Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

করিমগঞ্জ থেকে শ্রীভূমি— কুযুক্তির শাক দিয়ে অপকর্মের মাছ ঢাকা

শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার

 


রবীন্দ্রনাথের কবিতায় কোনও হিন্দুয়ানি ছিল না। যা ছিল তা হল বাঙালিত্ব। এই কবিতায় ব্যক্ত রবীন্দ্রনাথের ভাবনাকে যদি সম্মান জানাতেই হয়, তবে প্রথমে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে আসাম রাজ্যে যথাযোগ্য মর্যাদায় অভিষিক্ত করতে হবে। বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাজ্যভাষার দাবিতে কবিগুরুর জন্মশতবর্ষে এগারোজন তরুণ-তরুণীকে শিলচর রেলস্টেশনে পুলিশের গুলিতে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছিল। সেই দাবি আজ পর্যন্ত মানা হয়নি। তার ওপর, বাংলাভাষী মানুষের গায়ে বহিরাগতের তকমা সেঁটে দিয়ে, বংশপরম্পরায় তাদের নাগরিক অধিকার কেড়ে নিয়ে, তাদেরকে অন্তরীণ করে রাখার জন্যে ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করে হঠাৎ এই ‘শ্রীভূমি’ নামকরণ তো প্রকারান্তরে গরু মেরে জুতো দানই। রবীন্দ্রনাথকে মর্যাদা দেওয়ার কথা বলাটা একটা ভণ্ডামি ছাড়া কিছুই নয়

 

আসামে এখন আর করিমগঞ্জ নামে কোনও জেলা রইল না। গত ১৯ নভেম্বর আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা সাংবাদিক সম্মেলন করে জানালেন, মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে শ্রীভূমি। এখন থেকে এই নামেই এই জেলা পরিচিত হবে। এতদিন করিমগঞ্জ শুধু একটি জেলার নাম ছিল না, ওই জেলার সদর শহরের নামও করিমগঞ্জ। বদরপুর থেকে আগরতলামুখী ট্রেন করিমগঞ্জের অদূরে যে স্টেশন হয়ে যায় তার নাম নিউ করিমগঞ্জ। শহরের ভেতর যে স্টেশনটি আছে তার নামও স্বভাবতই করিমগঞ্জ। সরকারিভাবে পরিবর্তিত হয়েছে শুধু জেলার নামটি।

মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “ভারতের গৌরবময় ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ও সাধারণ জনগণের ইচ্ছা এবং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বপ্নকে সম্মান প্রদর্শন করে রাজ্য মন্ত্রিসভা আজ করিমগঞ্জ জেলাকে শ্রীভূমি জেলা হিসেবে নামকরণ করার অনুমতি দিয়েছে। ১০০ বছরেরও বেশি আগে, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আসামের আধুনিক করিমগঞ্জ জেলাকে ‘শ্রীভূমি’— মা লক্ষ্মীর ভূমি হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। আজ আসাম মন্ত্রিসভা আমাদের জনগণের এই দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করেছে।” পরে সরকারি প্রজ্ঞাপনে জেলা নামের সঙ্গে সঙ্গে শহরের নামও শ্রীভূমিতে পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে।

