Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

‘আচ্ছে দিন’-এর শেষে হাতেই ‘এলাহী ভরসা’? কোন পথে জাতীয় রাজনীতি — ফিরে দেখা ২০১৭

সতেরোর সাত সতেরো | প্রথম বর্ষ, নবম যাত্রা | জানুয়ারি, ২০১৮

দেবাশিস দাশগুপ্ত

 

বাংলায় একটা চালু কথা আছে — সব ভালো যার, শেষ ভালো তার৷ ২০১৭ সালের শেষের দিককার রাজনৈতিক ঘটনাবলি বলে দিচ্ছে, এই সময়টা ভালোই যাচ্ছে ১৩২ বছরের প্রাচীন জাতীয় কংগ্রেসের৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই ‘আচ্ছে দিন আয়েগা’ বলে প্রচারে ঝড় তুলেছিলেন৷ ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে বিপুল ভোটে জয়ী হওয়ার পর মোদীর মুখে সব সময়ই শোনা যেত ‘আচ্ছে দিন’-এর কথা৷ কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন নীতির প্রশ্নে মোদীর বাঁধা লব্জই হচ্ছে আচ্ছে দিন৷ দেশের সাধারণ মানুষ গত তিন বছর ধরে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন, আচ্ছে দিন কাকে বলে৷ জিএসটি, নোটবন্দি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি থেকে নানা ইস্যুতে আপামর জনতা নাকের জলে চোখের জলে একাকার হচ্ছে৷ এখন মনে হচ্ছে, মোদীর ওই মনের কথাটা ভীষণভাবে প্রযোজ্য জাতীয় কংগ্রেসের ক্ষেত্রে৷ লোকে ইতিমধ্যে বলতে শুরু করেছে, আচ্ছে দিন তো এখন কংগ্রেসের৷ কেন? গুজরাটের ভোটের ফলাফল ঘোষণা এবং তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই টুজি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারিতে ইউপিএ সরকারকে সিবিআই বিশেষ আদালতের ছাড় দেওয়া৷ টুজি ইস্যুতে গত সাত বছর ধরে কংগ্রেসকে অনেক অপমান সহ্য করতে হয়েছে৷ ওই কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়ে গিয়েছিল অত্যন্ত সৎ এবং পরিচ্ছন্ন বলে পরিচিত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের নামও৷

বস্তুত, ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের ধরাশায়ী হওয়ার পিছনে একটা বড় কারণ ছিল এই টুজি কেলেঙ্কারি৷ তখনকার বিরোধী বিজেপি এই ইস্যুতে কংগ্রেসকে একেবারে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছিল৷ দিনের পর দিন বিজেপি এই ইস্যুকে সামনে রেখে সংসদও অচল করে রেখেছিল৷ তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলাও হয়৷ দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশেই এই কেলেঙ্কারির তদন্তভার সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনের হাতে যায়৷ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই ওই মামলার শুনানির জন্য তৈরি হয় সিবিআই-এর বিশেষ আদালত৷ সেই আদালতেই সাত বছর ধরে মামলা চলছিল৷ তারই রায়ে অভিযুক্ত সকলেই ছাড় পেয়ে গিয়েছেন৷ আদালতের বিচারক ও পি সাইনি তাঁর রায়ে বলেছেন, সিবিআই ওই কেলেঙ্কারি প্রমাণে কোনও যুক্তিসম্মত তথ্য হাজির করতে পারেনি৷ তাঁর কথায়, ‘গত সাত বছর প্রতিটি কর্মদিবস, এমনকী গরমের ছুটিতেও এই আদালতে বসে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করেছি৷ কেউ আইনি তথ্যপ্রমাণ নিয়ে আসবে, এই আশায় অপেক্ষা করেছি৷ কিন্তু সে সবই ব্যর্থ হল৷ তথ্যপ্রমাণ নিয়ে কেউ এলেন না৷ এতেই স্পষ্ট, প্রত্যেকেই জনশ্রুতি, গুজবে বিশ্বাস করেছেন৷ কিন্তু বিচারবিভাগীয় প্রক্রিয়ায় জনশ্রুতিরর কোনও স্থান নেই৷’ এই বলেই সাইনি সকলকে ছাড় দিয়েছেন৷

