Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

আজ নবমী,

অলোকপর্ণা

 

নদীর পাড় ভেঙে, নদী দূরে সরে যায়, কাছে চলে আসে। বইমেলাও নদীর মতো সিঁধ কাটতে কাটতে ময়দান থেকে মিলন মেলা হয়ে সেন্ট্রাল পার্ক অবধি চলেই এসেছে, এবার এয়ারপোর্ট অবধি এসে গেলে তাকে আমার পাড়ার বইমেলা বলা যাবে।

আমার গার্গী শ্রেয়সী

যেকোনও ভিড় থেকে আমি ট্রিপ নিই। ভিড়ের গল্প, শব্দ, চলন দেখে নেশা নেশা লাগে। তাই বই কেনার থেকেও বেশি আগ্রহ থাকে মেলার ভিড়টা চেখে দেখার জন্য। এবার সেন্ট্রাল পার্কের স্বল্প পরিসরে যারপরনাই আস্বাদ মিটিয়ে ভিড় দেখতে পেয়েছি। এসবের মাঝে আমার গার্গী আর আমার শ্রেয়সীদের সাথে ধুলো খাওয়াও চলেছে বেশ কিছুক্ষণ। তারপর আবার ফাঁক গলে ভিড়ের ট্রিপ নিতে হারিয়ে গেছি একা একা, হাতে মেলার ম্যাপ, মাথায় কিছু বইয়ের নাম। যেহেতু ফোনের টাওয়ার আজ ছুটিতে ছিল তাই এই হারিয়ে যাওয়াটাও সহজ হয়েছে। দেখেছি পুলিশ মা মেয়ের হাত ধরে বাংলাদেশ স্টলে ছড়ার বই উল্টিয়ে দেখছেন। দেখেছি ভিড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে বইমেলার গন্ধ নিচ্ছেন, শব্দ নিচ্ছেন এক অন্ধ মানুষ। ইচ্ছে করেছে তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে চোখ বুজে সেই বইমেলা দেখতে, তারপর আমার রোম্যান্টিসিজমের অন্ধত্বের প্রগাঢ় সে দৃষ্টিশক্তি নেই বুঝতে পেয়ে আবার ভিড়ে মিশে গিয়েছি। দেখেছি ভিড়ের হাত ছুটে উড়ে যাওয়া বেসরকারি কলেজে বিজ্ঞাপনী গ্যাস বেলুন কেমন উঁচু আকাশ থেকে বইমেলায় চোখ রাখতে রাখতে দূরে মিলিয়ে যাচ্ছে। দেখেছি বিজাতীয় এক ভিড় আলো করে বসে শঙ্কর বইয়ের পর বইয়ে স্বাক্ষর করে চলেছেন। আর মানুষেরা চৌরঙ্গী, কত অজানারে নিয়ে সেই আলো কাছিয়ে আনতে ছুটছে তাঁর দিকে। এই আলো কাছিয়ে আনা দেখতে দেখতে অদ্ভুত একটা অকারণ আনন্দ বয়ে যেতে দেখলাম ভিড়ের মধ্যে। আর মন খারাপ হল। কারণ আজ নবমী। আমার বইমেলার শেষ দিন। অকারণে গিল্ডের অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। গোটা মাহলের দিকে চোখ রেখে, কান রেখে। যথাযথ হাই হয়ে একটা দুটো বই কিনে সৃষ্টিসুখ প্রকাশনের স্টলে ফিরলাম। বিদায় জানিয়ে ফেরার সময় রোহনদা হাতে একটা চকলেট ধরিয়ে দিল। হাতের মুঠোয় চকলেটটা ধরে বুঝতে পারলাম বইমেলা একটা বিদেশি চকলেটের মতো, মুঠোয় ভরে রাখতে গেলে গলে যায়। মিনিট দশেক পর, রাস্তায় বেরিয়ে এসে একটা যা হোক বাসে চেপে বসলাম। মনে মনে ভেবে নিলাম আমার পিছনে ফেলে আসা মেলাটা সালভাদর দালির ঘড়ির মতো গলে আছে। পরের বার এসে যাকে শুধু একটু আগলে নিতে হবে।