বিশ্বদীপ চক্রবর্তী
পূর্ব প্রকাশিতের পর
চড়ুইবেলা
তিন.
রেখাকে ছেড়ে মোড় ঘুরতেই তিন-চারটে সাইকেল এসে শানুর যাওয়ার রাস্তা আটকে দাঁড়াল। আচমকা এরকম কিছুর জন্য তৈরি ছিল না শানু। একটা স্বপ্নের দুনিয়ায় ছিল। হঠাৎ ঝনঝন শব্দে স্বর্গীয় দিনটা নেমে এল পৃথিবীর মাটিতে। ছেলেগুলোকে আগে দেখেছে বলে মনে হল না। একটা ছেলেকে চেনা চেনা লাগছে, কিন্তু নাম মনে করতে পারল না ঠিক।
—কী রে, খুব লক্কা পায়রা হয়েছিস না কি রে বে?
প্রতিটা শব্দে কর্কশতা ভরে দেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা থাকলে যেমন হয় সেরকমভাবে বলল ছেলেটা। রক্তলাল জামার উপরের দুটো বোতাম খোলা, হাতা গুটোনো থাকায় ডান কব্জিতে স্টিলের মোটা বালাটা রোদে চকচক করছে। বাঁ কবজিতে কালো কার বাঁধা।
—উড়ছে, মাল খুব উড়ছে আজকাল।
—পায়রা না বে ঘুড়ি, ভোক্কাটা হবার জন্য লটপট করছে একদম। খিকখিকে হাসিটা সংক্রামক রোগের মতো সবার গোঁফের নিচে জায়গা নিচ্ছিল।
এগুলোর কোনওটাই উত্তর পাওয়ার জন্য ছোড়া প্রশ্ন নয়। যদিও ঘাবড়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। শানু কী করবে বুঝতে পারছিল না। এদের কী উদ্দেশ্য বোঝা যাচ্ছে না। মারধর করবে নাকি? চোখের কোনায় দেখার চেষ্টা করল শানু, পালাবার কোনও পথ আছে কিনা। যদি কোনওমতে একবার সাইকেল ঘোরাতে পারে আর পাঁই পাঁই করে প্যাডেল করে, পারবে কি ওদের হাত থেকে পালাতে? সেই সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তাই শানু মুখ বুজে শোনাটাই শ্রেয় বলে বিচার করল।
—কিরে মুখে দুদু গুজে বসে আছিস নাকি, কথা বের হচ্ছে না? গলায় সাদা লাল চেককাটা রুমাল জড়ানো ছেলেটা ইচ্ছে করে নিজের সাইকেলের চাকা এগিয়ে এনে শানুর সাইকেলে ধাক্কা মারল।
—তোমরা কী বলছ, কেন বলছ আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। নিজের গলা নিজের কানেই খুব অপরিচিত শোনাল শানুর। তবু কিছু বলতে পেরে ভাল লাগল।
—উলে বাবা, আমি তো কিচু করিনি, কিচু জানি না, শুধু মাগীবাজি করে ঘুরে বেড়াই। সবুজ জামা পরা তৃতীয় ছেলেটা হাত দিয়ে একটা বিশ্রী ভঙ্গি দেখাল শানুকে। শানুর কান লাল হয়ে যাচ্ছিল। রেখাকে নিয়ে কিছু ইঙ্গিত করছে এই ভাবনাটা মাথায় জায়গা বানাচ্ছিল।
যে ছেলেটাকে চেনা চেনা লাগছিল সে এতক্ষণ কিছুই বলেনি। এবার চিউয়িং গাম চেবাতে চেবাতে রাস্তার মাঝখানে নিজের সাইকেল স্ট্যান্ড করে সামনে এগিয়ে এল। চওড়া কপাল, উল্টানো ত্রিভুজের মতো মুখে লেনিনমার্কা দাড়ি, পুরু ঠোঁটের উপর ছড়ানো নাকটা রাগে ফুলে উঠেছে যেন। কথা বলল যখন হাতুড়ি দিয়ে ছেনি ঠোকার মতো। চিনিস আমাকে?