প্রথম কথা হচ্ছে, রবীন্দ্রনাথ করিমগঞ্জ জেলাকে কখনওই শ্রীভূমি নামে অভিহিত করেননি। করা সম্ভবও ছিল না। কারণ করিমগঞ্জ জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর ৪২ বছর পর। তাছাড়া করিমগঞ্জের নাম পরিবর্তনের দাবিতে কোনও আন্দোলন বা স্মারকপত্র পেশের কথা কেউ কস্মিনকালেও শোনেনি। আসাম রাজ্যের বা এই জেলার বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে বা পরে কখনও এই দাবি জানায়নি। করিমগঞ্জের সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে যুক্ত কোনও সংগঠনও কখনও এমন দাবি তোলেনি। দক্ষিণ আসামের বাঙালিদের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক সাহিত্য ও সংস্কৃতির সংগঠন বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন। তাদের কোনও সম্মেলনেও কখনও এমন দাবি উত্থাপিত হয়নি। ফলে করিমগঞ্জের নাম পরিবর্তনকে গণদাবি বলা একটি ডাহা মিথ্যা কথা। মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনের আগে এমন একটি নাম পরিবর্তন কারও কল্পনাতেও ছিল না। তবে আসামের বিদ্যমান উগ্র হিন্দুত্ববাদী বাতাবরণের দরুণ মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই একটি তীব্র সংখ্যাগুরুবাদী ভাবাবেগ তৈরি হয়েছে। তথাকথিত ‘মুসলিম নাম’ মোছার নেশায় জেলার নাম বদলের ঘোষণা হতেই শহরের পুরসভার সাইনবোর্ডও পাল্টে গেছে। পাল্টে যাচ্ছে আরও বহু সাইনবোর্ড। যিনি গতকালও বলেছেন বা লিখেছেন করিমগঞ্জ যাচ্ছি, তিনি হঠাৎ ফেসবুকে লিখতে শুরু করলেন শ্রীভূমি যাচ্ছি। এই কথাগুলো বলার মধ্যে সরকারি ঘোষণাকে মান্যতা দিতে চাওয়ার চেয়েও প্রকট হয়ে উঠছে মুসলিমবিদ্বেষী সংখ্যাগুরুবাদী অহংবোধ। এমন একটা ভাব করা হচ্ছে যেন এতদিন কেউ বন্দুকের ডগায় সকলকে বাধ্য করেছিল করিমগঞ্জ নামটি মেনে নিতে। যেন এই নামে হিন্দুদের একটি দাসত্বশৃঙ্খল ছিল যা মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে খান খান হয়ে গেছে। অতএব একটি বিজয় উৎসব বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। এই নাম পরিবর্তন ও তার পরের এই বিজয় উদযাপনের উল্লাসে স্বভাবতই অন্তরে ক্ষতবিক্ষত ও রক্তাক্ত হচ্ছেন এই অঞ্চলের মুসলিম সমাজ। যে করিমগঞ্জ নিয়ে এই অঞ্চলের ধর্মনির্বিশেষে সকল মানুষের এত ভাবাবেগ, এত স্মৃতিকাতরতা এখন সেই নামটাই যে তাঁদেরকে অপমানিত করার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে সেটা ছিল তাঁদের কাছে অকল্পনীয়। সরকারের একটি আত্মঘাতী ভেদবাদী চাল এভাবে সোল্লাসে উদযাপিত হবে এমন দুর্দিন এত তাড়াতাড়ি চলে আসবে তাঁরা কখনওই ভাবেননি। অনেক মানবিক প্রতিবেশীর আচার আচরণ হঠাৎ এই নামবদল নিয়ে আগ্রাসী হয়ে উঠেছে।

সত্যিই কি করিমগঞ্জের সঙ্গে শ্রীভূমি নামের কোনও দ্বৈরথ ছিল অতীতে? কোনওকালে করিমগঞ্জ কি সত্যিই শ্রীভূমি নামে পরিচিত ছিল? রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে শ্রীভূমি নামের যোগসূত্রটাই বা কোথায়? করিমগঞ্জের নামের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কোনও পূর্বোল্লেখ কি আছে? এইসব প্রশ্নের উত্তর প্রায় পুরোটাই না-বোধক।

করিমগঞ্জ নামটি এসেছে একটি বাজারের সূত্রে। মহম্মদ করিম চৌধুরী নামের এক ভূম্যধিকারী এখনকার করিমগঞ্জের নটিখাল ও কুশিয়ারা নদীর সঙ্গম অঞ্চলে একটি বাজার স্থাপন করেছিলেন। ঊনবিংশ শতকের সাতের দশকে সেই বাজার স্থানান্তরিত হয় আজকের করিমগঞ্জ শহরে। ওই বাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা গঞ্জটির নাম হয় করিমগঞ্জ। ১৮৮৪ সালে ৪০টি পরগণা নিয়ে সিলেট জেলার অন্তর্ভুক্ত করিমগঞ্জ মহকুমার পত্তন। ১৯৪৭ দেশভাগের সময় সিলেট জেলার পাকিস্তানভুক্তির সময়ে করিমগঞ্জ মহকুমার পুরোটাই পাকিস্তানে চলে গিয়েছিল। পরে রেডক্লিফ বাঁটোয়ারার সুবাদে করিমগঞ্জ শহর-সহ মহকুমার একটি অংশ ভারতে যুক্ত হয়। ১৮৭৪ সালে সিলেট ও কাছাড় জেলা দুটিকে যখন নবগঠিত চিফ কমিশনার-শাসিত আসাম প্রদেশে যুক্ত করা হয় তখন সিলেট ও কাছাড়কে নিয়ে তৈরি হয় সুরমাভ্যালি ডিভিশন। সেই সময় থেকে সিলেট ও কাছাড়কে সুরমা উপত্যকা বলা হত।

