Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

অগ্নিপরীক্ষায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

আশিস গুপ্ত

 


কিন্তু হঠাৎ করেই, বাংলাদেশ সম্পর্কিত ভারতের বিদেশনীতি একটা বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বাংলাদেশে ছাত্রদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা গণঅভ্যুত্থান হঠাৎ-ই যেন এক সামুদ্রিক ঝড় হয়ে আছড়ে পড়েছে ভারত উপমহাদেশে। এক ঝড়ে গত পাঁচ দশক ধরে নানা চড়াই-উৎরাই পার করে গড়ে ওঠা ভারত-বাংলাদেশ সৌহার্দ্যের সৌধটা মাটিতে মিশে গেল! কেন?

 

প্রতিবেশী বাংলাদেশের প্রতি শক্তিশালী এবং সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়াই ভারতের নীতি। সাধারণত দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের নিরিখে সেটি চিহ্নিত হয়। দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভারত বাংলাদেশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে দেখেছে। ভারতের বিদেশনীতির লক্ষ্য বাংলাদেশের সঙ্গে একটি স্থিতিশীল ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক নিশ্চিত করা, যা সম্ভাব্য আঞ্চলিক সংঘাত এবং অন্যান্য প্রধান শক্তির (বিশেষ করে চিনের প্রভাবের বিরুদ্ধে) একটি বাফার রাষ্ট্র হিসেবে কাজ করবে। গত ৫৩ বছর ধরে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এগিয়েছে এই পথ ধরেই। ২০১৪ সালে ভারতে শাসকের পরিবর্তনেও এই উপমহাদেশের দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সম্পর্কে চিড় ধরেনি। দীর্ঘ দেড় দশক ধরে, ছোটখাটো কিছু সমস্যা দেখা দিলেও ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কে বৈরিতা ছিল না কখনওই। ধর্মীয় বিভাজনের মধ্যে দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল বা তা স্থায়ী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে এদেশে ‘ক্রমবর্ধমান অনুপ্রবেশ’ বিজেপির অন্যতম অ্যাজেন্ডা হলেও নয়াদিল্লি ও ঢাকার মধ্যে কোনও সরকারি আলোচনায় বিষয়টি ইস্যু হয়ে ওঠেনি। আসলে ‘অনুপ্রবেশ’কে আলোচনার বিষয় করে ভারত বা বাংলাদেশ কেউই সম্পর্কে ফাটল ধরাতে চায়নি। বাংলাদেশের সদ্য-প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত বছরগুলিতে চিনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়িয়ে তুলেছিলেন, চিন্তায় ছিল ভারত। কিন্তু সেই চিন্তার প্রকাশ ঘটেনি ভারতের বিদেশমন্ত্রকের আচার-আচরণে। বরং উল্টোটাই হয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের বেশ কয়েকমাস আগে থেকেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তৎপর হয়ে উঠেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগী পশ্চিমি দেশগুলি। তখন ভারত দফায় দফায় আলোচনা করে ওয়াশিংটনকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনও বড় পদক্ষেপ করা থেকে বিরত রেখেছিল। টানা দেড় দশক ক্ষমতায় থাকার পর সম্প্রতি ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘনিষ্ঠভাবে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কাজ করে গেছেন। তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দেখে মনে হত, উভয়পক্ষই এর সমান সুফলভোগী।

কিন্তু হঠাৎ করেই, বাংলাদেশ সম্পর্কিত ভারতের বিদেশনীতি একটা বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বাংলাদেশে ছাত্রদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা গণঅভ্যুত্থান হঠাৎ-ই যেন এক সামুদ্রিক ঝড় হয়ে আছড়ে পড়েছে ভারত উপমহাদেশে। এক ঝড়ে গত পাঁচ দশক ধরে নানা চড়াই-উৎরাই পার করে গড়ে ওঠা ভারত-বাংলাদেশ সৌহার্দ্যের সৌধটা মাটিতে মিশে গেল! কেন? ‘৭১-এ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যে-দেশ তাদের সীমান্ত খুলে, মানবিক সাহায্য দিয়ে বাংলাদেশিদের জীবন বাঁচিয়েছিল; অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও সামরিক সাহায্য দিয়েছিল; এমনকি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি যুদ্ধ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনির হাত থেকে মুক্ত করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিল; আজ ৫৩ বছর পর কেন সে-দেশের মানুষের মধ্যে ভারত-বিরোধিতা এত প্রবল হয়ে উঠল? দুই দেশের আগামী দিনের সম্পর্ক ও বিদেশনীতির জন্য তার উত্তর খোঁজা জরুরি। গত কয়েকমাস ধরে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে জনরোষের বিস্ফোরণ ঘটল। আন্দোলন শুরুর কিছুদিন পরই শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার অবসান হয়ে উঠল আন্দোলনের প্রধান দাবি। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ল গোটা দেশে। প্রবল আন্দোলনের মুখে, সেনাবাহিনির পরামর্শে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিলেন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশ ছেড়ে যাওয়া ভারতের রাজনৈতিক ও সামরিক মহলের কাছে ছিল অপ্রত্যাশিত। হাসিনা যতদিন ক্ষমতায় ছিলেন, ততদিন তাঁকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে গেছে ভারত। এই সমর্থন দিতে গিয়ে বাংলাদেশের জনগণকে উপেক্ষা করেছে ভারত। মোদির নেতৃত্বে ভারত সরকার শুধু বাংলাদেশ নয়, বেশিরভাগ প্রতিবেশী দেশের ক্ষেত্রে এমন অবস্থান নিয়ে চলেছে। যেমন মায়ানমার। সেখানে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার ভেঙে দিয়ে ক্ষমতা দখল করা সামরিক শাসককে সমর্থন দিয়ে চলেছে দিল্লি। সামরিক সরকার গণতন্ত্র ফেরানোর দাবিতে চলমান গণআন্দোলনের নেত্রী অং সান সু চি-সহ হাজার হাজার মায়ানমার নাগরিককে কারাবন্দি করে রেখেছে। সেনার দমনপীড়ন থেকে রক্ষা পেতে সেখানকার মানুষ শহর ছেড়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে সামরিক সরকারের পক্ষ নিয়ে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভ দমনে ভূমিকা রেখেছে ভারত। আফগানিস্তানে তালিবান আবার ক্ষমতায় ফেরার পর গোষ্ঠীটির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভারতের কাছে উপেক্ষিত থেকেছে দেশগুলির সাধারণ জনগণ।

শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের মিত্রতার সম্পর্কের শিকড় অনেক গভীরে। ১৯৭৫ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন শেখ হাসিনার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ফেরানোর লক্ষ্যে ভারত থেকে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত হাসিনা ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এরপর ২০০৯ সালে আবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় পর্বের প্রথম পাঁচ বছর সংযত থাকলেও ২০১৪ সালের পর রাজনৈতিক বিরোধী, সাংবাদিক ও অধিকারকর্মীদের ধরপাকড় ও কণ্ঠরোধের মধ্য দিয়ে তিনি একজন কর্তৃত্ববাদী শাসক হয়ে উঠতে শুরু করেন। চলতি শতকের প্রথম দশকে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি)-র মদতে চরমপন্থী ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলি শাখাপ্রশাখা বিস্তার করে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। চরমপন্থী ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলির সাহায্য নিয়ে উত্তরপূর্ব ভারতের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলি বাংলাদেশে অবাধ বিচরণ করতে থাকে। ২০০৯ সালে শাসনক্ষমতা ফিরে পেয়েই শেখ হাসিনা চরমপন্থী ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করে নিজেকে এবং আওয়ামি লিগকে ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। শেখ হাসিনা ভারতবিরোধী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে সে-দেশ থেকে উৎখাত করেন। ভারতও প্রতিদানে শেখ হাসিনাকে এমনভাবে সমর্থন দিয়েছে, যার নজির পাওয়া বিরল। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে ভারত পশ্চিম দেশগুলোর কাছে তদ্বির পর্যন্ত চালায়। ভারতীয় কূটনীতিকরা বলতেন  ‘যদি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকেন তাহলে বাংলাদেশ ইসলামপন্থী দলগুলোর প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হবে। যা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।’ ঠিক এই কথাটি আমেরিকাকে বুঝিয়েছিল ভারত। ওয়াশিংটন পোস্ট-এর সঙ্গে আলাপচারিতায় এক শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় কূটনীতিক বলেছিলেন, “আমেরিকানদের সঙ্গে অনেক কথোপকথন হয়েছিল যেখানে আমরা বলেছিলাম, এটি [ইসলামপন্থী দলগুলোর প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হওয়া] আমাদের জন্য একটি মূল উদ্বেগের বিষয়, এবং আপনি [আমেরিকা] আমাদের কৌশলগত অংশীদার হিসাবে নিতে পারবেন না যদি না আমাদের কোনও ধরনের কৌশলগত ঐকমত্য থাকে।” কার্যত কূটনৈতিক হুমকি। আর এই যুক্তির কাছে হার মেনে বাংলাদেশের নির্বাচনের কিছুদিন আগে থেকেই সুর নরম হয়ে যায় বাইডেন প্রশাসনের। শুধু ২০২৩ সালেই নয়, ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের সময় তদানীন্তন ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেছিল। একই সঙ্গে শেখ হাসিনার পক্ষে আমেরিকা, ব্রিটেন, জাপান এমনকি চিনকে বোঝাতেও ভারত সরকার তদ্বির করেছিল সে-সময়ে।