মাথা নাড়ল শানু।
ঠাস করে গালে এক চড়। আজ থেকে চিনবি। আমার নাম বীরু। নাম ভুলে গেলে আয়নায় গালটা দেখে নিবি। পাঁচ আঙুলের ছাপ অনেকদিন থাকবে।
রাস্তায় অনেক লোক। হুজ্জোত হচ্ছে দেখে কেউ থামেনি, কিন্তু ফ্রি শো দেখার মতো ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে দেখতে চলেছে। গালে চিড়বিড়ানি ব্যথার সঙ্গে অপমানে শানুর পা থেকে মাথা অবধি কাঁপছিল। কেন মারছ আমাকে? কী করেছি? একটা জন্তুর চিৎকারের মতো শব্দগুলো বেরিয়ে এল শানুর গলা চিরে।
—এই বাঁড়া, দেব নাকি এটা গুজে? গলায় রুমাল জড়ানো ছেলেটা হাতে একটা ছুরি নিয়ে ঝপাস করে শানুর সামনে এসে দাঁড়াল। ভাবটা যেন এখুনি বসিয়ে দেবে, বীরু ডান হাত তুলে থামাল। শানুর মুখ কাগজের মতো সাদা হয়ে গেছিল।
—তুই দুর্গাপুর সিনেমায় কী করেছিলি রে?
—কবে?
—শালা রেন্ডি নিয়ে সিনেমা হলে কচলাকচলি করার কথা ভুলে গেলি বাঞ্চোত। ভেবেছিস আর কেউ জানতে পারবে না? লাল সাদা রুমাল হাত এখন শানুর জামার কলারে। জামাটা চেপে বসেছে গলায়।
বীরু আবার তার ডান হাত তুলে থামাল। থাম হাবুল, এখনই না।
—নে, চুসকি নে যত খুশি। তোর ইঞ্জিন গরম হলে হালকা হতে যাবি, আমাদের কী তাতে বল। হাবুল ছুরিটা নামিয়েছে, কিন্তু ঢোকায়নি।
—কী হয়েছে বীরুদা? আমি কী করলাম?
ওরা তিনটেতে মিলে খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসি শুরু করল। দ্যাখ দ্যাখ চোদনাটাকে, এদিকে বিচির দোষ অথচ ভাবটা যেন কিচ্ছু জানে না। বলেই বাঁ হাতে খপ করে প্যান্টের উপর দিয়ে নুঙ্কুটা খাবলে ধরল হাবুল বলে ছেলেটা। আর ডান হাতে পেটে একটা ঘুষি। শানু ব্যথায় পেট চেপে রাস্তায় বসে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে লাল জামা পরা ছেলেটা মারল পাছায় এক লাথি। শানু মাটিতে পড়তেই বীরু ওর ডান পাটা শানুর বুকের উপর চেপে ধরল। যা বলছি কান খাড়া করে শোন। তোকে যেন আর কোনওদিন রেখার ধারেকাছে না দেখি। তাহলে একদম গুজে দেব। ভাবিস না, এটা আমার ফাঁকা আওয়াজ। ফালতু হুমকি বীরেন চ্যাটার্জি দেয় না। তুলে নিয়ে কোথায় গাপ করে দেব সারা জীবন কেউ তোর টিকি খুঁজে পাবে না বুঝেছিস? বলেই আবার এক লাথি। তারপর শানুর জামার কলার ধরে মাথাটা উপরে তুলল আর চোখের চোখের উপর চোখ রেখে ঘড়ঘড়ে গলায় বলল, রেখা আমার। ছোটবেলা থেকে ওর চারপাশে গণ্ডি কেটে রেখেছি আমি। তুই কে রে রেখার কাছে আসার। কলারটা ছেড়ে দিতেই ধুম করে রাস্তায় পড়ে মাথা ঠুকে গেল শানুর।
