কৌশিক রায়চৌধুরী
1993 ডিসেম্বর, MSc ডিসার্টেশনে প্যালিওন্টোলজি নিয়েছিলাম। ফিল্ড করতে গেছি গুজরাটের কচ্ছে। ভুজ, নালিয়া হয়ে আরও ভেতরে vaiyor বা waiyor নামে এক অজ গ্রামে। পাকিস্তানের বর্ডার থেকে খুবই কাছে। যদিও স্থল সীমা নয়। মাঝে আছে Sir Creek-এর সঙ্কীর্ণ জলসীমা।
গেছি মোটে দু’জন। আমার থেকে একব্যাচ সিনিয়র ইন্দ্রজিত বটব্যাল নামে একজন M.Tech ছাত্র আর আমি। ভরসা দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজের অনীশবাবু। তখন যদিও আমি আর প্রেসির ছাত্র আর নই। কিন্তু ওখানে B.Sc পড়ার সময় থেকেই জানতাম এ.আর. স্যার ওই এলাকায় সারাজীবনে বহুবার ফিল্ড করেছেন। সাহায্যও ওনার কাছে প্রচুর পেয়েছিলাম। কোথায় থাকতে হবে, কি খেতে হবে, গাইড কে হবে, এবং কীভাবে যেতে হবে। সবই ছবির মতো বুঝিয়ে দিয়েছিলেন স্যার।
ওনার পরিষ্কার নির্দেশ ছিল যে ভুজে গিয়ে একদিন থেকে কালেক্টর অফিস থেকে পারমিশন নিয়ে তবেই ভেতরে যেতে হবে। সে বাবদ IIT-র লেটারহেডে চিঠিপত্তরও সঙ্গে নিয়ে গেছিলাম।
আমরা দু’জন আমেদাবাদ হয়ে ট্রেন বদলে ভুজে যেদিন পৌঁছলাম সেদিন রবিবার। কালেক্টর অফিস বন্ধ। পার্মিশনের জন্যে অপেক্ষা করলে সেদিন তো থাকতেই হবে, পরের দিন সোমবার অফিস খুললে পারমিশন পেতে পেতে দুপুর গড়িয়ে যাবে। তারপরে আর যাওয়ার প্রশ্ন নেই। সেক্ষেত্রে দু’দিন নষ্ট হবে। দু’জনে মিলেই কাঁচা বুদ্ধিতে সিদ্ধান্ত নিলাম– কী আর হবে… পারমিশনকে গুলি মারো… আজই এগিয়ে চলো। ভুজের বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে চড়ে নালিয়াতে বাস বদল। সেই অজ গাঁয়ে যখন নামলাম তখন ভারতবর্ষের সুদূর পশ্চিম প্রান্তেও সূর্যদেব অস্তাচলে।
বাসস্ট্যান্ডে একটি চায়ের দোকানের গুমটি। স্যারের সঙ্গে কথা বলে জানা ছিল যে আগামী কয়েকদিন এই জায়গাই হবে আমাদের থাকা ও খাবার জায়গা।
কথাবার্তা বলে সবকিছু প্ল্যানমাফিকই এগোল। শুধু আমাদের জন্যে ওনারা একটা ক্লাবঘরের মতো ঘর খুলে দিলেন থাকার জন্যে। চমৎকার ব্যবস্থা। ভূমিশয্যার জন্যে আমরা প্রস্তুত ছিলাম। সঙ্গে স্লীপিং ব্যাগ ছিল। তাই এ ঘরে একটা চারপাই পেয়ে আমরা তো আপ্লুত। যেহেতু বটাদার হাঁপানির ধাত তাই ঠিক হল ও চারপাইতে শোবে আর আমি শোব পূর্বনির্ধারিতভাবেই ধরিত্রীর বুকে মাথা রেখে।
বাথরুমের বালাই নেই। প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে প্রকৃতির কোলেই আশ্রয় নিতে হবে।
সব ব্যবস্থা পাকা হওয়ার পর হাত পা ধোয়ার জল চাইলে গ্রামের লোকজন এমনভাবে তাকাল যে আমরা যেন মঙ্গলগ্রহের প্রাণী। পৃথিবীর লোকে যে হাতমুখ ধুতে জলের ব্যবহার করে সেটা ওঁদের জানা নেই। আমরাও অবস্থা দেখে চুপ করে গেলাম। এনারা চা বানাতেও জলের ব্যবহার করেন না। পুরোটাই দুধের। চায়ে যে জল লাগে সেটাও এনারা জানেন না।
