Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

ধোঁয়াশায় ঢাকা দিল্লি

সোমনাথ মুখোপাধ্যায়

 


দিল্লি মুম্বাই কলকাতা চেন্নাই-এর মতো ঐহিত্যবাহী জনপদগুলো আমাদের ভুলে ক্রমশই গভীর অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। তাই দিল্লির সমস্যা কেবলমাত্র সেই মহানগরীর সমস্যামাত্র নয়, এটা গোটা দুনিয়ার সমস্যা। কিছুদিন আগে যমুনা নদীর দূষণ নিয়ে হইচই হল, এখন দিল্লির বাতাসের হাল নিয়ে হট্টগোল হচ্ছে। কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী লাপাতা। এদিকে শহরের জনজীবন স্থবির স্থাণু অবস্থায় পৌঁছেছে

 

সেটাও ছিল নভেম্বর মাস। আজ থেকে ঠিক ২৪ বছর আগের ঘটনা। প্রতিদিনের মতোই সেদিন‌ও হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমিয়েছেন “কালের কপোলতলে শুভ্র সমুজ্জ্বল” সেই আশ্চর্য স্মৃতিসৌধ দেখার আশা নিয়ে। ভেতরে ভেতরে সকলেই বেশ উত্তেজিত। ওমা! এ কি অবাক কাণ্ড! কোথায় গেল সেই আশ্চর্য সৌধ! শ্বেতমর্মরে নির্মিত অপরূপ সৌধখানি বেমালুম গায়েব!! ৮ নভেম্বর, ২০০০ আগ্রা শহরের কাচপুরার মানুষজনের সামনে তাজমহলকে বেমালুম গায়েব করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন বিখ্যাত জাদুকর জুনিয়র পিসি সরকার তাঁর গিলি গিলি গে জাদুমন্ত্রের জোরে। সেদিন জাদুকরের আশ্চর্য কারিশমা দেখে সবাই পরম বিস্মিত হয়েছিলেন। আর এখন? সেদিনের সেই মায়াবী ঘটনার কমবেশি প্রায় সিকি শতক পরে, তাজমহল-সহ দেশের রাজধানী শহর দিল্লির প্রায় সমস্ত বিখ্যাত সৌধগুলো প্রায় প্রতিদিনই বিলকুল ভ্যানিশ হয়ে যাচ্ছে স্মগ বা ধোঁয়াশার কারণে। স্মগের দাপটে দিল্লি-সহ উত্তরভারতের একাধিক জনপদ মায় পাকিস্তানের লাহোর শহরও এখন ধোঁয়াশায় ঢাকা পড়েছে। প্রবল বায়ুদূষণের কারণে দিল্লি এখন পৃথিবীর দূষিততম মহানগরীর তাজ মাথায় নিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে। কী করুণ পরিণতি!

দিল্লি বা উত্তরভারতের মানুষজনের কাছে এই সমস্যা মোটেই নতুন নয়। বিগত কয়েক বছর ধরে শীতকালে ঠাসবুনোট ধোঁয়াশার চাদরে লাজুক কন্যার মতো মুখ ঢেকে রয়েছে দেশের এই রাজধানী শহর। এতে তার রাজগরিমা খর্ব হচ্ছে প্রতিনিয়ত, বিস্তর হইচই, তর্কাতর্কি, রাজনৈতিক আকচা-আকচির পর্ব চলছে সমানতালে। তবে সমস্যার কোনও ইতিবাচক সমাধানসূত্র এখনও মেলেনি। এখনও এ-দেশে শীতের দাপট তেমন জোরালো হয়ে ওঠেনি, আর তাতেই এমন দুঃসহ অবস্থা। লোকজন বিচিত্র সব নামের তকমা জুড়ে দিতে শুরু করেছে তাদের প্রিয় শহরের সঙ্গে। প্রশাসন নাস্তানাবুদ। প্রতিদিন মোবাইল ফোনে ছবি তুলে নানান চটুল ক্যাপশন জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সকলের মাঝে। চলছে খিল্লিবাজি।

গোড়াতেই বলি, স্মগ বা ধোঁয়াশা একেবারেই একটা শহুরে সমস্যা। আসুন আমরা তার সুলুক সন্ধান করে দেখি।