—টুঁ শব্দ যেন না হয়। রেখার কাছে একটা খবর গেলে তোর রেন্ডিবাজির খবর চাউর করব আমি। প্রথমে তোর বাপকে দিয়ে ক্যালানি খাওয়াব। তারপর আমি।
—বীরুদা অত কথায় কাজ কী। আজকেই এটাকে ভাল করে সাইজ করে দিই।
—আজ থাক। নিজের বাপের হাতে ধোলাই খাক না, কথায় কাজ হলে আমরা কেন হাত ময়লা করব। চোখ সরু করে সার্চলাইটের মতো ওর বুকের কন্দরে কন্দরে ভয় ভরে দিচ্ছিল বীরেন। দেখেছিস তো আমাদের কাছে সব খবর থাকে। তুই কোথায় কখন চুসকি মারতে যাবি, সব খবর আমার কাছে আসবে। মনে রাখবি, বীরেনের অনেক জোড়া চোখ সবসময়ে তোর উপরে। যদি আর একবারও তোকে রেখার বাপের কাছে পড়তে যেতে দেখি, কী কোনওভাবে ওর ত্রিসীমানায় দেখি, তোর বাপকে তো সব বলবই, তোরও শালা খাল খিঁচে নেব একেবারে।
—তোর জানে তমান্নাকেও ফুস করে দেব। রেন্ডির সঙ্গে কচলাকচলি করতে গেছিলি শুনলে তোর রেখাও দেখবি জামা খুলে দাঁড়িয়ে যাবে।
বীরেন লাফিয়ে পড়ে ঠাস করে লাল জামা পরা ছেলেটার গালে চড় মারল। হিসহিস করে উঠল সাপের মতো। রেখাকে নিয়ে একটা কথা বললে জিভ খিঁচে নেব একেবারে!
লাল জামা পরা ছেলেটা প্যাংলা, প্রায় ঘুরে পড়ে গেছিল। হাত-পা ঝেড়ে উঠে দাঁড়াল যেন কিছুই হয়নি। দাঁত বের করে মাড়ি দেখিয়ে হাসল, বীরুদা, বড্ড সেন্টু খেয়ে যাও তুমি। শানুকে বলল, দেখলি তো, বীরুদার রাগ। তোকে এখনও ছিঁড়ে খেয়ে ফেলেনি তোর বাপের ভাগ্যি। সিধা বাড়ি চলে যা এখান থেকে। আজকের কথা কেউ যদি জানতে পারে, একেবারে টপকে দেব।
যেভাবে এসেছিল আবার ফিরে গেল ছেলেগুলো। হাবুল ছেলেটা যাবার সময় ওর থুতনি নেড়ে শাসাল, আর যদি কোনওদিন কোনও মেয়ের সঙ্গে গাঁড়ঘষাঘষি করতে দেখি না— কী হবে সেটা ঊহ্য রেখে হাম তুম এক কামরে মে বন্ধ হো গানের শিস দিতে দিতে সাইকেলে উঠে গেল সুবল।
শানু ওখানে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল কে জানে। হয়তো কয়েক মিনিট, কিংবা কয়েক মুহূর্ত মাত্র। পৃথিবীটা এক লহমায় ওলটপালট হয়ে গেছে। মাথাটা ফাঁকা। রাগ, দুঃখ, ভয়, ঘৃণা আর সবার উপরে অনুতাপ এই সমস্ত অনুভূতিগুলো সেই ফাঁকা মাথায় একসঙ্গে ছোটাছুটি করছে। সব ছাপিয়ে রেখার সঙ্গে কীভাবে আবার দেখা করবে সেই কথাটা ওকে অস্থির করে তুলল। কোনওমতে বাড়ি ফিরে সাইকেলটা রাখতেই সুতপা জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে রে শানু?
—কোথায়? কিছু হয়নি তো। জোরে জোরে মাথা ঝাঁকাল শানু।
—মুখটা এমন ফ্যাকাশে লাগছে কেন? তোর হাত-পায়ে এত ধুলো কেন আজ? প্যান্টের হাঁটুতে ঘাস লেগে আছে। তুই কি খেলার মাঠে গেছিলি নাকি?