সন্ধ্যার থেকে প্রায় তিন-চার কাপ চা-গন্ধী দুধ খেয়ে ডিনার পেলাম রাত আটটা নাগাদ। বাজরার রুটি আর ভীষণ ঝাল লাউ টাইপের কিছু একটা তরকারি। চারদিকে ততক্ষণে ঘুটঘুটে অন্ধকার। আসল গ্রামটা বাসস্ট্যান্ডের থেকে কিঞ্চিত দূরে…
ঘরে রাতে আমাদের সঙ্গী হল দুটো প্রমাণ সাইজের রামছাগল।
সন্ধে নামার কিছু আগে দেখেছিলাম শ’য়ে শ’য়ে গরু ছাগল সারাদিন মাঠে চড়ে গোঠে ফিরছে। বুঝলাম এখানকার পুরো ইকনমিটাই এই গরুছাগলগুলোর উপর ভরসা করে চলছে।
অদূরেই একটা সিমেন্ট বাঁধানো চৌবাচ্চার মতো ছিল যাতে দেখেছিলাম নোংরা জলের ভাণ্ডার। গরুছাগলগুলো অত্যন্ত ভাল ট্রেনিং পাওয়া জন্তুদের মতোই সার বেঁধে, কোনওরকম ধাক্কাধাক্কি ছাড়া এক এক করে সেখান থেকে জল খেয়ে সব আবার গ্রামের দিকের পথ ধরল। পরে বুঝেছি, সমস্ত গ্রামের নিকাশী নালার শেষ ঠিকানা ওই চৌবাচ্চা। সেই জলই গবাদিপশুর পানীয় হিসেবে কাজে লাগে। জলের সত্যিই খুব অভাব।
ওই দলেরই দু’জনের রাত কাটানোর জায়গা হল সে রাতে আমাদের জন্যে নির্দিষ্ট ঘরে। তবে সে দু’জনকে আমাদের ঘরে ঢোকানো হল, নাকি আমরা তাদের ঘরে ঢুকে পড়েছি, এই প্রশ্নের উত্তর আমি আজও পাইনি।
আশেপাশের একমাত্র ইলেক্ট্রিকের বাতিটা ছিল চায়ের দোকানে। দোকানি সাড়ে আটটা নাগাদ নিকষ অন্ধকারে পুরো চরাচর ঢেকে গুটিয়ে পাটিয়ে গ্রামের দিকে রওনা হয়ে গেছে।
ঘরের ভেতরে ঢুকে রামছাগলের গন্ধ শোঁকা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। ঘরে ঢুকে একটা মোমবাতি জ্বালালেও তার আলো যেন অন্ধকারকে আরও স্পষ্ট করে দিল। মোমবাতিও ছিল বাড়ন্ত। বেশিক্ষণ কথাবার্তা না চালিয়ে আমরা শুয়ে পড়াই মনস্থ করলাম। শোয়ার পরেই যেন রামছাগলগুলো চনমন করে উঠল। অনবরত তাদের ঘোঁতঘাঁত গলাখাঁকারি আর নড়াচড়ার আওয়াজ শুনতে শুনতে ভাবছিলাম– এ আমরা কোথায় এলাম। আগেই দেখেছি চারিদিকে ধু ধু প্রান্তরে ইতিউতি ছড়ানো কিছু কাঁটাগাছের ঝোপ। আর মরুভূমির বুক চিরে চলে যাওয়ার মতো একটা চকচকে পিচরাস্তা ছাড়া চারিদিকে কিছুই নেই। আমরা যেখানে আছি সেখান থেকে গ্রামের দূরত্বও কমপক্ষে আধা কিলোমিটার।
মনে রাখতে হবে, যখনকার ঘটনা বলছি তখন মোবাইল ফোন দূর অস্ত। ইন্টারনেট সবে এসেছে। শুধু IIT-র মতো কিছু অ্যাকাডেমিক প্রতিষ্ঠানে, ইমেল করার জন্যে। ল্যান্ড লাইনের অ্যাপ্লিকেশন করলে ৪/৫ বছর লাগে কানেকশন পেতে। আমার বাড়িতেও তখন ফোন নেই। এটিএম কী জিনিস তাও জানা ছিল না। আমাদের খরচ খরচার সব টাকাই ক্যাশে রয়েছে সঙ্গে।
অজানা জায়গার একটা আলাদা ভয় মনে সবসময়েই কাজ করে। দু’জনের তাই মনে হচ্ছিল এই তেপান্তরের মাঠে আমাদের কেউ যদি খুনও করে চলে যায়, কেউ টেরটিও পাবে না।
