Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

জ্যোতি-বুদ্ধ হয়ে মমতা— ধর্মের আফিমে নেশাগ্রস্ত বাঙালি

শৈলেন সরকার

 


রাজনৈতিক নেতাদের কল্যাণে সবাই নিজের নিজের আলাদা পরিচয় তৈরি করে বলছে আমরাই শ্রেষ্ঠ। হিন্দুদের বেদ-পুরাণে যেমন আধুনিক জ্ঞান ও বিজ্ঞানের সবকিছু আছে তেমনি আছে কোরানে। গ্রাম-গঞ্জে বৃদ্ধি পেয়েছে এজতেমা, বেড়েছে তবলিগে যাওয়ার তাগিদ। সেখানে দিন কয়েকের জন্য দলে দলে গিয়ে নামাজ-না-করা মানুষদের বোঝাতে হবে, তাদের মসজিদমুখী করতে হবে। একজন শিশুও সেখানে মানুষ বা ভারতীয় বা বাঙালি না হয়ে নিজেকে মুসলিম হিসেবে জানে। ছোটবেলা থেকেই হিন্দুবাড়ির ছেলেমেয়েরা বলতে থাকে ‘ওটা মোল্লাপাড়া’। আর মুসলিম ঘরের বাচ্চারা বলতে থাকে ওটা ‘হিন্দুপাড়া’। একেবারে শৈশব থেকেই তারা একজন আরেকজনকে অবিশ্বাস ও ঘৃণা করতে শিখছে, ‘ধর্মবিশ্বাস’ নামক ভাইরাসে তারা একেবারে জন্ম থেকেই আক্রান্ত হচ্ছে

 

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের কীভাবে দেখাতে চান? আমরা জানি এই মুহূর্তের পেশাদারী রাজনীতির যুগে পৃথিবীর যে-কোনও রাজনৈতিক নেতার একেবারে পেশাদারী পরামর্শদাতা থাকে। তিনি কীভাবে হাসবেন, কোন পোশাক পরবেন, পাবলিকের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়াবেন বা পাবলিকের প্রতি তাদের অ্যাটিচুড কীরকম হবে সবকিছুই নির্ধারণ করেন পেশাদাররা। মোদ্দা কথা রাজনীতিবিদরা একেবারে পেশাদারী পরামর্শদাতাদের কথামতোই চলেন। একেবারে পরামর্শদাতা ছাড়া জ্যোতি বসুও কিন্তু শহুরে মধ্যবিত্ত বাঙালিদের চোখে আইডল হতে গিয়ে হয়ে যান জ্যোতিবাবু। কেটে কেটে পাবলিকের প্রতি অবজ্ঞার ভঙ্গিতে কথা বলা, খুব এলিট ক্লাসের কেউ না হলে তাকে কাছে ঘেঁষতে না দেওয়া এগুলি ছিল তাঁর স্টাইল। এ ব্যাপারে বিশিষ্ট মার্কিন গবেষক পল গ্রিনো তাঁর Indian Famines and Peasant Victims: the Case of Bengal in 1943–44 বইয়ে বাঙালির মানসিকতা নিয়ে লিখেছেন, ‘বাঙালি এমন শাসক পছন্দ করে যিনি দরকারে পদাঘাত করবেন আবার পরে সামান্য খাবার ছুড়ে দেবেন।’ জ্যোতি বসু কমিউনিস্ট পার্টির নেতা হয়ে উঠছেন যখন তখন ইন্দ্রজিৎ বা ভূপেশ গুপ্ত ছাড়াও ছিলেন রতনলাল ব্রহ্ম, বঙ্কিম মুখার্জি, মুজফফর আহমেদ, ছিলেন বিনয় চৌধুরি। এদের মধ্যে ইন্দ্রজিৎ বা ভূপেশ গুপ্ত বা জ্যোতি বসু ছিলেন বাবু সম্প্রদায়ের। সিপিআই-সিপিএম ভাগাভাগির পর জ্যোতি বসু জল মাপলেন কিছুদিন, পরে ভূপেশ গুপ্তের পরামর্শে বুঝলেন সিপিএম দলে বাবু সম্প্রদায়ের ব্যারিস্টার জাতীয় কেউ নেই। সুযোগ নিলেন এবং ভবিষ্যতের মূখ্যমন্ত্রীর পদের একমাত্র দাবিদার হলেন। বিনয় চৌধুরির মতো মানুষ আড়ালে চলে গেলেন। শহুরে মধ্যবিত্ত কমিউনিস্ট বাঙালির ভগবান হয়ে গেলেন জ্যোতি বসু। ঠিক তেমনি করেই চাষার ব্যাটা রেজ্জাক মোল্লা থাকতে চলে এলেন আর এক ইন্টেলেকচুয়াল ভগবান বুদ্ধদেব। ভগবান বুদ্ধদেবই, কেননা এক সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এলকে আডবানিকে উনি ‘গর্বিত বচনে’ জানিয়েছিলেন যে তাঁর পিতামহ কৃষ্ণচন্দ্র স্মৃতিতীর্থ ছিলেন এক পণ্ডিত ব্রাহ্মণ এবং ‘পুরোহিত দর্পণ’-এর রচয়িতা। অর্থাৎ আডবানি যেন মনে রাখেন উনি জাস্ট একজন কমিউনিস্ট নন, উনি অবশ্যই এক গর্বিত ব্রাহ্মণ। এরপর? এরপর এলেন দেবী দুর্গাবেশী মা মমতা। তিনি সবরকম শক্তি ও ক্ষমতার উৎস। ভোটে পরাজয়ের মুখোমুখি হয়ে বলতে পারেন, অন্য কাউকে নয় আপনারা আমাকে দেখুন। তিনি দেবী হিসেবে প্রমাণ করেছেন নিজেকে। নিজে দেবী হয়েছেন, কৃষ্ণের দেশ বাংলাকে উত্তর ভারতের রাম আর হনুমানের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। উত্তর ভারতের ‘রাম’-এর বিরুদ্ধের নিজের মতো করে ধর্ম সাজিয়েছেন। আর তিনি নিজেও যে কম ধার্মিক নন তা প্রমাণে সচেষ্ট থাকছেন। শুধু তাই নয়, সদ্য সদ্য বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অর্থাৎ অবশ্যই উত্তর ভারতীয় সংস্কৃতির ধ্বজাধারী আরও এক গর্বিত ব্রাহ্মণ। আর সিপিএম? হতাশ হয়ে আগে রাম পরে বাম করতে গিয়ে আম আর ছালা সব খুইয়ে কখনও মীনাক্ষি মুখার্জি কখনও দিপসিতা ধরকে মা দুর্গা অর্থাৎ ভবিষ্যতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রোজেক্ট করতে চাইছেন। হ্যাঁ, অবশ্যই নাগরিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিত ও হায়ার কাস্ট হিন্দু। নামে কমিউনিস্ট পার্টি, কোনও শ্রমিক বা কৃষক ঘরের মেয়ে নয়, শহুরে মধ্যবিত্ত নাগরিকদের কাছে গ্রহণীয় হতে হবে তো।