শেখ হাসিনা ভারতে চলে আসার দু-সপ্তাহ পরে, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার দেখভালে যুক্ত থাকা এক প্রাক্তন সিনিয়র অফিসার বলেছেন, “তাত্ত্বিকভাবে হাসিনাকে সমর্থন করাটা সঠিক হলেও নয়াদিল্লি বাংলাদেশের তৃণমূল স্তরের বাস্তব পরিস্থিতি বুঝতে পারেনি। ঢাকা থেকে আসা প্রত্যেকেই একই প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছিল যে ভারতবিরোধী অনুভূতি অভূতপূর্ব পর্যায়ে রয়েছে। তবুও আমরা ধরে নিয়েছিলাম যে রাষ্ট্রের প্রশাসনিক এবং জবরদস্তিমূলক অস্ত্রের উপর শেখ হাসিনার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম বাংলাদেশ সরকারকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা বারবার ব্যর্থ হয়েছে, তাই তিনি আবার বিরোধীদের পরাস্ত করে সরকার পরিচালনা করবেন।” কিন্তু ভারতীয় গোয়েন্দা ও কূটনৈতিক ব্যর্থতায় নয়াদিল্লি হতবাক হয়ে যায়, যখন সেনাবাহিনি ৫ আগস্ট শেখ হাসিনাকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলে। বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির অন্যতম শীর্ষনেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী একটি আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সংসদ নির্বাচনের আগে “আমরা ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তাদের বলার চেষ্টা করেছি, ‘আপনার সব ডিম এক ঝুড়িতে রাখবেন না’, ভারতের উদ্বেগ যাই হোক না কেন আমরা তা প্রশমিত করার চেষ্টা করেছি। অতীতের ঘটনা ও দায় বহন করা উভয়পক্ষের পক্ষেই বোকামি হবে।” আসলে ভারত, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এমন একটি ভুল করেছে যা আমেরিকা-ইরান সম্পর্কের সঙ্গে তুলনীয়। অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন কূটনীতিক জন ড্যানিলোভিজ, যিনি ঢাকায় ডেপুটি চিফ অব মিশনের দায়িত্ব পালন করেছিলেন, বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যে ঝুঁকি নিয়েছে তা ১৯৭৯ সালে ইরানের ক্ষেত্রে আমেরিকার নেওয়া ঝুঁকির মতোই। যদি কোনও একটি দেশের  স্বৈরশাসকের সঙ্গে আপনার যোগসাজশ দেখা যায়, যখন স্বৈরশাসকের পতন হয়, তখন আপনাকে ল্যাজেগোবরে হতেই হবে।” ইসলামি বিপ্লবের সময় ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের স্বৈরাচারী শাহকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছিল। ইরানের মানুষ তা মেনে নেয়নি। স্বভাবিকভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের সেই সম্পর্ক আজও জোড়া লাগেনি।

তবে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কে ফাটল ধরলেও, তা কখনওই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের বৈরিতার পর্যায়ে পৌঁছবে না। কারণ, উভয় দেশের স্বাভাবিক সম্পর্ক উভয়ের জন্য প্রয়োজন। বাংলাদেশের সমাজে ও রাজনীতিতে এমন এক ব্যতিক্রমী অবস্থা তৈরি হয়েছে, যা ভারতে সর্বাগ্রে নির্মোহভাবে বিবেচনায় নেওয়া জরুরি। একে অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের নির্বাচনগুলো সার্বিক  হলে এবং সচেতন উদাসীনতার বদলে ভারতের নীতিনির্ধারকেরা তাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখলে হয়তো চলতি অবস্থা হত না। অভিন্ন নদীর জলবণ্টন সমস্যা, ট্রানজিট-সহ ভারতকে অন্যান্য বাণিজ্যসংক্রান্ত বাড়তি সুবিধা দেওয়া নিয়ে এমনিতেই বাংলাদেশের মানুষের মনোভাব ভারত-বিরোধী। এছাড়া বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বেপরোয়া অবস্থান নিয়ে ক্ষুব্ধ সে-দেশের জনগণ। প্রশ্নবিদ্ধ ভারতের কৌশল বাংলাদেশের জনসমাজের মনস্তত্ত্বে দ্রুতগতিতে যে পরিবর্তন ঘটাচ্ছিল, তারই ফল ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ঘটনাবলি। শেখ হাসিনা নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ভারতের কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা নেওয়ায় নয়াদিল্লির প্রতি জনরোষ আরও বাড়ে। নতুন এই বাংলাদেশকে গতানুগতিক পুরনো কূটনীতিক মন দিয়ে সঠিকভাবে বোঝা যাবে না। বরং কোনও বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর বদলে ভারতের উচিত দ্রুত বাংলাদেশের জনমানসে নিজের স্থান করে নেওয়া। বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকার যেভাবে বিগত বছরগুলোতে ভারতের কংগ্রেস-বিজেপি-জনতা সরকারের সঙ্গে কাজ করতে অভ্যস্ত ছিল, ভারতকেও একইভাবে প্রতিবেশী দেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে চলতে অভ্যস্ত হতে হবে। বিশেষত তরুণসমাজের চাওয়া-পাওয়াকে বুঝতে চেষ্টা করা, মর্যাদা দেওয়া। এটাই হল নয়াদিল্লির দিক থেকে ইতিমধ্যে ঘটে যাওয়া বিপত্তি থেকে বের হওয়ার পথ।