হেমন্তের হালকা ঠান্ডায় গ্রামবাংলার প্রভাতী মাঠ-ময়দান, জলাশয় জুড়ে কুয়াশার যে হালকা আবরণী আমরা লক্ষ করি, তার চেয়ে দিল্লির ধোঁয়াশা একদম আলাদা, প্রাণঘাতী। ইংরেজি Smog শব্দটি তৈরি হয়েছে দুটি ইঙ্গ শব্দেরই সংযোগে— smoke + fog = Smog. কুয়াশার হালকা জলীয় আবরণী যখন ধোঁয়ার সঙ্গে বা ধূলিকণার সঙ্গে যুক্ত হয় তখনই তৈরি হয় ধোঁয়াশার ঘন এক আস্তরণ। ধোঁয়াশা নিয়ে পাঠকদের মনের ধোঁয়াশা দূর করার আগে আমরা বরং কুয়াশা কী এবং মাটির কাছাকাছি কীভাবে তা তৈরি হয় সেই বিষয়ে দু-একটি কথা আলোচনা করে নিই।

আবহবিজ্ঞানীদের মতে কুয়াশা হল মাটির কাছাকাছি সৃষ্টি হ‌ওয়া মেঘ। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে জলীয় বাষ্প যা বায়ুমণ্ডলের এক অন্যতম উপাদান। কোনও শীতল তলের সংস্পর্শে এলে সেই জলীয় বাষ্প দ্রুত বাষ্পীয় দশা ত্যাগ করে ভাসমান জলকণায় পরিণত হয়। শীতকালেই এমনটা ঘটে, কারণ এই সময় ভূপৃষ্ঠের ওপর তির্যক সৌরকিরণ পড়ার ফলে তা অপেক্ষাকৃতভাবে কম আতপ্ত হয়। আবার দ্রুত সেই তাপ ছেড়ে দেওয়ার ফলে অনেকটাই শীতল হয়ে পড়ে। কয়েক কুঁচি বরফ দেওয়া ঠান্ডা গ্লাসের গায়ে যেমন জলবিন্দু দেখা যায় এ-ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা সেইরকম। আপাত নিরীহ এই ভাসমান জলবিন্দু চাদরে যখন বিপুলসংখ্যক ধূলিকণা ও অন্যান্য দূষকের অনুপ্রবেশ ঘটে তখন‌ই তা পরিণত হয় ঘন ধোঁয়াশায় যা অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এর প্রভাবে দৃষ্টিস্বচ্ছতার মাত্রা ভীষণভাবে কমে যায়। নাকের ডগায় থাকা তাজমহল‌ও তখন রীতিমত ভ্যানিশ্। যমুনাপাড়ের দিল্লি এখন এমনই এক সমস্যার সম্মুখীন।

তবে দিল্লির এই মারণ পরিস্থিতির বিষয়টি এখন আর শুধুমাত্র সেই অঞ্চলের সমস্যা নেই, এই সমস্যা ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক পরিবেশ সমস্যার চেহারা নিয়েছে। আন্তর্জাতিক এজেন্সিগুলোও এই বিষয়ে তাঁদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, কেননা এই অবস্থার সঙ্গে বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবন ও জীবিকার নিশ্চয়তার প্রশ্নটি জড়িয়ে আছে। লাগাতার কয়েক দিন ধরে দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি সূচক মান ১০০০-এর ওপর রয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এই মান মানুষের স্বাভাবিক সহনমাত্রার চেয়ে অনেক অনেক বেশি। অনিবার্যভাবে যে প্রশ্নগুলো এখানে সামনে উঠে আসছে, তা হল এমন ভয়ঙ্কর পরিণতি বারবার দিল্লিকে গ্রাস করছে কেন? দিল্লির মতো একটি জনবহুল মহানগরীর বায়বীয় স্বাস্থ্যের এমন করুণ পরিণতির কারণগুলো নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে। আবহবিজ্ঞানীদের মতে দিল্লি ধোঁয়াশার পেছনে সম্ভাব্য কারণগুলো হল—

দিল্লির আশেপাশের এলাকায় ব্যাপকভাবে শস্যের অবশিষ্ট অংশ বা নাড়া পোড়ানোকে এমন অবস্থার জন্য মুখ্যত দায়ী বলে মনে করেন আবহবিদ্ তথা পরিবেশবিজ্ঞানীরা। ফসল কাটার পর রাজধানী-সংলগ্ন পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশের কৃষকরা নতুন ফসল বোনার আগে পুরনো ফসলের অবশিষ্টাংশ মাঠেই পুড়িয়ে দেন বহুদিন ধরে। বাতাসে এই ধোঁয়া মিশে যাওয়ার ফলে বিষিয়ে ওঠে বায়ু। সকলের অজ্ঞানতার জন্য তা একসময় ছাপিয়ে যায় মানুষের সহনসীমা। এখানেই শেষ নয়। ভাগাড়ে জমা হ‌ওয়া দিল্লি মহানগরীর বিপুল পরিমাণ নাগরিক ও শিল্প বর্জ্যপদার্থ নিয়মিতভাবেই পুড়িয়ে দেওয়া হয় তার ভার লাঘবের জন্য। এই প্রথা দেশের সর্বত্রই কমবেশি প্রচলিত। বর্জ্য দহনের ফলে বাতাসে মিশে যাচ্ছে বিভিন্ন টক্সিক পদার্থ। এইসব দূষকের নিয়মিত সংযোজন বাতাসের দূষণের মাত্রা লাগামছাড়া করে তুলেছে।