তার দু’দিন আগেই ঘোষণা হয়েছে গুজরাট বিধানসভার ভোটের ফল৷ ছাপ্পান্ন ইঞ্চি ছাতির মালিক নরেন্দ্র মোদীর কমান্ডার ইন চিফ অমিত শাহ বুক বাজিয়ে দাবি করেছিলেন, গুজরাটে বিজেপি অন্তত দেড়শো আসন পাবেই, কিন্তু বিধি বাম৷ বিজেপি গুজরাটে ১০০তেও পৌঁছতে পারেনি৷ ৯৯তেই থেমে গিয়েছে মোদী-শাহর বিজয়রথ৷ পরে অবশ্য কংগ্রেসের টিকিট না পেয়ে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে জিতে যাওয়া এক প্রার্থী বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় বিজেপি ১০০ ছুঁয়েছে৷ গুজরাটে এবার কংগ্রেসের আসন বেড়ে হয়েছে ৮০৷ আর বিজেপির আসন ১৬টি কমে গিয়েছে ২০১২ সালের বিধানসভা ভোটের তুলনায়৷ মোদীর নিজের রাজ্যে বিজেপির জয় মোটামুটি প্রত্যাশিতই ছিল৷ কিন্তু কংগ্রেস যে এত আসন পেয়ে যাবে, তা বিজেপি ভাবতেই পারেনি৷ কারণ, ভোটের তিন মাস আগেও কংগ্রেসকে ভোটের ময়দানে পাত্তাই দেওয়া হচ্ছিল না৷ কিন্তু শেষ লগ্নে সেই কংগ্রেসই ভেল্কি দেখিয়ে দিল৷ এটাই কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর বড় কৃতিত্ব৷ তিনি ভোটের তিন মাস আগে থেকে একেবারে লেগে থেকেছেন গুজরাট নিয়ে৷ প্রথম দিকে মোদী-শাহ জুটি রাহুলকে তেমন পাত্তা না দিলেও সময় যত গড়িয়েছে, ততই রাহুলকে নিয়ে তাঁদের আতঙ্ক বেড়েছে৷ তাই অন্য কারও উপর তেমন ভরসা না করে মোদী আর অমিত শাহই বিজেপির প্রচারের প্রধান মুখ হয়ে উঠেছিলেন৷ শেষ দিকে তাঁরাও বুঝতে পারছিলেন, গুজরাট জয় অত সহজ হবে না৷ তাই মেরুকরণ থেকে শুরু করে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সমানে এই জুটি আক্রমণ শানিয়ে গিয়েছেন৷ কী না বলেছেন মোদী? ভোটের মাত্র ক’দিন আগেই তিনি অভিযোগ করে বসলেন, কংগ্রেস নেতা মণিশঙ্কর আইয়ারের বাড়িতে এক বৈঠকে আহমেদ প্যাটেলকে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী করার ছক কষা হয়েছে পাকিস্তানের কয়েক জন প্রাক্তন ও বর্তমান কূটনীতিকের উপস্থিতিতে৷ তাঁর আরও মারাত্মক অভিযোগ ছিল, ওই বৈঠকে নাকি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও উপস্থিত ছিলেন৷ তারও আগে প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করলেন, মণিশঙ্কর আইয়ার নাকি সম্প্রতি পাকিস্তানে গিয়ে তাঁকে খুনের ছক কষেছিলেন৷ এই পরিপ্রেক্ষিতেই মণিশঙ্কর মোদীকে নীচ লোক বলে কটাক্ষ করেন৷ রাহুল গান্ধী অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে মণিশঙ্করকে সাসপেন্ড করে বিজেপির সমালোচনার সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দিলেন৷ এখানেই শেষ নয়৷ মোদী গুজরাট অস্মিতার তাসও খেলেছেন৷ প্রচারে গিয়ে কখনও তিনি বলেছেন, ‘আমিই বিকাশ’৷ কখনও তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে, ‘আমিই গুজরাট’৷ আবার কখনও তিনি বলেছেন, ‘আমার অপমান গুজরাটের অপমান’৷

এক কথায় স্রেফ পরাজয়ের আতঙ্ক থেকেই মোদী-শাহরা একেবারে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন৷ কিন্তু তার ফল কী হল? যে কংগ্রেসকে কেউ ধর্তব্যের মধ্যেই আনেনি, সেই কংগ্রেস গত বিধানসভা ভোটের থেকে অনেক বেশি আসন পেল৷ শহরে বিজেপির আধিপত্য বজায় থাকলেও গ্রামে কংগ্রেস আর তার সহযোগীরা তাক লাগানো ফল করল৷ সব চেয়ে বড় কথা, গুজরাটের যুব শক্তিকে এবার কাছে পেয়েছিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী৷ তিনি দলিত, অনগ্রসর শ্রেণি এবং প্যাটেলদের মধ্যে পতিদার আন্দোলনের তিন যুব নেতাকে পাশে নিয়ে লড়াই করেছেন৷ হার্দিক প্যাটেল ওই রাজ্যে পতিদারদের সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলন করে প্রবল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন অতীতে৷ তাঁর সভা-সমিতিগুলিকে জনস্রোতের মতো ভিড় হয়েছে৷ দলিত আর পিছড়ে বর্গের স্বার্থে আন্দোলন করে সামনের সারিতে এসেছিলেন জিগনেশ মেভানি এবং অল্পেশ ঠাকুর৷ অল্পেশ তো কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন৷ ভোটেও জিতেছেন তিনি৷ জিগনেশ কংগ্রেসে যোগ দেননি বটে, কিন্তু তাঁর সংগঠনের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হয়৷ তিনিও জিতেছেন৷ হার্দিকের অবশ্য ভোটে দাঁড়ানোর বয়স হয়নি বলে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি৷ কিন্তু ভোট প্রচারের পুরোভাগে ছিলেন৷