মমতা কিন্তু নিজেকে আরও বেশি শক্তিশালী দেবী হিসেবে বাংলার কোটি কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন। ক্ষমতায় থাকার আসল রাস্তা তিনি ধরে নিয়েছেন। ধর্মস্থান বানানো শুরু করলেন নতুন করে। পুরনো ও কম গুরুত্বের ধর্মস্থানগুলিকে আরও জাগ্রত করে তুলতে শুরু করলেন। শুরু করলেন নতুন আর এক ধর্ম-হুজুগ। বা নতুন আর এক ধর্ম-ব্যবসা। বাংলার ত্রিবেণী সঙ্গমে শুরু হচ্ছে কুম্ভস্নান। এবার চলো হাতের কাছের ত্রিবেনীতে। গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতী। এটার তারিখ তৈরি হবে নানান রকমের। এই এতদিনে জানা গেল কুম্ভস্নানের এই ত্রিবেণীর নাকি সাতশো বছরের ইতিহাস আছে। প্রয়াগ নাকি মুক্তবেণী আর ত্রিবেণী নাকি যুক্তবেণী। ত্রিবেণী নাকি দক্ষিণ প্রয়াগ। দক্ষিণের সাগর থেকে স্নানের পর সাধুরা নাকি ডুব দিতেন এই ত্রিবেণীর সঙ্গমে। কত কিছু যে অজানা থাকে মানুষের আর কত কী যে দরকারে ফের জেগে ওঠে ভুস কর!