বর্জ্য দহনের পাশাপাশি ধোঁয়াশা সমস্যার অন্যতম একটি কারণ হল অতিরিক্ত মাত্রায় যানবাহনের ধোঁয়ার নির্গমন। আজকের সমাজে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম সূচক হল ব্যক্তিগত মালিকানার গাড়ির সংখ্যা। গাড়ি থাকা মানেই হল শ্রেণিচরিত্রের স্তর পরিবর্তন। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে নাগরিকদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোর বদল হয়েছে। এখন প্রায় সকলের ঘরেই গাড়ি। দিল্লিতে প্রায় ১০ মিলিয়ন সংখ্যক নানান ধরনের গাড়ি প্রতিদিন রাস্তা দাপিয়ে বেড়ায়। এর ফলে বাড়ছে যানজট, সড়ক দুর্ঘটনা আর মাত্রাহীন দূষণ। এর আগে দেখেছি এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে দিল্লি সরকার কখনও জোড়-বিজোড় সংখ্যার গাড়ি চালানোর নির্দেশিকা জারি করেছে, কখনও নিয়ন্ত্রণ করেছে গাড়ির যথেচ্ছ চলাচল। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। গাড়ির ধোঁয়া প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টন মারণ দূষক ছড়িয়ে দিচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে হাইড্রোকার্বন (HC), কার্বন মনোক্সাইড (CO), নাইট্রোজেন অক্সাইড (NOx), সালফার ডাই অক্সাইড (SO2), কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2), পার্টিকুলেট ম্যাটার (PM)-এর মতো শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর পদার্থসমূহ। এই সমস্যায় জর্জরিত পৃথিবীর সমস্ত নগরীর আবাসিকরা। বাতাসে ভেসে থাকা এইসব উপকরণ বায়ুবাহিত হয়ে ছড়িয়ে যায় বহু দূরে। সমস্যা এতটাই ভয়াবহ যে নাসার তরফে উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে সকলকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে এই ধোঁয়াশা মেঘের আগ্রাসন বিষয়ে।

দিল্লির কলকারখানা, শিল্প এস্টেটগুলোর ভূমিকাও এক্ষেত্রে মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। দিল্লির কলকারখানা, নির্মাণশিল্প এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে গলগলিয়ে বাতাসে মিশছে হরেকরকমের দূষক। নয়ডা, গুরুগ্রামের মতো দিল্লি-লাগোয়া জনপদগুলোতে পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করেই লাগাতারভাবে চলছে গগনচুম্বী ফ্ল্যাটবাড়ির নির্মাণ। এর ফলে বিপুল পরিমাণ নির্মাণ-বর্জ্যপদার্থ নিয়মিতভাবেই মিশছে বাতাসে যার প্রভাবে তিলে তিলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জল, জমি আর বাতাসের মতো জীবনদায়ী উপাদানগুলো। দূষিত পরিবেশের প্রভাব মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের ওপর গভীর ছাপ ফেলছে। দিল্লির ক্রাইম রেকর্ড তেমনটাই জানাচ্ছে। খবরের কাগজ খুললেই এমন ঘটনার কথা জানতে পারি।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে যে দিল্লির এই বেহাল দশার পেছনে মূলত দায়ী এই অঞ্চলের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো। সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (CREA) এক সমীক্ষাসূত্রে জানিয়েছে যে কৃষকদের নাড়া পোড়ানোকে এই অবস্থার জন্য দায়ী করা হলেও মূল কালপ্রিট হল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো। সমীক্ষকদের মতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো থেকে নাড়া পোড়ানোর তুলনায় ১৬ গুণ বেশি দূষিত পদার্থ ছড়িয়ে পড়ছে মুক্ত পরিবেশে। তাঁদের হিসেবে ৮.৯ মিলিয়ন টন নাড়া পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে যুক্ত হচ্ছে ১৭.৮ কিলো টন দূষণকারী পদার্থ। ওদিকে এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২২ সালের জুন মাস থেকে ২০২৩ সালের মে মাস পর্যন্ত সময়কালে দিল্লির তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে ২৮১ কিলো টন সালফার ডাই অক্সাইড বাতাসে মিশেছে। দিল্লির বাতাসে মিশে থাকা এই বিপুল পরিমাণ দূষিত পদার্থ মহানগরীর দৈনন্দিন তাপমাত্রার হ্রাস বৃদ্ধির স্বাভাবিক ছন্দোময় প্রক্রিয়ার ওপর গভীর ছাপ ফেলছে। রক্ষা নেই কোনও দিকেই।