১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে নাইটহুড ত্যাগ করার পরবর্তীতে অক্টোবর মাসে রবীন্দ্রনাথ এসেছিলেন শিলং শহরে। এই খবর পেয়ে সিলেটের ব্রাহ্ম সমাজের গোবিন্দ নারায়ণ সিংহ মজুমদার শিলংয়ে গিয়ে কবিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সিলেট সফরের। তখনকার সময়ে শিলং থেকে সরাসরি মোটরযানে সিলেট যাওয়া যেত না। পাহাড়ের একটা নির্দিষ্ট পথ মানুষের ঘাড়ে নেওয়া থাপা বা বেতের আসনে বসে পাড়ি দিতে হত। রবীন্দ্রনাথ এভাবে যেতে রাজি ছিলেন না। তাই অনেকটা ঘুরপথে গুয়াহাটি থেকে ট্রেনে পাহাড়লাইনের সুড়ঙ্গপথ দিয়ে বদরপুর করিমগঞ্জ কুলাউড়া হয়ে সিলেট পৌঁছেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের ট্রেন করিমগঞ্জ রেলস্টেশনে পৌঁছলে কিছুক্ষণের জন্যে সেখানে যাত্রাবিরতি হয়। করিমগঞ্জে স্টেশন চত্বরেই সঙ্গীত ও নৃত‍্যে কবিকে সম্মান জানানো হয়। সুদীর্ঘ ট্রেনযাত্রায় সুরমা উপত্যকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে কবি অভিভূত হয়ে পড়েন। একই সঙ্গে বঙ্গসংস্কৃতির মূল ভূখণ্ড থেকে এর বিযুক্তি তাঁকে ব্যথিত করে। সেই সফরে সিলেট পৌঁছে একটি শিরোনামহীন দশ লাইনের কবিতা রচনা করেন, যেখানে কবির এই অনুভূতি ব্যক্ত হয়। পুরো কবিতাটি এ-রকম—

মমতাবিহীন কালস্রোতে
বাংলার রাষ্ট্রসীমা হতে
নির্বাসিতা তুমি
সুন্দরী শ্রীভূমি।
ভারতী আপন পুণ্যহাতে
বাঙালীর হৃদয়ের সাথে
বাণীমাল্য দিয়া
বাঁধে তব হিয়া।
সে বাঁধনে চিরদিনতরে তব কাছে
বাঙলার আশীর্বাদ গাঁথা হয়ে আছে।

