শতাব্দী দাশ
এমন এক দেশে বাস করি যেখানে সাংবাদিক সভা ডেকে দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে কিছু এঁদো খাপ পঞ্চায়েত!
ক’দিন আগে সর্বোচ্চ আদালত একটি এনজিও-র দায়ের করা জনস্বার্থ মামলার রায় ঘোষণা করেন। শক্তি বাহিনী নামক এনজিও-টি এই জনস্বার্থ মামলা করেছিল সেই ২০১০ সালে।
২০১০ সালেই আরেকটি ক্রিমিনাল কেসের রায় বেরিয়েছিল, যার সাথে উক্ত পি আই এল-এর প্রত্যক্ষ সম্পর্ক ছিল। সে বছরেই কুখ্যাত মনোজ-বাবলি হত্যাকাণ্ডের মামলার নিষ্পত্তি হয়েছিল কার্নাল ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে, বিচারক বাণীগোপাল শর্মার এজলাসে। অনার কিলিং-এর বিরুদ্ধে এটি ভারতীয় আদালতের প্রথম রায়। পরিবারের সম্মানরক্ষার নাম করে পরিবারেরই সদস্য বা তার সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তির হত্যা, এক কথায় ‘অনার কিলিং’, আজ দীর্ঘ আট বছর পরেও এক মহামারী।
মনোজ আর বাবলি। ভালোবাসার অপরাধে নৃশংসভাবে খুন হয়েছিলেন তাঁরা। বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে ক’রে, বিয়ের পর আবার স্থানে স্থানে পালিয়ে গিয়ে, বারবার আইনের শরণাপন্ন হয়েও বাঁচতে পারেননি তাঁরা। বাবলির ঠাকুরদা, একদা খাপ নেতা গঙ্গারামের প্ররোচনায়, বাবলির ভাই, তুতোভাই, মামা, কাকা, জ্যাঠারা যে চক্রব্যুহ রচনা করেছিল, তা থেকে পালিয়ে বাঁচা তাঁদের সাধ্যাতীত ছিল। কারণ কী ঐ হত্যার? তাঁরা উভয়েই ছিলেন বানওয়ালা গোত্রের। স্বজাতির বাইরে বিয়ে করা যেমন নিষিদ্ধ খাপ-মতে, তেমন বারণ সগোত্রে বিবাহও। গোত্র এক মানেই যুগল আসলে ভ্রাতা-ভগিনীপ্রতিম। এরকম বিবাহ তাই খাপ-মতে ঘোর অনাচার। মনোজ-বাবলির নিধনযজ্ঞের গল্প বলতেই পরবর্তীকালে ‘গুড্ডু রঙ্গিলা’-র মতো চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে বলিউডে। ‘NH10’ ছায়াছবিতেও এই ঘটনারই রেশ।
যাই হোক, শেষপর্যন্ত গঙ্গারামের যাবজ্জীবন হয়, সাহায্যকারী ড্রাইভারের সাত বছর জেল, বাকিরা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। ছয় পুলিশকর্মী শাস্তি পান কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে। ২০০৭ সালে এই হত্যালীলা সংঘটিত হয়েছিল। রায় বেরোতে তিনবছর। ২০০৭-এ কলকাতাও অবশ্য সাক্ষী ছিল আরেক মৃত্যুর — রিজওয়ানুরের। অনেক মোমবাতি পুড়িয়ে জানা গেছিল ও মেনে নেওয়া গেছিল যে রিজওয়ানুরকে কেউ মারেনি। ও এমনি এমনি মরে গেছিল। খাপ মানসিকতা কিন্তু উত্তর পশ্চিম ভারতের একচেটিয়া নয়। ভ্যালেন্টাইন দিনের আগে আন্তঃসাম্প্রদায়িক প্রেমিক-প্রেমিকার একটি লিস্ট হুমকিসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিতে তৎপর হয়েছিল কিছু অতি হিন্দু সম্প্রদায়। হ্যাঁ, এই কলকাতায়, ২০১৮ সালেই।