কোন পুরাণে নাকি লেখা আছে ত্রিবেণীর মাহাত্ম্য নিয়ে অনেক কিছু। এবার তিন কি প্রতি এক বছরে একেবারে স্বর্গলোকের চাবি হাতে ধরিয়ে প্রবেশলাভের স্নানযোগ। এতদিন ধরে উত্তর ভারতের মহাকুম্ভ বারো বছরে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে চারটি শহরে অর্থাৎ হরিদ্বার, উজ্জয়ৈন, নাসিক আর প্রয়াগরাজে (এলাহাবাদ আর বলা যাবে না, ওই নামে ইতিহাসের তরফে মুসলমানের ছোঁয়া আছে) হত। এবারে পালা ছিল এলাহাবাদ থুড়ি প্রয়াগরাজের। কয়েক কোটি লোক এই সুযোগে স্বর্গের চাবিকাঠি পেয়ে গেল। জীবনের কাম-ক্রোধ-লোভসঞ্জাত যাবতীয় পাপ থেকে কয়েক কোটি লোক মুক্তি পেল। এর চেয়ে বড় কাজ আর কী-ই বা হতে পারে! এবার দেবরাজ ইন্দ্রের সেই মোহময় বাগানে নৃত্য-বাদ্য-সঙ্গীত আর উর্বশী-রম্ভাদের মতো সুন্দরী নারীদের সঙ্গ। না, ঠিক বললাম না, স্বর্গলাভের একটা অল্টারনেট আছে, ব্রহ্মে বিলীন হয়ে যাওয়া। আমার ধারণায় পুণ্যবান মানুষেরা পাপীদের মতোই প্রথম পথটাই বেছে নেবে। সারা জীবন কাম-চাহিদাকে চেপেচুপে রাখা কি এমনি এমনি? নরকের একটা রিস্ক থাকলেও অহেতুক ব্রহ্মে বিলীন হওয়ার চেয়ে স্বর্গে রম্ভা-উর্বশীদের সঙ্গে ফূর্তির সুযোগ নিঃসন্দেহে বেশি আকর্ষণীয়। সেই মহা সুযোগ এবার বাংলায়। হ্যাঁ, বাংলায়। গরিব-গুর্বো লোকগুলিকে সহজে পাপ-স্খালনের সুযোগ দেওয়া যাক একটা। বা বাংলাকে উত্তর ভারত বানানোর সুযোগই নেওয়া যাক আর একবার। সেই মহাভারতের যুগ থেকে পুবের বাঙ্গালীব্যাটারা উত্তর ভারতের জন্য দরজা খুলতে চাইছে না কিছুতেই। এতএব চলো ত্রিবেণী। বারাণসীর স্নান ছেড়ে এতএব সাধুদের আসা শুরু হয়ে গেছে। ধর্মের ক্ষেত্রে বাঙালিকে আর পিছিয়ে থাকতে দেওয়া যাবে না, বাঙালি অবশ্য পিছিয়ে থাকতে চায়ও না। দীঘায় একেবারে সরকারি ব্যবস্থাপনায় তৈরি হয়েছে জগন্নাথদেবের মন্দির। পুরীকে বাঙালির আরও কাছে নিয়ে আসা হল। পুরীতেও যেমন সমুদ্র ও জগন্নাথদেব পাশাপাশি, এখানেও। কিন্তু কমিউনিস্টরা কোথায়? তারাও কি ‘জয় জগন্নাথদেব’ বলে হাঁক পাড়া শুরু করল, না কি প্রয়াগরাজের পর এবার ত্রিবেণীতে স্নানে ব্যস্ত?

বাংলায় এতদিন হিন্দুদের প্রধান ধর্মস্থান ছিল গঙ্গাসাগর, তারকেশ্বর, তারাপীঠ, কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বর, বেলুড়। একটু অপ্রধানদের মধ্যে ছিল মায়াপুর, নবদ্বীপ, কামারপুকুর, চাকলা, গিধনি, কঙ্কালীতলা। প্রধান-অপ্রধানের বিচার এখানে হয়েছে বাঙালির ফাঁক পেলেই ধর্ম করার জায়গা পছন্দ করার ট্রেন্ড দেখে। এদের মধ্যে বেলুড়ের পজিশন একটু অন্যরকম, একটু এলিট শ্রেণির, একটু গম্ভীর। সেটা আবার কামনা-বাসনা মুক্ত শিক্ষিত সন্ন্যাসীদের আখড়া, সেখানে আবার কুমারী পূজা হয়, অনূর্ধ্ব সম্ভবত বারোর অরজঃস্বলা কুমারীদের ওখানে দেবীজ্ঞানে পুজো করা হয়। এ পূজা নাকি স্বয়ং মহামানব বিবেকানন্দ চালু করেছিলেন। এ পূজার সুতরাং বিশাল ক্রেজ। কিন্তু ৩৪ বছরের বাম শাসনে বা পরবর্তীকালে প্রগতিশীল কমিউনিস্টদের কোনও প্রতিবাদ ছিল এই অনাচার নিয়ে? এই পূজাপদ্ধতি কি স্পষ্টই এক মানবাধিকার লঙ্ঘন বা বিকারগ্রস্তদের অবদমিত যৌনবিকৃতি নয়?