এর মধ্যে ঠাণ্ডা বাড়তে লাগল। ঘরটায় ইঁটের গাথনি থাকলেও মেঝে পাকা নয়। কিছু ইঁট পেতে তার ওপর মাটি লেপে সমতল করার একটা চেষ্টা হয়েছে মাত্র। মাথার ওপর খাপড়ার চাল। ঘরে কোনও জানালা নেই। আছে কতগুলো ফোঁকড়। সেখান দিয়ে আর দেওয়াল ও চালের মাঝখান দিয়ে হু হু করে ঠাণ্ডা হাওয়া ঢুকছে। তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড হবে। কিন্তু হাওয়ার গুঁতোয় আমরা ঠক ঠক করে কাঁপছি। আর এই সব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়েও পড়লাম একসময়ে।
হঠাত বটাদার ধাক্কাধাক্কিতে ঘুম ভেঙে গেল। ভয় পেয়ে ধড়মড় করে উঠে বসে দেখলাম দরজা খোলা। আর আমি কিছু না ভেবেই, জড়িয়ে ধরলাম বটাদাকে।
ব্যাপারটা যতটা সোজাভাবে বললাম অতটা সোজা ছিল না। স্লীপিং ব্যাগে যারা শুয়েছেন তারা বুঝবেন– চেন টেনে শুয়ে থাকা অবস্থা থেকে হঠাত উঠে বসতে গেলে, স্লীপিং ব্যাগের ও যিনি শুয়েছিলেন দু’জনারই দফারফা হওয়ার আশঙ্কা যথেষ্ট।
ধরফর করে কোনওমতে উঠেই বটাদাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলাম। বটাদা যতই ছাড়াতে যায় আমি তত জোরে চেপে ধরি। শেষ পর্যন্ত বটাদা বোঝাতে পারল যে ভয়ের কিছু নেই। ও ডেকেছে বাইরে একটা অদ্ভুত সুন্দর জিনিস আমাকে দেখাবার জন্যে।
ওই কনকনে ঠাণ্ডা আর ভয়ের চোটে বাইরে যাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু ধাতস্থ হওয়ার পর বুঝলাম যে উঠতে আমাকে হবেই। ভয়ে ও চেঁচানিতে গলা ততক্ষণে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। আর তার সঙ্গে ভয়ের জন্যেই বোধহয় তীব্র নিম্নচাপও অনুভূত হচ্ছে। তাই জল প্লাস করার জন্যে ওঠাটা জরুরি। আর মাইনাসের জন্যে বাইরে যাওয়াটাও।
অগত্যা বটাদাকে সঙ্গে নিয়ে বাইরে এসে দাঁড়ালাম। বাইরে দেখলাম ঘরের থেকে কম অন্ধকার। রাত বোধহয় তখন দুটো কি আড়াইটে হবে। চাঁদের অনুপস্থিতিতে পুরো চরাচরটাই একটা আবছা আলোর ফিনফিনে পর্দা জড়ানো মায়াবী জগতের মতো লাগছে। দিগন্তবিস্তৃত রসকষহীন যৌবনহীন বন্ধুর ভূপ্রকৃতি, বিকেলে যাকে দেখেছিলাম, সেই তাকেই ওই রাতের বেলার মায়াবী আলোকে এতটা রূপবতী শান্ত স্নিগ্ধ পূর্ণযৌবনা দেখব আশা করিনি। তার সেই স্নিগ্ধতা শুধু অনুভব করা যায়। ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।
প্রকৃতির এই রূপের সামনে সময় তখন থমকে দাঁড়িয়ে আছে। কতক্ষণ যে সময় থমকে ছিল, হয়তো অনন্তকাল, হঠাত বটাদার ডাকে ফিরে এলাম, বলল, নে এবার এবার বাকিটাও দেখ মাথা তুলে। আকাশপানে মাথা তুলেই আমার মাথা যেন বোঁ করে ঘুরে গেল! অত তারা!!! যেন কোনও পাগল কোটি কোটি মুক্তো অবহেলায় সমস্ত আকাশে ছড়িয়ে দিয়েছে। আমি সারা জীবনেও আকাশে অত তারা দেখিনি। মানে একসঙ্গে দেখার তো প্রশ্নই নেই… সারা জীবনে আলাদা আলাদা করে যত তারা দেখেছি তার সমস্ত সংখ্যাগুলোকে যোগ করলেও সেদিনের আকাশে যতগুলো দেখেছিলাম তার ধারে কাছে পৌঁছাবে না।
আমার অবাক হওয়ার আরও কিছু বাকি ছিল।