মোদী আর শাহ যেমন গুজরাটে পড়ে থেকেছিলেন, একই ভাবে সেখানকার মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন রাহুল গান্ধীও৷ তিনি নিজেই সতীর্থদের নিয়ে গোটা ভোট পরিচালনা করেছেন৷ গুজরাটে কংগ্রেস ক্ষমতা দখল করবে, এমন দুরাশা কোনও নেতারই ছিল না৷ ভোটের আগে বিভিন্ন সংস্থার সমীক্ষাতেও বিজেপিকেই এগিয়ে রাখা হয়েছিল৷ রাহুল চেয়েছিলেন আসন সংখ্যা বাড়িয়ে গুজরাটে বিজেপিকে বড়সড় ধাক্কা দিতে৷ তাতে তিনি সফল হয়েছেন৷ রীতিমতো পরিণত রাজনীতিবিদের মতো রাহুল গুজরাটের ভোটটা পার করালেন৷ তাতে তিনি নিজের দলের নবীন-প্রবীণ নেতাদের কাছ থেকে তো বটেই, বিজেপি নেতাদের কাছ থেকেও সমীহ আদায় করে নিতে পেরেছেন৷ রাহুলের নেতৃত্বে গুজরাটের এই ফলাফলের পর কেউ আর রাহুলকে ‘পাপ্পু’ বলে কটাক্ষ করতে পারবে না৷

এবার আসা যাক টুজি স্পেকট্রাম ইস্যুতে৷ দ্বিতীয় ইউপিএ আমলে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকার এই কেলেঙ্কারি সাত বছর আগে কংগ্রেসকে বেশ বিপাকে ফেলে দিয়েছিল৷ সব চেয়ে বড় কথা, তখনকার বিরোধী দল বিজেপি সেই সময় এই কেলেঙ্কারিতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের নামও জড়িয়ে দিয়েছিল৷ তাঁর সাদা কুর্তায় এভাবে কালির দাগ পড়ায় অত্যন্ত মানসিক কষ্টে ভুগছিলেন তিনি৷ তাঁর বিরুদ্ধে এর আগে কখনও কোনও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি৷ নানা অভিযোগের পরও হার্ভাড-শিক্ষিত এই মৃদুভাষী নীল পাগড়ি পরা ভদ্রলোকটি কখনও বিরোধীদের উদ্দেশে গলা চড়াননি৷ শুধু একটি কথাই তিনি বারবার বলেছিলেন, তাঁর কাজের বিচার ভবিষ্যৎ করবে৷ তাই সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত টুজি কেলেঙ্কারির মামলায় তাঁকে এবং অন্য সকলকে ছাড়পত্র দেওয়ায় তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন৷ ও পি সাইনি-র রায় প্রকাশ হওয়ার পরও কিন্তু মনমোহনকে আবেগে ভাসতে দেখা যায়নি৷ তিনি স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতেই শুধু বলেছেন, ‘রায়ই সব বলে দিচ্ছে৷ ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে যে বিপুল প্রচার চলেছিল, আমার দেখে ভালো লাগছে যে আদালত সে সব কিছুকে ভিত্তিহীন বলে জানিয়ে দিয়েছে৷’

গুজরাটে ভালো ফল করার পরই টুজি মামলার এই রায় কংগ্রেসকে আরও চাঙ্গা করে দিয়েছে৷ গুজরাটের ফল ঘোষণার আগেই রাহুল গান্ধী ১৩২ বছরের প্রাচীন কংগ্রেস দলটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন৷ স্বাধীনতার পর এভাবে নিচুতলা থেকে উঠে এসে আর কেউ কংগ্রেস সভাপতি হননি৷ টানা উনিশ বছর তাঁর মা সনিয়া গান্ধী কংগ্রেসের হাল ধরে ছিলেন৷ এর আগেও অনেকবার রাহুলের কাঁধে কংগ্রেসের দায়িত্ব দেওয়ার কথা উঠেছিল৷ তখন রাহুল রাজি হননি৷ তিনি এবং সনিয়া বারবারই বলে গিয়েছেন, যখন সময় আসবে, তখন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷ রাহুল কিন্তু তাড়াহুড়ো করতে চাননি কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার জন্য৷ তিনি তিল তিল করে নিজেকে সংগঠক হিসেবে গড়ে তুলেছেন৷ দলের প্রবীণদের থেকে রীতিমতো ট্রেনিং নিয়েছেন৷ তাঁদের পরামর্শ মেনে চলেছেন৷ আজকে অত্যন্ত পরিণতমনস্ক নেতা হিসেবে রাহুল কংগ্রেস সভাপতি হলেন৷ তিনি দলের সভাপতি হওয়ার পর পরই দু’দুটি ঘটনা ঘটল৷ দুটিতেই কংগ্রেস অনেকটা মনোবল ফিরে পেয়েছে৷