‘গাজোয়াতুল হিন্দ’ বলে কোনও কিছু শুনেছেন কোনও দিন? কালো পোশাকে ঘোড়ার পিঠে চড়ে আসবেন ইমাম মাহেদি। ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে সঙ্ঘটিত হবে একটি যুদ্ধ, যেখানে মুসলমানদের বিজয় ঘটবে। এটি ইসলামের সর্বশেষ নবি মুহাম্মাদের একটি ভবিষ্যদ্বাণী। কোরান না হাদিসে নাকি আছে। এইসব আজগুবি কথা যদি লেখাও থাকে কোনও কিতাবে তা এই যুগে বিশ্বাস করবে কেউ? কিন্তু করে তো! হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষ শুধু বিশ্বাস করে না, অপেক্ষাও করে। একেবারে সেই ‘নেতাজি আসছে, নেতাজি আসছে’ বলে এক যুগের গ্রাম-শহরের আপামর হিন্দু বাঙালির মতো।

ধর্মের নামে উদ্ভট ও আজগুবি কথা বলে অশিক্ষিত মানুষদের প্রভাবিত করা এটা বহু যুগের রাজনীতির লোকদের স্টাইল। গণেশের মুণ্ডুতে হাতির মুণ্ডু বসিয়ে যে অপারেশন তা যে প্রাচীন ভারতের চিকিৎসাবিজ্ঞানের মহান উদাহরণ তা তো আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নিজের মুখের বলা। তারপর আছে মাটির জালায় কৌরবদের জন্মে সেই টেস্ট-টিউব বেবির গল্প। আছে আরও কত মণিমুক্তো। না, এসব নিয়ে কিন্তু বলা যাবে না কিছু, বললেই মহামান্য হাইকোর্টের কাছে সেটা হবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত।