গঠনগতভাবে খাপ কী? খাপ হল সনাতন কৌম সমাজের ধারক বাহক, এক আঞ্চলিক বিচারব্যবস্থা যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে উত্তর-পশ্চিম ভারতের রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এমনকি দিল্লি থেকে অনতিদূরের প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে। আনুমানিক চতুর্দশ শতক থেকে চলছে এদের রাজত্ব। খাপ প্রথাগতভাবে নির্বাচিত কোনও সংগঠন নয়, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত ‘পঞ্চায়েত’-এর সাথে তার কোনও যোগ নেই। পরিবার তথা গ্রামের সম্মান, ঐক্য, সৌভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রদায়ের প্রতি একাত্মতার বুলি প্রায়শই শোনা যায় খাপ প্রধানদের মুখে। নিস্তরঙ্গ গ্রামজীবনে আলোড়ন তোলা যেকোনও ঘটনাতেই মাথা গলানোর অধিকার খাপের আছে। সে সম্পত্তি নিয়ে গোলযোগ হোক, উত্তরাধিকার সমস্যা হোক, হোক আন্তঃসম্প্রদায় বিবাহ বা অবৈধ যৌনাচার। এদের শাস্তিবিধানের পদ্ধতিও হয় প্রাচীন রীতি মেনে। জরিমানা, মুখে কালি লেপে দেওয়া, নাকখত দিতে বাধ্য করা তো আকছার ঘটে। এমনকি খাপের নির্দেশে ধর্ষণ বা খুনও খুব দুর্লভ ঘটনা নয়।
খাপের গঠন অতি সরল ও দ্বিস্তরী। কতগুলি গ্রাম নিয়ে একটি খাপ। অনেক খাপ নিয়ে বৃহত্তর সর্বখাপ। সচরাচর উচ্চবর্ণীয়, মান্যগণ্য, বয়স্ক সামাজিক মাথারাই খাপ-প্রধান হন। স্বভাবতই, তাঁরা পিতৃতান্ত্রিক ও গোঁড়া বর্ণহিন্দু। জাঠ ও গুর্জর সম্প্রদায়ের প্রাধান্য যেসব অঞ্চলে, সেখানেই খাপের প্রাদুর্ভাব সর্বাধিক।
কেন খাপে এত আস্থা গ্রামীণ জনতার? কারণ কোর্টরুম ট্রায়ালের মতো দীর্ঘসূত্রী নয় খাপের বিচারব্যবস্থা। এখানে সবই ‘ধর তক্তা মার পেরেক’ দ্রুতিতে ঘটে। তার উপর, বয়স্ক মুরুব্বিদের বিবেচনার উপর অশিক্ষায় ডুবে থাকা মানুষের অগাধ আস্থা।
মনোজ-বাবলির ঘটনার জেরে, ২০১০ সালে খাপ-বিরোধী অনেক তৎপরতার সাক্ষী ছিল পার্লামেন্ট, আদালত, আইন কমিশন। তৎকালীন ইউপিএ সরকারের গৃহমন্ত্রী পি চিদাম্বরম বলেছিলেন, অনার কিলিং-কে আইপিসি সংস্কারের মাধ্যমে পৃথক অপরাধ, ভিন্নতর নৃশংসতা বলে চিহ্নিত করতে হবে, পৃথক ধারা আনতে হবে তার জন্য।
সংসদে তিনি বলেছিলেন — ‘The vilest of the crimes are committed in the name of defending the honour of the family or women and we should bury our heads in shame when such incidents take place in India in the 21st century.’
