Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

আমার সন্তান যেন থাকে প্রতিবাদে

ডেভিড মুর্মু

 


দূরে দূরে পড়ে আছে আমাদের আদিবাসী সমাজের মেয়েরা। নিম্নবর্গের মানুষ। তাদের কাছে ডাকলে তারাও রাস্তায় নামলে একলা মাঠে আমড়ু ফল আরও রঙিন হয়ে মেয়েদের হাতে হাতে নিশান হয়ে উঠত। আদিবাসী মেয়েরা মাদল আর বাঁশির সঙ্গে শুধু নেচে নেচে মিছিলের শোভা বাড়াবে আর কতদিন? উচ্চবিত্ত মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত সমাজের মেয়েদের সঙ্গে আদিবাসী, নিম্নবর্গের মেয়েরা সমাজের নানান অনৈতিক কাণ্ড ও অনাচারের বিরুদ্ধে একসঙ্গে গর্জন করবে… এরকম একটা দিনের দৃশ্য আমি প্রত্যাশা করি

 

সর্বত্র ভয় সর্বোত্তম ভয়

সকালবেলা একটি লোক বাজারে গিয়েই, ভয়ের সামনে। তিনি কোনও কিছুই কেনাকাটা না করে বাড়ির দিকে ছুটতে থাকেন।

যে-কোনও জায়গায় যাবে ভয় আর ভয়। স্কুল যাবে কলেজ যাবে থানা যাবে আদালত যাবে শুধু ভয়।

যে-কোনও রাস্তায় ভয়। ট্রেনে বাসে ভয়। ভয় থেকে ভয়। এবং ভয়ে ভয়ে মানুষের শিরদাঁড়া শুকনো হয়ে যাচ্ছে।

আমাদের এই গণতন্ত্র।

ভয় তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে ঘর থেকে ঘর। ভয় সামনে-পিছনে ডাইনে বাঁয়ে। মাথার উপরে।

একদিন লোকটি মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েও ভয়কে দেখতে পান। চিৎকার করতে করতে মন্দিরের বাইরে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন।

কতিপয় মানুষ লোকটির উদ্দেশে বলে— পাগল পাগল!

লোকটি তখন আরও দৌড়তে দৌড়তে ঘরের দিকে ছুটতে থাকেন।

ঘরেও কেউ নেই। ছোট ছেলেটা খেলছিল আপন মনে। লোকটির মনে হয়, ভয় যদি জাপটে ঘরে ছেলেকে? লোকটি ছেলেকে কোলে তুলে নেন।

এই আমাদের গণতান্ত্রিক পরিবেশ। এই আবহে মানুষ যে কোথায় দাঁড়াবে কেউ জানে না।

এই আমাদের আতঙ্কের বাতাবরণ।

ভয়ের মতো একটি রোগ ছড়িয়ে দিয়েছে গ্রাম ও শহরে। চিকিৎসা নেই। কেননা চিকিৎসার নামে মানুষের সব কিছু লুটপাট হয়ে যাচ্ছে।

আমরা গণতন্ত্র রচনা করেছি।

আমাদের দেশে আমরা গণতান্ত্রিক।

গণতান্ত্রিক বৈকি। ভয় ছড়ানো গণতন্ত্র। এক শিশুর ভবিষ্যৎ নেই। ভরসা নেই। সেও জেনে গেছে, বড়দের হাত ধরতে নেই, সে হাতেও আছে ভয়।

ভয় ভয় ভয় করতে করতে আমি যশোধরা রায়চৌধুরীর একটি কবিতার কাছে দাঁড়াই—

ভয় এক বধ্যভূমি আজ
ভয় এক নীরব মাদক
ভয় এক শতরঞ্জিময়
পেরেকের অসাধ্য সাধক

৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

 

নাগরিক সমাজের স্বর

তিলোত্তমা ধর্ষণ ও খুনের বিচার চেয়ে মধ্যবিত্ত নাগরিক সমাজের মেয়েরা রাত দখল করে। আন্দোলন করে। পুরুষও অংশীদার হয়ে ওঠে।

দূরে দূরে পড়ে আছে আমাদের আদিবাসী সমাজের মেয়েরা। নিম্নবর্গের মানুষ।

তাদের কাছে ডাকলে তারাও রাস্তায় নামলে একলা মাঠে আমড়ু ফল আরও রঙিন হয়ে মেয়েদের হাতে হাতে নিশান হয়ে উঠত।

আদিবাসী মেয়েরা মাদল আর বাঁশির সঙ্গে শুধু নেচে নেচে মিছিলের শোভা বাড়াবে আর কতদিন?

উচ্চবিত্ত মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত সমাজের মেয়েদের সঙ্গে আদিবাসী, নিম্নবর্গের মেয়েরা সমাজের নানান অনৈতিক কাণ্ড ও অনাচারের বিরুদ্ধে একসঙ্গে গর্জন করবে…

এরকম একটা দিনের দৃশ্য আমি প্রত্যাশা করি।

৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

 

মধ্যবিত্ত মন

তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন। এ-জন্য ছাত্র আন্দোলন থেকে গণআন্দোলন। মধ্যবিত্ত বাঙালির আন্দোলন।

আন্দোলনের মিছিলে মুটে মজুর টোটোওয়ালা অটোওয়ালা ইটপাঁজার কুলিকামিন নেই। চাষিরাও নেই। না থাকার মূলে একটাই কারণ, তারা কোনও আন্দোলন জানে না। আজকের আন্দোলনের খবর নেই তাদের কাছে। যদি খবর থাকত তাও কি যেত?

আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলি নিম্নবর্গের খেটে খাওয়া মানুষদের ভাড়াটে জনতার মধ্যে ধরে রেখেছে। তারা যে-কোনও দলের মিছিলে গেলেই দিনমজুরি পেয়ে থাকে। আর এই আন্দোলন তাদের একটি পয়সাও দিতে পারবে না।

পয়সা দেওয়ার দরকার হত না, যদি আন্দোলনকারীরা গ্রামে গ্রামে পৌঁছে বোঝাবার সুযোগ পেত।

যদিও এও এক অলীক কল্পনা আমার।

ফলে, যা হওয়ার হচ্ছে মধ্যবিত্ত বাঙালিদের মধ্যে। এখন একটাই ভয়, আন্দোলনটা ‘হুজুগ’ হয়ে দাঁড়াবে না তো?

অথবা মাঝপথেই থেমে যাবে না তো?

মধ্যবিত্ত বাঙালি ভিতুও আছে। তারা আড়ালের কোনও চোখরাঙানিতে ভয় পেয়ে যাবে না তো?

তখন আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে…

কে ছোঁয়াবে কার বুকে?

৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

 

মেঘ ডাকছে গুরুগুরু

ফুটবল মাঠে গোল করতে পারিনি। ক্রিকেট মাঠেও পারিনি সেঞ্চুরি করতে। তবে ফুটবল ক্রিকেট মাঠে ভুল কোনও সিদ্ধান্তের জন্য রেফারির বিরুদ্ধে আম্পায়ারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে ভুলি নাই।

আজও প্রতিবাদে আছি। রাস্তা থেকে মাঠে। ঘর থেকে বাইরে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গায়।

আজও আমার অন্তরে প্রতিবাদের স্বর জেগে আছে বলেই আমি বলতে চাই— অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে আমার সন্তান যেন থাকে প্রতিবাদে।

৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪


*মতামত ব্যক্তিগত