পাবলিকের সায় পেয়ে ধর্মস্থানের সংখ্যা কত বাড়ছে খেয়াল করেছেন কোনও দিন? না, আমি শুধু মমতা বা মোদির দেবত্বে উন্নীত হওয়ার কথা বলছি না। সরকারি রেলের প্ল্যাটফর্মে একেবারে প্ল্যাটফর্ম দখল করে পুরনো দেবতাদের নামেই একেবারে স্থায়ী মন্দির। পাড়ায় পাড়ায় গলি আর রাস্তায় হনুমান মন্দির, না, শনিমন্দিরের সেই সুদিন আর নেই, ঠাকুর হিসেবে হনুমান শনির চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন। আগে কেরানিকুলের ডেলিপ্যাসেঞ্জাররা ট্রেনের কামরা থেকে শুধু দক্ষিণেশ্বরের দিকে কপাল তাক করে একশো বা হাজারবার প্রণাম ঠুকতেন, এখন ঘর থেকে বেরোতে না বেরোতেই হনুমান আর হনুমান আর বড়জোর মা-কালী আর বাসস্ট্যান্ডের শেড থেকে বাথরুম সর্বত্র যার অনুপ্রেরণায় জন্ম-মৃত্যু-বিবাহ অর্থাৎ মাতা মমতা।  রাস্তায় এখন কপালে তিলক কাটা মানুষের ছড়াছড়ি। বছর আঠারো-বিশের তরুণ-তরুণী কপালে তিলক বা রসকলি কেটে বা ছেলে হলে পেছনে টিকি রেখে বেশ স্মার্ট ভঙ্গিতেই হেঁটে যাচ্ছে দেখতে পাই। আগে শুধু শিবরাত্রিতেই তরুণী-বধূ বা বৃদ্ধাদের ভিড় পড়ত গঙ্গাপাড়ের শিবমন্দিরগুলিতে, এখন যোগ হয়েছে চৈতন্যের মেলা। সেই কোন যুগে নাকি ‘ভগবান’ চৈতন্য তাঁর কোন ভক্তের মান ভাঙাবার জন্য নিজের হাতে চিঁড়ে খাইয়েছিলেন। সারা বাংলায় অবশ্য এই টাইপের মেলার অভাব নেই কোনও। কোন অবতার কোনখানে কাকে দেখে হেসেছিলেন, কোন নিম্নশ্রেণির মানুষের পা ধুইয়ে দিয়েছিলেন, কবে অসংখ্য অন্ত্যজ মানুষের (আসলে বৌদ্ধ বা মুসলমান প্রজাদের) হিন্দু ধর্ম বা সনাতন বা বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত করেছিলেন। প্রজা বললাম, কেননা প্রতাপশালী হিন্দু জমিদার দেবত্বের মহিমা লাভের জন্য জোর-জবরদস্তি থেকে লোভ দেখানো কিছুই কি আর বাকি রাখেন? পরের প্রজন্মে এই সবই তাঁর মাহাত্ম্য হয়ে দাঁড়ায়। মুসলমানরাও বা বাদ যান কোথায়? বিশ-পঁচিশ বছর আগে এত বোরখা বা হিজাব-নিকাবের ছড়াছড়ি দেখেছেন? না। বা এত আজানের মাইক? আজানের উচ্চারণমাত্র দোকান-পসার চুলোয় পাঠিয়ে নামাজের জন্য এত হুড়োহুড়ি? বা এত শুন্নতি দাড়ি? ভাল কথা, নামাজের হুড়োহুড়ির কথা উঠল যখন তবে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের কথা একবার বলে নেওয়া যাক। ২০২২ সালের ২৯ জুলাই এক রেল অ্যক্সিডেন্টে সেখানে ১১ জনের মৃত্যু হয়। রেলের এক গেটম্যান সাদ্দাম হোসেন নামাজের সময় হয়ে গিয়েছে জন্য গেট খোলা রেখে নামাজে চলে যান আর এই সময় এক মাইক্রো বাস রেললাইনে ঢুকে পড়লে চলন্ত ট্রেনের ধাক্কা খায়। সেই গেটম্যান গ্রেফতার হয়েছিলেন কিন্তু শাস্তি পেয়েছিলেন কিনা জানা নেই। যে দেশে নামাজের সময় হলেই রাস্তায় যে কোনও বাস-রিক্সা-প্রাইভেট থামিয়ে নামাজের জন্য রাস্তায় বসে পড়াটা কোনও অযৌক্তিক কাজ নয়, সেখানে গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনের শাস্তি পাওয়ারও কথা নয়। বাংলাদেশের দেওয়ালে দেওয়ালে লেখা থাকে ‘কাজকে বলো, নামাজ আছে’। আর যে সব ধর্মগুরু বা ওয়াজি হুজুরদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ এত কদর্যভাবে ধর্মান্ধ হতে পেরেছে সেই মামুনুল হক, মিজানুর রহমান আজাহারীরা এখন ইউটিউবের কল্যাণে এপার বাংলার ঘরে ঘরে। কিছুদিন আগেকার আর এক অন্ধতার প্রবক্তা জাকির নায়েককে সরিয়ে এখন এইসব মামুনুল হক বা মিজানুর রহমান আজাহারীরা জায়গা করে নিয়েছে। মুসলিম-হিন্দু মিলিয়ে বাঙালি ক্রমে আরও আরও ধার্মিক হয়ে উঠেছে। ভাল কথা, মুসলমানদের মিলাদ বা জলসা শুনেছেন কোনও দিন? ওয়াজের নামে সেখানে নারীদের যে কী কুৎসিত ভাষায় অসম্মানিত করা হয় তা শুনলে যে কোনও সভ্য মানুষ কানে হাত দেবেন। আর আছে ভিন্ন ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ। অজস্র বানানো মিথ্যে। মুসলিম সমাজের মাথারা রীতিমতো পরিকল্পনা করেই যেন তাদের ধর্মীয় সম্প্রদায়কে আধুনিক শিক্ষায় অজ্ঞ রাখতে চায়। সবার জন্য বিনা পয়সার সাধারণ প্রাইমারি স্কুল বা মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক স্কুল থাকা সত্ত্বেও উৎসাহ দেবে মাদ্রাসায় পাঠাতে। মাদ্রাসায় পাঠিয়ে নিজের সন্তানকে মৌলবী বানিয়ে নিজের চৌদ্দ গোষ্ঠীকে জান্নাতে পাঠাবার সুযোগ করে দিতে। কী আছে জান্নাতে? আছে বাহাত্তর সংখ্যায় হুর। জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া পুণ্যবানেরা সেখানে সেই একেবারে হাড়গোরহীন অনন্ত যৌবনের মানে অনূর্ধ্ব ষোলোর হুরদের সঙ্গে অনন্তকাল যৌনকেলী করবে। হ্যাঁ, এই সব হাস্যকর কথা তারা জানেমানে বিশ্বাস করে। কী আশ্চর্য দেখুন সব ধর্মেই আকাঙ্ক্ষিত স্বর্গে পুরুষদের জন্য রগরগে পর্নোগ্রাফি অপেক্ষা করে কেমন।

