়ে উঠেছে, দেখেছে তার দাদাকে আরজিকর হাসপাতালে পড়তে, হোস্টেলে থাকতে, সেই সমাজ, সেই পরিবেশের এমন আমূল পরিবর্তন হয়ে গেল যে কিছু মানুষের সূক্ষাতিসূক্ষ বদমাইশি এবং স্বয়ংসিদ্ধি লাভের জন্য হাসপাতালে এখন খুন, ধর্ষণ, হুজ্জুতি, ভাঙচুর, পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি, কাঁদুনে গ্যাস! এ কোন হাসপাতাল যা নরকের চেয়েও ভয়ঙ্কর? যেখানে মানুষ খোঁজে উপশম, যেখানে মানুষ আশায় বুক বাঁধে, যেখানে মানুষ সুস্থতা কামনায় ঈশ্বরকে কম, ডাক্তারকে বেশি ভরসা করে, আজ সেখানে মিথ্যার জাল বোনা হয়, পড়াশোনার ঘরের দেওয়ালে লেগে থাকে খুনি রক্ত আর বিছানায় বহু বছরের পরিশ্রমের মৃত্যু হয়:
ঠিক যেখানে শৈশব বাঁক নিয়ে কৈশোরে মেশে
সেখানে কালচে রক্তের দাগ মুক্তোর মতো লুকিয়ে;
অগুনতি ঘূর্ণিপাকের পর স্মৃতি নিংড়ে দেখি
যৌবনা হিংস্রতা নারকীয় লীলায় মত্ত।
ঠিক কতটা একাগ্রতা আর আত্মত্যাগ মিশলে ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া যায়, সেই ছোট্ট মেয়েটি বড় হতে হতে দেখেছে। বিছানায় যে জায়গায় দাদা বসে পড়াশোনা করত, সেইখানটা কেমন যেন ফিকে হলুদ গর্ত মতন হয়েছিল। আজও দিব্বি মনে আছে সফলতার খবর দিতে ছেঁড়া শার্ট পরে দাদা ছুট দিয়েছিল মাস্টারমশাইয়ের বাড়ি! আর আজ— সূর্যের খানিক ঘুরপাকের পর— সেই অক্লান্ত পরিশ্রম করা জুনিয়র ডাক্তারদের দল তাদের হেডস্যার এবং তার অনুগতদের ক্রিয়াকর্মের বিচার চাইছে! কোথায় এসে দাঁড়িয়েছি আমি! একদিকে লজ্জা, অন্যদিকে ভয়। শিক্ষিকার লজ্জা, মেয়ের মায়ের ভয়:
নিরুত্তরের আঁকি-বুকি শ্রাবণের ধারায়
বিষাদকে আপন করে; বিরহী আগুনের আঁচে
গলে যাওয়ার আগে, কেন জানি না,
তোমার দিকে একবার ফিরে তাকাই…
খানিকটা পাহাড়ি হাওয়া আর কুচো বরফ
চোখে এসে লাগে…
কিন্তু যখন হতাশা আমাকে কুয়াশার মতন ঘিরে ধরছিল তখন সিনিয়র ডাক্তারদের জুনিয়র ডাক্তাদের হয়ে বেশি বেশি কাজ করা, জুনিয়র ডাক্তারদের টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া এবং তাদের সঙ্গে আমজনতার হাতে হাত দিয়ে লড়াই করার অঙ্গীকার নিরাশার গহ্বর থেকে আমাকে উদ্ধার করে। আমি বুঝতে পারি সব এখনও পাল্টে যায়নি, সব শেষ হয়ে যায়নি, রাতের কিছু তারারা শিরদাঁড়া সোজা করে দিনের গভীর আলোয় লড়ে যাচ্ছে! একটি নক্ষত্রপতনের হিসেব নিতে তারা তাদের নরম আলোর স্পর্শে আমাদের ক্ষতবিক্ষত মনকে সারিয়ে তুলছে, বিচারের আশায় পথে নামাচ্ছে, এই অন্তকেন্দ্রিক সমাজকে এক সূত্রে বেঁধে বিভাজনের প্রাচীর ভেঙে দিচ্ছে। যে মানবতার বন্ধন তৈরির ডাক তারা দিয়েছিল, সেখানে এখন তাদের পাশে, উত্তর থেকে দক্ষিণ, সর্বত্র, সবাই একই সুরে বলছে— We Want Justice:
গলে যায় কষ্ট, ধুয়ে যায় বেদনার দাগ।
প্রজন্মপর তোমার শক্ত হাতের ওমে শিশির জমে শরীরে…
চাঁদের ও-পিঠে অন্ধকারের দরজা ঠেলে নক্ষত্রের মেঠো রাস্তায়
আমাদের নিরন্তর হেঁটে যাওয়া অক্ষিকাচে ধরা পড়ে।
আমি জানি না ভবিষ্যৎ কী দিন দেখাবে। এখন যখন লিখছি তখন জেনে গেছি শিক্ষক দিবসে দেশের শ্রেষ্ঠ আদালত আমাদের দিকে মুখ তুলে তাকাবেই না। কিন্তু বর্তমানে আমি তোমাদের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছি— আরও এক অধ্যায়ের পাঠ গ্রহণ করবার; শান্ত থেকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে লক্ষ্যে স্থির থাকা তোমাদের দেখে শিখছি; বিশ্বাস করো বিগত কিছু ঘন্টা ধরে সমাজমাধ্যমের কোনও স্লোগান, কোনও পোস্টার, কোনও বক্তব্য আমায় আর ছুঁয়ে যাচ্ছে না— আমার অস্তিত্ব জুড়ে একটাই প্রতীক— ফুলের মালা জড়ানো শিরদাঁড়া:
তোমরা শেখাচ্ছ গান্ধিগিরির নতুন মানে
তোমরা শেখাচ্ছ ইটের জবাব পাটকেল নয়
তোমরা শেখাচ্ছ হাতে হাত ধৈর্য্য ধরা
যতক্ষণ না মাহেন্দ্রক্ষণ পাওয়া হয়
আমরা তো সবাই রুগী মানুষ
তবু তোমাদের জন্য আমরা সার্কিট
দেব না তোমাদের সাজাতে ফানুস
জ্বলতে থেকো তোমরা— পথিকৃৎ
হয়তো শ্রাবণের ধারা শেষ হলে
বাড়ি ফিরে যাবে, ব্যস্ত জীবন
তবুও কালো রাতে বা প্রখর দিনে
স্মৃতি ফেরাবে তোমাদের যাপন
কষ্টে, দুঃখে, লাঞ্ছনায় স্থির থেকে
ক্ষণিকেও লক্ষচ্যুত না হওয়া
কাগজ, কলম, বইয়ের চেয়েও
দামি, এই জীবন-শিক্ষা পাওয়া
সিলেবাসের বাইরে অনবরত মোক্ষম শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে আমাদের ‘মুন্না’ভাই-বোনেরা! শিক্ষার্থীরা এখন শিক্ষক— পুলিশের লাঠিকে গোলাপ দিয়ে বরণ করছে। আমরা পারব না সামাজিক আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে ন্যায়ের পবিত্র আগুন জ্বালাতে?
*মতামত ব্যক্তিগত