২০১০ সালের ‘অল ইণ্ডিয়া ডেমোক্রেটিক উইমেন্স অ্যাসোশিয়েশন’-এর প্রধান কীর্তি সিং-এর নেতৃত্বে, অন্যান্য নারী সংগঠনগুলির সহমতের ভিত্তিতে ‘The Prevention of Crimes in the Name of Honour and Tradition Bill’ সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। জাতীয় মহিলা কমিশনের তৎকালীন প্রধান গিরিজা ব্যাসের পক্ষ থেকেও একই নামের বিল প্রস্তাবিত হয়। কিন্তু সরকার পক্ষ, বলা বাহুল্য, সবুজ পতাকা নাড়েন না। আজও নাড়েননি। তাদের পাকা মাথায় ভোটের রাজনীতি। বরং পার্লামেন্টের ২৪২তম রিপোর্টে বিলটির একটি পরিবর্তিত, সংক্ষিপ্ত রূপ হাজির হয়, যা নিয়ে মহিলা কমিশন ও সংগঠনগুলি আদৌ খুশি ছিল না। সেটিই পাঠানো হয় রাজ্যে রাজ্যে, প্রতিক্রিয়া জানার জন্য।
এদিকে ২০১২ সালে হরিয়ানায় খাপের নির্দেশে গণধর্ষিতা হন দলিত তরুণী। ঘটে চলে একের পর এক সম্মান-রক্ষার্থে হত্যা। নিত্যনতুন তালিবানি ফতোয়া ঘোষণা করতেই থাকে খাপ। কখনও মেয়েদের জিন্স পরা নিষিদ্ধ করে, কখনও তাদের মোবাইল ব্যবহার।
মোদী সরকার ক্ষমতাসীন হলে AIDWA-র প্রতিনিধি দল আবার আইনমন্ত্রকে খাপের বিরুদ্ধে দরবার করতে যায়। আইনমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া বলেন, খাপ-বিরোধী আইন তত প্রয়োজনীয় নয়। এর ‘অপব্যবহার’ হতে পারে। আইনের অপব্যবহারের যে তুলনা তিনি টানেন, তা তাঁর পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতাকেই প্রকট করে। তিনি বলেন, ঠিক যেমন ৪৯৮এ নামক বধূনির্যাতন বিরোধী আইনটি নাকি ‘অপব্যবহৃত’ হয়, তেমন করেই খাপবিরোধী আইন ‘অপব্যবহৃত’ হবে।
****
শক্তি বাহিনীর ২০১০ সালের মামলাটি ছিল খাপ পঞ্চায়েতগুলির বিরুদ্ধে। বলা বাহুল্য, ক্রমাগত ঘটে চলা অসংখ্য অনার কিলিং-ই উক্ত PIL-এর কারণ। জাস্টিস দীপেশ মিশ্রর নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ বলেছিল, প্রাপ্তবয়স্ক নরনারীর বিবাহে সমাজের মাথাদের মাথা গলানোর কোনও অধিকার নেই। খাপ যেন ‘কন্সেইন্স-কিপার’-এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া থেকে বিরত থাকে। অর্থাৎ অন্তত খাতায় কলমে প্রাপ্তবয়স্ক অবিবাহিত নরবারীর বিবাহে অন্যদের বাধাদান এদেশে স্বীকৃত নয়। এ’কথা জানাই ছিল। স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টও তাই বলে। মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট আবার তা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন।
সংবাদে প্রকাশ, খাপ পঞ্চায়েতের পক্ষের উকিল সমাজ, সংস্কার, গুরুজনে শ্রদ্ধা, হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুযায়ী আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিবাহে নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি খাড়াবড়িথোড় দিয়েই ডিফেন্স সাজিয়েছিলেন। কিন্তু ‘অনার কিলিং’কে সমর্থন করতে পারেননি। মানে, এমনকি অভিযুক্ত পক্ষের উকিলও বলেছিলেন — ‘লাইফ কামস বিফোর অনার’। প্রাণের দাম সম্মানের চেয়ে বেশি।
কিন্তু খাপ প্রধানরা সাংবাদিক ডেকে কী প্রতিক্রিয়া জানালেন একটি গণতান্ত্রিক দেশে বসে? তাঁরা বলেছেন — ‘হয় মেয়েদের পড়াশুনো বন্ধ করে দেব (যাতে গুরুজনকে অমান্য করার শিক্ষা না পায়), নয় তাদের জন্মাতেই দেব না।’
যেমন তেমন একটা অজুহাত খাড়া করে মেয়েদের পড়াশুনো বন্ধ করার খাপ-প্রবণতা অজানা নয়। যখন ‘নির্ভয়া কাণ্ড’-এর পর সারা দেশ ২০১২ সাল নাগাদ আওয়াজ তুলেছিল, ‘মেয়েদের চাই স্বাধীন চলাচলের অধিকার, আর কেউ যেন নির্ভয়া না হয়’ তখন খাপেরও কিছু নিজস্ব পদ্ধতি ছিল তাদের মেয়েদের ‘নির্ভয়া’ হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচানোর। তারা বলেছিল — ‘বাইরে যেতে দিও না, পড়িও না, অঘটন ঘটার আগেই বিয়ে দিয়ে দাও।’ বৈবাহিক ধর্ষণ বলে কিছু যে হয় না, তা কে না জানে!