বটাদাই ফের ধরতাই দিল– আকাশগঙ্গা দেখতে পাচ্ছিস? আরে ছায়াপথ বা milky way?? এবার আমিও লক্ষ করলাম। মনে হল ধু ধু প্রান্তরের শেষ সীমানা দিয়ে একটা রাস্তা দিগন্ত চিরে চলে গেছে যার শুরু বা শেষ দেখা যায় না। আকাশ বেয়ে এদিক থেকে ওদিক একটা স্বর্গীয় আলোর নদী যেন বয়ে চলে গেছে। আলোর ছটা একেকটা অংশে ঢেউও তুলছে যেন। পুরোপুরি জীবন্ত একটা বহমান নদী।
‘অনির্বচনীয়’ শব্দটা শুধুমাত্র এই দৃশ্যের জন্যেই বোধহয় বানানো হয়েছিল। একবার যে এ দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছে তার জীবনে আর কোনও ভাল জায়গা, ভাল দৃশ্য না দেখলেও আনন্দে কেটে যাবে। আমার অন্তত সেদিন রাতে এরকমটাই মনে হয়েছিল। এখনও সেই বিশ্বাস অটুট আছে।
কতক্ষণ যে আচ্ছন্নের মতো সেই সম্মোহিত অবস্থায় ছিলাম খেয়াল নেই। ঠাণ্ডা হাওয়ার কামড়, পৃথিবীর সমস্তরকম চাওয়া পাওয়ার হিসেব সেই কয়েক মিনিট বা প্রায় ঘণ্টাখানেক শরীর বা মনের ত্রিসীমানাকে ছুঁতে পারেনি। বটাদাই তাড়া লাগাল ঘরে ফেরার। ফিরে এলাম ঘরে। সমস্ত স্নায়ুগুলো তখনও ভালোলাগায় ভরে আছে। ঘুম এল অনেকক্ষণ বাদে।
কাকভোরে ঘুম ভাঙল টুংটাং, ঢংঢং, ডিংডং বিভিন্ন ধরণের ঘণ্টার আওয়াজে। ঘরের রামছাগলগুলোও দেখলাম বাইরে বেরোনোর জন্যে খুব উত্তেজিত। সেটাই স্বাভাবিক। সারারাত ধরে কারা যে কাদের সহ্য করল বোঝা গেল না। দরজা খুলে বাইরে এসে দেখি গ্রামের সমস্ত গরু ছাগল আবার সার বেঁধে খাদ্যের সন্ধানে বেরোচ্ছে। আলো তখনও সূর্যের গা থেকে পৃথিবীর বুকে পৌঁছায়নি। কালকের সেই চা-ওলা দোকান খুলে চায়ের জোগাড় করে ফেলেছে। আমাদের দরজা খুলতে দেখেই এগিয়ে এসে দু’জনের হাতে এক এক গ্লাস দুধেল চা ধরিয়ে দিলেন। আর ব্যস্ত হয়ে ছাগলদুটোকে বার করে এনে মাঠে পাঠিয়ে দিলেন। তারাও দলের সাথীদের পেয়ে রাতের দুঃখের কথা বলতে বলতে হাঁটা দিল মনে হল। আমরা বুঝলাম সকালে মুখ ধোয়াটাও জলের বদলে এই চা দিয়ে করাটাই এখানকার রীতি। যস্মিন দেশে যদাচার তত্ত্ব মেনে দু’জনে সেই চা, কিছুটা কুলি করে, বাকিটা নির্দ্বিধায় পেটে চালান করে দিলাম।
এরপর বালিয়াড়ির আড়ালে প্রাতঃকৃত্য পর্ব সেরে নিয়ে (ধৌত পর্ব উহ্য রাখলাম) গুছিয়ে বসলাম ম্যাপ ট্যাপ খুলে। যেই ম্যাপকে আমাদের পরিভাষায় বলা হয় toposheet।
সাড়ে আটটা নাগাদ এসে পৌঁছালেন এখানে আমাদের গাইড কাম ভগবানের অবতার, জুসুফ বা য়ুসুফ ভাই। স্যারেরই রেকমেন্ড করা গাইড। অনীশবাবু ও তার দলবলের সঙ্গে বহুবছর ঘোরাঘুরি করে এই অঞ্চলের সমস্ত অন্ধিসন্ধি ও ফসিলের তত্ত্বতালাশ এনার নখদর্পনে। কালকেই চা-ওলাকে বলে ওনার কাছে খবর পাঠানো হয়েছিল।