কবিতাটিতে পুরো সুরমা উপত্যকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বাংলার মূল ভূখণ্ড থেকে তার বিচ্ছেদের কথা ব্যক্ত হয়েছে। শুধুমাত্র সিলেট জেলা বা করিমগঞ্জ মহকুমার প্রসঙ্গই এখানে নেই। দ্বিতীয়ত সুরম্যভূমি সুরমা উপত্যকার সৌন্দর্য নিয়ে বিশেষণার্থে ‘সুরমা’ শব্দের একটি প্রতিশব্দ হিসেবে তিনি ‘শ্রীভূমি’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন কবিতায়। এর সঙ্গে স্থাননামের কোনও সম্পর্ক নেই। এটা বিশেষণ, বিশেষ্য নয়। রবীন্দ্রনাথের এই কবিতায় কোনও হিন্দুয়ানি নেই। যদি কিছু থেকে থাকে তা হল বাঙালিত্ব। রবীন্দ্রনাথ সুরমা উপত্যকার ভৌগোলিক নির্বাসন সত্ত্বেও এর চিরজীবী বাঙালিত্বের কথাই তুলে ধরেছেন। এই কবিতায় ব্যক্ত রবীন্দ্রনাথের ভাবনাকে যদি সম্মান জানাতেই হয়, তবে প্রথমে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে আসাম রাজ্যে যথাযোগ্য মর্যাদায় অভিষিক্ত করতে হবে। বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাজ্যভাষার দাবিতে কবিগুরুর জন্মশতবর্ষে এগারোজন তরুণ-তরুণীকে শিলচর রেলস্টেশনে পুলিশের গুলিতে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছিল। সেই দাবি আজ পর্যন্ত মানা হয়নি। শুধুমাত্র আজকের বরাক উপত্যকা অঞ্চলের জন্যে যে সরকারি ভাষার স্বীকৃতি জুটেছিল তাও এখন প্রতিদিন সঙ্কুচিত হচ্ছে। বিজেপি সরকারে আসার পর বরাক উপত্যকার সরকারি প্রচারপত্র, বিজ্ঞাপন, সরকারি চিঠিপত্রে অসমিয়া ভাষা ব্যবহৃত হচ্ছে সরকারি ভাষা আইনকে লঙ্ঘন করে। বরাক উপত্যকার সর্বস্তরের জনগণের গণদাবি ছিল শিলচর রেলস্টেশনের নাম পরিবর্তন করে ‘ভাষা শহিদ স্টেশন’ রাখার। এই দাবিকে কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদনও করেছে। আসামের বিজেপি সরকার এই গণদাবি ও একে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন প্রদানকে উপেক্ষা করেছে। সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাভাষী মানুষের গায়ে অবাঞ্ছিত বহিরাগতের তকমা সেঁটে দিয়ে, বংশপরম্পরায় তাদের নাগরিক অধিকার কেড়ে নিয়ে, তাদেরকে অন্তরীণ করে রাখার জন্যে ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করে হঠাৎ এই ‘শ্রীভূমি’ নামকরণ তো প্রকারান্তরে গরু মেরে জুতো দানই। ফলে রবীন্দ্রনাথকে মর্যাদা দেওয়ার কথা বলাটা একটা ভণ্ডামি ছাড়া কিছুই নয়।

মূল বিষয়টা হচ্ছে, আসামকে যোগী আদিত্যনাথের পথে নিয়ে যাওয়া। বুলডোজার আগেই শুরু হয়েছে। এখন নতুন সংযোজন নাম পরিবর্তন। অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ সবকিছুকে ধর্মের নামে বিভাজিত করার মধ্যে দিয়ে হিন্দু সংখ্যাগুরুবাদের এক মিথ্যা অহংবোধের নেশায় সমাজকে বুঁদ করে দেওয়া। অন্যদিকে, প্রতি মুহূর্তে মুসলিম সম্প্রদায়কে বুঝিয়ে দেওয়া যে তোমরা এ-দেশে সম-অধিকার পাওয়ার অধিকারী নও। ইতিহাসের যে স্মারকেই তোমাদের ছোঁয়া আছে, তার সবটা মুছে দেওয়া হবে, ভেঙে দেওয়া হবে। সংখ্যাগুরু সমাজকে বোঝানো হবে, ইতিহাসের মুসলিম চরিত্র প্রত্যেকে অপরাধী, হত্যাকারী, হিন্দুবিদ্বেষী। দেশের মুসলিম সমাজ সেই অত্যাচারীদেরই অংশ। ফলে এদের যত অপমান করা যাবে, কোণঠাসা করা যাবে, অধিকারহীন করা যাবে, এমনকী লাঞ্ছনা করা যাবে ততই হিন্দুদের মর্যাদাবৃদ্ধি। হিন্দুগৌরব পুনরুদ্ধারের একমাত্র পথ মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা ব্যক্ত করা।

করিমগঞ্জের নাম পরিবর্তন সারা ভারত জুড়ে চলা এই উগ্র হিন্দুত্ববাদী কর্মসূচিরই অঙ্গ। এখানে রবীন্দ্রনাথের নাম ব্যবহার হচ্ছে দুরাত্মার একটি ছল।


*মতামত ব্যক্তিগত