‘Religion is a virus.’ বলেছিলেন রিচার্ড ডকিন্স। বাবা-মায়ের থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তাদের সন্তান-সন্ততিতে। এই ভাইরাসের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার উপযুক্ত কোনও ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি এখনও। এই ভাইরাস মানুষকে অজ্ঞতার অন্ধকারে ডুবিয়ে মারে, বা এক ধরনের আত্মহত্যার প্রবণতাই তৈরি করে মানুষের মনে। এই মুহূর্তে আফ্রিকা ও এশিয়া বলা যেতে পারে এই ধর্ম নামক ভাইরাস-আক্রান্তদের একেবারে ঘনবসতিপূর্ণ আবাসস্থল। ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, সিরিয়া, সৌদি আরব হয়ে পাকিস্তান, ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ আরও অনেক অনেক। এই দেশগুলি অবশ্য নিরাময়ের অযোগ্য বলেই ঘোষিত। এইসব দেশের জাতিগোষ্ঠীগুলি ভয়ঙ্করভাবেই আত্মহত্যাপ্রবণ।

এলাহাবাদ বা প্রয়াগরাজের সাম্প্রতিক কুম্ভমেলা নামক আয়োজনটির কথাই ভাবুন। স্বর্গ আর পাপস্খালন নিয়ে কত না চটকদার গপ্পো, এই সব গপ্পো প্রচারের কত না পুস্তক। ধাপ্পাবাজদের ছলের অভাব নেই কোনও। যুগের পর যুগ স্রেফ আয়-ইনকাম আর মানুষকে মূর্খ রেখে নিজেদের অর্থাৎ ব্রাহ্মণ্যবাদীদের পাঁয়তারা কষার জন্য কতই না বেদ-উপনিষদ-পুরানের রেফারেন্স! প্রয়াগরাজের এবারের মহাকুম্ভে সব, অর্থাৎ এই উপলক্ষে সব ধরনের আর্থিক লেনদেন বিবেচনা করে উত্তরপ্রদেশ সরকারের রাজস্ব আদায় হবে মোটামুটি দুই লক্ষ কোটি টাকা, যা উত্তরপ্রদেশের জিডিপি-র অন্তত ১ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটাবে। ওদিকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সমাবেশ আরবের হজ সমাবেশে গত ২০২৪ সালে সবরকম আর্থিক লেনদেন মিলিয়ে সৌদি সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে সতেরো হাজার কোটি মার্কিন ডলার যা নাকি ২০৩৪ সালে গিয়ে দাঁড়াবে চৌত্রিশ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে। পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রের বার্ষিক বাজেটের চেয়েও বেশি।

ভারতের কেরলের পদ্মনাভেশ্বর মন্দিরের অ্যাসেটের পরিমানই ৯০০০০ কোটি টাকা, এরপর আছে প্রতি বছর পুণ্যার্থীদের থেকে নানান ফন্দিফিকির করে আদায় বা মন্দিরকেন্দ্রিক ব্যবসা। তার হিসেব সীমাহীন। পুরো দক্ষিণ ভারত মিলে এমনি অন্তত গোটা ত্রিশেক মন্দির আছে, মন্দিরের দেবতারা হাজার হাজার কোটি টাকা শুধুই হাত পেতে নেন, আর দেওয়ার বেলা দিব্বি ঘুমিয়ে পড়েন। না, তাতে অবশ্য ভক্তবর্গের কাছে দেবতাদের মাহাত্ম্য কিছুমাত্র ক্ষুন্ন হয় না। এইসব দেবতাদের এই বিশাল আয় কোথায় যায়, কার স্বার্থে কাজে লাগে এই নিয়ে তাঁরা মাথা ঘামান না। কেরলের পদ্মনাভ মন্দির কিন্তু কেরলেরই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রাপ্য সামান্য জিএসটি দিতে চায়নি। ২০১৭ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত কেন্দ্র ও রাজ্যের পাওনা জিএসটি আর কেরলের বন্যায় ত্রাণের জন্য চাওয়া মাত্র এক কোটি আটাত্তর লক্ষ টাকা দিতে কতই না গড়িমসি। ধর্মের নামে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা এবং কোনও সন্দেহই নেই জিএসটি হিসেবে যে সামান্য ১ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা দেখানো হয়েছে তা একেবারে বাইরের যে কোনও ব্যবসা-সংস্থা যেভাবে দক্ষ অ্যাকাউন্টেন্ট রেখে কর ফাঁকি দেয় বা দেওয়ার চেষ্টা করে ভগবান নিজেও হেঁটেছেন সেই একই রাস্তায়।