শানু নিজের পায়ের দিকে তাকাল। অজয়ের পাড়ে মাটিতে বসেছিল, ভাল করে ঝাড়া হয়নি। সঙ্গে রাস্তায় ছিটকে পড়ার ধুলো। তাড়াতাড়ি কথা ঢাকল, হ্যাঁ আজকে স্কুলের ফুটবল ম্যাচ ছিল। আমি মাঠে বসে খেলা দেখছিলাম।
—এখন কি তোমার এসব খেলা দেখার সময় শানু? এত দেরি করে বাড়ি ফিরছ, আজকে তোমার ম্যাথ টেস্ট নেব বলেছিলাম না। ঘাড় ঘুরিয়ে পরমেশকে দেখে ঘাবড়ে গেল শানু। সব সময়েই মনে হচ্ছে, ওই ছেলেগুলো হয়তো এখনই বলে দিয়েছে। বাবা এখুনি ঝাঁপিয়ে পড়বে ওর উপরে।
—দাঁড়াও স্কুল থেকে ফিরেছে, দুটো মুখে দিয়ে নিক আগে।
সুতপা পরমেশকে নিরস্ত করার উদ্যোগ নিতেই শানু ব্যাগ ফেলে সোজা বাথরুমে ঢুকে গেল। আয়নায় নিজের মুখটা দেখে ঠাস ঠাস করে চড়াতে ইচ্ছে করছিল নিজেকেই। কেন স্বপনের কথায় পড়ে ও সিনেমা হলে ওই খারাপ মেয়েটার সঙ্গে ঢুকেছিল! ভাগ্যিস আর কক্ষনও যায়নি। স্বপন ছেলেটা তো মারাত্মক, সব খবর এদের পাচার করে দিয়েছে! এইসব রাস্তার ছেলে বাবার কাছে এসে কিছু বললেও পাত্তা করতে পারবে না। কিন্তু রেখা? আজকেই রেখা বলেছিল তোর সব কষ্ট আজ থেকে আমার হবে। কিন্তু এটা শোনার পর রেখা আর ধারে কাছে ঘেঁষতে দেবে? ছি ছি শানু, তুই এরকম? এত নোংরা তোর মনোবৃত্তি?
কী বলবে শানু? আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে হতভম্বের মতো তাকিয়ে রইল ও। বলবে স্বপন ওকে জোর করে নিয়ে গিয়েছিল? ওর ইচ্ছা ছিল না।
তুই কি বাচ্চা? স্বপন তোর হাত ধরে মেয়েটার জামার মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিয়েছিল? মনের আয়নায় রেখার জ্বলে ওঠা চোখ শানুকে পুড়িয়ে দিচ্ছিল।
হঠাৎ মনে হল আসল ওই মেয়েটা নয়, শানুর সিনেমা হলে যাওয়াটাও ওদের জন্য কোনও ঘটনা নয়। আসল হল রেখা। রেখার ধারেকাছে গেলেই এই বীরু নামের ছেলেটা ওকে উত্ত্যক্ত করত। মারধর তো করতই। মেয়েটা একটা বাহানা মাত্র। ওই লাল জামা পরা ছেলেটাকে কীভাবে মারল রেখাকে নিয়ে একটা বাজে কথা বলা নিয়ে। বীরুর চোখের সামনে রেখার কাছাকাছি যাওয়ার কোনও উপায় নেই। অসম্ভব।
—শানু! শানু! বাথরুমে গিয়ে বসে আছিস কেন? দরজায় দুম দুম আওয়াজ পাওয়া গেল। পরমেশ। দেখেছ তোমার ছেলেকে? এত বয়স হয়ে গেল, এখনও এক ঘণ্টা ধরে পায়খানায় বসার স্বভাব গেল না।
চোখে মুখে জল দিয়ে বেরিয়ে এল শানু। ভেবে নিয়েছে মনে মনে। এখন আর রেখার সঙ্গে কোনওভাবে দেখা করা যাবে না। বীরু তাকে বাঁচতে দেবে না। রেখাকে একবার বলে দিলে এই ব্যাপারটা একদম হাতের বাইরে চলে যাবে। আর তো কটা দিন। হায়ার সেকেন্ডারির পরে থোড়াই দুর্গাপুরে থাকবে আর শানু। তখন আবার রেখার কাছে ফিরে যাবে। কিছু একটা মাথার থেকে বের করা যাবে তখন। ঠিক মানিয়ে নেবে যে করে হোক। কিন্তু সিনেমা হলের ঘটনাটা রেখার কানে পৌঁছাতে দিলে চলবে না।
অঙ্কের বই আর খাতা নিয়ে পরমেশের সামনে টেবিল বসে শানু বলল, বাবা ইংরেজি পড়াটা ছাড়িয়ে দাও। আমার লাগবে না।
—কেন, ভাল পড়ান না উনি?