আজও খাপ প্রধানরা একই সুরে কথা বলছেন। সময় থমকে আছে পাঞ্জাব-হরিয়ানা-ইউপির ওই গ্রামগুলোয়। আজ থেকে কুড়ি বছর পরেও তাঁরা এই একই কথা বলবেন: ১) পড়িও না। পেটে বিদ্যে হলেই অবাধ্য হবে। ২) সব সমস্যার একটাই ম্যাজিক নিরাময় — মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দাও।
কিন্তু নতুন যে কথাটি এবার শুধু নিজেদের বটতলায় আলাপচারিতায় নয়, প্রকাশ্যে বললেন তাঁরা, সাংবাদিক ডেকে বললেন, তা হল — ‘জন্মাতেই দেব না। প্রাণে বাঁচতে দেব না।’
অর্থাৎ ওঁদের নিজেদের উকিলের বক্তব্য ওঁরা নিজেরাই খণ্ডন করলেন। বোঝালেন, সম্মানের জন্য জীবন নেওয়া যেতেই পারে। প্রাপ্তবয়স্ক-র। এমনকি শিশুর। ভ্রূণেরও।
নারীবিদ্বেষী বক্তব্য হিসেবে এটা কতটা ভয়ঙ্কর, সেই আলোচনা থাক। এমনকি একটি দেশের ক্ষমতাসীন সরকার — সে সরকার নিজে যতই পশ্চাৎপদ, ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক, পিতৃতান্ত্রিক সরকার হোক — সেই সরকারও যেখানে ‘বেটি বচাও, বেটি পঢ়াও’ স্লোগান তুলছেন, সেখানে সেই দু’টি সরকারি নির্দেশকেই অবলীলায় উড়িয়ে দিয়ে খাপ বলল — ‘পড়াবও না, বাঁচতেও দেব না।’
আমাদের দেশের সেন্সাস অনুযায়ী ছেলে:মেয়ে অনুপাত ১১০:১০০। ইউনাইটেড নেশনস বহুদিন হল সতর্ক করেছে জনসংখ্যার লিঙ্গ অনুপাতে স্পষ্ট বৈষম্য সম্পর্কে। সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, হরিয়ানায় ১৫-৪৫ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে ৩৬% অবিবাহিত। এ কোন নারীবিহীন ডিস্টোপিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা? ‘মাত্রুভূমি’ চলচ্চিত্রটি মনে পড়ল?
খাপ প্রধানগণ নিজেরাও তা জানেন। শুনলাম তাঁরা সুপ্রিম কোর্টকেই হুমকি দিয়েছেন — অনুপাত আরও টালমাটাল হলে সুপ্রিম কোর্ট সামলাতে পারবেন তো?