দক্ষিণ ভারতের মন্দিরগুলি বাদে ভারতের বাকি ধনী মন্দিরগুলির দিকে তাকানো যাক। বিখ্যাত তিরুপতির মন্দিরের ২০২৩ সালে আয় হয়েছিল ১০০০ কোটি টাকার ওপর, সিরদি সাঁইবাবার মন্দিরের আয় হয়েছিল ৯০০ কোটি টাকার ওপর। পুরীর মন্দিরের আয় হয়েছিল ২৭১ কোটি টাকার ওপর। মনে রাখতে হবে এটা কিন্তু রাজ্য সরকারের আয় নয়, এই আয় যায় মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের কাছে। আর সরকার এই ট্রাস্টি বোর্ডের দিকে একেবারে ‘চোখ বন্ধ’ করে তাকিয়ে থাকেন, ধরে নিন, যেমন ইচ্ছে দুর্নীতি করতে দেন। এখান থেকে সরকারের লাভ তিনভাবে। এক, এই ট্রাস্টি বোর্ড একেবারে অন্ধভাবে সরকারি দলের স্তুতি করে, ধর্মীয় সাপোর্ট দিয়ে ইলেকশনে জেতার সুবিধা করে দেয়। দুই হল, মানুষকে অন্ধ আর মূর্খ রাখতে পারে, আর তিন হল, মন্দিরকেন্দ্রিক ব্যবসা। এক-একটি মন্দিরের জন্য চারপাশের অনেকটা জায়গা জুড়েই চাঙ্গা থাকে অর্থনীতি। লাভ বলতে এটাই। এ ছাড়া? মানুষ যে অত দূর-দূরান্ত থেকে নানান প্রত্যাশা নিয়ে আসে, নানান পুরাণ বা লৌকিক গল্পে বিশ্বাস করে মোক্ষলাভ বা অন্তরে লালিত কোনও গোপন আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য আসে কী হয় তাদের? কী আর পাবে, এত কিছুর পর ধর্ম আর মোক্ষর নামে ছলনা বা প্রতারণা ছাড়া আর কী পেতে পারে?

অযোধ্যায় রামমন্দিরের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য তো ব্যবসাই। জানি আপনারা রাজনীতির কথাই বলবেন। রাজনীতি তো আছেই, যেমন থাকে ব্যবসার হাতধরাধরি করে। রাজনীতি আর ব্যবসা আবার পৃথক রাস্তায় চলে কোথায়? ডোনাল্ড ট্রাম্প আর ইলন মাস্ককে দেখুন বা মোদি ও আদানি। পুরীর মন্দিরের কথা ভাবুন কী বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আসে সেখান থেকে। পুরীর বা ওড়িশার লাগোয়া আমাদের পশ্চিমবঙ্গের দুই মেদিনীপুর। এখানকার সংস্কৃতির সঙ্গে ওড়িশার সংস্কৃতির মিল খুব। এখানকার মানুষও খুব জগন্নাথপ্রেমী। সুতরাং জগন্নাথকে নিয়ে আসো এখানে। বানাও মন্দির। বানানো হল দীঘায়। তাহলে বেশ নতুন শিল্প হল আর একটা। মোদির রামমন্দিরই হোক বা মমতার দীঘার মন্দির— সব মন্দিরের উদ্দেশ্য কিন্তু দ্বিবিধ। দীঘার মন্দির নির্মাণে খরচ হচ্ছে অন্তত দুশো কোটি টাকা। একদিকে স্থানীয় বেকার সমস্যার কিছু সুরাহা, অন্যদিকে রাজনৈতিক মুনাফা। মানুষ এখন ভাতের চেয়ে ধর্মের গুরুত্ব দেয় বেশি। ধর্ম দেবেন যিনি ভোট পাবেন তিনি। কেননা তিনি আমাদের লোক। উত্তর ভারতকে মোদি দিয়েছেন রামের জন্মভূমি আর মেদিনীপুরকে অর্থাৎ বাংলাকে মমতা দিয়েছেন জগন্নাথদেবের জাগ্রত এক মন্দির।

এখন আমাদের বাংলায় এই যে তীর্থস্থানগুলি সংস্কার ও নতুন তীর্থস্থান গড়া হচ্ছে তা অবশ্য শিল্পের নামেই, ধরা যাক মন্দিরশিল্প বা ধর্মভিত্তিক শিল্প। ক্ষতি কী? রাজস্ব আসছে, স্থানীয় মানুষ ব্যবসা করছে। আর বাড়ছে অজ্ঞতা, বাড়ছে নেশা, ধর্মের নেশা। বাড়ছে মানুষে মানুষে ঘৃণা। বাড়ছে আমার দলের প্রতি আনুগত্য, আর কী চাই!