য়ুসুফ ভাই নটা নাগাদ আমাদের মাঠে নিয়ে বেরোলেন। এখানে আমাদের সাজপোষাকের ও যন্ত্রপাতির একটা বর্ণনা দিয়ে নেওয়া ভাল। আমাদের মাথায় কাঁধাওলা টুপি, যেগুলো আপনারা দেখতে পান আউটফিল্ডে ফিল্ডিং করার সময় ক্রিকেটারদের মাথায়। পরণে রংওঠা জিনস, ও মোটা সুতির ফুলহাতা জামা বা টিশার্ট। সেগুলোও ফেলে দেবার ঠিক আগের অবস্থায় আমরা ফিল্ডে পরতাম। দুটো কারণে। ফিল্ডে জামাকাপড় ছিঁড়ে যাবার সম্ভাবনা প্রচুর আর ওগুলো আরামদায়কও বটে। পিঠে সেই পুরোনো খাকি রঙের ক্যানভাস কাপড়ের ব্যাগ। যেগুলো আমাদের ছোটো বেলায় স্কুলের ব্যাগ হিসেবে ছেলেরা নিত। গলায় ঝোলানো চামড়ার খাপে ভরা কম্পাস। জিওলজিতে যার বাহারী নাম ক্লাইনোমিটার। এক হাতে ক্লিপবোর্ডে ম্যাপ ও অন্যহাতে প্রমাণ সাইজের ইয়াব্বড় মাথাওলা হাতুড়ি। এই হাতুড়ি আক্ষরিক অর্থেই পাথরভাঙা হাতুড়ি। এর কাজও শুধুমাত্র পাথরভাঙা।
বেরিয়ে পড়ে মাঠঘাট ডিঙিয়ে, কাঁটাঝোপ উপেক্ষা করে, নালানর্দমা পেরিয়ে এগিয়ে চললাম।
য়ুসুফ ভাই সত্যিকারেরই কাজের লোক। কিছুটা বাদে বাদেই অস্বাভাবিক সব আউটক্রপের সামনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন আমাদের। প্রত্যেকটা একদম ফসিল স্যাম্পেলে ভরপুর। আমরাও মনের আনন্দে পাথর ভাঙছি আর ব্যাগে পুরছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই রোদের তেজ বুঝিয়ে দিল, অনেক হয়েছে বাবারা! এবার মানে মানে ফেরত যাও, নইলে কিছুক্ষণের মধ্যেই তোমাদের গরমাগরম রোস্ট বানিয়ে ছাড়ব। পিঠের বোঝাও ততক্ষণে যথেষ্ট ভারি হয়েছে। সাড়ে এগারোটা নাগাদ বুঝলাম কষ্টটা বেশ বেশিই হচ্ছে। এবার ফিরতে হবে।
নিঃসন্দেহে ফেরার লং মার্চটা দেখার মতো দৃশ্য ছিল। এই দুই জোকার আর য়ুসুফ ভাই, পাঠানস্যুট পরিহিত। উনি আগে আগে আমরা পিছে পিছে। কিন্তু বললেই তো হল না, ওই জনমানবশূন্য প্রান্তরে দেখবে কে? মানুষই তো ত্রিসীমানায় কেউ নেই। এই নিয়ে নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করতে করতে আসছিলাম।
কিন্তু আমাদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হল একটু পরেই… বুঝলাম ওই দিকশূন্যপুরেও আমাদের দিকে নজর রাখিতেছিল কেহ বা কাহারা।
উঁচুনীচু, রোদজ্বলা, মরুভূমিসদৃশ বালিয়াড়ির মধ্যে চলতে চলতে হঠাত পিছন থেকে শুনলাম কে যেন চেঁচিয়ে উঠল–
–ওয়ে জওয়ান ইধার আও!
ঘুরে তাকিয়ে প্রথমে কাউকে চোখে পড়ল না। ভাল করে নজর করতে দেখি এক কাঁটা ঝোপের আড়াল থেকে খাকি পোষাক পরিহিত এক মনুষ্যমূর্তি আবির্ভূত হলেন। আমাদের দিকে ইশারা করতে করতে এগিয়েও এলেন। খাকি রঙের পোষাক ওই বালিয়াড়ির হলুদ-ধুসর রঙের সঙ্গে অদ্ভুত ক্যামোফ্লাজ করে থাকায় চট করে নজরে আসে না। আমরা দাঁড়িয়ে পড়লাম। লোকটি কাছে এসে আমাদের সামনে দাঁড়ালে বুঝলাম গুজরাট পুলিশের খাকি উর্দি গায়ে। কিন্তু পায়ে কোনও জুতো নেই। জুতোর বদলে একটা হাওয়াই চটি পরা। মাথায় একটা সাধারণ বাজারচলতি টুপি। পুলিশের টুপি নয়। সে এসেই ধমকের সুরে আমাদের দাবড়ানি দিতে লাগল। জড়ানো পাকানো হিন্দিতে জেরা শুরু হল…
–তুমলোক ইধার ক্যা কর রহে হো?
-কাঁহাসে আয়া?
–কব আয়ে হো?