এদেশে কন্যাভ্রূণ ও কন্যাসন্তান মেরে ফেলা নতুন ঘটনা নয়। পুত্রসন্তান জন্মালে পরিবারের সম্মান বাড়ে, পুত্রসন্তানই পিতামাতার ভরণপোষণের ভার নেয়, পুত্রসন্তানই উপার্জনক্ষম। অন্যদিকে কন্যার জন্ম মানেই বিরাট অঙ্কের পণ জোগাড়ের চিন্তা মাথায় চেপে বসা। আছে কন্যার নিরাপত্তার চিন্তাও, মেয়ে ধর্ষণ বা যেকোনও যৌন অপরাধের শিকারও হতে পারে, যেকোনও মুহূর্তে। সর্বার্থেই মেয়ে তাই পরিবারের কাঁধে বোঝার মতো। এই সব নানা কারণে কন্যাভ্রূণ হত্যা করা হয় অসাধু লিঙ্গচয়নের মাধ্যমে।
সেই সঙ্গে সোচ্চারে আরেকটা কারণ যোগ হল। স্বাধীন ইচ্ছায় ভবিষ্যতে কারও সাথে শারীরিক-মানসিক সম্পর্কে জড়াতে পারে, এমন অবাধ্য মেয়ে থাকার চেয়ে তাকে জন্মমাত্রই নুনজলে চুবিয়ে দেওয়া ভালো। নারীর স্বাধীন মত থাকা একেই বাঞ্ছনীয় নয়, উপরন্তু সেই মত যদি কোনওভাবে যৌনতা বা যৌনসঙ্গী নির্বাচন সংক্রান্ত হয়, তবে তা ঘৃণ্য। কারণ নারীমাত্রেই কোনও না কোনও পুরুষের সম্পত্তি। হয় বাবার, নয় স্বামীর। বিবাহ হল সম্পত্তির হস্তান্তর। সেই চরম পিতৃতান্ত্রিক সামাজিক চুক্তির অন্যথা হলে তা সমাজের চক্ষুশূল হয়। মধ্যবিত্ত বঙ্গসমাজেও হয় না কি? জাঠভূমিতে তা এমনকি খুনোখুনিরও কারণ হতে পারে।
এই দেশে আইপিসিতে বলপূর্বক ফিমেল ফিটিসাইড আর ইনফ্যান্টিসাইড নিষিদ্ধ। কী করে এক বা একাধিক লোক কন্যাভ্রূণ হত্যার কথা বললেন প্রকাশ্যে? তারপরেও তাঁরা ঘুরে বেড়াবেন সরপঞ্জের পাগড়ি মাথায়? এরা, এই খুনীরা উন্মুক্ত ঘুরে বেড়ায় কী করে?
****
এদের আদালত অবনাননা ও অগ্রাহ্য করার এই স্পর্ধাও খুব অচেনা নয়। সেই ২০১০ সালেই, মনোজ-বাবলি কাণ্ডের অপরাধীদের সাজা ঘোষণা হলে, কুরুক্ষেত্রের প্রান্তরে, ১৩ই এপ্রিল তারিখে, হরিয়ানা, ইউপি, রাজস্থানের অসংখ্য খাপ সম্মিলিত হয়। হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্টের সংস্কার, স্বগোত্র বিবাহ নিষিদ্ধ করা সহ বহু দাবি ছিল তাদের। আদালত, আইন-ব্যবস্থাকে তারা তাদের যাপনে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছিল সেদিনও। আজ তার পুনরাবৃত্তি মাত্র। এবং আরও ভয়ঙ্কর হুমকিসহ। রাজস্থানের নিশা সিধু বা হরিয়ানার জগমতি সাঙ্গওয়ানের মতো কর্মীরা তাও লড়ে যাচ্ছেন। আন্তঃসম্প্রদায় বিবাহকে খাপের নাকের ডগায় বসে আশকারা দিচ্ছেন তাঁরা। এঁরা আছেন, তাই আশা ‘মরিতে মরিতেও মরে না’। বি আর আম্বেদকর এঁদের কথা ভেবেই বলেছিলেন – ‘Political tyranny is nothing compared to social tyranny and a reformer who defies society is a more courageous person than one who defies government.’
ডক্টর আম্বেদকর আইনমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন, কারণ হিন্দু কোড বিল মহিলাদের অধিকার খর্ব করেছিল। ডক্টর আম্বেদকরের দেড়শোতম জন্মদিবসও ফেলে এলাম আমরা, বহুদিন হল। এ অমানিশা আরও কত কাল?