দিল্লি বাড়ছে তার নাগরিক পরিসীমার বহরে। তাল মিলিয়ে বাড়ছে আবাসিকদের সংখ্যা। এই মুহূর্তে মহানগরীর নাগরিক সংখ্যা ৩৩,৮০৭,০০০ জন। ২০২৩ সালের তুলনায় এই বৃদ্ধির হার ২.৬৩ শতাংশ বেশি। জনসংখ্যার বৃদ্ধি মানেই হল পরিবেশ পরিমণ্ডলের ওপর চাপ বেড়ে যাওয়া। এ-বছর দিওয়ালিতে বাজি পোড়ানোর ফলে বায়ুর গুণগত সূচক মান অনেকটাই বেড়ে গিয়ে গড়পড়তা দাঁড়িয়ে ছিল ৩৩০। তবে অঞ্চলভেদে এই মান সূচক ছিল আরও আরও অনেক বেশি। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে যে এই সূচক মান ছিল বিগত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বিন্দুতে। সভ্যতার গগনচুম্বী গরিমা প্রকাশ করতে গিয়ে আমরা নিজেরাই নিজেদের বিপন্ন করছি প্রতিনিয়ত। এও এক আশ্চর্য খেলা! এই খেলা শুরু হয়েছে আমাদের হাতে, তবে এর শেষ কোথায় তা এই মুহূর্তে হয়তো আমাদের জানা নেই।

দিল্লি মুম্বাই কলকাতা চেন্নাই-এর মতো ঐহিত্যবাহী জনপদগুলো আমাদের ভুলে ক্রমশই গভীর অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। তাই দিল্লির সমস্যা কেবলমাত্র সেই মহানগরীর সমস্যামাত্র নয়, এটা গোটা দুনিয়ার সমস্যা। কিছুদিন আগে যমুনা নদীর দূষণ নিয়ে হইচই হল, এখন দিল্লির বাতাসের হাল নিয়ে হট্টগোল হচ্ছে। কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী লাপাতা। এদিকে শহরের জনজীবন স্থবির স্থাণু অবস্থায় পৌঁছেছে। দিল্লি সরকারের তরফ থেকে গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান বা GRAP-এর ফেজ-৪ কার্যকর করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে একাধিক নাগরিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্রিয়াকলাপ। এই মুহূর্তে দিল্লির সমস্ত স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ধ রাখা হয়েছে, সরকারি সংস্থার কর্মচারীদের পর্যায়ক্রমে বাড়ি থেকে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ভারী ও মাঝারি মানের যানবাহনের অবাধ চলাচল, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বিশেষ নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছেন পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত সমস্ত বিচারপ্রক্রিয়া ভার্চুয়ালি সম্পাদন করতে হবে। বিষময় পরিবেশের প্রভাব পড়েছে নাগরিকদের স্বাস্থ্যের ওপর। দিল্লির বাতাসের গুণগত মান এতটাই বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছেছে যে দিনে ৪০ থেকে ৫০টি সিগারেট খেলে যে পরিমাণ দূষণের শিকার হতে হয়, দিল্লির মানুষজনের এখন তেমনিই দশা। সাধারণ মানুষের মধ্যে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে শ্বাসকষ্ট, চোখের সমস্যা, হাইপারটেনশন, স্বরযন্ত্রের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা। চিকিৎসকরা প্রবীণ ও শিশুদের প্রতি বিশেষ নজর দেবার কথা বলছেন বারবার। দূষণের কারণে দিল্লির পর্যটন-নির্ভর অর্থনীতি বিপদাপন্ন। কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মোকাবিলা করার কথা ভাবছেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।

এই পরিস্থিতি থেকে কবে মুক্তি পাবে দিল্লি? কবে ফিরবে দিল্লির স্বাভাবিক জীবনযাত্রার চেনা ছন্দ? খুব শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হবে এমন নয়, কেননা একটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা জটিল সমস্যার চটজলদি সমাধান খুঁজে পাওয়া খুব সহজ একদমই নয়। চেষ্টা চলছে এই মহাদূষণের কবল থেকে দিল্লিকে মুক্তি দেওয়ার। আসুন সবাই মিলে সেই দিনের জন্য প্রতীক্ষা করি।