Site icon ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম

রেনবো মানে রংধনু

রৌহিন ব্যানার্জী

 

রেনবো মানে রংধনু – সেখানে সবগুলি রঙ বেরিয়ে আসে তাদের সাদা আলোর ঘেরাটোপ ছেড়ে – নিজস্ব সত্তায় বিকশিত হয়ে উঠতে। প্রত্যেকের স্বীয় সত্তা বজায় রেখেও রঙধনুর রঙেরা হাতে হাত ধরে পাশাপাশি থাকে সোচ্চারে। রংধনু তাই প্রাণে প্রাণ মিলে যাবার প্রতীক, রংধনু উৎসবে সবাই রাজা। কারণ মেজাজটাই যে আসল রাজা। আর সেই রাজার রাজত্বই স্থাপিত হয়েছিল আঠারোই ফেব্রুয়ারি – এই কলকাতা শহরের বুকেই। ত্রিকোণ পার্ক। যেখানে পূর্ণদাস রোড এসে মিলেছে রাসবিহারী সরণীতে। লাল ত্রিকোণের ঘেরাটোপকে তুচ্ছ করে দিয়ে হৃদয়ে হৃদয় যোগ। মানুষের অস্তিত্বের সেলিব্রেশন জীবনের মহোৎসবে।

রেনবো কার্ণিভাল মূলত LGBTQ আন্দোলনের সদস্যদের উৎসব। কিন্তু শুধু তো তারাই নন – যখন তথাকথিত “স্ট্রেট” মানুষেরাও দলে দলে অংশ নেন সেই উৎসবে তখন বোঝা যায় উৎসবের সার্থকতা। তখন বোঝা যায় মানুষ আজও শুধু মানুষ বলেই মানুষকে ভালোবাসার সাহস রাখে। কারণ এ উৎসব আদতে সাহসেরই সেলিব্রেশন। নিজেকে জয় করার সাহস। ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে আসার সাহস। আত্মপ্রকাশের সাহস। যে সাহসের সামনে ক্রমশঃ পিছিয়ে যেতে থাকে জেন্ডার বায়াসের রক্তচক্ষু, বাইনারি ভাবনার সীমাবদ্ধতা। হ্যাঁ এই উৎসব ছিল কলকাতা শহরের বুকে তৃতীয় লিঙ্গের মাথা তুলে দাঁড়ানোর কার্নিভাল, যাতে সামিল হয়েছিলেন প্রথম দুই লিঙ্গেরও বহু মানুষ।


কার্নিভালে যেমন হয়, চারিদিকে ছোট ছোট বিপণি – কেউ ছাতার তলায় তো কেউ আটচালায়। হরেক রকমের পসরা নিয়ে। কেউ ছিল খাবার নিয়ে তো কেউ শিল্পকর্ম, কেউ বা পুতুল, বডি আর্ট। গুরুচন্ডা৯ বা বং কিউ এর মত প্রকাশনা সংস্থারাও ছিল তাদের বইয়ের পসরা নিয়ে। আর কার্নিভাল জুড়ে ছিল খেলাধুলা নাচ গান কবিতা এসবের বিবিধ আয়োজন। বিভিন্ন শিল্পীর পরিবেশনায় বিকাল থেকে জমজমাট ছিল মঞ্চ – রাত আটটাতেও বাড়ি যাবার নাম করছিলেন না প্রায় কেউই। এই অসাধারণ কার্নিভাল আরও অনেক বেশি বেশি হোক এই শহরে এবং বাইরেও, আরও বহু মানুষের, সকল শ্রেণির মানুষের প্রতিনিধিত্বে ভরে উঠুক মেলাপ্রাঙ্গন – এই কামনাই বুকে নিয়ে গেলেন সবাই ফেরার পথে। আসুক নতুন ভোর রংধনু নিয়ে।