ইত্যাদি প্রভৃতি।
আমাদের উত্তর শোনারও বোধহয় ইচ্ছে ছিল না। সেসব শোনার আগেই বলল–
–চলো মেরে সাথ… ক্যাম্প মে জানা পড়েগা।
তো চললাম তার সঙ্গে। য়ুসুফ ভাইয়ের কাছ থেকে জেনে নিলাম সে সত্যিসত্যিই পুলিশেরই লোক। ক্যাম্প বলতে গ্রাম আর বাসস্ট্যান্ডের মধ্যে অবস্থিত একটা ছোট টেন্ট। এতই ছোট যে সকালে ওপথে যাবার সময় আমাদের চোখে পড়েনি। টেন্টটির অবস্থাও খুবই শোচনীয়। দু’পাশে দুটি ক্যাম্প খাট পাতা, যদিও আমরা ততদিনে জানি ওটা সিঙ্গল বেডেড টেন্ট। একটা টেবিল ও একটাই চেয়ার আছে, যা প্রায় পুরোটাই তাঁবুর বাইরে। যাই হোক, সে টেন্টে ঢুকে, প্রবেশ পথের সামনেই চেয়ার টেনে নিয়ে গুছিয়ে বসল। আমারা তিনজন বাইরে দাঁড়িয়ে, ঠা ঠা রোদের মধ্যে। আদেশ এল ব্যাগ, যন্ত্রপাতি সব তাকে জমা দিতে হবে। ব্যাগের ভেতরের পাথর পত্র সব ঢেলে মাটিতে রাখারও হুকুম তামিল করলাম। শুরু হল জেরা।
–কাহাসে আয়ে হো?
–বঙ্গাল সে।
–ক্যা? বাংলাদেশ?
–নেহি পচ্চিম বঙ্গাল।
–ওয়ো কাহা হ্যায়?
এবার বোঝানোর জন্যে আমি বলে উঠলাম–
–কলকাত্তা সে।
–ট্রেন সে আয়ে হো?
–হাঁ
–টিকট দিখাও।
–ব্যাগ মে হ্যায়, নিকালুঁ ক্যা?
–হাঁ হাঁ নিকালো।
আসার টিকিট ও যাওয়ার টিকিট দুটোই সঙ্গে ছিল। খুব কনফিডেন্টলি বের করে হাতে দিলাম।
সে মন দিয়ে নেড়েচেড়ে দেখে চোখ মুখ পাকিয়ে ধমকের সুরে বলে উঠল–
–জ্যাদা হোঁশিয়ার মত বনো!! কলকাত্তা কাঁহা? টিকট মে তো হাবরা লিখা হ্যায়।
এর কোনও উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা আমার মাথায় তাৎক্ষণিকভাবে এল না। কী বলি ভাবতে ভাবতেই দেখলাম বটাদা সামনে এগিয়ে এল। বোঝানোর চেষ্টা করল যে কোলকাতা বলে কোনও রেলস্টেশন নেই। হাওড়া আর শ্যালদা থেকেই সব ট্রেন ছাড়ে। (১৯৯৩-তে কলকাতা স্টেশন বলে সত্যিই কিছু ছিল না)। কিন্তু সে সেসব কথাকে পাত্তা দিল বলে মনে হল না। লোকটার মনে সন্দেহ আরও বাড়ল বই কমল না। ব্যাগের প্রত্যেকটা পাথর আলাদা আলাদা করে পরীক্ষা করতে শুরু করল। যন্ত্রপাতি ও ম্যাপে এসে সে নিশ্চিত সিদ্ধান্তে এল এরা নিশ্চয়ই পাকিস্তানি চর। এখানে খুবই খারাপ কিছু ষড়যন্ত্রে ভাগ নিতে এসেছে।
আমাদের পারমিশন রিকোয়েস্ট লেটারটিকে এবার বার করে দেখালাম। যদিও ভয় ছিল এখনই না বলে কালেক্টরের অফিসে যাইনি কেন? কিন্তু লোকটার ইংরিজি পড়ে বোঝার ক্ষমতা নেই সেটা ওই চিঠির দিকে তাকানো দেখে বুঝলাম। তবে এতে একটা কাজের কাজ হল বলে মনে হল। চিঠির অশোক স্তম্ভের ছাপ আর হিন্দিতে ছাপা ‘ভার্তীয় প্রাদ্যোগিকী সন্সস্থান’ দেখে মনে হল যেন কিছুটা থমকাল।
সব দেখেশুনে বলল–
–তুম দোনো কো রুকনা পড়েগা ইধার। হম ওয়ারলেস মেসেজ ভেজুঙ্গা নালিয়া মে, শামকো থানেদার সাব আয়েগা উসকে সাথ তুমদোনোকো চালান করনা হ্যায়।
আর য়ুসুফ ভাইকে বলল যে, সে আপাতত ঘরে যেতে পারে। কাল যেন সকালবেলা নালিয়াতে গিয়ে থানায় দেখা করে।
আমরা এমনিতেই ঘামছিলাম। খুব জোরদার খিদেও পেয়েছিল। ঘাম আরও তীব্র হল। খিদেতে পা দুটো কেমন অবশ লাগতে শুরু করল। ধপাস করে মাটিতেই বসে পড়লাম। এরপর হঠাত সে লোকটা আমাকে জিজ্ঞেস করল–
–তুম বাঙ্গালি হো?
