Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

ঊর্মি দাস

দুটি কবিতা

 

অ্যানিভার্সারি

খাটের পায়া একটু নড়ে 
যায় আজকাল।
পালিশটাও পুরোনো
জলের দাগ, ধুলোর দাগ
দেয়াল আর খাটের 
ঠোকাঠুকিতে এখানে ওখানে
চলটা খসা। তবু,
পশ্চিমের রোদটা পড়ে
বিছানায় সেই
পুরোনো জানলা দিয়েই। 

উষ্ণ মুচমুচে চাদরের ওপর
একটু বেঁকে শুয়ে আছে
দুটি হাত। চামড়া 
ঈষৎ কোঁচকানো।
পাশ ঘেঁষে বসে
রং-ওঠা ধোপ কাচা
ধনেখালি। ওই শাড়িতেও
তরল রোদ।

জানলার শিক গলে গলে
রোদ আসে।
কী ভাগ্যিস
পাশের বাড়িটা 
মালটিস্টোরেড হয় নি।
ওখানেই আগে ছিল 
ভিজে ঘাস, কাঠচাঁপা গাছ,
চৌকোমতো এক চিলতে জমি
চেঁছে পুঁছে ব্যাডমিন্টন কোর্ট।
শীতের সন্ধ্যায় হৈ হৈ
ম্লান আলোয়
উনি আর তিমির মিত্র।

বিয়ের সদ্য এক বছর পর
বিবাহদিনে বাড়িভরা লোকজন,
গরম রান্নাঘর, ভুলভাল নুন,
ঘাম, তিতকুটে ঠেস
আর মাড়-কড়কড় শাড়ির
থেকে পালিয়ে এক ফাঁকে 
বারান্দার এক চিলতে অশ্রুর
মাঝখানে হঠাৎ এগিয়ে এসেছিল
একমুঠ মৌ মৌ চাঁপা ফুল।
আজকের হাত আর সেই চাঁপা!

ঋতির ঠোঁটের পাশের রেখা পড়ে
তিনি ওকে তুলে দিতে
গিয়েছিলেন চেন্নাইগামী 
হাওড়ার কোনো ট্রেনে।
সেদিনও ছিল তাঁর এক বিবাহদিন। 
কিন্তু চিৎপুরের খানাখন্দভরা
রাস্তায় ট্যাক্সির ভেতর 
কোনো বিবাহ স্মৃতি ছিল না। 
মা-মেয়ের চোখের সামনে
নাচছিল কেবল
বন্ধ দরোজাগুলো-
প্রণামে নত ঋতির সামনে
এক এক সশব্দিত দরজা।
ট্রেনের  জানলা দিয়ে
কাঁপা হাতে মেয়ের কোলে
তুলে দিয়েছিলেন  
এলোমেলো সঞ্চয় ভরা 
প্রিয় গয়নার বাক্সটা,
কয়েকটা চাঁপা গুঁজে।

ঋতি আর বাড়ি ফেরেনি।
উড়ে গেছে আরো দূর স্টেশনে।
ওখানে চাঁপা নেই।
পাশের ঘাসজমির সঙ্গে
এই চাঁপাগাছটাও উধাও।
ভুলে যাওয়া বিবাহদিনে
একবার তিমির একবাক্স
খাবার এনে বলেছিল
“আজ আমার জন্মদিন।”
টেবিল থেকে টলায়মান
চোখ তুলে উনি তাকিয়েছিলেন।
ওর চোখেও ছিল হলুদ পোঁচ।
খয়েরি তারা।

চৌকো ঘাসজমি, কাঠচাঁপা গাছের 
স্মৃতির ওপর এখন থেবড়ে বসে আছে
দোতলা চৌকো বাড়ি।
ওটা ভাড়ার বিবাহবাড়ি।
ওখানে আলো, 
ওখানে সিডিতে সানাইএর সুর ,
ওখানে দেওয়ালে মঙ্গল ফোঁটা,
ওখানে লালচে আশা সুখে কাঁদে।
পাশের হাতটা ঘুমে কিছু হাতড়ায়।
ধনেখালি চোখটা একবার মুছবে বলে 
আঁচল তুলতে যায়-
আঁচলটা ওনার হাতের তলায় আটকানো।
কী আশ্চর্য !
টানতে মায়া লাগে! 
থাক।

ফুল অউর কাঁটে

যা পাই তাই জমাই।

দাগি পয়সা, ক্ষয়া পেনসিল, 
ভাঙা বোতাম, ছেঁড়া ছবি
এমনকি দেশলাই বাক্সের পাত-
সঅঅব নিয়ে মালা গাঁথি।
মালা পরি গলায়, হাতে
টিকলি বানাই মাথে
মালা পরি, ছিঁড়ি, পরি
খুলে রাখি চন্দন বাক্সে।
রাতে শুয়ে থাকি বুকে লুকিয়ে।

তারপর 
একটু একটু করে তারা 
আমার বুক চেরে
জিভ ঢুকিয়ে লহু চাটে
চোখে ধোঁয়া জ্বালে
মাথার খোপে হুল্লোড় করে
অসহায়, দম চেপে
শুয়ে থাকি 
নির্নিমেষ।

মনে মনে বলি, দেখি
তুই আমায় খাস
না, আমি তোকে।