শুভ্রদীপ চৌধুরী
এক
কিছুক্ষণ আগে এই খাবার টেবিলেই যিশু ঘোষণা করেছেন, আগামীকাল তোমাদের এই বারোজনের মধ্যেই কেউ একজন বিশ্বাসঘাতকতা করবে।
ঘোষণা শেষ হতেই বারোজন চারটে দলে ভাগ হয়ে ফিসফাস শুরু করেছে।
যিশু স্পষ্ট দেখছেন, জুডাসের হাত কাঁপছে। তার ডান হাতে টাকার থলি। বাঁ হাত রুটির টুকরো ধরতে বাড়িয়ে দিতেই লবণের পাত্রটা উল্টে পড়ল। সে স্বস্তি পাচ্ছে না।
অন্যরা সব্বাই চিন্তিত, কাতর এবং বিচলিত।
তাদের মাঝখানে স্থির ও অভিব্যক্তিহীন মুখে বসে রইলেন যিশু।
দুই
ক্ষুধার্ত কাকটা তার মাথায় এসে বসল। বাঁ চোখের উপরে ঠোক্কর দিল। যেন সে খাবার খুঁজে পেয়েছে। আরও একটা কাক এগিয়ে আসছে। ও নিশ্চয় ডান চোখটা খুবলে তুলবে বলে ভাবছে!
মাথাটা সামান্য নাড়াল সে। কাকেরা একটুও ভয় পেল না।
কয়েকদিন আগেও শুধু বেঁচে থাকবার জন্য কুকুর আর কাকেদের সঙ্গে ডাস্টবিনগুলোতে পড়ে থেকেছে। এখন সেখানেও খাবার নাই। শেষ কবে পেটভরে খেয়েছে তা মনে পড়ে না। এখন দুর্ভিক্ষ।
একটা লোক এসেছিল, কালো রঙ আর মোটা তুলি দিয়ে ছবি আঁকছিল। কিছু খাবার দিয়েছিল। নাম বলেছিল, আবেদিন, জয়নুল আবেদিন। লোকটা আর এল না কেন? অন্য কোথাও আঁকছে?
চারপাশে ছড়িয়ে আছে মৃতপ্রায় মানুষ। দ্বিতীয় কাকটাও উঠে পড়ল তার মাথায়। এই সুযোগ। অন্তত একটা কাক ধরতে পারতে খিদের জ্বালাটা কমত। পারল না। কাক দুটো উড়ে গেল।
সে মাথা তুলল। মাথার উপরে গনগনে সূর্য। লোকটা কোনও মতে এগিয়ে চলল। কোথায় যাচ্ছে সে নিজেও জানে না।
তিন
যিশু অবাক হয়ে দেখলেন কয়েকশো বছর পর তার সামনে একটা মানুষ এসে দাঁড়িয়েছে। ঠিক যেন মানুষ নয়, মানুষের মতো।
লোকটা টেবিলে সাজানো রুটি দেখল, পানীয় দেখল। আহা, কত খাবার। তার শুকনো মুখ ভিজে উঠল লালায়। সে বলেই ফেলল, এত খাবার সামনে নিয়ে বসে আছেন ক্যান? সমস্যা কী?
যিশু বললেন, কে তুমি? কী চাও?
লোকটা ঢোঁক গিলে বলল, রুটি দেওয়া লাগবে না, ফ্যান দ্যান, শুধু ফ্যান দ্যান হুজুর। বড় খিদা।