সামনেই লোকসভা ভোট৷ হাতে এক বছরের কিছু বেশি সময়৷ এর মধ্যে রাহুলকে সংগঠন ঢেলে সাজাতে হবে৷ ২০১৮ সালে বেশ কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা ভোট৷ এখন দেশের অধিকাংশ রাজ্যেই বিজেপির সরকার৷ কংগ্রেসের হাতে আছে গুটি কয়েক রাজ্যের ক্ষমতা৷ লোকসভা ভোটের আগে যদি এই রাজ্যগুলির বিধানসভা ভোটে রাহুলের নেতৃত্বে কংগ্রেস ভালো কিছু করতে পারে, তার প্রভাব পড়বে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটেও৷ গুজরাটের ফল আর টুজি মামলার রায়ের ফলে কংগ্রেস অ্যাডভান্টেজ পেয়েছে৷ লোকসভায় তিন তালাক বিলে সমর্থন জানিয়েও কংগ্রেস বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা কেবল বিরোধিতার জন্যই বিরোধিতা করে না৷ প্রয়োজনে তারা দায়িত্বশীল বিরোধী দলের ভূমিকা গ্রহণ করতে দ্বিধা করবে না৷

এখন দেখার, কংগ্রেস আগামী দিনে কোন পথে চলবে৷ ভবিষ্যতে তারা জোট রাজনীতির পথ নেবে কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়৷ যতটুকু জানা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে রাহুল গান্ধী দলীয় সংগঠনকে শক্তপোক্ত ভিতের উপর দাঁড় করাতে চান৷ তার পর তিনি জোট নিয়ে ভাববেন৷ তাঁর কথায়, দল যদি শক্তিশালী না হয়, তা হলে কেউ তাদের গুরুত্ব দেবে না৷ তাঁর কাঁধে এখন গুরুদায়িত্ব৷ রাহুলের মতো এত কম বয়সে এর আগে কেউ কংগ্রেস সভাপতি হননি৷ এটা তাঁর আর একটা বড় প্লাস পয়েন্ট৷ এই মুহূর্তে দলে তাঁর কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী নেই৷ নবীন-প্রবীণ সব প্রজন্মের কংগ্রেস নেতাই রাহুলের অভিষেককে মেনে নিয়েছেন৷ রাহুলও এই দুই প্রজন্মের নেতাদের সঙ্গে নিয়েই চলতে চান৷

আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট৷ তাতে কংগ্রেস একাই লড়বে কি না, প্রশ্ন আছে তা নিয়ে৷ আবার তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট চায় কি না, সেটাও শাসকদলের নেতারা এখন পর্যন্ত পরিষ্কার করেননি৷ তৃণমূল নেত্রী বিজেপি বিরোধিতাকে একেবারে চরম পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন৷ কংগ্রেসও জাতীয় স্তরে বিজেপিকেই মূল শত্রু বলে মনে করে৷ বামেদের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বিজেপিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে কৌশলে মেরুকরণকে জোরদার করছেন৷ তারই মধ্যে মুকুল রায় বিজেপিতে যোগ দিয়ে তৃণমূলের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছেন৷ এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটটাও বেশ জমজমাটই হবে বলে মনে হচ্ছে৷

পরিশেষে বলি, গত সাড়ে তিন বছরে প্রবল মোদী ম্যাজিকে আচ্ছন্ন এই দেশে নিঃসন্দেহে ক্রিসমাসের সারপ্রাইজ প্যাকেজ রাহুল গান্ধীর আকস্মিক উত্থান, যা যথেষ্ট অক্সিজেন জুগিয়েছে ১৩২ বছরের প্রাচীন দলটিকে। রাজনীতির হালচাল বলে দিচ্ছে, আগামী দিনে কংগ্রেস বিজেপিকে টক্কর দেওয়ার মতো অবস্থায় রয়েছে৷ ২০১৭ সালের শেষটা জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের পক্ষে সুখকরই হল৷ দেখার বিষয় হল, এই টেম্পো ভবিষ্যতে রাহুলের নেতৃত্বে কংগ্রেস ধরে রাখতে পারে কি না৷ আমজনতা অপেক্ষায় থাকল আগামীর জন্য, নতুন বছরে নতুন এক দিনের জন্য, সেটা সত্যই “আচ্ছে” কিনা তা সময়ই নির্ধারণ করবে।