মোদির তাত্ত্বিক ভিত্তি বিবেকানন্দ বা শ্যামাপ্রসাদ হয়ে থাকলে তার পালটা রামমোহন বা বিদ্যাসাগর তো আমাদের বাংলাতেই ছিলেন। না, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পছন্দ শুধুই বিবেকানন্দ। বড়জোর নিবেদিতা বা মা সারদা আর রামকৃষ্ণ। হ্যাঁ, রবীন্দ্রনাথকে নেওয়া যেতে পারে, নোবেল ছাড়া ওঁর ধর্ম বিষয়ে— তা যেরকমই হোক— নানান কথা আছে। আর কিছুতেই কিন্তু নাস্তিক বা অবিশ্বাসী ছিলেন না উনি। খুবই দুর্ভাগ্যের যে রামমোহন, বিদ্যাসাগর বা সত্যেন বোস বা জগদীশচন্দ্রের সঙ্গে ধর্ম নামক ভাইরাসের কোনও যোগ নেই। হ্যাঁ, এটা তো তাঁদের দুর্ভাগ্যই। ওঁদের শরীরে ধর্ম নামক ভাইরাসের আক্রমণ কিছুমাত্র হয়ে থাকলেও তাঁরা জনগণের নেতা মোদি-মমতাদের হৃদয়ে স্থান পেতেন। একেবারে মহামানব বিবেকানন্দ বা রামকৃষ্ণের মতো।

রাজনৈতিক নেতাদের কল্যাণে সবাই নিজের নিজের আলাদা পরিচয় তৈরি করে বলছে আমরাই শ্রেষ্ঠ। হিন্দুদের বেদ-পুরাণে যেমন আধুনিক জ্ঞান ও বিজ্ঞানের সবকিছু আছে তেমনি আছে কোরানে। গ্রাম-গঞ্জে বৃদ্ধি পেয়েছে এজতেমা, বেড়েছে তবলিগে যাওয়ার তাগিদ। সেখানে দিন কয়েকের জন্য দলে দলে গিয়ে নামাজ-না-করা মানুষদের বোঝাতে হবে, তাদের মসজিদমুখী করতে হবে। একজন শিশুও সেখানে মানুষ বা ভারতীয় বা বাঙালি না হয়ে নিজেকে মুসলিম হিসেবে জানে। ছোটবেলা থেকেই হিন্দুবাড়ির ছেলেমেয়েরা বলতে থাকে ‘ওটা মোল্লাপাড়া’। আর মুসলিম ঘরের বাচ্চারা বলতে থাকে ওটা ‘হিন্দুপাড়া’। একেবারে শৈশব থেকেই তারা একজন আরেকজনকে অবিশ্বাস ও ঘৃণা করতে শিখছে, ‘ধর্মবিশ্বাস’ নামক ভাইরাসে তারা একেবারে জন্ম থেকেই আক্রান্ত হচ্ছে।

সিপিএম হাজার চাইলেও জ্যোতি বসুর মতো ভগবান নির্মাণ করতে পারছে না কিছুতেই। বা ইন্টেলেচুয়াল বুদ্ধ। ভুলে ভরা সিপিএম এতদিনে বাঁকুড়ার দেবলীনা হেমব্রমকে খুঁজে পেয়েছে। যে কাজ এক সৎ কমিউনিস্ট দল হিসেবে তারা ত্রিশ বছর আগে করতে পারত সেই কাজ করল একেবারে অন্তিম যাত্রার সময়ে, অনেকটা উপশ্বাস ওঠা এক ব্যক্তির কানের সামনে গীতা পড়ছে কেউ আর এই অবস্থায় চামচে করে গঙ্গাজল ঢালা। তবে কি তারা দিপসিতা বা মীনাক্ষির কথা ভুলে গেল? আরে না, দেবলীনা থাকছে শুধু আদিবাসী ভোট ফিরিয়ে আনার জন্য। ওই মমতার যেমন আছে না অমনি দু-চারজন আদিবাসী মেয়ে। দেবলীনা থাকবে ওই বাঁকুড়া জেলাতেই, শহরের নাগরিক ও ভদ্র কমিউনিস্টদের জন্য আছে মীনাক্ষি বা দিপসিতারা। আসল কথাটা হল শহুরে হিন্দু মধ্যবিত্তদের কাছে দেবতা বা দেবী না হতে পারলে বাংলায় রাজনৈতিক মহামানব বা মহামানবী হওয়া মুশকিল। দেবলীনা হেমব্রমের সে চান্স নেই।


*মতামত ব্যক্তিগত