–হাঁ
–মহাম্যাডান য়্যা হিন্দু?
–হিন্দু।
–কৌন জাত কা?
–বৈদ
–ক্যা??
–জো ব্রাহ্মিন লোক ডক্টরি করতা থা পহলে ওয়ো জাত কা!!
–আচ্ছা আচ্ছা হেকিম? তো হিন্দু ক্যাসে? ও লোগ তো মহামেডান হোতা হ্যায়! তুমহারা গোত্র ক্যা হ্যায়?
সেখানেও গোল বাঁধল, আমি মোদগৌল্য গোত্র বলাতে তিন-চারবার ক্যা ক্যা করে কিছু বুঝল বলে মনে হল না। শেষে বটাদাকে জিজ্ঞেস করল,
–তুমহারা জাত ক্যা হ্যায়?
–ব্রাহ্মণ, ভরদ্বাজ গোত্র।
বটাদা সরাসরি বলে দিল।
এই শব্দগুলো লোকটার কানে বোধহয় চেনা চেনা লাগল। মুখের রেখাগুলো যেন মনে হল একটু নরম হয়ে এল। আর কিছু জিজ্ঞাসা করল না। কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকল। এর ফাঁকে আমি ফিসফিস করে বটাদাকে শুধোলাম ও সত্যি কথা বলছে কিনা। বটাদা আমাকে আশ্বস্ত করে চুপ করে যাবার ঈঙ্গিত করল। আমিও কুলুপ আঁটলাম মুখে। মনে আকাশপাতাল চিন্তা আর সিনেমায় দেখা জেলের দৃশ্য ঘুরে ঘুরে আসতে লাগল। একসময় এও ভেবে ফেললাম জেলটা বোধহয় এই জিওলজির ফিল্ড ওয়ার্কের থেকে খুব কিছু খারাপ হবে না, ওখানেও তো হাতুড়ি মেরে পাথরই ভাঙতে হয় কয়েদীদের।
মিনিট দশেক এভাবে বসে থাকার পর লোকটা বোধহয় অভুক্ত ব্রাহ্মণকে বসিয়ে রাখার পাপের থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্যে বলল–
–দোপহর মে খানা কা ক্যা ইন্তেজাম হ্যায়?
–চায় কা দুকান মে খানা খানা হ্যায়।
–আচ্ছা তব আভি যাও। সামান সব ইধারই ছোড়কে জানা, চার বজে ওয়াপস আ জানা থানেদার সাব কো মুলাকাত করনে কে লিয়ে।
আমরা মাথাটাথা নেড়ে শুক্রিয়া টুক্রিয়া করে প্রায় দৌড়ে আমাদের আশ্রয়ে ফিরে এলাম। চা দোকানে এসে থিতু হবার পরেই দেখলাম চা-ওলা দু’জনের হাতে দুটো বড় গেলাসে চা ধরিয়ে দিল। ঢকঢক করে খেয়ে মনেপ্রাণে একটু বল পেলাম। তারপর খাবার খেয়ে ঘরে ঢুকে পুরো পরিস্থিতির পর্যালোচনায় বসলাম।
বটব্যাল নিয়ে আমার সন্দেহ তখনও কাটেনি। বটব্যাল যে ব্রাহ্মণের পদবী হতে পারে সে ধারণা আমার ছিল না। বটাদাকে ফের জিজ্ঞেস করায় সে আবার আশ্বস্ত করল। আমি একটু নিশ্চিন্ত হলাম। একটু বাদেই হঠাত আমার মাথায় বিদ্যুতচমকের মতো একটা কথা খেলে গেল। এই লোকটা ব্রাহ্মণ শুনেই আমাদের আপাতত ছেড়ে দিল। তবে থানাদার যদি প্রমাণ চায় ব্রাহ্মণত্বের আর তখন যদি পৈতে না দেখানো যায় তখন আর জেল যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। সঙ্গে মিথ্যাভাষণের চার্জও দিয়ে দেবে নিশ্চিত। বটাদাকে জিজ্ঞেস করে আমি যা সন্দেহ করেছিলাম তাইই জানলাম। বর্তমানে ওর গলায় পৈতে নেই।
সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিলাম যে করেই হোক পৈতে আমাদের চাই। বিকেলের আগেই চাই। ফিল্ডে অনেক কিছুই নিয়ে গেছিলাম– পায়খানার মগ থেকে সেফটি পিন অবধি। কিন্তু সুতো আমাদের সঙ্গে ছিল না। ঠিক করলাম গ্রামে নিশ্চয়ই দোকান আছে যেখানে সুতো কিনতে পাওয়া যাবে।