—ইংরেজির জন্য অত সময় দিলে আর চলবে না। আইআইটির জন্যে প্রিপেয়ার করতে হবে। আগরওয়াল ক্লাসের বইগুলো আসতে শুরু করে দিয়েছে। ওগুলো সলভ করতে অনেক সময় লাগছে।
কিছুক্ষণ সোজা তাকিয়ে রইল পরমেশ। তারপর মুখে হাসি ফুটল। আমি আগেই বলেছিলাম, ইংলিশ পড়ে সময় নষ্ট করে কোনও লাভ নেই। আইআইটিতে খুব ভাল র্যাঙ্ক করা চাই, সেটাতেই নজর দে।
কিন্তু আজ কোনও কিছুতেই নজর বসছিল না শানুর। মাথাটা কাজ করছে না যেন। টেবিলে খাবার রাখতে এসে সন্দিগ্ধ চোখে তাকাল সুতপা। তোর শরীর মনে হয় ভাল নেই শানু। ডানহাতের উল্টো পিঠ শানুর কপালে ছোঁয়াল সুতপা। ও মা, এ তো একদম ছ্যাকছ্যাক করছে। আমার তখন থেকেই সন্দেহ হচ্ছিল। তোর এখন আর পড়ে কাজ নেই শানু, বিছানায় গিয়ে একটু শুয়ে থাক তো বাবা। সুতপা জানে পরমেশের সম্মতি ছাড়া সেটা কখনওই সম্ভব নয়। গলায় অনুনয় ঢেলে বলল, আজ ওকে ছেড়ে দাও না গো। কোথা থেকে জ্বর বাঁধিয়ে এসেছে। এখন খেয়াল না করলে, রোগ আরও বেশি প্যাঁচাবে।
কোনওমতে দুধটা ঢকঢক করে গলায় ঢেলে শানু নিজের ঘরে ঢুকে গেল। বিছানায় ধপাস করে পড়ে বালিশে মাথা দিয়ে খুব জোর কান্না পেল শানুর। রেখাকে বাদ দিয়ে নিজের নিঃসঙ্গ জীবনের সম্ভাবনাটা ওকে অস্থির করে তুলেছিল। বুকের ভিতর থেকে ভলকে ভলকে কান্নার হেঁচকি উঠছিল। আজকের অপমানের শোধ নিতেই হবে। তখনই ঠিক করল স্বপনের সঙ্গে দেখা করবে আবার। ওদের বস্তির কটা ছেলেকে যদি জোগাড় করতে পারে, বীরেনকে টক্কর মারতে আর কী চাই। ভেবেই উত্তজনায় বিছানায় উঠে বসল শানু। না, এখুনি করবে না। আর তো একটা বছর। দুর্গাপুর ছাড়ার আগে ওই বীরুকে শায়েস্তা করে যাবে। তারপর ওর টিকিও ছুঁতে পারবে না ওরা। এই ভাবনাটা শানুর আহত সম্মান কিছুটা পুনরুদ্ধার করল। পথ আছে। ভয়ে গর্তে ঢুকে যাওয়াটাও কোনও কাজের কথা নয়। জোর যার মুলুক তার হলে, সেও ওই রাস্তা নেবে।
[আবার আগামী সংখ্যায়]