অনেক কষ্টে মনে করলাম সুতোর হিন্দি ‘ধাগা’। চললাম গ্রামের ভিতরে সুতোর খোঁজে।
গ্রামটার ভেতরে পৌঁছে দেখলাম বেশ বড় গ্রাম। প্রায় ৮০ থেকে ১০০ টা বাড়ি এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সবই ধূলিধূসর রুক্ষ মাটির বাড়ি। ওপরে খাপড়ার চাল। কোনও বাড়ির দেওয়ালে বা অন্য কোথাও কোনও রঙের চিহ্নমাত্র নেই। রঙ শুধু লোকের পোশাকে। পুরুষেরা ইয়াব্বড় পাগড়ি মাথায় সাদা ধবধবে গুজরাটি পোষাকে দাওয়ায় বসে আড্ডা মারছেন। আর মহিলাদের পোষাকে লাল আর সবুজের আধিক্য দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। বাঁধনি স্টাইলের কাপড়ই বেশি। আর তা না হলে উজ্জ্বল রঙের জমিতে কাঁচ আর চুমকির ঝলকানি। সবাই অবগুন্ঠনময়ী, কোল অবধি ঢাকা ঘোমটায়। একে ওকে জিজ্ঞেস করে একটা মুদি দোকান মতো দোকানের খোঁজ পাওয়া গেল। বেশ বুঝতে পারছিলাম হিন্দী এ গ্রামের বেশিরভাগ লোক বোঝে না। এনারা সবাই স্থানীয় আঞ্চলিক ভাষায় কথাবার্তা বলেন। দোকানিও তাই। কাজেকাজেই আমাদের ‘ধাগা’ বোঝাতে প্রায় গাধা হওয়ার দশা! আমরা কী জিনিস চাই কিছুতেই বুঝতে পারল না। সুতো বোঝাতে শেষ পর্যন্ত পরণের জামাটির হাতা একটু ছিঁড়ে ফেলে আঙুল দিয়ে সেলাই করার ভঙ্গি করাতে একগাল হেসে একটা ছুঁচ নিয়ে হাজির হল। আমরা বুঝলাম, অব আয়া হাঁথি পাহাড় কে নীচে। এর পর আর সুতো বোঝাতে বেশি বেগ পেতে হল না। মোটা দেখে একটা সুতোর গুলি কিনে মুখে বিজয়ীর হাসি নিয়ে ফিরে এলাম ঘরে।
এরপর চলল পৈতে বানানোর খেলা। বাবার পৈতে বরাবরই দেখেছি আমার মেজ জেঠু বানিয়ে দিতেন। আমি ছোটবেলায় জেঠুমণির পাশে বসে মন দিয়ে পুরো ব্যাপারটা দেখতাম। ১০/১৫ বছর পুরনো সেই স্মৃতিটুকু সম্বল করে মাটিতে বাবু হয়ে বসলাম পৈতে বানাতে। পৈতের মতো দেখতে দুটো জিনিস বানিয়েও ফেললাম ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায়। তারপর সেগুলোকে মাটি মাখিয়ে একটু পুরনো রঙ দিয়ে পাকা বামুনের মতো পরেও ফেললাম দু’জনে।
চারটের সময় সেই পৈতের অস্ত্রে বলীয়ান হয়ে চললাম থানেদার সাহেবের সাক্ষাতে। যাবার সময় যত্ন নিয়ে জামার বোতাম এমনভাবে খোলা রাখলাম যাতে পৈতেগুলো দৃশ্যমান হয়। থানেদার সাহেব তারপর আমাদের সঙ্গে আর বেশি সময় নষ্ট করেননি। দু’চারটে নাম ধাম জাতীয় প্রশ্ন করেই আমাদের রেহাই দিলেন। আর সাথে সাথে জিনিসপত্র ফেরতের আদেশও দিলেন, সকালের লোকটাকে।
মহানন্দে লটবহর নিয়ে ফেরত আসলাম আমাদের ঘরে।
এরপরের তিনদিন তিনরাত নির্বিঘ্নেই কেটেছিল। খুব মন দিয়ে কাজ সেরে একগাদা স্যাম্পেল নিয়ে পঞ্চম দিনে সকালে বাস ধরে ভুজে এসে পৌঁছালাম সন্ধেবেলায়। পরের দিন সকালে আমাদের ট্রেন আহমেদাবাদের। সেখান থেকে কলকাতা।
পৈতেদুটো অবশ্য আমাদের সঙ্গে কলকাতা অব্ধি এসেছিল। ‘হাবরা’য় নেমে তাদের গঙ্গাপ্রাপ্তি হল।
জাতের নামে বজ্জাতিটা সেদিন খুব ভালোভাবেই নিজেদের পিঠ বাঁচাতে ব্যবহার করেছিলাম!